#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_২
#লেখনীতে-নন্দিনী নীলা
‘ নতুন স্যার তোর হবু বর!’ বিষ্ময়ের হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলো নিঝুম।
আমি মাথা দুলিয়ে হ্যা বললাম।
মিষ্টি লাফিয়ে উঠলো, ‘ দোস্ত আমার যে কি খুশি লাগছে রে। এতো ঝাক্কাস একটা খবর দিলি তোরে আমার চুমাইতে ইচ্ছে করছে।’
আমি নাক ছিটকে মিষ্টি কে বললাম, ‘ ছিহ তোর জামাইরে চুমা গিয়া আমার পিছে পরছত কেন? আর এতো খুশি হলি কেন?’
‘ খুশি হবো মানে। ম্যাথ নিয়া প্রতিবার আমরা টেনশনে থাকি। এহন আর কোন টেনশন নাই। তোর জামাই মানে আমাদের দুলাভাই। সে তো এখন সেই সুবাদে আমাদের পাশ করিয়া দেবে। আর তোরে তো ফার্স্ট করে দেবে কি শান্তি আকাশে বাতাসে আর ম্যাথ নিয়া চিন্তা করা লাগবে না। নো চিন্তা ডো ফূর্তি। আমি আর ম্যাথ বই খুইলা দেখুম না দোস্ত দুলাভাই রে পটাইয়া পাশ কইরা যামু! তাই নারে নিঝুম , ধারা, সিনথি।’
ধারা আর নিঝুমের চোখ ও চিকচিক করতে লাগলো। নিঝুম মিষ্টি রে জাপ্টে ধরে বলল,
‘ এই কথাটা তো আমার মনেই ছিল না। কি বুদ্ধি রে তর। কোন দিন আমি ট্রিট দেয় নাই আজকে আমি মারুরে ট্রিট দিমু। যা ইচ্ছে খাওয়াবো আজ। আমার আর ম্যাথ করতে হবে না কষ্ট করে। আহ শান্তি!’
আমি ওদের ছেছড়ামকির দেখছি দাঁত চেপে। ওই লোকটা জীবনের আমার লগে ভালো করে দুইটা কথা কইলো না।আজ না চেনার ভান করলো তিনি নাকি আমাদের হেল্প করবে গাধার দল। কিন্তু ফ্রী ফ্রী ট্রিট পেলে সমস্যা কি! আমি শয়তানি হাসি দিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। কোন সুবিধা পাব না খুব ভালো করেই জানি উল্টা অসুবিধা হবে। কিন্তু এখনি ওদের কিছু বলা যাবে না। না হলে আমার খাতির যত্নের অভাব হবে। একটু খাতির যত্নের খুব প্রয়োজন আমার। আহা আজ ইচ্ছে মতো খাব তিনজনের টাকা আজ শেষ করেই ছাড়বো।
আমি ভাব নিয়ে ক্লাস শেষ করলাম। ছুটির পর গেটের কাছে স্পর্শ কে দেখলাম ফোনে কথা বলছে।আমি আড়চোখে তাকাতাকি করতে করতে পাশের রেস্টুরেন্টে চলে এলাম। স্পর্শ ভুল করেও আমার দিকে তাকায় নি। আমি গোমড়া মুখে চলে এলাম।
আমি আর মিষ্টি একপাশে বসলাম। আমাদের সামনে মুখমুখি হয়ে বসেছে নিঝুম আর সিনথি। ধারা আলাদা পাশে।
ধারা বসেই বলল,
‘ এই মারু দুলাভাই এর সাথে সাক্ষাৎ করাবি কবে।’
‘ করাবো নি একদিন আগে অর্ডার করে নেয়।’
নিঝুম বলল, ‘ দোস্ত স্যার মানে দুলাভাই তোর দিক একবার তাকাল ও না কথা তো দূরে থাক! তুই আমাগো মিছা কতা কস নাই তো আবার।’ সন্দেহে চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি বললাম, ‘ ওকে তোরা তোদের সন্দেহ নিয়ে থাক আমি চলি। আমি আর যাই করি না কেন কোনদিন মিথ্যা বলি না তাও তোরা এটা বলতে পারলি। খাওয়াতে হবে না।’
মিষ্টি আমাকে টেনে বসিয়ে দিল।
‘ থাক আর ঢং করতে হবে না। বস। আমরা জানি তুই মিথ্যে বলিস নাই। কিন্তু আমাদের স্যারকে নিয়ে টেনশন হচ্ছে কেমন জানি একটা।’
