শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক #পর্বঃ০৬ #Arshi_Ayat

0
490

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ০৬
#Arshi_Ayat

স্বর্ণ মায়ের কথা মত কাউকে কিছু না জানিয়ে খালার বাসায় চলে গেলো।আজ খালার বাসায় থাকবে আর কোনোভাবেই মা ব্যাতিত কারো ফোন ধরবে না বিশেষ করে সুমনের ফোন তো ধরবেই না।অবশ্য আজ সারাদিনে মাত্র একবার ধরেছিলো তাতেই ছাড়ার নাম নিচ্ছিলো না লোকটা।ট্যুরে গিয়ে কি করবে না করবে তার বৃত্তান্ত দিচ্ছিলো।মেজাজ খারাপ হওয়ায় স্বর্ণ কিছু না বলে খট করে লাইন কেটে দিয়ে সাইলেন্ট করে রেখেছিলো।এই লোকটার সাথে যখনই কথা হয় তখনই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।যদি এর সাথে বিয়ে হয় তাহলে সংসার কতটা দুর্বিষহ হবে সেটা আর ভাবা যাচ্ছে না।

স্বর্ণ’র খালার দুই মেয়ে।দু’জনেরই বিয়ে হয়ে গেছে।এখন বাসায় খালা আর খালু ছাড়া কেউ থাকে না।স্বর্ণকে প্রায়ই যেতে বলে কিন্তু স্বর্ণই যায় না।আজ দেখেই খুশীতে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন তিনি।খালুও ওর প্রতি বেশ আন্তরিক।স্বর্ণ এসেছে শুনে আপ্যায়নের তোড়জোড় লেগে গেলো।খালা ওকে নিজের বড় মেয়ের রুমে থাকতে দিলেন।এই ঘরে এর আগেই অনেকবার এসেছে স্বর্ণ।খালাতো বোনদের সাথে সম্পর্কও ভালো।দুইজনেই ওর বড়।বিয়েও হয়েছে কিছু বছর আগে এখন দু’জনেরই সন্তান আছে।এবার স্বর্ণর পালা ছিলো।কিন্তু…

