চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️ #পর্ব_২১ #লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

0
260

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_২১
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

‘তোর মুখটা এমন লাল হয়ে আছে কেন রে? কার উপর এত রেগে আছিস?’

কলেজে পৌঁছাতেই নিঝুম আমার দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ল। আমি রাগী চোখে মাঠে থেকেই স্পর্শের কেবিনের দিকে তাকিয়ে আছি। নিজের বউকে নিয়ে কলেজ সে ভেতরে আসতে পারে না। কিন্তু অন্য মেয়েকে নিয়ে ঠিকই সারা কলেজ ঘুরতে পারে। এই না হলে আমার বর। খুব কপাল করে এমন জামাই পেয়েছি। আমার ভবিষ্যৎ জীবন যে অন্ধকার আমি এখন থেকেই দেখতে পাচ্ছি। আমার কার সাথে বিয়ে হয়ে গেল আল্লাহ। এ তো আমাকে এখন পাত্তাই দেয় না। দিল আবার কবে সবসময়তো এমনটাই করে। হনুমান একটা।

‘ এই মারু কই হারাই গেলি।’ মিষ্টির এক ধাক্কায় আমি নিঝুম এর উপরে পড়ে গেলাম।

বিরক্তকর চোখের মিষ্টির দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসলাম।

‘তোদের সমস্যা কি আমাকে কি? কোন কিছু ভাবতেও দিবি না। আমি খুব রেগে আছি তোরা চুপচাপ বসে থাক না হলে চলে যা।’

‘কি ভাবছিস? আর রেগে আছিস কেন? কার উপর রেগে আছিস। সব বল আমাদের না হলে তোকে কিছুই ভাবতে ও দেবো না আমরা।’

‘ এতো জ্বালাস কেন বলতো? আমি সত্যি খুব টেনশনে আছি। ‘

‘ ওরে বইন টেনশন টা কি বলবি তো?’

‘ কি বলবো? আর বললেই বা কী তোরা কি কিছু ঠিক করতে পারবি। সব জ্বালা আমাকে সহ্য করতে হবে। তোরা তো কিছুই করতে পারবি না তাই আর জানতে চাস না আমাকে আমার মত থাকতে দে।’

‘ কিছু করতে পারবো কিনা আগে বল জেনে নেই। করতেও তো পারি এমন হলো তোর সমস্যার সমাধান আমরাই করে দিলাম। আল্লাহ হয়তো আমাদের হাতে তোর সমস্যার সমাধান রাখছে।’ নিঝুম বললো।

‘ আমাকে ও‌ই স্পর্শ পাত্তা দেয় না সব সময় খালি কষ্ট দেয়। আমার সামনে অন্য মেয়েদের সাথে ঘোরাঘুরি করে। আর আমাকে নাকি এত ভালোবাসে কিন্তু নিজের মুখে এখন অবধি আমাকে প্রপোজ অবধি করে নি এত আনরোমান্টিক। আমাকে একটু বোঝো না।’গালে হাত দিয়ে মন খারাপ করে বললাম।

‘ আহারে মারু তোর এতো কষ্ট! আমার বুকটা ফাইটা যাইতেছে তোর কষ্ট দেইখা।’ কান্না কান্না করে মিষ্টি বলল।

আমি চোখে পাকিয়ে ওর দিকে তাকালাম।

‘ এই একদম চোখ রাঙাবি না আমাকে।তোর জামাইরে তোর পেছনে যদি পাগলের মতো না পড়েছি তো আমার নাম ও মিষ্টি না। তোকে চোখে হারাবে। আর লাভ ইউ বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলবে।’

আমি বিশ্মিত চোখের দিকে মিষ্টির দিকে তাকালাম।
আমার সামনে বসে ওরা তিনজন স্পর্শকে নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিল। কিভাবে আমার দুঃখ কষ্ট গোছাতে পারে। সেই চেষ্টায় বিভোর ওরা। আমি গালে হাত দিয়ে ওদের পরিকল্পনা করা দেখছি। ওদের জঘন্য একটা পরিকল্পনা দেখে আমি হতভম্ব। এইসব কি পরিকল্পনা করছে। আমাকে ও নাকি এই সবে শামিল হতে হবে ইম্পসিবল। আমি স্পর্শর সামনে এসব কিছুই করতে পারবোনা।

‘ পারবি আর তোকে করতেই হবে। যদি না করিস তাহলে কিন্তু আর জামাইয়ের মুখে ভালোবাসি শুনতে পারবিনা। মনে রাখিস।সারাজীবন আনন্দে থাকার জন্য একটু অ্যাক্টিং করলে সমস্যা ?’

