#প্রিয়তমা ❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-২৩
*
*
ভার্সিটিতে ক্লাস স্টার্ট হলো সবে মাত্র পাঁচ দিন আগে।আমি আর জুমু ভার্সিটি লাইফ বেশ ভালই এনজয় করছি।ভার্সিটি লাইফ আসলেই অনেক_ অনেক সুন্দর।কিন্তু পড়ালেখা যখন ভালো করে শুরু হবে তখনই আসল মজা বের হবে ভার্সিটির।
আজও ভার্সিটি গিয়েছি আমি আর জুমু।এতদিন ভার্সিটিতে থেকেও কোনো ফ্রেন্ড বানাতে পারিনি।কারণ একটাই,জুমু।এই মেয়ে আমাকে কোনো মেয়ের সাথে কথায় বলতে দেয় না আর নিজেও বলে না।তাই নতুন কোনো ফ্রেন্ড বানাতে পারলাম না।
কিন্তু আজ ক্লাস শুরুর দশ মিনিটের মধ্যেই,ক্লাসে দুজনকে প্রবেশ করতে দেখে আমার চোখ রসগোল্লা হয়ে গেলো। তাসিফ আর তাসফিয়া!ওরাও এই ভার্সিটিতে পড়ে!
পারমিশন নিয়ে ওরা ক্লাসে প্রবেশ করলো।আর তাসফিয়া আমাদের দেখা মাত্রই আমার পাশে খালি স্থানে বসে পড়লো।জুমু কিছু বললো না তাসফিয়াকে।কারণ তাসফিয়া আমাদের আগের ফ্রেন্ড। তাসিফের দিকে আমি তাকায়নি আমি।কেনো জানি ঘেন্না লাগে এই ছেলের দিকে তাকালে।
ক্লাস শেষেই ক্যান্টিনে গেলাম আমরা তিনজন মিলে।সামান্য খাবার অর্ডার করে আমরা আড্ডাতে মেতে উঠলাম।
“তো তাসফিয়া, এতো দিন কই ছিলি”??
চকলেট মুখে দিতে দিতে আমি তাসফিয়া বললাম।
“দোস্ত সুইজারল্যান্ড গিয়েছিলাম। ভাইয়া যে এই ভার্সিটিতে আমাদের এডমিট করে রাখবে তা তো জনাতাম ই না।যাক বেশ ভালো কাজ করেছে ভাইয়া।আমার মোবাইল হারিয়ে গিয়েছিলো,তাছাড়া আমার সোসিয়াল মিডিয়ার সব আইডি হ্যাক হয়েছিলো।তাই আর যোগাযোগ করতে পারিনি তোদের সাথে”।
তাসফিয়া একদমে কথাগুলো বললো।
“ওহহ তাই বল।আচ্ছা বেশ ভালো হয়েছে। একসাথেই হলাম আবার”।(জুমু)
তিনজনই নানা আলোচনায় মগ্ন হয়ে রইলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর ক্যান্টিনে সিনিয়রদের গ্যাং আসলো।
এক একটি গ্যাং এ চার পাঁচজন জন করে সদস্য। সব গ্যাং এ ছেলেমেয়ে একসাথে একজোট হয়েছে।
মেয়েগুলোর অবস্থা দেখার মতো নয়।টাইড টাইড ওয়েস্টার্ন পড়ানো মেয়েগুলোর।বেশ কম মেয়েই কামিজ পড়েছে।আর ছেলেগুলোর কথা কি বলবো।একটার চেয়ে একটা স্মার্ট আর হ্যান্ডসাম।কিন্তু কেউ আমার সাদিফ ভাইয়ার চেয়ে বেশি হট না। সাদিফ ভাইয়ার গায়ের স্মেল,হাসি,হাত পা সব, সব সবই আমার বেশি প্রিয়।
সিনিয়ররা আসার কিছু মিনিট পরে.. আমরা উঠে যেতে নিলেই,পিছন থেকে ডাক পড়লো।
“হেই থ্রি গার্লস, কাম হেয়ার”।
একটা ছেলের কণ্ঠে আমরা থেমে গেলাম।পিছে ফিরে দেখি, একটা ছেলে টেবিলের উপরে বসা হাতে তার কোল্ড ড্রিংকসের ক্যান,একটু পর পর সে এক সিপ করে খাচ্ছে।একনজর তাকিয়ে ছেলেটা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
আমরা কেউ ছেলেটির কথা কোনো পাত্তা না দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম।এমন টাইমে আবারো কারো কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো।কিন্তু এবার কোনো মেয়ের কণ্ঠ শুনতে পেলাম।
“এইযে আপুমনিরা আপনাদের ডাকছি। কানে কম শুনেন”?
