প্রথম_প্রেমের_উষ্ণতা[০৬]

0
331

#প্রথম_প্রেমের_উষ্ণতা[০৬]
#ফারজানা_আক্তার

থমথমে পরিবেশ, বাহিরে বৃষ্টির আনাগোনা। প্রতিটি বৃষ্টিফোঁটা ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে শিশিরের তবুও সে একই জায়গায় বসে আছে সকলের সাথে, মানহাও এসেছে মাহিনকে নিয়ে বেড়াতে, সবাই মিলে আজ একটা আলোচনায় বসেছে। আলোচানার মাঝখানে হুট করে লিজা রিক্তার নাম নিতেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় শিশির। শিশিরের চোখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যন্ত্রণা সব। শিশিরের বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই নেই তবুও পরিবারের জোরাজুরিতে রাজি হয়েছে নিজের মনের অনিচ্ছায়। কিন্তু রিক্তার কথা শুনে বিরক্তবোধ করছে শিশির কারণ যে ঘরে রিক্তা থাকে সেই ঘরে মায়াও থাকে আর মায়ার মুখোমুখি হতে চাইনা শিশির কিছুতেই। যদিও লিজা ঠিক বুঝিয়ে নিয়েছে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আর এটাও সত্য যে বিয়ের পর তো রিক্তা আর যাবেনা ওই ঘরে তবে কিসের এতো অজুহাত। মানহা আর মাহিনও বুঝিয়েছে। সব কথা শেষে শিশির উঠে নিজের রুমে চলে যায়। জীবনটাও এক অদ্ভুত, কেমন একটা ঘোলাটে মনে হচ্ছে সব। শিশির চলে গেলে লিজা সবাইকে নিয়ে ঠিক করে রিক্তার ডেলিভারির পর বিয়ের কথাবার্তা করবে এখন কিছু বলবেনা কাউকে আর। মানহার আবার আরেকটা চিন্তা রিক্তা রাজি হবে তো এই বিয়ের জন্য সাথে একটা সন্তান নিয়ে যদিও শিশিরের কোনো আপত্তি নেই সন্তানের জন্য। লিজা তখন বলে “রিক্তার শ্বাশুড়ি শুনা মাত্রই রাজি হয়ে যাবেন ওর খুশির জন্য আর একবার উনি রাজি হয়ে গেলে রিক্তার রাজি হতে আর সময় লাগবেনা।”
_____________

