দিন_বদলের_হাওয়ায় [৮] #তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

0
521

#দিন_বদলের_হাওয়ায় [৮]
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

আমার কথায় আমার শাশুড়ি হকচকিয়ে গেলো। সে হয়তো ভাবতে পারে নি তার মুখের উপর চট করে কথাটা বলবো আমি। আমার শাশুড়ির মুখটা কালো হয়ে গেলো। রে/গে গেলেন হয়তো। শান্তি আমার কথা শুনে শাশুড়িকে আবার জিজ্ঞেস করলো,

‘কি হলো আম্মা কথা বলছেন না কেন? ভাবি যা বললো তা যদি সত্যি হয় তাহলে এতো বাজার সদাই গেলো কোথায়? আপনাকে দেখে তো মনে হয় না আমরা যাওয়ার পর চুলায় আ/গু/ন ধরিয়েছেন।’

আমার শাশুড়ি আমার দিকে একবার বি/র/ক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওকে বললেন, বাজার তো ছিলো। কিন্তু পাশের মাদ্রাসার এতিম কয়টা ছেলেপেলে গো পরশু খাওয়াইছি। তাই শেষ হয়ে গেছে।’

আমি তৎক্ষণাৎ শাশুড়িকে বললাম, ‘আম্মা আমি না শুনে গেছিলাম গত পরশু এখানে এমপি সাহেবের আশার কথা ছিলো। তিনি আসেন নাই? আর তিনি আসলে তো মাদ্রাসায় নিজে খাবার দিয়ে যায়।’

আমার কথায় শান্তি বললো, ‘হ্যাঁ তাই তো আম্মা। আপনি এগুলো কি করলেন?’

এইবার শাশুড়ি ভালো জ/ব্দ হয়েছে। আমি জানি আমার বলা কথাগুলোর শোধ আমার শাশুড়ি নিশ্চয়ই নিবে। নিক তবে এবার তো প্রতিবাদ করতে পেরেছি তাই শান্তি। শান্তির কথার জবাবে শাশুড়ি কিছুই বলতে পারলেন না। আমতা আমতা করতে লাগলেন। শান্তির বুঝতে দেরি হলো না। ও শাশুড়িকে বললো, এতো হু না কেন করছেন আম্মা? আপনার মেয়ের বাড়িতে যে পাঠিয়ে দিয়েছেন সেটা বললেই তো হয়! আমি আপনার মতো মানুষ দেখি নি। এখন আমরা এতো গুলো মানুষ খাবো কি? আপনার মেয়ে কি আমাদের খাওয়াবে নাকি? বলুন তো আপনার মেয়েকে আমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসতে। দেখি কত দরদী!

শান্তি বিড়বিড় করে আরো অনেক কিছুই বললো শাশুড়িকে। শাশুড়ি চুপচাপ শুনছেন কিছু বলতে পারছেন না। আমি হলে হয়তো এতক্ষণে কু/রু/ক্ষে/ত্র বানিয়ে ফেলতেন। আমি আর এসবে থাকলাম না। নিজের ঘরে চলে গেলাম।

কিছুক্ষণ পর শান্তি আমার কাছে এসে বললো, ভাবি আমি বাজারে যাচ্ছি। তুমি আমার ঘরটা গুছিয়ে দিয়ো।

শান্তি চলে গেলো। আমি কাজে লেগে পড়লাম। শান্তির ঘর গুছিয়ে ঘরে ঝাড়ু দিয়ে দিলাম। হঠাৎ মনে হলো স্বর্ণা ভাবির সাথে কথা বলা দরকার। তাই স্বর্ণা ভাবির ঘরে গেলাম। ওনাদের বাসায় কলিং বেল দিতেই উনি দরজা খুলে দিলেন। আমাকে দেখে বললেন, আরে ভাবি আপনি ভিতরে আসুন।

আমি ভিতরে গেলাম। ভাবি আমাকে ড্রইং এর সোফায় বসতে বললেন। এরপর বললেন, বলুন চা খাবেন নাকি কফি?

