শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক #পর্বঃ০৫ #Arshi_Ayat

0
484

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat

মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ঘরে এসে স্বর্ণ ঘুমালো না।প্রজেক্টের পেপারগুলো নিয়ে বসলো।প্রফেসর কিবরিয়া তাকে এগুলো দেখতে দিয়েছে।ডিপার্টমেন্টে ভালো সি জিপিএ ধারীদের মধ্যে স্বর্ণ দ্বিতীয় আর প্রথম হলো আরব।প্রফেসর ওদের দু’জনকেই স্নেহ করেন খুব।তিনি বলেছেন যার আইডিয়া ভালো হবে তার জন্য তিনি সুপারিশ করবেন।আরবের পরিকল্পনা,দক্ষতা খুবই উন্নত তাই ভয় ভয় লাগছে স্বর্ণের যদি আরবের কাজ পছন্দ হয়ে যায় প্রফেসরের তাহলে তো তিনি ওর জন্য সুপারিশ করবেন আর ওর স্কলারশিপ’টা হয়ে যাবে কিন্তু এই স্কলারশিপ’টা তো স্বর্ণের খুব দরকার।যদি আগের মত অবস্থা থাকতো।উচ্ছ্বাস বাচ্চাটা মেনে নিত।ওদের বিয়ে হত তাহলে হয়তো স্বর্ণ প্রজেক্ট নিয়ে এত সিরিয়াস থাকতো না।কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন!

সোয়া চারটায় বিছানায় শুয়ে পড়লো স্বর্ণ।ঘুম আর মানছে না এবার একটু ঘুমাতে হবেই।তারপর আবার সকালে উঠে নাস্তা বানিয়ে ভার্সিটিতে যেতে হবে।

এলার্মের কর্কশ শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো স্বর্ণের।একঘন্টাও ঠিকমত ঘুম হয় নি।মাথা ধরে আছে ভিষণ।তবুও উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে রান্নাঘরে গেলো নাস্তা বানাতে।ঘুমে চোখ ঢুলছে ওর তবুও রুটি বানাচ্ছে।পেছন থেকে নিহারিকা খানম ওর কাঁধে হাত রাখতেই স্বর্ণ ঘুরে তাকালো।মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে তিনি বুঝলেন সবকিছু।হাত থেকে আটার কাই নিয়ে বললেন,’যা ঘরে গিয়ে ঘুমা।আমি ডাক দিলে উঠবি।এর আগে যেন উঠতে না দেখি।’
‘মা,আমি পারবো।’
‘তোরে আমি যা বলছি কর।বেশি কথা বলবি না।’
স্বর্ণ মায়ের কথা মেনে নিলো চুপচাপ।না মেনেও উপায় নেই শরীর চলছে না।ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে আবারও ঘুমে তলিয়ে গেলো স্বর্ণ।

আট’টায় নিহারিকা খানম স্বর্ণকে ডেকে দিলেন।ঘুম থেকে উঠে এখন একটু ভালো লাগছে।গোসল করে,খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সিমা ওকে ডেকে বলল,’কাল রাতে ট্যুরে যাবো আমরা।তুমি,সুমন ভাই,আমি,তোমার ভাই আর আজমান।’
‘মা’কেও নিয়ে যাও।’
‘উনি তে বুড়ো মানুষ।ওনার এত শখ আছে নাকি!’
স্বর্ণ কিছু বলতে নিবে তার আগেই নিহারিকা খানম পেছন থেকে চোখে ইশারা করলেন চুপ থাকতে।মায়ের আদেশ মান্য করে স্বর্ণ চুপ করে বেরিয়ে গেলো।আজ দু’টো কথা শোনাতে মন চাচ্ছিলো খুব।সংসারে সেও টাকা দেয়।তবুও এভাবে দাসের মত ব্যাবহার কেন মায়ের সাথে?তারা বোঝে না কেন বুড়ো মানুষের ও শখ আহ্লাদ থাকে।বুড়ো তো শরীরে হয় মন তো তরুণ সবসময়।