আমি ঠাস করে বললাম, ‘ ভাব ওয়ালা, গোমরামুখো! ওনার ভাব আমি ছুটাবোই তোরা খালি আমার সাথে থেকে হেল্প করিস।’
‘ ওকে জানু।’
পেট পুরে খেয়ে বেরিয়ে এলাম। এবার আমি আর সিনথি এক রাস্তায় যাব তাই ওকে নিয়ে অটোতে উঠে বসলাম। ওদের থেকে বিদায় নিয়ে। সিনথি একদম শান্ত শিষ্ট টাইপের। এজন্য সবগুলার কথার মাঝে ও খালি থাকে কথা শুনতে ও কথা বলে কম আর বললেও বুঝে শুনে। যাই হোক ও আগেই নেমে গেল আমি বাসায় আসতেই দেখলাম আপু আগেই চলে এসেছে। তিনি বিছানায় উল্টাপাল্টা হয়ে শুয়ে প্রেম আলাপ করতে ব্যস্ত দুলাভাই এর সাথে। আমার কাছে চাবি আছে আমি চাবি দিয়ে খুলে ভেতরে এসেছি তাই আপু আমার আসার শব্দ পায়নি। আমি এই সুযোগটা কাজে লাগালাম। পেছনে থেকে জোরে চেঁচিয়ে উঠলাম আপু ভয়ে একদম বিছানায় থেকে থপ করে নিচে পরে গেছে।
আমি তা দেখে পেট চেপে গলা ফাটিয়ে হেসে উঠলাম।
আপু রেগে আমার দিকে ছুটে এলো মারতে আমি দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলাম।
‘ মারি দরজা খুল আজ তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে। আমার কোমর ব্যাথা করছে এমন মজা কেউ করে। এখনো কি বাচ্চা টি আছিস যে এমন করিস। কয়দিন পর বিয়ে দিয়ে দেব এখনো তোর বাঁদরামি গেল না তাই না।’
‘ আপু দুলাভাই কে লাইনে রেখে তুমি আমাকে এ ভাবে বকছো ছিহ তুমি যে ঝগড়ুটে দুলাভাই কে না জানালে চলতো না।’
আপুর আর কথা শুনলাম না। আপু চলে গেছে।
আমি গোসল করে আপুর কাছে এলাম। স্পর্শের কথাটা তো জানাতে হবে নাকি।
‘ আপু তোমার সাথে আমার ইমপর্টেন্ট কথা আছে!’
‘ কি কথা।’
‘ আপু উনি না আমার কলেজে জব নিয়েছে।’
‘ উনিটা আবার কেন?’ কপাল কুঁচকে।
‘ ধুর ওই স্পর্শ উনি। আজ আমাদের ক্লাস নিয়েছে। ম্যাথ টিচার।’
‘ বলিস কি? সত্যি!’
‘ হ্যা। তোমরা আগে থেকেই জানতে তাই না উনি আমার কলেজে প্রফেসার হয়ে আসবে।আমাকে বলো নি কেন আমি কতোটা চমকেছি জানো?’
‘ কি যাতা বলছিস আমি জানব কি করে? আমি কিছুই জানতাম না। এই মাত্র জানতে পারলাম।’
‘ মিথ্যা বলছো তুমি সব জানতে।’
‘ আরে বাবা শুনেছিলাম।কোন কলেজে নাকি জব হয়েছে। কিন্তু সেটা যে তোর কলেজ জানতাম না।’
‘ সত্যি তো?’
‘ একদম। তোর সাথে কথা হয়েছে?’
‘ নাহ। আমাকে চেনে না এমন ভাব করছে। উনার এতো ভাব কেন বলোতো। আমার মনেই হয়না উনি আমাকে ভালোবাসে।’
‘তাই। তো কি করলে মনে হবে ভালোবাসে?’
‘একটু কথাও বলে না। দেখো আমি আগে কথা বল ছিলাম। তাও আর কথা বলার চেষ্টা করলো না। আবার আমিই তাদের বাসায় যায় তাকে দেখতে কিন্তু তার পাত্তা পাওয়া যায় না। আমি আশেপাশে থাকলে তিনি খেয়াল ই করে না এ কেমন ভালোবাসা?’
‘ বাবাগো কি প্রেম। আজ আসছে তো দেখুম নি। আজ তুই কথা বলিস দেখি কেমন ভাব দেখায় আমার বোনের লগে।’
আমি লাফিয়ে উঠে বললাম, ‘ আপু কি বললে? আজ আসছে মানে!!’
‘ হুম আজ তোর মাহিন ভাইয়া ও তার বাবা মা আসবে বিয়ে ফাইনাল কথা বার্তা বলতে। তাই মা স্পর্শ দের কেউ ডেকেছে।’
‘ মা বাবা কোথায়?’
