দিন_বদলের_হাওয়ায় [১৭] #তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

0
476

#দিন_বদলের_হাওয়ায় [১৭]
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

‘আপনি আমার মা বাবাকে নিয়ে আর একটা কথাও বলবেন না আপা। আমার মা বাবা আপনারটা বা আপনার ভাইয়েরটা খেতে এখানে পড়ে রয় নি আপা। অসুস্থ বলে রয়েছে। মুখ সামলে কথা বলুন। অনেক সহ্য করেছি আপনার কথা। আমার মা বাবাকে নিয়ে আর একটা শব্দ উচ্চারণ করবেন না আপনি।’

তীব্র রাগে উচ্চস্বরেই কথাগুলো বলে ফেললাম। রুনা আপা হতভম্ব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বোধহয় আমার থেকে এমন কিছু আসা করেন নি। তিনি আমার দিকে তাকিয়েই আছেন। রাগে আমার হাত পা কাঁপছে। আমাকে নিয়ে বলুক আমি কিছু বলবো না কিন্তু আমার মা বাবাকে কেন বলবেন উনি? কোন অধিকারে বলবেন? আমার মা বাবা তো সহজে কোনদিন ওনাদের বাড়িতে আসেন নি। তবে কেন এই কথা উঠবে? রাগে আমার শিরা উপশিরা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে শান্ত হতে বললেন। রুনা আপা কিছুক্ষণ বাদে আমাকে বললেন, বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও দেখি ভুলে গেছো। এতো তেজ আসে কোথা থেকে তোমার?

বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা আমি আপনার থেকে ভালো জানি আপা। আমার মা বাবা আমাকে এই শিক্ষাটা দিয়েছে। কিন্তু আপনার মধ্যে এর অভাব রয়েছে। যদি এই শিক্ষা আপনার মধ্যে থাকতো তবে নিজের মা বাবার বয়সী আমার মা বাবাকে এভাবে বলতে পারতেন না আপা। আবার নিজের বড় বোনের মুখের উপর কথা বলে তাকে বোবা বানিয়ে দিতেন না।

তুমি সীমা অতিক্রম করছো আয়রা! তুমি আমার শিক্ষা নিয়ে কথা বলছো?

আপনার কি মনে হয় আপনি আপনার সীমায় আছেন আপা? একটা মিথ্যেকে বার বার বলতে আপনার লজ্জা করে না আপা? আপনার মা আপনার বাড়ি যেয়ে থাকতে পারবে কিন্তু আমার মা আমার বাড়ি আসলে অপরাধ? এই নীতি আপনি কোথায় পেলেন আপা? আমার বাড়িতে এসে আমাকে নিয়ে আমার বাবা মাকে নিয়ে কথা বলতে আপনার বিবেকে বাঁধে না? দুদিনের জন্য ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে এসব না করে শান্তিতে থাকা যায় না আপা?

রুনা আপা হা করে তাকিয়ে আছেন। তিনি কথা বলতে পারছেন না। আমার শাশুড়িও কেমন ঝিম কেটে আছে।রুনা আপা রাগ সংযত করে বললেন, তোমার সাহস তো কম নয় আয়রা! দেখি আজ রেদোয়ান আসুক। তোমার একটা ব্যবস্থা করেই ছাড়বো।

হ্যাঁ ব্যবস্থা তো একটা হওয়াই উচিত। সেটা হোক আপনার অথবা আমার। অনেক পার পেয়েছেন। আমাকে শান্ত পেয়ে অনেক বলেছেন। আজ এর একটা ব্যবস্থা হবেই।

বলেই আমি সেখান থেকে চলে আসলাম। মা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললাম, এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

হুদ্দাই ঝগড়াডি করলি কেন? জামাইয়ের কাছে কইলে তুই কি করবি তখন?

কেন? যা করার তাই করবো। যদি সে সবটা না জেনে বোনের কথায় আমাকে শাসন করে তবে তার সংসারে আর থাকবো না।

এডি কইতে হয় না মা। আল্লাহ বেরাজি হয়।

আমি আর কিছু বললাম না।

রুনা আপা এখনো বিড়বিড় করে আমাকে নিয়ে কিছু একটা বলছেন। আমি সেদিকে ততটা পাত্তা দিলাম না। নিজের মতো নিজের সব কাজ করতে লাগলাম। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে ভিতরের রুমে রুনা আপা আর আমার শাশুড়ি শুয়ে পড়লেন। আমি মা আর বাবা সামনের রুমেই আছি। আমাদের সাথে রুশা আপাও আছেন। রুশা আপা আমাকে বললেন, আয়রা তুমি যে এতো কথা বলতে পারো আমি জানতাম না।

আমি কিছু বললাম না। চুপ করে রইলাম।

রুশা আপা আবার বললেন, যাক ভালোই হলো। সবসময় চুপ থাকতে হয় না কিছু সময় বলতেও হয়। রেদোয়ানের সামনে কিন্তু ড্রামা শুরু করবে নতুন সামলে থেকো।

আচ্ছা আপা আম্মা এতো চুপচাপ কেন?

