😏#মেঘের_আড়ালে_রৌদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒
Part-07
পরের দিন হিয়া নিজেকে শক্ত করে,,মনে অনেক অনেক সাহস জুগিয়ে আবার ক্লাস করতে আসে,,হিয়া ঠিক করেছিল সে এসেই আগে নীলিমাদের থেকে ওর ফোন টা চেয়ে নিবে আর এতে যদি নীলিরা আবার তাকে অপমান করে করে হেনস্তা করতে চেষ্টা করে তাহলে সে আজ তাদের যোগ্য জবাব দিবে,,কিন্তু এসেই হিয়া ঝিনুকের কাছে জানতে পারে উজান কাল ইচ্ছে মতো নীলিমাদের ঝারি দিয়ে হিয়ার ফোন টা নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিছে,,আর আজ একটু কাজ থাকায় সে ভার্সিটি আসতে পারবে না তাই হিয়ার ফোন টা সে কাল এসে ফেরত দিয়ে যাবে,,এসব শুনে হিয়া একটু শান্তি পায় যাগ তাহলে আর অনন্ত এই ফোন টার জন্য নীলিমা দের সাথে তাকে অহেতুক কথা বলে সময় নষ্ট করতে হবে না
ক্লাসরুমঃ
ঝিনুকঃ সব তো ক্লাস হয়ে গেলো,,বাড়ি যাবি তো এখন নাকি,,না আবার স্টুডেন্ট এর বাড়িতে যাবি??
হিয়াঃ স্টুডেন্ট এর বাড়িতে যাবো রে,,সামনের সপ্তাহে বাচ্চা টার পরীক্ষা
ঝিনুকঃ দাঁড়া একটু বসে যাই তা,,কোমড় টা এক সাইডে বসে বসে পুরো ঝিমে গেছে,,উফফ এতোক্ষণ এক নাগাড়ে বসে থাকা যায় নাকি
হিয়াঃ হুমম,,,,,আজ আবহাওয়া টা দেখ কি সুন্দর বাতাস দিচ্ছে
ঝিনুকঃ হুমম আসার সময়ে খবরে দেখলাম টেকনাফের ওদিকে নাকি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে,,দেখ কখন আবার আমাদের এখানেও
হিয়াঃ হুমম হলে কিন্তু খারাপ হবে না,,তবে সেটা রাতে হলে বেষ্ট হবে
ঝিনুকঃ রাতে কেনো
হিয়াঃ আরে গাধি কখনো টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনেছিস তুই
ঝিনুকঃ না
হিয়াঃ তাহলে বুঝবি কি করে,,আমরা তো নিচ তালায় থাকি উপরে ছাঁদ থাকলেও আমার জানালার পাশে উঠনে যেই ছাপড়া টা আছে ওখানকার টিনে যখন বৃষ্টি রিমঝিম করে পড়তে থাকে তখন শুনতে যা ভালো না কি বলবো তোকে,,আমি তো বৃষ্টি হলেই আমার পাশের জানালা টা খুলে দিয়ে ঘুমোই
ঝিনুকঃ ইন্টারেস্টিং তো,,তাহলে তো একদিন টিনের চালের নিচে শুয়ে দেখতে হবে কি রকম বৃষ্টির শব্দ শুনা যায়
হিয়াঃ হুমম দেখিস,,আগে যখন গআমরা গ্রামে যেতাম তখন বৃষ্টি হলেই আমি আর শ্রাবণ সারারাত জেগে জেগে বৃষ্টির গান শুনতাম আর জানালা খুলে দিয়ে বাতাস গায়ে মাখতাম,,এখন অবশ্য সেই টিনের চাল দিয়ে তৈরি কোনো ঘর নেই চাচারা সবাই বাড়ি করে নিজেদের ____
হিয়া আর কিছু বলার আগেই রাইসা এসে হিয়াদের বেঞ্চের সামনে গিয়ে দাঁড় হয়
হিয়াঃ আপু আপনি!!
রাইসাঃ হুম,,একটু আসো তো আমার সাথে
হিয়াঃ কোথায়??
রাইসাঃ নীলিমার কাছে
হিয়াঃ কেনো??
