দিন_বদলের_হাওয়ায় [৬] #তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

0
517

#দিন_বদলের_হাওয়ায় [৬]
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

রাতটা কোন রকমে কাটলো আমার। এ বাড়িতে আমার মন টিকছে না আর। এই বাড়ির স্মৃতি গুলো আমার কাছে এখন তি/ক্ত। মিষ্টি অতীতকে বর্জন করে সৃষ্টি হয়েছে তি/ক্ত কিছু অতীত। ভোর হতেই ব্যাগপত্র সব গুছিয়ে নিলাম। রাতে মাকে বলেছি চলে যাবো সকালে। মা কিছু বলেন নি। শুধু আমার দিকে চেয়ে দু ফোঁটা চোখের অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন। আমিও কোন কথা বলি নি। জানি তারা ক/ষ্ট পাচ্ছে কিন্তু আমি আর কিছু করতে পারবো না। এখানে থাকলে পায়রার কথা শুনে আমি ম/রে/ই যাবো। ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাবার কাছে গেলাম। কেমন যেন মনমরা হয়ে বসে আছেন বাবা‌। আমি বাবার কাছে গিয়ে বললাম, ‘বাবা আমরা যাচ্ছি।’

বাবা আমার দিকে তাকালেন। বললেন, সত্যি যাবি?

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম। বাবা আবার বললেন, যাইলে আর আমি কি কইতে পারুম? যা তাইলে। আবার আইস। নিজের যত্ন নিছ।

তুমিও নিজের যত্ন নিয়ো। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে।

এরপর মায়ের থেকে বিদায় নিলাম। মা হা,উ মা,উ করে কেঁদে দিলেন। আমি মাকে শান্তনা দিলাম। পায়রা নিজের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওর মিষ্টি মুখটা দেখলে সব ভু/লে যাই। যত যাই হোক আমার ছোট বোন তো। আমি পায়রার কাছে গিয়ে বললাম, যাচ্ছি রে পায়রা। ঠিক মতো থাকিস। নিজের খেয়াল রাখবি। আর মাহবুব শোনো আমার বোনকে কিন্তু কখনো কোন ক/ষ্ট দিবে না।

পায়রা কিছু বললো না। শিউলি বললো, আমার ভাই ভাবিকে কোন ক/ষ্টই দেয় না। আপনারাই তো দেন। কথায় কথায় কথা শুনান। আবার দরদ দেখান।

ও মুখ ভে-ং-চে পায়রার হাত ধরে টেনে ভিতরে চলে গেলো। আমি আর কিছু বললাম না। আমি আর রেদোয়ান বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। কিছুদূর হাঁটতেই একটা রিক্সা পেলাম। রিক্সা করে বাস স্ট্যান্ড গিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বাসে উঠলাম।

দীর্ঘ তিন ঘন্টা জার্নি শেষে বাড়িতে পৌঁছালাম। দুই তিন বার কলিং বেল চাপ দেওয়ার পর আমার শাশুড়ি এসে দরজা খুলে দিলেন। শাশুড়ি দরজা খুলে আমাদের দেখে বোধহয় খুশি হলেন না। দরজাটা খুলে দিয়েই ভিতরে চলে গেলেন। আমি দরজাটা বন্ধ করে নিজের ঘরে গেলাম। আমার ঘরের অবস্থা দেখে চক্ষু চড়কগাছ। ঘরের অবস্থা না/জে/হা/ল। একটা কিছুও ঠিক নেই। ড্রয়ারের সব জামাকাপড় খাটের উপর ছড়ানো ছিটানো। ড্রেসিং টেবিলের জিনিসপত্র এলোমেলো করে রাখা কিছু আবার ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমার আলমারিটার আয়নার কাঁচটাও ভা/ঙা। ভীষণ আশ্চর্য হলাম। রেদোয়ানকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, রেদোয়ান আমার ঘরের অবস্থা এমন কেন? আলমারির কাঁচ ভা/ঙ/লো কে?

রেদোয়ানও বিস্মিত হলো। বললো, আমি কি করে বলবো আয়ু?

আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। শাশুড়িকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মা আমার ঘরের এই অবস্থা কেন?

শাশুড়ি আমার দিকে বি/র/ক্তি নিয়ে তাকালেন। বললেন, তো কেমন অবস্থা থাকবে তোমার ঘরের? আসমানে গিয়া বইসা থাকলে ঘরের অবস্থা তো এমন থাকবোই।

আমার আলমারির কাঁচ ভাঙলো কে?

