শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক #পর্বঃ০২

0
570

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ০২
#Arshi_Ayat

বহুকষ্টে চোখের পানি লুকিয়ে ফেললো স্বর্ণ।সবার নাস্তা খাওয়া শেষ হবার পর সবকিছু গুছিয়ে স্বর্ণ বের হতে যাবে সে সময়ই সিমা বলল,’কোথায় যাচ্ছো?’
‘এইতো ভাবি,একটু কাজ ছিলো।’
‘এখন কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।তোমার ভাইয়া বলেছে তোমাকে নিয়ে পার্লারে যেতে।’
‘কিন্তু ভাবি আমার জরুরি কাজ আছে ভার্সিটিতে।’
‘কালকে যেও আজকে না।’
স্বর্ণ আর কথা বাড়ালো না।চুপচাপ সোফায় বসে রইলো।কিছুক্ষণ পর সিমা সেজেগুজে এসে বলল,’চলো।’
স্বর্ণ বিনাবাক্যে সিমাকে অনুসরণ করলো।

পার্লার থেকে বেরিয়ে স্বর্ণকে বাসায় যেতে বলে সিমা চলে গেলো ছেলের স্কুলের দিকে।বেলা প্রায় ১.০০ টা বাজায় স্বর্ণ আর ক্লিনিকে গেলো না।ভাবলো কাল গিয়ে গর্ভপাত করবে।এখন বাসায় গিয়ে রান্না করাই শ্রেয় তা নাহলে ভাবি তুলকালাম করে ফেলবে।বাসায় ফিরে রান্না ঘরের দরজায় গিয়ে দেখলো নিহারিকা খানম রান্না করছেন।মা’কে দেখে সামনে যাবে কি না তাই ভাবছে স্বর্ণ।দেখে যদি রেগে যায়!স্বর্ণ এসব ভাবতে ভাবতেই নিহারিকা খানম শান্ত কন্ঠে বললেন,’ভাতের মাড়’টা ফেলে দে।’
স্বর্ণ মায়ের আদেশ পেয়ে তাড়াতাড়ি চলে এলো মাড় ফেলতে।উত্তেজনায় গরম পাতিলের ছ্যাঁকা লাগছে হাতে তবুও সেদিকে ভ্রূক্ষেপও করলো না।নিহারিকা খানম আলুভর্তা স্বর্ণের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,’দেখ লবণ হয়েছে কি না!’
স্বর্ণ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।সব জানার পর মা যে কথা বলবে এটা বিশ্বাসই করতে পারছে না স্বর্ণ।কোনোমতে ভর্তায় লবণ চেখে নিয়ে মাথা নাড়ালো।নিহারিকা খনম এবার ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,’কি সিদ্ধান্ত নিলি?কি করবি বাচ্চাটা?’
‘এবোরশন করবো।’
নিহারিকা খানম হঠাৎই চড় মারলেন স্বর্ণের গালে।স্বর্ণ গালে হাত দিয়ে কান্না চোখে মায়ের দিকে তাকালো।নিহারিকা খানম আগুন কন্ঠে মেয়েকে বললেন,’নষ্টামি করার সময় মনে পড়ে নি?এখন কেন এই নিষ্পাপ বাচ্চাটা কে মারবি?তোদের অপরাধের ফল ও কেন ভুগবে?ওর কি দোষ?দোষ তোর আর ওই ছেলের।ওই ছেলের ফোন নাম্বার দে।কথা বলবো আমি।’
স্বর্ণ ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।ভাঙা ভাঙা স্বরে বলল,’মা ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।ও এই বাচ্চাকে অস্বীকার করছে।আমাদের নিতে চাচ্ছে না।’
‘ওর বাসা চিনিস?ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলবো।এভাবে একটা মেয়ের সর্বনাশ করে দায়িত্ব এড়াবে পারবে না।’
‘না মা আমি জোর করে ওর জীবনে থাকতে চাই না।’
নিহারিকা খানম কঠিন চোখে চেয়ে বললেন,’তাহলে কি চাস?’
