#প্রিয়তমা ❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-১৭
*
*
প্রায় অনেক্ষণ পরেই ইসলাল ভাইয়া কল রিসিভ করলো।ভাবীর কান্না আমার একটুও ভালো লাগছে না। ভাবী চুপচাপ কষ্ট সহ্য করছে।
ইসলাল ভাইয়াকে জানানোর পর ভাইয়া সাথে সাথেই রওনা দিলো বাসার উদ্দেশ্যে।ভাবীকে পিঠের পিছে বালিশ দিয়ে ভালোভাবে বসিয়ে দিলাম বেডে।আর জুমু ভাবীকে এক পাশ জড়িয়ে বসে আছে।ভাবী এখনো ফোঁপাচ্ছে।
আমি তাড়াতাড়ি একটা ব্যাগে বাবুর জন্য কাঁথা,কিছু কাপড় আর ভাবীর জন্যে কাপড় নিয়ে নিলাম।
মিনিট দশেক পরেই ইসলাল ভাইয়া দ্রুত রুমে আসলো।ভাবীর কান্না দেখে রীতিমত ভাইয়ার অবস্থা দেখার মত ছিলো না।
আমি দেখে যতটুক বুঝতে পেরেছি ভাইয়ার মনে এখন তার প্রিয়তমা আর অনাগত সন্তানের চিন্তা খুব বাজে ভাবেই ঘুরছে।
দেরি না করেই, ইসলাল ভাইয়া বেড থেকে ভাবীকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে নিলো। আস্তে আস্তে হেঁটে ভাইয়া যেতে লাগলো।ভাইয়ার মুখে শুধু একটাই কথা শুনতে পেলাম….
“বোন তোরা দুইজন আয় আমার সাথে।একা আমি ইরার এই অবস্থা দেখতে পারছি না”।
ভাইয়ার কথায় আমি আর জুমু ভাইয়াদের পিছে ছুটলাম।আমার হাতে ঐ ব্যাগটা।ভাইয়া না বললেও আমরা যেতাম ভাবীর সাথে।মেইন দরজা বন্ধ করে গাড়ির দিকে গেলাম।ভাইয়া ভাবীকে খুব সাবধানে বসিয়ে দিলো গাড়িতে।ভাবীর পাশে বসলাম আমি।আর জুমু বসলো ভাইয়ার পাশের সিটে।
মাঝপথেই ভাবীর পেইন আরো তীব্র ভাবে বাড়তে লাগলো।
“ইরা জান,আরেকটু সহ্য করো।অলমোস্ট চলে এসেছি আমরা।তোমাকে স্ট্রং হতে হবে।আমাদের বেবি আসতে চলেছে।আল্লাহ্ ভরসা।দোআ পড় জান”।
ভাইয়া এমন নানা কথাবার্তা দিয়ে ভাবীকে উৎসাহ দিচ্ছে।এর মাঝেই আমার মোবাইল বেজে উঠলো। সাদিফ ভাইয়া কল দিয়েছেন।কল রিসিভ করতেই উনার চিন্তা মাখা কণ্ঠ ভেসে আসলো…
“হ্যালো!!কি হয়েছে তোমার??সরি আমি রিসিভ করতে পারিনি।সিক্রেট মিটিং এ ছিলাম। ঐখানে সেলফোন এলাও না।আর ইউ ওকে”??
“হ্যাঁ।আমি ঠিকাছি।আসলে ভাবীর লেবার পেইন উঠেছিলো।ভাইয়াকে পাচ্ছিলাম না ফোনে।তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে কল করেছিলাম।সরি।আমি জানতাম না আপনি মিটিং এ ছিলেন।এখন ভাইয়া এসেছে।আমরা হসপিটাল যাচ্ছি। জুমুও আছে আমাদের সাথে”।
“ওহহ আল্লাহ্!!কি বলিস!ভাবী ঠিকাছে এখন”??
“আছে বলতে, পেইনের কারণে কান্না করছে”।
“আচ্ছা আল্লাহ্ ভরসা।
আর এই মেয়ে এমন কেনো বলছিস।সরি কেনো”??
