#প্রিয়তমা❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-৪২ এবং শেষ
*
*
সকাল থেকে বাসায় কাজের মেলা বসেছে। আজ রাফিদ ভাইয়া আসবেন।অবশ্য আর এক ঘণ্টার মাথায় রাফিদ ভাইয়া হাজির হবেন বাসায়। আম্মু,জুমু,ইতি আপু সাথে বাসার কিছু কাজের লোক সবাই মিলে কাজের মধ্যে ডুবে পড়েছেন।
যেহুতু আমার প্রেগন্যান্সির এখন আটমাস চলছে তাই আমার কাজ করা মানা। সাদিফ,আম্মু সবাই আমাকে এক প্রকার থ্রেট দিয়ে রেখেছেন আমি যেনো কোনো কাজে হাত না লাগায়। সাদিফ এখন প্রায় বাসায় থাকেন।অফিসে উনার বিশ্বস্ত একজন বন্ধুকে উনার বদলে রেখেছেন।আর পলিটিক্সের কাজে দ্রুত গিয়ে দ্রুত ফিরে আসেন। অফিসের নানা কাজ তো বাসায় বসেই করেন।এখনের ডিজিটাল যুগে বাসা থেকেই সব কিছু করা সম্ভব।
হঠাৎ করে পেটের মধ্যে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলাম।উফফ পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।এমন ব্যাথা বাবু পেটে লাথি দিলেই হয়।পেটের উপর হাত বুলিয়ে দিলাম।প্রেগন্যান্সিতে নানা অভিজ্ঞতা হলো আমার।বাবুর লাথি দেওয়াতে যেমন ব্যাথা ফিল করি তেমন ভালোও লাগে।এমন লাথি দিলে আমি বুঝে যায় আমার বাবু ঠিক আছে,আমার পেটের মধ্যে খেলছে।
বাহিরে সবার শব্দ শুনে বুঝে গেলাম রাফিদ ভাইয়া চলে এসেছেন।আমি রুমে বসে আছি একা একা।সবাই নানা কাজে ব্যস্ত।রুম থেকে বাহিরে যাওয়ার জন্যে আমি খাট থেকে নামলাম।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের বেড়ে যাওয়া পেটটা দেখছি।আজ আটমাস ধরে আমার বাচ্চা আমার পেটের মধ্যে আছে।আর মাত্রই এক মাস বা কিছু সপ্তাহের অপেক্ষা।এরপর আমার ছোট্ট সোনা আমার কোলে চলে আসবে।বাবুকে কাছে পাওয়ার কথা ভাবতেই আমার শরীরে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো।
“ভাবী!ভাইয়া তোকে ডাকছে।রাফিদ ভাইয়া এসেছে।”(জুমু)
আমি চুল আচঁড়ানো অবস্থায় বললাম…
“হ্যাঁ,আমি আসছি।কে কে এসেছেন?”
“তুই একা যাবি না বাহিরে।আমি এসেছি তোকে নিতে।ভাইয়া তোকে একা চলাফেরা করতে মানা করেছে না?”
“হুহ…ভাইয়ার চামচা।আমি একা গেলে কী হবে?তোর ভাইয়া আর বাকি সবাই আমাকে এখনো বাচ্চা মনে করিস?কিছুদিন পরে আমি নিজেই বাচ্চার মা হবো।”
“হাহাহা…সমস্যা নাই,স্টিল তোকে একদম ছোট্টটি লাগে।শুধু আমার লিটল বাচ্চার জন্যে তোকে একটু ম্যাচিউর লাগে।কিন্তু এখনো তুই আমাদের ছোট্ট শেফা।”(আমার পেটে হাত রেখে বললো জুমু)
“এই তুই আর আমি একই বয়সের না?তাহলে আমি কেমন করে তোর ছোট্ট শেফা হবো?”
“এহেহে..কিছু হবে না।আমার ভাইয়ার ছোট্ট ফুল,তাই তুই আমারও ছোট্ট ফুল।”
“তো,আমার ভাবী কবে হবেন আপনি মহারানী?”
“রাফসান তো বিয়ের জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে।ইনফ্যাক্ট ও আর ইসলাল ভাইয়া তো বাড়ির চেহারা পরিবর্তন করে দিয়েছে। খালামনির বাসা দেখতে এখন পুরো চেঞ্জ লাগে।তোর ভাই আমাকে বিয়ে করার জন্য ঘর বাড়ি পর্যন্ত নতুন করে ফেললো।কিন্তু বিয়ের এখনো দুই বছর আছে।কারণ আমি জব করতে চাই।বিয়ের পরে জব করতে পারবো নাকি জানিনা।তাই আমার অনেক ইচ্ছা এক বছর হলেও আমি জব করব।”
“হ্যাঁ,বাসা আগের চেয়ে অনেক বড় করেছে। ভাইদের রুমও নতুন করে সব সাজিয়েছে। সেই যে গেলাম দুই মাস আগে আর যাওয়া হয়নি বাপের বাড়ি।”
“তুই নিজেই অসুস্থ। এই অবস্থায় কেমনে যাবি?”
“সেটাই তো।মা আর ভাবী কি এসেছে?”
