মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-41

0
762

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-41

উজান ওর কথা অনুযায়ী হিয়া কে নিয়ে কাজি অফিসে যেতেই হিয়া পুরো চমকে যায়,,মানে কি, কি হবে এখন,ওদের বিয়ে!!___কিন্তু এই মুহুর্তে হঠাৎই কেনো,,বিয়ে টা ছিলো হিয়ার কাছে পুরো অনাকাঙ্ক্ষিত,,হিয়া ভাবতেও পারি নি জীবনে এই পরিস্থিতি তে দাঁড়িয়ে এভাবে,এই রাতে ওর বিয়ে হবে তাও আবার কোনো রকম আগাম কোনো ইঙ্গিত ছাড়া,,এদিকে শ্রাবণ তো জানে বিয়ে মানেই হৈ-হুল্লোড়,খাবার দাবার,নাচ গান আর এতো এতো মজা,,তাহলে আবার এটা কেমন বিয়ে হলো,,ইসস বেচারার ছোট মন তো কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না এভাবেও নাকি বিয়ে হয় আবার,,ধুর___হিয়া বিয়ে হবার পর এই এক ঘন্টা ধরে একটা শকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, মানে কি সত্যি একটু আগে সে কবুল বললো,,সাইন করলো,,কিন্তু কখন কিভাবে কি হলো,,হিয়ার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না,,জগাখিচুরি হ’য়ে সব দলা পাকিয়ে যাচ্ছে,,এদিকে সন্ধি রুপম তুষার ঝিনুক সাব্বির এদের খুশি আজ দেখে কে,,সন্ধি তুষার তো এদিকে ফুলসজ্জা ফুলসজ্জা বলে উজানকে ক্ষেপাচ্ছিলো আর ওদিকে ঝিনুক হিয়া কে কাতুকুতু দিতে দিতে বাসর রাতের ভয়াবহতার আভাশ দিয়ে হিয়াকে একবারে লজ্জার শেষ সীমানায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছিলো যেনো,,

ঝিনুকঃ উফফ ভাইয়া আগে জানলে তো হিয়াকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে আপনার হাতে তুলে দিতাম,,আপনি না হয় আজ রাতে একটু বেশি করেএএএএ

হিয়াঃ আ হ ঝিনুক,,কি হচ্ছে কি,,শ্রাবণ শুনলে কি ভাববে,

তুষারঃ ইসস সত্যি ঝিনুক আর একটু যদি আজ সময় পেতাম,জানলে তোর রুম টা অনন্ত একটু ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিতাম,,হিয়ার গন্ধে হারাবার সাথে না হয় একটু ফুলের গন্ধে হারিয়ে যেতি

উজানঃ থামবি তুই তুষার,,কি শুরু করলি হ্যা তখন থেকে

সন্ধিঃ একটা প্যাকেট দিয়ে হবেএএএ না তুষারকে বলে আরেকটা নিয়ে আসবো,

উজানঃ আহ সন্ধি কিসব কথাবার্তা এগুলো,,শ্রাবণ সামনে একটু তো লেহাজ কর,

সন্ধিঃ আরে শ্রাবণ তো রুপমের কোলে,,ও শুনবে না__বল না বল না,,লাগবে নাকি আর কিছু,

উজানঃ তোদের কে সাক্ষী করে নিয়ে এসে বিয়ে করাটাই ভুল হয়েছে আমার,,যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছিস___দেখি এগুলো ধর___রুপম ওর গাড়ি নিয়ে এসেছে তুই শ্রাবণ হিয়া আর ঝিনুক সহ সাব্বির কে নিয়ে বাড়িতে যা,,আমি তুষারের বাইকে যাচ্ছি একটা জিনিস কেনার আছে,

ঝিনুকঃ উহু উহু বিয়ের রাতে বউকে কিছু গিফট করবা বুঝি ভাইয়াআআ(আদুরে স্বরে)

উজানঃ ইসস আমার শালি সাহেবা টা এতো বুঝে,,আমার বউ টা যদি একটু এরকম ইনটেলিজেন্ট হতো,,তোমার বান্ধবী তো শুধু কথায় কথায় ভয় আর কান্না করতে পারে__ভীতুর ডিম একটা

হিয়াঃ আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন হ্যা,,আমি মোটেও কথায় কথায় কান্নাকাটি করি না

উজানঃ সে আর বলতে,,তখন ঔ ভয় পেয়ে তো মাঠের মধ্যে আমাকে ধরে যা কান্নাকাটি করলা,,ভীতু একটা

হিয়াঃ আমি আর কথাই বলবো না আপনার সাথে,,আমি ভীতু আর আপনি অনেক সাহসী তাই না, তা ভালো হু___শ্রাবণ,,শ্রাবণ এদিকে আসো,,এই ছেলে

ঝিনুকঃ আরে হিয়া শোন রাগ করে কোথায় যাচ্ছিস,,হিয়া___ইসস যা ক্ষেপে গেলো তো,,

সন্ধিঃ আরে এরা এতো ঝগড়া করে,,ফুলসজ্জার রাত টাও না ঝগড়া করে করে ভোর হয়ে যায় এদের,,দেখি ঝিনুক চলো তো আগে গিয়ে ওদের ঘর টা আজ সাজিয়ে দিয়ে আসি,,,,তোমার রাত হলে কোনো সমস্যা নেই তো?

ঝিনুকঃ না না আপু,,বাড়িতে মা’কে বলে এসেছি আজ আমরা সবাই হিয়ার বাড়িতেই থাকবো আই মিন ভাইয়ার,

সন্ধিঃ আচ্ছা আসো,,

উজান হিয়াদের গাড়িতে তুলে দিয়ে তুষার সহ বাইকে করে বাড়ির নিচে আসতেই দেখে হিয়ারা এখনো গাড়ি করে আসে নি,,অথচ ওদেরই আগে আসার কথা ছিলো,,

উজানঃ কোথায় তোরা আসতে এতোক্ষণ লাগে না-কি?