‘তাই বলে আমি অন্য একটা ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করব ঘোরাঘুরি করব তাও স্পর্শের সামনে? তোরা ভুলে যাচ্ছিস! স্পর্শ আমার হাজব্যান্ড তার কিন্তু আমার উপর অধিকার আছে আমি এসব করলে আমাকে চর মারবে।’

‘ হ্যা জানি। তোকে আর প্রেম করতে বলি নাই। শুধু তুই দুইটা কথা বলবি তাও স্পর্শ স্যারের সামনে। আর কিছু না।’ মিষ্টি অনুরোধ কন্ঠে বলল।

নিঝুম ধারা এসে ওবলতে লাগল।

ধারা বলল, ‘ আমরা তোর জন্য এত সুন্দর একটা প্ল্যান করলাম আর তুই এখন পাল্টি খাচ্ছিস।’

নিঝুম বলল, ‘ স্যার কে দেখিয়ে জাস্ট কয়টা কথা বলবি তুই দেখবি তাতে কাজ হয়ে যাবে। তুই যে স্যারকে অন্য মেয়ের সাথে দেখে জেলাস ফিল করছিস। সেটা তো স্যার বুঝছে না। কিন্তু এখন যদি সেই কাজটা করিস তাহলে ভাইয়া দেখে জেলাস হবে তখন বুঝবে।’

ওদের বোঝানো দেখে আমিও গলে ক্ষীর হয়ে গেলাম।সেই সুযোগ ওরা নিলো। নিঝুমের লুকিয়ে রাখা ফোন বের করে ওর দুঃসম্পর্কের এক খালাতো ভাইকে ফোন করে ছুটির পর ডাকলো। সে নাকি আমাকে এমনিতেই একটু একটু পছন্দ করতো। পছন্দ করে শোনার পর আমি তাকে আসতে মানা করলাম। কিন্তু ওরা বললো সেই আসলে না কি খেলা জমবে ভাল। শামিম আমাকে অসীম ভালোবাসে তাই শামিম আসলে স্পর্শ তার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখে আরো জেলাস ফিল হবে। ভালো করে। আমি ও আর কিছু বলতে পারলাম না ওদের কথার উপর।

কলেজ শেষে সত্যি সেই শামিম এসে হাজির কলেজের সামনে।আমার এক হাত মিষ্টি আর এ হাত নিঝুম ধরে বেঁধে শামিমের সামনে নিয়ে আসলো। আমি দূর থেকেই দেখতে পেলাম ওই শামিম আমার দিকে কেমন করে হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকিয়ে স্পর্শ কোন জায়গায় আছে কিনা দেখতে দেখতে এসেছি।

সামনে এসে দাঁড়াতেই দুই পাশ থেকে মিষ্টি আর নিঝুম আমার হাত ছেড়ে তিনজন একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। আমার কানে যাওয়ার আগে মিষ্টি ফিসফিস করে বলে গেছে‌। আমি যেন শামিমের সাথে পাঁচ মিনিট হলেও কথা বলি আর ওর কথাগুলো হজম করি। আমি ঢোঅ গিলে মাথা নাড়লাম। স্পর্শ কে কোথাও পেলাম না।

‘ হাই, কেমন আছো?’খুব খুশি গলায় বলল।

আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ আলহামদুলিল্লাহ! আপনি কেমন আছেন?’