“না তো খালামণি আর ভাবী এখনো আসেনি।”
“ওহহ।”
আমাদের কথার মাঝেই হঠাৎ করে সাদিফ রুমে প্রবেশ করলো…
“জুমান তোকে আমি শেফাকে ডাকতে পাঠিয়েছি। আর তুই এখানে এসে দাঁড়িয়ে গল্প করছিস।”(সাদিফ)
“সরি,সরি। আসলে কি জানো তো আমরা দুইজন বেস্টি আবার ভাবী ননদ,তাই আমরা আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে বেশিক্ষণ দেরী করি না।”(জুমু)
“আচ্ছা যা,মাকে হেল্প কর। রাফসানরা এসেছে।”
“ওকে।তোমার বউকে তুমি নিয়ে আসো।”(জুমু)
জুমু চলে যেতেই সাদিফ আমার কাছে চলে এলেন।আমি ভ্রু নাচিয়ে উনাকে প্রশ্ন করলাম “কি?”
কিন্তু উনি কোনো কথা না বলে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলেন।আমার গালের বাম দিকে এলার্জির উপরে আঙুল দিয়ে স্পর্শ করে বললেন…
“এগুলো এখনো যায়নি?ওষুধ লাগাসনি এখনো?সকালে না বলে গেলাম এইখানে অয়েনমেন্ট দিতে?”
“লাগিয়ে ছিলাম। কিন্তু কমেনি কেনো তা আমি জানিনা।আর তাছাড়া, প্রেগন্যান্সির সময় এমন এলার্জি উঠে।সো, এসবে আর টেন্সড হওয়া লাগবে না আপনার।”
আমার কোমর ছেড়ে উনি ড্রায়ার থেকে অয়েনমেন্ট নিয়ে আমার গালে লাগিয়ে দিলেন।আর সাথে সাথেই আমার গালের ডান দিকে একটা চুমু দিলেন। আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আমার পেটে হাত রেখে বললেন..
“আমার বাচ্চাটা কি বেশি জ্বালিয়েছে?”
“নাহ তো..বাচ্চাটা তার বাবার মতো একদম শান্ত।”(আমি মুচকি হেসে বললাম)
“আহহা…বাবুর বাবা যে বড্ড অশান্ত এটা সবাই জানে।”
উনার কথা শেষ হতেই পেটে আবারো বাবুর লাথি অনুভব করলাম।ব্যাথায় আমি কুঁকড়িয়ে উঠলাম আবারো।নিচে তাকিয়ে দেখলাম সাদিফ আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন।
এতদিন কতো চেষ্টা করেছেন উনি বাবুকে অনুভব করার জন্যে।কিন্তু একবারও পারেননি। রাতে আমার পেটে হাত রেখে বসে থাকেন,শুধু বাবুর এমন একটা ইঙ্গিত পাওয়ার অপেক্ষায়।এখন হঠাৎ বাবুর এমন ইঙ্গিত পেয়ে উনি প্রচন্ড অবাক হয়েছেন।
“ফুল..লুক আমি বাবুর অস্তিত্ব অনুভব করতে পেরেছি।”
(সাদিফ প্রশান্তির হাসি দিয়ে বললেন)
সাদিফের কথায় আমি হালকা হাসলাম।
“এইবার শান্তি আপনি?অনেক চেষ্টার ফলে পেরেছেন আপনার বাবুকে অনুভব করতে।”
সাদিফ আমার পেটে চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।
“শরীর খারাপ লাগছে? রুমের বাহিরে যাবে?”
“নাহ,একটু উইকনেস তো সারাক্ষণ থেকেই যায়।বাহিরে তো যেতেই হবে। সবার সাথে দেখা করা প্রয়োজন।”
“ওকে,চলো।বাট আগ বাড়িয়ে কোনো কাজ করতে যাবি না। চুপচাপ আমার পাশে বসে থাকবি।যতক্ষণ সুস্থ ছিলি ততক্ষণ ইচ্ছেমতো কাজ করেছিস।এখন রেস্ট কর।”
“এক মাস আগ থেকেই তো সব কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি।”
“আমি মানা না করলে, তুই কষ্ট করে হলেও কাজ করতিই।”
“আচ্ছা চুপ করুন।চলুন বাহিরে।”
আমি মাথার উপর ওরনা দেওয়ার আগেই,উনি আমার থেকে ওরনা নিয়ে নিলেন।
নিজ হাতেই সাদিফ ওরনা দিয়ে আমার মাথায় এমনভাবে দিয়ে দিলেন,যেনো পেট পর্যন্ত কভার হয়।
“নাউ ইটস পারফেক্ট।ইতির শ্বশুরবাড়ির কিছু লোকজন এসেছেন।উনাদের সামনে গিয়ে শুধু সালাম দিয়ে চলে আসবি।ওকে?”
“আমি কি ছোট বাচ্চা?আপনি এমনভাব নিয়ে কথা বলছেন,যেনো আমি কিছুই জানিনা।”
“বেশি কথা না।আর আমিও এক মানুষ।আমি তো তোর সাথেই থাকবো, এতো লেকচার কেনো দিচ্ছি আল্লাহ্ জানেন।”
“আপনি আজ রুম থেকে বের হবেন না।আপনি থাকুন। আমি যাচ্ছি।”
আমি সামনে এগিয়ে গেলেই সাদিফ এসে আমার হাত ধরে নিলেন।
ডাইনিং এ সবাই নাস্তা সাজাচ্ছে।আমাকে দেখে মা আর ভাবী এগিয়ে এলো।
ওদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললাম।কথা শেষে সবাই আবারো কাজে লেগে গেলো ওরা।
আমি আর সাদিফ লিভিংরুমে গেলাম। সবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে, সাদিফ আমাকে ডাইনিং এর পাশের জায়গাটাতে বসিয়ে দিলেন।এই জায়গাটা আমার অনেক প্রিয়।এটা মূলত আড্ডা খানা।এইখানে বসেই আমরা প্রায় আড্ডা দিই।এই জায়গা থেকে ডাইনিং দেখা যায় না।
“এইখানে বসে থাক।আমি জুমুকে দিয়ে খাবার পাঠাচ্ছি।”(সাদিফ)
“শুনুন!”
