শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক #পর্বঃ০৩

0
377

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat

সুমন যাওয়ার পর স্বর্ণ ছাঁদ থেকে নামলো।ও নামতেই সিমা বলল,’কি গো!সুমন ভাই তো তোমাকে দেখে খুব পছন্দ করেছে।বলেছে আগামী সপ্তাহে এসে এঙ্গেজমেন্ট করে যাবে।’
স্বর্ণ দায়সারা কন্ঠে বলল,’ও আচ্ছা।’
‘হ্যাঁ আর এই পাঁচ হাজার টাকা তোমাকে দিয়েছিলো।আমার কাছে রাখছি।আয়োজন করতেও তো টাকা লাগে নাকি!’
স্বর্ণ মাথা নেড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।মনটা বিষিয়ে আছে।শাড়ি,গহনা চেন্জ করে মেক-আপ ধুয়ে চুলগুলো হাত খোঁপা করে ফোনটা হাতে নিলো জেরিনকে কল করার উদ্দেশ্যে।কল কেটে যাওয়ার পূর্বেই জেরিন রিসিভ করলো।স্বর্ণই প্রথমে জিজ্ঞেস করলো,’কেমন আছিস?’
‘এইতো ভালো।তুই?’
‘ভালো।আচ্ছা শোন স্কলারশিপের জন্য আবেদনের ডেট কি শেষ?’
‘না।কাল লাস্ট ডেট।কেনো বল তো?’
‘আমি আবেদন করবো।’
‘উচ্ছ্বাস ভাইয়া জানে?’
‘ওকে জানতে হবে কেন?ওর সাথে আমার আর কোনো লেনাদেনা নেই।’মৃদু উষ্ণ কন্ঠে বলল স্বর্ণ।
‘মানে?কি হয়েছে?’
‘ব্রেকাপ।’
‘আরে এমন তো কতোই হয়।দেখিস ঠিক হয়ে যাবে আবার।’
‘না আর কিছু ঠিক হওয়ার নেই।এসব বিষয়ে আর প্রশ্ন করিস না।এখন বল কাল ভার্সিটিতে আসবি?’
‘হ্যাঁ আসবো।’
‘আচ্ছা দেখা করিস।’
‘আচ্ছা।’
স্বর্ণ ফোন রেখে দরজা বন্ধ করে ভার্সিটির কাগজপত্র,সার্টিফিকেট সবকিছু একত্রে করলো।কাল প্রয়োজন হবে।সবকিছু এমনভাবে করতে হবে যেনো যাওয়ার আগেরদিনও কেউ জানতে না পারে।