রাইসাঃ (কি রকম আমাকে উল্টে প্রশ্ন করছে দেখো,,ইচ্ছে তো করছে ঠাটিয়ে এক চড় বসিয়ে দেই,,বেয়াদব মেয়ে কোথাকার)____না মানে কালকে আমরা তোমার সাথে একটু বেশিই খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি সে জন্য আমরা মন থেকে অনেক দুঃখিত হিয়া,,আমি তো বেশি দুঃখিত I am Sorry হিয়া
ঝিনুকঃ বাহ বা ভাইয়ার ঝারি খেয়ে লাইনে আসছে দেখছি তাহলে
হিয়াঃ ইটস ওকে আপু,,আপনারা আপনাদের ভুল টা বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক,,আপনি আমার বয়সে বড় এভাবে আমার কাছে নত হবেন না প্লিজ
রাইসাঃ (নত মাই ফুট,,তোমার মতো মেয়ের কাছে নত হবো আমরা) না আমরা সবাই তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে চাইছি তাই নীলি তোমাকে ডাকছে সে নিজে থেকে তোমার সাথে কথা বলে
হিয়াঃ ওসবের কোনো দরকার নেই আপু আমি
রাইসাঃ ওসব বললে হয় নাকি,,প্লিজ হিয়া তুমি তো জানো নীলির কতো রাগ এখন তোমাকে আমার সাথে নিয়ে না গেলে ও না আবার
হিয়াঃ আপু আমি
রাইসাঃ প্লিজ হিয়া বাড়ি তো যাবে এখন তাহলে যাবার আগে
হিয়াঃ ঠিক আছে,,ঝিনুক
ঝিনুকঃ হ্যা বল
হিয়াঃ তুই তাহলে বাড়িতে চলে যা,,আমি নীলি আপুর সাথে কথা বলে ওদিক দিয়ে চলে যাবো
ঝিনুকঃ আমি যাবো তোর সাথে
হিয়াঃ না না আমি পারবো,,তুই যা
হিয়া ঝিনুকের থেকে বিদায় নিয়ে রাইসার সাথে নীলিমার কাছে যাবে বলে ক্লাসরুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে,,এদিকে রাইসা হিয়াকে নিয়ে আসে ভার্সিটির অডিটোরিয়ামের পেছনের দিকের রুম গুলোর কাছাকাছি
হিয়াঃ আমরা এটা কোথায় এলাম??
রাইসাঃ এই আসলাম,,আসলে কি জানো তো আমরা সব ফ্রেন্ডরা এক হয়ে ঠিক এই জায়গাটায় আড্ডা দেই,,আজ ক্লাস পরীক্ষা টা শেষ হলো তাই আজ সবাই একসাথে
রাইসা ইনিয়ে বিনিয়ে মিথ্যা বলে হিয়াকে নিয়ে নীলির সামনে আসতেই হিয়ার হাত ধরে হ্যাচকা টেনে হিয়াকে নীলির কাছে ফেলে দেয়
নীলিমাঃ আরে রাইসা আস্তে আস্তে,,উজান শাহরিয়ার এর স্পেশাল স্টুডেন্ট বলে কথা তোরা একটু দেখে শুনে খাতির যত্ন করবি তো নাকি
রাইসাঃ খাতির যত্ন তাও আবার এই রাস্তার মেয়ে কে,,হাউ ফানি নীলিমা
হিয়াঃ আপনারা আমার সাথে এভাবে কেনো কথা বলছেন,,রাইসা আপু যে বললো আপনি আমার থেকে ক্ষমা চাইতে
নীলিমাঃ ক্ষমা,,কি বলে রে এই মেয়ে পাগল নাকি,,ক্ষমা চাবো আমি,,(হিয়ার বাহু খামচে ধরে) কাল প্রথম উজান আমার সাথে এতো এতো এতো রুড বিহেভ করলো জাস্ট বিকজ তোমার জন্য😡আজ অবধি কেউ আমার দিকে চোখ তুলে কথা বলার সাহস পায়নি আর কালকে,,কালকে শুধু তোমার জন্য উজান আমাকে সবার সামনে
রাইসাঃ আমি তো বুঝি না উজান কিসের জন্য এই মেয়ের প্রতি এতো কনসার্ন,,যেই ছেলে আজ অবধি আমরা ছাড়া কোনো মেয়ের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতো না সে কি না আজ এভাবে এই মেয়ের জন্য
হিয়াঃ প্লিজ আমাকে ছাড়ুন এবার,,কি কি করতে কি চাইছেন আপনারা
নীলিমাঃ কি করতে চাইছি,,,,নিধি কেড়ে নে তো ওর ব্যাগ টা
হিয়াঃ না___আমার ব্যাগ ব্যাগ কেনো নিচ্ছেন আপনারা,,দেখুন আমি কিন্তু চিৎকার করবো এবার___ছাড়ুন আমাকে
নীলিমাঃ তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো না এখান থেকে চিৎকার করলে মানুষ তো দূরে থাক কোনো কাক পক্ষীও শুনতে পারবে না