স্বর্ণ ফ্রেশ হয়ে ফ্যানের নিচে বসতেই খালা হরেক পদের নাস্তা এনে হাজির করলো।স্বর্ণ মৃদু আপত্তি করে বলল,’এসবের কি দরকার ছিলো বলো তো!’
‘চুপ,তোর থেকে শুনতে চেয়েছি?খা তাড়াতাড়ি।আসিসই তো না।যবে থেকে দু’টোর বিয়ে হলো তোকেও আর দেখা যায় না।ওরা তো সংসারের জন্য আসতে পারে না তুই কেন আসিস না?পর হয়ে গেছি আমরা?আর এত শুকিয়েছিস কেন?’
স্বর্ণ হেসে বলল,’তুমি আর মা একই কথা বলো।তোমাদের কাছে আমি সবসময় শুকিয়েই থাকি।’
‘তো বলবো না?তুই ঠিকমত খাবি না,অনিয়ম করবি তো এমন হবেই।আপা তো ঠিকই বলে।’
‘হ্যাঁ জানি তো।তোমরাই ঠিক।’
‘আপা কেমন আছে রে?’
‘আলহামদুলিল্লাহ মা ভালো আছে।’
‘আলহামদুলিল্লাহ।অনেকদিন দেখি না।’
‘আসো কাল আমার সাথে বেড়িয়ে আসবে।’
‘হ্যাঁ যাবো কিন্তু তুই কাল কোথাও যাবি না।কমপক্ষে এক সপ্তাহ থাকতেই হবে।’
‘আরে না ইম্পোর্টেন্ট ক্লাস,প্রজেক্ট আছে।এতদিন পারবো না।’
‘ছোটোই থাকতি বড় হলি কেন?সন্তান বড় হলে বাবা-মায়ের কাছে থাকে না।’নয়নতারা আফসোসের সুরে বললেন।স্বর্ণও কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো।পরক্ষণেই নয়নতারা আবার বললেন,’শুনলাম তোর নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে?’
স্বর্ণ বিরস মুখে বলল,’হ্যাঁ।’
‘কি করে ছেলে?’
‘একটা প্রাইভেট কম্পানিতে ম্যানেজার।’
‘বাহ!বেশ ভালো।ছেলে তোর পছন্দ হয়েছে?’
‘হ্যাঁ।’স্বর্ণ না পারতে মিথ্যা বলল।সত্য বললে আরও অনেক প্রশ্ন উঠবে সেসব বলতে গেলে আর কিছুই বাকি থাকবে না তারচেয়ে এটাই ভালো।
‘বেশ ভালো।আমিও তোর জন্য একটা ছেলে দেখেছিলাম।খুব ভালো ছেলে আমার ননাসের ছেলে।দেখতেও ভালো।’
স্বর্ণ মজা করে বলল,’ছবি দেখাও পছন্দ হলে বিয়ে ক্যানসেল করে তোমার ননাসের ছেলেকে বিয়ে করবো।’
নয়নতারা হেসে বললেন,’এখন আর দেখিয়ে কাজ নেই তুই তোর হবু জামাইর দিকে নজর দে।’
‘হ্যাঁ তুমিও দাও আমার খালুর দিকে।’
‘আরে এখন তো আমরা বুড়ো হয়ে গেছি এত রঙ নেই মনে।’
‘কি আর বুড়ো হয়েছো তোমার যা রুপ আবার বিয়ে দেওয়া যাবে তোমাকে।’
‘হ্যাঁ হয়েছে তোর চাপাবাজী বন্ধ কর।ওই দু’টোও এমন।
স্বর্ণ হেসে বলল,’রুমা আপু আর সুমা আপু আসবে না?’
‘কয়দিন আগেই তো আসলো।তোকে বললাম তুই তো আসলি না।’
‘তখন তো পরীক্ষা চলছিলো।’
‘আচ্ছা এবার আসলে বলবো নি।’
‘আচ্ছা।দেখা হয় না অনেকদিন।
নয়নতারা আর কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে অর্ধখালি নাস্তার প্লেট’টা নিয়ে চলে গেলেন।উনি যাওয়ার পর স্বর্ণ চুপচাপ শুয়ে পড়লো।ঘুম পেয়েছে খুব।

সুমনের মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে খুব।মেয়েটার সাহস কত না জানিয়ে ট্যুরে চলে গেলো।মনে মনে খুব খারাপ কয়েকটা গালমন্দ করলো হবু বউকে।কত ইচ্ছে ছিলো ট্যুরে গিয়ে দু’জনে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করবে আর এখন বেয়াদব মেয়েটা হাওয়া।সারাদিনে একবার মাত্র ফোন ধরেছে এরপর আর ফোন,মেসেজ কিছুতেই রেসপন্স করে নি।এভাবে উড়তে দেওয়া যাবে না।ফিরে এসেই বিয়ের জন্য চাপ দিতে হবে।বিয়েটা হোক একবার উড়াউড়ি একদম বন্ধ হয়ে যাবে।আর বিয়ের পর এমন বন্ধী করবে যে এমবিএ করা বের হবে।এমবিএ করারও কি দরকার সেই তো ঘর সংসারই সামলাতে হবে যেটুকু হয়েছে তাতেই তো বেশ।কেন যে তখন রাজি হতে গেলো।না রাজি হলেও স্বর্ণর কিছু বলার ছিলো না।না এই ভূল করা যাবে না।এসেই আশরাফের ব্রেইনওয়াশ করতে হবে যেন বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়।

স্বর্ণ’র এভাবে না জানিয়ে উধাও হওয়ার কারণে আশরাফ আর সিমা ওরাও রেগে আছে।কারো ফোনও রিসিভ করছে না বিচ্ছু মেয়েটা।সামনে পেলে ঠাটিয়ে চড় মারতো আশরাফ।বহু বাড় বেড়েছে।না জানিয়ে ট্যুরে চলে যাচ্ছে এখনই কয়দিন পর তো বিদেশ চলে যাবে।শাসন করতে হবে বেয়াদব মেয়েটাকে।

