হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #নুুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৩০(হলুদ স্পেশাল)

0
474

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩০(হলুদ স্পেশাল)
জারিফ প্রিয়ার নাম্বারে, হোয়াটসএপে কয়েকবার টেক্সট করে প্রতিউত্তর না পেয়ে প্রিয়মকে ফোন করে। প্রিয়ম ইভেন্ট অর্গানাইজারের সাথে কথা বলছিল। সকালে গিয়ে দেখে আসবে। যেহেতু গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান একত্রে হবে আর প্রিয়ম এক দিকে কনের ভাই আরেকদিকে বরের বেস্টফ্রেন্ড। প্রেশার তার ভালোই। প্রিয়ম ফোন রিসিভ করে বলে,

“কী ব্যাপার বরবাবু? হঠাৎ আমাকে মনে পরল!”

“কেনো তোকে মনে পরতে পারে না?”

প্রিয়ম রম্যস্বরে বলল,
“পারে তো। আফটারঅল আপনি আমার বোনজামাই।”

“হয়েছে তোর একটিং? তাহলে এবার বলি?”

জারিফের এহেনো কথায় প্রিয়ম হাসি চেপে বলে,
“তোর বউ ঘুমিয়েছে আধঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। মেহেদী দেওয়ার সময় চু*লকা*নোতে এ*লার্জির মেডিসিন খেয়েছিল। তাই তার চোখ জুড়ে নিদ্রা ভর করেছে। এখন আপনি বললে তাকে ডাকতে পারি তবে বিশেষ লাভ হবে বলে মনে হয় না।”

“তাহলে থাক। হলুদের ভেন্যুতে ফ্লাওয়ারের এরেঞ্জমেন্ট হয়েছে? কোনো হলুদ ও লাল ফুল যেনো না থাকে হলুদের ফাংশনে।”

প্রিয়ম জারিফকে আশ্বস্ত করে বলে,
“সবকিছু মাথায় আছে আমার। আমার বোনেরও সেম আবদার। অথচ লাল গোলাপ ওর খুব পছন্দের। রাখিরে। বাবা ডাকছেন।”

কল কে*টে জারিফ কফির মগে চুমুক দিয়ে মোবাইলে কিছু রিং কালেকশন দেখছে। প্রিয়ার জন্য নিবে সে।

__________

আয়ান, রাদ, সাদ সকাল সকাল প্রিয়াদের বাড়িতে চলে এসেছে। কথা ছিল নিশি, মিম, অর্ষাকে নিয়ে আসবে কিন্তু এই তিনজন লেট লতিফাদের গোছগাছই শেষ হয় না! তাই ওরা তিনজন ওদেরকে ফেলে চলে এসেছে। এসেই নাস্তা করে প্রিয়ম ও প্রিয়ার অন্য কাজিন ভাইদের সাথে হাতে হাতে কাজে লেগে গেছে।

প্রিয়া সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে হেলতে দুলতে ব্রাশ করতে গেছে। তার রুমের ওয়াশরুমে কে যেনো গেছে তাই রুমের বাহিরে গেছে। ব্রাশ করতে যাওয়ার সময় রাদকে ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায়। ঘুমের কারণে চোখ মুখ ফুলা তার। প্রিয়া মুখ ভেঙচি দিয়ে বেসিনের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। তার চুল সব কা*কের বাসার মতো ফুলে আছে। জামা, পাজামা, ওড়না একেকটা একেক রঙের। আবার মাথায় মিকি মাউসের রাউন্ড ব্যান্ড। গাড়ো গোলাপি লিপস্টিক ঠোঁটে সহ ঠোঁটের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে। প্রিয়া এসব দেখে রে*গে নিজের রুমে গিয়ে রাহাকে ইচ্ছেমত মা**রতে থাকে সাথে আরও কয়েকটা পুচকে কাজিনকে। ওরা মা**র খেয়ে কাঁদার বদলে হাসছে। মে**রে ক্ষান্ত হয়ে প্রিয়া ফেসওয়াশ নিয়ে এবার নিজের রুমের ওয়াশরুমে ঢুকলো। ওর কাজিনরা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।

