এক_শহর_প্রেম💓 লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৩০

0
896

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩০
আহনাফের পরিবার আদিরাকে সাদরে আপ্যায়ন করল। মারসাদ তো তাদের কাছে আহনাফের মতোই।তাছাড়া আহনাফের কাছ থেকে পুরো ঘটনা সংক্ষেপে শুনেছে তারা। আহনাফের মা আদিরার মেসের সুপারের কাছে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। মেসের সুপারকে বুঝাতে একটু কসরত তো করতেই হয়েছে। মারসাদ ও আহনাফরা রাত বারোটার পর আরও কিছু বন্দোবস্ত করে হোস্টেলে ফিরে গেছে। আহনাফের পরিবারের সকলের সাথে কুশল বিনিময় ও রাতের খাবারের পর্ব শেষ হওয়ার পর আদিরা আহনাফের ছোটো বোনের সাথে ঘুমোতে চলে যায়। আহনাফের ছোটোবোন অনেকটাই ছোটো। সবে দশম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। আহনাফের ছোটোবোনকে দেখে আদিরার মনে হয়েছিল মেয়েটা অনেক পড়াকু হয়তো। চোখে মোটা গ্লাসের চশমা সাথে খুব কম কথা বলা। এখন আদিরা অর্নি মানে আহনাফের বোনের রুমে বসে আছে। রুমের ভেতরে বড়ো একটা বুকশেলফ আর তাতে পাঠ্যবই, বাংলা সাহিত্য, ইংরেজি সাহিত্য ও জ্ঞানমূলক বইয়ে পরিপূর্ণ। আদিরা পুরো ঘরে চোখ বুলাচ্ছে। অর্নি বিষয়টা খেয়াল করল অতঃপর আদিরাকে বলল,

–আপনি মারসাদ ভাইয়ার ওয়াইফ তাই না?

আদিরা অর্নির প্রশ্ন শুনে অর্নির দিকে তাকায়। মেয়েটা কথা বলার সময়ও কেমন যেনো গম্ভীর্যতা নিয়ে কথা বলে। আদিরা অর্নিকে মৌন সম্মতি দিলে অর্নি খানিকটা হাসে। তারপর বলে,

–আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি, তখন আমি মারসাদ ভাইয়াকে প্রপোজ করেছিলাম।

আদিরার অক্ষিগোলক খনিকেই কিয়ৎপরিমাণ বড়ো হয়ে যায়। অর্নির থেকে এরকম কিছু শুনবে এটা সে ঘুণাক্ষরেও আশা করেনি। আদিরাকে চমকে যেতে দেখে অর্নি আবারও হেসে বলে,

–বিনিময়ে মারসাদ ভাইয়া বলেছিলেন, “এখন সময় নিজের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করা, নাকি আবেগে অতল সাগরে ভেসে যাওয়া! একসময় নিজেই বুঝতে পারবে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। তোমাকে আমি মাহির মতোই ভাবি। আশাকরি তুমি আমার কথার তাৎপর্য বুঝতে সক্ষম।” উনার সেদিনের বলা প্রতিটা শব্দ আমার মস্তিষ্কে গেঁথে আছে। উনার বলার মধ্যেই আমার মন সংকেত দিচ্ছিল, উনি কখনোই আমায় প্রিয়তমার আসনে বসাবেন না। তাকে এতটুকু চিনতাম যে সে সম্পর্কের মূল্যবোধ জানে। আজ আমায় বোন বলবে আর কাল বউ! এমন স্বভাব উনার না। আমার ছোটোভাইয়াও তেমনি। তাই তার আশা আমি তখনই ত্যাগ করেছি। আমার মনে হয়, যা আমার না তার পেছোনে সময় নষ্ট করা অর্থহীন। জানি নিয়তি অনেক কিছু বদলায় কিন্তু আমার মনে হয়নি নিয়তি সেটা বদলাতো। এই দেখো, আজ আমার নিয়তি পরীক্ষাও হয়ে গেলো। কনগ্রাচুলেশন ফর ইউর নেক্সট জার্নি।

আদিরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে অর্নির কথাগুলো শুনলো। অর্নির জায়গায় অন্যকেউ হলে এতো সহজে বিষয়টা মেনে নিতো না। অনেক জল ঘোলা করতো। অর্নির বয়স কম হলেও ম্যাচুরিটি মাশাআল্লাহ্। আদিরা অর্নির হাত ধরে বলল,

–দোয়া করি তুমি জীবনে এমন এক সঙ্গী পাও যে কীনা তোমাকে ছাড়া অন্যকাউকে প্রিয়তমার নজরে না দেখে।

অর্নি চমৎকার হাসলো। এরপর অর্নি আদিরাকে ঘুমোতে বলে নিজে টেবিল লাইট জ্বালিয়ে পড়তে বসলো। সামনে তার টেস্ট পরীক্ষা।

