দিন_বদলের_হাওয়ায় [৪] #তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

0
522

#দিন_বদলের_হাওয়ায় [৪]
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

রেদোয়ান আর আমি তৈরি হয়ে নিলাম ঝটপট। রেডি হয়ে অপেক্ষা করছি সায়রা আর পায়রার জন্য। ওরা এখনো রেডি হতে পারে নি। বাবা, আমি, আর রেদোয়ান বসে আছি। বাবা আর রেদোয়ান কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর পায়রা, তার ননদ শিউলি তৈরি হয়ে এলো। শিউলিকেও আমাদের মতো একই রকম শাড়ি দেওয়া হয়েছে। পায়রার বোধহয় আমার গায়ে এই শাড়ি ভালো লাগলো না ও মুখ ভে-ং-চে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। আমি চুপচাপ আমার মতোই বসে রইলাম। পায়রার আসার পর থেকে মৌনতা বিরাজমান এখানে। মৌনতা কাটলো সায়রার আগমনে। সায়রা আসতে আসতে বললো, বাবা আমি তৈরি। বের হবে না?

ওর কথায় বাবা বললেন, হ চল। জামাইরা কই?

আসতেছে ও।

সায়রা কথা বলতে বলতে পায়রা আর শিউলির দিকে তাকালো। দেখলাম ওর চেহারার রং ক্রমশই পরিবর্তন হচ্ছে। বুঝলাম না ব্যাপারটা। কিছু না বলে সায়রা বাবাকে ডেকে ওর সাথে নিয়ে গেলো। আমরা সবাই চুপচাপ বসে রইলাম। বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন বাবা আসলো না তখন পায়রা সায়রার কাছে গেলো। আমি আর রেদোয়ান চুপচাপ বসেই থাকলাম। আমাদের তো ওদের মধ্যে কাজ নেই। যদি যাই তবে শুনতে হবে নানান অ_প_মা_ন জনক কথা।

কিছুক্ষণ পর দুই বোনের কথা কা*টা*কা*টি*র শব্দ পেয়ে ওদিকে গেলাম। যেতেই শুনতে পেলাম সায়রা বাবাকে বলছে,
‘তুমি আমাদের তিন বোনকে শাড়ি দিয়েছো সাথে ওর ননদকেও কেন দিবে? যদি ওর ননদ শাড়ি পায় তবে আমার ননদ কি দোষ করেছে?

পায়রা সায়রার কথায় রেগে গিয়ে বললো, ‘তোর কি সমস্যা এতে? আমার ননদকে যা ইচ্ছে তা দিক তোর কি? তোর ননদের সাথে আমার ননদের তুলনা করছিস কেন?’

কেন রে? তোমার ননদ কি রাজকন্যা নাকি? দিলে সবাইকেই দিতে হবে।

বাবা ওদের দুজনকে শান্ত করানোর চেষ্টা করছেন। বললেন, চুপ কর না তোরা। শিউলি বেড়াতে এসেছে তাই দিছি। সায়রা তোর ননদরেও নিয়া আয় তখন ওরে দিমু!

আগের বার তো এসেছিলো তখন দিলে না কেন?

বাবা কিছু বলতে পারলেন না। শিউলি তখন বললো, ভাবি একটা শাড়ি নিয়ে তোমার বোন এতো ঝা”মে”লা বাঁধাবে জানলে এই শাড়ি আমি জীবনেও নিতাম না।

ওর কথায় সায়রা আরো বেশি রে/গে গেলো। বললো, তাই নাকি? এখন যখন জেনে গেছো তাহলে শাড়িটা খুলে দিয়ে দিচ্ছো না কেন? জলদি খোলো।

সায়রার ধমকের সুর। এক কথায় দুই কথায় সায়রা আর পায়রার মধ্যে তুমুল ঝ”গ”ড়া বাঁধল। বাবার সাথে আমিও ওদের শান্ত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। মা এক কোণায় দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছেন। মেয়েদের মধ্যে এই সামান্য বিষয় নিয়ে ঝ”গ”ড়া সব মা বাবার মনেই দা/গ কা_টে। বাবাও কেমন চুপ হয়ে গেলেন হঠাৎ। ওদের দুজনকে আমি থামাতে পারছি না।

‘ সায়রা পায়রা চুপ কর তোরা। আমার কথা কানে যায় না তোদের?’

পায়রা আমাকে বললো, তোর কথা কানে নিবো কেন? তুই আমাদের দুজনের মাঝে কেন এসেছিস আপা? আমাদেরটা আমাদেরই বুঝতে দে। ওর কত্ত সাহস আমার ননদকে নিয়ে কথা বলে।

চুপ হয়ে গেলাম ওর কথায়। ওদের মধ্যে ঝ/গ/ড়া ভ/য়া/ব/হ আকার ধারণ করেছে ধীরে ধীরে। তাই বাধ্য হয়ে জোরে ধ/ম/ক দিয়ে বললাম, সায়রা চুপ কর। তোর ননদকেও শাড়ি দিতে হবে তাই তো? দাঁড়া আমারটা দিয়ে দিচ্ছি। তাও তোরা আর ঝ/গ/ড়া করিস না। দেখছিস মা বাবা কত ক/ষ্ট পাচ্ছে?

সায়রা কিছু বললো না। কিন্তু পায়রা থামছে না। শিউলিকে এতোক্ষণ খুশি দেখা গেলেও এখন সে মুখ গো/ম/ড়া করে নিলো। পায়রাকে টানতে টানতে সেখান থেকে নিয়ে গেলো। পরিবেশ এবার শান্ত হলো। বাবা করুন ভাবে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ফুফুর বাড়িতে আর যাওয়া হলো না। ঘরে গিয়ে শাড়িটা খুলে সায়রাকে নিয়ে দিয়ে আসলাম। যে যেভাবে খুশি থাকতে চায় তাকে সেভাবেই খুশি থাকতে দেওয়া উচিত।

সায়রাকে শাড়িটা দিয়ে ঘরে আসার পর রেদোয়ানকে দেখলাম কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার এই দৃষ্টি আমার বোধগম্য হলো না। বললাম, এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

আয়ু এতো ধৈর্য্য তুমি পেলে কোথায়?

