এক_শহর_প্রেম💓 লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৩৪

0
645

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৪
সন্ধ্যার পরপর রিন্তি ও সাবিহা চলে যায়। মাহি তার দাদীকে ফোন করে জানিয়ে দেয় আজ আহনাফদের বাড়িতে থাকবে আর তার মাকে মেসেজ করে দেয়। তারপর ফোনে এরোপ্লেন মুড করে রাখে। হোয়াটসএপেও নোটিফিকেশন অফ করে রাখে যাতে ফোনকল না আসে। মাহির মা কয়েকবার মাহিকে ফোনে ট্রাই করে একা একা চিল্লাচিল্লি করে হতাশ হয়ে থেমে যান। ঝ*গড়া করতেও তো অপরপক্ষের অংশীদারিত্ব লাগে!
এদিকে মাহিরা রাতের অর্ধেক সময় ব্যালকনিতে গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছে। আহনাফের ভাবি রাত বারোটা পর্যন্ত ছিল তারপর চলে গিয়েছে। অর্ণি কিছুক্ষণ পড়ে তারপর আড্ডায় যোগ দেয় আবার পড়তে চলে যায় অবস্থা।

পরেরদিন সকালে মারসাদ থানা থেকে আদিরার বাবা-মাকে নিয়ে দুই বেডরুমের ভাড়া বাসায় যায়। গতকাল রাতে টিউশন শেষে ওরা রাত বারোটা পর্যন্ত টুকটাক গোছগাছ করেছিল তারপর আহনাফদের বাড়িতে গিয়ে রাতের খাবারের পর ঘুমিয়ে গিয়েছিল। আদিরার বাবা বাসা দেখে বলেন,

–তুমি বাবা এতো কষ্ট করলা কেন শুধু শুধু। কতোকিছু করছ তুমি আমাগো লাইগ্যা। আমার মাইয়াডারেও ওই দেলোয়ারের হাত থাইকা দুই দুইবার বাঁচাইছো। তোমার কাছে আমি ঋণি হইয়া গেলাম। আমার কর্য পরিশোধ করতেও সাহায্য করছ।

মারসাদ আদিরার বাবার দুইহাত চেপে ধরে বলে,
–না আঙ্কেল। এসব বলে আমায় ছোটো করবেন না। আমি এখন আপনার মেয়ের জামাই। আপনারা আমারও পরিবার।

আদিরার বাবা মারশাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
–আল্লাহ্ তোমার ভালা করুক বাজান। অনেক অনেক সুখী হও।

মারসাদ তৃপ্তিময় হেসে উনাদের থাকতে বলে চলে যায় আহনাফদের বাড়িতে আদিরাকে আনতে। আহনাফরা ক্লাসে চলে যায়। আদিরা আহনাফের মা, ভাবি সকলের থেকে বিদায় নিয়ে আগে মেস থেকে সবকিছু নিতে যায় সাথে টাকা পরিশোধ করে কিছু বাজার করে ভাড়া বাসায় যায়। অনেকদিন পর বাবা-মা, ভাইকে দেখে আদিরা তার কান্না আটকাতে পারেনা। মারসাদ ওদের নিজেদের মতো থাকতে দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে আদিরাকে বলে যায়, যদি কিছু প্রয়োজন হয় তাহলে যেন ফোন করে। তাছাড়া সন্ধ্যার পর আসবে আদিরাকে নিতে।

__________

মারসাদ ও আদিরা রাস্তার কিনারায় হাঁটছে। শরৎকালের একেবারে শেষের দিকে আশ্বিনমাস। সন্ধ্যার পর মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। দুজন দুজনার মতো নিঃশব্দে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে মারসাদ আদিরার ডান হাতটা ধরে। আদিরা হালকা কেঁপে উঠে মারসাদের দিকে তাকায় কিন্তু মারসাদের দর্শনেন্দ্রিয় সম্মুখপানে স্থীর। আদিরা আলতো হেসে নিজেও সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। মারসাদ নিরবতা ছেড়ে সুধায়,

–গতকাল যখন তোমার চোখ ধরেছিলাম তখন তো তোমার মাঝে কম্পনের কোনো অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারিনি? তাহলে আজ পাশাপাশি হেঁটে হাত ধরাতে তুমি কেঁপে উঠলে কেনো?

আদিরার নির্ভীক জবাব,
–গতকাল আমি আপনার উপস্থিতি আরও আগে বুঝতে পেরেছিলাম। আপনার পারফিউম! আর যেহেতু নিঃশব্দে আসছিলেন তাই আচমকা কিছু করবেন বুঝেছিলাম। আমি গতকাল একটুও আনমনা ছিলাম না। করমচা খাচ্ছিলাম তো। আর আপনি এসে আমার পেছোনে কিছু সময় স্থির ছিলেন বলেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম।

মারসাদ ভাবুক স্বরে বলে,
–ওহ আচ্ছা! তুমি তবে সিচুয়েশনের জন্য তৈরি ছিলে। আর এখন তুমি আশা করোনি আমি হাত ধরব?