উনি আমার ডাকে আমার কাছে এসে বসলেন।
“বল..কি হলো?”(সাদিফ)
“কিছুনা।কিন্তু আমি এখন কিছু খাবো না।”
“উহু..কোনো কথা চলবে না।খেতে হবে এখন।নাহলে কিন্তু আমার টর্চার শুরু করে দিবো”।
আমি উনার কথায় গাল ফুলিয়ে নিলাম।আর উনি আমার গালে চুমু দিলেন।
আমি রেগে সাদিফকে বললাম…
” আমি খাবো না এখন।”
সাদিফ আমার কথায় আমার ঠোঁটে চুমু দিলেন।
“আমি কোনো মতামত চাইনি।আমি অর্ডার করেছি।সো,আমার অর্ডার তোকে মানতেই হবে।”
কথাগুলো বলেই উনি চলে গেলেন খাবার অানার জন্যে।
সাদিফের মোবাইল পেলাম আমার পাশেই।আমি উনার মোবাইল নিয়ে,মোবাইল চালানো শুরু করলাম।
একটু পরে সাদিফই এলো আমার জন্যে খাবার নিয়ে।উনার পিছে পিছে এলো আফ্রা আর ওয়াফি।
আফ্রা এসে আমার পাশে বসলো।আর ওয়াফি দৌড়ে আমার কাছে আসতে চাইলে, সাদিফ এক হাতে ধরে ফেলেন ওয়াফিকে।
“বাবা, হোয়াট আর ইউ ডুইং? তোমার মামীমনি সিক। তুমি কি জানো না?”(সাদিফ)
“আই অ্যাম সরি মামা”।(ওয়াফি)
ওয়াফির আচরণে আমি বারবার অবাক হই।অতটুকু বাচ্চা কি সুন্দর করে সব বুঝে, আবার কথাও বলে।
সাদিফের বকা শুনে বেচারা ওয়াফি একদম চুপ হয়ে গেলো।এই দুই মাসে সাদিফের রাগ সম্পর্কে ভালোই জানা হয়ে গিয়েছে তার।তাই, সে মন খারাপ করে চুপচাপ এক দিকে দাঁড়িয়ে রইলো।
সাদিফ ওয়াফিকে কোলে নিলেন।ওকে কোলে নিয়েই আমার অন্যপাশে বসলেন উনি।টেবিলের উপরে খাবারের প্লেট রেখে উনি ওয়াফিকে নানা কথা বলে হাসানোর চেষ্টা করছেন।
একটু পরে ওয়াফি তার মামার কাণ্ডে হিহি করে হেসে উঠলো।
সাদিফ আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর একটু পর পর আফ্রা এবং ওয়াফির খেলা দেখছেন।
আমার ক্ষুদা নেই বললেও আমি একপ্লেট ভাত খেয়ে ফেললাম।
“দেখেছেন আমি কি পরিমান খাদক হয়েছি!খাবোনা বলেও এক প্লেট খাবার খেয়ে নিলাম”।
সাদিফ আমার মুখ মুছে দিয়ে বললেন…
“তুমি না, আমার বাবুটা খেয়েছে।ওর বাবা তো জানে ওর কখন ক্ষুদা পায়।বাবুর মা সারাদিন না খেয়ে থাকলেও তো তার ক্ষুদা পায়না।”
“এই চুপ করুন।বেশি বলে ফেললেন না?”
“নাহ তো, উহু।”
সাদিফ একনজর বাবুদের দিকে তাকিয়ে আবারো আমার পেটে হাত রেখে বললেন…
“তাড়াতাড়ি চলে আসো না বাবু।বাবা তোমার জন্যে অনেক অপেক্ষা করছে।উফফ..কখন যে তোমাকে কোলে নিবো,নিজের বুকের উপরে ঘুম পাড়াবো!”
আমি সাদিফের কাঁধে মাথা রেখে বললাম…
“আর এক মাস বা তারও কম সময় বাকি আছে আপনার বাবুর আগমনের। এরপর তো আমাকে ভুলেই যাবেন তাই না।সব আদর বাবুকে করবেন”।
আমার কথায় উনি হেসে উঠলেন।
আমার হাতে চুমু দিয়ে বললেন..
