শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক #পর্বঃ০৪ #Arshi_Ayat

0
360

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ০৪
#Arshi_Ayat

টিউশনি থেকে ফিরে গোসল করে খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলো স্বর্ণ।প্রয়োজনীয় একটা কাজে ফেসবুকে এসেছে কিন্তু নিউজফিডে চোখ পড়তেই দেখলো কিছুক্ষণ আগে উচ্ছ্বাস আর ওই মেয়েটা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়েছে।স্বর্ণ বড় একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে ব্লক করে দিলো দু’জনকেই।এরপর ফোন’টা রেখে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে ছিলো কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বলতেও পারবে না।

মাগরিবের আজানের শব্দে ঘুম ভেঙেছে স্বর্ণ’র।আজু করে নামাজ পড়ে।রান্নাঘরে গেলো নাস্তা বানাতে।কিছুক্ষণ পর চা জ্বাল দিতে দিতেই ড্রইং রুমে সুমনের গলার আওয়াজ পেলো।সিমা সুমনকে বসতে বলে রান্নাঘরে আসলো।স্বর্ণকে ডেকে বলল,’সুমন ভাই এসেছে।তুমি নাকি ওনার কল ধরো নি!’
‘সাইলেন্ট ছিলো ভাবী।’স্বর্ণ দায়সারা কন্ঠে জবাব দিলো।
‘আর সাইলেন্ট রেখো না।কথা বলো ওনার সাথে যাও,ড্রইংরুমে বসে আছে।আমি চা-নাস্তা নিয়ে আসছি।’
স্বর্ণ বিনাবাক্যে ড্রইং রুমে এলো।ওকে দেখেই সুমন বলল,’কল ধরো নি কেন?ইগনোর করছো?’
‘তেমন কিছু না আসলে সাইলেন্ট ছিলো,ফোন চেক করি নি।’
‘আচ্ছা,রেডি হও বের হবো আমরা।’
‘আমার শরীর খারাপ লাগছে।আজকে না।’
‘আমি বাহানা শুনবো না স্বর্ণ।তুমি যাবে আমার সাথে ব্যাস।নাহলে আমি আশরাফকে ফোন দিচ্ছি।’
স্বর্ণ ম্লানমুখে বলল,’আচ্ছা বসুন।রেডি হয়ে আসছি।’
স্বর্ণ ভেতরে গিয়ে কালো রঙের একটা থ্রিপিস পরে হালকা সেজেগুজে এলো।সুমন ওকে দেখে বিরক্ত হয়ে বলল,’থ্রিপিস কেনো পরেছো?শাড়ি পরতে পারো নি?’
‘শাড়ি পরতে মন চাচ্ছে না এখন।’
‘তুমি এমন করো কেন বলো তো?আমি যা বলবো সবসময় তার বিপরীতে করো।’
স্বর্ণ কথা ঘুরিয়ে বলল,’যাবেন না?’
সুমন বিরক্তি নিয়ে বলল,’চলো।’

