শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক #পর্বঃ০৭ #Arshi_Ayat

0
337

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ০৭
#Arshi_Ayat

খালার আবদার উপেক্ষা করে স্বর্ণ বেরিয়ে পড়লো সকালে।ক্লাস,প্রাইভেট শেষ করে বাসায় ফিরবে।মা বাসায় একা।অন্তত কয়েকটা দিন একটু শান্তিতে কাটানো যাবে আর নিজের বাসার মত শান্তি কোথাও নেই।

ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনের দিকে যাওয়ার সময়ই আরবের সাথে দেখা হয়ে গেলো স্বর্ণর।আরব আজকে ক্লাস করে নি একটু আগে ভার্সিটিতে এসেছে শুধুমাত্র স্বর্ণর সাথে কথা বলার জন্য।ওকে দেখে স্বর্ণ একটু চমকালো।কাল রাতে যা কথা হয়েছিলো তাতে এই ছেলে যে ওর মুখ কখনো দেখবে সেটা নিয়েই সন্দিহান ছিলো স্বর্ণ।কিন্তু নিজের উৎকন্ঠা বাইরে একবিন্দুও প্রকাশ করলো না স্বর্ণ।চমৎকার হেসে বলল,’কি অবস্থা?আজকে ক্লাসে আসো নি যে।’
‘একজন স্পেশাল মানুষের সাথে কথা বলার প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম তাই অ্যাটেন্ড করি নি।’
‘তাই!তা কে সেই স্পেশাল মানুষ?’
‘তুমি।’
স্বর্ণ একটু চমকানোর ভান করে বলল,’সত্যি!’
‘হ্যাঁ।তুমি ফ্রী আছো কতক্ষণ?’
‘একঘন্টার মত ফ্রী আছি।’
‘চলবে।চলো বের হই।’
‘কোথায় যাবে?’
‘গেলেই দেখবে।’
‘আহা বলো না!’
‘চিন্তা করো না তোমাকে কিডন্যাপ করবো না।’
‘সেটা তুমি চাইলেও পারবে না।’
‘আমি চাইও না।’
স্বর্ণ ছেলেটার পাগলামি দেখে হাসলো।দেখা যাক কতোটুকু করতে পারে।

কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে বসলো ওরা।লাঞ্চ অর্ডার করে স্থির হয়ে বসলো দু’জনে।আরব ভেতরে ভেতরে একটু গুছিয়ে নিয়ে শুরু করলো,’আমি যেদিন তোমাকে ক্লাসে ফার্স্ট দেখি সেদিনই ভালো লেগে যায়।এরপর তোমাকে আমি নোটিশ করা শুরু করি।কোনো একভাবে জানতে পারি তুমি সিঙ্গেল।ভেবেছিলাম প্রপোজ করে দিবো কিন্তু পরে ভাবলাম আদৌ তোমার প্রতি আমার অনুভূতিগুলো সত্যি নাকি শুধু আকর্ষণ।ব্যাপারটা বুঝতে বুঝতেই সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গেলাম আমরা।তারপর একদিন ভাবলাম বলেই দিবো,রিং কিনলাম,রিসোর্ট বুকিং করলাম সব প্রস্তুতি নিলাম।ফ্যামিলির সবাই জানতো।আমার সাথে সবাই এক্সাইটেড ছিলো আসলে আমি সবার অনেক আদুরে তো তাই আমি খুশী হলেই ওরা খুশী হয়ে যায়।যেদিন তোমাকে বলবো ঠিক করেছিলাম তার আগের দিন আমার চোখে ঘুম ছিলো না,ভেতরে ভেতরে এতোটা খুশী কখনোই হই নি।অতঃপর সকালে ফিটফাট হয়ে ক্যাম্পাসে এলাম।তোমার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিন্তু তুমি আসছিলে না।আমি তোমার বান্ধবী জেরিনকে জিগ্যেস করলাম ও বলল তুমি ঘুরতে গিয়েছো উচ্ছ্বাস ভাইয়ার সাথে এবং তোমরা গতকালই সম্পর্কে গিয়েছো।কথাটা হজম করতে আমার কয়েক মিনিট লেগেছিলো।আমি কাউকে কিছু না বলে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলাম।এরপর আমার ঠিক হতে বেশ সময় লেগেছিলো।পড়াশোনা লাটে উঠেছিলো।অনেক কষ্টে নিজেকে ফিরিয়ে এনেছিলাম।এতদিন পর সেদিন জানতে পারলাম তোমাদের ব্রেকাপ হয়েছে।খবরটা শুনে আমি অনেক খুশী হয়েছিলাম।আগেরবারের মত দেরি না করে এবার বলেই দিলাম।আমাকে নিরাশ করো না,প্লিজ।’
আরব পকেট থেকে একটা রিং বের করে স্বর্ণর সামনে ধরে বলল,’উইল ইউ বি মাই মিসেস?’
স্বর্ণ এতোটাও ভাবে নি।প্রপোজ পাবে এতটুকু আন্দাজ ছিলো সেরকম প্রিপারেশনও ছিলো কিন্তু ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসবে কে জানতো!এখন কি বলবে এই ছেলেকে?স্বর্ণ একটু ইতস্তত কন্ঠে বলল,’আমার সময় প্রয়োজন আসলে।হুট করে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।’
আরব একটু চুপ থেকে হতাশ হয়ে বলল,’আচ্ছা,সময় নাও কিন্তু আমাকে নিরাশ করো না।’
স্বর্ণ কিছু বলল না।মৌন রইলো।রিংটা ওর কাছেই রাখতে বলল।খাবার এসে পড়ায় এরপরের সময়টা বেশ চুপচাপ ছিলো দু’জনে।খাওয়া শেষ করে বের হওয়ার সময় আরব বলল,’আমি প্রজেক্ট’টা ছেড়ে দিয়েছি।’
স্বর্ণ চমকালো,স্তম্ভিত গলায় বলল,’কি!’
‘হ্যাঁ,আমার স্কলারশিপের প্রয়োজন নেই।যদিও এটা আমার স্বপ্ন ছিলো কিন্তু এখন আমার স্বপ্ন তোমার সাথে থাকা।তাই এটা আমি ছেড়ে দিলাম কিন্তু তুমি দিও না।আমি চাই তুমিই পাও।’
‘কিন্তু!আমি মজা করে বলেছিলাম আরব।তুমি এটা ছেড়ে ঠিক করো নি।আমি মানতে পারছি না।’
‘ঠিকই করেছি।’
‘না,আরব।আমার নিজেকে অপরাধী লাগছে।তুমি আমার সামান্য কথায় ছেড়ে দিলে কেন?’
‘তোমার কোনো কথাই সামান্য না আমার জন্য।আর আমি না ছেড়ে দিলেও তুমিই পেতে।’
‘আমার কষ্ট হচ্ছে।’
‘কষ্ট পেও না।আমি মন থেকেই করেছি।’

প্রাইভেট থেকে বাসায় ফিরেও ভালো লাগছে না স্বর্ণর।মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে ছেলেটা ওর জন্য নিজের স্বপ্ন ছেড়ে দিলো।তাহলে কি সত্যিই ভালোবাসে?

জেরিনকে বিষয়টা জানালো স্বর্ণ।সব শুনে জেরিন বলল,’আরব অনেক ভালো ছেলে।ওই তোর জন্য পার্ফেক্ট হবে।আর আমি বলি কি তুই এসব স্কলারশিপ ছেড়ে ওকেই বিয়ে করে ফেল।’
‘আরে চুপ কর তো!’
‘আরবকে হাতছাড়া করিস না পস্তাবি।’
স্বর্ণ কিছু বলল না।ব্যাপারটা নিয়ে নিজেও খুব দ্বিধায় আছে।কালকেই জমা দিতে হবে প্রজেক্ট’টা।স্বর্ণ’রও প্রায় কম্প্লিট।

