#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_05+06
#লেখনীতে-নন্দিনী নীলা
কাব্য রেগে আমার দিকে এগিয়ে এলো। আর আমার কাঁধের কাছে খামচে ধরলো। আমি ব্যাথায় ককিয়ে উঠলাম। একহাত দিয়ে সেফটি পিন কোমরের কাছ থেকে খুলে তা কাব্যের হাতে আঁচড় কেটে দিলাম। তখন তীব্র আলোর ঝামটা এসে পরলো আমাদের গাড়ির দিকে। আমি চিৎকার করে উঠলাম। যাতে কেউ আমাকে হেল্প করতে আসে। আল্লাহ সহায় ছিল গাড়ি থেকে কেউ নেমে এগিয়ে আসতে আসতে জোরে জিজ্ঞেস করল,
‘ ওখানে কি হচ্ছে?’
আমি কন্ঠ টা সেকেন্ডে চিনে ফেললাম এটা তো স্পর্শের কন্ঠ। আমি স্পর্শকে ডেকে উঠলাম, ‘ স্পর্শ আমাকে বাঁচান। আমি মারিয়া।’
কাব্য শয়তানটা কারো আসার শব্দ পেয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দৌড় দিল। আমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পরে গেলাম। আর হাঁটুতে ও হাতে ব্যাথা পেলাম। মনে হচ্ছে চামড়া ছুলে উঠে গেছে। আমি উঠার চেষ্টা করেও পারলাম না। ড্রাইভার কাব্যকে গাড়িতে তুলে শো করে গাড়ি ছেড়ে চলে গেল। আমি রাস্তায় পরে তা দেখলাম।
স্পর্শ অপর পাশ থেকে দৌড়ে আসলো আমার কাছে। অন্ধকারে তিনি আমার কাছে বসে পরলো। নিজের ফোন বের করে লাইট জ্বালিয়ে আমার মুখে ধরলো। আমার চোখে আলো লাগতেই চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম। স্পর্শ আমাকে এই অবস্থায় দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল। ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ তুমি? এই অবস্থা কি করে হলো। এই ভাবে বসে আছো কেন উঠে!’
আমি লজ্জায় বলতে পারছি না। হাঁটুতে আঘাত পাওয়ায় আমি উঠতে পারছি না।
স্পর্শ আমার থুতনিতে আঙুল দিয়ে স্পর্শ করলো। আমি ব্যাথা চোখ মুখ কুঁচকে নিলাম।
কাব্যের ধাক্কা খেয়ে আমি থুতনিতে ও আঘাত পেয়েছি।
স্পর্শ আবার জিজ্ঞেস করতে আমায় সব বলতেই হলো। আমি কান্না করে দিলাম। স্পর্শ কে এক এক করে সব বললাম। অন্ধকারে তার রিয়াকশণ টা আমি বুঝতে পারলাম না। স্পর্শ আমার কথা শেষ হতেই দাঁড়িয়ে পরলো। আর আচমকা আমাকে কোলে তুলে নিল। আমি চমকে উঠে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
স্পর্শ আমাকে নিয়ে সামনের সিটে বসিয়ে দিল। এবার আমি তার মুখ দেখলাম। খুব গম্ভীর লাগছে তাকে। আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি স্পর্শ। আমার শাড়ি খুলে বিচ্ছিরি অবস্থা। আমি কাচুমাচু মুখ করে শাড়ি পেঁচিয়ে বসে আছি। স্পর্শ নিজের সিটে বসে পরলো। তারপর পেছন থেকে ফার্স্ট এইড বক্স এনে আমার থুতনি ও হাতের ব্যান্ডেজ করে দিল। আমি ধুকপুক বুক নিয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। আর ব্যাথায় কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম।
‘ আর কোথায় আঘাত পেয়েছো বের কর।’
আমি লজ্জায় হাঁটুর কথা বললাম না।
‘ আর পাইনি।’
স্পর্শ আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল, ‘সিউর?