হিয়াঃ আপু আমি আপনাদের কাছে হাত জোর করছি,,আমাকে ছেড়ে দিন
নীলিমাঃ ছেড়ে তো দেবোই কিন্তু তার আগে
বলেই নীলিমা হিয়াকে পাশে থাকা একটা রুমে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে বন্দি করে দরজার দুই খিল ই ভালো করে লাগিয়ে দেয়,,ভেতর থেকে হিয়া অনেক চিৎকার করতে থাকলেও নীলিদের এতে কোনো ভাবাবেগ হয় না
নীলিমাঃ এখন দেখবো,,এই বন্ধ রুম থেকে কে তোমাকে এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায়,,আজ তো উজানো ভার্সিটিতে নেই আর সব ক্লাসও প্রায়ই শেষ,,কে বাঁচাবে তোমাকে হিয়া
রাইসাঃ থাক তে দে না একদিন এভাবে,,আমাদের কে শায়েস্তা করতে উজানকে উস্কে দেওয়া তো,,দেওয়াচ্ছি ওকে😡
___________________
রাত তখন ১০টার কাছাকাছি,,টেকনাফের ঝড়ের তান্ডব বিকেল হতেই শুরু হয়ে গেছে ঢাকা শহরে,,সেই ঝড়ের তো যেনো থামারই কোনো নাম নেই,,বাতাসের বেগ কমলেও বৃষ্টির বেগ কিন্তু বাড়ছে ঠিক সময়ে সময়ে
নীলিমারা তখন হিয়াকে ওভাবে বন্দী করে রাখার পর হিয়া অনেক চেষ্টা করেছিলো সেই বদ্ধ অন্ধকার রুম থেকে বের হবার কিন্তু ভাগ্য কোনো ভাবে তার সহায় হয়নি,,একটা সময় নিজের সর্বশক্তি হারিয়ে ভয়ে,ক্ষুধায়,পিপাসায় কাতর হয়ে সেই অন্ধকার রুমেই হিয়া সেন্স হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে
এদিকে উজান আজ সারাদিন ওর মার বলা একটা কাজে ব্যস্ত থাকায় ঠিক মতো হিয়ার কথা ভাবারো সময় পাই নি,,পাই নি বললে ভুল হবে ঔ কাজের ফাঁকে ফাঁকে যা একটু পেয়েছিলো ওতেই ফোন বের করে এক দু বার হিয়ার ঔ প্যাক প্যাক করা ভিডিও টা দেখে নিজের ক্লান্তিটাকে শান্তিতে পরিণত করেছিলো❤️
কাজ সেরে বাড়িতে এসেই উজান গা টা মেলে দেয় নিজের বিছানায় তখনই শুনতে পারে তার ড্রয়ারের ভেতর থেকে লাগাতার একটা ফোনের টোন শোনা যাচ্ছে,,একটু বুঝে আসতে উজানের মনে পড়ে ও তো বেড়িয়ে যাবার আগে হিয়ার ফোন টা ড্রয়ারে ঢুকিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে ছিলো,,উজান তড়িৎ গতিতে উঠে ফোন টা ড্রয়ার থেকে বের করার আগেই একটু আগের রিং টা কেটে যায়,,উজান খেয়াল করে ফোনে তখন ১৫৬টা মিসড কল একটা নাম্বার থেকে,,উজান ঠিক কি করবে বুঝতে পারে না,,আরো একবার ফোন টা বেজে উঠতেই উজান ফোন টা রিসিভ করলেই হিয়ার রুমমেট রিমা কথা বলতে শুরু করে
রিমাঃ হ্যালো,,হ্যালো হিয়া___হ্যালো___হিয়া কোথায় তুমি,,হিয়া তুমি কি শুনছো আমার কথা___হিয়া
উজানঃ হ্যালো কে
রিমাঃ____আপনি কে,,এটাতো হিয়ার ফোন
উজানঃ হ্যা এটা হিয়ার ফোন,,বাট এখন আমার কাছে
রিমাঃ আপনার কাছে হিয়ার ফোন মানে,,হিয়া কোথায় হিয়াকে দিন
উজানঃ হিয়াকে দেবো মানে,,আপনি কে
রিমাঃ আশ্চর্য তো,,আমি কে হই সেটা শুনে আপনি কি করবেন,,আগে আপনি বলুন হিয়া কোথায়
উজানঃ লিসেন মিস ওর মিসেস,,,হোয়াট এভার___হিয়ার ফোন টা কাল থেকে আমার কাছে,,আমি আজ ভার্সিটি যাই নি তাই হিয়াকে ফোন টা দিতে পারি নি,,আমি কাল ভার্সিটি গিয়ে হিয়ার ফোন টা হিয়াকে দিয়ে আসবো__ক্লিয়ার
রিমাঃ হ্যা মানে
উজানঃ আর হিয়া কোথায় মানে,,আপনি কি ওর রুমমেট রিমা??