বাড়িতে রিক্তা আর জায়েদা সুলতানা ছাড়া আর কেউই নেই। মাত্র দুপুরের খাবার খেয়ে একটু রেস্ট করতে গেছে রিক্তা তখনই হঠাৎ করে রিক্তার ব্যাথা বেড়ে যায় যদিও দুদিন ধরে হালকা ব্যাথা ছিলো। জায়েদা সুলতানা তো ভয় পেয়ে যান এই ভেবে যে কি করবেন এই অবস্থায় একা তিনি। তিনি দ্রুত লিজাকে কল দিলে লিজা এক দায়মা নিয়ে চলে আসে ২০মিনিটের মধ্যে। আগে থেকেই সেই দায়মার সাথে কথা ছিলো এই বিষয়ে তাই উনাকে নিয়ে আসতে দেরি হয়নি, লিজার পরিচিত বলেই লিজা নিয়ে এসেছেন উনাকে। উনি আসার পরই কয়েক ঘন্টার মধ্যেই একটা ফুটফুটে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয় রিক্তা। মেয়ের মুখের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রিক্তা বলে “আমার মেয়ে আমার পরিচয়ে বড় হবে, আমি মা আমিই বাবা”। রিক্তার কথা শুনে মুচকি হাসে লিজা। মানহাও এসেছে রিক্তা আর রিক্তার মেয়েকে দেখতে। কথার ফাঁকে মানহা জিজ্ঞেস করে রিক্তাকে মেয়ের নাম কি রাখবে, রিক্তার প্রচুর খারাপ লাাগতেছে এখন তাই সে কারো সাথে কথা না বলে চোখ বন্ধ করে নিলো।
সন্ধ্যার দিকে নিবিড় বাসায় ফিরতেই ছোট বাচ্চার কান্না শুনে বুকটা ক্ষেপে উঠে হঠাৎ, পাগলের মতো পুরো ঘরে খুঁজতে লাগলো বাচ্চাটিকে। খুঁজে না পেয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় নিবিড় তখনই লক্ষ করে রিক্তার রুম থেকে একটি বাচ্চার কান্নার শব্দ ভেসে আসতেছে। কিছুটা সন্দেহ নিয়ে পা বাড়ায় সে রিক্তার রুমের দিকে, দরজার সামনে গিয়ে একটু দাঁড়িয়েই সে ঠোকা দেয় দরজায়, ভেতর থেকে জায়েদা সুলতানার কণ্ঠ ভেসে আসে “দরজা খোলা আছে”।
মায়ের কন্ঠ শুনে নিবিড় দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখে বাচ্চাকে আর রিক্তাকে এই অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখে চোখ বড় বড় করে ফেলে। তারপর মায়ের কাছে সব জানতে চাই, চোখে মুখে প্রচুর রাগ নিবিড়ের। জায়েদা সুলতানা এবার রাগান্বিত কণ্ঠে বলেন “যাকে তুই বন্ধ্যা বলেছিলি সে আজ এই মেয়ের জন্ম দিয়েছে, জানিস এই সন্তান আর কারো না এটা তোরই সন্তান কিন্তু আফসোস তুই এই সন্তানের মুখে বাবা ডাক শোনার অধিকার হারিয়ে ফেলেছিস অনেক আগেই। তুই জানিস যেদিন তুই এই মেয়েকে সন্তান জন্ম দেয়ায় অক্ষম বলে ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দিয়েছিলি হাতে সেদিন এই মেয়েটা অস্থিরভাবে অপেক্ষা করেছিলো তোকে ওর প্রেগ্ন্যাসির খবরটা দেওয়ার জন্য কিন্তু মুহুর্তেই তুই ডিভোর্স পেপার হাতে ধরিয়ে দিয়ে এলোমেলো করে দিয়েছিলি সব। তুই আমায় একবার বললেই পারতি মায়াকে তুই ভালোবাসিস, আমি নিজেই ওই মেয়েকে এনে দিতাম তোর হাতে কিন্তু তুই তা করিসনি বরং সেদিন খুশিমনেই আমার কথা রাখার জন্য রিক্তাকে বিয়ে করেছিস। তুই তো জানিসও না তুই একসাথে কয়টা জীবন নষ্ট করেছিস। তুই জানিস এই মায়া মেয়েটা কত জগন্য? কয়টা জীবন নষ্ট করেছে এই মেয়েটা?
তারপর সবকিছু বলেন জায়েদা সুলতানা নিবিড়কে। এসব শুনে যেনো নিবিড়ের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছে। মায়া নিবিড়কে বলেছিলো শুধু ওর স্বামী একজন নেশাখোর, এর বাহিরে মায়া আর কিছু বলেনি নিবিড়কে, নিবিড়ও কখনো আর কিছু জানতে চাইনি। একটা প্রাণের জন্ম হওয়ার আগে তাকে খুন করেছে মায়া, এটা ভাবতেই যেনো গায়ে কাঁটা দিয়ে দেয় নিবিড়ের।
রিক্তার মেয়ে আবারও কান্না করে উঠতেই জায়েদা সুলতানা রিক্তাকে ডেকে দেয় ওকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য। রিক্তা উঠে কোনোমতে বসে মেয়েকে কোলে নেয়, প্রথমে রিক্তা খেয়াল করেনি নিবিড়কে, পরক্ষণেই লক্ষ করে সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। নিবিড় অবাক মেয়েকে দেখে কেননা রিক্তার কোলে যেতেই মেয়ে শান্ত হয়ে গেছে। নিবিড় একটু এগিয়ে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত রাখতেই রিক্তা বলে উঠে “টাচ করবেননা আপনি আমার মেয়েকে। চলে যান আপনি এখান থেকে, আমার মেয়ের খিদে লেগেছে।”

“কি আমার মেয়ে আমার মেয়ে করছো তুমি? ও আমারও মেয়ে আর কি আপনি আপনি করতেছো? ”
কিছুটা রাগান্বিত কণ্ঠে কথাগুলো বলে নিবিড়।

“অবশ্যই ও শুধু আমার মেয়ে, আপনাকে তুমি করে বলার অধিকার কেঁড়ে নিয়েছেন বহুআগে। আপনি যেদিন আমার হাতে ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দিয়ে অন্যকে বউ করে ঘরে তুলেছিলেন সেই মুহুর্তেই আমাদের সব সম্পর্ক শেষ আর যেটুকু সম্পর্ক বেঁচে আছে তা হলো শুধু নামের।”

কথাগুলো বলেই রিক্তা তার শ্বাশুড়িকে বলে কাবাড থেকে ডিভোর্স পেপার টা দেওয়ার জন্য। জায়েদা সুলতানা ডিভোর্স পেপার আর কলম এনে দিতেই রিক্তা এক হাতে ধরে কোনোরকমে সিগনেচার টা করে দেয় তারপর নিবিড়ের দিকে কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বলে “নিন সিগনেচার করে দিন, আম্মুর থেকে জবানবন্দি নিয়ে এই পেপারের সাথে আরেকটা পেপার দেওয়া হয়েছে দয়া করে কোনো ঝামেলা না করে সেটাতেও সিগনেচার করে দিন।”

“কিসের পেপার আরেকটা?”

