#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ০৮
#Arshi_Ayat
মোটা ভ্রূদ্বয় কুঁচকে স্তম্ভিত নয়নে আরব স্বর্ণের দিকে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে মৃদু আর্তনাদের কন্ঠে বলল,’মাই গড!পাগল হয়েছো?’
‘তুমি ছেড়ে দিতে পারলে আমি পারবো না কেন?’
আরব চুল টেনে ধরে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করলো।তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল,’আজকে পাঁচটায় জমা দেওয়ার শেষ সময়।তুমি পাঁচটার মধ্যে জমা দেবে প্রজেক্ট পেপার্স।’
‘তবে তুমিও দিবে।’
‘না।’
‘তাহলে আমাকে জোর করতে পারবে না।যদি তুমি দাও তবেই আমি দেব।’
‘আমি দেব না।’
‘তাহলে আমিও দেব না।বিয়েশাদি করে সংসার করবো তোমার সাথে।’
‘ফাইজলামি করছো?’
‘না,একদম সিরিয়াস।এ নিয়ে আর ফোর্স করবে না।এখন চলো একটু ঘুরে আসি।’
আরব উষ্ণ কন্ঠে বলল,’আমার ভাল্লাগছে না।গেলাম আমি।’
কথাটা বলেই আর দাঁড়ালো না হনহন করে হেঁটে চলে গেলো।আরবের যাওয়ার পানে চেয়ে স্বর্ণ কেবল হাসলো।আধ খাওয়া কফিটা খেতে খেতে ফোন দেখতে লাগলো।সুমন ছবি ছাড়ছে সকাল বিকেল।ফেসবুকে আসলেই ওর ছবি না চাইতেও সামনে চলো আসছে।আর ভাই-ভাবীও কম না।স্বর্ণ তিজনকেই আনফলো করে দিলো।মন চাইছিলো ব্লক করে দিতে কিন্তু ব্লক করলে ঝামেলা করবে।এমনিতেই ফিরে এসে কি সুনামি উঠায় সেটাই দেখার বিষয়।
অকারণে কিছুটা সময় বসে থেকে ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো স্বর্ণ।ক্যান্টিন থেকে বের হওয়ার সময় উচ্ছ্বাস আর ওর নতুন প্রেমিকার সামনাসামনি পড়লো।দু’জনই ওর দিকে তাকালো কিন্তু স্বর্ণ দূর থেকেই একবার দেখে দ্বিতীয় বার আর ফিরেও তাকালো না।ইদানীং উচ্ছ্বাস নামের মানুষটার প্রতি আর ভালোবাসা,মায়া কিছুই আসে না যেটা আসে সেটা হলো প্রচন্ড ঘৃণা।মেয়েরা যেমন উজাড় করে ভালোবাসতে পারে তেমনি ঘৃণাও করতে পারে।আর সেই ঘৃণাটা ভালোবাসার থেকেও প্রখর।না স্বর্ণ কোনো প্রতিশোধ নেবে না।কর্মফল বলে একটা কথা আছে সেটা উচ্ছ্বাস এমনিতেই ভোগ করবে সেটা দু’দিন আগে হোক বা পরে।
বাসায় এসে নিহারিকা খানমকে সাথে নিয়ে খালার বাসার দিকে চলল স্বর্ণ।ওরা আজকে আর কালকে দু’টো দিন থাকবে।পরেরদিন সকালে চলে আসবে।ওইদিনই ভাইয়ারা আসবে।স্বর্ণ খুব বুঝতে পারছে এসেই খুব বড় একটা ঝামেলা বাঁধবে।সুমন নিশ্চয়ই চাইবে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলতে।কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়।ভাবতে হবে কিছু একটা।ব্যাপারটা আরবকে জানানো উচিত?দ্বিধান্বিত হয় স্বর্ণ।
দু’টো দিন খুব ভালোমত কাটিয়ে এলো মা মেয়ে।বেশ অনেকদিন পর এত সুন্দর দু’টো দিন পার করলো ওরা।ভাইয়ারা এখনও আসে নি।মা জানালো সন্ধ্যার সময় আসবে ওরা।যাক সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ভালো থাকা যাবে।
সকালে নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লো স্বর্ণ।আজকে আরবকে সুমনের ব্যাপারটা শেয়ার করবে।কারণ এখনই সবকিছু না বললে পরে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হবে।সুমন এসেই একটা ঝামেলা লাগবে তাতে সন্দেহ নেই কিন্তু কথা হলো ব্যাপারটা আরব কিভাবে নেবে?ওকে এটা আরও আগে বলা উচিত ছিলো।ভার্সিটির কাছাকাছি আসতেই আরব মেসেজ করলো,’কোথায় আছো?
‘এইত কাছাকাছি।’
‘ক্লাসে যাবার আগে ক্যান্টিনে এসো তো।’
‘আচ্ছা।’
স্বর্ণ ক্যান্টিনে গিয়ে দেখলো আরব কফি খাচ্ছে আর গেমস খেলছে।ওকে দেখে বলল,’ওয়েট একমিনিট আউট হয়ে নি।’
স্বর্ণ হেসে বলল,’সমস্যা নেই।খেলো তুমি।এমনিতে ক্লাস করবো না আজকে।’
আরব ফোনেই চোখ রেখে বলল,’আমিও করবো না তাহলে।’
‘ফাঁকিবাজ হয়ে যাচ্ছো দিনদিন।’
‘ফাঁকিবাজ না বলো প্রেমিক হয়ে যাচ্ছো দিনদিন।’
স্বর্ণ উত্তরে কিছু না বলে হাসলো।তারপর আরও এককাপ কফি অর্ডার করে আরবের আউট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো।আউট হওয়ার পর আরব ফোনটা রেখে বলল,’কালকের জন্য সরি।আমি চাই নি তুমি প্রজেক্ট’টা ক্যান্সেল করে দাও।আবার এটাও ঠিক তুমি চলে গেলে আমিও একা হয়ে যাবো।পরে ভবলাম মন্দ হয় নি।প্রজেক্ট চুলোয় যাক।দু’জনে বিয়ে করে সংসারী হয়ে যাবো।’
কথাটা বলেই হাসলো আরব।ওর হাসিতে স্বর্ণও যোগ দিলো।হাসি থামতেই স্বর্ণ একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,’আমি কিছু বলতে চাই আরব।’
স্বর্ণের মুখভঙ্গি দেখে আরবও সিরিয়াস হয়ে এলো।বলল,’হ্যাঁ বলো।’
‘তোমাকে আগেই বলা উচিত ছিলো কিন্তু বলা হয়ে ওঠে নি।আসলে তুমি প্রপোজ করার কয়েকদিন আগেই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় ভাইয়ার এক বন্ধুর সাথে।সেসময়ে উচ্ছ্বাসের সাথে ব্রেকাপ হয় আমার।মেন্টাল ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাই আমি।বাধ্য হয়ে বিয়েতে মত দেই।কিন্তু এখন এটা গলার কাটা লাগছে।বের হবো কিভাবে বুঝতে পারছি না।’
আরব সব শুনে স্বর্ণর হাতের ওপর নিজের একটা হাত রেখে বলল,’সমস্যা নেই আমি আছি না।’
স্বর্ণ আরবের সুন্দর মুখশ্রীর দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে বলল,’আমাকে ক্ষমা করো,আরব।’
চলবে….