#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৫
নিলয় রাতে হোস্টেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একা একা ধুমপান করেই চলেছে। তখন সাগর রুমের ভেতর থেকে এসে নিলয়ের পিঠে একটা চাঁপড় দিয়ে বলে,
–তোরে ছ্যাকাখোরদের মতো লাগতেছে কেন? তুই দেখি দুই প্যাকেট সিগরেট শেষ করে ফেলেছিস!
নিলয় নিজের কন্ঠে এক মিথ্যা রাগের আবরণ এনে বলে,
–ওই রাত্রির পেছোনে এতোগুলো মাস ওয়েস্ট করা টোটালি টাইম ওয়েস্ট! মাইয়া পুরা ব্যাকডেটেট। এক সপ্তাহ যোগাযোগ করি নাই তারপরেও সে রু*মডে*টে যেতে নারাজ। বারবার কয় তারে বিয়ে করতে। এর এতো ন্যাকামি সহ্য করা এখন আমার সহ্যসীমার বাইরে। আমি কিন্তু আর যাচ্ছি না ওর পিছে। আজ একেবারে ব্রেকআপ করে আসছি। মাইয়ারে বারবার বলার পরেও যখন রাজী হয় নাই তাই ব্রেকআপের কথা বলাতে সেও ব্রেকআপের জন্য রাজী হয়ে গেছে। আবার বলছে, আমারে সে ভালো ভাবছিল আর আমি নাকি খারাপ বের হইছি। সে বুঝে নাই তোর ফ্রেন্ড হয়ে আমি ভালো কেমনে হবো! আরও কতো হেনতেন। এবার তুই আমারে আর ওর পিছে যাইতে বলবি না। আমার তো প্রচুর রাগ লাগতেছে। অন্য উপায় বের কর নয়তো সব বাদ দে। প্রতিবার নাকানিচোবানি খেয়ে আমি টায়ার্ড। শুধু শুধু এসব করা।
সাগর এতোক্ষণ নিলয়ের কথা চুপচাপ শুনলো। নিলয় কথাগুলো বলে ভাবছে সাগর বিশ্বাস করল কীনা! সাগরের মুখে বিরক্তি ও রাগের আভাস। সাগরকে চুপ থাকতে দেখে নিলয় আবারও বলে,
–যতোটা ইমোশোনাল ফুল ভাবছিলি সে ততোটাও না। যেসব মাইয়া সেচ্ছায় এসবে রাজী হয় যেমন সামিরা! রাত্রি ওমন টাইপের না।
সাগর নিলয়ের সাথে হুট করে কোলাকোলি করে খোশ মেজাজে বলে,
–সামিরা! যাহ ওই রাত্রির টপিক বাদ। এখন সামিরাকে কাজে লাগাব। সামিরা তো মারসাদকে পছন্দও করে। সামিরাকে ফুসলালে সামিরা ঠিক আমাদের কথা মত নাচবে।
নিলয় নিজের টপিকটা টলে যাওয়াতে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। নিলয় জিজ্ঞেস করে,
–সামিরাকে দিয়েই প্রথম থেকে যা করার করাতি! মাঝখানে আমারে শুধু শুধু রাত্রির সাথে টাইম ওয়েস্ট করতে পাঠালি।
সাগর নিলয়ের কাঁধে হাত রেখে বলে,
–তোর আগে কোনো রিলেশন ছিল না তাই ভাবছিলাম রাত্রি মাইয়াটা পটে যাবে। তারপর ইমোশোনাল ব্ল্যা*কমেইল করবি। যাক বাদ সব। এখন সামিরাকে কাজে লাগাব। আর এমপি রুহুল আমিন তো আছেই।
নিলয় বলে,
–শোন, আমি এখন থেকে বাড়িতে থাকব। ছোটোবোনকে পড়াতে বলছে আম্মু। ছোটোবোন খালি পড়ায় ফাঁকি দেয়। সপ্তাহে দুই দিন হোস্টেলে থাকব আর বাকিদিন বাড়িতে। সামনে ওর এইচএসসির প্রিটেস্ট আর সে ফার্স্ট টার্মে একাউন্টিংয়ে ও ইংরেজিতে ফেল করছে। এখন ওর সব প্রাইভেট আম্মু বাদ দিয়ে একটা রাখবে আর আমাকে ওকে পড়াতে বলছে। আম্মু যা বলছে শুনতেই হবে। আম্মু যা রাগী জানোসই তো!