“নিজেই দেখে নিন।”

রিক্তার এমন স্ট্রং কথা শুনে কিছুটা বিরক্ত হয় নিবিড়। রাগে কান লাল হয়ে যায়। নিবিড় কাগজটা পড়ে যেনো থমকে যায়। চোখ থেকে আপনা আপনিই জল গড়িয়ে পরে টুপ করে।

“আমি ডিভোর্সও দিবোনা আর এই পেপারেও সিগনেচার করবোনা কখনো যা করার করো তুমি।”
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে নিবিড়।

“যা যা করার দরকার সবই করে ফেলেছি। আপনি যদি এসবে সিগনেচার না করেন তবে কারাগারে বন্দি হতে কেউই আটকাতে পারবেনা আপনাকে। আম্মু সাক্ষী আছে, আম্মু সব বলেছে পুলিশের কাছে আর জজ এর কাছেও। উনারা সব শুনে খুব ক্ষেপে গেছে আপনার উপর, এবার যদি আমি একটা কল করি তবে সারাজীবন আপনি আর এই মেয়ের মুখ দেখতে পাবেননা মনে রাখবেন কথাটা।”
রিক্তা কথাগুলো বলে মেয়ের কপালে এঁকে দেয় ভালোবাসার রেখা। নিবিড় কাগজগুলো হাতে নিয়ে চলে যায় নিজের রুমে। রুমে যেয়েই সে কাগজগুলো টেবিলের উপর রেখে চলে যায় ওয়াশরুমে। মায়া অফিস থেকে এসে গা এলিয়ে দেয় বিছানায়, হঠাৎ মায়ার নজর পরে টেবিলে রাখা সেই কাগজের উপর। মায়া উঠে ধীরে ধীরে পা বাড়ায় টেবিলের দিকে, টেবিলের কাছে যেয়েই সে কাগজগুলো হাতে নিয়ে পড়ে। এই যেনো না চাইতেই আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। খুশিতে নিজে নিজেই নেচে উঠে মায়া। কিন্তু সন্তানের নামে যে কাগজ সেটা দেখেই থমকে যায় সে। রিক্তার মেয়ে হলো কবে? ভাবনায় মগ্ন মায়া। এক ছুটে রুম থেকে বেড়িয়ে সে রিক্তার রুমের সামনে যেয়ে উঁকি মেরে দেখে। মায়া শুধু অবাকই হয়নি রিতীমত ধা’ক্কা খেয়েছেও বটে। একই ঘরে থেকেও মায়া কিছু বুঝতে পারেনি কিভাবে সেই চিন্তায় ডুব দেয়। পরক্ষণেই মায়ার মনে হয় এই মেয়েকে বি’ক্রি করলে ভালোই ইনকাম হবে ওর তাই সে মনে মনে পরিকল্পনা করে যে করেই হোক এই মেয়েকে চু’রি করতেই হবে।
নিবিড় অনেক ভেবে চিন্তে কাগজগুলোতে সিগনেচার করে দেয়। তারপর মায়াকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার দু’জনকেই কিছু টেস্ট করতে দেয়। সেদিনের জন্য চলে আসে ওরা বাসায় কারণ রিপোর্ট দিবে বলেছে কয়েকদিন পরে।

রাত তখন ০২টা ছুঁই ছুঁই। রিক্তা ঘুমায় একপাশে আর জায়েদা সুলতানা ঘুমায় একপাশে মেয়ে তাদের মাঝখানে।
অনেক উঁকিঝুঁকি মেরে রিক্তার রুমে প্রবেশ করে মায়া। উদ্দেশ্য রিক্তার মেয়েকে চুরি করা। ধীরে ধীরে বিছানার পাশে গিয়ে মেয়ের দিকে হাত বাড়াতেই মায়ার হাত ধরে ফেলে_____

কে ধরতে পারে মায়ার হাত? বলুন তো রিডার্স।।

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here