#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪১
“আপনি কীসে পড়েন?”
আনমনে হাঁটছিল পরী। অচেনা ছেলেটার সাথে একসাথে হাঁটতে খানিক লজ্জা ও ভীরুতাও কাজ করছিল। হঠাৎ ছেলেটির কণ্ঠস্বরে ছেলেটির দিকে তাকায়। ছেলেটি সুদর্শনও বটে! পরী কয়েক সেকেন্ড নিরন্তর তাকিয়ে থাকে যার দরুণ ছেলেটি বিব্রত হলো। হালকা কাঁশির শব্দে পরী থতমত খেয়ে নজর সরিয়ে নেয়। দুজনেই চুপচাপ হাঁটছে। কিছুক্ষণ পর রাদ আবারও জিজ্ঞেস করে,
“কোথাও বসবেন? চলুন বসি।”
ওরা দুজনে একটা বেঞ্চিতে বসল।
“আপনার নামটাই তো জানা হলো না।”
“আমি পরী! অ্যাই মিন, আমার নাম ‘রিদিতা পরী’। আপনার নামটাও জানা হলো না।”
রাদ হেসে বলল,
“রায়হান ইসলাম রাদ। আপনার নামের সাথে মিল আছে লক্ষ্য করেছেন?”
কথাটা বলেই হাসলো। পরীও হেসে বলল,
“হুম কিছুটা।”
“আপনি কীসে পড়েন বললেন না তো?”
“এইতো এইচএসসি দিলাম। সামনে এডমিশন টেস্ট।”
“কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছেন?”
“হ্যাঁ। উন্মেষে ভর্তি হয়েছি। মেডিকেল লাইনে যাওয়ার ইচ্ছে সাথে একটু ভার্সিটির ম্যাথও প্র্যাকটিস হয়ে যাবে। কিছুদিন পরেই ক্লাস শুরু হবে।”
“তাহলে তো ভালোই। দোয়া করি ভালো কিছু হোক।”
এক চা-ওয়ালা মামাকে দেখে চা নেয় দুজনে। চুপচাপ সবুজের মাঝে সাথে যানবাহনের হর্ণ! এসবে দুজনে চা উপভোগ করতে থাকে।
_________
এদিকে পিহু ও আয়ান পুকুরপাড়ে এসে বসেছে। দুজন এখনও নিশ্চুপ। আয়ান পানিতে কংকর নিক্ষেপ করছে বসে বসে। পিহু হাঁটতে হাঁটতেও উুঁশখুশ করছিল কথা বলতে। আয়ান পানির দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে,
“কেমন আছো পিহু?”
পিহু এখন চুপ করে আছে। তার অভিমান পরিলক্ষিত। আয়ান নিরব হাসে।
“এতো অভিমান যে করে বসেছ? অভিমানের সাথে মনে পাহাড়সম আকাঙ্ক্ষা জমিয়েছ তা যদি কেউ পূরণ না করে তখন?”
পিহু মুখ ভাড় করে ফেলে। ছেলেটা এমন কেনো? এতো স্পষ্ঠভাষী কি হতেই হবে? একটু কম হলে হয় না! ফুস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“হয়তো একটু বেশিই আশা করে ফেলেছি! আপনাকে তার জন্য আসতেও হলো। সরি।”
আয়ানের হাত থেমে যায়। ঘুরে বসে পিহুর দিকে। সে বলে,
“যার ভালোবাসার মানুষটা অন্যের হয়ে যাওয়ার পরেও সে নিরব ছিল। তার থেকে তুমি প্রেম না করে প্রেমিকা হওয়ার আশা করছ। পরে নিজেই কস্ট পাচ্ছ। আমার জানো, কাউকে সজ্ঞানে আশা দিতে মন চায় না। যদি নিয়তিতে থাকে তবে সব হবে। বর্তমানকে ভালোবাসা উচিত। আমার মনে হচ্ছে আমার একটা রো*গ হচ্ছে! আমি কেমন যেন হয়ে গেছি।”
পিহু মনোযোগ দিয়ে শুনল। সে বলল,
“আপনি বাহ্যিকভাবে নিশ্চুপ থাকলেও আপনার মন কিন্তু নিশ্চুপ ছিল না। আপনি নিজের মধ্যে দমিয়ে রেখেছেন বলেই হয়তো খারাপ লাগছে। তাছাড়া সেই মানুষটার বিয়েতেও আপনি গিয়েছেন বলেছিলেন।”
“হ্যাঁ। সেই মানুষটাকে আমি প্রতিদিন দেখি। ও হাসলে, ওর ভালোবাসার মানুষটার সাথে খুশি থাকলে আমার হৃদয়ে শূণ্যতার বদলে ভালো লাগা অনুভব হয়। কেনো হয় জানিনা। বন্ধুত্ব চিরকাল থাক।”
পিহুর মনে হলো আয়ান আবার অন্যমনা হচ্ছে। তাই সে নিজের মুড পরিবর্তণ করে উচ্ছাসের সাথে বলে উঠল,
“চলুন ফু*চকা খা*ই। ঝাল ঝাল করে। যাতে চোখ বেয়ে পানি পরে!”
