প্রথম_প্রেমের_উষ্ণতা[০৫]

0
359

#প্রথম_প্রেমের_উষ্ণতা[০৫]
#ফারজানা_আক্তার

ভালোবাসার মানুষ খারাপ হলেও মানুষ একবার যাকে ভালোবেসে ফেলে তাকে কিছুতেই ভুলতে পারেনা, অনেক কষ্ট হয় অনেক। তীব্র কষ্ট বুকে নিয়ে বাঁচতে হয় সারাটাজীবন। নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসার পরেও যখন ভালোবাসার মানুষটা ছেড়ে যায় তখন যেনো বেঁচে থাকার সম্ভলটুকুও সে সাথে করে নিয়ে চলে যায় এমনটাই মনে হয়। শিশিরও আজ নিজের বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে না পেয়ে শেষ করতে যাচ্ছিলো নিজেকে। এমন সময় যদি লিজা না আসতো তবে খুব খারাপ কিছু হয়ে যেতো হয়তো। লিজার পেঁছন পেঁছন মানহাও আসে ধীরে ধীরে। ব্যাপার টা মানহা সবাইকে জানাতে চাইলে লিজা বাঁধা দেয়। লিজা শিশিরের সামনেও নিকাব পরে আসে, তাই তার চেহারা দেখা যাচ্ছেনা কিন্তু লিজা শিশিরের এমন কাজে ভয় পেয়ে যায় খুব, ভয়ে কপাল কুঁচকে যায় লিজার। মানহা আর লিজা মিলে শিশিরকে শান্ত করে বসায়, তখনও পাগলের মতো চটপট করছিলো সে। লিজা শিশিরকে বুঝায় এভাবে নিজেকে শেষ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। যার জন্য সে নিজেকে শেষ করতে যাচ্ছিলো সে তো দিব্যি ভালো আছে অন্যকারো কাছে। লিজা শিশিরকে জানিয়ে দেয় মায়া তার প্রেমিককে বিয়ে করে সংসার করতেছে। লিজা বুঝায় শিশিরকে আত্মহত্যা করলে এই দুনিয়াও যাবে আর পরপারেও শান্তি পাবেনা তাই ডিপ্রেশন কাটাতে বেশি বেশি করে আমল করতে, আল্লাহর ইবাদতে ডুবে থাকতে, ধীরে ধীরে সব কষ্ট চলে যাবে ইনশাআল্লাহ।
লিজা আর মানহা চলে গেলে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায় শিশির।

লিজা নিজের রুমে যেয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠে, কেনো জানি আজ অনাগত সন্তানের মৃত্যুর কথা অনেক বেশি মনে পরতেছে তার। মায়াকে দেখে যেনো কষ্ট দ্বিগুণ হয়ে যায় লিজার। ছোট ছোট কাপড় খেলনা কিনে রেখেছিলো মেয়ে বাবুর, মেয়ের নামও ঠিক করেছিলো ফাহারিয়া লিজার সাথে মিলিয়ে ফাহমিদা নিসা। আল্ট্রাতে উঠেছিলো মেয়ে বাবু হবে তাই। ছোট ছোট কাপড় আর খেলনা গুলো কাবাড থেকে বের করে বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে লিজা। দূর্ঘটনাটার পরে ডাক্তার বলেছে একবছর অবধি কন্সিব না করতে।