________

জারিফ, জায়ান ও কয়েকজন কাজিন মিলে বাজারে গেছে। জারিফ যেতে চাচ্ছিল না কিন্তু জায়ানরা কি ছাড়বে! উহু! হলুদের তত্বের জন্য বড়ো মাছটা জারিফকে দিয়েই কিনাবে। তাছাড়া বিয়ের বরকে দিয়ে বাজার করানোর একটা উৎসব আছে বিয়ের পর। সেটাতে যাতে জারিফ না ঠকে যায় তাই এই পন্থা। জারিফ বিরক্তি নিয়ে বলে,

“এই সকাল সকাল মাছ বাজারে না আসলে হতো না? আমাকেই কেনো এনেছো ভাই? সুপার মার্কেট থেকে কিনলেই হতো।”

“অভ্যাস কর। সবসময় সুপার মার্কেট থেকে মাছ কিনলে হবে? এখানে তাজা মাছ পাওয়া যায়। সুপার মার্কেটে পাবি ফ্রিজার করা মাছ।”

বাকিরাও নানারকমের উপদেশবর্ষণ করছে আর জারিফ চোখ মুখ খিঁচে সেসব শুনছে।

_______

সন্ধ্যাবেলা পার্লার থেকে সেঁজে এখন প্রিয়া স্টেজে বসে আছে। চারিপাশে সাউন্ডবক্সে গায়ে হলুদের গান বাজছে। জারিফরা আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে চলে আসবে। এখনও সব অতিথিরাও আসেনি। মিমকে ইফা পাঠিয়েছে প্রিয়া কিছু খাবে কীনা জিজ্ঞেস করতে।

“কিছু খাবি?”

“হ্যাঁ।”

“কী খাবি?”

“বেশি করে ডার্কচকলেট মিক্সড আইসক্রিম আর কেক।”

মিম নিশি ও অর্ষার দিকে তাকায়। নিশি বলে,

“মুখ চকলেট দিয়ে মাখাতে? তোর তো স্বভাব খারাপ। ড্রাই কিছু খা।”

প্রিয়া বিরক্ত হলো। এরা নিজেরাই আগ বাড়িয়ে এসে জিজ্ঞেস করে কিছু খাবে কীনা? আবার নিজেরাই রেস্ট্রিকশন দেয়! বিরক্তি নিয়ে বলে,

“শুকনো টোস্ট হবে? যেগুলো দিয়ে তোর মা*থায় বা*ড়ি দিলেও টোস্ট ভা*ঙবে না! কিন্তু তোর মা**থা আর থাকবে না। হবে?”

নিশি ভ্রুঁ উুঁচিয়ে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো। অর্ষা হাসতে হাসতে খেয়াল করেনি স্টেজ থেকে পরে যাচ্ছিল তখনই একজোড়া হাত ওকে আগলে নেয়। অর্ষা চোখ মুখ খিঁচে আছে। মনে মনে ধরে নিয়েছে তার হা*ড্ডি শেষ! কয়েক সেকেন্ড পর কোনো ব্যাথা না পাওয়াতে ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখল এক শ্যামবর্ণা ছেলে অর্ষাকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছে। ছেলেটির চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। চোখগুলো খুব শান্ত। কালো পাঞ্জাবিতে আরও আকর্ষণীয় লাগছে। অর্ষা হচ্ছে ক্রা*শখোর! তাই যথারীতি তাই হলো। ছেলেটি অর্ষারই পলকহীন দৃষ্টি দেখে অপ্রস্তুত হলো। একটু কাঁশির শব্দ করলো কিন্তু অর্ষা হা করে তাকিয়েই আছে। প্রিয়া, মিম, নিশি, রাহা, সামিহা ওরা অর্ষাকে এভাবে দেখে মুখ টিপে হাসছে। ছেলেটি এবার সুন্দর করে বলে,

“এইযে মিস অর মিসেস! এবার উঠুন। আপনি পরে যাননি। আপনি সিকিউর আছেন।”

অর্ষা থতমত খেয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর বলে,

“ইটস অকে!”

