প্রিয়তমা❤️ #সিজন_২ #writer- সালসাবিল সারা পর্ব-৪০ *

0
1103

#প্রিয়তমা❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-৪০
*
*
সকালে ঘুম থেকে উঠে পাশে সাদিফকে পেলাম না।এতক্ষণ একপাশ করে ঘুমাচ্ছিলাম।কিন্তু এখন সোজা হয়ে শুয়ে,এরপর বসে পড়লাম।রুমের চারপাশে চোখ বুলাতেই সাদিফকে চোখে পড়লো। উনি সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু করছেন।বাহিরে যাওয়ার জন্যে একদমই রেডি উনি।
আমার চোখে এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি।মাথাটা ভার লাগছে অনেক।ইদানিং সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই এমন উইকনেস অনুভব হয়। ডক্টর এর কাছে যেতে হবে।উফফ!!আবারো সেই ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়া লাগবে।
আমি ঘুম থেকে উঠে বেডে বসে আছি।কিন্তু আমার মহারাজার সেদিকে খেয়াল নেই।উনি এখনো কাজ করছেন আর করছেন।

আমি ঘুমঘুম কণ্ঠে উনাকে বলে উঠলাম..

“এই নাস্তা করেছেন?”
আমার কথায় উনি ল্যাপটপ রেখে আমার পাশে এসে বসলেন।আর আমি উনার কোলের উপরে বসে উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম।

“তুমি উঠার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম।ঘুম হয়েছে ভালো করে?”(সাদিফ আমার কোমর জড়িয়ে বললেন)

“হুঁ.. হয়েছে।কিন্তু এখনো না মাথা ঘুরছে আমার।আমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যান প্লিজ।”

সাদিফ আমার গাল ধরে গালে একটা চুমু দিলেন।এরপর আমাকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলেন।
ফ্রেশ হয়ে আমি নিচে চলে এলাম। সাদিফ তখনো কাজ করছিলো ল্যাপটপে।

নাস্তা করে সাদিফ অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।
সাদিফ যাওয়ার পর আমি,জুমু,আম্মু আমার বাসায় যাওয়ার জন্যে রেডি হয়ে নিলাম।

বাসায় পৌঁছে আমি সবার সাথে দেখা করে,সোফায় গা এলিয়ে দিলাম।আমার মনে হচ্ছে মাথা এখন ব্লাস্ট হবে আমার। ইদানিং উইকনেস এতই বেশি বেড়েছে,যার কারণে আমার পিরিয়ড ঠিক নিয়মে চলে না।আর এই মাসে তো অনেক টাইম পেরিয়ে গেলো,কিন্তু এখনো পিরিয়ডের আবাস পাচ্ছিনা।

রুমে গিয়ে হিজাব খুলেই মাথায় অনেকটা তেল দিলাম।বড্ড মাথা ব্যাথা করছে আমার।
মা রুমে এসে জিজ্ঞেস করলো…
” চোখ মুখ এমন ফ্যাকাশে লাগছে কেনো?”

“কই মা,কিছু না।এমনিতেই একটু খারাপ লাগছে।”

“শরবত খাবি মা?তোর ভাবী নাস্তা দিচ্ছে।কিন্তু এর আগেই তুই একটু শরবত খেয়ে নে।”

“আচ্ছা একটু দাও।”

মা আর আমি একসাথে নিচে চলে এলাম।
আমি, আফ্রা,জুমু লিভিংরুমে বসে আছি।মা জুমু আর আমাকে আমের শরবত দিয়ে চলে গেলেন।

শরবতের গ্লাস মুখে নিতেই একটা ভোটকা গন্ধ লেগে উঠলো।

“জুমু তোর কি কোনো ঘ্রাণ লাগছে শরবতে?”

” নাহ তো,বেশ ভালো লাগছে শরবত।কেনো?”