রিমাঃ আপনি আমার নাম জানলেন কি করে😕😕
উজানঃ জানি,,,ওসব বাদ দিন,,আপনি কি বললেন একটু আগে যে হিয়াকে দিতে___মানে কি হিয়া বাড়িতে নেই??
উজানের প্রশ্নের উওরে রিমা সব খুলে বলে যে হিয়া আজ ভার্সিটি যাবার পর একবারো বাড়িতে আসে নি,,শুনেই উজানের বুকটা নিমিষে ধক করে উঠে,,চিন্তার মেঘরাশি এসে মুহুর্তে চুবিয়ে খেতে থাকে উজানকে,,এই ঝড়ের রাতে হিয়া কোথায় যেতে পারে,,এদিকে শ্রাবনের তার বুবুনির জন্য কান্না উজানের মনের ভয়টাকে আরো জোড়ালো করে তুলে মুহুর্তে,,উজান একটু নিজেকে শান্ত করে ঝিনুক কে ফোন করে,,আর করেই জানতে পারে তখন রাইসার সাথে হিয়া___উজানের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে হিয়ার সাথে আবার রাইসারা খারাপ কিছু করেছে___সাথে সাথে সে ফোন করে রাইসা কে কিন্তু রাইসা সব কিছু অস্বীকার করলেও নিধি ফোনের অপর পাশ থেকে উজানের গম্ভীর গলা শুনেই সব গল গল করে বলে দেয় হিয়ার সাথে নীলিমারা ঠিক কতোটা খারাপ কি করেছে,,,আর শুনেই তো উজান পুরো রাগে পাথর হয়ে যায় কিন্তু অনেক কষ্টে নিজের রাগ টাকে কন্ট্রোল করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে এই ঝড়ো বৃষ্টি তে রুপমের গাড়ি টা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে
উজান জানে এখন ভার্সিটিতে তাকে কেউ এলাও করবে না,,তবু উজান সব রেস্ট্রিকশন ভেঙে দারোয়ান কাকুকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শেষ মেষ হিয়ার কাছে যেতে সক্ষম হয়,,,,,,
হিয়াকে খুঁজতে মিলতে রাত তখন ১২টার কাছাকাছি,,কিছুক্ষন আগে বৃষ্টির রেশ থামলেও মুহুর্তে আবার আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামতে শুরু করলো
গাড়িতে পেছনের সীটে উজানের কাঁধে সেন্স হারিয়ে পড়ে আছে হিয়া,,উজান হিয়াকে নিয়ে এখন ঠিক কোথায় যাবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না,,তার উপর এই অসময়ের বৃষ্টি,,কিন্তু আগে যে করেই হোক হিয়ার সেন্স ফিরিয়ে হিয়াকে কোনো ডক্টর দেখাতে হবে,,
রুপমঃ আচ্ছা তুই একটু শান্ত হ,,আমি ডক্টর আঙ্কেলের সাথে কথা বলে দেখছি কি করা যায়____
উজানঃ যা করবি ইমিডিয়েট কর রুপম,,মেয়েটা কতক্ষণ থেকে এভাবে(হাঁপাতে হাঁপাতে)
রুপমঃ আস্তে আস্তে,,কিচ্ছু হবে না হিয়ার,,একটু ভরসা রাখ___ওয়েট আঙ্কেল রিসিভ করেছে আমি কথা বলে নেই আগে
_________
বৃষ্টির আবেশে পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে আসলেও উজানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের জল স্পষ্ট ভেসে আসছে,,হিয়াকে আগলে ওটুকু জায়গায় কেমন ছটফট করতে থাকে উজান,,বারবার হাতে থাকা বোতল থেকে জল বের করে ছিটিয়ে দিতে থাকে হিয়ার মুখে,,হিয়ার চুল গুলো খুব যত্ন করে কিলিপ দিয়ে উপরে তুলে বেধে দেয় নিজের দুহাতে