রুপমঃ আরে সন্ধির জন্য তো,ও বললো ফুলের দোকানের সামন দিক দিয়ে নিতে,,তোদের ঔ বিছানা টিছানা নাকি এখন সে আর ঝিনুক মিলে সব ফুল দিয়ে সাজিয়ে দেবে,,তাই জন্য তো আমি,

উজানঃ এই সন্ধি টা না সত্যি,,আচ্ছা তোরা আয় আমি আর তুষার উপরে গেলাম

রুপমঃ আচ্ছা আমাদের আর হয়তো দশ পনেরো মিনিট লাগবে,,তোরা যা,,

উজান ফোন রেখে তুষারকে নিয়ে লিফটে করে উপরে আসতেই এবার ৩৬০° এ্যাঙ্গেলে ঘুরে যায়,,গেটের সামনে এটা কে দাঁড়িয়ে,,ওর মা!!___এটা কি উজান ঠিক দেখছে,মানে সত্যি সত্যি তার মা তার ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে,,হিয়া যেমন তখন আচমকা বিয়ের কথা শুনে থমকে গিয়েছিলো উজানেরো এখন ঠিক একই অবস্থা হ’য়ে যাচ্ছে,,মা’কে যে সে খুব ভয় পায় আর মান্য করে,,এখন সে কি করে ওর এই আচমকা বিয়ের কথা বলবে,,

উজানঃ মা তুমি!!

বাসবিঃ কান ধর,,কান ধরতে বলেছি না তোকে আমি,,কান ধর বলছি,,

তুষারঃ আন্টি শোনো একটু আমার কথা,,বেচারা বুঝতে পারে নি,,হুঁশ হারিয়ে একা একা এই কাজ টা

বাসবিঃ হুঁশ হারিয়ে না,,হারাচ্ছি এবার হুঁশ আমি ওর___এতো বড় একটা কাজ করার আগে একবার এই মা টার কথা তুই ভাবলি না__আমাকে জানালে কি আমি তোকে মানা করতাম____ভাগ্যিস সন্ধিকে ফোন দিয়ে আমি জানতে পারলাম যে তুই

উজানঃ সন্ধি তোমাকে এখন,,আমরা তো একটু আগে বিয়ে করে,এর মধ্যে কখন ও তোমাকে জানালো আবার!!

বাসবিঃ আমি একটা কাজে ঢাকাতে আসছি__তুই তো আর নিজে থেকে কখনো বলবি না মা আসো,এসে কয়েকদিন আমার এখানে থেকে যাও,,তাই এই আমাকে বেহায়ার মতো নিজের ছেলের কাছে চোরের মতো আসতে হয়

উজানঃ এটা একটা কোনো কথা বললা তুমি মা,,আমি কি তোমাকে আসতে বলি না,তুমি তো ওদিকে কাজ সামলে আসতে পারো না

বাসবিঃ একদম আমার সাথে চালাকি করবি না,,কি ভাবিস আমি খুব বোকা তাই না___তোকে ফোনে না পেয়ে সন্ধিকে ফোন করলাম,,আর সন্ধি আমাকে কি বললো-আন্টি একটু দাঁড়াও ছেলে তোমার বউ নিয়ে একবারে বাড়িতে ঢুকছে!

উজানঃ এই মেয়ে টাকে তো আমি,,

বাসবিঃ দেখি কোথায় আমার বউ মা,,সাহস কতো বড় আমাকে রেখে তুই বিয়ে করে বাড়িতে বউ নিয়ে আসিস___কোথায় হিয়া? ডাক ওকে, বল মা ডাকছে,আর ওর যে একটা ছোট ভাই আছে সে কোথায়?

উজানঃ আস্তে মা,,ওরা সবাই গাড়িতে আসছে,,দেখি তুমি আসো তো ভেতরে__কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছো এভাবে,পা ব্যাথা করে না,একবার ফোনে পেলে না আরেকবার ট্রাই করতে___দেখি ব্যাগ দেও কি আনছো আবার এগুলো এতো,,

উজান ওর মা’কে নিয়ে রুমে ঢুকে,,বাসবি ঠিক করে হিয়াদের আসতে যখন আরো পাঁচ দশ মিনিট ততোক্ষণ না হয় উনি উনার শাড়ি টা পাল্টে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুক,,বাসবি ফ্রেশ হতেই সবাই চলে আসে,,হিয়া সন্ধি সবাই রুমে আসতেই উজান হিয়াকে বলে মা আসছে হঠাৎ,,এখন সে হিয়া আর শ্রাবণের সাথে তার মা’র পরিচয় করিয়ে দেবে,,শুনেই তো হিয়ার উপরের আকাশ টা যেনো দুম করে ভেঙে পড়লো,,মা আসছে মানে,কখন?মা আসছে উজান একবার জানাবে না হিয়াকে,,ভয়ে হিয়ার বুক ধুকপুক করতে শুরু করে,,হিয়া দৌড়ে দরজার বাহিরে বেড়িয়ে আসে,,হিয়ার পেছনে আসে উজান,,তাদের সাথে বেড়িয়ে আসে শ্রাবণো,,উজান এসে হিয়ার হাত দুটো ধরে টানতে শুরু করে ভেতরে নিয়ে যাবে বলে কিন্তু হিয়া ভেতরে যেতে চায় না,,শুরু হয় দু’জনের টানাটানি