আমি ঢোক গিলে মাথা নাড়ালাম। স্পর্শ আমার চোখের দিকে চোখ রেখেই বলল,
‘ মিথ্যা কথা আমি পছন্দ করিনা। নেক্সট টাইম আমাকে মিথ্যা বলার সাহস করবে না।’
বলেই স্পর্শ আমার পা টেনে ধরলো। আর আমি কিছু বলার আগেই শাড়ি তুলে ফেলল। আমি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। স্পর্শ আমার আঘাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
চামড়া ছুলে গেছে সত্যি। স্পর্শ সেখানেও মলম লাগিয়ে দিল।
তারপর একবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সরে এলো। আমি জরোসরো হয়ে বসে আছি। স্পর্শ এক মনে ড্রাইভ করছে। হঠাৎ আমি রাস্তার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। এটা তো বাড়ি যাওয়ার রাস্তা না। এটা কোথায় যাচ্ছে। এটা তো আমার শশুর বাড়ির রাস্তা।
আমি আমতা আমতা করে স্পর্শকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম, ‘ আপনাদের বাসায় যাচ্ছেন কেন?’
স্পর্শ সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই উওর দিল, ‘ কারণ আমরা সেখানেই যাব এখন।’
‘ আমি তাহলে বাসায় যাব কখন?’
‘ আজ আর বাসায় যাওয়া হবে না তোমার। কাল আমি তোমাকে ওই বাসায় রেখে আসবো। এই অবস্থায় তোমাকে বাড়ি পাঠাচ্ছি না।’
‘ কিন্তু আব্বু আম্মু তো টেনশন করবে। আর ওই বাসায় থাকলে আব্বু রাগ করতে পারে।’
‘ সেসব আমি দেখে নেব। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।’
আমি আর বলার মতো কিছু পেলাম না। নিরবতা বিরাজ করলো আমাদের মাঝে। স্পর্শ গাড়ি পার্ক করে আমাকে কোলে তুলেই ভেতরে গেল। আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ছিলাম। আমাকে নামানো হলো সীফার রুমে। আমাদের পেছনে পেছনে বাসার সবাই চলে এসেছে।
আমার শরীরে ব্যান্ডেজ দেখে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে। স্পর্শ কাউকে কিছু বলছে না। শুধু বলেছে ছোট এক্সিডেন্ট।
সবাই ব্যস্ত হয়ে পরলো আমাকে নিয়ে। আমি বিছানায় বসে আছি। স্পর্শ আমাকে সবার কাছে সীফার বিছানায় রেখে চলে গেছে। আমি চুপ করে বসে আছি। একটু পর আমার জন্য এক সেট পোশাক নিয়ে এলো স্পর্শ। সেটা এনে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ শাড়ি পাল্টে এটা পরে নাও। আম্মু ওর খাবার টা রুমেই পাঠিয়ে দাও। পায়ে আঘাত আছে হাঁটতে পারবে না।’
‘ আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না। গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।’ স্পর্শের মা বলল।
স্পর্শ চলে গেল। স্পর্শের বড় ভাইয়ের বউ মোহিনী ভাবি খাবার আনতে চলে গেল। বাকিরা ও চলে গেল আমি আস্তে আস্তে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম। একদম ফিটিং হয়েছে ড্রেসটা। নীল ও সাদা রঙের থ্রি পিস টি। আমার থেকে অনেক মোটা সীফা ওর পোশাক আমার এতো ফিটিং হওয়ার কথা না। এটা তো আমার মাপের আমার জন্য কিনেছিল নাকি?
খোড়াতে খোড়াতে বাথরুমে থেকে হাত মুখ ধুয়ে এলাম। দরজা খুলতেই ফোন এনে কানে দিল শাশুড়ি মা। আব্বু লাইনে আছে। তিনি আমাকে সাবধানে থাকতে বলল। কিন্তু কন্ঠ শুনে বুঝলাম আব্বু নারাজ এখানে এসে থাকার সিদ্ধান্তে। আব্বু আমাকে বিয়ের আগে এই বাসায় আসার অনুমতি ই দিতে চাইছিল না। তবু সবার জরাজরিতে আসতে দেয় কিন্তু থাকা যাবে না বলেছে। আজ থাকতেও হচ্ছে এজন্য আব্বু রাগান্বিত কিন্তু এখন চলে এসেছি তাই কিছু বলতে পারছে না। কাল আমার খবর আছে। আমি ঢোক গিলে ফোন ফিরিয়ে দিলাম।
উনি কথা বলতে বলতে চলে গেলেন।
সীফা আর ভাবি এলো খাবারের প্লেট নিয়ে। তাদের সামনে আমার খেতে হলো। এর মাঝে আর স্পর্শের দেখা পায়নি। তিনি আর আসেন নি। আমি আগেই ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন সকালে উঠার পর সীফার থেকে জানতে পারলাম রাতে নাকি অনেক জ্বালিয়েছে স্পর্শ ওকে। একটু পর পর নাকি আমার জ্বর চেক করতে এসেছে। আমার নাকি জ্বর এসেছিল। কিন্তু আমি কিচ্ছু টি টের পাইনি।
‘ ভাইয়া আমাকে কতো জ্বালিয়েছে জানো। সারারাত নিজেও ঘুমায়নি আমাকেও ঘুমাতে দেয়নি। শেষে বিরক্ত হয়ে বলেছি তোমার বউকে তোমার রুমে নিয়ে সেবা করো আমাকে ঘুমাতে দাও।’
‘ সরি আমাকে ডাকলে না কেন। আমার তো কিছুই মনে নেই!’