উজানঃ আই এম সরি হিয়া,,আজ আমার জন্য তোমার সাথে_____প্লিজ চোখ টা খুলো হিয়া,,একবার আমাকে দেখো___তোমার যতোটা ইচ্ছে হয় আমাকে থাপ্পড় দিও তুমি কিন্তু এভাবে প্লিজ চুপ করে থেকো না,,আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে হিয়া
রুপমঃ উজান
উজানঃ হ্যা কি বললো ডক্টর আঙ্কেল উনি আছে হসপিটালে
রুপমঃ না উনি বাড়িতে আছে আর পেশেন্ট কে নিয়ে বাড়িতে উঠতে বললো উনি এসে দেখে যাবে
উজানঃ আসবে তো উনি সিউর
রুপমঃ আরে ওনার ফ্লাট থেকে আমাদের ফ্লোরে আসতে নিশ্চয় ওনার বেশি সময় লাগবে না___তবে এতো রাতে নিজে এসে দেখলে টাকা টাও কিন্তু সে রকমই চাবে
উজানঃ যতো টাকা লাগবে আমি দেবো,,আমি জাস্ট আমার হিয়াকে সুস্থ দেখতে চাই ব্যাছ
রুপমঃ হ্যা কিন্তু তুই হিয়াকে নিয়ে বাড়িতে উঠবি ভেবে বলছিস তো,,ব্যাপারটা জানাজানি হলে সবাই কিন্তু ভুল ও বুঝতে পারে
উজানঃ আই ডোন্ট কেয়ার রুপম
রুপমঃ হুমম,,অবশ্য এখন কি আর কারো অন্য কারো দিকে নজর দেবার সময় আছে,,,আর হ্যা আঙ্কেল ঔ একটা স্যালাইন বোতল আর একটা ইনজেকশন টেক্সট করে দিচ্ছে বললো ওগুলো সাথে করে নিয়ে যেতে
উজানঃ ঠিক আছে,,কোথায় কোন ডিসপেনসারি খোলা আছে তুই সব জায়গা ঘুরে দেখ
রুপমঃ হুম দেখছি
_______________
রুপম অনেকটা পথ ঘুরে শেষ মেষ একটা দোকান থেকে ডক্টর আঙ্কেলের বলে দেওয়া জিনিস গুলো কিনে উজান আর হিয়াকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে,,উজান হিয়াকে তার কোলে করে তুলে এনে শুইয়ে দেয় নিজের বিছানার,, হিয়াকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়েই রুপমকে বলে ডক্টর আঙ্কেল কে উপর থেকে নিচে নিয়ে এসে হিয়াকে দেখিয়ে নিতে
উজানঃ হিয়া ঠিক হয়ে যাবে তো ডক্টর আঙ্কেল
ডক্টরঃ হুমম সেন্স ফিরলে আর কোনো চিন্তা নেই,,তবে মেয়েটার পেশার অনেক লো,,পালস রেটো অনেক কম____অবজারভ করে যা বুঝলাম মেয়েটা হয়তো ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না,,শরীরে রক্ত অনেক কম___আমি দুটো ব্লাড টেস্ট দিচ্ছি ওর সেন্স ফিরলে একবার ওকে নিয়ে ওটা করে আসো কালকে,,এসে রিপোর্ট গুলো আমাকে একবার চেম্বারে দেখিয়ে নিও কেমন আপাতত আর কোনো ঔষধ দিচ্ছি না আগে টেস্ট দুটো করো দেখি কি আসে
উজানঃ ধন্যবাদ আঙ্কেল,,অনেক ধন্যবাদ আপনি এই রাতে
ডক্টরঃ ওসব কোনো ম্যাটার না,,পেশেন্ট কে যেকোনো সময় সেবা দেওয়াই আমাদের ডিউটি বুঝলা___আসছি
উজানঃ রুপম আঙ্কেল কে দিয়ে আয়
রুপমঃ হুম
_________________
ডক্টর হিয়াকে দেখে নিয়ে স্যালাইন লাগিয়ে দিতে মিলতে রাত তখন ৩টার কাছাকাছি,,রুপম একটু ফ্রেশ হয়ে সাব্বিরের রুমে গিয়ে শুইয়ে পড়লে উজান ফ্রেশ হয়ে এসে হিয়ার মাথার কাছে গিয়ে বসে যায়,,খুব যত্নভরে হিয়ার ক্যানুলা লাগা হাতটা ঠিক করে দিয়ে হিয়ার গায়ের কম্বল টা গলা অবধি মুড়িয়ে দেয়,,এদিকে তো শ্রাবণো আজ তার বুবুনির চিন্তায় না ঘুমিয়ে জেগে আছে আর একটু পর পর রিমা আপুকে বলছে তার বোনের খোজ নিতে
