#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ১২
#Arshi_Ayat
প্রথমে আশ্চর্য হলেও পরে খুশিই হলো স্বর্ণ।সুমনকে যে মেরেছে তারজন্য দোয়া করে দিলো।এখন কিছুদিন অন্তত শান্তি পাওয়া যাবে।স্বর্ণ দ্রুত পায়ে গিয়ে মা’কে জানালো খবরটা কিন্তু এতে নিহারিকা খনমের কোনো ভাবাবেগ হলো না।যেন তিনি আগেই জানতেন।স্বর্ণকে আশ্চর্যন্বিত চেহারায় তাকিয়ে থাকতে দেখে তিনি বললেন,’মার’টা আমিই খাইয়েছি।’
স্বর্ণ বিষ্মিত স্বরে বলল,’কেনো?’
‘কারণ সুমনের বোন বিদেশ থেকে এ মাসেই আসবে।বোধহয় সপ্তাহখানেকের মধ্যে।ওরা তোকে মিথ্যে বলেছে।যেন তুই অন্যকোনো প্ল্যান না ভাবতে পারিস।আমি কাল ওদের ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সব শুনেছি।এখন যেন বিয়েটা কয়েকমাসের জন্য আটকে রাখা তাই এটা করেছি এছাড়া আর পথ ছিলো না।ওরা তোকে ধরে বেঁধে বিয়ে দিতে চাইতো।’
সবশুনে স্বর্ণ মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়লো।নিজেকে চূড়ান্ত নির্বোধ মনে হচ্ছে।এত সহজে কিভাবে ও ভাই-ভাবীর কথা বিশ্বাস করলো!যদি মা ব্যাপারটা না জানতো তাহলে তো সর্বনাশ হতো।পিঠপিছনে এত বড় ষড়যন্ত্র!
নিহারিকা খানম স্বর্ণ’র পাশে বসে মাথায় হাত রেখে বলল,’চিন্তা করিস না।তিন/চার মাসের আগে বিছানা থেকে উঠতে পারবে না।আর এর মধ্যেই তোর স্কলারশিপ হয়ে যাবে।’
স্বর্ণ মলিন হেসে মায়ের দিকে তাকালো।সে যে প্রজেক্ট’টা ছেড়ে দিয়েছে এটা এখনো মা’কে জানায় নি।জানলো মানুষ’টা ভিষণ কষ্ট পাবে কিন্তু স্বর্ণ মা’কে ছেড়ে ভিনদেশে কিভাবে থাকবে!একটা ভালো চাকরি পেয়েই মা’কে সব বলবে দরকার হলে রাত-দিন মায়ের পায়ের কাছে পড়ে থাকবে।মা নিশ্চয়ই মাফ করে দেবে।এই রঙহীন ধূসর জীবনে এই মানুষ’টা ছাড়া আর কেউ নেই ওর।
স্বর্ণ নাস্তা করে ভার্সিটিতে চলে গেলো আর নিহারিকা খানম নাতিকে নিয়ে হাসপাতালে এলো।সুমনের বাবা-মা এসে পড়েছে ইতিমধ্যেই।নিহারিকা খানমকে একা দেখে আশরাফ প্রশ্ন করলো,’মা,স্বর্ণ আসে নি?’
‘না,ক্লাস আছে ওর।ক্লাস শেষে বিকেলে আসবে।’
আশরাফের মুহুর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।গলা খাদে নামিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’একদিন কি ক্লাস মিস দেওয়া যেত না?ওর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কি বলবে?’
নিহারিকা খানম ছেলের কথা শুনে শান্ত কন্ঠে বললেন,’এখনো বিয়ে হয় নি।তাই কিছু বলার প্রশ্নই আসে না।আর এখানে এত মানুষ আছে তবুও স্বর্ণকে লাগবে কেন?ও আসলেই সুমন ভালো হয়ে যাবে?উঠে দৌড়াতে পারবে?’
শ্বাশুড়ির কথা শুনে সিমা বলল,’এই আপনার জন্য স্বর্ণের এত বাড়।মেয়েকে এত আস্কারা দিয়েন না।শেষে দেখবেন আপনারই মান-ইজ্জত ডুবাবে।’
নিহারিকা খানম মৃদু হেসে বললেন,’আমার মেয়ে আমি বুঝবো!তোমাকে এত চিন্তা করতে বলি নি।এখন আশরাফকে নিয়ে বাসায় যাও।ফ্রেশ হও,রেস্ট নাও।’
আশরাফ আর সিমা কটমট করতে করতে চলে গেলো।যাওয়ার সময় আজমাইনকেও নিয়ে গেলো সাথে।ওরা যাওয়ার পর সুমনকে একবার দেখে এলেন তিনি।যাক ভালোই মার খেয়েছে।মেয়ের স্বার্থে এতটুকু করতেই হলো তাকে।সন্তানের স্বার্থের জন্য মায়েরা সবসময়ই স্বার্থপর।অতঃপর সুমনের বাবা মায়ের সাথে স্বল্প আলাপ সেরে তিনি বেরিয়ে পড়লেন।
স্বর্ণ ভার্সিটিতে ঢুকে সোজা ক্লাসে চলে গেলো।আজকে একটু লেট হয়ে গেছে।রাস্তায় জ্যাম ছিলো প্রচুর।কিন্তু ক্লাসরুমের সামনে এসে দেখলো প্রফেসর জামাল উদ্দীন ক্লাস নিচ্ছেন।ভার্সিটিতে এই একটা লোক’কে স্টুডেন্ট’রা ভীষণ ভশ পায়।এত স্ট্রিক্ট।যতই ভালো স্টুডেন্ট হয় না কেন রুলস ব্রেক করলে শাস্তি পেতেই হবে।ক্লাস লেট করে আসলে সেদিনের ক্লাস আর স্টুডেন্ট এর কপালে নেই।তবুও স্বর্ণ দরজা থেকে প্রথম এবং শেষ একটা চেষ্টা করলো।বিনীত ভঙ্গিতে স্যারকে ডেকে বলল,’স্যার,আসবো?’