মানহা ভাইয়ের এমন অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী করছে কারণ সেদিন বিয়ে বাড়িতে মানহা সাহায্য করেছিলো তাদেরকে পরিচিত হতে, একে অপরের নাম্বারও মানহা সংগ্রহ করে দেয় তাদেরকে। মানহা ভাবছে সেদিন যদি মানহা ভাইয়ের ফিলিংসটাকে পাত্তা না দিতো তবে আজ এতোটা যন্ত্রণায় চটপট করতে হতোনা শিশিরকে। মানহার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে মানহা চিনেনা, মানহা পরিবারের জন্য এই বিয়েতে রাজি হলেও সে একটুও খুশী নেই। ফেসবুকে ছোট্ট কুটির নামে একটা পেজ আছে, ওই পেজে হাজার হাজার ভিউ। এই পেজের মালিক একটা ছেলে। পেজটা থেকে অনেক ভালো ভালো শিক্ষনীয় সামাজিক ইসলামিক লেখা আসে। আর সেই লেখাগুলোর প্রত্যেকটি শব্দ মুগ্ধ করে মানহাকে যদিও আজ পর্যন্ত সেই পেজের মালিকের চেহারা দেখার সৌভাগ্য হয়নি মানহার। মানহা না চিনে না দেখেই নিজের মনের সর্বোচ্চ সেই পেজের মালিককে দিয়ে বসে আছে তাই এই বিয়েতে খুশী হতে পারছেনা সে যদিও যার সাথে মানহার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেই ভীষণ ভালো আর ছেলেটা দেখতেও মাশাআল্লাহ, ভালো একটা জবও করে। তবুও মন খারাপ মানহার। এখন আর মানহা সেই পেজে যায়না, কোনো লেখা পড়েনা, লেখাগুলো যতই পড়ে ততই তার মায়ায় জড়িয়ে যায় মানহা, শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে হয়না মানহার ভাবনা।
______________

স্নিগ্ধ সকালে শ্বাশুড়ির সাথে ডাইনিংয়ে বসে চা নাস্তা করছিলো রিক্তা। তখনই সেখানে উপস্থিত হয় নিবিড়, নিবিড়কে দেখে রিক্তা সেখান থেকে উঠে চলে যেতে নিলেই নিবিড় ওকে ডাক দিয়ে বলে নাস্তা দিতে। কোনো প্রত্যত্তুর না করে বারান্দায় চলে যায় রিক্তা। নিবিড় বেশ অপমানবোধ করলো এতে, মায়া চা নিয়ে আসলে নিবিড় না খেয়েই রওনা দেন অফিসের উদ্দেশ্যে। রাগ হয় মায়ার, মনে মনে হাজার গালি দেয় রিক্তাকে, সামনে জায়েদা সুলতানা ছিলেন তাই মুখ ফোঁটে পারছেনা কিছু বলতে।
রিক্তা উঁকি মেরে দেখতে লাগলো নিবিড়ের যাওয়া। বিয়ের পর থেকেই নিবিড় অফিসে যাওয়ার সময় রিক্তা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতো, অভ্যাসটা রয়ে গেছে রিক্তার আর নিবিড়েরও। নিবিড়ও জানে রিক্তা ওখানে দাঁড়ায় কিন্তু ইদানীং নিবিড় রিক্তাকে আর দেখেনা বারান্দায় কারণ রিক্তা লুকিয়ে যায় নিবিড় তাকালেই। রিক্তা পারছেনা আর সহ্য করতে এই যন্ত্রণা তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো দূরে কোথাও চলে যাওয়ার কিন্তু সেখানেও বাঁধা জায়েদা সুলতানার।
__________

