হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #নুুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৪০

0
405

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪০
চেয়ারপার্সনের রুমে জারিফ, প্রিয়া, প্রিয়ার বন্ধুরা ও সকালে যারা প্রিয়া ও জারিফকে নিয়ে নোং*রা কুটক্তি করেছে সেই মেয়েগুলো অবস্থান করছে। মেয়েগুলো এখন ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। জারিফ দুই হাত পেছনে রেখে স্ট্রেটফরওয়ার্ড দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়া বারবার জারিফের দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু তাতে জারিফের কোনো হেলদোল নেই। খানিকটা ভয়েও আছে! জারিফ আবার রে*গে নেই তো? মুখাবয়ব দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। এদিকে রূপা ও তার বান্ধুবীদের অবস্থা নাজেহাল। চেয়ারপার্সন স্যার সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন,

“রূপা, ন্যান্সি, শারিকা ও শীলা। আপনারা প্রিয়াকে জারিফ রিলেটেড কী বলেছেন?”

রূপারা ভয়ে ঢোক গিলল। ওদের চুপ করা দেখে চেয়ারপার্সন স্যার হুং*কা*রে ন্যান্সি ভয়ে কেঁপে উঠে বলল,
“স্যার, আমরা খারাপ কিছু বলিনি।”

“আমি জানি আপনারা কী বলেছেন। কে কী করল তাতে আপনাদের কী? আপনারা এখনি জারিফ ও প্রিয়ার কাছে ক্ষমা চাইবেন তারপর আপনাদের আমি কিছু কথা বলব। যদি আপনাদের সেটাতে অপরাগতা থাকে তাহলে হ্যা*রাস*মেন্টের জন্য ভার্সিটি থেকে সাসপেন্ডও হতে পারেন!”

রূপারা ভয় পেয়ে গেলো। তাদের পরিবার পর্যন্ত খবর পৌঁছালে ঝামেলা হয়ে যাবে কিন্তু ক্ষমা চাইতেও ইতস্ততবোধ করছে। কিন্তু ক্ষমা না চাইলে যে খুব বড়ো খেসারত দিতে হবে! এই মুহূর্তে প্রিয়ার প্রতি রাগ হলেও কিছু করার নেই। চারজন একে অপরের দিতে তাকাতাকি করে শেষ পর্যন্ত না পারতে ক্ষমা চায়। চেয়ারপার্সন স্যার বলতে শুরু করেন,

“আপনাদের জারিফ স্যার আর প্রিয়ার মধ্যে বিয়ের আগে কোনো প্রেম-ভালোবাসা ছিল না। প্রিয়া যে জারিফের বন্ধুর বোন সেটাও জারিফ জানত না। পারিবারিক ভাবে জারিফের বিয়ে তার বন্ধুর বোনের সাথে ঠিক হয় তারপর যখন জারিফ জানতে পারে তখন সে আমাদের সকল ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের জানায়। সে দ্বীমনাতে ছিল যা আমরা ক্লিয়ার করেছি। এমনকি প্রিয়ার পরীক্ষার খাতা আমি নিজে দেখতাম। মিড২ ও ফাইনালের প্রশ্ন জারিফ আমার কাছে দিয়ে গিয়েছিল যাতে আমি মডিফাই করে দেই। প্রিয়া যেসব সেকশনে থাকবে জারিফ সেসব সেকশনে ক্লাস নিবেনা বলে জানিয়েছে। এতোকিছু কিন্তু সে নাকরলেও পারত। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি এসব করার কারণ! যাইহোক, আগামীতে এরকমটা যেনো না হয় সেইদিকে লক্ষ্য রাখবেন।”

রূপা ও তার বান্ধুবীরা চেয়ারপার্সন স্যারকে বলে বেরিয়ে চলে গেল। প্রিয়ারাও চলে আসল। জারিফ চেয়ারপার্সন স্যারকে কৃতঙ্গতা স্বরূপ বলে,

“থ্যাংকিউ স্যার।”

“মাই প্লেজার বেটা। আগাছা ছোটো থাকতেই উপড়ে ফেলতে হয়। সবসময় মনে রাখবে। মে আল্লাহ ব্লেস বোথ অফ ইউ।”

জারিফ মুচকি হেসে বলে,
“দোয়ায় রাখবেন স্যার। আসি।”

____________
প্রিয়া ক্যাম্পাসে বসে দাঁত দিয়ে নখ কা*টছে। হুট করে বলে উঠে,
“উনি এই ব্যাপারে কীভাবে জানল! আমি তো বলিনি আর সে আশেপাশে ছিলও না। তার মানে রাদ!”