একে তো আমার শরীরটা খারাপ লাগছে হঠাৎ করে। তারপর এদের কাহিনী আমার ভালো লাগছে না।জানিনা কেনো মাথাটা অনেক ভার লাগছে।
“জুমু তোরা গিয়ে দেখ তো কি বলতে চায় এরা।আমার মাথাটা কেমন জানি ব্যাথা করছে”।(জুমুকে কথাটা বলেই চেয়ারে আবারও বসে পড়লাম)।
শেফার এমন দুর্বল কণ্ঠ শুনে জুমু বেশ ভয় পেয়ে গেলো।
শেফাকে ভালোভাবে বসিয়ে জুমু আর তাসফিয়া সিনিয়রদের দিকে এগিয়ে গেলো।
“হুমম??কেনো ডেকেছেন?কিছু বলবেন?”(জুমু)
“তিনজনকে ডেকেছি।দুইজন আসলে কেনো?আর ঐ মিসের কি হয়েছে”?(ঐ ছেলেটা)
“সেটা আমাদের ব্যাপার।কিছু বললে বলেন,নাহলে আল্লাহ্ হাফেজ”।(তাসফিয়া)
“হু…নাথিং স্পেশাল। সাদিফ ভাই অ্যান্ড ইমরান ভাইয়ের বোন তোমরা?নাকি ঐ মেয়েটা”?
ছেলেটি তার হাতের ক্যান টেবিলে রাখতে রাখতে বললো।
“জ্বী না, আমি সাদিফ ভাইয়ার বোন আর ও ইমরান ভাইয়ার বোন”।(জুমু হাতে ইশারা দিয়ে বললো)
“ওহহ। হাই আমি ইজহার। সাদিফ ভাইয়ার সাথে পলিটিক্স করি।বলতে গেলে উনি আমার আইডল।আর খবর পেয়েছি ইমরান ভাইয়ার বোন তোমাদের মধ্যেই কেউ হবে।তাই আস্ক করলাম।বাই দা ওয়ে, ঐ মেয়েটি কে”?
(শেফার দিকে ইশারা করে ইজহার জিজ্ঞেস করলো)
“আমার বোন,কাজিন,ফ্রেন্ড,লাইফ সব কিছু।এনি প্রব্লেম”?(জুমু)
ইজহার যেনো এক আশা পেলো জুমুর কথা শুনে।টেবিল থেকে এক লাফেই নেমে পড়লো।শেফার দিকে তাকিয়েই বললো…
“নো,কোনো সমস্যা নেই।কোনো হেল্প লাগলে বা কোনো নিড হলে.. ইউ গাইস ক্যান টেল মি”।
কথাগুলো বলেই ইজহার চুলের উপরে হাত চালিয়ে হাঁটা দিলো।আর তার সাথে তার সাঙ্গপাঙ্গরা ধপ ধপ পা চালিয়ে তার পিছে পিছে চললো।
ইজহার যেতেই জুমু আর তাসফিয়া শেফার কাছে গেলো।বেচারার হঠাৎ করেই জ্বর চলে এসেছে।
“বেবি?আর ইউ ওকে?হঠাৎ জ্বর এলো কেনো তোর!”(জুমু)
“জানিনা জুমু।আমি বাসায় যাবো।প্রচন্ড উইক লাগছে”।
(শেফা খুব কষ্ট কথাগুলো বললো)
“গাড়ি এসেছে তোদের?নাকি আমার গাড়ি করে যাবি? তাসিফ ড্রাইভ করেছে আজ।গাড়ি ক্যাম্পাস এই আছে”।
(তাসফিয়া)
“ওকে গাড়ি বের করতে বল তাসিফকে।আমি তো গাড়ি আসতে বলিনি”।(জুমু)
“ওকে ওকে।আমি কল করছি তাসিফকে”।(তাসফিয়া)