মানহা বাসর ঘরে বসে আছে মন খারাপ করে। মানহার স্বামীর নাম মাহিন ইসলাম। মাহিন রুমে মুসকি হাসির সাথে প্রবেশ করতেই কিছুটা নড়েচড়ে বসে মানহা। মাহিন সোজা গিয়ে সোফায় বসে ফোন টিপতে থাকে, মানহার ফোন ছিলো মানহার পাশেই, মানহার ফোনের ডাটা অন ছিলো। মাহিন ফেসবুকে ঢুকে তার পেজ থেকে পোস্ট করে “আলহামদুলিল্লাহ সবাইকে না জানিয়ে ফরজ কাজ টা সেরে ফেলেছি” তখনও মাহিনের মুখে মুচকি হাসি। মানহার ফোনে হঠাৎ টুং করে শব্দ করতেই মানহা তার ফোন হাতে নেয় যদিও নতুন মানুষটার সামনে ফোন হাতে নেওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিলোনা তার। নতুন মানুষটার সাথে এখনো পর্যন্ত একটা কথাও হয়নি মানহার। মানহা ফোন হাতে নিতেই দেখে নোটিফিকেশন এসেছে ছোট্ট কুটির পেজে একটা পোস্ট করা হয়েছে, মানহার মন খারাপ হয়ে গেলো আরো বেশি, ইচ্ছে করছে না পোস্ট টা সিন করতে তবুও মন মানছেনা তাই খানিক স্থির থেকে নোটিফিকেশনে ক্লিক করে সে। পেজে যেতেই দেখে ছোট্ট কুটির পেজ থেকে দেওয়া হয়েছে সে বিয়ে করেছে আর মিনিটেই হাজার হাজার ভিউ। বুকটা ক্ষেপে উঠে হঠাৎ এমন নিউজ দেখে মানহার। বিয়েটাও একই দিনেই হলো অথচ মানুষটাকে দেখা হলোনা একটা নজর। অস্থির অস্থির লাগছে মানহার। বাঁকা চোখে সব দেখছে আর হাসছে মাহিন। এবার মাহিন জিজ্ঞেস করলো মানহাকে কি হয়েছে ওর, মানহা কিছু বলছেনা তখন মাহিন মানহার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলে ছোট্ট কুটির পেজ টার মালিককে বড্ড বেশি ভালোবাসো তুমি তাইনা? অবাক হয় মানহা, কি বলবে বুঝতে পারছেনা, মাহিনের বারংবার জিজ্ঞেস করাতে পরে বলে “কিভাবে বুঝলেন?”

“তোমার কমেন্ট গুলো দেখে,, তোমার মতো কমেন্ট আর কেউ করেনা”।

” আপনি আমার আইডি নাম জানলেন কেমনে?”

“কারণ আমিই ছোট্ট কুটির পেজ এর মালিক”

কথাটি বলেই কুটকুট করে হেসে ফেলে মাহিন। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মানহা মাহিনের দিকে। মানহার যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না। তারপর মাহিন সব বলা শুরু করে “আমি সবসময়ই কমেন্ট চেক করে ঘুমায়, আর প্রতিদিনই তোমার কমেন্টে যেয়ে আঁটকে যেতাম, ভালো লাগা শুরু করতো, মুগ্ধ হতাম। গত একবছর যাবত তোমার কমেন্ট গুলো আমায় মুগ্ধ করতেছে। তাই কয়েকমাস আগে তোমার আইডি থেকে সব ডিটেইলস কালেক্ট করে তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই। তারপর তো সব তুমি জানোই। খুশিতে আত্মহারা মানহা।
__________