আজ খুব সকালে গোসল সেরে শাড়ি পরে,সেজেগুজে নিলো স্বর্ণ।বেশ অনেকদিন পর সাজলো আজ।আগে যখন উচ্ছ্বাসের সাথে ঘুরতে যেত তখন এভাবে সাজা হতো।ইদানীং আর কিছুতেই মন বসে না কিন্তু আজ কেনো জানি মনে হলো একটু সাজঁ যেতেই পারে।নিহারিকা খানম মুগ্ধ হয়ে মেয়ের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন।অতঃপর উৎকন্ঠিত কন্ঠে বললেন,’আজকে কি কোনো প্রোগ্রাম আছে?’
‘না।এমনিই।’
‘তোকে তো সাজতেই দেখি না এখন আজকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম।’
স্বর্ণ হেসে ফেললো।মা’য়ের দিকে চেয়ে বলল,’কেমন লাগছে আমাকে?’
‘ভিষণ সুন্দর লাগছে।নজর না লাগুক কারো।’
স্বর্ণ হাসলো।টিপ’টা পরে আয়নায় নিজেকে আরেকবার দেখে নিয়ে বলল,’মা,তুমি তৈরি থেকে আজকে আমরা খালার বাসায় যাবো।তোমাকে দেখতে চেয়েছে খালা।আমাকে বলেছে নিয়ে যেতে।’
‘আজকেই?’
‘ওরা চলে এলে আর পাবে সময়?এসেই কি নাটক শুরু করে দেখবে।তারজন্য প্রস্তুত হও।’
‘আচ্ছা তাহলে তুই ক্লাস শেষ করে বাসায় আয়।আমি রেডি হয়ে থাকবো।’
‘আচ্ছা মা।’
স্বর্ণ বেরিয়ে গেলো।বের হওয়ার সময় আরবকে মেসেজ করে বলল,’ক্যাম্পাসে থেকো,কথা আছে।’
মেসেজটা দেখেই আরব শোয়া থেকে বসে পড়লো।সাথে সাথেই রিপ্লাই করলো,’কি কথা?’
‘বলে দিলে আর আসবে কেনো?’
‘বলে দিলেও আসবো।বলো না,টেনশন হচ্ছে তো আমার।’
‘ধ্যাৎ এমন করলে কিন্তু বলবোই না।আসতে বলছি আসবা।এত কথা ক্যান?’
‘আচ্ছা,সরি।আসছি,একটু ওয়েট করো।’
কথা শেষ করেই আরব রেডি হতে লেগে গেলো।আজ নিশ্চয়ই স্বর্ণ ভালোবাসা স্বীকার করে নেবে।এত তাড়াতাড়ি যে মেনে যাবে কল্পনাও করে নি আরব।ভেবেছিলো অনেকদিন ঘুরাবে।কিন্তু ফাইনালি অপেক্ষার অবসান হবে।খুশীতে নাচতে পারলে ভালো হতো।স্বপ্ন পূরণ হবে শেষ পর্যন্ত।দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন!

ক্যাম্পাসে এসে প্রথমেই ধাক্কা খেলো স্বর্ণকে দেখে।আজকে এত সুন্দর করে সেজেছে যে চেয়েই থাকতে মন চাইছে।আরব কিছুটা অভিমানের স্বরে বলল,’তুমি,এত সুন্দর করে সেজে আসবে আগে বললে তো আমি পাঞ্জাবি পরে আসতাম।কেমন লাগছে আমাকে?শুধু একটা শার্ট পরে চলে আসছি।মানাচ্ছে না একদম!’
‘খালি পকপক।চুপ একদম,আসো আমার সাথে।ক্যান্টিনে বসি।ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে।’
আরব স্বর্ণের সাথে হাঁটতে হাঁটতে না হলেই কয়েকবার জিগ্যেস করে ফেলেছে কি ইম্পর্টেন্ট কথা।প্রত্যেকবারই স্বর্ণ ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে ফেলে।অবশেষে ক্যান্টিনে এসে বসতেই আরব অনুরোধের স্বরে বলল,’এবার বলো না প্লিজ।আমি আর সাসপেন্স রাখতে পারছি না।’
স্বর্ণ শান্ত কন্ঠে বলল,’আমিও প্রজেক্ট’টা ছেড়ে দিয়েছি।’

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here