‘ তুমি তাকিয়ে ছিলে তো। আর খুব জ্বর ছিল। আমি তোমার টেক কেয়ার করবো বলেছিলাম। কিন্তু ভাইয়া আমার উপর ভরসা করতে পারিনি। নিজেই তোমার মাথার কাছে বসে ছিল।’
‘ ওহ। তোমাদের খুব কষ্ট হয়েছে তাই না। আমি কাল বাসায় গেলেই ভালো হতো কিন্তু
‘ আরে মন খারাপ করছো কেন! আমি বলছি ভাইয়া তোমার কতো কেয়ার করে ভাব। একটু তেই কেমন পাগলামি করছিল।’
‘ এইটা কি তোমার ড্রেস?’
আমার পরনের থ্রি পিচ দেখিয়ে বললাম। সীফা বলল, ‘ না তো এটা আমার হতে যাবে কেন? আর আমার হলে কি তোমার হতো নাকি। আমি কতো মোটা আর তুমি একদম চিকনা। এটা তোমারই ভাইয়া এনেছে। তোমার জন্য কতো ড্রেস যে কিনে রেখেছে ভাইয়া হিসেব নাই।’
আমি অবাক হয়ে সব শুনলাম। তখনই স্পর্শ এলো এই রুমে। আমি দেখলাম তিনি কলেজ যাওয়ার জন্য একদম প্রস্তুত হয়ে এসেছে। আমি বসেই তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম তিনি সোজা আমার সামনে এসে আমার কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখলো বোধহয়। তখন আমি চোখ সরালাম। উনার এমন হুট করেই স্পর্শ করায় লজ্জা পেলাম। উনি সীফাকে বলল,
‘ তোর কলেজ নাই আজ?’
‘ আছে ভাইয়া।’
স্পর্শ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ বিকেলে আমি তোমাকে দিয়ে আসবো। অন্য কারো সাথে যাওয়ার দরকার নাই। আর আজ কলেজে যেতে হবে না।’
তখন আমার মিষ্টি কথা মনে পরলো আমি স্পর্শ কেই বললাম, ‘ আমার এক জায়গায় যেতে হবে।’
স্পর্শ ভ্রু কুটি করে বলল, ‘ কোথায়?’
আমি মিষ্টির বাবার কথা বললাম। স্পর্শ মিষ্টির বাবার নাম্বারে কল করে আমার কথা বলালো। তিনি সুস্থ আছেন কিছুই হয়নি। ওই শয়তান কাব্য মিথ্যা বলেছিল কাল। মিষ্টির সাথেও কথা বললাম ও জিজ্ঞেস করলো কাব্য আমার কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে নাকি । আমি পরে বলবো বলে রেখে দিলাম। স্পর্শ আমাকে তার সে না আশা পযন্ত থাকার কথা বলে চলে গেল।
যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকিয়েছিল। আর তখন আমাদের চোখাচোখি হয়ে যায়।
#চলবে….