‘বাচ্চাটা এবোরশন করে ফেলবো।’
‘লজ্জা লাগে না তোর?মা নামের কলঙ্ক তুই।তুই যদি বাচ্চাটা মেরে ফেলিস তাহলে আল্লাহ যেন কখনো তোকে সন্তানের মুখ না দেখায়।’
স্বর্ণ আর্তনাদ করে উঠে বলল,’মা!’
নিহারিকা খানম নিজের রাগকে শান্ত করতে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,’স্কলারশিপের আবেদন কর।চলে যা দেশ ছেড়ে।নিজের মত বাচঁ।বাচ্চাটাকেও বাঁচা।ও কোনো দোষ করে নি স্বর্ণ।দোষ করেছিস তুই আর তোর প্রেমিক।এবার একটু নিজেকে শুধরে নে।’
‘কিন্তু মা…’
‘তোর ভাই যে ছেলেটার সাথে তোর বিয়ে দিতে চাচ্ছে ওই ছেলেটা ভালো না।আমি মা হয়ে তোর আর সর্বনাশ দেখতে পারবো না।তুই চলে যা স্বর্ণ।কিন্তু মনে রাখিস আমি তোকে কখনো মাফ করবো না।’
কথাগুলো বলেই রান্নাঘর ছেড়ে চলে গেলেন নিহারিকা খানম।স্বর্ণ নিজের চোখের পানি মুছে বাকি রান্নাটুকু শেষ করলো।এরমধ্যেই সিমা ছেলেকে নিয়ে চলে এলো,আজ ভাইও তাড়াতাড়ি আসবে তার বন্ধুকে নিয়ে।সিমা বাসায় এসেই বলল,’খেয়ে,তৈরি হতে শুরু করে দাও।’
‘ওরা একটু পরই আসবে।’
‘আচ্ছা ভাবি।’
স্বর্ণ কোনোরকম খেয়ে ঘরে চলে গেলো।একটু পর নিহারিকা খানম এসে ঘরের দরজাটা আঁটকে দিয়ে ওর সামনাসামনি এসে বলল,’তুই ছেলের কাছে সময় চাইবি বিয়ের জন্য।পিড়াপিড়ি করলে এঙ্গেজমেন্ট করে রাখ কিন্তু বিয়ে করিস না।’
স্বর্ণ মায়ের কথায় প্রাণ ফিরে পেলো।মা যে এভাবে সাপোর্ট করবে ভাবতে পারে নি।মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই বুক ফেটে যাচ্ছে স্বর্ণের কি করে মা’কে এতবড় কষ্ট দিলো সে?কেন দিলো?কেন প্রতারকটাকে ভালোবাসলো?স্বর্ণের কান্না চলে এলো।নিহারিকা খানম ওকে শাড়ি পরাতে পরাতে বললেন,’কাঁদিস না।শক্ত হ,আরও অনেক বিপদ আসবে।সেগুলো মোকাবিলার করার মত মানসিক ভাবে শক্ত হতে হবে।’
তিনি থেমে আবার বললেন,’আমি আমার ভাগের জমিটুকু বেঁচে দিয়েছিলাম।তোর বিয়তে খরচ করবো বলে কিন্তু এখন এই টাকাটা তোর বিদেশ যাওয়ার জন্য দিবো।’
‘কিন্তু মা তুমি?’