বেরিয়ে রিকশা নিলো সুমন।পাশাপাশি বসেও কিছুটা দুরত্ব রেখেছে স্বর্ণ কিন্তু সুমন বারবারই কাছে আসার চেষ্টা করছে।একপর্যায়ে স্বর্ণ বলল,’সরে বসুন।আমার খারাপ লাগছে।’
‘হ্যাঁ আমি বসলেই খারাপ লাগবে।বয়ফ্রেন্ড বসলে লাগবে না।বয়ফ্রেন্ডের সাথে তো কতকিছু করেছো আমার সাথে করতে দোষ কি?আমি তো তোমার ফিয়ন্সে।’
‘হাসবেন্ড নন তো!সরে বসুন তা নাহলে নেমে যাবো।’স্বর্ণ কঠোর স্বরে বলল।তাতে কাজও হলো সুমন সরে বসেছে।সারা রাস্তা আর কোনো কথা হয় নি।যে যার মত ছিলো।সুমন ওকে নিয়ে একটা ফাইভ স্টার হোটেলে এলো।কর্ণারে একটা টেবিলে গিয়ে বসলো ওরা।যদিও স্বর্ণর ইচ্ছে ছিলো না কোণায় বসার তবুও কিছু বলল না সুমনকে অনুসরণ করে কোণার টেবিলেই বসলো।প্রথমেই সুমন বলল,’কি খাবে বলো,অর্ডার দেই।’
‘আপনি দিন।আমার ইচ্ছে করছে না কিছু খেতে।’
সুমন এবারো বিরক্ত হলো।নিজে গিয়ে’ চাইনিজ অর্ডার দিয়ে এলো।’
ফিরে এসে সুমন বলল,’শোনো কয়দিন পর আমাদের অফিশিয়াল একটা ট্যুর আছে তোমাকে নিয়ে যাবো ভাবছি।’
‘না আমি কোথাও যাবো না।’
‘ভয় পাচ্ছো কেনো?তোমার ভাইয়া ভাবীও থাকবে।আর তোমার ভাই নিজেই বলেছে নিয়ে যেতে।তোমার সমস্যা কোথায়?’
‘আমার ইচ্ছে নেই যাওয়ার।আপনি গিয়েই ঘুরে আসুন।’
সুমন ক্ষেপে গিয়ে বলল,’তুমি এমন কোনো?আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড কে এত বার বলা লাগতো না।যখন বলতাম চলে আসতো।আর তুমি!’
‘আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড নই!’
‘নও তো কি হয়েছে কয়েকদিন পর তো বিয়ে করবোই আমরা।’
‘যেদিন বিয়ে হবে সেদিন আমার আপত্তি থাকবে।যেখানে যেতে বলবেন যাবো কিন্তু এর আগে জোর করবেন না।জোরাজোরি ভালো লাগে না।’
‘আমি তোমার এত কথা শুনবো না।তুমি যাবে মানে যাবেই।এ নিয়ে আর কথা বলবে না।’
স্বর্ণ কিছু বলল না আর নিরব হয়ে রইলো তবে মেনে নিলো না।সে যাবে না কিছুতেই।কিন্তু সেটা আর প্রকাশ করলো না।

খাবার আসার পর খাওয়া দাওয়া করে বেরিয়ে পড়লো ওরা।সুমন ওকে নিয়ে একটা শপিংমলে গেলো।প্রথমে শাড়ির কর্ণারে ঢুকলো।সুমন জামদানী শাড়ি দেখানোর জন্য বলল।বিভিন্ন ডিজাইনের জামদানী শাড়ি রাখা হলো ওদের সামনে।সুমন বলল,’পছন্দ করো।যে কয়টা পছন্দ হবে সব কিনে দেবো।’
স্বর্ণ কিছুক্ষণ শাড়িতে চোখ বুলিয়ে বলল,’কালো জামদানীটা সুন্দর।’
‘কি!কালো জামদানী তোমার ভালো লেগেছে?আমার তো ক্ষেত লাগছে।তোমাকে হলুদ জামদানীতে মানাবে’
বলেই সুমন হলুদ একটা জামদানী দিলো স্বর্ণকে।বলল,’পরে এসো তো!’
‘পরতে ইচ্ছে করছে না।’
‘এত কথা শুনছি না।যা বলেছি করো।’সুমন কঠোর গলায় বলল।স্বর্ণ আর কথা বাড়ালো না।শাড়ি নিয়ে চলে গেলো চেন্জ করতে।কিন্তু রংটা একদমই ভালো লাগছে না ওর।হলুদ শাড়ি পরে বেরিয়ে আসতেই সুমন বলল,’ভালো লাগছে না তেমন!’
‘এখন যাও খয়েরী রঙেরটা পরে এসো।’
স্বর্ণ আবার গেলো চেঞ্জ করতে।এভাবে পাঁচটা শাড়ি বদলালো ওকে দিয়ে।শেষ পর্যন্ত নীল রঙের একটা শাড়ি পছন্দ হয়েছে এবং সেটাই কিনলো সুমন।স্বর্ণের কোনো মতামতই নিলো না।আর স্বর্ণের পছন্দ করা কালো রঙেরটা নিলো ওর ভাবীর জন্য।শপিংমল থেকে বেরিয়ে সুমন বলল,’এবার বাসায় চলো।মাঝেমধ্যেই এভাবে বের হবো আমরা।আর নিজেকে তৈরি করো আমার জন্য।এভাবে ন্যাকডেটেড হয়ে থাকলে হবে না।অন্যান্য মেয়েরা কত মর্ডাণ আর তুমি এত পড়েও গেঁয়ো ই রয়ে গেছো।আমার মনে হয় এই কারণেই তোমার বয়ফ্রেন্ড তোমাকে ছেড়ে গেছে।’