কিছুনা বলে আমি শরবত মুখে দিতেই…ওয়াক করে সব ফেলে দিলাম।

মা আওয়াজ শুনে দ্রুত এগিয়ে এলো আমার কাছে। আম্মু আমার পিঠ মালিশ করতে লাগলেন।

মা ফ্লোর পরিষ্কার করছে।যদিও আমি করতে চেয়েছিলাম কিন্তু মা করতে দিলো না।আমি আর জুমু উপরে রুমে চলে গেলাম। আমার পেট আর মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা লাগছে ।

জুমু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো…

“তুই কি প্রেগন্যান্ট?”

ওর প্রশ্নে আমি অবাক চোখে জুমুর দিকে তাকালাম।

“জানিনা তো দোস্ত।”

“তোকে দেখতে ইদানিং বেশ ক্লান্ত লাগে।আর প্রত্যেকদিন বকা শুনিস ভাই থেকে খাবারের জন্যে।তাছাড়া,পরশু তুই এক বয়ম আচার খেয়ে ছিলি। পিরিয়ড মিস গিয়েছে তোর?”

“অনিয়মে হচ্ছিলো পিরিয়ড।আর এই মাসে তো হয়নি এখনো। ডেট পার হয়ে গিয়েছে ২২দিন আগে।”

“আমি বলি কি,তুই টেস্ট করে দেখ।আমি গিয়ে এলাকার ফার্মেসি থেকে কিট নিয়ে আসি।”

আমি চুপ করে বসে রইলাম।আর জুমু চলে গেলো কিট আনতে।

যদি পজিটিভ আসে তাহলে কি হবে?উনি যদি আমাকে বকা দেয়।পেটের উপর হাত রাখলাম।বাবুর কথা ভাবতেই মনটা অজানা খুশিতে নেচে উঠলো।

তিনটা কিট টেস্ট করেছি।সবগুলোই পজিটিভ।
ভয়ে আর অন্যরকম সুখে আমার মনটা কাঁপছে।
মা আর আম্মু তো একদফা নাচানাচি করে নিলো।ভাবী তাড়াতাড়ি ভাইয়াকে ফোন করে মিষ্টি নিয়ে আসতে বললো।
সাদিফকে জানানোর কথা উঠে আসতেই আমি মানা করে দিলাম।কারণ আমি চাই,এই খবর আমি উনাকে দিই।

সন্ধ্যায় উনি আসলেন রুমে।আমি সেই যে রুমে ঢুকেছিলাম আর বের হইনি।উনাকে দেখা মাত্রই জুমু রুম থেকে চলে গেলো।

উনি আমার কাছে এসে আমার পাশে বসলেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম কণ্ঠে বললেন…

“কি হলো?হঠাৎ করে শুনলাম তোমার খারাপ লাগছে?চুলে এতো তেল দিয়েছো কেনো? বেশি খারাপ লাগছে মাথায়?নিচে তোমাকে না পেয়ে,মা থেকে শুনলাম তোমার নাকি শরীর খারাপ।এতবার কল দিয়েছি সারাদিন.. কিছুই তো বলোনি।”

আমি কিছু না বলেই, উনাকে কিটগুলো দিলাম।
কিটগুলো হাতে নিয়ে উনি আমাকে প্রশ্ন করলেন…

“প্রেগন্যান্সি কিট?হঠাৎ টেস্ট করিয়েছো?কি এসেছে পজিটিভ না নেগেটিভ?”

“আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে কিটে দেখুন।এরপরই তো জানবেন।আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলে চলবে না।”(আমি)

সাদিফ কিটে তাকিয়ে বসা থেকে উঠে গেলো।একবার কিটের দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন।
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আমাকে বললেন…

“প..পজেটিভ! দেটস মিন..তুমি প্রেগন্যান্ট!বাবু..আসবে?আমাদের বাবু! জান জান..এটা কি শিউর তুই?”