সাগর বাধা দেয় না। সাগর সামিরার নাম্বারে ডায়াল করতে করতে হোস্টেলের বারান্দার অন্য দিকে যেতে থাকে। নিলয় হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। নিলয় আপন মনে আউরায়,
“যাক সাগর সন্দেহ করেনি। এখন থেকে ভার্সিটির এড়িয়াতে রাত্রির সাথে দেখা-সাক্ষাত কম করতে হবে। আছে আর এক বছর। তারপর আমি মাস্টার্স এখান থেকে কোনোমতেই করব না। এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচি।”
________
আজ পূর্বের ভিপি আশিক ভার্সিটি থেকে বিদায় নিবে। আশিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের তাই ওদের মাস্টার্স না করলেও ভালো জব পাওয়া যায়। মাস্টার্স ইচ্ছে হলে করবে না ইচ্ছে হলে না। তবে ফ্যাকাল্টি হিসেবে জয়েন করতে মাস্টার্স করা লাগবে। মারসাদরা ও সাগররা সবাই আশিককে বিদায় জানাতে এসেছে। মৌমি গতকাল রাত থেকে মন খারাপ করে রেখেছে। আশিক রাজশাহীতে ভালো একটা কম্পানিতে জব পেয়েছে। সেই কম্পানির সাথে জাপানের কানেকশন আছে। কোনো কাজে জাপানে পাঠাবে এমন অনেক সুবিধা আছে। মৌমি আশিকের বিদায়ের জন্য এসেছে তবে একটা চেয়ারে বসে একাকি চোখের জল ফেলছে। আশিক সবার সাথে কুশল-অভ্যর্থনা শেষে তার অভিমানিনীর সামনে এসে হাঁটু মুড়ে বসেছে। তারপর দুই হাতের আঁজলায় মৌমির কন্দনরত মুখটাকে নেয়। তারপর বলে,
–এই মোমবাতিটা! শোনো না। তুমি আমার আঁধার ঘরের একটা উজ্জ্বল জ্বলজ্বলে মোমবাতি। আমার মোমবাতির মন খারাপ হলে যে আমার মনের ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে। একটু হাসো তো সোনা।
মৌমি অশ্রু পরিপূর্ণ নয়নে মায়াবি দৃষ্টিতে আশিকের দিকে তাকায়। আশিক মৌমির মুখের উপর আসা অবাধ্য চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে গালে লেগে থাকা অশ্রু মুছে নরম স্বরে বলে,
–তোমার গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট হোক এরইমধ্যে আমি আমার অবস্থান আরেকটু মজবুত করি। তারপর তোমায় বউ করে সবাইকে জানিয়ে নিয়ে যাব। আর তোমার খেয়াল রাখতে তোমার পাঁচটা ভাইয়ের মতো বন্ধু আছে তো। আমার কাছে রাজশাহীর জবটা বেশি প্রিফারেবল লেগেছে আর রাজশাহীতে বাড়িতে বাবা-মা একা থাকেন। বড়োভাই নোয়াখালি পোস্টিংয়ে ভাবী ও ভাতিজাকে নিয়ে চলে গেছে। আমি মাস্টার্সে ভর্তি হলে রাজশাহী ইউনিভার্সটি থেকেই করব। তবে সেটা মাস ছয়েক পরে থেকে।
মৌমি অভিমানী স্বরে বলে,
–বাবা-মাকে এক বছরের জন্য ঢাকাতে নিয়ে এসো। তারপর আমাদের বিয়ের পর আমাকে সহ নাহয় রাজশাহী যাবে সবাই।
আশিক মৌমির কথায় হেসে বলল,