‘না।ক্লাস শেষ হওয়ার পর আসবে।এখন ক্লাস করাচ্ছি।ডিস্টার্ব করবে না।’
এরপর আর কথা থাকে না।স্বর্ণ দরজা থেকে ফিরে যাচ্ছিলো হঠাৎ করে চোখ পড়লো ক্লাসের মঝে বসে হাত দিয়ে ইশারা দেওয়া আরবকে।ও ইশারায় ক্যান্টিনে বসতে বলছে।পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসছে।স্বর্ণ চোখ রাঙানি দিয়ে আসতে মানা করলো।এরপর সেখান থেকে সরে লাইব্রেরিতে গেলো।কারণ আরব যখন বলেছে ও আসবে তখন আসবেই।তাই ক্যান্টিনে যায় নি স্বর্ণ।
লাইব্রেরির এক কোণায় বসে বই পড়তে শুরু করলো স্বর্ণ।হঠাৎ ধপ করে পাশের চেয়ারে কেউ বসতেই স্বর্ণ চমকে উঠলো।তবে ধারণা করলো আরব এসেছে কিন্তু চোখ ফিরিয়ে দেখলো উচ্ছ্বাস বসে আছে।স্বর্ণ ভ্রু কুঁচকে কঠিন গলায় বলল,’তুমি!’
‘হ্যাঁ,আমি।কেনো ওই আরব না কি যেন নাম ওই ছেলেটাকে আশা করেছিলে নাকি!’
‘যাকেই আশাকরি তোমাকে তো কখনোই নয়।’
‘আমি জানি!তখন কি নাটকটাই না করলে এবোরশন করবে না!কিন্তু এখন দেখো এবোরশন করে আরেক ছেলের সাথে ঢলাঢলি করছো।এইজন্যই আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাইনি।আমার সাথে শোয়ার পর তুমি যে আর কারো সাথে শুবে না তার কি গ্যারান্টি?হয়তো আমার আগেও কারো সাথে শু…’
পুরোটা শেষ করার আগেই সজোরে একটা থাপ্পড় পড়লো উচ্ছ্বাসের গালে।স্বর্ণ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।উচ্ছ্বাস রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।নিজের বলিষ্ঠ হাত দিয়ে স্বর্ণ হাত চেপে ধরেছে শক্ত করে যেন ভেঙে ফেলবে।কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কেউ একজন উচ্ছ্বাসের শার্টের কলার ধরে বসা থেকে সোজা দাঁড় করিয়ে ফেললো।উচ্ছ্বাসের হাত বাঁধন আলগা হতেই স্বর্ণ নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো ওর থেকে।সামনে আরব উচ্ছ্বাসের কলার ধরে দাঁড়িয়ে আছে।উচ্ছ্বাস গর্জে উঠে বলল,’হাউ ডেয়ার ইউ।জুনিয়র হয়ে সিনিয়রের গায়ে হাত তুলিস!তোকে আজকে ক্যাম্পাসে পুঁতে ফেলবো।’
আরব শান্ত অথচ দৃঢ় স্বরে বলল,’চুপ!একদম চুপ।সিনিয়র হয়ে যদি নিজের সম্মান নিজে না রাখতে পারিস তাহলে কেউ সম্মান দিবে না।আর তুই আমাকে কি পুঁতে ফেলবি।আমি চাইলে তোকে এখুনি ভার্সিটি থেকে বহিস্কার করাতে পারি।’
কথাটা বলেই আরব একটু আগে স্বর্ণের সাথে করা অসভ্যতামির ভিডিওটা উচ্ছ্বাসের সামনে তুলে ধরলো।উচ্ছ্বাস ভয়ে চুপসে গেলো যেন।আরব হাসতে হাসতে বলল,’কি সিনিয়র ভাইয়া?ভালো আছেন তো?আরও ভালো থাকতে চাইলে নাক বরাবর দরজা দিয়ে হেঁটে চলে যান।পেছনে তাকাবেন না।তাকালেই…’
কথাটা বলে আরব হাসলো।উচ্ছ্বাস ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সেখান থেকে চলে গেলো।
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কাল রাত ১০.৩০ এর পরের পর্ব আসবে।গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।)