আদিরা নিঃশব্দে হাসে অতঃপর বলে,
–আমার মন বলছিল আপনি আমার হাত ধরবেন। কিন্তু কী কারণে গতকাল ও আজকের মধ্যে পার্থক্য হলো তা আমি নিজেও জানিনা। মানুষের মস্তিষ্ক কখন কিসে রিয়েক্ট করে তা আগে থেকে তো মানুষ জানেনা। প্রতিটা সংবেদী স্নায়ুতন্ত্র কখন উদ্দিপনা বেশি করে আর কখন কম তা নির্ভর করে তার চিন্তার উপর। তবে উদ্দিপনা অনেকসময় বোঝা যায় না।

মারসাদ হতাশ স্বরে বলে,
–তোমার প্রিয় সাবজেক্ট প্রাণীবিদ্যা আমি জানি। আমি আমার সাবজেক্টের প্যারা খেতে খেতে অতীষ্ঠ। কবে যে শেষ হবে!

আদিরা কিছুটা জোরে হেসে উঠে। তারপর বলে,
–আপনি তাহলে ঢাবি ছেড়ে আসলেন কেন? একই তো সাবজেক্ট ছিল।

মারসাদের স্পষ্ট জবাব,
–আহনাফের জন্য। তাছাড়া তোমাকেও এখানে পেলাম। সেসব বাদ দেও। কিছু লাগবে বাসার জন্য?

আদিরা বলে,
–না। আজকের গুলোই তো ধরা হয়নি। মা গ্রাম থেকে রান্না করে এনেছেন। আপনি তো চলে গেলেন। মা আমাকে বকেছে এজন্য। একটুক্ষণ থেকে গেলে কী হতো?

–আচ্ছা যাও শুক্রবার যাব সবাই মিলে। শাশুড়ির হাতে রান্না খেয়ে আসব।

আদিরা খুশি হয় শুনে। এরপর ওরা টিউশনে চলে যায়।

_____
কেটে গেছে ওদের বিবাহিত জীবনের এক মাসের বেশি সময়। আজকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতোদিন পর আজকে আদিরা সামিরাকে ক্যাম্পাসে দেখল। কেমন রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। এর আগে সামিরা ক্লাস করেছে কীনা তা আদিরা জানে না। আজ সামনে পরেছে তাও ধা*ক্কা লেগে। সামিরা রেগে রূঢ় শব্দে বলল,

–চোখে দেখো না? কোথা থেকে আসে অসহ্য! তোমাকে দেখলেই আমার খু*ন করতে ইচ্ছে করে।

আদিরা কিছু বলল না। সামিরার সাথে লাগা মানে সা*পের লেজে পা দেওয়া। আদিরা পরীক্ষা দিতে চলে গেল। কাউকেই সামিরার বিষয়ে বলল না।
পরীক্ষার দিনগুলো নিজের মতো পর্যায়ক্রমে এসে চলেও গেল এখন শুরু ছুটি। পরীক্ষা সবার মোটামোটি ভালোই হয়েছে। আদিরা ওর ভাইকে সামনের বছর এখানকার স্কুলে ভর্তি করাবে বলে টুকটাক বাসায় পড়াচ্ছে। ক্লাস ফোরে ভর্তি করাবে।

পরীক্ষা শেষে মারসাদরা সবাই মিলে প্ল্যান করল ওরা সাজেক যাবে। মেঘের রাজ্য সাজেকে বর্ষাকালে ও শীতকালে গেলে সুন্দর। কখনও তীব্র শীত সাথে কুয়াশা ও মেঘের বিচরণ আবার কখনও হুটহাট বৃষ্টি। শীতকালে গেলে কলাংক পাহাড়ে উঠা কিছুটা সহজ বর্ষাকালের তুলনায়।
মারসাদরা পাঁচজন, মাহি, আদিরা, সাবিহা, রিন্তি, সুমি, মৌমি, আশিক এরা সবাই যাবে। তবে মৌমি ও আশিক একদিন পর যাবে। মৌমির পরিবারে বিয়ের জন্য প্রেশার দিচ্ছিল বলে মৌমি আশিকের কথা বলে দিয়েছিল। মৌমির পরিবার প্রথমে রাজি হচ্ছিল না পরে মৌমির বুঝানো ও আশিকের খোঁজখবর নিয়ে রাজি হয়। ঘরোয়াভাবে ওদের আকদ হবে এরপর মৌমির অনার্স শেষ হলে অনুষ্ঠান। মারসাদরা যেদিন রওনা হবে সেদিনই মৌমি ও আশিকের আকদ হবে।