“হাহাহা…তখন তো আরো ডাবল আদর করবো।একবার আমার বউ, আমার জান,আমার প্রিয়তমা হিসেবে।আরেকবার করবো আমার বাবুর মা হিসেবে।”
উনার কথায় আমি উনার বুকে হালকা করে একটা ঘুষি দিলাম।
রাতের খাবার খেয়ে সবাই চলে গেলেন।আমি সবার খাওয়ার আগেই খেয়ে নিয়েছিলাম।এরপর রুমেই ছিলাম।প্রচন্ড পেট ব্যাথা করছিলো আমার।মা,ভাবী,ইতি আপু,রাফিদ ভাইয়া,উনার ফ্যামিলি সবাই আমাকে রুমে এসেই দেখে গিয়েছিলেন।
যদিও কিছুক্ষণ আগে আমার পেট ব্যাথা করছিলো আমার,কিন্তু এখন অনেকটা ভালো লাগছে।
আমি বেডে শুয়ে আছি আর সাদিফ আমার পাশে বসে আছেন।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন সাথে অন্যহাত দিয়ে আমার পেটে হাত বুলিয়ে দোআ পড়ছেন।
“আমার বাবুটা তার মাকে এতো কষ্ট দিচ্ছে কেনো!”
“জানিনা।আপনার বাবু মনে হয় আপনার কাছে আসতে ইচ্ছে পোষন করছে।”
“হ্যাঁ,সেটাই তো মনে হচ্ছে।কিন্তু এখনো তো টাইম বাকি আছে।আল্লাহ্ ভরসা।তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো।আমি আছি পাশে।”
সাদিফের কথায় আমি, আমার পেটের উপর রাখা উনার হাতটি চেপে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছি।
সাদিফ এক নজরে তার বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা আগে থেকে আরো বেশি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।এই ঘুমন্ত মুখটাতেও ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। সাদিফ শেফার চোখ জোড়ার উপরে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে,নিজেও শেফার পাশে শুয়ে পড়লো।এক হাতে আলতো করে তার জানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।
–
প্রেগন্যান্সির নবম মাসেই আমার নানা রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে।এখন তো একা হাঁটা চলা করাও ভীষন কষ্ট হয়ে যায় আমার।আমার পাশে সারাক্ষণ সাদিফ, আম্মু অথবা জুমু থাকে।আমাকে এক মুহূর্তের জন্যে কেউ একা রাখে না।
আজ দুপুর থেকে পেটে অন্য দিনের ব্যাথার তুলনায় বেশি ব্যাথা করছে।যাকে বলে অসহনীয় ব্যাথা। সাদিফ বাসায় আছেন কিন্তু উনি উনার বাসার অফিসে বসে মিটিং করছেন।জুমু এতক্ষণ আমার পাশে বসে ছিলো।কিন্তু রাফসান ভাইয়ার কল আসার কারণে,জুমু রুমের বাহিরে গেলো। সাদিফের মোবাইল রুমে ফেলে গিয়েছেন ।আর জুমু তো বিজি এখন কথা বলায়।আমি আর পারছি না এই ব্যাথা সহ্য করতে। প্রায় আধা ঘন্টা ব্যাথা চেপে বসে ছিলাম কিন্তু এখন আর পারছি না।ব্যাথায় আমার কান্না চলে এলো।
বেডের উপরে রাখা সাদিফের মোবাইল নিয়ে আমি আম্মুকে কল দিলাম।
“হ্যাঁ সাদি,বাসায় থেকে ফোন দিচ্ছিস কেনো?”(আম্মু)
আমি মুখ দিয়ে খুব কষ্টে কথা বের করলাম..
“আম্মু রুমে আসো প্লিজ।”
এই কথাটা বলার পরই আমি মোবাইল বেডে ফেলে দিলাম।পেট চেপে আমি কান্না করতে লাগলাম।কারণ,এই এক অজানা ব্যাথা।আমি সহ্য করতে পারছি না।
সাদিফের মা কিছু না বলেই শোয়া থেকে এক লাফে উঠে
সাদিফের রুমের দিকে ছুটলেন।রুমে গিয়ে দেখলেন শেফা বেডে শুয়ে পেট চেপে ধরে কান্না করছে।
“ও মা! ফুল, ফুল….কি হলো? জুমু কই?”
আম্মু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে নানা কথা বলছেন,আর চিল্লিয়ে জুমুকে ডাকছেন।জুমু আম্মুর ডাক শুনে তাড়াতাড়ি রুমে চলে এলো।আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
“জুমু… সাদিকে ডেকে নিয়ে আয়।জলদি কর।যা….
ফুল,ঠিক হয়ে যাবে সব।কান্না করিস না।”
জুমু এক দৌড়ে সাদিফের অফিস রুমে চলে গেলো।সে গিয়ে দেখলো, সাদিফ রুম থেকে বের হচ্ছে।জুমু সাদিফের কাছে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো…
“ভাইয়া…ভাবীর পেইন উঠেছে ।ভাবী অনেক কাঁদছে।”
“মানে??কি হলো?পেইন হচ্ছে মেডিসিন নিবে।তুই এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেনো?”(সাদিফ রেগে বলে উঠলো)
“ভাই,তুমি বুঝছো না কেনো?”
সাদিফ আর কিছু না বলেই এক দৌড় দিলো রুমের দিকে।
রুমে গিয়ে দেখলো শেফাকে ধরে তার মা শোয়া থেকে বসতে সাহায্য করছে।আর মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে।
সাদিফ দ্রুত হেঁটে বেডের উপর উঠে শেফাকে ধরে উঠে বসালো।
“এই মা,কি হলো? ও এইভাবে কাঁদছে কেনো?
ফুল? জান, ইউ ওকে?”