সুমনের বলা কথায় কোনো জবাব দিলো না স্বর্ণ।প্রচন্ড কষ্ট হয়েছে ওর।হয়তো সুমন ঠিক বলেছে ও গেয়ো বলেই উচ্ছ্বাস ওকে ছেড়েছে।

বাসায় আসার পর সিমাকে দু’টো শাড়ির প্যাকেট দিয়ে বলল,’তোমার জন্য দু’টো শাড়ি কিনে দিয়েছে সুমন।’
সিমা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,’সত্যি!’
‘হ্যাঁ।’
সিম শাড়িগুলো খুলে দেখা শুরু করলো আর স্বর্ণ নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে থ্রিপিস খুলে ঘরের পোশাক পরলো।তখনই সিমা এসে বলল,’তোমাকে কিছু কিনে দেয় নি?’
‘আমাকে তো দিবেই বিয়ের পর।এগুলো তোমার জন্য দিয়েছে।’
সিমা আহ্লাদী কন্ঠে বলল,’সুমন ভাই কত ভালো দেখেছো!’
স্বর্ণ কিছু বলল না কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেখা গেলো মুখে।অতঃপর সিমা আবার বলল,’আচ্ছা শোনো,তরকারিগুলো গরম করে রাখো আর আজমানের জন্য দুধ জ্বাল দিয়ে ঘরে দিয়ে যেও।’
স্বর্ণ মাথা নাড়লো।সিমা খুশিতে গদগদ হয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো শাড়িগুলো ট্রায়াল দিতে।

বাসার সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর স্বর্ণ নিজের আলমারি খুলে উচ্ছ্বাসের দেওয়া যত গিফট আছে সব নিয়ে ছাঁদে গেলো।তাতে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলো।আর যতক্ষণ পর্যন্ত না সমস্তটা পুড়েছে ততক্ষণ চেয়েছিলো।মনের আগুন যে আরও কতটা তীব্র সেটা নিজে ছাড়াও কেউ অনুভব করতে পারে না।আজ যখন সুমন কথা শোনাচ্ছিলো তখন স্বর্ণ মন চাচ্ছিলো মরে যেতে।কেনো জীবনটা এত কলুষিত হয়ে গেলো।পদে পদে কষ্টে জর্জরিত হতে হচ্ছে।

পোড়া শেষে ছাঁদ চোখমুছে ছাঁদ থেকে নেমে যাওয়ার সময় স্বর্ণ মায়ের দেখা পেলো।নিহারিকা খানম বললেন,’যাস না।কফি এনেছি।আয় কফি খাই।’
স্বর্ণ গেলো না।মায়ের সাথে বসলো।নিহারিকা খানম কফিটা বাড়িয়ে বলল,’দেখ কেমন হয়েছে।’
‘তুমি বানালে ভালোই হয় মা।তোমার সবকিছুই বেষ্ট।’
নিহারিকা খানম হাসলেন।কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন,’ভালো করেছিস।বেইমানদের স্মৃতি রাখতে নেই।’
‘মা সুমন আমাকে নিয়া অফিশিয়াল ট্যুর দিতে চাচ্ছে।ভাইয়াও রাজি হয়েছে।’
‘সমস্যা নেই যেদিন বলবে তার আগেরদিন তুই তোর খালার বাসায় চলে যাবি।আমাকে বললে বলবো ভার্সিটি থেকে ট্যুরে গেছে।’
স্বর্ণ মায়ের কথা শুনে পুলক অনুভব করলো।আনন্দিত কন্ঠে বলল,’মা,তুমি আমাকে সবসময় এতো বোঝো কেন?তোমার মত কেউ বোঝে না!’
‘কারণ আমি তোর মা।’
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন তিনি।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here