উজানঃ হেই মেয়ে কোথায় যাচ্ছো?আসো ঘরে,

হিয়াঃ না আমি মা’র সামনে যাবো না,,আপনি কেনো আমাকে আগে বললেন না মা আজ আসবে__ইসস একটা ভালো জামা পড়া নেই চুল গুলো শ্যাম্পু করে ঠিক মতো আছড়ানো নেই,,কি বিধস্ত অবস্থা হয়ে আছে চেহারার,,মা’র একটুও আমাকে দেখে পছন্দ হবে না,একটুও না,

উজানঃ আরে হিয়া পিচ্চি রিল্যাক্স,,মা তোমাকে দেখবে তোমার পোশাক আশাক না,,দেখি আসো আমার সাথে,

হিয়াঃ না না আপনি বুঝতে পারছেন না, আমার খুব ভয় করছে__মনে হচ্ছে মা আমাকে দেখে খুব রেগে যাবে,

উজানঃ আরে একটুও রাগ করবে না,,আমার মা তো রাগ করতেই জানে না,,আমি আছি তো হিয়া পাখি প্লিজ তুমি এখন আর এরকম করো না,

হিয়াঃ আমার ভীষণ ভয় করছে উজান,,মা’র যদি আমাকে পছন্দ না হয়,,তার উপর ওনাকে না জানিয়ে এই বিয়েটা,

উজানঃ আরে কিচ্ছু হবে না তুমি আসো তো,,মা কিন্তু রাগ করবে হিয়া এবার___তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না তুমি জাস্ট গিয়ে মা’র সামনে দাঁড়াবা দেখবা মা নিজে থেকে তোমাকে এসে জড়িয়ে ধরছে___প্লিজ হিয়া আসো নাআআআআ,

হিয়াঃ মা’র আমাকে পছন্দ না হলে কিন্তু দেখিয়েন আপনি,,একটু মুখ টা আয়নাতে দেখলামো না কি রকম লাগছে___দেখি শ্রাবণ এদিকে আসো তো,

শ্রাবণঃ কি হইচে?

হিয়া বসে শ্রাবণের জামা ঠিক করে দিয়ে মাথার চুল গুলো হাত দিয়ে লেপ্টে দিয়ে শ্রাবণকে একদম ভদ্র বাচ্চা সাজিয়ে দেয়,,

হিয়াঃ এভাবে চুল গুলো দাঁড়া করিয়ে রাখো কেনো,,বড় হইছো খুব না___আর কখনো যেনো এরকম না দেখি(রাগে)

শ্রাবণঃ আমি তো কিছু করি নি চুলে,ভালো ভাইয়াই তো আমার চুল গুলো তখন এসপাইত(স্পাইড)করে দিলো,,এরকম খাঁড়া খাঁড়া করে,,

হিয়াঃ কি শেখান ওকে এ বয়সে এগুলো,,ওর এসব চুলে স্টাইল করার বয়স এটা___আচ্ছা শোনো তুমি,,ভালো ভাইয়া এখন যেই আন্টির সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে,তুমি ঔ আন্টি টার সামনে একদম চুপ হয়ে ভদ্র হয়ে থাকবে ঠিক আছে,,,,,আচ্ছা শুনুন না শ্রাবণ আপনার মা’কে যেনো কি বলে ডাকবে?

উজানঃ আমার বাচ্চা হলে যা বলে ডাকতো,,অবশ্য শ্রাবণ তো আমারই বাচ্চা সে হিসাবে ও আমার মা’কে দাদিমনি বলে ডাকতে পারে,,হুম এটা ভালো শোনায়!

হিয়াঃ আচ্ছা শ্রাবণ শুনো,,ঔ যে আন্টি টার সাথে ভালো ভাইয়া এখন আমাদের পরিচয় করিয়ে দেবে না তাকে গিয়ে আগে সালাম দিয়ে বলবা দাদিমনি আপনি কেমন আছেন,,ঠিক আছে?