তাসফিয়া আর জুমু খুব সাবধানে শেফাকে আস্তে করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বাহিরে।
ক্যান্টিন থেকে বের হতে ইজহার আর তার দল শেফাদের দেখতে পেলো।শেফার এমন অবস্থা দেখে ইজাহারের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো।কিন্তু সে তার প্রেস্টিজের কারণে এগিয়ে গেলো না।
অনেক্ষণ পরেও গাড়ির কোনো দেখা পাচ্ছে না জুমুরা।এইদিকে তাসফিয়া ফোন করলে তাসিফকে সে বারবার বলে “আসছি আসছি”।কিন্তু তার কোনো দেখা মিলছে না।
এইদিকে শেফার অবস্থার কথা শুনে, তাসিফ যেনো প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠলো। শেফাকে আরো কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তাসিফ ইচ্ছা করেই গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছে।
এবার জুমু বেশ বিরক্ত হলো।
“এতোক্ষণ লাগল আমাকেই বলতে পারতিস।আমিই বাসায় কল করতাম গাড়ির জন্যে”।(ভ্রু কুঁচকে তাসফিয়াকে বললো)..
“দোস্ত আমি জানতাম না।সত্যি সরি”।(তাসফিয়া)
“আচ্ছা ব্যাপার না।তোর কোনো দোষ নেই।এক কাজ কর উবারে কল দে”।(জুমু)
“ওকে”(তাসফিয়া)
ইজহার এতোক্ষণ দেখে থাকলেও এখন খুব দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো তাদের দিকে।
“এনি প্রব্লেম”?(ইজহার)
“নো ভাইয়া।আমরা ম্যানেজ করতে পারবো।আসলে ও একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে”।(জুমু)
“আসো। আমার গাড়ি করে ড্রপ করে দিচ্ছি”।(ইজহার)
জুমু কিছু বলতে যাবে এর আগেই তাসফিয়া বলল..
“জুমান উবার পাওয়া যাচ্ছে না।আর এইখানে সিএনজি পেতেও অনেক দূর হাঁটতে হবে”।
“প্লিজ চলো।আমি ড্রপ করে দিচ্ছি”।(ইজহার)
শেফার অবস্থার কথা ভেবে জুমু রাজি হয়ে গেলো।
জুমু,ইজহার,শেফা রওনা দিলো বাসার উদ্দেশ্যে।
শেফার বাসার গেটের সামনে গাড়ি থামতেই জুমু সাদিফ আর রাফসানকে দেখলো কথা বলতে।
আর হঠাৎ গাড়ি থামাতে সাদিফ আর রাফসান গাড়ির দিকে তাকালো।ড্রাইভিং সিটে বসা ছেলেকে দেখে সাদিফ সাথে সাথেই চিনে ফেললো।
ইজহার গাড়ি থেকে নামলে ,সাদিফ জিজ্ঞেস করে উঠলো…
“ইজহার?তুমি এইখানে”?