অর্ষার বেমিল কথা শুনে ছেলেটি কেমন করে তাকায় তা দেখে অর্ষা দ্রুততার সহিত বলে,

“থ্যাংকিউ এন্ড সরি।”

ছেলেটি প্রতিউত্তর করে চলে যায়। সামনে প্রিয়মকে দেখে পিঠ চাঁপড়ে কথা বলতে থাকে। ছেলেটি যাওয়ার পর অর্ষা ঘোর লাগা নজরে দেখছে তাকে। মিম ওর সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

“ও হ্যালো মেম! কল্পনা থেকে বের হোন।”

“দেখা তানু পেহলি পেহলি বার বে! হোনে লাগা দিল বেকারার বে!”

অর্ষাকে গান গাইতে শুনে ওদের হাসি ছুটে যায়। রাহা এসে বলে,

“অর্ষাপুও পেয়ে গেছে। আমিই পেলাম না। ইশ! কবে যে আসবে!”

“তোর অর্ষাপু দিনে কয়েকশবার ক্রা*শ খায়। তাই এতো খুশি হোস না।”

আরেকদফা হাসির রোল পরে গেলো। অর্ষা ক্ষিপ্রগতিতে প্রিয়ার পিঠে ধু*মধা*ম লাগিয়ে হনহন করে অন্যদিকে চলে গেছে।

_______

জারিফকে প্রিয়ার পাশে বসানো হয়। সবাই ওদের ঘিরে রেখে ছবি তুলছে আরও কতো কী! জারিফ প্রিয়াকে একান্তে কিছু বলবে তার সুযোগই পাচ্ছে না। প্রিয়ার হাতে ওর ফোন দেখে সে এবার মেসেজ লিখে,

“পুষ্পকন্যা তার রূপের ঢালি নিয়ে হাজির! পুষ্পে আবৃত তার স্নিগ্ধ কায়া।”

মেসেজ পাঠিয়ে জারিফ প্রিয়ার দিকে হালকা ঘুরে হাতের উপর ভর দিয়ে চোখে হেসে তাকিয়ে আছে আর প্রিয়া সামনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। জায়ান, প্রিয়মরা এই মোমন্টটা ক্যামেরায় বন্ধি করল। জারিফের পড়নে সবুজ ডিজাইনার পাঞ্জাবি। হাতা গুটানো কনুইয়ের কাছ পর্যন্ত। চুলে জেল দেওয়া না। এলোমোলো করে আঁচড়ানো সাথে চোখে গ্লাস(ফ্রেম ছাড়া চশমা) তো আছেই। শুভ্র কায়ায় বাঁকা হাসি! অনিন্দ্য সৌন্দর্য বহন করছে।

প্রিয়া ফোনের ভাইব্রেশন বুঝতে পেরে একটু অপেক্ষা করে ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে জারিফের বার্তা দেখে এখন সে জারিফের দিকে তাকায়। ঠোঁটের কোণে স্নিগ্ধ হাসি। দুইজনের দুই নয়নের শুভ মিলনটা যদি ক্যামেরা বন্ধি না হয় তাহলে কী চলে! একদমই না। এটাও ক্যামেরায় ধারণ করা হলো।

গায়ে হলুদ লাগানোর কার্যকর্ম শুরু হয়েছে। প্রিয়ার পছন্দ অনুসারে ডার্ক চকলেট কেক আনা হয়েছে। কেউ কিছু খাওয়াতে আসলে সে কেক, ক্ষীর ও কালো আঙুর দেখিয়ে দিচ্ছে। জারিফ এখানেও প্রিয়ার বাচ্চামি দেখে হাসলো। বাহিরে ঝড়ো হাওয়া। বৃষ্টি হব হবে ভাব। জারিফ হালকা ঝুঁকে প্রিয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

“বৃষ্টি আসার আগমুহূর্তে শীতলতা তোমায় ঘিরে হোক। তুমি আমার হৃদয়ে সুখ বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো প্রিয়তমা!”

বাতাসে প্রণয়ের সুর। হৃদয়ে অনন্য খুশির জোয়ার। প্রতিক্ষায় এখন শুভ লগ্নের।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here