‘আমার চিন্তা করার দরকার নেই।আমার চিন্তা করলে তুই কাজটা করতি না।’
শাড়ি পরানো শেষে নিহারিকা খানম চলে গেলেন।স্বর্ণের বুক ভেঙে যাচ্ছে।মায়েরা এতো মায়াবতী হয় কেন?কই তার পেটেও তো একটা সন্তান বড় হচ্ছে ওরজন্য তো মায়া হচ্ছে না স্বর্ণের।তাহলে কি সে স্বার্থপর মা!নাহ!মায়েরা কখনো স্বার্থপর হয় না।স্বর্ণ নিজের পেটে হাত রাখলো।এখানেই সুন্দর তুলার মত একটা নিষ্পাপ বাবু বড় হচ্ছে,যে তাকে মা মা বলে ডাকবে।হঠাৎ ই গভীর মমতা অনুভব করলো স্বর্ণ।মনে হলো এই বাচ্চাটাকে বাঁচাতেই হবে।পেটে হাত রেখেই মনে মনে বলল,’মা’কে মাফ করে দিস বাবু।তোকে আমি বাঁচাতে চাই নি কিন্তু হঠাৎই মনে হলো তুই নাহলে আমি শূন্য হয়ে যাবো,তোকে ঘিরে আমার সুখ।আমি তোকে বাঁচাবো ময়না।’
স্বর্ণ চোখের পানি মুছে হালকা সাজগোছ করলো।একটু পর সিমা আসলো।ওকে দেখে হালকা হেসে বলল,’বাহ!তোমাকে তো সুন্দর লাগছে ভিষণ।আজ পছন্দ করেই ফেলবে সুমন ভাই।চলো,ওরা চলে এসেছে।’
স্বর্ণ মাথা নেড়ে সিমার সাথে চলল।ড্রইং রুমে স্বর্ণের ভাইয়ের সাথে একটা ছেলে বসে কথা বলছে।এটাই সুমন।এর আগে একবার দেখেছিলো স্বর্ণ লোকটার আগের বিয়েতে।সিমা সামনাসামনি ওকে বসালো।সুমন চওড়া হেসে সালাম দিলো।স্বর্ণ নিচু স্বরে সালামের জবাব দিলো।এরপর কিছুক্ষণ কথা বার্তা চলল।সুমন একপর্যায়ে স্বর্ণের ভাইকে বলল,’আশরাফ তোর বোনের সাথে আলাদা একটু কথা বলবো।’
‘হ্যাঁ সেটা বলার কি আছে।যা বল।’
আশরাফ বোনের দিকে ইশারা করলো।স্বর্ণ সুমনকে সাথে করে ছাঁদে উঠলো।সুমন ওর দিকে চেয়ে চওড়া হেসে বলল,’তুমি আগের থেকে আরও সুন্দর হয়ে গেছো।সেবার আমার বিয়তে অতো সুন্দর লাগে নি।’
স্বর্ণ’র মোটেও ভালো লাগছে না লোকটাকে কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না।সুমন আবারও বলল,’আগে প্রেম করেছো?’
স্বর্ণ ওর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো।সুমন আবারও জিজ্ঞেস করলো,’কয়টা?’
‘একটা।’
‘মাত্র আমার বিয়ের আগে অনেকগুলো প্রেম করেছি।বিয়ের পরও তো জানো কি হয়েছে এক কলিগের মেয়েকে পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো।তারপর ওর…’
কথা বলতে বলতেই স্বর্ণর দিকে চোখ পড়তেই সুমনের হুশ আসলো।বুঝতে পারলো আসলে এ কথাটা বলা উচিত হয় নি।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য হালকা কেশে আবার বলল,’এখন বলো,বিয়ে কবে করতে চাও?’
‘আমার সময় প্রয়োজন।’
‘কেনো?’
‘আমি এম.বি এ র পর বিয়েটা করতে চাই।’
‘বিয়ের পরও তো এম.বি এ করা যাবে।’
‘কিন্তু আমি বিয়ের আগে করতে চাই।বিয়ের পর শুধ সংসার করবো।’
সুমন স্বর্ণের কথায় হেসে বলল,’ওও আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে এম.বি এর পরই বিয়ে করবো আমরা কিন্তু এঙ্গেজমেন্ট তো করে রাখতেই পারি তাই না?নাকি এটাও এম.বি এর পর।’বলেই খিলখিলিয়ে বিদঘুটে হাসলো সুমন।
‘এঙ্গেজমেন্ট করে রাখা যায়।’স্বর্ণ থমথমে গলায় বলল।
‘আচ্ছা বেশ।সামনের সপ্তাহে আমার পরিবারসহ এসে এঙ্গেজমেন্ট করে যাবো।আজকে তবে আসি।টেইক কেয়ার ডার্লিং।’
এটা বলেই সুমন হাসতে হাসতে চলে গেলো নিচে।স্বর্ণ রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখলো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here