#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_৬
#লেখনীতে-নন্দিনী নীলা
সেদিন বিকেলে স্পর্শ নিজে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। টুকটাক কথা হয়েছে গাড়িতে। বাসায় আসার পর আমি খুব ভয়ে ছিলাম এই বুঝি বাবা আমাকে বকবে কিন্তু তেমন কিছু হয়নি। বাবা ওই বাসায় থাকা নিয়ে আর কোন কথাই আমার সাথে বলেনি। স্পর্শ এসে বাবাকে কি বলে ম্যানেজ করে গেছে তারাই জানে।
পরদিন কলেজে আসলাম সবার পরে। এদিকে নিঝুমরা সবাই আমার থেকে নববর্ষের দিন আমার সাথে কি হয়েছে জানতে সবার আগে এসে বসে আছে। কারণ এখন তো আর ক্লাসে এক সাথে বসতে পারি না। তাই আড্ডাটা বাইরেই দিতে হয়। কিন্তু আমি আগে আসতে চেয়েও আসতে পারলাম না। ঘুম থেকে উঠতেই লেট হয়েছে কোন রকম দৌড় এর উপর দশ মিনিট পর প্রথম ক্লাস উপস্থিত হলাম। স্পর্শ মনোযোগ সহকারে অংক বুঝাচ্ছিলেন
তখন আমি দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাঁপাতে হাঁপাতে বলি,
‘মে আই কাম ইন স্যার!’
স্পর্শ ব্লাক বোর্ড থেকে চোখ সরিয়ে সরিয়ে আমাকে আসার অনুমতি দেয়। আজ আর প্রথম সিট খালি নাই। আমাকে গুনে গুনে আগের সেই পেছনের সিটে গিয়ে বসতে হলো। সব সময় সামনে বসে আজ একা পেছনে বসতে কেমন জানি লাগলো। মিষ্টি কে দেখলাম আজ সামনে বসেছে। সবাই এক থেকে তিন সিটের মাঝে আছে আমি একা এই পেছনে বসলাম। আমার পাশে আছে আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে লম্বা মেয়ে জয়ন্তি। আমার দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকালো। আমি মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে ব্যাগ থেকে খাতা কলম বের করে বোর্ডে থেকে অংক তুলতে লাগলাম।
প্রথম ক্লাস শেষ হতেই মিষ্টি আমাকে টেনে বেরিয়ে এলো ক্লাস থেকে। দুজনে ক্যান্টিনে এসে বসলাম। তারপর কালকের সব কথা বললাম মিষ্টি কে।
‘ মারু ওই কাব্য শয়তানটা কাল আমাকে মিথ্যা বলে পাঠিয়ে তোর সাথে অসভ্যতামি করতে চেয়েছিল তাই না। ও ওর শাস্তি পেয়েছে। আজ কি শুনলাম জানিস? কালকে নাকি কারা কাব্য ও ওর চাচাতো ভাই সোহেল যে অটো চালায় দুজনকে খুব মার মেরেছে। মেরে একদম হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে দিয়েছে। দুজনে এখন হসপিটালে ভর্তি। ওদের জিজ্ঞেস করলে বলেছে যে মেরে সে নাকি মুখ ঢেকে এসেছিল তাই ওরা মুখ দেখতে পারেনি। এমন মারের কারণ ওরাও জানে না।’
আমি বিস্মিত হলাম সব শুনে।
‘ স্যার ঠিক সময়ে না আসলে তোর কি হতো ভাবতে আমার শরীরে কাঁটা দিচ্ছে। আমি বাসায় পৌঁছানোর পর থেকেই চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছিলাম। তোর আপুর নাম্বারে ও কল করেছিলাম তুই ঠিক মতো পৌঁছেছিস কিনা জানতে। তিনি বলল তুই নাকি স্পর্শের সাথে আছিস। তখন আমি শান্ত হয়েছি। তোর সাথে কথা বলার ইচ্ছা রাতে থাকলেও স্যারের নাম্বার নাই তাই সম্ভব হয়নি।’
‘ থাক আর টেনশন করিস না। আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছে। স্পর্শকে ঠিক সময় উপস্থিত করেছিলেন আমি বেঁচে গেছি।’
নিঝুম, ধারা ছুটে এসে বসলো চেয়ার টেনে। আর জানতে চাইলো সব। আমি আর কিছু বললাম না সব মিষ্টি ওদের বলল ওরা ও গালি দিতে লাগলো কাব্য কে আর স্পর্শকে নিয়ে ভালো কথা যা শুনে আমার মনে লাড্ডু ফুটছিল।