_________
সকালে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে দেলোয়ার সহ তার কয়েকজন সঙ্গী এলো। প্রথমেই সাগরদের সাথে দেখা করল। দেলোয়ার সাগরকে সরাসরি প্রশ্ন করে,

–আদিরা কই? ওরে এখানে আনো। আইজকে আর আমার হাত থেকে পালাইতে পারতোনা। ওরে লইয়াই যামু আইজকা।

সাগর শ*য়তা*নী হাসি দিয়ে বলে,
–ধৈর্য ধরেন। মাত্র আসলেন একটু বসেন তারপর পরশ আপনাদের আদিরার মেসের কাছে নিয়ে যাবে।

খানাপিনা শেষে পরশ দেলোয়ারদের আদিরার মেসে নিয়ে গেছে। নিলয় পুরো ঘটনা নিরবে দেখে গেছে। সে আশা রাখছে, মারসাদ ঠিক কিছু না কিছু করেছে।

অপরদিকে রবিন আড়াল থেকে দেলোয়ারদের দেখে মারসাদকে গিয়ে জানায়। মারসাদ বাঁকা হেসে বলল,

–আজ মিষ্টি বিতরণ হবে। সাগররা তো ক্যান্টিনেই আছে। চল। সেলিমকে বলেছিলি পাঁচ কেজি মিষ্টি আনতে?

রাহিন খুশিতে ডগমগ হয়ে বলে,
–হ্যাঁ। সেলিম পথেই আছে। এই শোন, এক কেজি আমাদের জন্য চমচম আনতে বলছি। আর চার কেজি মিষ্টি সবাইকে বিলি করবি।

মৃদুল রাহিনের মাথায় ঠু*য়া মে*রে বলে,
–পেটুকরে পেটুক! আগে ঝামেলা মিটুক। তারপর তুই মিষ্টি খাস। এখন সাগরদের বেশি করে মিষ্টি খাওয়াবো যাতে ডায়েবেটিস হয়।

রাহিন মাথা ঘষতে ঘষতে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে ওদের সাথে চলতে থাকে। ক্যান্টিনে গিয়ে আহনাফ সকলের উদ্দেশ্যে জোড়ালো শব্দে বলে,

–নেও সবাই মিষ্টি মুখ করো। তোমাদের ভিপি কাল বিয়ে করেছে।

আহনাফের মুখ নিঃসৃত বাক্য শুনে ক্যান্টিনে উপস্থিত সকলে হতবাক হয়ে গেল। সাগর তখন সবে চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছিল। আহনাফের বক্তব্যে ও মারসাদের হাসিমাখা মুখশ্রী দর্শনে গরম চা নাকে-মুখে উঠে গেছে। নিলয় মুখ বিকৃত করে হাসি কন্ট্রোল করে সাগরকে পানি দেয়। এদিকে সেলিম সবাইকে মিষ্টি দিচ্ছে। এখন মৃদুল উচ্ছাসিত কন্ঠে বলে উঠে,

–বিয়ের কনে কে জানতে চাইবে না? না চাইলেও বলে দিচ্ছি। ফার্স্ট ইয়ারের জুলোজি ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী আদিরা আদওয়া।

সাগর এবার পানির গ্লাসটাই ফ্লোরে ফেলে দিয়েছে। কাচের গ্লাসটার কিছু অংশ ভেঙে গিয়ে সেটা এখন ব্যবহারের অনুপুযোগী। মারসাদ সাগরের হতভম্ব মুখাবয়ব দেখে বড়োই তৃপ্তি পেলো। ওরা পাঁচজন গিয়ে সাগরদের পাশের টেবিলে বসল। মারসাদ হেসে বলল,

–আমাকে অভিনন্দন জানাবি না? কালরাতে মনে হলো বিয়েটা করেই ফেলি। আর কতো হা*রাম সম্পর্কে থাকব!

সাগর রাগে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। মারসাদ আবারও বলল,
–কাল দাদী ও ফুপির সাথে কথা বলার পর আমার মনে হলো, আমার জীবনে খুব আপন কাউকে আনা উচিত। আর তারাও চাচ্ছিলেন আমি বিয়ে করি। তাই করে ফেললাম। এই সেলিম! সাগরকে এক পিস মিষ্টি বেশি দিস।

মারসাদরা ক্যান্টিন থেকে মিনারের কাছে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়। মারসাদের বিয়ের খবর তুফানের গতিতে ক্যান্টিন থেকে পুরো ভার্সিটিতে ছড়িয়ে পরে। সামিরার কানে কথাটা যাওয়া মাত্র সামিরা হতবাক হয়ে যায়। তার এখন নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছে না। গতকাল রাতে তার কাকিমনির কাছ থেকে মারসাদের রিজেক্ট করা শুনে নিজের রুমে ভা*ঙচুর করেছে আর আজ সকালে এসে মারসাদের বিয়ের খবর শুনে তার নিজেকে ভীনগ্রহের প্রাণী মনে হচ্ছে। সামিরার কাছে হুট করে মনে হলো খবরটা গুজবও হতে পারে। সাগরকে ফোন করলে সাগর তাকে বলে,