“হেই ভাই।আসলে আপনার কাজিন সিক হয়ে পড়েছে হঠাৎ।ওরা গাড়ি পাচ্ছিলো না।তাই আমি ড্রপ করে দিতে এসেছি”।(ইজহার)
ইজহার জুমুর দিকের দরজা খুলে দিলো।
জুমু নামতেই, সাদিফ আর রাফসান এগিয়ে গেলো গাড়ির দিকে। শেফাকে গাড়ির সাইট লেপ্টে থাকতে দেখে সাদিফের বুকে মোচড় দিলো।
সাথে সাথেই সে শেফাকে তার কোলে নিয়ে নিলো।
সাদিফের এভাবে শেফাকে কোলে নেওয়া দেখে ইজহার অবাক হওয়ার সাথে সাথে কোনো এক কারণে নিজের হাত মুঠ করে নিলো।
“থ্যাংকস ইজহার”।
বলেই সাদিফ শেফাকে কোলে নিয়ে চলে গেলো বাড়ির ভিতরে।আর তার পিছে পিছে গেলো জুমু আর রাফসান।
সাদিফের থ্যাংকস টা ইজাহারের কাছে যেনো বিষের মত লাগলো।চুপচাপ সে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
এইদিকে,শেফার গায়ের উত্তাপে সাদিফের শরীরটাও জ্বলে যাচ্ছে।এই মেয়ের হঠাৎ জ্বর কেনো এলো জানা নেই তার।
মনে মনে আল্লাহ্ এর কাছে একটাই দোআ করছে তার প্রিয়তমা যেনো ভালো হয়ে যায়।
কোলে নিয়ে যেতে যেতেই সাদিফ ধীরে ধীরে শেফাকে ডেকে চলেছে..
“বেবি!এই বাবু?বেশি খারাপ লাগছে তোমার”?
কিন্তু আফসোস!! জ্বরের ঘোরে “হুহু”আওয়াজ ছাড়া সাদিফ শেফার আর কোনো কথা শুনতে পেলো না।
শেফাকে কোলে নিয়ে ঢুকতে দেখে তার মা, ভাবী সবাই খুব উত্তেজিত হয়ে গেলো।
শেফাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সাদিফ তার হাত ধরে বসে রইলো।আর শেফার মা তার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে।রাফসান আর জুমু খাটের পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। সাদিফের এমন করে শেফার হাত ধরে রাখার ব্যাপারটা রাফসানের কেমন যেনো লাগছে।তবে এখন সে কিছু বলছে না পরিস্থিতির কারণে।
“বার বার বলি এই মেয়েকে খাবারে অনিয়ম না করতে।কিন্তু আমার মেয়েটা আমার কথা শুনলেই তো।কিছুদিন ধরে অনিয়ম শুরু করেছে,তাই তার এই অবস্থা।সে কি বাচ্চা নাকি?খাবারে অনিয়ম করলে তার প্রেসার লো হয়ে জ্বর উঠে সে কি জানে না?সকালেও গেলো ভার্সিটিতে নাস্তা না করে”।
এসব কথা শেফার মা বলতে লাগলেন জলপট্টি দিতে দিতে।
শেফার মায়ের কথা শুনে সাদিফের কপালের রগ ফুলে উঠলো।
“এই মেয়ের অনিয়ম করার মজা,আমি জনমের মতো চুকিয়ে দিবো”।
প্রচণ্ড রাগে সাদিফ মনে মনে কথাটি বললো।
চলবে…❤️
কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দয়া করে কেউ গল্প কপি করবেন না।আমার পেজ ছাড়া আমি আর কোথাও গল্প পোষ্ট করবো না।
তাছাড়া একটা কথা।আমি কষ্ট করে গল্প লিখ। গল্পের রিচ হই ২হাজার প্লাস,কিন্তু গল্পে লাইক পড়ে মাত্র ৪০০প্লাস।সো আমি সাইলেন্ট রাইটারদের বলবো…কমেন্ট না করলেও কষ্ট করে আমার গল্প পড়ার পর একটা লাইক দিয়ে দিবেন।আমার অনেক খুশি লাগবে।আমার লেখার কষ্টটা কমে যাবে অনেকখানি।আগে যখন গল্প বিভিন্ন গ্রুপ, পেজে পোস্ট করতাম তখন হাজার হাজার লাইক পেতাম।কিন্তু এখন নিজ পেজে পোস্ট করে আমি আমার যথার্ত লাইক পাচ্ছি না।সো, প্লিজ মেক মি হ্যাপী।
আর যারা যারা লাইক কমেন্ট করো.. আমাকে এত ভালোবাসো,তোমাদের জন্যে এত্তোগুলা ভালোবাসা❤️