তোর যখন দরকার তখনই আমাকে কল দিবি। আমি যেখানেই থাকি না কেনো,তোর কল আমি রিসিভ করবোই।আর আজকে থেকে সিক্রেট মিটিং এ মোবাইল নিয়ে যাবো।
ওকে তোরা যা, আমিও আসছি একটু পরে হসপিটালে। কোনো দরকার পড়লে,ঐখানে গিয়ে আমাকে কল দিস।ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে এখন রাখছি”।
“আচ্ছা আল্লাহ্ হাফেজ”।
“হু, আল্লাহ্ হাফেজ”।
হসপিটালে যেতেই ভাইয়া দ্রুত সব ফরমালিটিস পূরণ করে নিল।আর সাথে সাথেই ভাবীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো।
প্রচন্ড চিন্তা হচ্ছে। ভাইয়া এখন বাবা মাকে ফোন করে ভাবীর এই অবস্থার কথা জানিয়ে দিলো। মা-বাবা প্রচন্ড চিন্তিত হয়ে পড়লো এই কথা শুনে। কিন্তু ভাইয়া এখন তাড়াহুড়া করে কাউকে রওনা দিতে মানা করলো। আস্তে ধীরে সবাইকে বললো আসতে।
মায়ের সাথে কথা বলা শেষ এই ভাইয়া কল ধরে বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে। আমি আর জুমু ভাইয়ার দুই পাশে বসলাম।ভাইয়ার চোখে পানি দেখে মনে মোচড় দিলো।
“ভাইয়া! তুমি কাঁদছো কেন ভাবী আর চ্যাম্প একদম ভালো থাকবে। আল্লাহ্ ভরসা”।
ভাইয়াকে আমি যতটুক পারছি ভাইয়াকে সান্ত্বনা দিলাম আমি।কিন্তু ভাইয়া বলে উঠলো…
“আমার বেবি আর ইরা সেভ থাকবে তো!!আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে।আমার ইরা অনেক কাঁদছিলো।অনেক পেইন করছিলো ওর।আমি যদি পারতাম,ওর কষ্টের ভাগ আমি নিয়ে নিতাম”।
আমি ভাইয়ার কাঁধ ধরে রাখলাম।কিছুই বললাম না।করুক না কিছুক্ষণ কান্না তার প্রিয়তমার জন্যে।এইভাবেই নাহয় ভাইয়া তার ছোট্ট ফ্যামিলির জন্যে ভালোবাসা প্রকাশ করুক।
আধা ঘন্টা পরে একজন নার্স ছোট্ট একটা বাবুকে তাওয়ালে পেঁচিয়ে নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়ালো।
“মিঃ ইসলাল আবেদীন।এই যে দেখুন আপনার একটা ছোট পরী এসেছে”।
ভাইয়া তার লাল চোখগুলো মুছে দাঁড়ালো। কাঁপা হাতে তার কান্নারত ছোট্ট পরীকে কোলে নিতে নিতে নার্সকে বলে উঠলো…
“আমার ওয়াইফ? ও কেমন আছে”?
“আপনার ওয়াইফ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছেন।নরমাল ডেলিভারি হয়েছে।বেবি জন্ম দেওয়ার পরেই উনি সেন্স হারিয়েছেন ব্যাথায়।তবে একটু পরেই সেন্স ফিরে আসবে”।(নার্স)
“আচ্ছা, আলহামদুলিল্লাহ্।ধন্যবাদ অনেক।আমার বেবিকে আমার কাছেই রাখি”?
“অবশ্যই।বাবু একদম ঠিকাছে।কেবিনে নিয়ে যান।আপনার ওয়াইফকেও ঐখানে শিফট করা হবে।৩২১নং কেবিনটা আপনাদের।আপনার ওয়াইফকে আমরা দিয়ে আসবো কেবিনে”।(নার্স)
নার্স বাবুকে গালে একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
“আমি এখানেই থাকবো।ইরাকে আমি নিয়ে যাবো কেবিনে।শেফা বাবুকে কেবিনে নিয়ে যা বোন”।
ভাইয়ার কথায় আমি অনেক যত্ন করে আমার চ্যাম্প কে কোলে নিয়ে নিলাম।
“জুমু চল আমার সাথে”।
জুমু আর আমি একসাথে বাবুকে নিয়ে কেবিনে চলে গেলাম।বাবু খুব কান্না করছিলো, তাই ওকে ঘুম পাড়িয়ে কেবিনে রাখা দোলনায় শুইয়ে দিলাম আস্তে করে।
আমি আর জুমু সুন্দর সুন্দর কিছু ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলাম ইতি আপু আর রাফসান ভাইয়ার কাছে।ওরা সবাইকে দেখাবে বাবুর ছবি।তাছাড়া,ভাবী ভালো আছে এই কথা জুমু সাদিফ ভাইয়া,আর বাকি সবাইকে জানিয়ে দিলো।
অনেকক্ষণ পরেও ভাইয়া আসলো না ভাবীকে নিয়ে।ভাবীর ফ্যামিলি এসেও দেখে গেলো বাবুকে।উনারা আবার আসবেন ভাবীকে কেবিনে দিলে।শুধু উনার মা আছেন ভাইয়ার সাথে ভাবীর ঐদিকে।
এখন প্রায় রাত নয়টা।বাবু হয়েছিল সন্ধ্যা সাতটা পনেরো তে।
এখনো ভাইয়া আসলো না।অবশ্য ভাইয়া কল করে বলেছিলো ভাবীকে সেলাইন দিয়েছে ঐটা শেষ করেই কেবিনে শিফট করবে।
আবারো রাফসান ভাইয়ার কল আসতেই জুমু মোবাইল নিয়ে কেবিনের বাহিরে চলে গেলো।
আমি বসে বসে বাবুকে পাহারা দিচ্ছি।জুমু একটু পর পর দরজা খুলে আমাদের দেখছে।কেবিনে কথা বললে বাবুর ডিস্টার্ব হবে।তাই ও বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
হঠাৎ দরজা নক করতেই আমি দরজার দিকে তাকালাম।
সাদিফ ভাইয়া এসেছে। উনার দু হাত বড় বড় প্যাকেটে ভর্তি।আমার দিকে একনজর তাকিয়ে ছোট্ট টেবিলে ঐ প্যাকেটগুলো রাখলেন।
আমি বাবুর দিকে তাকিয়ে আছি।কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে বাবুটা।
“অনেক আদুরে হয়েছে বাবুটা, তাই না”??