ভার্সিটি থেকে বেরিয়েই সুমনকে দেখে অবাক স্বর্ণ।এই লোক এখানে কি করে?এখন আবার সময় কাটাতে হবে নাকি ওর সাথে?স্বর্ন চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,’আপনি এখানে?’
‘শপিং করবো চলো।কালকে তো ট্যুরে যাচ্ছি আমরা।শপিং না করলে চলে?আর তুমি যা ব্যাকডেটেড জামা কাপড় পরো তোমাকে নিয়ে কলিগদের সামনে যেতেই লজ্জা লাগবে আমার।তাই চলো আজকে তোমাকে কিছু ড্রেস কিনে দেই।’
‘কিন্তু আমার তো টিউশনি আছে।’
‘ছুটি নিয়ে নাও চারদিনের।আজকে তো শপিং এ যাবে আর তিনদিন ট্যুর এর জন্য।’
‘এতদিন ছুটি নেওয়া যায় না টিউশনি থেকে।’
‘তাহলে বাদ দিয়ে দাও।’
‘বাদ দেওয়া যাবে না এখন।’
সুমন এবার ক্ষেপে গিয়ে বলল,’তোমার কাছে আমার চেয়ে টিউশনির গুরুত্ব বেশি?’
স্বর্ণ মনে মনে বলল,’অনেক বেশি।’
কিন্তু মুখে কথা ঘুরিয়ে ফেলে বলল,’আচ্ছা আমি না করে দিচ্ছি সবাইকে।’
স্বর্ণ সবাইকে টেক্সট করে জানিয়ে দিলো আজকে আসতে পারবে না কিন্তু চারদিনের কথা বলে নি।শুধু আজকের কথাই উল্লেখ করেছে।অবশ্য চারদিন ছুটি এমনিতেও দিবে না সে।এই অবস্থায় এসে করুণার পাত্রী হওয়ার ইচ্ছে নেই তার।সুমন বার বার টিউশনি ছাড়তে বলে কারণ ও টিউশনি ছাড়লেই তো টাকার জন্য ভাইয়ের কাছে চাইবে তখন ভাই না দিলে বাধ্য হবে ওর কাছে চাইতে।তখন ই এর সুযোগ নিবে লোক’টা।তাই যত কষ্টই হোক টিউশনি ছাড়া যাবে না।

কিছু ওয়েস্টার্ন শর্ট ড্রেস কিনে দিলো সুমন ওকে।কেনার সময় স্বর্ন হ্যাঁ বা না কিছুই বলে নি।একদম শোকেসে সাজিয়ে রাখা পুতুলের মত বসেছিলো।শপিং শেষে ফাইভ স্টার হোটেলে খেয়ে স্বর্ণর সাথে বাসায় এলো।সিমা সুমনকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,’আরে সুমন ভাই আসেন বসেন।আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে আসি।’
‘না ভাবী লাগবে না।আমরা খেয়ে এসেছি বাইরে থেকে।’
সিমা উজ্জ্বলমুখে বলল,’আমি ভাবতেও পারি নি স্বর্ণর এমন রাজ কপাল হবে।’
নিজের প্রসংশা শুনে গর্বে বুক ফুলে উঠলো সুমনের।তারপর স্বর্ণকে ঠেস দিয়ে বলল,’আপনি বুঝলে কি হবে ভাবী!আপনার ননদ তো বোঝে না।’
স্বর্ণ সব শুনলো কিন্তু কিছু বলল না।ডাইনিং থেকে একগ্লাস পানি খেয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।সুমন আর সীমা আরও কিছুক্ষণ গল্প-গুজব করলো।যাওয়ার সময় নিহারিকা খানমের সাথে দেখা করে গেলো।তিনি না পারতে হাসিমুখে কথা বলে বিদায় করলেন।এই ছেলেটাকে দেখতে মন চায় না তার।এই ছেলেটার সাথে মিশে মিশে আশরাফও নষ্ট হয়ে গেছে।বারবার আশরাফকে বলেছিলো এসব মানুষের সাথে মিশতে না কিন্তু মা-বাবার কথা তো সন্তান সময় থাকতে শোনে না সময় যাবার পর আফসোস করে।