শামিম বলল, ‘ আগে ভালো ছিলাম না কিন্তু এখন খুব ভাল আছি।

আমি আড়চোখে তাকাতাকি করছি। আমার খুব অস্বস্তি ফিল লাগছে। স্পর্শ কি দেখে নিয়েছে আমি অন্য একটা ছেলের সাথে কথা বলছি। উনি কোথায়?

আমার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটানো শামিম।

‘তুমি নাকি আমার সাথে কথা বলবে বলেছো নিঝুম কে‌। আমি সেই ছয়মাস আগে থেকে তোমাকে পছন্দ করি। নিঝুমকে সেই কবে বলেছিলাম তোমার নাম্বার এনে দিতে‌। কিন্তু ও বলেছে তোমার নাকি বিয়ে ঠিক তুমি নাকি তাকে খুব ভালবাসো। তাই আর আসিনি। আচ্ছা তোমার কি বিয়ে ভেঙে গেছে তাই আমাকে একটা সুযোগ দিতে চাচ্ছো?’

আমি চোখ বড়বড় করে শামিমের দিকে তাকিয়ে আছি। রাগে আমি ফেটে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে। দাঁতে দাঁত চেপে তবু কথাগুলো হজম করছি‌। মন চাচ্ছে এই শামিমের বাচ্চা কে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিতে।

‘ এমন কিছু না আসলে…

আমি কথা শেষ করতে পারলাম না তার আগেই স্পর্শ কে এদিকে আসতে দেখে আমি ঠেকে গেলাম।
কথা গলায় আটকে গেল। তিনি রেগে আছে নাকি বোঝা যাচ্ছে না তার মুখমণ্ডল দেখে আমি তার রিয়াকশন বুঝতে পারছিনা।

আমি শামিমের কথা ভুলে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছি। স্পর্শ কি ধমক দিবে আমাকে বকবে। সেই ভয়ে আমি মুখটা চুরের মতো করে রেখেছি। আমাকে অবাক করে দিয়ে স্পর্শ চলে গেল আমাকে পাশ কাটিয়ে।
আমি হতবিহ্বল হয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে চেনেই না এই ভাব ধরে চলে গেল স্পর্শ।
শামিম কি কি যেনো বলেই যাচ্ছে আমি তাকে পাত্তা না দিয়ে মিষ্টি দের কাছে চলে এলাম আর বলতে লাগলাম,

‘এটা কি হলো?’

মিষ্টিরাও বলল, ‘ জানি না। আমি তো ভেবেছিলাম কোন ছেলের সাথে তোকে দেখলেই রেগে এগিয়ে এসে তাকে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাবে এখানে তো কিছুই হলো না। সব উল্টাপাল্টা হয়ে গেল।’

আমি তিনটা কে মারতে লাগলাম,

‘তোর আমার উপকারের বদলে অপকার করে দিলি। উনি সব সময় আমার দিকে তাকিয়ে একটু করে হাসতো। আজকে তো হাসলেন ও না।উনি বোধহয় আর আমার সাথে কথাই বলবেন আগে যাও একটু একটু কথা হতো সেটাও শেষ হয়ে গেল। তোদের এই প্লান এর জন্য। আমার না হ‌ওয়া সংসারটা ভেঙ্গে দিলি!’

শামিম এসে বলল,
‘কি হয়েছে মারিয়া তুমি ওদের মারছো কেন আর কি বলছে এসব কিসের সংসার ভেঙ্গে যাবে!’

‘আপনি আবার এখানে এসেছেন জান তো আপনার জন্য আমার সংসারটা ভেঙে গেল। ফালতু লোক।’

‘ তোমার তো বিয়ে হয়নি তোমার সংসার আসলো কোথা থেকে।’

‘কে বলেছে আপনাকে আমার বিয়ে হয়নি আমার বিয়ে হয়েছে আরও তিন মাস আগে।’

আমার কথা শুনে শামিম অবাক হয়ে নিঝুম এর দিকে তাকালো। নিঝুম চোরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘সরি ভাইয়া তুই চলে যা!এখানে একটা গন্ডগোল হয়ে গেছে না হলে কিন্তু এই মেয়ে তোকেও মারা শুরু করে দেবো। জান বাচিয়ে পালা।’

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here