প্রিয়া তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে রাদের দিকে তাকায়। রাদ বাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে জারিফের অফিস রুমের জানালার দিকে আঙুল তাক করে বলে উঠে,
“আপনার স্বামী ওই ওইযে উপরে তার অফিস রুমের জানালা দিয়ে পুরো ঘটনা দেখছেন কিছু না শুনলেও। আপনাকে কাঁদতেও দেখেছেন আপা! তারপর আমি ডিপার্টমেন্টে ফারুক স্যারের কাছে গেলে সে আমাকে তার অফিস রুমে ডেকে সব জানতে চেয়েছেন।”

প্রিয়া ভাবুক কণ্ঠে বলে,
“ওহ আচ্ছা। তাহলে এই ব্যাপার!”

রাদ বলে,
“হ্যাঁ। ভালোই হয়েছে স্যার সব মিটমাট করে ফেলেছে। এসব ঝামেলা না রাখাই ভালো।”

প্রিয়াও সায় দেয়। কিন্তু জারিফ যে প্রিয়ার সাথে কথা বলল না! চেয়ারপার্সন স্যারের রুম থেকে বের হয়ে প্রিয়া জারিফকে ডেকেছিল কিন্তু জারিফ না তাকিয়ে কোনো জবাব না দিয়ে চলে গেছেন।

বাসায় ফেরার পথেও জারিফ একদম নিরব। ড্রাইভিং করে যাচ্ছে একমনে। আর বেচারি প্রিয়া! কখন থেকে উুঁশখুশ করছে। একবার জারিফের থেকে পানি চাইছে তো আরেকবার টিসু চাইছে! জারিফও চুপ থেকে সব এগিয়ে দিচ্ছে কিন্তু কথা বলছে না। প্রিয়া এই অবস্থা দেখে মুখে নখ কা*টতে কা*টতে ভাবল কিছু একটা করবে। হঠাৎ করে প্রিয়া গাড়ির ব্রেকে চাপ দিয়ে জারিফকে ব্রেক করতে বাধ্য করল। গাড়ি থামিয়ে জারিফ এখন সামনের দিকে অনড়ভাবে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া নিজের সিটবেল্ট খুলে জারিফের দিকে এগিয়ে নিজের কান ধরল! তারপর বলল,

“সরি সরি। দেখেন ওদের কথাগুলো আমার খুব খারাপ লেগেছিল। ট্যুর থেকে ফেরার দিনই দেখেছি। আপনি ওদেরও স্যার তাই জানাতে চাইনি। আজকে সামনাসামনি ওদের কথাবার্তা আমাকে স্তব্ধ করে তুলেছিল। মস্তিস্কে কিছু বলার মতো শব্দ বা জবাব আসছিল না।”

জারিফ তাও নিরুত্তর। প্রিয়া আবার বলে,
“ঝামেলা হওয়ার ভয়ে কিছু বলতে চাইনি। এরপর থেকে এমন কিছু হলে সবার আগে আপনাকে জানাব। প্রমিস।”

“এমন কিছু হবেও না আশাকরি।”

প্রিয়াকে প্রত্যুত্তর করে গাড়ি স্টার্ট করল। ওদের বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

__________

রাতে আয়ান দেখল পিহুর কোনো জবাব আসেনি। আয়ান লম্বাশ্বাস নিয়ে লিখল,
“অ্যাই ওয়ান্না মিট উইথ ইউ। আগামীকাল বিকেলে। তোমার ঠিকানা থেকে রমনাপার্ক কাছে। সেখানেই আসব। ঠিক বিকেল পাঁচটায়।”

পিহুর ফোনে নোটিফিকেশন আসা মাত্রই সে শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসল। পিহুর হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠাতে পরী হকচকিয়ে উঠল। বেচারি পরী হেডফোনে গান শুনছিল। পিহু পরীকে হুড়মুড়িয়ে জড়িয়ে ধরে উচ্ছাসের সাথে বলে,

“ইয়েয়ে! সে দেখা করতে আসবে।”

পরী থতমত খেয়ে বুকে থু*থু দিয়ে বলে,
“ওহ। তাহলে যা। বইন দয়া করে একটু ধীরে সুস্থে কথা বলিস। ভাইয়া না আবার ভয়ে পালায়!”