সুমন যাওয়ার পর সিমা স্বর্ণের রুমে এসে আহ্লাদী কন্ঠে বলল,’কি কিনে দিয়েছে তোমাকে দেখি?’
স্বর্ণ শপিং ব্যাগগুলো তুলে সিমার হাতে দিলো।সিমা প্রবল উৎসাহে দেখা শুরু করলো।দেখতে দেখতে বলল,’বাহ!সুমন ভাইয়ের রুচি আছে বলতে হবে।কি সুন্দর ড্রেসগুলো।’
স্বর্ণ কিছু বলল না।সিমা আবারও বলল,’আমার বিয়ের আগে তো আমি এসবই পরতাম।বিয়ের পরও পার্টিতে মাঝেমধ্যে পরি।আচ্ছা,আমার জন্য কিছু কিনেছে?’
স্বর্ণ বলল,’না ভাবী আজ তো তোমার জন্য কিছু দেয় নি কিন্তু তোমার পছন্দ হলে এগুলো তুমি নিয়ে নিতে পারো।’
‘কি বলো!সুমন ভাই রাগ করবে না?’
‘না উনি আর কি বলবেন!তুমিই তো বলো উনি ভালো মানুষ।’
‘হ্যাঁ আসলেই তো!আচ্ছা এগুলো আমি নিয়ে নিলাম।তুমি কিছু মনে করো না।’
‘আরে না কি মনে করবো!তুমি নিয়ে যাও ভাবী।’
সিমা খুশিতে গদগদ হয়ে প্যাকেটগুলো নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।স্বর্ণ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।টাকা খরচ করলে সবাই ভালোই হয়।যেই টাকা খরচ বন্ধ হয়ে যাবে তখনই খারাপ হয়ে যাবে।দুনিয়াটাই এমন।

ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলো স্বর্ণ।মাথাব্যথা করছে প্রবল,যন্ত্রণা হচ্ছে ভিষণ।একটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো স্বর্ণ।যখন উঠলো তখন রাত নয়টা।ঘড়িতে চোখ পড়তেই চোখ কপালে উঠে গেলো।ভাবী কি তুলকালাম করে ফেলেছে কে জানে!আজকে সকালে আর দুপুরে তো মা রান্না করেছে রাতেরটাও কি মা করেছে?স্বর্ণ হাত,মুখ ধুয়ে দ্রুত চলে গেলো রান্নাঘরে।কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে সে বিস্মিত।সিমা রান্না করছে তাও বিরিয়ানী।বিরিয়ানীর গন্ধে সারাঘর সুবাসিত।ওকে দেখে সিমা বলল,’ঘুম হলো তোমার?’
‘হ্যাঁ ভাবী।দাও আমি করি।’
‘না তোমার করা লাগবে না।তুমি গিয়ে আজমানের সাথে টিভি দেখো।আমি তোমার জন্য কফি আনি।’
স্বর্ণ বিষ্ময়ের দকল সামলাতে পারছে না।কি বলছে এগুলো ভাবী।সে কফি বানাবে তাও ওর জন্য।কানে কি ভূল শুনছে।

স্বর্ণকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সিমা বলল,’আরে বাবা যাও না!আমি কফি নিয়ে আসছি।’
স্বর্ণ মাথা নেড়ে বিষ্মিত নয়নেই বেরিয়ে ড্রইং রুমে এলো।ড্রইং রুমে বসে আজমান কার্টুন দেখছে।স্বর্ণও ওর সাথে বসলো কিন্তু টিভিতে মন নেই ওর।ঠিক কি কারণে ভাবীর এত পরিবর্তন?মস্তিষ্কে একটু চাপ দিতেই স্বর্ণ বুঝলো বিকেলে ড্রেসগুলো দেওয়াতেই এই মহা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তবে এর স্থায়িত্ব একদিনের বেশি হবে না কোনভাবেই।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here