দ্বিতীয় ক্লাস আর করা হলো না। আমরা ক্যান্টিনে বসে এটা ওটা খেতে লাগলাম। স্পর্শের দ্বিতীয় ক্লাস ফার্স্ট ইয়ারের। তাকে ফার্স্ট ইয়ারের কমার্সের ক্লাস থেকে বের হতে দেখলাম আমি। তিনি বারান্দায় থেকেই আমাদের ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিতে দেখলো। তারপর চলে গেল অফিস রুমে।
টেবিলে দুহাত ভাঁজ করে মাথার ঠেকিয়ে ওদের কথা শুনছি আর স্পর্শের কথা ভাবছি তখন হঠাৎ স্পর্শের আওয়াজ শুনতেই চমকে মাথা উঁচু করলাম। আমাদের টেবিলের সামনে স্পর্শ দাঁড়িয়ে আছে। আর ক্লাস বাদ দিয়ে এখানে আড্ডা দেওয়ার জন্য কথা শুনাচ্ছে। নিঝুম রা মাথা নিচু করে স্পর্শের কথা শুনছে। আমি ও তারাতাড়ি দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।
‘ ক্লাস বাদ দিয়ে এখানে কিসের আড্ডা চলছে হ্যা। তোমাদের ক্লাসে এক সাথে বসতে মানা করেছি এখন বাইরে এসে আড্ডা দেওয়া শুরু করছো।’
মিষ্টি আচমকা বলে উঠলো, ‘ স্যার আপনি আমাদের সব সময় এই ভাবে অত্যাচার করেন কেন বলেন তো। আমাদের বান্ধবী কাল কত বড় একটা বিপদে পরেছিল তাই নিয়ে আমরা একটু সুখ দুঃখের কথা বলছিলাম আর আপনি চলে এলেন আমাদের বকতে এটা কিন্তু ঠিক না।’
নিঝুম তখন হঠাৎ করে বলে উঠল, ‘ আপনি তো আমাদের শুধু স্যার না। আপনি আমাদের দুলাভাই হোন। খালি শাষণ না করে একটু তো মিষ্টি কথাও বলতে পারেন শালিকাদের সাথে। চার মাত্র শালিকা আপনার দুলাভাই হয়ে একদিন আমাদের ট্রিট ও দিলেন না উল্টা খালি কড়া শাসন করেন। কতো স্বপ্ন দেখেছিলাম দুলাভাই স্যার হয়েছে এবার বুঝি ম্যাথের প্যারা দূর হবে।’
স্পর্শ বলল, ‘ এখানে না আমি তোমাদের দুলাভাই আর না তোমরা আমার শালিকা। এখানে আমাদের একমাত্র সম্পর্ক স্যার স্টুডেন্ট এর। তাই কলেজে বাইরে এই ট্রিট ফিটের কথা বলো। তাই চুপচাপ ক্লাসে যাও সবাই।’
মিষ্টি মুখ কালো করে বলল, ‘ স্যার রুপে দুলাভাইয়ের প্যারায় আমাদের জীবন শেষ হয়ে গেল।’
আমি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ওদের কথোপকথন গিললাম। নিঝুম যে এইভাবে কথা বলবে ভাবিনি। আর স্পর্শ এতোটা স্বাভাবিক ভাবে উওর দিবে তাও কল্পনা করিনি।
সবাই কম বেশি ভালোই খেয়েছি মিষ্টি টাকা নিয়ে বিল দিতে গেল তখন ক্যান্টিনের মামা টাকা নিল না। পাশে স্পর্শ দাঁড়িয়ে আছে। মিষ্টি কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ টাকা নিচ্ছেন না কেন মামা। আমাদের কি ফ্রী খাওয়ালেন নাকি?’
ক্যান্টিন মামা কিছু বলার আগে স্পর্শ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ শালিকাদের আবদার কি না রেখে পারা যায়! তাই আজকের বিল না হয় আমিই দিলাম।’
‘ এই না বললেন আপনি কলেজে শুধু আমাদের স্যার তাহলে বিল কেন দিলেন?’
‘ বিশেষ কারো জন্য দিলাম। স্যার হই বা দুলাভাই সব তো তার জন্যেই।’
‘ মানে?’
‘ নাথিং।’
আমার দিকে চোখ রেখেই স্পর্শ কথা বলছে। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি দুজনের দিকে এক্সজেকলি ওরা কি নিয়ে কথা বলছে বুঝতে চেষ্টা করছি। কিন্তু এতো দূর থেকে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। মিষ্টি টাকা ফেরত এনে সবাইকে সবার টাকা দিয়ে দিল। তখন ও নিজের গরগর করে সব বলে দিল।
.