তার কথায় হেসে ফেললাম। সে আবার বললো, শাড়িটা সায়রাকে না দিলেও পারতে। বাবা তোমায় দিয়েছে খুশি হয়ে।

আমি আবার সায়রাকে দিলাম খুশি হয়ে!

রেদোয়ান আর কিছু বলতে পারলো না।

রাতে খাওয়ার সময় কাউকেই দেখতে পেলাম না। গতকাল সায়রা একসাথে খেলেও আজ তারাও খাবার ঘরে নিয়ে গিয়েছে। বাবা কেমন যেন মনমরা হয়ে আছে। মাও কোন কথা বলছে না। আমি খাবার বেড়ে দিলাম। সবাই অল্প অল্প খেয়ে নিলো কিন্তু মা খেলেন না। অনেক বলার পরও মা খেলেন না। খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে আমি ঘরে গেলাম। রেদোয়ান খাটের উপর বসে কিছু একটা ভাবছে। তাকে এক নজর দেখে বারান্দায় গেলাম তোশকটা শুকিয়েছে কিনা দেখতে। এখনো পুরোপুরি শুকায় নি। অল্প পানি তো পড়ে নি এতে। এরপর মায়ের কাছে গিয়ে একটা মোটা কাঁথা নিয়ে আসলাম। সেটা বিছানায় বিছিয়ে তার উপর চাদরটা বিছিয়ে দিলাম। গতকাল যেটা বিছিয়ে ছিলাম সেটা গায়ে দেওয়ার জন্য রাখলাম। রেদোয়ান এখনো চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাকে এতো চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করলাম, কি ভাবছো?

তেমন কিছু না। আমার চাকরিটা হবে আয়ু?

বুঝলাম না কি বলবো। এখন ওকে আশা দিলাম যদি পরে না হয় তখন? সব তো আল্লাহর হাতে। তাই আমি বললাম, আল্লাহ জানে। দোয়া করো হলেও হতে পারে।

রেদোয়ান কিছু বললো না। আমি আবার বললাম, এতো টেনশন না করে এখন ঘুমাও। কপালে যা আছে তাই হবে। আগামীকাল জানাবে বলেছে না? একটা রাতই তো। কাল সব জানবে। এখন ঘুমাও।

রেদোয়ান মাথা নাড়ালো। আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম সায়রা চলে যাচ্ছে। মা ওকে আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ও কোন কথাই শুনছে না। ও আর এই বাড়িতে থাকবে না আর আসবেও না। মা আমাকে দেখে বললেন, ওরে থাকতে ক না আয়রা। ও যাইতাছে গা তো।

আমি সায়রার কাছে গিয়ে বললাম, তুই চলে যাচ্ছিস কেন রে সায়রা? এভাবে রা/গ করে যেতে হয় না রে। মা বাবা ক/ষ্ট পাবে।

সায়রা আমার কথা মানলো না। বললো, না রে আপা। রাগ করে যাচ্ছি না। গতরাতে ওর অফিসের বস ফোন করেছে। জরুরি কাজ আছে যেতে হবে। আর এই নে ধর তোর শাড়ি। এটা লাগবে না। বাবা থাক তার ছোট মেয়েকে নিয়ে।

সায়রা চলে গেলো। পায়রা নিজের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য বেশ উপভোগ করছে। সায়রা যেতেই ও নিজের ঘরে চলে গেলো। আমি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। খুব ক/ষ্ট হচ্ছে। আমাদের বোনদের মধ্যে মধুর সম্পর্কটা আস্তে আস্তে হালকা হয়ে যাচ্ছে। মিষ্টি দিনগুলো হয়ে যাচ্ছে তি/ক্ত। সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আগে যখন তিনজন মা বাবার কাছে একত্রে বেড়াতে আসতাম তখন কত আনন্দ হতো। কত হই হুল্লোড় হতো। আর এখন! সব বদলে গেছে দিন বদলে। ভালোবাসা স্বার্থের সামনে শূন্য।

বিকেল গড়ালো। দিনটা কোন মতে কাটলো। ভালো কাটলো না। সায়রার যাওয়ায় খুব খা/রা/প লাগছে। রেদোয়ানও বাড়িতে নেই। মায়ের মনটাও খুব খা/রা/প। বাবাও কেমন চুপচাপ। কিছুক্ষণ পর রেদোয়ান এলো। তার চোখে মুখে হাসির ঝিলিক। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, আয়ু! আমার চাকরিটা হয়ে গেছে।

ওর কথা শুনে কি যে খুশি হয়েছি। অবশেষে একটা চাকরি তো হলো। দুজনে কোন মতে চলতে পারলেই হয়। এখন তো আর কেউ আমায় বলতে পারবে না আমার স্বামীর চাকরি নেই, সে বেকার। আর কেউ তো আমায় কথা শোনাতে পারবে না। এটা ভেবেই আমার দুই ঠোঁট প্রসারিত হলো।

কিন্তু কে জানতো এই হাসি আমার দীর্ঘস্থায়ী হবে না!

চলবে…..

Next Part : https://www.facebook.com/100084809503127/posts/122284203941896/?app=fbl

এই রকম আরও গল্প পেতে পেইজটি Like এবং Follow করে পাশে থাকুন। #অবসেনツ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here