কিছুই খাবো না। একটু দরকারি কথা ছিলো তাই এসেছি। এখনই যেতে হবে বাসায় কাজ আছে।

জানি তো আপনার দম ফেলার সময় হবে না এখন। শান্তি ভাবিকে দেখলাম এসেছে।

হুম। বলছিলাম আপনি যে গতকাল আপনার বান্ধবীর ছেলেদের কথা বললেন তারা কি পড়বে? নাকি টিচার নেওয়া হয়ে গেছে তাদের জন্য।

হ্যাঁ পড়বে তো অবশ্যই, এখনো নেওয়া হয় নি।

রেদোয়ান পড়াবে বলেছে। এখন যদি আপনার বান্ধবী পড়াতে দেয় তবে…

অবশ্যই দিবে। আমি তাহলে ভাইয়ার নাম্বারটা ওকে দিয়ে দিবো। নাম্বারটা বলুন।

আমি রেদোয়ানের নাম্বার দিলাম। খুব ভালো লাগছে। ভাবির থেকে বিদায় নিয়ে ঘরে চলে আসলাম। কিন্তু দরজার সামনে আসতেই ভিতর থেকে শাশুড়ির ক/র্ক/শ শব্দ শুনতে পেলাম। রেদোয়ান হয়তো বাড়িতে এসেছে। আমার শাশুড়ি চিৎকার করে বলছে,

তোর বউ কি আর ঘরে থাকে? পাড়ায় পাড়ায় আড্ডা দিতে যায়। সেই কখন গেছে এখনো আসে না। ঘরের বউ ঘরে থাকবো তা না সারা পাড়া মাথায় নিয়া ঘুরবো। যত্তসব। আমি এখন কিছু কইলেই আমার দো/ষ।

ভীষণ অবাক হলাম। রেদোয়ান বললো, মা তুমি ভুল ভাবছো। আয়রা ওমন না। তোমার সাথেই তো কত বছর ধরে থাকছে। ও কোথায় গেছে তা কি জানো?

দেখ গিয়া কোনে আড্ডা দিতাছে। আমারে জিগাছ কেন? আমি কেমনে কমু তোর বউয়ের খবর? আমারে জিগায়া গেছে নি ও?

শাশুড়ির রা/গী কথার কারণ বেশ বুঝতে পারছি। সকালের জে/দটা এখন মিটিয়ে নিচ্ছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। দরজায় কলিং বেল বাজাতেই রেদোয়ান দরজা খুলে দিলো। জিজ্ঞেস করলো, কোথায় গিয়েছিলে?

স্বর্ণা ভাবিদের বাসায় গিয়েছিলাম। গতকালের বিষয়ে একটু আলাপ করলাম।

রেদোয়ান আর কিছু বললো না। আমার শাশুড়ি কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমি সেদিকে গুরুত্ব দিলাম না। নিশ্চুপ ভাবে নিজের ঘরে চলে এলাম।

কিছুক্ষণ পর শান্তি এলো। আমি আমার কাজে ভর্তি হয়ে গেলাম। রান্নাঘরে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। রান্না শেষ করে এরপর রান্নাঘর থেকে বের হলাম। ঘামে পুরো চুপসে গেছি। তাই গোসল করে নিলাম। গোসল সেরে সবাইকে খাবার দিলাম। এ বাড়িতে আবার কেউ কারো সাথে খেতে পারে না। যারটা তার ঘরে গিয়ে দিয়ে আসতে হয়। এ নিয়ম আগে ছিলো না। অল্প কিছুদিন যাবৎ তৈরি হয়েছে। সবার ঘরে গিয়েই খাবার দিয়ে আসলাম। রেদোয়ানকেও দিলাম। খাবার দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আমার শাশুড়ির ঘর থেকে চেঁচামেচির শব্দে সেখানে গেলাম। শাশুড়ি খাচ্ছে আর বলছে, এগুলো কি রান্না করছে আল্লাহ মাবুদ! এতো লবণ কেউ খাবারে দেয়। মরিচ দিয়ে খাবার লাল করে ফেলছে। আমারে মনে হয় বেশি দিন বাঁচতে দিতে চায় না এখনই এডি খাওয়ায়া মা/র/তে চায়।

নানান কথা বলছেন উনি। আমি শুনেও না শোনার ভান ধরে চলে এলাম। ঘরে এসে রেদোয়ানের প্লেট থেকে একটু তরকারি মুখে দিলাম। নাহ লবণ আর ঝাল তো ঠিকই আছে। তবে এতো চেঁচামেচির কারণ কি? আমি রেদোয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম, আজকের তরকারি কেমন হয়েছে?

রেদোয়ান হেসে বললো, তা কি আর বলতে হয়? তোমার হাতের রান্না বলে কথা ভালো না হয়ে কি উপায় আছে?

আমি হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, লবণ ঠিক আছে তরকারির?