পিহু ভ্রুঁ বাঁকিয়ে বলে,
“উফ! আপু। একটু এক্সাইটমেন্টে করে ফেলেছি। কালকে তুমিও যাবা আমার সাথে।”

“এই না না। আমি তোদের দুজনের মাঝে যেয়ে কী করব?”

“আমাকে নিয়ে যাবা। আমি কি চিনি নাকি! কাছে হলেও একা একা যাব না। তুমি নাহয় দূরে দাঁড়িয়ে থেকো। তাও চলো প্লিজ প্লিজ। একা গেলে খালামনি অন্যকিছুও মনে করতে পারে। খালামনিকে বলবা, ফুচকা খে*তে যাব তাহলেই হবে।”

পরী অবাক! পিহুটা এতো চালাক! পিহুর কান জোড়ে মলে দিয়ে বলে,
“ওরে বা*টপা*র! ভালোই তো বা*টপা*রি শিখছ। প্রেমিকের সাথে দেখা করতে যাবা ফুচকার বাহানায়!”

পিহু কানে হাত বুলাতে বুলাতে মুখ কুঁচকে বলে,
“কোনো প্রেমিক ফেমিক না বুঝেছ! সে নিজেই বলেছে এটা। তাও তাকে দেখার ইচ্ছে দমাতে পারিনা।”

পরী হালকা হেসে বলে,
“তুই একটু বেশি চিন্তা করিস। সবকিছু হুট করে হয় না। টাইম দে সব ঠিক হবে। তখন এসব প্রেম হওয়ার আগের সময়টা খুব মিস করবি। তখন এই অনুভূতি গুলোই হৃদয়ে কড়া নাড়বে। এখন চল খেতে যাই। মা পরে ডাকতে চলে আসবেন।”

পিহু মুচকি হাসে অতঃপর ওরা ডিনার করতে যায়।

__________

সুন্দর একটা সবুজ থ্রিপিস ও সবুজ রঙের হিজাব পরে এসেছে পিহু। পরীর সাথে সে রমনাপার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে আছে। পাঁচটা বাজতে এখনও পাঁচ মিনিট বাকি কিন্তু পিহু বারবার সময় দেখছে।

“রিল্যাক্স পিহু। সময় তো হয়নি এখনও। তোর জন্য দশমিনিট আগে এসে বসে আছি।”

পরীর কথায় ভাবান্তর হলো না ওর।
“সবুজ রঙে ভালো লাগছে আমায়?”

“এই এক কথা তোকে কতোবার বললাম বলতো? সুন্দর লাগছে অনেক।”

পিহু লাজুক কণ্ঠে বলে,
“তার সাথে প্রথম দেখা হওয়ার দিন সে সবুজ টিশার্ট পরেছিল। পাহাড়ের বুকে তাকে কতোটা স্নিগ্ধ লাগছিল!”

পরী একটু রম্যস্বরে বলে,
“কিন্তু এই রমনাপার্কে তোকে গাছের মতো লাগবে!”

পরীর কথায় পিহু রেগে যায় যার বিনিময়ে কিছুটা ভুগতে হয়েছে পরীকে।

আয়ান ও রাদ এসেছে রমনাপার্কে। রাদকে বলার পর রাদ জোড় করেই এলো। তার বাহানা সে ছবি তুলে দিবে! আয়ান ও রাদ, পিহুদের কাছে গেল। ওদের পরিচয় পর্ব হলো। আয়ান ও পিহুকে আলাদা কথা বলতে দিয়ে রাদ ও পরী অন্যদিকে হাঁটতে থাকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here