আমি উনার দিকে দুই হাত বাড়িয়ে দিলাম।উনি দেরি না করেই আমার বুকের মাঝে চলে এলেন। সাদিফ আমাকে এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছেন,আমার নিঃশ্বাস আটকে আসছে।কিন্তু তাও উনার খুশিমাখা চেহারা দেখে আমি চুপ করে রইলাম।

সাদিফ আমার বুক থেকে মুখ তুলে নিয়ে বললেন..

“আমার এতো খুশি লাগছে…আমি কিভাবে তোকে আমার খুশি দেখাবো! আই অ্যাম সো হ্যাপী জান।কিন্তু কিন্তু…রেডি হও তুমি। এখনই যাবো আমরা ডক্টরের কাছে।”

“কেনো??আর এখন কেমন করে যাবো। বাবুর বার্থডে পার্টি হবে। ওর নানুরা,অন্য আত্মীয় স্বজনেরা আসবে।এখন কিভাবে যাবো?”(আমি)

“শাট আপ।কে আসছে না আসছে, আই ডোন্ট কেয়ার।আমার কাছে আমার বউ, বাচ্চা সবার আগে।ওরাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বেশি।সো গেট রেডি।”(সাদিফ)

“আচ্ছা।বুঝলাম ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবেন।কিন্তু,সিরিয়াল নাম্বার নিতে হবে।আজকে নাম্বার নিলে,দুইদিন পর সিরিয়াল পাওয়া যাবে।তাহলে?(আমি)

“এতো বড় পলিটিশিয়ান তোর হাজবেন্ড।আমার একটা কল যথেষ্ট।আর এখন তো আমি আমার বউকে নিয়ে যাবো।আমাকে দেখেই প্রথম সিরিয়াল দিয়ে দিবে।”(আমার গাল টেনে বললেন উনি)

“নাহ,আপনি পলিটিশিয়ান বলে অন্যের নাম্বার কেনো নিয়ে নিবেন।আমরা যাবো,আমাদের যে নাম্বার দিবে সে নাম্বার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।বুঝলেন?”(আমি)

“জ্বী বুঝেছি।আচ্ছা রেডি হয়ে নাও।আমি নিচে জানিয়ে আসছি।”(সাদিফ)

সাদিফ যেতেই আমি ফ্রেশ হয়ে বোরকা হিজাব পড়ে রেডি হয়ে নিলাম।

“ভাবী, তোর হয়েছে? ভাইয়া তোকে নিচে নামতে বললো।”(জুমু)

“হ্যাঁ হয়েছে।”(আমি)
জুমু আর আমি নিচে নেমে এলাম।মুটামুটি অনেক আত্মীয় এসেছেন।সবার সাথে দেখা করে মা আর আম্মুকে জানিয়ে আমি আর সাদিফ বেরিয়ে গেলাম।

গাড়িতে বসতেই উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন।গাড়ির জানালা বন্ধ থাকায় আমার আরো বেশি বমি পাচ্ছিলো।
আমি গাড়ির গ্লাস নামতেই উনি বলে উঠলেন..

“কি ব্যাপার?গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিয়েছো কেনো?ধুলাবালি আসবে।”

“আমার না বমি পাচ্ছে,এইভাবে বদ্ধ গাড়িতে বসে থাকতে।এসির বাতাসটা ভালো লাগছে না তাই।আচ্ছা উঠিয়ে দিচ্ছি জানালা।”(আমি)

সাদিফ আমার দিকে টিস্যু এগিয়ে বললেন..