‘বাজারে গেছে আংটি আনতে আজ বোধহয় আমার এনগেজমেন্ট টা হয়ে যাবে।’
‘আগে বলবা না। আমি তারাতাড়ি ড্রেস চুজ করি যাই। আজ কোন ড্রেসটা পরবো বলতো আপু।’
বলেই দৌড়ে আলমারি খুলে সব ড্রেস বের করলাম।
আমার সব চেয়ে ফেবারিট জাম কালারের থ্রি পিচ বের করে রাখলাম। আপুকে বললেও আমি নিজেই নিজের ড্রেস পছন্দ করেছি। মা বাবা আসলো একটু পরই।
মা এসে রান্নাঘরে ঢুকে গেল। পাশের বাসা থেকে আমার আন্টি এলো এক। তিনি আর কাজের আন্টি তিনজনে কাজে লেগে গেল। আপুও তাদের হেল্প করছে আমি একমাত্র ফ্রী কাজ করতে বললেও আমি তার ধারের কাছেও যাচ্ছি না। ড্রেস পরে চুল গুলো ছেড়ে মুখে পাউডার দিয়া হালকা লিপস্টিক দিয়ে পরিপাটি হয়ে ঘুরছি খালি। আজ আমি উনার সাথে কথা বলবই সামনাসামনি। আমি ঢুলতে ঢুলতে রান্না ঘরে গেলাম। মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ একটু কাছে হাত লাগাতে পারিস তো নাকি। খালি টইটই করে ঘুরা। আগেই সাজগোজ করে বসে আছিস। যা একটু লেবু আর শসা কাট। তারপর শরবত কর।’
‘ আমি এখন কিছু করতে পারবো না মা। আমাকে মুরগির পা টা দাও না একটু খাই। কতো কিছু রান্না করলা কিছু তো খেতে দিবা না। সব খালি তাদের জন্য তাইনা। আমি যে তোমার একমাত্র ছোট মেয়ে ভুলে গেছ।’
‘ খালি খাওয়া খাওয়া। কাজের বেলায় অষ্টর্মভা!’
‘ আমি আজ এসে খাইনি আপুর কাছে শুনে দেখ। এই আপু বল আমি কি আজ খাইছি এসে। একটা পা ই তো চাইছি তাই এমন করলা ধুর খাবই না।’
‘ না খেলি কাম কর একটু।’
রাগে গজগজ করে লেবু আর শসা নিয়ে বসলাম। রান্নাঘরে কাজ শেষ করে মা চলে গেল। সব ঠিক করে রেখে আমি একাই বসে শসা ছুলছি। আমার কাজ ও শেষ করে আমি উঠে পা নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। মা এসে তা দেখে এক ধমক দিয়ে ড্রায়নিং টেবিলি খাবার রাখতে লাগল।লেখিকা নন্দিনী নীলা পরিপাটি করে নিজে ফ্রেশ হতে গেল। আপু গোসল খানায় আমি সোফায় বসে খাচ্ছি তখন কলিংবেল বেজে উঠল। আমি লাফিয়ে উঠলাম সবাই চলে এলো নাকি। আধ খাওয়া পা ফেলে ওরনা মাথায় দিয়ে দরজা খুলতে গেলাম। কিন্তু দরজা খুলে নিরাশ হলাম পাশের বাসায় আন্টি এসেছে।
তিনি দাম কেলিয়ে ভেতরে এলো। আমি মুখ কালো করে রুমে এসে দেখি আপু শাড়ি পরতেছে। হাতে ফোন আমাকে দেখে বলল,
‘ মাহিনরা চলে আসছে। পনেরো মিনিট লাগবে। ফোন করে বলল শাড়ি পরতে।’
‘ হাউ সুইট।আমার জন জীবন এটাও বলতে কল দিল না। হায় ফাটা কপাল আমার।’
আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ মারু রে তুই ও শাড়ি পর।’
‘ শাড়ি পরে পাগল সাজতে যাব কোন সুখে? তোমার মাথা গেছে নাকি মনে আছে পাঁচ বছর আছে সেই সুইটি আপুর বিয়েতে শাড়ি পরে কি অবস্থা হয়েছিল আমার। আমি আর এই শাড়ির পক্ষে নাই।’
‘ সেটা তোর ইচ্ছে। তখন ছোট ছিলি। এখন তো বড় হয়েছিস। কিন্তু শাড়ি প্রতিটা ছেলের দূর্বলতা। তুই যদি স্পর্শের সামনে শাড়ি পরে যেতি দেখতে পেতি ও কেমন হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে তোর দিকে।’
‘ দরকার নাই।’
ঠিক পনেরো মিনিট পর বেশ বাজলো। এখন মাহিন ভাইয়ারা আসছে আমি সিউর। কারণ আপু তো তাই বলল মাহিন ভাইয়ার আস্তে পনেরো মিনিট লাগবে। আমি দরজা খুলবো এবার আর ওরনা মাথার দিলাম না। দুলাভাইয়ের সাথে একটু মজা করাবো। তাই ওইভাবেই চলে গেলাম দরজা খুলতে কিন্তু আমার যে কপাল খারাপ এজন্য তো দরজা খুলে সামনে তাকাবো তখন ওই পাশের বাসার আন্টি কি বলতে বলতে দৌড়ে দরজার দিকে আসছিল। আমাকে খেয়াল না করেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তিনি চলে গেল দিকবেদিক হয়ে। আমি আচমকা ধাক্কা খেয়ে তাল না সামলাতে ফেলে সামনের দিকে চলে গেলাম। আর একজনের বুকে গিয়ে পরলাম। হায় কি সর্বনাশ! আমি এটা কার বুকে পরলাম। ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে রাখা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি একটা পরিচিত মুখ। তিনি হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি। পাশ থেকে হাসির আওয়াজ আসছে। বড় লজ্জায় সেদিকে তাকিয়ে দেখি সীফা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
আমি লজ্জা মিশে যাচ্ছি একদম।
#চলবে….
( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)