আদিরার বাবা-মাকে আদিরা বলেছে। তারা আপত্তি করেনি। মেয়ে তার স্বামীর সাথে যাবে তাই ভয়ের কিছু নেই। মারসাদ তার জুনিয়র কয়েকজনকে বলে গিয়েছে যাতে আদিরার বাবা-মায়ের কিছু লাগলে এনে দেয়। সাজেকের রিসোর্টে দুইটা ডাবল বেডের রুম ও একটা সিঙ্গেল বেডের রুম বুকড করে রেখেছে ওরা। ওদিকে মৌমি ও আশিকও একটা রুম বুকড করে রেখেছে। গাবতলী থেকে বাসে উঠেছে রাত ১০টায় বাসে ছাড়বে। আদিরা জানালার পাশে বসে। ওর এসি বাসে বেশি বমি হয় বলে মারসাদরা ননএসি বাস নিয়েছে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি। প্রকৃতিতে শীতকাল এসেছে দিন দুয়েক হলো। তবে শীত অতোটা অনুভূত হচ্ছে না। শাল বা সোয়েটার পড়ার মতো শীত পরেনি। তবে সাজেকে এসময়ও শীত লাগবে বলে ওরা আজ সকালে হালকা কিছু কেনাকাটা করেছিল তাছাড়া রাতের বেলায় বাস জার্নিতে জানালা একটু খোলা থাকলে হুরহুর করে শীতল বায়ু ঢোকে শীত অনুভব করাবে। মারসাদ জানে আদিরার জন্য জানালা একটু হলেএ খুলে রাখতে হবে নয়তো ওর বমি হবে। বাসে উঠার আগে বমির ঔষধ খাওয়ানোর পরেও যার বমির সমস্যা আছে তার একটু বেতাল হলে হবেই। মারসাদ আদিরার দিকে তাকিয়ে দেখল আদিরা বাসের জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে। এটা ওর স্বভাব যে বাসে উঠলে জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে রাখবে। মারসাদ ব্যাগ থেকে একটা শাল বের করে আদিরার মাথা জানালার কাছ থেকে উঠিয়ে মাথা ও কানসহ শরীরে শালটা পেঁচিয়ে দিয়ে বলল,

–প্রচণ্ড ঠান্ডা পরবে বাস ছাড়লে। একে তো শীত ঋতু তারউপর জানালা খোলা। গরমের সময়ই খোলা জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসে।

আদিরা আর দ্বিরুক্তি করল না। মুচকি হেসে আবারও জানালার সাথে মাথা ঠেকাল। এদিকে আহনাফ মাহির সাথে নিজের সিট রেখেছে কিন্তু মাহি বলছে মাহি রিন্তির সাথেই বসবে। রিন্তির সিট পরেছে রাহিনের সাথে। রাহিন তো সেই খুশি। সে বারবার দাঁত কে*লিয়ে রিন্তির দিকে তাকাচ্ছে। আর রিন্তি মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে। রিন্তির ভাবনা,

“এই মুটোই তো দুই সিট নিতে যথেষ্ঠ! তাহলে সে কই বসবে?”
(রাহিন অতোটাও মোটা না)

মাহি ও আহনাফের এই দুইমাসে যে কতো ঠোকাঠুকি লেগেছে যার দরুন মারসাদ এই দুটোকে দেখলেই টম এন্ড জেরি বলে। মাহি বলছে,

–আমি রিন্তির সাথেই বসব। আপনি আপনার বন্ধুর সাথে বসেন না।

আহনাফের ভাবলেশহীন জবাব,
–আমি তোমার সাথে বসব। দেখো জার্নিতে তোমার ঘুমোতে সুবিধা হবে।

মাহি নাছোড়বান্দা। সে তো নিজের কথায় অটল। সে বারবার একই কথা বলছে। বাসের অনেকেই চোখ-মুখ কুঁচকাচ্ছে আবার অল্প বয়সি কিছু ছেলে-মেয়ে আছে যারা মুখ টিপে হাসছে। মারসাদ আদিরার গায়ে শাল পেঁচিয়ে দিয়ে মাহি ও আহনাফের ঝ*গড়া শুনে বিরক্ত হয়ে বলে,

–প্লিজ অফ যা তোরা। এতো ঝ*গড়া কিভাবে করিস?

মাঝখান থেকে মৃদুল বলে উঠে,
–এরা যে একে অপরকে ভালোবাসে আমার মনেই হয়না। মাঝেমাঝে মনে হয় এরা চিরশ*ত্রু একে অপরের!

মারসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–টস হবে। টসে যে জিতবে সেটাই হবে।

আহনাফ টসের কথা শুনে মারসাদের দিকে করুণ নজরে ইশারা করছে। মারসাদ বিরক্ত হয়ে টস করল।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
অনেকটা সুস্থ আলহামদুলিল্লাহ্‌। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here