শ্রাবণঃ উনি যদি আমাকে বকা দেয় তকন,

হিয়াঃ না উনি বকবে না,,তুমি শুধু ভদ্র হয়ে থাকবা,,একদম পাকা পাকা কথা বলবা না,

উজানঃ আমার শ্রাবণ তোমার থেকেও ভালো জানে,,কার সাথে কিরকম কথা বলতে হয়,,দেখি উঠো

হিয়া উঠে দাঁড়ালে উজান হিয়ার ওরনা টা টেনে হিয়ার মাথায় কাপড় দিয়ে দেয়

উজানঃ এই যে এখন একদম বউ বউ লাগছে,,আসো,,

হিয়াঃ আমার সত্যি ভীষণ ভয় করছে উজান,,

উজানঃ আহ আসো তো,,

হিয়াঃ উজান না যা-ই,,

উজানঃ আচ্ছা মুশকিল তো,,আসতে বলছি আসো,,

উজান হিয়াকে টেনে ভেতরে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে দেয়,,তারপর রুম থেকে ওর মা’কে নিয়ে এসে হিয়ার সামনে দাঁড় করিয়ে দিতেই,,হিয়া আর বাসবি একে অপরকে দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে,,হিয়া তো উজানের মা’কে আগে থেকেই চিনে,সেবার যখন রংপুরে গেলো তখন তো বাসবির অনুরোধেই সে উজানদের বাড়িতে গিয়ে ওসব রান্না করে দিয়ে আসলো,,হিয়ার বুক থেকে যেনো একটা ভয় নামলো,,হিয়া বাসবিকে দেখে মুখে একটা হাসি দিলেও বাসবি কি যেনো একটা মনে করে উজানের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো,,বাসবির মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো সে হিয়াকে উজানের বউ হিসাবে কখনো এক্সপেক্ট করে নি,,বাসবির চোখে মুখে এক মিনিট আগ অবধিও যেই খুশির রেশ ছিলো সেটা যেনো হিয়াকে দেখে মুহুর্তেই শূন্যে হারিয়ে গেলো!!!!___এদিকে বাসবির এই কাজে হিয়া সন্ধি তুষার সহ উপস্থিত সবাই হতবাক,,বাসবি হঠাৎ হিয়া আর শ্রাবণকে দেখে এভাবে দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে কেনো দিলো,,হিয়ার মনে এখন হাজার প্রশ্ন চলছিলো বাসবি তো জানে হিয়া অনাথ তাই জন্য কি সে হিয়াকে নিজের বউ হিসাবে মেনে নিতে পারলো না,,না-কি হিয়াকে উজানের পাশে উজানের ওয়াইফ হিসাবে মানায় নি কোনটা,,কিন্তু সেবার তো বাসবি কতো খোলা মনে হিয়ার সাথে হেঁসে খেলে কথা বললো,,তখন তো একবারো উজানের মা’কে দেখে হিয়ার মনে হয় নি উনি হিয়াকে পছন্দ করেননি,,বরং নিজের মেয়ের মতো ব্যবহার করেছিলেন,,তাহলে সেই ব্যবহার টাকি শুধু লোক দেখানো ছিলো নিজের কাজ উদ্ধার করতে,,হিয়া আর কিছু ভাবতে পারে না,,সব কিছু কেমন জানি দম বন্ধ বন্ধ লাগতে শুরু করে তার,,

শ্রাবণঃ বুবু এই দাদি মনি টাকে তো আমরা চিনি,,মনে আছে চাচুর বাড়িতে গিয়ে আমরা ওনার বাড়িতে,

উজানঃ চিনি মানে,,শ্রাবণ কি বলছে হিয়া,,তুমি আর মা একে অপরকে আগে থেকে চিনো?

হিয়াঃ হ্যা মানে সেবার রংপুরে গিয়ে আমার ওনার সাথে পরিচয় হয়,,আমি ওনার সাথে আপনাদের বাড়িতে গিয়ে

হিয়া এক এক করে সেদিনের কথা গুলো উজানকে খুলে বলে-যে কি করে তার সাথে তার মায়ের পরিচয় হয়েছিলো,,কি করে সে উজানের বাড়িতে গিয়ে ওদের জন্য রান্না করে দিয়েছিলো,,

উজানঃ তুমি মা’র সাথে আমার বাড়িতে গিয়েছিলে হিয়া,,এটা আমায় তুমি কি বলছো হিয়া,,তুমি সত্যি সত্যি মা’কে আগে থেকে চেনো?

সন্ধিঃ ওসব ছাড়,,আন্টি হঠাৎ এরকম করে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো ব্যপারটা আমার ঠিক ভালো লাগছে না,,

হিয়াঃ মা’র হয়তো আমাকে পছন্দ হয়নি যে আমার মতো একটা অনাথ মেয়ে কি করে ওনার ছেলের

উজানঃ তা না হিয়া,,আমার মা তোমার বিষয়ে সব জানে,,আমি তো তাকে তোমার কথা সব বলেছি বিশ্বাস করো,,কিন্তু মা’র যে হঠাৎ কি হলো,,

হিয়াঃ আচ্ছা আপনি ওসব বাদ দিন,,আগে মা’কে গিয়ে দেখুন,,উনি ঠিক আছে কি না,,

উজান গিয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে কিন্তু তার মা দরজা খুলে না,,

উজানঃ মা দরজা খুলো,,তুমি হঠাৎ এভাবে দরজা লাগিয়ে দিলে কেনো___মা শুনো না দরজা খুলবা না,,তোমার হিয়াকে পছন্দ হয়নি কিছু তো একটা বলো,,মা__মা দরজা খুলো,,

বাসবিঃ আমি কখনো ভাবতে পারিনি রাজা, তুই আমার অতীত টাকে আবার আমার সামনে এভাবে ফিরিয়ে আনবি__কথায় আছে দুনিয়ায় ধার নাকি দুনিয়াতে শোধ দিতে হয়,,আজ আমার সাথে ঠিক তাই হ’য়ে গেলো,,,,না আমার এই ভয় আর চোখের পানি তোকে বা হিয়াকে কখনো দেখানো যাবে না__যেটাকে আমি এতোদিন যত্ন করে গোপন করে রেখেছিলাম সেটাকে আমাকে সামনেও গোপন করে রাখতে হবে,,এতে তোর যেমন খুশি জড়িয়ে থাকবে তেমনি ঔ বাচ্চা দুটোরও জীবন সুন্দর হবে!!!!

বাসবি চোখ মুছে গেট খুলে বেড়িয়ে আসতেই উজান বাসবি কে প্রশ্ন করে সে ঠিক আছে তো,,সে কেনো হঠাৎ এরকম করে দরজা লাগিয়ে রাখলো,,তার কি হিয়াকে পছন্দ হয়নি,,বাসবি উজানকে কিছু না বলে হিয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো,,হিয়া এতোক্ষণ শ্রাবণকে নিয়ে ডাইনিং এর একপাশে গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো,,বাসবি সামনে আসতেই যেনো হিয়ার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো,,হৃৎপিণ্ড টা যেনো হাজার মাইল বেগে ধুকপুক করতে থাকলো,,হিয়া ভয়ে চোখ নামিয়ে নিলেও শ্রাবণ আবার সাহস করে বাসবির দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই,,যেনো পলক ওর কিছুতেই পড়ছে না,,সে তো আর তার বুবুর মতো ভীতু না,