বাসায় লেগে গেছে বিয়ের ধুম। আপু এখন দিনের অর্ধেক বেলা পরে থাকে পার্লারে। মুখ আর চুল নিয়ে তার কতো কি করা আমি নিরব মানুষ খালি দেখে যাই। আপুর ধৈর্য আছে বলা যায় সারদিন এটা ওটা মুখে মেখে বসে থাকে।
কাল শুনলাম আজ নাকি মাহিন ভাইয়ার সাথে আপুর শপিং মলে যাওয়ার কথা বিয়ের ড্রেস চুজ করার জন্য। সেজন্য আমাকেও নেওয়া হবে আমি থ্রী পিচ আর মাথায় হিজাব পরে বসে আছি। আপু সাজছে। ভাইয়ার কল পেয়ে আমাকে তারা দেখিয়ে ছুটে নিচে এলো। আমার জন্য নাকি তার লেট হচ্ছিল নিচে এসে বলল। আমি চোখ বড় করে আপুর বানোয়াট কথা শুনছি আর নাক ফুলাচ্ছি রাগে। এই জন্য ছোট হতে নেই। লেখিকা নন্দিনী নীলা এই বড় বোনের দোষ গুলা সব সময় তারা ছোট দের উপর দিয়ে বসে থাকে। রাগে গজগজ করে গাড়িতে পেছনে গিয়ে বসতেই স্পর্শ কে নজরে এলো তিনি বসে ফোন টিপছে। আমি চেঁচিয়ে চমকে উঠলাম আচমকা তাকে দেখে। তারা তারি গাড়ি থেকে নেমে আপু জিজ্ঞেস করলাম এসব কি? তিনিই বললেন তিনি আব্বু নাকি স্পর্শ কেও আস্তে বলেছে আমি কোমরে হাত দিয়ে আপুকে বললাম,
‘ তুমি আমাকে আগে বলবা না উনি আসবে।’
” কেন কি হয়েছে?’
‘ নিজে তো খুব সুন্দর করে সেজে এসেছো। আর আমি খালি একটু পাউডার মেখে চলে এলাম। উনি আসবে জানলে আমি একটু সাজতাম। তুমি আমাকে আগে কেন বললে না। আমি এখন যাব না!’
‘ বোন আমার তোকে না সাজতেই এতো সুন্দর লাগছে কি বলবো। দয়া করে আর ঝামেলা করিস না আজ আমার বিয়ের শপিং চল প্লিজ।এমন না হয় তোর জন্য আমার শপিং টা ভেস্তে যায়। এমনিতেই আমার শাশুড়ি নিজের পছন্দে আমার বিয়ের ড্রেস চুজ করতে চেয়েছিল অনেক বলে আমি মাহিনকে রাজি করিয়েছি। এখন আর তা ভেস্তে যেতে দিস না বোন।’
আপুর এই ইমোশনাল মার্কা কথা শুনে আর কি করার আমি রাজি হলাম। আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। স্পর্শ আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
‘ কোনো সমস্যা?’
আমি মুখে মেকি হাসি এনে বললাম, ‘ না তো। আসসালামু আলাইকুম!’
স্পর্শ সন্দেহে চোখে তাকিয়েই সালামের উত্তর নিল। আমি আবার বললাম,
‘ ভালো আছেন?’
‘ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি ঠিক আছো? ওই ভাবে চলে গেলে কেন?’
আমি ঢোক গিলে বললাম, ‘ না মানে আসলে আমি একটা জিনিস রেখে এসেছিলাম তাই!’
‘ ওহ আচ্ছা। আমি ভাবলাম তুমি বোধহয় ভূত দেখে চেঁচিয়ে উঠলে।’
আমি কাচুমাচু মুখ করে বললাম, ‘ সরি কিছু মনে করবেন না। আমি মাঝে মাঝে এমন চেঁচিয়ে উঠি।’
‘ আমি তো কিছু মনে করিনি। ভাবলাম তোমার কি হলো এমন চিৎকার করলে কেন?’
আমি আর কিছু বললাম না। সব আশ্চর্য জনক ঘটনা আমার সাথেই ঘটতে হয়।
#চলবে…
( গল্পটা কেমন লাগছে পাঠকদের কাছে গঠনমূলক মন্তব্য চাই। ধন্যবাদ ভালোবাসা অবিরাম ❤️)