“বাবা,তুই ওকে ধর।আমি বোরকা পড়ে নিই।আমার মনে হয় সময় চলে এসেছে ডেলিভারির।”(আম্মু)
“কি বলছো?এখনো চৌদ্দ দিন বাকি আছে। এতো আর্লি কেমনে পসিবল!
এই বাবু,কান্না অফ করো।কেমন লাগছে? বলো আমাকে? ”
“উফ,তুই বুঝবি না।আমি ড্রাইভারকে বলছি গাড়ি বের করতে।তুই ওকে কষ্ট করে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যা বাবা।”
আম্মু কথাগুলো বলে চলে গেলেন।
“আমার অনেক পেইন করছে পেটে। আমাকে হসপিটালে নিয়ে যান প্লিজ।”
আমি কান্না করতে করতে বললাম।
সাদিফ আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন….
“ওকে ওকে।রিল্যাক্স।একটু হেল্প করো আমাকে।একটু কষ্ট করে পা ফেলো।শরীরের ভার আমার উপর দিয়ে দাও।এখন তো কোলে নিতে পারবো না।কোলে নিলে পেটে চাপ পড়বে। জান পারবে?”
“হুঁ,পারবো।জুমু আমার গায়ের উপর ওরনা দিয়ে দে।”
জুমু আমার গায়ে ওরনা জড়িয়ে দিতেই, সাদিফ আমাকে বেশ ভালোভাবে সাহায্য করতে লাগলেন হাঁটতে।খুব ধীরে পা ফেলে আমরা গাড়ির কাছে চলে গেলাম। সাদিফ খুব সাবধানে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।এরপর আমার পাশে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আমি উনার হাত চেপে ধরলাম।আমার অন্য পাশে আম্মু বসে আছে।আর ড্রাইভারের পাশে জুমু বসে পড়লো।
“কান্না করো না জান।আল্লাহ্ ভরসা।আমি আছি তো,সব ঠিক হয়ে যাবে।বাবু ঠিক থাকবে তুমিও ঠিক তবে ইন শাহ্ আল্লাহ্।”
সাদিফ শেফাকে সাহস দিলেও…সে নিজেই ভয়ে শেষ।
হাসপাতালে পৌঁছানো মাত্রই, শেফাকে অপারেশন রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।
সাদিফ ঘেমে একেকার।শেফা প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে সে আজকের দিনটার জন্যে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছিলো।শেফার সামান্য কিছু হলেই,তার বুকে অস্থিরতা শুরু হয়।আর এখন মনে হচ্ছে, তার বুকটা ব্লাস্ট হবে। এতো জোরে বিট করছে তার বুক।আল্লাহ্ এর কাছে শুধু একটাই দোআ করছে সে…তার প্রিয়তমা আর বাচ্চা যেনো ভালো থাকে।
প্রায় দুইঘন্টা পরে একজন নার্স এসে বললেন…
“অভিনন্দন আপনাদের। ইউর ফ্যামিলি ইজ ব্লেসড উইথ এ বেবি গার্ল।”
সাদিফের মুখ চক চক করে উঠলো এই কথা শুনে।
“নার্স,আমার বউ আর বাবু ভালো আছে তো?”(সাদিফ)
“ইয়েস। দে আর ফাইন।যেহুতু আপনার ওয়াইফের নরমাল ডেলিভারি হয়েছে,তাই এক ঘন্টা পরেই উনাকে কেবিনে শিফট করা হবে।”
“আচ্ছা।ধন্যবাদ আপনাকে।”
খুশির সংবাদ শুনে সাদিফের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। তার অস্থির মন,তার বউ আর ছোট বাচ্চাটাকে দেখার জন্য ছটফট করতে লাগলো।
একজন গার্ড এসে সাদিফকে বললো…
” নিচে প্রেসের মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে।সবাই মিলে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট করছে।সবাই আপনাকে খুঁজছেন। একটু যদি আপনি ওদের এটেন্ড করতেন, তাহলে বেশ ভালো হতো।”
“ওকে।আসছি আমি।”
নিচে নেমে সাদিফ প্রেসের সবাইকে তার বাবা হওয়ার সুসংবাদটা দিয়ে দিলো।
সাথে সাথেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো এই সংবাদ… “মিস্টার সাদনান সাদিফ ইজ ব্লেসড উইথ এ বেবি গার্ল।”
সাদিফ নিচের কাজ শেষ করে কেবিনে যেতে যেতেই শেফা এবং সাদিফের পরিবারের সবাই তাদের নতুন সদস্যে আর শেফার সাথে দেখা করে নিলো।
সাদিফ এর মা, জুমু সবাই বাসায় চলে গেলো।থেকে গেলেন শুধু শেফার মা।
সাদিফ কেবিনে আসতেই,শেফার মা কেবিন থেকে বাহিরে চলে গেলেন।
কেবিনে ঢুকে সাদিফ দেখলো তার বউ বেডে শুয়ে আছে হাতে তার ক্যানেল লাগানো।আর তার ছোট্ট পরী তার প্রিয়তমার পাশে শুয়ে আছে।
সাদিফ আস্তে করেই শেফার পাশ থেকে তার পরীকে কোলে নিলো।
বাবুকে প্রাণ ভরে আদর করে নিলো সে।এই ছোট জানের জন্য সে কত অপেক্ষায় না করেছিলো। আজ আর কোনো অপেক্ষা নেই। সাদিফ তার মোবাইল বের করে তার ছোট্ট পরীর পবিত্র মুখের ছবি তুলে নিলো।
“বাবু কি উঠে গিয়েছে?”(আমি)
শেফার আওয়াজ পেয়ে সাদিফ শেফার দিকে ফিরলো।
“নাহ জান।আমরা বাবা মেয়ে কথা বলছিলাম।কেমন লাগছে এখন?”