শ্রাবণঃ তুমি ঔ ভালো আন্টি টা না যে আমাকে মিষ্টি খেতে দিছিলো,,

বাসবি শ্রাবণের মাথায় হাত বুলে দিয়ে

বাসবিঃ তুমি আমাকে মনে রাখছো ভাইয়া,,ইসস খুব বুদ্ধি আর প্রখর মন তো তোমার,,

শ্রাবণ বাসবি কে একটা হাসি দিতেই বাসবির মন টা শান্তি পায়,,বাসবি নিজের হাতের সোনার বালা দুটো খুলে হিয়ার হাত দুটো ধরে এক এক করে হিয়াকে পড়িয়ে দেয়,,

বাসবিঃ আমি তো জানতাম না আমার গুনোধর ছেলে এভাবে আজ বিয়ে করবে,জানলে আমার এই মিষ্টি দেখতে বউমা টার জন্য দোকানের সব চাইতে সুন্দর জিনিস টা এনে হাতে পড়িয়ে দিতাম,,,দেখো তো এগুলো পছন্দ হয় না-কি,,একটু মনে হয় লুস হচ্ছে,আচ্ছা উজানকে বলো দোকানে দিয়ে না হয় তোমার মাপে বানিয়ে দিবে__কেমন__পছন্দ হয়েছে তো?

হিয়াঃ আন্টি আমি

বাসবিঃ এই আন্টি কি হ্যা,,মা বলো,,আমি কি মা হই না এখন তোমার,,মা বলো বলছি__নইলে কিন্তু আমি খুব রাগ করবো হ্যা,,

হিয়াঃ না___মা আমি আ-সলে,,আমার এসব বালা চুড়ি কিছু পড়ার অভ্যেস নেই,আপনি বরং এগুলো__আমি কখনো এসব পড়িনি এগুলো যদি আপনি,,

বাসবিঃ পড়ার অভ্যেস না থাকলেও এখন থেকে পড়ার অভ্যেস করতে হবে,,আমার রাজার বউ কে যে এরকম হাত পা খালি আমি দেখতে পারবো না মা___রাজা?

উজানঃ হ্যা,হ্যা মা বলো,

বাসবিঃ আমি এসব কোর্টে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ বা কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে মানবো না,,

উজানঃ মা আমি এখন কি করে,

বাসবিঃ তোর আর হিয়ার আবার বিয়ে হবে,,আমরা কাল সবাই একসাথে রংপুরে যাবো,আমি বিহানকে বলে দিচ্ছি কাল যেনো বাড়ি পুরো সাজিয়ে দেয়,,হলুদ হবে,কার্ড ছাপানো হবে,বিয়ের জন্য হিয়ার শাড়ি তোর পাঞ্জাবি এসব কিনতে হবে তো না-কি,,

উজানঃ মা তুমি সত্যি বলছো,,সত্যি আমার আর হিয়ার!!

বাসবিঃ হুম বলছি,,আমি যে ঘরের বউকে এরকম পানসে করে ঘরে তুলবো না সোনা,,,,,,,দেখি তুষার বিয়ে না হয় আবার দেবো কিন্তু যেই মিষ্টির হাঁড়ি দুটো আনলি সেগুলো খাবো তো এখন না-কি,,

তুষারঃ হ্যা আন্টি খাওয়া হবে মানে,,শুধু মিষ্টি কেনো আজ তো রাতেও ভালো খাওয়া দাওয়া হবে,,এখন আর কাউকে কিচ্ছু রান্না করতে হবে না ,,আমি বিরিয়ানি মাটন কোপতা কাবাব যা যা দরকার সব অনলাইনে অডার দিয়ে দিছি ঘন্টা খানেকের মধ্যে চলে আসছে,,নেও ততোক্ষণে সবাই মিষ্টি গুলো বসে বসে শেষ করো,,

তুষার হাঁড়ি থেকে মিষ্টি তুলে তুলে সবাইকে খেতে দেয়,,মুহুর্তেই ফ্ল্যাটের মধ্যে এক অন্য রকম আনন্দ বিরাজ করতে শুরু করে,,এদিকে শ্রাবণের সাথে বাসবির এক নাতি দাদিতে অন্য রকম ভাব জমে যায়,,হিয়ার মাঝে এখনো একটা চাপা ভয় বিরাজ করলেও শ্রাবণের মাঝে তার ছিটেফোঁটাও ভয় দেখা যায় না,,সে তো বাসবিকে পেয়ে এতো এতো খুশি যা বলার বাহিরে,,

!
!
!

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঠিক করে ছেলে চার জন এদিকের রুমে থাকবে যেটাতে ওরা সবসময় এক হলে থাকে আর এদিকের রুমে হিয়া সন্ধি ঝিনুক আর উজানের মা মিলে চার জন থাকবে,,আর ছেলেদের খাট টা একটু বড় হওয়াতে ঠিক হয় শ্রাবণ রাতে ওখানে ঘুমোবে,,,,,,মেয়েদের রুমে শ্রাবণ সহ মেয়েরা চারজন বিছানায় বসে গল্প দিচ্ছিলো কাল তো যাবার আগে ঢাকা থেকে শপিং করতে হবে নাকি,,কোন শপিং মল টা কি কেনার জন্য বেস্ট হবে কোনটায় আগে যাবে এগুলোই গল্প চলছিলো,,আর শ্রাবণ বাসবির কোলে বসে তার টুকুর টুকুর চোখ দিয়ে সবাইকে দেখে যাচ্ছিলো,,

ঝিনুকঃ তোমরা কাল সবাই এক সাথে রংপুরে যাবে,,কিন্তু আমাকে যে বাড়ি থেকে একা ওতোদূর এলাও করবে না,,এখন কি হবে আমার