আমিও তাই ভাবছি। বুঝতে পারছি না ঠিক কি হয়েছে। আসার পর থেকেই আম্মা চুপ।

আমি আর কিছু বললাম না।

বিকেলে রুশা আপা চলে গেলেন। আমি আর মা নীরবে বসে আছি‌। বাবা ঘুমাচ্ছিলেন। রেদোয়ান তখন আসলো। তাকে এতো তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরতে দেখে বেশ অবাক হলাম। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এতো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরলে যে?

ছুটি নিয়েছি। রুনা আপা ফোন করে বললো জলদি আসতে।

এবার বুঝতে পারলাম আসলে ব্যাপার। আমি আর বেশি কিছু বললাম না। রেদোয়ান গোসল সেরে আসলে তাকে খাবার বেড়ে দিলাম। আজ আর আমি তার সামনে বসলাম না। আমি মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম। এ ঘর থেকেও শোনা যাচ্ছে রুনা আপার বিড়বিড়ানির শব্দ। জানি না কি বলছেন উনি। তবে ভালো কিছু বলছেন না এটা বুঝতে পারছি।

খাওয়া শেষে রেদোয়ান আমাকে ডাক দিলো। আমি বাসনপত্র সব গুছিয়ে নিলাম। এরপর ও আমাকে বললো, বাড়িতে কি হয়েছে আয়ু?

রুনা আপা আমায় কিছু না বলতে দিয়ে তিনি বললেন, আমি তোকে বললাম না কি হয়েছে? তোদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি তোর বউয়ের কথা শুনতে?

রেদোয়ান তাকে শান্ত ভাবেই বললো, হ্যাঁ আপা তাইতো। এখন আমার বউ কি বলেছে তা সে নিজের মুখে বললে ভালো হতো না? দুই পক্ষের কথাই তো শোনা উচিত। আয়রা তুমি বলো তো কি হয়েছে।

বাড়িতে যা যা হয়েছে আর আমি যা কিছু বলেছি সবটাই আমি রেদোয়ানকে বললাম। রুনা আপা মাঝে অনেক বার ফোড়ন কেটেছেন। কিন্তু রেদোয়ান তাকে থামিয়ে দিয়েছে। আমার বলা শেষ হলে রুনা আপা বললেন, ও আমার শিক্ষা নিয়েও কথা বলেছে শুনলি? আমি তোদের এখানে এসে কি অপরাধ করেছি?

আমিও তৎক্ষণাৎ বলে ফেললাম, আপনি যে আমার মা বাবাকে যা ইচ্ছে তাই বলেছেন! আমার বাবা মায়ের নামে মিথ্যে অপবাদ দিয়েছেন সেটা? আপনি আবার এটা নিয়ে কথা বলছেন আপনার এখনো লজ্জা করে না?

ওই দেখলি দেখলি তোর বউ কি বললো! এর একটা বিচার আজ তোকে করতেই হবে।

রেদোয়ান শান্ত কণ্ঠেই বললো, কি বিচার করবো আপা? আয়রা যা বলেছে তা তোর জন্য কমই। দেখ আপা কারো মা বাবাকে এভাবে বললে কোন সন্তান চুপ থাকবে না। আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রাখি রে আপা। ওকে তোরা সারাদিন গাল মন্দ করলেও তোদের কিছু বলবে না। কিন্তু তুই কি করলি রে আপা?

ও বুঝতে পেরেছি। বউয়ের গোলাম হয়ে গেছিস। বউ যা বলবে তাই রাইট। আমাদের কথার মূল্য নেই। আমরা খারাপ কথাই বলি।

রুনা আপা আহাজারি শুরু করলেন। রেদোয়ান বিরক্ত হয়ে বললেন, তোর যা ইচ্ছে মনে কর আপা। ওকে আর একটা কথাও তুই বলবি না। আয়রার সাথে মিলে থাকতে পারলে আমার বাড়ি আসিস আর না পারলে আসিস না।

রুনা আপা আমার শাশুড়িকে বললেন, দেখলে মা দেখলে তোমার ছেলে কত পাল্টে গেছে। বউয়ের আঁচল ধরে চলে। ও আমার সাথে কি ব্যবহার করলো দেখলে তুমি?

আমার শাশুড়ি সারাক্ষণই নীরব ছিলেন। রুনা আপার কথায় তিনি মুখ খুললেন বললেন, কি কমু আমি? ঠিকই তো কইছে। আসার পর থেইকা কম কইছোছ তুই মাইয়াটারে? ও তোরে কমই কইছে। আচ্ছা তোর মায়েরে যদি তোর ননদ এমনে কইতো তাইলে তুই চুপ থাকতি? দেখতাছোছ মাইয়াটার বাপ অসুস্থ এরপরও ইচ্ছা কইরা ওরে কত কি শুনাইলি। ওর জায়গায় একবার নিজেরে বসায়া দেখ।

শাশুড়ির কথা শুনে রুনা আপা হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন শাশুড়ির দিকে। আমিও অবাক। আমি আর রেদোয়ান একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি অবাক দৃষ্টিতে! তিনি আমার পক্ষে সাফাই গাইছেন কেন?

চলবে……

(অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here