সাদিফ ভাইয়ার কথায় উনার দিকে ফিরলাম।উনি হাঁটু গেড়ে বসে এক নজরে বাবুর দিকে তাকিয়ে আছেন।
একটু ধরতে চাচ্ছেন বাবুকে আবার হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন।
উনার মুখে মুচকি হাসি দেখেই বুঝা যাচ্ছে,উনি বাবুকে আদর করতে চাচ্ছেন।কিন্তু বাবু উঠে গেলে সে ভয়ে আর হাত দিচ্ছেন না।
“বাবু উঠলে কোলে নিয়েন বাবুকে”।
আমার কথায় সাদিফ ভাইয়া মাথা উঠিয়ে আমার দিকে তাকালেন।
উনার তাকানোতে আমি আমার নজর নিচে নিয়ে নিলাম।
সাদিফ উঠেই শেফার কাছে গিয়ে বসলো।
“একটা আপেল দে আমাকে টেবিলের উপরে রাখা আছে, ফ্রুটসের প্যাকেট।পারবি”??(সাদিফ ভাইয়া)
“হ্যাঁ,পারবো না কেনো। আমি ধুয়ে দিচ্ছি”।
“আসলে কিছু খায়নি লাঞ্চের পর থেকে।টাইম পায়নি খাওয়ার।অনেক খুদা লেগেছে”।
“ওহ আচ্ছা।আমি আনছি।”।
টেবিলের উপর থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে সেখান থেকে দুইটা আপেল ধুয়ে উনাকে দিলাম। উনি হাত ধুয়ে আপেল গুলো নিলেন।
আপেলে কামড় বসাতে বসাতে সাদিফ ভাইয়া বলে উঠলেন..
“ভাবীকে কেবিনে দিতে লেট হবে।ভাবীর একটু ব্লাড দিতে হবে।তবে আজকেই দিবে কেবিনে।হঠাৎ ব্লিডিং শুরু হলো উনার।তাই দেরি হচ্ছে কেবিনে দিতে।ফ্যামিলি মেম্বারদের আসতে নিষেধ করেছি এখন।ওদের কালকে আসতে বলেছি”।
“কি বলেন..!ভাইয়া তো কিছু বলেনি।ভাবীর শরীর কি বেশি খারাপ”?
“নাহ শরীর ঠিকাছে।টেনশন লাগে অনেক এমন সিচুয়েশনে।তোর সময় আমার অবস্থা কি হবে আল্লাহ্ জানে”।
“মানে”?
“কিছু না। জুমু এখনো রাফসানের সাথে কথা বলছে মনে হয়।আমি আসার টাইমে দেখলাম”।
আমি কিছু বলার আগেই, বাবু কেঁদে উঠলো।
আর আমি আলতো করে বাবুকে কোলে নিয়ে নিলাম।
আস্তে আস্তে দুলিয়ে বাবুর কান্না থামানোর চেষ্টা করছি।
“এই! এইদিকে তাকা”।
সাদিফ ভাইয়ের কথায় আমি সামনে তাকাতেই উনি আমাদের তিনজনের একটা ছবি তুললেন।
আমি অবাক চোখে এখনো বুঝার চেষ্টা করছি।কারণ অনেক দ্রুত কান্ডটা ঘটলো।
“উফফ আমার যে কখন ছোট্ট বাবু আসবে।আমার বউটাও অনেক ছোট এখনো।বাট সমস্যা নেই।আল্লাহ্ ভরসা।বিয়ে করে নিই একবার। এরপর বাবু আনার দায়িত্ব আমার”।
এই কথা শুনে আমি চোখ আরো বড় করে তাকালাম উনার দিকে। উনি এসব কথা আমাকে বলছেন!
“আপনার বি”..
বলার আগেই সাদিফ ভাইয়া “আমার জান” বলেই আমার কপালে চুমু দিলেন।আর সাথে সাথেই জুমু দরজা খুলে আমাদের এই সিনটা দেখার, দর্শকের খাতায় নাম লেখালো।
চলবে….
জানি ছোট হয়েছে। বাট দিতে পেরেছি গল্প এটাই অনেক।অনেক বিজি থাকবো নেক্সট কয়েকদিন।গল্প দিতে না পারার সম্ভাবনা বেশি।
বকা দিবেননা আমাকে।
হ্যাপী রিডিং ❤️