“টায়ার্ড লাগছে।”
“হ্যাঁ, লাগবে এটাই স্বাভাবিক।”
সাদিফ আমার পাশে বাবুকে শুইয়ে দিলেন।এরপর আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললেন…
“তুই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। আর আমার মেয়েকে জন্ম দিয়ে তুই আমাকে আমার লাইফের শ্রেষ্ঠ উপহার দিয়েছিস। আই লাভ ইউ সো মাচহ প্রিয়তমা।”
সাদিফের কথায় আমি মুচকি হেসে বললাম..
“আমি জানি।আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন।আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি সাদি।আপনি ছাড়া আমার আর আমার মেয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই।”
“আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমি তোদের ভালো রাখার চেষ্টা করব। থ্যাংকস টু আল্লাহ্। থ্যাংকস ফর এভ্রিথিং। আলহামদুলিল্লাহ।
–
সকালে ঘুম থেকে উঠে মেয়ে, বাবা কাউকেই বেডে দেখলাম না।এই মেয়ে পুরোই বাবা পাগল।রাতে ঘুমাবে আমার পাশে।কিন্তু সকালে উঠে দেখি আমি আর আমার মেয়ে দুইজনই উনার গায়ের উপরে।
রাতে এক সাইডে তার বাবা চেপে ধরে আরেক সাইডে সে নিজে চেপে ধরে আমাকে। তাদের দুইজনের ঠেলায় আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। আর সকালবেলা উঠে দেখি, প্রত্যেকদিন আমি আর সে তার বাবার বুকের উপর ঘুম।
আজ সকালে এরা দুইজন কই গেল আল্লাহ্ জানেন।
গতকাল রাতে জুমুর হলুদ ছিলো। মেয়ে ঘুমিয়েছে সে রাত তিনটা বাজে।আর তার বাবার জ্বালায় আমি ঘুমিয়েছি প্রায় পাচটায়। পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে দেখলাম ঘড়িতে এখন দশটা বাজে। আল্লাহ্! বাসাভর্তি মেহমান। বাড়ির বউ এত দেরিতে ঘুম থেকে উঠে, এটা নিশ্চয়ই সবাই ভালো চোখে দেখবে না।
শাড়ি ঠিক করে আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম। শাওয়ার অন করতেই গায়ে জ্বলে উঠলো। আমার বুঝতে দেরি হয়নি এসব কিসের জ্বালা।
এইগুলো সাদিফের আদরের নমুনা।যেগুলোতে পানি পড়তেই আমার গায়ে আগুনের মতো জ্বলছে।আগের রোমান্সে উনার একটু বাধা ছিল। কিন্তু এখন সেই উনার ডাবল রোমান্সের টর্চারে আমি দিন দিন জর্জরিত হচ্ছি।এই লোকের লজ্জা তো কখনোই ছিলো না। এখন আরো বেশি নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছেন।
শাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখি, সাদিফ উনার মেয়েকে বেডে শুইয়ে দিচ্ছেন।
“আরে, আপনার মহারানী কি আবার ঘুমিয়ে পড়েছে?”
“হ্যাঁ,আমার মেয়ে খেলা করে টায়ার্ড হয়ে গেলো।”
এক নজর ওদের দিকে তাকিয়ে আমি ভেজা তাওয়াল ব্যালকনিতে ছড়িয়ে দিলাম। পিছনে কেউ হঠাৎ জড়িয়ে ধরাতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
সাদিফ আমার ঘাড়ে নাক ঘষে বলে উঠলেন…
“তোকে যতই আদর করি, ততই চাহিদা বেড়ে যায় আমার। তোকে আদর করার কোনো শেষ নেই। শুধুই বারবার তোর মাঝে হারিয়ে যেতে মন চায়।”
“উফ…ছাড়েন তো।দুই বছরের মেয়ে আছে আপনার এখন।এইবার তো এসব রোমান্স ছাড়ুন।
“নো। আমার প্রিয়তমার জন্য আমার রোমান্স কখনোই কমবে না।”
সাদিফ আমাকে উনার দিকে ফিরিয়ে আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলেন।আর সাথে আমার শাড়ি ভেদ করেই আমার পেটে উনার হাত দিয়ে নরমভাবে স্পর্শ করছেন। আমি উনার ঘাড় খামচিয়ে ধরলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পরেও উনাকে যখন আমার কাছ থেকে ছুটাতে পারছিলাম না তখন খুব জোরেই উনার ঠোঁটে একটা কামড় দিলাম।
“আউচ… আমাকে রোমান্স কম করতে বলে, এখন নিজেই আমাকে কামড় দিচ্ছিস?”