এতো জবাব তোমারে দিমু কেন? তোমার ঘর যে ঠিক আছে সেই শুকরিয়া করো। গেছিলাই তো আইলা কেন? মাইনষের ঘাড়ে খাওয়ার অভ্যাস হইয়া গেছে?

আমি আর কিছু বললাম না। অযথা কথা না বাড়ানোই ভালো। আমি নিশ্চুপ ভাবে ঘরে চলে গেলাম। কিন্তু শাশুড়ি থামলেন না। তিনি আমাকে আরো নানান কথা শুনাতে থাকলেন। আমি ঘরে এসে চুপচাপ সব গুছিয়ে নিলাম। ঘরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমার ঘরে তল্লাশি হয়েছে। কিছু খুঁজতে গিয়ে ঘরের সব জিনিসপত্র একাকার করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারটা কিছুটা আঁচ করতে পারছি। নিশ্চয়ই কাজটা আমার শাশুড়ির। তিনি ছাড়া এই কাজ আর কেউ করতে পারেন না। নিশ্চয়ই তিনি আমার ঘরে আলমারির চাবি খুঁজেছেন। হতাশ হলাম প্রচুর। আমি প্রথমে ড্রয়ারটা গুছিয়ে ঘরটা পরিষ্কার করে ড্রেসিং টেবিল গুছালাম। ড্রেসিং টেবিল গোছাতে গিয়ে মনে পড়লো আমার নূপুর জোরা ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে ছিলো। কিন্তু এখন নেই। গোছানো ড্রেসিং টেবিলের সব এলোমেলো করে আবার নূপুর জোরা খুঁজতে লাগলাম। নূপুর জোরা আমার খুব প্রিয়। রেদোয়ানের থেকে দিয়েছিলো সেগুলো। আমার বাসর রাতের উপহার ছিলো ওগুলো। সারাটা ঘর তন্ন তন্ন করে ওগুলো খুঁজলেও পেলাম না। রেদোয়ানকে বললাম, আমার নূপুর জোরা পাচ্ছি না রেদোয়ান। ড্রেসিং টেবিলে রেখে গিয়েছিলাম।

ভালো করে দেখো। সেখানে রাখলে আর কোথায় যাবে? খুঁজে দেখো।

আমি চিৎকার করে বললাম, আমি গোছানো জিনিস এলোমেলো করে খুঁজলাম পেলাম না। আর কত খুঁজবো?

রেদোয়ান কিছু বললো না। উঠে আমার শাশুড়ির কাছে গেলো। শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলো, মা আয়রার নূপুর জোরা পাচ্ছে না। ড্রেসিং টেবিলের মধ্যে রেখে গিয়েছিল। এখন আর পাচ্ছে না। এগুলো কোথায়?

আমার শাশুড়ি তে/জ দেখিয়ে বললেন, তোর বউয়ের নূপুরের খবর আমি কেমনে জানবো?

বাড়িতে তো আর আমরা ছিলাম না যে আমরা জানবো। তুমি ছিলা তাই তোমারই জানার কথা। জুলি আর শান্তি ও তো বাড়িতে নেই।

আমার শাশুড়ি রেদোয়ানের কথা শুনে হায় হুতাশ করতে লাগলেন। বললেন, তার মানে তুই কইতে চাইতাছোছ আমি তোর বউয়ের নূপুর জোরা চু/রি করছি? আমার এই দিনও দেখতে হইলো? নিজের পোলায়ই আমারে চো/র বানায়া দিলো। মা বাপের আর কোনো কদর রইলো না। পোলা পাইল্লা বড় করলাম পোলায় চো/র বানায়া দিলো। আল্লাহ গো তুমি কই বইসা দেখো গো..!