প্রচুর গালমন্দ করে গজগজ করতে করতে স্বর্ণকে ছাড়াই ওরা তিনজনে রওনা দিলো।ফিরবে তিনদিন পর।সুমন মনে মনে পণ করেছে ফিরেই স্বর্ণকে একটা শিক্ষা দেবেই।এত্তবড় সাহস যে কথার অমান্য করে।

স্বর্ণ ঘুম ভেঙেছে রাত দশটায়।ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন চেক করতেই দেখলো সুমন,আশরাফ,সিমার অজস্র ফোন আর মেসেজ।একটু আগে নিহারিকা খানমও ফোন দিয়েছিলেন।স্বর্ণ ওগুলো দেখলো না শুধু মা’কে ফোন দিলো।নিহারিকা খানম মেয়ের ফোনের আশায় বসেছিলেন।ফোন ধরেই বললেন,’চলে গেছে ওরা।’
‘যাক ভালো।তুমি খেয়েছো মা?’
‘হ্যাঁ তুই?’
‘খাবো।ঘুম থেকে মাত্রই উঠলাম।’
‘আচ্ছা খেয়ে নিস তাড়াতাড়ি।’
‘মা তোমার একা লাগছে?আমি আসবো?’
‘না রে মা।এই একাকীত্ব আমার আজকের না বহুবছর পুরোনো।অভ্যাস হয়ে গেছে।তুই চিন্তা করিস না।’
‘আচ্ছা মা আমি কালই চলে আসবো।’
‘আচ্ছা,রাখছি।’
নিহারিকা খানম ফোন রেখে দিলেন।মায়ের সাথে কথা শেষ করে স্বর্ণ ফোন রেখে নয়নতারার কাছে চলে গেলো।তিনি ওকে দেখে বললেন,’ঘুম ভাঙলো তোর!আয় চল খাবি।আমরা খেয়ে নিয়েছি।তুই ঘুমে ছিলি বলে ডাকি নি।’
‘সমস্যা নেই।’
স্বর্ণ খাওয়া শেষ করে ঘরে এসে ব্যাগ থেকে খাতা বইপত্র বের করলো।এখনও বেশকিছু রিচার্স করা বাকি আছে।জমা দেওয়ার ডেট পরশু।একটা বিষয় জানার জন্য ফোন ওপেন করতেই স্বর্ণ দেখলো আরব মেসেজ করেছে একটু আগে।কৌতুহল বশত মেসেজ ওপেন করেই লেখা দেখলো,’আছো?’
স্বর্ণ রিপ্লাই করলো,’হ্যাঁ বলো।’
প্রায় সাথেসাথেই রিপ্লাই এলো,’কেমন আছো?’
‘এইতো।তুমি?’
‘ভালো।একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’
‘হ্যাঁ অবশ্যই।’
‘তোমার কি উচ্ছ্বাস ভাইয়ার সাথে ব্রেকাপ হয়ে গেছে?’
‘হ্যাঁ।’
‘ও আচ্ছা।আরেকটা কথা বলবো?’
‘বলো।’
‘কল দিবো?কলে বলি?’
‘আচ্ছা।’
আরব কল দিতেই রিসিভ করলো স্বর্ণ।তারপর বলল,’বলো।’
‘আসলে উচ্ছ্বাস ভাইয়ার সাথে রিলেশন ছিলো বলে বলতে পারি নি।আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
স্বর্ণ রিনরিনে গলায় হাসলো।বলল,’প্রজেক্ট কম্প্লিট?’
‘হ্যাঁ তোমার?’
‘না এখনো না।আচ্ছা তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাই না?তাহলে প্রমাণ করো।’
‘কিভাবে?’
‘এই প্রজেক্ট’টা ছেড়ে দাও।’
কথাটা বলার পরই আরব আর কিছু বলল না।নিঃস্তব্ধতা ছেয়ে গেলো।স্বর্ণ আবারও হাসলো ক্ষীণ!হায়রে ভালোবাসা!

চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here