–একটু আগে আদিরার মেসে গিয়ে দেলোয়াররা ফিরে এসেছে। মেসে গিয়ে আদিরার আত্মীয় পরিচয় দেওয়ার পর দেলোয়ার জানতে পারে কাল রাতে আদিরা তার এক ফ্রেন্ডের বাড়িতে গিয়েছে। আর মারসাদ বলছে সে নাকি আদিরাকে বিয়ে করেছে। সবটা কেমন উল্টে গেলো। দেলোয়ার এখন রাগে ক্ষোভে ভার্সিটির গেটে আসছে। দেলোয়ার এখনও জানেনা আদিরার যে বিয়ে হয়েছে।

সামিরা হতবাক হয়ে স্বস্থানে বসে পরেছে। দেলোয়ারের সাথে সাগরদের ভার্সিটির গেটে দেখা হলে দেলোয়ার চিৎকার করে কয়েকটা অশ্রাব্য উক্তি নিঃসৃত করে বলল,

–কই আদিরা? ওর মেসের হেড কয় ওয় নাকি কাইল রাতে কই গেছে। তুই কইছিলি আদিরারে আমি ওইখানে পামু। এখন কই আদিরা? তোরা আমার সাথে বাটপারি করছোস?

নিলয় জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
–কাল রাতে আদিরা বিয়ে করেছে। একসাথে দুই প্ল্যান করা হয়েছিল যার একটার কারণে আরেকটা ভেস্তে গেছে।

দেলোয়ার নিলয়ের শার্টের কলার ধরে চোখ-মুখ শক্ত করে বলে,
–কী কইলি তুই? আবার ক।

পরশ জলদি এসে নিলয়কে দেলোয়ারের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়। নিলয় আবার বলে,
–বিশ্বাস না হলে ভার্সিটিতে যাকেই জিজ্ঞেস করবেন সেই বলবে। আদিরার হাজবেন্ড এই ভার্সিটির ভিপি। আপনি আরেকটু আগে আসলে আদিরাকে পেতেন হয়তো।

দেলোয়ার রাগে দেয়ালে লা*থি দেয়। সাগররা দেলোয়ারকে মারসাদদের কাছে নিয়ে যায়। দেলোয়ার সেখানে গিয়ে চিৎকার করে অশ্রাব্য গালি দেয় তারপর বলে,

–কার লগে আদিরার বিয়া হইছে? সামনে আয়। দেখি তোর কতো বড়ো বুকের পাটা।

মারসাদ শিস বাজিয়ে পকেটে দুহাত পু’রে দেলোয়ারের সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর বলে,
–আমি আদিরার হাজবেন্ড।

দেলোয়ার হুংকার ছেড়ে জিজ্ঞাসা করে,
–তোর সাহস হয় কেমনে আদিরাকে বিয়ে করার? কোন সাহসে তুই ওরে বিয়া করছোস?

মারসাদ দেলোয়ারের শার্টের কলার ঝেড়ে দিয়ে হাসিমুখে বলে,
–যেই অধিকারেই করি সেটা একান্ত আমার ও আদিরার ব্যাক্তিগত। তাছাড়া শ্বশুর-শাশুড়ির থেকে আগে থেকেই অনুমতি একবার নিয়েছিলাম। এখন সে আমার বউ আর ওরা আমার পরিবার। তাই তুই আমার পরিবারের দিকে চোখ তুলেও তাকাবি তো তোর ব্যাবসা ও তোর বাপের ব্যাবসা সব সব লাটে উঠবে। কাল রাতেই সাতক্ষীরাতে আমি আমার পরিচিত পুলিশ ফোর্স পাঠিয়ে দিয়েছি। আর বর্ডারেও তোর চোরাকারবার ধরার জন্য পুলিশ বসে আছে। খবর নিয়ে দেখ তোর ট্রাক বর্ডারে ধরা পরেছে। আর সাতক্ষীরা থেকে আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে পুলিশ ফোর্স সসম্মানে ঢাকাতে নিয়ে আসবে। আর দোকানবাজার সব তোর বাপের কাছেই পরে বিক্রি করবে আর সেটা করাবে পুলিশ ফোর্স নিজ দায়িত্বে। আর অতি শিগ্রই তোর বাপ তার গদি হারাবে কারণ তোদের কিনে রাখা পুলিশ অফিসারকে বান্দরবান ট্রান্সফার করা হবে। তখন কী করবি?

দেলোয়ার সহ সবাই হতভম্ব হয়ে মারসাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here