রিক্তা ব্যাস্ত হয়ে পরে তার সন্তান আর তাকে নিয়ে, নিবিড়কে ভুলতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে।
এভাবেই কেটে গেলো ৬মাস। এর মাঝে মায়া আর নিবিড়ের সম্পর্কও নষ্ট হতে শুরু হলো। মায়া শুধু একটা কথায়-ই বলছে সে বাচ্চা নিবেনা আর অন্যদিকে নিবিড় পাগল প্রায়ই বাচ্চার জন্য। রিক্তার পেট বুঝা যায় এখন, কারণ রিক্তার এখন ৯মাস রানিং। ডাক্তার ডেটও দিয়ে দিয়েছেন। আল্ট্রাতে উঠেছে মেয়ে বাবু হবে, তাই একমাস পর ডেট। নিবিড় এখনো জানেনা যে সে বাবা হতে চলেছে। রিক্তা এখন রুম থেকে বের হয়না, রিক্তার যা লাগে সব ওর শ্বাশুড়ী রুমে দিয়ে যায়। তাই নিবিড় আর মায়া টের পায়নি কিছু। মায়া আর নিবিড় যখন বাসায় থাকেনা তখন রিক্তা পুরো ঘরে হাঁটে, মাঝে মাঝে ছাঁদে যায় শ্বাশুড়ির সাথে। মায়া আর নিবিড় বাসায় থাকলেও তাদের মাঝে অশান্তি চলতেছে তাই রিক্তাকে নিয়ে তেমন ভাবেনা তারা। অনেক ঝগড়া অশান্তির পর নিবিড় বলে সে টেস্ট করাবে নিজের আর মায়ার, বাচ্চা কেনো হচ্ছে না, দূর্বলতা আসলে কার সব জানতে চাই নিবিড়। নিবিড়ের জীবন হয়ে উঠেছে এখন জগন্যরকম, কোনো সুখ নেই নিবিড়ের মনে। অপরদিকে রিক্তা তার অনাগত সন্তান নিয়ে বেশ আছে, এখন আর নিবিড়ের কথা ভেবে মন খারাপ করেনা রিক্তা। যে মানুষ তার ভালোবাসকে সম্মান দিতে পারেনি কখনো তার জন্য মন খারাপ করা বোকামি ছাড়া আর কিছুইনা। কিন্তু নিবিড়ের মন খারাপ হয় রিক্তার কথা ভেবে, আফসোস করে নিবিড় নিজের ভুলের জন্য, মুক্তার আশায় হিরা হারিয়েছে সে। আগে না বুঝলেও এখন খুব ভালো করে বুঝে নিবিড়, কিন্তু রিক্তার রুমে যেতে বেশ সংকোচ করে এখন নিবিড়ের তাই আর যাওয়া হয়না তবে একদিন গভীর রাতে উঁকি দিয়ে দেখে জায়েদা সুলতানা রিক্তার সাথে ঘুমায় তাই চুপচাপ নিজের রুমে পা বাড়ায় নিবিড়। মায়া নিবিড়কে রিক্তার রুমের সামনে দেখে তাই সেদিনও অনেক ঝগড়া হয় ওদের মাঝে। নিবিড় এখন রাতে ঘুমাতে পারেনা, ডিপ্রেশনে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
এর মাঝে লিজা অনেকবারই এসেছে রিক্তাকে দেখতে কিন্তু মায়ার সাথে দেখা হওয়ার ভাগ্য হয়নি কখনো কারণ লিজা যে সময়ে আসতো সেই সময়ে মায়া থাকতো চাকরিতে। মায়া ছোট খাটো একটা জব করে কম্পিউটার দোকানে। লিজা আসলেই যেনো রিক্তা একটু শান্তি পেতো, বন্ধ ঘরে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলো সে। লিজা তবুও অনেকবার বলেছে ওর সাথে যেতে কিন্তু রিক্তা আর জায়েদা সুলতানা রাজি হয়নি কখনো। লিজার ননদের বিয়েতে গিয়েছিলো রিক্তা, সেখানে পরিচয় হয়েছে লিজার শশুর বাড়ির সবার সাথে, সব শুনে সেদিন শিশির বলেছিলো “ছেড়ে দিন, ভালো থাকবেন।” আর এই কথাটাই রিক্তা হৃদয়ে গেঁথে নেয় তাই সে আজ সফল নিবিড়ের মায়া থেকে নিজেকে মুক্ত করতে।
_____________

এই কয়েকমাসে বেশ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে শিশির, বাবা ভাইয়ের সাথে নিজেদের কোম্পানিতে যোগ দেয়। মনের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা থাকলেও সেটা এখন আর প্রকাশ করেনা বাহিরে। বাস্তবতার সাথে খুব করে মানিয়ে নিয়েছে সে নিজেকে।
পরিবার থেকে শিশির কে আবার বিয়ে করাতে চাইলে শিশির রাজি হয়না কিছুতেই। তারপর একদিন____

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

[[ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি ]]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here