স্বর্ণ মাগরীবের নামাজ পড়ে উঠতেই সিমা এসে বলল,’সুমন ভাই তোমাকে ফোন দিচ্ছে।রিসিভ করছো না কেনো?’
‘সাইলেন্ট ছিলো ভাবী।’
‘ফোন রিসিভ করো তাড়াতাড়ি।’সিমা কঠিন স্বরে বলে চলে গেলো।স্বর্ণ অনিচ্ছায় টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা তুলে দেখলো আননোন নাম্বার থেকে পাঁচবার মিসডকল এসেছে এবং ইতিমধ্যে আবারও এসেছে।স্বর্ণ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সুমন বলল,’ফোন রিসিভ করছিলে না কেনো?’
‘সরি!সাইলেন্ট ছিলো আর নামাজ পড়ছিলাম।’
‘ফোন আর সাইলেন্ট রেখো না ডার্লিং কারণ এখন থেকে আমি তোমাকে যখনই মসি করবো তখনই কল করবো।’
‘আচ্ছা।’স্বর্ণ নিরস কন্ঠে জবাব দিলো।
‘কাল দেখ করবে?’
‘না,কাল তো ব্যস্ত আছি।ক্লাস আছে ভার্সিটিতে আর দুপুরে টিউশনি আছে।’
‘টিউশনি গুলো ছেড়ে দাও।কেনো এত কষ্ট করতে হবে আমি তো আছি।’
স্বর্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল,’যার থাকার কথা সেই রইলো না,বাকি সবাইকে দিয়ে কি করবো আমি।কাউকে লাগবে না আমার।এখন থেকে নিজের জন্য আমি নিজেই যথেষ্ট।’
কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখে বলল,’না,মাসের মাঝখানে তো এখন ছাড়া যাবে না।গার্ডিয়ান’রা ছাড়তে দিবে না।মাস শেষে ছেড়ে দেবো।’
সুমন কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলল,’এত ব্যস্ত থাকলে তোমার সাথে সময় কাটাবো কখন?ব্যস্ততা কি আমার নেই?আমিও তো ব্যস্ততা ফেলে তোমার সাথে দেখা করতে চাইছি তুমি কেনো পারবে না?’
‘সরি!কি আর করার চাপ যাচ্ছে ভিষণ।বিয়ের পর আপনাকেই সময় দেবো।’
‘বিয়ের পর দিয়ে কি হবে?বিয়ের আগেই দিতে হবে।তোমাদের মেয়েদের যতসব বাহানা।কাল সন্ধ্যায় দেখা করবে?’
‘সন্ধ্যায় তো বের হতে পারবো না।আপনি চাইলে বাসায় আসতে পারেন।’
‘উফ!তুমি এতো ব্যাকডেটেড কেনো?বাসায় এত্ত মানুষের সামনে আমরা কিভাবে সময় কাটাবো?আমি কিছু জানি না তুমি কাল সন্ধ্যায় দেখা করবেই আমার সাথে।’
‘কিন্তু ভাইয়া….’স্বর্ণর কথা থামিয়ে সুমন বলল,’আশরাফ কিছু বলবে না।আমি ওর সাথে কথা বলে নিবো।ওকে,বাই।’
স্বর্ণ’র আর কোনো কথা না শুনেই ফোন রেখে দিলো সুমন।স্বর্ণ ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে চোখবুঁজে রইলো বালিশে।হঠাৎই কারো হাতের স্পর্শ পাওয়ায় চোখ খুললো স্বর্ণ।নিহারিকা খনম মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে বললেন,’স্কলারশিপের আবেদন করবি কবে?’
‘লাস্ট ডেট কাল।কালই করবো।’
‘কাগজপত্র সব ঠিকঠাক আছে?’
‘হ্যাঁ সব ঠিক করে রেখেছি।’
‘আচ্ছা,খুব সাবধানে।’
স্বর্ণ মাথা দোলালো।মা’কে পেয়ে চোখের পানিগুলো বাঁধ মানছে না।টইটুম্বুর করছে অক্ষিকোটরে।যেকোনো সময়ে ঢল নামবে।নিহারিকা খানম উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন,’কি হয়েছে তোর?’
‘মা,এত কষ্ট হচ্ছে কেনো আমার?’
নিহারিকা খানম মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,’ধৈর্য ধর মা।এখন তোর যেটা দরকার সেটা হলো প্রচুর ধৈর্য।দাঁতে দাঁত কামড়ে থাকে।সময় তোরও ফিরবে,বিশ্বাস রাখ।’
স্বর্ণ চোখের পানি মুছে দৃঢ় কন্ঠে বলল,’মা তোমার মেয়ে পারবেই।’
‘আমি জানি।’
নিহারিকা খানম মেয়ের সাথে কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলেন।মা যাওয়ার পর স্বর্ণ রান্নাঘরে গেলো রাতের খাবারের আয়োজন করতে।আজ ভাইয়া,ভাবি আর আজমান বাসায় খাবে না।ওদের দাওয়াত আছে কলিগের বিয়েতে।তাই শুধু মায়ের জন্য আর নিজের জন্য রাঁধবে।স্বর্ণ অল্প করে খিচুড়ি বসালো।মরিচ আর শুটকি ভর্তা আর সাথে বড়ইয়ের আচার।রান্না শেষ করে মায়ের রুমে গেলো।এশার নামাজ পড়ছে নিহারিকা খানম।নামাজ পড়তে দেখে স্বর্ণ আর ডাকলো না।ডাইনিং এ খাবার সাজিয়ে আরেকটু পর গিয়ে মা’কে ডেকে বলল,’মা,খাবে এসো।’
‘কি করেছিস আজ?’
‘খিচুড়ি খেতে মন চাচ্ছিলো তাই খিচুড়ি,মরিচ,শুটকি ভর্তা আর আচার।’
নিহারিকা খানম হালকা হেসে বললেন,’চল খেতে খেতে কোনো মুভি দেখি।অনেকদিন হয় কোনো মুভি দেখি না।’
‘আসো।’
স্বর্ণ আর নিহারিকা খানম খেতে খেতে টিভি তে শাহরুখ খানের ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জাইয়েঙ্গে’ দেখতে লাগলো।