আমি উনাকে জিহ্বা দেখিয়ে ভেংচিয়ে একটা দৌড় দিলাম।রুম থেকে বের হতে যাবো,এমনিই পারিসা কেঁদে উঠলো।
আমার আগেই সাদিফ পারিসাকে কোলে নিয়ে আবারো ঘুম পাড়িয়ে দিলেন।আমি আর যায়নি সেদিকে।গেলে আবারো উনি আমাকে ঝাপটে ধরবেন।
দ্রুত পায়ে হেঁটে আমি নিচে চলে এলাম।
*
বারবার কল আসায় খুব বিরক্ত হচ্ছে জুমু।আবারো কল আসার কারণে সে বিরক্ত ভাব নিয়ে অর্ধেক ঘুম অবস্থায় কল রিসিভ করলো।
“হ্যালো কে?”(জুমু)
“রাফসান।তোমার জামাই”
“নিজে তো মনে হয় আরাম করে ঘুমিয়েছো। এখন আমার ঘুম হারাম করছো কেনো?”
“ইয়াহ। আমি তো আরাম করেই ঘুমিয়েছি। আজ সারা দিনে একটু একটু অল্প করে ঘুমিয়ে নিবো। কারণ আজ রাতে আমার ঘুম হবে না।”
“কেন তুমি কোথাও দারোয়ান গিরি করতে যাবে?”
“উফ বেবি তুমি কেনো বুঝোনা, আজ আমাদের বিয়ে। এন্ড রাতে আমাদের অবশ্যই বাসর হবে।আমার কত বছর পরের স্বপ্ন আজ পূরণ হতে যাবে। আজ তোমার রক্ষে নেই সুন্দরী। ”
“এই চুপ।ফাজিল।অসভ্যের মতো কথা বলবে না একদম।”
“আজিব। আজ আমার বাসর রাত এন্ড এই রাতটা আমি কোনো ভাবেই ছাড় দিবো না। সো বেবি ঘুমাও ভালো করে। কারণ আজ ঘুম ছাড়া তোমার রাত কাটাতে হবে।”
এসব কথা শুনে জুমু লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। এতক্ষণের ঘুমের রেশটা আর নেই তার।রাফসান নামক মানুষটা তার ঘুম হারাম করে দিলো।
–
সন্ধ্যার দিকে বাবুকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম।কারণ,এখন যদি সে না ঘুমোয় সারারাত আমাকে জ্বালাবে।ক্লাবেও থাকতে দিবে না।আর সে এখন জেগে থাকলে আমি রেডি হতে পারবো না। জুমু দুপুরের দিকেই পার্লারে চলে গেলো।
আমি লেহেঙ্গা স্কার্ট আর ব্লাউজ পড়ে রেডি হতে লাগলাম। কারণ এখন রুমে কেউ নেই। আর এই সময় আমার রুমে কেউ আসবে না।
কিন্তু নাহ,আমার জামাইরাজা রুমে ঢুকে আমাকে এই অবস্থায় দেখে হা করে আমার দিকে চেয়ে রইলো।
উনাকে দেখে আমার হাত থেকে মেকাপ ব্রাশ পড়ে গেলো। উল্টো দিকে ফিরে গেলাম আমি। সাদিফ আমার কাছে এসে আমার পিঠে চুমু দিলেন।
আমি কেঁপে উঠতেই উনি আমাকে উনার দিকে ফিরিয়ে নিলেন।
“পিঠ যেনো দেখা না যায়।চুল খোলা রাখবে। বুঝেছো?”
(সাদিফ নরম ভয়েজে কথাগুলো বললেন)
আমি চোখ বন্ধ করেই উনাকে “হ্যাঁ” বললাম।
সাদিফ আমার গাল টেনে বললেন…
“বিয়ের এতো বছর পরেও তোর এই লজ্জা কমে না কেনো?আর তোর লজ্জা না কমে ভালোই হয়। কারণ, তোর এই লজ্জা মাখা মুখটা দেখতেই আমার বেশ ভালো লাগে।”
“আপনি অলয়েজ এই আদর, চুমু, লজ্জা ,রোমান্স এগুলোর মধ্যে থাকবেন। সরুন এখন,আমি রেডি হবো।”
সাদিফ আমার কাছে এগিয়ে আসতে নিলেই, পারিসা বলে উঠলো…
“মা।কোলে নাও আমাকে।”
সাদিফ আমার কাছ থেকে সরে দ্রুত পারিসাকে কোলে নিয়ে নিলেন।
“মা এখন রেডি হবে।আজকে জুমু ফুফুর বিয়ে না!তাই,মা এখন রেডি হবে।তুমি বাবার সাথে শুয়ে থাকো।আসো আমরা ঘুমিয়ে যায়।”
“মা আসো।আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যাও।বাবা,মাকে বলো আমাকে বুকে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে।”
আমি পারিসার কাছে যেতে নিলে সাদিফ বললেন…
“ফুল,এসো না তুমি। তুমি রেডি হয়ে নাও।আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি ওকে।”
সাদিফ বাবুকে নানা কাহিনী করে আবারো বেডে শুইয়ে দিলেন।
আর আমি ঝটপট রেডি হয়ে নিলাম।
পারিসা ঘুম থেকে উঠতেই ওকে সাদিফ ফ্রেশ করিয়ে দিলো।সাথে নিজেও শাওয়ার নিয়ে নিলো।
পারিসাকে আমি সুন্দর একটা গাউন পড়িয়ে দিলাম।আর মাথায় একটি মুকুট পড়িয়ে দিলাম।
এরপর আমরা মা মেয়ে নিচে চলে এলাম।
একসাথে সবাই ক্লাবে গেলাম।চারদিকে প্রচন্ড সাজসজ্জা।চারপাশে মানুষের আনাগোনা বেড়ে চলছে।
পারিসা, ওয়াফি, আফ্রা তিনজনই খুবই দুষ্টামি করছে।
সাদিফ এক নজর তার মেয়ের দিকে আর আরেক নজর তার বউয়ের দিকে দেখছে। এত বছর পরও সাদিফের কেনো জানি শেফাকে বারবারই নতুন মনে হয়।এই যে শেফা এখন লাল রংয়ের লেহেঙ্গা পড়ে আছে তাকে দেখতে একটা পুতুলের মত লাগছে। এই মেয়ের প্রেমে সাদিফ বারবার ডুবে যায়।
এক এলাহী আয়োজনের মধ্য দিয়ে জুমু আর রাফসান ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হলো।আমি, সাদিফ আর পারিসা আমাদের বাসায় গেলাম। সব রীতিনীতি শেষে জুমুকে
রাফসান ভাইয়ার রুমে দিয়ে আসলাম।
“কি গো ভাবী।আমাকে তো অনেক জ্বালিয়েছেন।এখন আমার ভাইয়ার আদর খাওয়ার জন্যে তৈরী থাকুন”।(আমি দুষ্টু হেসে বললাম)
“চুপ কর তুই ভাবী। আমি তো নার্ভাসনেসের ঠেলায় মরে যাচ্ছি।”(জুমু)
“উফফ…বিয়ে করেছো,বাসর করবে না??হা হা হা!”