শাশুড়ি ন্যাকা কান্না শুরু করে দিলেন। রেদোয়ান তাকে আর কিছুই বললো না। চুপচাপ ঘরে এসে পড়লো। আমিও আর কথা বললাম না। নূপুর জোরা আর আমার নেই সেটা অন্য কারো হয়ে গেছে বুঝতে পারলাম। কথা না বাড়িয়ে ঘরটা আবার গুছিয়ে ময়লা কাপড়চোপড় ধুয়ে নিলাম। কাপড় মেলে এসে দেখলাম আমার শাশুড়ি ঘুমাচ্ছে। দুপুর হয়ে এসেছে। রান্নাঘরে গিয়ে হাঁড়ি পাতিল ধুয়ে রান্নার জন্য চালের ড্রাম খুলতেই দেখলাম কিছু নেই। নেই চাল, নেই ডাল। ভীষণ আশ্চর্য হলাম। এরকম এ বাড়িতে কখনো আমি দেখি নি। আমার জা য়েরাও বাড়ি নেই। তারা বাপের বাড়ি গেছে। তারা মাকে এভাবে বাজার না করে দিয়ে চলে যাবে ব্যাপারটা কেমন জানি লাগছে। এখন রান্না করবো কি? শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করবো? কিন্তু তাকে জিজ্ঞেস করলে তো সে আরো দশ রকমের কথা শুনিয়ে দিবে। তার উপর ঘুমাচ্ছে। ঘুম থেকে সজাগ করলে ল/ঙ্কা/কা/ণ্ড বাঁধাবে। তাই আর তাকে ডাক দিলাম না। চুপচাপ ঘরে চলে গেলাম। রেদোয়ান নামায পড়তে গেছে। এদিকে আমার খিদে পেয়েছে প্রচুর। গতরাতেও খাই নি। সকালেও তেমন কিছু খাই নি। কাজ করে এখন খুব খারাপ লাগবে। কিছু না খেয়েই কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলাম। চোখ লেগে এলো। কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙলো। রেদোয়ান এসেছে। ও এসেই বললো, খেতে দাও।

কি খেতে দেবো?

রান্না হয় নি এখনো?

কি রান্না করবো? ঘরে রান্নার জন্য কিছু আছে নাকি?

নেই কিছু?

না।

রেদোয়ান কিছু বললো না। কিছুক্ষণ পর আমার শাশুড়ির ঘুম ভাঙলো। আমি শাশুড়িকে বললাম, আম্মা ঘরে তো রান্না করার মতো কিছুই নেই।

নেই যখন এনে নাও। কানের সামনে ঘ্যান ঘ্যান করো না
তো।

আমি চুপসে গেলাম। ঘরে এসে রেদোয়ানকে বললাম, তোমার কাছে টাকা নেই? কয় টাকা আছে?

চারশ সত্তর টাকা আছে। কি করবে?

চাল, ডাল, আর আলু নিয়ে আসো। খাবে কি?

তাহলে তো আমার কাছে আর টাকা থাকবে না। হাতে কিছু টাকা….

তুমি হাতে টাকা রাখবে আর আমি না খেয়ে ম/র/বো? যা আছে তা দিয়েই নিয়ে আসো। হাতে টাকা রাখা লাগবে না।

রেদোয়ান কিছু বললো না। বেরিয়ে গেলো। আমি ঘরের মধ্যে চুপটি করে বসে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর আমার বড় ননদ রুশা এলো। তাকে দেখলাম হাতে করে টিফিন ক্যারিয়ারের বাটি নিয়ে এসেছে। এসেই ডানে বামে না চেয়ে আমার শাশুড়ির ঘরে চলে গেলো। বুঝলাম শাশুড়ির জন্য কিছু নিয়ে এসেছে। আমি আর কিছু বললাম না। চুপটি করে আমার ঘরেই বসে থাকলাম।
আমি ঘর থেকে বের হলাম রেদোয়ানের আসার পর। ও আমার কথা মতো চাল ডাল নিয়ে এসেছে। চাল ডাল ধুয়ে চুলায় বসিয়ে ঘরে গেলাম। ভাত ফুটার ঘ্রাণ পেয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোতেই দেখলাম শাশুড়ি রুশা আপার ব্যাগে পিঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদের বাটা থেকে পলিথিন ভরে হলুদ দিচ্ছেন। আমি হা করে তাকিয়ে শুধু দেখেই গেলাম। এবার বুঝলাম বাড়িতে এসে কেন চাল ডাল পাই নি। দেখেও না দেখার ভান ধরে ঘরে চলে এলাম।

রুশা আপার বড় মেয়েটার বয়স দশ বছর। ও আসার পর থেকেই ঘরে লাফালাফি শুরু করেছে। ও লাফাতে লাফাতে আমার ঘরে এলো। নূপুরের ঝংকারে ওর পায়ের দিকে তাকালাম। আমি আবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছালাম। কারণ ওর পায়েই আমার সেই নূপুর জোরা…!!

চলবে……..

(অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা করবেন। গল্প কেমন হচ্ছে? প্লিজ বলবেন। ভুল ত্রুটি সংশোধনের চেষ্টা করবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here