উজান এতোক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো,,ঝিনুকের কথা শুনে সে রুমে এসে বিছানার এক পাশে গিয়ে বসলো,,উজানের সাথে রুমে আসলো বাকি ছেলেরা সবাই,,

উজানঃ তুমি ভাবলে কি করে শালি সাহেবা আমরা তোমাকে ছাড়া বিয়ে করবো,,আরে তুমি তো আমাদের লাভ গুরু তুমি ছাড়া কি কিছু সম্ভব ছিলো বলো তো,,

ঝিনুকঃ কিন্তু ভাইয়া তুমি তো আমার বাড়ির সবাইকে জানো,,ওরা কখনো আমাকে,,

বাসবিঃ ধ্যাত বোকা মেয়ে আমি আছি না,,চিন্তার কিছু নেই কাল আমি গিয়ে সন্ধি আর তোমার বাবাকে নিমন্ত্রণ করে আসবো কেমন,,

সন্ধিঃ হুম আন্টি তুমি বললেই বাড়িতে রাজি হবে,,আচ্ছা ওসব বাদ দেও এখন দেখো তো এখানে,বিয়ের শাড়ি টা না হয় বসুন্ধরা থেকে কিনলাম বাট আমার মনে হয় বরের শেরওয়ানী টা যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে কিনলে বেস্ট হয়,,সেবার আপুর বিয়ের সময় বরকে শেরওয়ানি দেবার সময় দেখলাম ওখানে অনেক সুন্দর সুন্দর সব কালেকশন আছে,,

বাসবিঃ তাহলে আমরা না হয় এদিকে হিয়ার যাবতীয় কেনা কাটা করলাম,,ওদিকে ওরা ছেলেরা মিলে না হয় রাজার সব টা কিনে নিলো,,ওদের তো আর বেশি সময় লাগবে না,

সন্ধিঃ হ্যা এতে করে সময় টাও বাঁচবে অনেক,,আন্টি তা কি ডিসাইড করলা হিয়াকে শাড়ি না লেহেঙ্গা কোনটা কিনে দিবা?

বাসবিঃ আমার তো শাড়িই পছন্দ মা,,আমাদের সময় তো আমরা শাড়ি পড়েই বিয়ে করেছি,,তোমাদের এখন যা সব নতুন নতুন জিনিস এসেছে,,

ঝিনুকঃ আচ্ছা কাল নাহয় হিয়াকে ফাস্ট আমরা ট্রায়ল দিয়ে দেখবো ওকে কোনটা বেশি ভালো লাগে লেহেঙ্গা না শাড়ি,,যেটা সুন্দর লাগবে ওটা কিনবো,,কেমন,

সন্ধিঃ হুম আইডিয়া টা সুন্দর,,কিন্তু এ-ই কেনা কাটা করতে কিন্তু অনেক সময় লাগবে,আমাদের একদম দশ টা সাড়ে দশটার দিকে বাড়ি থেকে বের হতে হবে,,যা জ্যাম রাস্তাতে,

তুষারঃ আমাদের ওতো সকালে না গেলেও চলবে,,আমরা তো জাস্ট বরের শেরওয়ানী,জুতো মাথার পাগড়ি,,একটা ঘড়ি এগুলোই কিনবো,,আমাদের ঔ তিন সাড়ে তিন ঘন্টাতে হয়ে যাবে,,

রুপমঃ আর আমরা,আমরা কি ফাউ,,আমরা নতুন পাঞ্জাবি জুতা কিনবো না,,ভাই উজান শাহরিয়ার এর বিয়ে বলে কথা একটা গেট আপের ব্যাপার আছে না,,

তুষারঃ তাও ঠিক,,এটা তো একদম মাথায় ছিলো না,,

বাসবিঃ তোরা থাম তো,,সবাই তো কে কিনবে বললো তা আমাদের এই ছোট্ট রাজকুমার টার জন্য আমরা কি কিনবো সেটাতো এখনো ভাবা হলো না,,

শ্রাবণঃ দাদি মনি-দাদি মনি,,আমি বলচি আমি কি পড়বো,,আমি ভাইয়ার মতো শেরানি(শেরওয়ানি)পড়বো

সাব্বিরঃ হ্যা ম্যাচিং ম্যাচিং,,আইডিয়া টা কিন্তু খারাপ না,,

সবার গল্পের মাঝে এবার তুষার চা নামক বস্তুটাকে বড্ড মিস করতে শুরু করে,,

তুষারঃ উজান যা না একটু চা টা করে আন না,,এই ডিসকাস শেষ হতে আরো সময় লাগবে,,

হিয়াঃ আচ্ছা আপনারা বসুন,,আমি সবার জন্য চা করে আনছি,,

সাব্বিরঃ আরে ভাবি তুমি গল্প করো,,তুমি আর উজানই তো মেইন টপিক এখন

হিয়াঃ না আপনারা গল্প করুন না,,আমি আনছি করে চা,,আমার বেশিক্ষণ সময় লাগবে না,,

সন্ধিঃ চানাচুর আছে না তোর বাড়িতে উজান,,হিয়া চানাচুর থাকলে একটু চায়ের সাথে মুড়ি চানাচুর মাখিয়ে আনো কেমন,,আরো অনেক লিস্ট করা বাকি এখনো,,খেতে খেতে করবো না হয় সব টা,

হিয়াঃ আচ্ছা আপনারা বসুন আমি আনছি,,

হিয়া একটা হাসি দিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে চা বসিয়ে দিয়ে পিঁয়াজ মরিচ কেটে মুড়ি চানাচুর মাখতে শুরু করে,,মাখা হ’য়ে গেলে হিয়া চা নামিয়ে সবার জন্য কাঁপে কাঁপে চা ট্রেতে বেড়ে একবার একটা চামুচ দিয়ে মিষ্টির পরিমাণ টা চেখে দেখতে যাবে ওমনি উজান কোথা থেকে এসে হিয়াকে টেনে রান্নাঘরের বারান্দায় নিয়ে গিয়ে দেওয়ালের সাথে হিয়াকে একদম শক্ত করে চিপে ধরে,,

হিয়াঃ কি করছেন আপনি,,এরকম করবেন না,,মা দেখলে কিন্তু ব্যাপারটা খুব বিশ্রী দেখতে লাগবে একটু বুঝুন

উজান হিয়ার ঠোঁটে হাত রেখে হিয়াকে চুপ করে দেয়,,তারপর হিয়ার চুলে আঙ্গুল বুলাতে শুরু করে

উজানঃ চুপ___কি হবার কথা ছিলো আজ রাতে!!