উজানঃ হ্যালো রিমা
রিমাঃ হুম ভাইয়া,,ডক্টর কি বললো,,হিয়া ঠিক ঠিক আছে তো
উজানঃ হুম আছে,,একটা ইনজেকশন পুশ করলো আর সেন্স ফিরলে কিছু ব্লাড টেস্ট দিয়েছে ওগুলো করে নিতে বললো
রিমাঃ ওহ,,এমনি সিরিয়াস কিছু না তো
উজানঃ না___আচ্ছা শ্রাবণ আছে পাশে,,ওকে দেও দেখি
রিমাঃ হুম দিচ্ছি,,শ্রাবণ কথা বলো তো সোনা তোমার একটা ভাইয়া
শ্রাবণঃ হ্যালো
উজানঃ হে চ্যাম্প,,কি অবস্থা
শ্রাবণঃ কে ভালো ভাইয়া
উজানঃ হুম হুম,,তোমার বুবুনি তো এখন আমার কাছে কি আরাম করে ঘুমোচ্ছে জানো
শ্রাবণঃ বুবু তোমার ওখানে কেনো ঘুমোচ্ছে,,বুবু কি আর আসবে না আমার কাছে??
উজানঃ বুবুর তো এখানে অনেক কাজ কি করে যে যাবে এখন সে কাজ রেখে তোমার কাছে,,তার চেয়ে বরং তুমি কাল চলে আসো আমার বাড়িতে আমরা তিনজন মিলে খুব মজা করবো
শ্রাবণঃ আমি যাবো তোমার ওখানে,,কিন্তু আমি যে তোমার বাড়ি চিনি না,,আর বুবু আমাকে বলেছে একা একা কোথাও যেতে নেই
উজানঃ বুবুনি যখন বলেছে তাহলে তো একা একা আসবার প্রশ্নই আসে না,,তুমি বরং কাল রিমা আপুর সাথে আমার বাড়ি চলে আসো কেমন
শ্রাবণঃ রিমা আপু নিয়ে যাবে আমাকে তোমার বাড়িতে
উজানঃ যাবে তুমি যদি এখন কান্না কাটি না করে ঘুমিয়ে পড়ো তাহলে কাল সকাল সকাল উঠেই রিমা তোমাকে এখানে তোমার বুবুনির কাছে নিয়ে আসবে
শ্রাবণঃ আচ্ছা আমি এখনই ঘুমিয়ে পড়ছি তাহলে
উজানঃ ওকে,,গুড নাইট
শ্রাবণ ঘুমিয়ে গেলে উজান রিমাকে সব বুঝিয়ে বলে কাল হয়তো রিমা শ্রাবণকে দিয়ে যাবে নয়তো উজান গিয়ে শ্রাবণ কে নিয়ে আসবে,,কথা বলা শেষ হলে উজান একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ফোন থেকে মুখ তুলে হিয়ার দিকে তাকাতেই ওর চোখ আঁটকে যায় হিয়ার মুখের দিকে,,হিয়ার মুখের উপর উড়ে আসা চুল টা কানের এক পাশে গুঁজে দিয়ে বেশ অনেকটা সময় সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নেশাভরা চোখে তাকিয়ে থাকে হিয়ার দিকে
উজানঃ এতো মায়াবতী হতে কে বলেছিলো তোমাকে,,তুমি জানো তোমার এই মায়া মুখের হাসি টা আমাকে রোজ কতো টা আসক্ত করে ,,আমি যদি এখন তোমাকে ভুল করে একটু ছুঁইয়ে দেই এর জন্য কয়টা থাপ্পড় আমার প্রাপ্য হবে একটু বলবা??????খুব বেশি কি,,কম হলে একটু ছুঁইয়ে দেখতাম তোমাকে_____আচ্ছা ঘুমিয়ে থাকো কিন্তু হ্যা একদম চোখ খুলবা না____একটুকু না বুঝছো,,,,
বলেই উজান আলতো করে হিয়ার কপালে একটা ছোট্ট করে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেয়
উজানঃ সরিইইই,,কি করবো সামলাতে পারি নি__তাই,,তবে ছোট্ট করে দিয়েছি কিন্তু এই এতটুকু দেখো,,এই এতটুকু!!!!