আয়ান পিহুর উচ্ছাসতা দেখে ভ্রুঁকুটি করেও হেসে ফেলে।
“চলো তাহলে। আমি ফু*চকা খাইনা এমনিতে তবে তোমার ফুচকার প্রতি এক্সপ্রেশন দেখে ইচ্ছে হলো।”
পিহু ঝাল ঝাল ফুচকা খাচ্ছে আর কাঁদছে! ফুচকাওয়ালাকে সে বাড়তি বো*ম্বাই ম*রিচ দিতে বলেছিল। এমনিতেও ফুচকাওয়ালা মামা বো*ম্বাই ম*রিচ দেন। আয়ান আবার নিজেরটাতে মোটামুটি ঝাল দিতে বলেছিল। পিহুর এই বেসামাল অবস্থা দেখে আয়ানের মনে পরল, সে তো পিহুর জন্য চকোলেট এনেছিল। বেচারি ঝা*লে কাঁদছে তারপরেও খাওয়া থামাচ্ছে না। আয়ান ওর দিকে চকোলেটটা এগিয়ে দিলো। পিহু ঝাপসা চোখে চকোলেটটা দেখে খুশি হলো। ছিনিয়ে নিলো আয়ানের হাত থেকে। আয়ান হাসলো।
ফুচকা খাওয়া শেষে পিহু চকোলেট খাচ্ছে আর ঝাল কমানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি হাঁটছে। আয়ান পকেটে হাত গুঁজে বলল,
“সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমি রাদকে ফোন করে তোমার বোনকে নিয়ে আসতে বলি।”
পিহু আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল, আকাশে লালিমা ছড়াচ্ছে। সূর্য ডুবে গেছে। পিহু আফসোস করে বলল,
“এতো সময় কখন চলে গেলো বুঝতেই পারলাম না। আরেকটু থাকতে ইচ্ছে করছে।”
আয়ান হাসলো। কোনো প্রত্যুত্তর করল না। পিহু হুট করে বলে উঠল,
“একটা কথা বলি? ওই আপুটার নাম কী? আপনি যে তাকে ভালোবাসেন সে জানে?”
আয়ান বিকেলের শেষ বাতাসে নিজের দীর্ঘশ্বাস উড়িয়ে দিয়ে বলল,
“ওর নাম প্রিয়া। আমি কখনও নিজের ফিলিংস জাহির করিনি। ফ্রেন্ডরা যেভাবে থাকে সেভাবেই থেকেছি। স্বভাবত ইন্ট্রোভার্ট হওয়ার একটা সুবিধা।”
পিহু মুখ ফসকে বলে ফেলে,
“আপনার সাথে তিন মাসের পরিচয় আমার। আপনি অন্যকারও হননি তাও আমি সেটা ভাবলেও সহ্য করতে পারিনা। আর আপনি! আপুটা অন্যকারও হয়ে গেছে। কীভাবে সহ্য করেন?”