–সবাই তোমার মতো সহজ করে ভাবে না গো। অনেককিছু বুঝে চলতে হয়। তোমার সাথে প্রতিদিন কথা হবে আর তুমি সাবধানে ভদ্র মেয়ের মতো থাকবে।
তারপর আশিক মৌমির হাতে একটা কাঠগোলাপের মালা পড়িয়ে দেয়। তারপর মৌমির থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। আদিরা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে মৌমির কান্না ও আশিকের সুন্দর করে কান্না মোছানোর দৃশ্য দেখে তার চোখের কোন বেয়ে জল গড়ানো উপলব্ধি করল। ওড়না দিয়ে তা মুছে নিতেই নিজের আশেপাশে অতিপ্রিয় কারও উপস্থিতি অনুভব করল। তার নিজস্ব ঘ্রাণে আদিরা না দেখেই বলল,
–আপনি এখানে? যান আশিক ভাইয়াকে এগিয়ে দিবেন না?
মারসাদ আদিরার পাশে দাঁড়িয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
–তুমি কাঁদছো কেনো? আমি তো এখানেই আছি। আমার আবার অতো দূরে যেতে হবে না বুঝেছ। তাই তোমাকে আগেভাগে কান্নার ট্রেনিং নিতে হবে না।
আদিরা ভ্রুঁ কুঁচকে মারসাদের দিকে ফিরতেই মারসাদের ওষ্ঠদ্বয়ের সাথে আদিরার ললাটের সংঘর্ষ ঘটে। আদিরা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে এক পা পিছু হটে যায়। মারসাদ বাঁকা হাসে। তারপর আদিরার দিকে এক পা এগিয়ে অনুরাগী স্বরে বলে,
–ইশ! তোমার ললাটে আমার ঠোঁটের প্রথম স্পর্শ। না চাইতেও একে অপরকে ঠিক আকর্ষণ করে নিয়েছে। এখন আমার ওষ্ঠদ্বয় আরেকবার আকর্ষিত হতে চায়! সেই অনুমতি মিলবে কী?
আদিরার মুখে ঈষৎ লজ্জামিশ্রিত আভা ছড়িয়ে পরে। কোনো জবাব না দিয়ে অদূরে দাঁড়ানো রিন্তিদের কাছে চলে যায়। মাহি এখন মৌমির কাছে আছে। মাহি, রাত্রি, সুমি মিলে মৌমিকে হাসানোর চেষ্টা করছে। মারসাদরা আশিককে এগিয়ে দিতে গাবতলী পর্যন্ত যাবে। মারসাদরা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের কাছে গেলে সেসময় সামিরা এসে মারসাদদের পথের সামনে দাঁড়ায়। আশিক স্যারদের সাথে দেখা করতে ডিপার্টমেন্টে গিয়েছে। সামিরা ঢং করে বলে,
–কনগ্রেটস মারসাদ বেবি। কেমন আছো বেবি? এখন তো তুমি ভিপি। আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে বলে বুঝাতে পারব না।
মারসাদের পাশ থেকে রাহিন বিড়বিড় করে বলে উঠে,
–আসছে বেবি! বাবু! বাবু খাইছো! ঘুমাইছো! ঢং যতসব।
কথটা সামিরা স্পষ্ঠ না শোনলেও বাকিদের কানে এসেছে। মৃদুল টিটকারি করে বলে,
–বল মারসাদ। আম্মা ভালা আছেন? বল বল।
মারসাদের হুট করে কী হলো যে সে মৃদুলের বলা কথাটাই বলে বসল। আশেপাশের পরিবেশ যেন বর্জপাতের মতো করে উঠল সামিরার রিয়াকশনে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।