হিয়াঃ দেখুন একদম ওসব চিন্তা এখন মাথাতে আনবেন না,,ওসব পরেও করা যাবে,,মা আমাকে মেনে নিয়েছে এতেই আমি খুব খুশি আজ,,

উজানঃ সে তো আমি জানতামই মা তোমাকে মেনে নিবে,,কিন্তু আজকে রাত টা যে শুধু শুধু চলে গেলো,,

হিয়াঃ ইসস কিচ্ছু মুখে আটকায় না না আপনার,,দেখি ছাড়ুন তো ছাড়ুন এবার,,আমার লাগছে,,

উজানঃ আমার তো বেশ লাগছে,,

হিয়াঃ প্লিজ এরকম এখন করবেন না,,বাড়ি ভর্তি লোকজন কেউ এসে দেখলে ব্যাপারটা কি ভাববে,,

উজানঃ কেউ আসবে না,,সবাই গল্প করা নিয়ে ব্যস্ত,,দেখি একবার একটু আজ এই ঠোঁট গুলোকে নিজের করে নিই,,

হিয়াঃ না উজান দেখুন আমার ভয় করছে খুব,,প্লিজ ছাড়ুন আমাকে,,ছাড়ুন নাআআ

উজান হিয়াকে কিছু করতে যাবে ওমনি সন্ধি আর তুষার চুপিচুপি পায়ে রান্নাঘরে এসে ভাউ বলে চিৎকার করতেই উজান হিয়া দুজনে ভয়ে দুদিকে ছিটকে যায়,,সন্ধি তুষার খিলখিল করে হেঁসে ফেলে,,লজ্জায় হিয়া চায়ের ট্রে টা নিয়ে রুমের ভেতর দৌড়ে চলে আসে,,

সন্ধিঃ আমি তোমাকে বললাম না তুষার দুই টোনাটুনিতে রান্নাঘরে ঠিক কাহিনি করছে,,

তুষার এসে উজানের কাঁধে হাত রেখে,,

তুষারঃ পেশেন্স মেরে এ্যায়ার,,,ইতনা ভী ক্যা জালদি__থোরা তো সাবার কারো,,

সন্ধিঃ এখন তো মনে হচ্ছে সাব্বিরকে দোকানে পাঠিয়ে প্যাকেট গুলো আনাই ভুল হইছে,,,,কন্ট্রোল উজান বেবি কন্ট্রোল

উজানঃ তোরা কখনো শুধরাবি না,না?

তুষারঃ আরে হোক,আজ হয়নি পরশু হবে,,আমরা একদম ঘর টা তোর পুরো ফিল্মি ডিজাইনে সাজিয়ে দেবো কেমন,,তখন ইচ্ছে মতো তুই হিয়াকে,,ইউ নো

উজানঃ সত্যি তোদের কিচ্ছু বলার নেই আমার,,বড্ড পেকে গেছিস দুটোই,,রংপুর থেকে আসতে দে,এবার তোদের দুটোকে আমি বিয়ে দিয়ে বারোটা বাজাবো থাম

সন্ধিঃ আরে কোথায় যাচ্ছিস,,উজান__আরে কন্ট্রোল উজান আর তো শুধু দুটো দিন,,,আরে,,শোন না,,যা লজ্জা পাইছে বেচারা খুব,,

বলতে বলতেই সন্ধি তুষার দু’জনেই হাসতে হাসতে চোখে দিয়ে পানি অবধি বের করে ফেললো,,

!
!

পরেরদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করেই সবাই শপিং এ গিয়ে সব কেনাকাটা শুরু করে করে,,সব কেনাকাটা করে ঝিনুক সন্ধি সবার বাড়িতে গিয়ে নিমন্ত্রণ দিয়ে সবাইকে নিয়ে আসতে মিলতে রাত তখন ৮টা,,দশটার ফ্লাইটে আবার রংপুরে ব্যাক করতে হবে,,তুষার আগে থেকে ওদের দশজনের টিকিট বুক করে রেখে ছিলো,,তাই টিকিট নিয়ে আর কোনো ঝামেলা হয়নি,,বাড়িতে এসে এক ঘন্টার মধ্যে সব ব্যাগে ভরে সবাই এ্যায়রপোর্টে এসে উপস্থিত,,সবার মনে আজ অন্য রকম আনন্দ কাজ করছে,,সব থেকে আনন্দ কাজ করছে শ্রাবণের মনে,,উফফ আজ সারাদিন টা তার এতো ভালো কাটবে, ওতো এসব জীবনে কোনোদিন আশাও করেনি,,ওর নতুন জামা-জুতো থেকে শুরু করে ভালো ভাইয়ার সাথে বসে খাওয়া আইসক্রিম,,তার উপর এখন আবার সে নাকি প্লেনে চড়ে উড়ে উড়ে রংপুরে আসবে ভাবতেই বেচারার শৈশব মন খুশিতে লাফিয়ে উঠছে,,এই আনন্দ টা বলে প্রকাশ করা সত্যি যেনো শ্রাবণের কাছে এ-ই মুহুর্তে কঠিন,,সব মিলায় রংপুর আসতে তখন রাত একটার একটু বেশি,,সৈয়দপুর এ এসে ল্যান্ড করে ওখান থেকে রংপুরে আসতে আজ খুব বেশি একটা সময় লাগে নি,,একটা বড় হায়েজ ভাড়া করেই সবাই এসে উপস্থিত উজানের বাড়ির সামনে,,সবার শরীর আজ বড্ড ক্লান্ত,,বিছানায় গা টা দিলেই যেনো সবাই গভীর ঘুমে হারিয়ে যাবে,,এক এক করে সবাই গাড়ি থেকে নেমে পড়তেই উজানের ছোট বোন জিনিয়া আর বড় বোন নীলিমা দৌড়ে আসে তাদের ভাবিকে দেখবে বলে,,কিন্তু উজান হিয়াকে গাড়ি থেকে বের হতে না দিয়ে ওদের সাথে দুষ্টুমি শুরু করে,,