আয়ান মৃদু হাসলো তবে জবাব দিলো না। পিহু কী বলেছে ভেবেই মুখ চেপে ধরল। লজ্জায় চোখ খিঁ*চে দাঁ*ত দিয়ে জি*ভ কা*টল। আয়ান রাদকে ফোন করে আসতে বলল। দশমিনিট পর রাদ ও পরী এসে পরেছে। পিহু ও পরীকে এগিয়ে দিয়ে আয়ান ও রাদ চলে যায়।
______________
পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো দিন। পড়াশোনা, পরীক্ষা, আড্ডা সবমিলিয়ে চলছে ওদের দিন। রূপা ও তার বান্ধুবীরা প্রিয়াদের সাথে আর কথাই বলতে আসেনি। মূলত ভয়ে আসেনি তবে সামনে পরলে মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়। দেখতে দেখতে এই সেমিস্টারটাও শেষ। প্রিয়ার তো পরীক্ষা শেষ হয়েছে আজকে। সকাল সকাল পরীক্ষা শেষ তাই চলে এসেছে। বন্ধুদের সাথে কালকে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানিং আছে তাও কাশবনে। জারিফের পরীক্ষার গার্ড বিকেল পর্যন্ত বলে প্রিয়া জারিফকে নিজের জন্য ও তুতুলের জন্য চকোলেট আনতে বলে দিয়েছে। এখন সে আর তুতুল ড্রয়িংরুমে অপেক্ষারত। তামান্না বলে,
“তোদের দুটোকে বাচ্চার থেকে কম লাগছে না!”
“আরে ভাবী চকোলেট আনলে তোমাকেও দিবো বুঝছ।”
“হু! তুতুলই খেয়ে নিবে। ওর বাবার আনা সব চকোলেট ওর পেটেই যায়।”
“এবার নো চিন্তা। তুতুলের জন্য আলাদা আনবে।”
হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলে প্রিয়া তুতুলকে নিয়ে উঠে দরজা খুলতে যায়। ডোর মিররে দেখল দরজার ওপাশে জারিফ। প্রিয়া তুতুলকে শিখিয়ে দিলো কী করতে হবে। দরজা খুলেই প্রিয়া ও তুতুল নিজেদের ডান হাত বাড়িয়ে দিল। জারিফ ওদের মুখের দিকে একবার তাকায় আবার হাতের দিকে। প্রিয়া হাত নাড়াতে নাড়াতে বলে,
“চকোলেট দিন। চকোলেট দিন।”
“দিবো তো। আগে ঢুকতে দেও।”
জারিফের কথায় না সূচক বলে,
“উঁহু! আগে চকোলেট দিবেন তারপর।”
তুতুলও বলে,
“দাও দাও দাও। নাহলে তোমাকে আবার দোকানে পাঠাব!”
জারিফ কপাল কুঁচকে ব্যাগ থেকে চকোলেট গুলো বের করে ওদের হাতে দেয় আর বলে,
“এই নাও! এখানে তোমার, তুতুলের ও ভাবীর জন্য আছে। এবার তো ঢুকতে দাও!”
প্রিয়া দাঁ*ত বের করে হেসে বলে,
“হ্যাঁ হ্যাঁ আসুন।”
জারিফ ফ্রেশ হতে নিজের ঘরে চলে যায়। প্রিয়া ও তুতুল দরজা লাগিয়ে চকোলেট ভাগাভাগি করে নেয়। ভাগাভাগি শেষে প্রিয়া জারিফের ও নিজের, দুজনের জন্য দুধচা+কফি একসাথে চাফি বানিয়ে নিয়ে যায়। সাথে আবার চকোলেট গলিয়ে চাফিতে দিয়েছে। জারিফ এতক্ষণে জামা-কাপড় বদলে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়েছে। প্রিয়া মগটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
“এই নিন! গ*রম গ*রম চাফি!”
জারিফ মৃদু হেসে মগটা নেয়। এক চুমুক খেয়ে বলে,
“চকোলেটও দিয়েছ? বাহ।”
প্রিয়া খুশি খুশি হয়ে বলে,
“হুম। এটার টেস্টটা অনেক রিফ্রেশিং। এনার্জি পাওয়া যায়। কোনো ফ্লেবারই কড়া না।”
“হুম।”
গোধূলিরাঙা আকাশ দেখতে দেখতে দুজনে ব্যালকনিতে বসে। জারিফ প্রিয়াকে নিজের বুকে আগলে নেয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।