হ্যাঁ। একদম পারফেক্ট।

ঝাল হয়েছে বেশি?

না। মোটামুটি হয়েছে যেটা সবসময়ই খাই।

তাহলে মা চেঁচামেচি করে খাবারে লবণ বেশি ঝাল বেশি এগুলো বলছে কেন?

রেদোয়ান তৎক্ষণাৎ খাওয়া বন্ধ করে দিলো। মুখটা মলিন করে বললো, বাদ দেও না। মা তো এমনই। কিছু মনে করো না। ঠিক হয়ে যাবে আবার।

আমি কিছু বললাম না। দেখলাম রেদোয়ান ভাত নড়াচড়া করছে। খাবার মুখে তুলছে না। হয়তো ক/ষ্ট পেয়েছে। নিজের ভু/ল বুঝতে পারলাম। এই মুহূর্তে এ কথাটা তাকে বলা আমার মোটেও উচিত হয় নি। এখন সে খেতেই পারবে না। মায়ের ব্যবহারে নিশ্চয়ই ক/ষ্ট পেয়েছে। যতই হোক মা তো তার। আমি তাকে বললাম,

আজ স্বর্ণা ভাবিকে বলেছি। উনি তোমার নাম্বার নিয়েছেন। বলেছেন তার বান্ধবীকে বলবেন।

তাই নাকি? ভালোই তো।

হুম। কিন্তু জিজ্ঞেস করা হলো না স্টুডেন্ট কোন ক্লাসে পড়ে।

ওটা গেলেই বোঝা যাবে। দেখি ফোন আসে কিনা।

হুম।

বিকেলে সেই ছাত্রদের বাবা ফোন করলেন রেদোয়ানকে। রেদোয়ানকে যেতে বলা হয়েছে। ঠিকানা মেসেজে দিয়ে দিবেন বলেছেন। রেদোয়ান তৈরি হয়ে সেখানে গেলো। আমি হাঁড়ি পাতিল ধুয়ে রাতের খাবারের আয়োজন করতে লাগলাম। এমন সময় শান্তি এসে আমাকে বললো, ভাবি রুশা আপা কি এই বাড়িতে এসেছিল?

হ্যাঁ গতকাল এসেছিলো তো।

আম্মা কি তাকে ঘরের বাজার সদাই সব দিয়ে দিয়েছে?

আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আপাতত ঝ/গ/ড়া ফা/সা/দ চাই না। তাই বললাম, আমি তো তা জানি না শান্তি। রুশা আপা আম্মার ঘরে ছিলো সারাক্ষণ।

শান্তি কি যেন ভেবে চলে গেলো।

আমি আমার কাজে মন দিলাম। কাজ টাজ সেরে ঘরে এসে বসে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর রেদোয়ান আসলো। ওর চোখে মুখে হাসি। ওকে এতো খুশি দেখে বললাম, কি হয়েছে? এতো খুশি দেখাচ্ছে তোমাকে?

কাল থেকে পড়াতে যাচ্ছি।

খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে রেখেছে তারা?

হ্যাঁ। দুটো ছেলেকে পড়াতে হবে। একটা সেভেনে পড়ে আরেকটা এইটে। দুজনকে মিলিয়ে মাসে চার হাজার টাকা বেতন দিবে।

তাহলে ভালোই তো। কিছুটা হলেও তো উপকার হবে এতে!

ভীষণ ভালো লাগছে। দুজনেই আজ আমরা খুব খুশি।

এর মাঝেই কেটে গেলো চার দিন। ভালো চলছে সব। রেদোয়ান এখন পড়াতে যায়। তার স্টুডেন্টরা নাকি তাকে অনেক পছন্দ করে। রোজ এসে তাদের গল্প শোনায়। আমার শাশুড়ি এখন আর আমার সাথে ভু/লেও কথা বলে না। শান্তি প্রয়োজনে দু একটা কথা বলে। এছাড়া সেও কথা বলে না। এতে অভ্যস্ত আমি। আজ আমার মেজ জা এসেছে। ও আসার কিছুক্ষণ পরই সবাইকে ডাকলো। কি যেন কথা আছে সবার সাথে। সবাইকে শাশুড়ির ঘরে ডাকলো। আমি আর রেদোয়ান দুজনেই সেখানে গেলাম।

কিন্তু সেখানে গিয়ে আমার মেজ জায়ের কথা শুনে ভীষণ অবাক হলাম!

চলবে…..

সবার লাইক কমেন্ট দেখতে চাই☹️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here