জিনিয়াঃ ছাড়ো না ভাইয়া,এরকম কেনো করছো,,দেও না একটু ভাবিকে দেখতে

উজানঃ যা ফুট এখান থেকে,,আমার বউ এতো স্বস্তা নাকি এমনি এমনি দেখতে হবে

নীলিমাঃ এএএ ঢং দেখলে যেনো বাঁচা যায় না,,ও মা মা বলো না উজানকে সামন থেকে সরে যেতে,,,আমরা দেখবো না হিয়াকে বলো,,

উজানঃ আমার বউকে দেখতে টাকা লাগবে,,যা গিয়ে আগে টাকা আর মিষ্টি আন আগে

জিনিয়াঃ এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না মা,,দেখো না ভাইয়া কি রকম করছে

বাসবিঃ আ হা উজান,,কেনো এরকম করছিস,,হিয়া কি ক্লান্ত না,,ওকে বের হতে দে

জিনিয়াঃ সাড়ো সাড়ো সাড়ো,,দেখি ভাবি কোথায়,,ভাবি আসো আসো

জিনিয়া হিয়াকে গাড়ি থেকেই বের করতে উজান হিয়ার ওরনা দিয়ে হিয়ার মুখ ঢেকে দেয়,,জিনিয়া এক হাতে ওড়না টানে উজান এক হাতে দিয়ে দেয়,,এদের দুই ভাইবোনের জ্বালায় হিয়ার মাথার চুল আউলে গিয়ে বিধস্ত অবস্থা,,এদিকে উজান আর ওর বোনের এ-ই মজার কান্ড দেখে শ্রাবণ সহ সবাই হেঁসে হেঁসে খুন,,

বাসবিঃ আ হা হয়েছে,,এখন গিয়ে সবাই সোজা ঘুম দেবা___জিনি বিহান কোথায়?কেটারিং এর লোক টা এসেছিলো বাড়িতে,,আমি যে ওনাকে নিজে থেকে ফোন করলাম,

জিনিয়াঃ হ্যা মা,,এসেছিলো কথা হ’য়েছে,,মেজোভাইয়া ভেতরে আছে,,যাও গিয়ে কথা বলো তুমি,

বাসবিঃ হুম,,আর বাড়ির মরিচ লাইট গুলো শুধু এক রঙের কেনো দিছে আমি যে বললাম যতো গুলো রঙের মরিচবাতি পাওয়া যায় সব দিতে

নীলিমাঃ কোথায় মা ওখানে একটা রঙ লাল গুলোও তো জ্বলছে দেখো,

বাসবিঃ আচ্ছা আমি ভেতরে গেলাম,,তোরা এক এক করে সব ব্যাগ নিয়ে উপরে আয়,,সন্ধি ঝিনুক আসো মা ওদেরকে নিয়ে,,

বাসবিঃ হুম,,

উজান সব ছেলেদের নিয়ে ব্যাগপএ তুলে উপরে উঠতে থাকে,,এদিকে সব মেয়েরা মিলে হিয়াকে নিয়ে আসে উপরে,,

হিয়ার কাছে এই সব কিছু একটা স্বপ্নের মতো লাগতে থাকে,,কালকের সন্ধ্যা হতে এখন অবধি যা যা হচ্ছে তার সবটাই হিয়ার কাছে ছিলো অকল্পনীয়,,হিয়া জানতো হ্যা একদিন হয়তো ওর সাথে উজানের বিয়ে হবে সংসার হবে কিন্তু আচমকা এভাবে সব হচ্ছে হিয়া যেনো কিছুতেই ভাবতে পারছে না আর,,,উজানদের বাড়ি টা একদিনেই এতো লাইট দিয়ে জমকালো ভাবে সাজানো হ’য়েছে দেখে মনে হচ্ছে কোনো সিনেমায় দেখা বিয়ে বাড়ি,,দুপুরে কেনা হিয়ার জন্য লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি,,ম্যাচিং গহনা জুতা,,শ্রাবণের জন্য নতুন পোশাক,,আর সব চাইতে উজানের মা আর বোনদের হিয়াকে আর শ্রাবণক এতো আপন করে গ্রহন করা,,সব মিলিয়ে হিয়ার চোখ দিয়ে পানি ফেলতে হিয়াকে আজ বাধ্য করে,,

________________🥰__________________

বিয়ে বাড়িতে আসছো একটু দর্য্য(ধর্য্য) ধরো বুবুনিরা,,এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে শেষ করে দিলে তো মজাই তাকবে(থাকবে)না,,হে হে

শাবন(শ্রাবণ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here