“দরকার নেই বন্ধ করার।এটা দিয়ে নাক চেপে রাখো।”

আমি মুচকি হেসে উনার হাত থেকে টিস্যু নিয়ে নাকে চেপে ধরলাম।

আমি আর উনি হসপিটালের ওয়েটিং সেশনে বসে আছি।আমাদের সিরিয়াল পড়লো বিশ নম্বরে।আমরা যেদিকে বসেছি ঐদিকে কেউ বসেনি।আর পাশে উনার গার্ডগুলো তো আছেন।এই গার্ডরা সব স্থানেই হাজির হয়ে যান।বিরক্তিকর।

প্রায় এক ঘন্টা পরে আমাদের সিরিয়াল এসেছে। এতোক্ষণ আমি উনার কাঁধে মাথা হেলান দিয়ে বসে ছিলাম।

ডক্টরের চেম্বারে প্রবেশ করতেই,একজন মধ্য বয়সী মহিলা ডক্টরকে দেখতে পেলাম।

আমাদের দেখে উনি মুচকি হেসে বললেন…

“এই যে দেখছি, দা গ্রেট পলিটিশিয়ান সাদনান সাদিফ।বসুন বসুন”।

“জ্বী ধন্যবাদ ডা. শিরিন”।(সাদিফ)
আমি আর সাদিফ চেয়ারে বসে পড়লাম।

“হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ লেডি?”(ডক্টর)
ডাক্তারকে আমি আমার সব সমস্যা খুলে বললাম।

” কিট টেস্ট করিয়েছো?”(ডা.)

“জ্বী করিয়েছিলাম আজ।পজিটিভ এসেছে।(আমি)

“আচ্ছা বুঝতে পেরেছি।এখন কিছু টেস্ট করতে হবে তোমার।এরপর টেস্টের রিপোর্ট কাল বিকেলে পেয়ে যাবেন।”(ডা.)
কথাগুলো বলেই উনি নার্সকে ডাকলেন।

“মি. সাদিফ আপনাকে বাহিরে অপেক্ষা করতে হবে।কারণ,আপনার ওয়াইফের কিছু টেস্ট করবো তাই।”(নার্স)

“ওকে।
ফুল,উনারা যেমন টেস্ট করবেন সেগুলো করিয়ে নাও। ভয় পেও না আমি বাহিরেই আছি।ওকে বেবি?”(সাদিফ)

উনার এমন কথা শুনে নার্স মুখ চেপে হাসছেন। আমি উনার কথায় শুধু মাথা দুলালাম।
সবার সামনে বেবি ডাকার কি মানে বুঝলাম না।আমি নিজেই উনার বেবির মা হতে যাবো।আর উনি আমাকে এখনো বেবি ডাকছেন!

সব টেস্ট করানো শেষে আমি ডক্টরের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম।
আমি বের হতেই সাদিক আমার হাত চেপে ধরলেন। সব প্রকারের পেমেন্ট মিটিয়ে আমরা আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

“এই, আপনি কি মেন্টাল? ডক্টরের ঐখানে আমাকে কেন বেবি ডেকেছিলেন? জানেন, ঐ নার্সটা আপনার কথা শুনে হাসছিলো।”(আমি)

উনি সামনে তাকিয়ে বললেন..

“সো হোয়াট?আমার বউ বাচ্চা সবাই আমার বেবি।নার্সের হাসি পেয়েছে সে হেসেছে।এখানেও তোর সমস্যা?এমন কেনো তুই?”

“না, কোন সমস্যা নেই। আপনি চুপচাপ গাড়ি চালান।”
(রেগে বললাম)

“রাগ দেখাচ্ছিস?এইখানে রাগ দেখানোর কি হলো?”(সাদিফ)

“কিছু হয়নি বললাম না।”(আমি)

সাদিফ আমার ডান হাত নিয়ে উনার হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলেন।সাথে আরো বকবক করছিলেন।কিন্তু কেনো যেনো আমার ইচ্ছে করছিলো না কথা বলতে।

আমরা বাসায় পৌঁছাতেই, আফ্রার কেক কাটার আয়োজন করা হলো। এতক্ষণ সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
ডিনার করে বাসায় চলে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম সাদিফ অফিসের কাজ করছেন। আমার শরীর এত খারাপ লাগছিলো উনাকে কিছু না বলে আমি চুপচাপ শুয়ে পড়লাম।