জুমুকে আরো কিছুক্ষণ জ্বালিয়ে আমি আমার রুমে চলে এলাম।
রুমে গিয়ে দেখি সাদিফ খালি গায়ে, ট্রাউজার পড়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে এপাশ ঐপাশ হাঁটছে।
“ঘুম বাবু?”(আমি)
“হ্যাঁ,ফ্রেশ হয়ে আয় তুই।”(সাদিফ)
সাদিফের কথামতো আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।আমি ওয়াশরুম থেকে বের হতেই সাদিফ আমাকে কোলে তুলে নিলেন।
“কি ব্যাপার?”(আমি)
“কোনো ব্যাপার না।”(সাদিফ)
“তাহলে কোলে নিলেন কেনো?”
“ভালোবাসি তাই”।
“কতটুক ভালোবাসেন?”
“সত্যিকারের ভালোবাসার কোনো পরিমাণ হয় না।পরিমাণ মেপে কখনো ভালোবাসা যায় না।ভালোবাসা হবে অগণিত,যেখানে কোনো হিসাব থাকবে না।শুধুই থাকবে ভালোবাসা। যার না থাকবে কোনো হিসাব না থাকবে কোনো পরিমাণ।”
“তাই!!”
“হুম তাই। গেট রেডি ফর মাই টর্চার।”
আমি কিছু বলার আগেই, সাদিফ আমার মাঝে ডুব দিলেন।
সাদিফ একহাত দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আরেক হাতে উনার বুকের উপরে ঘুমন্ত পারিসাকে জড়িয়ে ধরে আছেন।
আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলছি।এই লোকের মাঝেই আমার সব সুখ বিদ্যমান।উনাকে আল্লাহ্ আমার জীবনে দিয়ে আমার জীবনকে পূর্ণ করে দিয়েছেন।এই মানুষটাকে আমি বড্ড ভালোবাসি।খুব বেশি ভালোবাসি। সাদিফকে আমি খুব শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলাম।
শেফা ঘুমিয়ে পড়লে সাদিফ পারিসাকে তাদের দুইজনের মাঝে রেখে,একসাথে দুইজনকেই জড়িয়ে ধরলো।আর সাদিফ মনে মনে বলছে….
“এই দুইজনই আমার সব।এইভাবেই আমার বুকের মাঝে এদের সারাজীবন আগলিয়ে রাখবো।কখনো কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে দিবো না।”
সাদিফ তার প্রিয়তমা এবং তার মেয়ের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে নিজেও ঘুমের মাঝে ডুবে গেলো।
আজ তার মনে নেই কোনো চিন্তা,নেই কোনো দুর্ভাবনা।আজ তার মনে শুধু আছে তার মেয়ে আর তার প্রিয়তমার জন্যে একরাশি ভালোবাসা।
এই ভালোবাসার নেই কোনো শেষ, নেই কোনো সীমানা।
তার প্রিয়তমার প্রতি সাদিফের এই ভালোবাসার সাধ সাত জনমেও মিটবে না।
❤️সমাপ্ত❤️
কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দয়া করে কেউ গল্প কপি করবেন না।আমার পেজ ছাড়া আমি আর কোথাও গল্প পোষ্ট করবো না।সো,কপি করা নিষেধ।
যারা যারা আমার পাশে ছিলেন তাদের জন্যে এত্তগুলো ভালোবাসা।আশা করি,সব গল্পেই আপনাদের পাশে পাবো।খুব শীঘ্রই নিউ গল্প আসবে।তার আগে একটা অনুগল্প লিখবো।সবাই প্লিজ আমাকে সাপোর্ট করবেন।আপনাদের থেকে এতো ভালোবাসা পাবো,এটা আমি কখনোই ভাবিনি।ধন্যবাদ সবাইকে❤️❤️