খাওয়া শেষে সবকিছু গুছিয়ে আসতেই সিমা ফোন দিয়ে বলল ওরা আজ আসবে না।কাল সকালে আসবে।সিমার সাথে কথা বলে স্বর্ণ মায়ের ঘরে চলে গেলো আজ মায়ের সাথে ঘুমাবে।নিহারিকা বেগম বিছানা তৈরি করছিলেন ঘুমানোর জন্য।স্বর্ণকে দেখে বললেন,’তুই জেগে থাকিস না।ঘুমিয়ে যা।ওরা আসলে আমি খুলবো।’
‘ওরা আজ আসবে না,মা।’
‘ফোন করেছিলো?’
‘হ্যাঁ।ভাবী ফোন করে বলেছিলো।’
‘আচ্ছা তাহলে যা শুয়ে পড়।’
‘মা,আমি আজ তোমার কাছে ঘুমাই।’
নিহারিকা খানম মেয়ের দিকে তাকিয়ে কোমলস্বরে বললেন,’চলে আয়।’
স্বর্ণ খুশি মনে মায়ের সাথে শুয়ে পড়লো।মা’কে জড়িয়ে ধরে রাখলো।নিহারিকা খানম দোয়া-দরুদ পড়ে মাথায় ফু দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।স্বর্ণ মায়ের স্নেহের পরশে সহজেই ঘুমিয়ে পড়লো।নিহারিকা খানম মেয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,’হে আল্লাহ আমার মেয়েটাকে তুমি মাফ করে।ওর সহায় হও,ওকে ধৈর্য দাও,অনেক ধৈর্য দাও।ও যেনো ভেঙে না পড়ে।’
নিহারিকা খানম স্বর্ণের মাথায় চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখলেন।

সকালে মা,মেয়ে মিলে নাস্তা বানিয়ে একসাথে নাস্তা করলো।নাস্তা শেষে নিহারিকা খানম বললেন,’তুই গিয়ে স্কলারশিপে আবেদনটা সেরে আয়।আমি এদিকটা সামলে নিচ্ছি।’
‘আচ্ছা,মা।’
স্বর্ণ কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।ক্যাম্পাসে হাঁটতে হাঁটতেই খেয়াল করলো অদুরেই উচ্ছ্বাস আর ওর বন্ধু বান্ধব মিলে আড্ডা দিচ্ছে।স্বর্ণ নিজেকে সামলে নিলো,ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ করলো নিজেকে।সেদিকে আর তাকালোও না।জেরিনের সাথে দেখা করে আবেদনের কাজ সম্পন্ন করলো।তারপর ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় আবারও উচ্ছ্বাসকে দেখলো।এখন একটা মেয়ের সাথে।এই মেয়েটা বেশ জুনিয়র।এবার অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে।স্বর্ণ চেনে,উচ্ছ্বাসের নাকি পরিচিত।আজ সেই মেয়ের সাথে ওকে দেখে স্বর্ণের ভেতরটা কেমন জ্বলছে।ঘৃণার দৃষ্টিতে চোখজোড়া ফিরিয়ে নিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো।নিজেকে স্বাভাবিক করে টিউশনিতে গেলো।সুমন ফোন করেছে দু’বার ইচ্ছে করেই রিসিভ করে নি স্বর্ণ।সুমন এবার টেক্সট করলো,’পিক আপ দ্য ফোন।’
স্বর্ণ দেখেও ফেলে রাখলো।ভালে লাগছে না কিছুই।পৃথিবীতে ভালোবাসা বলতে কিছু নেই।সব মোহ,মোহ কেটে গেলে সব শেষ।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here