শেফার কর্মকাণ্ড কিছুই সাদিফ এর মাথায় আসছে না।পরক্ষণে মনে হলো,এইগুলো সব প্রেগনেন্সির সাইড ইফেক্ট। প্রেগনেন্সির সময় একজন মেয়ের মেজাজ খুবই খিটখিটে হয়ে যায়। আবার খুব সহজে ইমোশনাল হয়ে যায়। সাদিফ ফাইল রেখে শেফার পাশে শুয়ে পড়লো।শেফা ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।শেফার মাথায় হালকা হাত বুলাতেই, শেফার চোখ নড়ে উঠলো। সাদিফ মুচকি হেসে শেফার পেটে চুমু দিলো।এরপর সে তার প্রিয়তমাকে নিজের বুকে চেপে ধরলো।

*
পরদিন বিকালবেলা সাদিফ রিপোর্ট নিয়ে বাসায় এলো।রিপোর্ট পজিটিভ। সাদিফ কি পরিমান খুশি,এটা উনার চেহারাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
বাসা আম্মুর হাসির শব্দে মেতে উঠছে বারবার।জুমু তার ফুফি হওয়ার সংবাদ শুনে প্রচন্ড খুশি।যদিও কাল জেনেছিলো সে।কিন্তু সবাই অপেক্ষায় ছিলো আজকের রিপোর্টের জন্যে।

বিকালের দিকে আমার বাসার সবাই এসেছেন।আজ বাসায় মিষ্টির অভাব পড়েনি।
নিচের সব কাজ শেষ করে উপরে রুমে গেলাম। সাদিফ বিকালে বাসায় এসে আবার চলে গিয়েছেন।রুমের টুকটাক কাজ সেরে আমি বেডে গা এলিয়ে দিলাম।

কপালে ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে আমি চোখ খুললাম। সাদিফের হাসিমাখা মুখ দেখে আমিও হেসে দিলাম।

আমার দিকে একটা বক্স এগিয়ে দিয়ে বললেন…

“এটা তোমার জন্যে।”

আমাকে নিতে হয়নি বক্স। সাদিফ বক্স খুলে রিং বের করে আমার হাতে পড়িয়ে, আমার হাতের পিঠে চুমু দিলেন।
“আমার বাবুর আম্মুর জন্যে একটা ছোট্ট গিফট।”

“ডায়মন্ড রিং আপনার কাছে ছোট মনে হচ্ছে?”(আমি)

“তুই আমাকে যে গিফট দিয়েছিস সেটার কাছে এই ডায়মন্ডের কোন মূল্য নেই। থ্যাংকস ফর গিভিং মি দা বেস্ট গিফট ইন মাই লাইফ। আল্লাহ্ এর কাছে অনেক অনেক শোকরিয়া,আমার জীবনে তোকে দিলো।আর এখন আমাদের বাবুকে পাঠিয়ে আল্লাহ্ আমার জীবনটাই পরিপূর্ণ করে দিলো।”

আমি কিছু বলতে যাবো এর আগেই উনি আমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে আমার মুখ বন্ধ করে দিলেন।

প্রেগনেন্সির উইকনেস আর নানান দুর্বলতার মাঝে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমি।আর মাত্র তিনদিন পরেই এক্সাম।কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমি সাদিফ আর জুমু থেকে বেশ হেল্প পাচ্ছি।
প্রেগনেন্সির দুইমাস যেতেই রুম নিচে শিফট করে দিয়েছেন সাদিফ।এই লোক আরো কতো কান্ড করবেন আল্লাহ্ জানেন।এখন প্রেগনেন্সির তিন মাস চলছে আমার।অশান্তি লাগে সব।শুয়ে রইলে বসতে মন চায় বসলে শুয়ে থাকতে মন চাই।কি এক অসহ্যকর পরিস্থিতির মাঝে আছি।
আর সাদিফ,সে তো সারাক্ষণ আমার পেট নিয়েই পরে থাকে।তার ধারণা,পেটের উপর কথা বললে বাচ্চাটা সব শুনতে পারবে।কিন্তু এই মহাশয়কে কে বোঝাবে,বাচ্চা কিছুই শুনতে পায় না।তিন মাসের বাচ্চা পেটে কতটুকুই বা বড় হলো!

অনেক কষ্ট করে এক্সামগুলো দিলাম।কেমন করে দিন কাটিয়েছি এক্সামের সময় আল্লাহ্ জানেন। সাদিফ ভার্সিটি নিয়ে যেতেন,আমাদের জন্যে অপেক্ষা করতেন। এক্সাম শেষে আমাদের বাসায় দিয়ে এরপর উনি অফিসে যেতেন।
এক্সাম শেষ হওয়াতে অনেকটা শান্তি বিরাজ করছে মনে। এতোদিন খুবই টেনশনে ছিলাম।কিন্তু গত একসপ্তাহ ধরে বিন্দাস আছি।কারণ এক্সাম শেষ হলো এক সপ্তাহ আগেই।

সাদিফের কেয়ার আমার জন্যে দিনদিন বেড়ে চলেছে।
সারাদিন অফিস করার পরও আমার প্রিয়তম আমাকে মাথা ম্যাসাজ করে দেন,পা মালিশ করে দেন।আর সাথে উনার রোমান্টিক আদর তো ফ্রি আছেই।
আর দুই মাস পরেই ইতি আপু বাংলাদেশে আসবেন।বিয়ের পরে একবার এসেছিলেন।এরপর আর আসেননি উনি।ইতি আপুর ছেলের বয়স এখন দুই বছর।দেখতে পুরোই পুতুল ছেলেটি।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি।এপাশ ঐপাশ হয়ে
অনেক্ষণ ধরে চেষ্টা করছি পেট বুঝা যাচ্ছে নাকি।কিন্তু না,পেট এখনো বোঝা যাচ্ছে না।তবে হালকা ফুলেছে।কিন্তু শাড়ির ওপরে তা একদম বোঝা যাচ্ছে না।

রুমে ঢুকতেই সাদিফ তার বউয়ের অদ্ভুত কান্ড দেখে হেসে উঠলো।

“কি ব্যাপার?কি করছিস আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে?”(সাদিফ)

“আমি দেখছি,পেট বেড়েছে নাকি।কিন্তু দেখেন, শাড়ির উপরে বোঝা যাচ্ছে না।”(দুঃখিত গলায় বললাম)

সাদিফ এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার পেটে হাত রাখলেন…

“বাবু এখনো অনেক ছোট।পাঁচ মাস থেকে মনে হয় বোঝা যাবে বাবুকে ভালোভাবে। নট সিউর।কিন্তু একটা কথা কি জানিস,তোকে না ইদানিং বেশি হট,আদুরে লাগে।কেমন যেনো গুলুমুলু!”

“ওহহ…এখন আপনার বাবু আসবে তাই আমাকে আদুরে লাগে।তার মানে আপনার কাছে আমি আগে আদুরে ছিলাম না!”

সাদিফ আমার গালে কামড় দিয়ে বললেন…

“ইসস রে!কিভাবে বোম্বের মতো গাল ফুলিয়ে নিলো।এই বউ তুই কি জানিস না আমি তোকে কতো ভালোবাসি?”

“ভালোবাসেন না কচু!আপনাকে আমি বুঝিনা।”

“ওহহ তাই নাকি।বুঝিস না কিছু, তাই ?ওকে চল বুঝিয়ে দিচ্ছি ভালোবাসি না কচুবাসি।”

কথাগুলো বলেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আর আমি আতঙ্কে উনার টি শার্ট খামচে ধরলাম।

চলবে….❤️

কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দয়া করে কেউ গল্প কপি করবেন না।আমার পেজ ছাড়া আমি আর কোথাও গল্প পোষ্ট করবো না।সো,কপি করা নিষেধ।

রিভিশন করিনি গল্প।বানান বা অন্য কিছু ভুল হলে ক্ষমার নজরে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here