প্রেম ঘোর #পর্ব_৪৮_৪৯_৫০ 💜💜

0
1106

#প্রেম ঘোর
#পর্ব_৪৮_৪৯_৫০
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹

নৌশিন সাদাদের উরুতে বিভোর হয়ে ঘুমাচ্ছে।সাদাদ নৌশিনের উপর দিয়ে হাত রেখে লেপটপে কাজ করে চলেছে।………
সকাল নয়টা,
সাদাদ নৌশিনকে ডেকে তুলে।দুজনে একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে নিচে গিয়ে দেখে সবাই ওদের জন্য ওয়েট করছে,
“কি রে নৌশিন ঘুম ভাঙলো তোর?”
সবার সামনে নৌশিন একটু লজ্জা পেয়ে যায়,
“আসলে,বাসায় না আমি সকাল বেলা ঘুমাতাম….তাই আর কি অভ্যাসবসত…..বাট আমি আজ সকালে নামায পড়ে প্রায় এক ঘন্টার মতো পড়েছি……..”
“মানে আস্তে আস্তে ট্রাই করছি আর কি…….”(মাথা নিচুঁ করে)
“বউ মা,তুমি এতো জড়তা নিয়ে কেন কথা বলছো?আমরা কেউ কি কিছু বলেছি তোমাকে??তা ছাড়া আমরা সবাই জানি তুমি বাসায় রাত জেগে পড়তে আর সকাল বেলা ঘুমাতে…এখানে এসে তাই করবে এতো ফরমাল হওয়ার কিছু নেই…….”(প্রাপ্তির মা)
নৌশিনের বুকের ভেতর দিয়ে যেন একটা শীতল হওয়া বয়ে গেলো।কেন ই বা হবে না এমনটা?চাচী শাশুড়ির মুখে এমন কথা ভাগ্য না থাকলে শোনা যায় না।আসলেই বলতে হবে নৌশিন ভাগ্যবতী বটে।
“আচ্ছা,বাদ দাও……এখন সবাই খাওয়া শুরু করো….আর নৌশিন তুমি আজ পড়টা খাবে….আলুর পড়টা…..কোনো কথা শোনবো না আমি……”(সাদাদের মা)
নৌশিনের মাথায় বাস,যে তেল দিয়ে রুটি ই খায় না-সে আবার খাবে পড়টা তার উপর আলুর!!!
“মা!!!তেল তো….”
“তো??কি হয়েছে???শরীরের দিকে দেখেছো একবার বাতাস এলে মনে হয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাবে,একটু চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার রোজ……শুধু শর্করা তে কিছু হয় না তার পাশাপাশি ভিটামিন,চর্বি,আমিষ এগুলোও খাওয়া দরকার….”
“বাব্বাহ্,জেঠি মা তুমি তো ডক্টর হয়ে গেছো……”(প্রাপ্তি)
“শোন এগুলোর জন্য ডক্টর হতে হয় না,সব শিক্ষিত মানুষ ই জানে….এখন চুপচাপ খা আর রেডি হয়ে কলেজ যা……”
“ওকে ডিয়ার…..”(প্রাপ্তি)
“রাফসা মা,নৌশিনকে দুটো পড়টা দাও…….”(সাদাদের মা)
“মা!!!……”(কাঁদোকাঁদো গলায়)
“চুপ একদাম……..আলুর পড়টা,আর তোমার জন্য বেগুন ভাজা করা হয়েছে তুমি তো এই সবজির তরকারী খাবে না এতে পেঁপে আছে….তাই তোমার জন্য বেগুন ভাজা করেছি আমি…..খাও এখন…..”
“ওয়াও….বেগুন ভাজা…আই জাস্ট লাইক ইট……লাভ ইউ মা…..”
নৌশিনের এক্সাইটেডমেন্ট দেখে সবাই হাঁসতে শুরু করে।অবশ্য একজন জ্বলতেও থাকে😂😂।
সবাই একসাথে খাচ্ছে,
বেগুন ভাজা হওয়ায় নৌশিন একটু একটু পড়টা নিচ্ছে আর অনেকটা করে বেগুন ভাজা নিয়ে খাচ্ছে।
দেখে মনে হচ্ছে,বেগুন ভাজা দিয়ে পড়টা নয়-বেচারী বেগুন ভাজা খাচ্ছে পড়টা দিয়ে……যাক খেলেই হলো।☺☺
বাট দুটো বেগুন ভাজা আর অর্ধেক পড়টা খেয়েই নৌশিনের পেট ফুলফিল।
তাই মুখে একটা কিউট হাঁসি ফুটিয়ে বলছে,
“আমার হয়ে গেছে…..”
কথা শেষ করার সাথে সাথেই সাদাদ নৌশিনের দিকে রাগী চোখে তাঁকিয়ে আছে।ভয় পেয়ে যায় নৌশিন।মাথা নিচুঁ করে বলে,
“সত্যিই পেট ভরে গেছে….”
“আর একবার বললে,সবার সামনে থাপ্পর খাবে,এক ঘন্টার জায়গায় দু ঘন্টা পর ঘুম থেকে জাগিয়েছি…..এখন যদি আমার কথা না শোনো খারাপ হয়ে যাবে খুব…..
চুপচাপ বাকী খাবার টা শেষ করো……”(সাদাদ)
“ওফফ….ভাবী তুমি না!আমি আলরেডি দুটো খেয়ে ফেলেছি….এটা নিয়ে তিনটা হবে….আর তোমার কিনা অর্ধেক টা খেয়ে ই হয়ে গেলো……খাও খাও…”
নৌশিন সাদাদের দিকে আড় চোখে তাঁকিয়ে দেখে সাদাদ এখনও ওর দিকে রাগী চোখে তাঁকিয়ে আছে।
তাই আর কোনো দিকে না তাঁকিয়ে বাচ্চাদের মতো নিচুঁ হয়ে একটু একটু করে খাওয়া শুরু করেছে।আর সেটা দেখে সাদাদ সহ সবাই মিটমিট করে হাঁসছে।
…………
নৌশিন অনেক কষ্টে আরও একটা বেগুন ভাজা দিয়ে আধ খাওয়া পড়টা শেষ করলো।সবাই যার যার মতো খাচ্ছে।আচমকায় নৌশিন কান্না করে ফেলে।
“এই কি হলো তোর?”
সাদাদও ভ্যাবাচেকা হয়ে যায়।নৌশিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাঁকিয়ে থাকে শুধু কিছু বলছে না।
“কি হলো মা??”(সাদাদের বাবা)
নৌশিন ওর শশুড়ের দিকে তাঁকিয়ে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো,”আমি আর খাবো না,পেট ভরে গেছে…….”
সাদাদ হাঁসবে না কাঁদবে নাকি রাগ করবে সে নিজেই বুজতে পারছে না।এতো বড়ো একটা মেয়ে শশুড় বাড়িতে এসে একটা পড়টা খেয়ে আর খেতে না পাড়ার জন্য যদি সবার সামনে কেঁদে দেয় তো হাসবেন্ড হিসেবে সাদাদের কি করা উচিত সেটা সত্যিই সাদাদের জানে নেই।
সাদাদ রেগে গিয়ে,নিজের সামনে থাকা মাখনের বাটি থেকে ছুরি টা নিয়ে একটা আপেলে আঘাত করে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“তুমি!!!!!!।”
নৌশিন সাদাদের রিয়েক্টে আরও ভয় পেয়ে যায়……
আসলে নৌশিন ইচ্ছে করেই কেঁদে দিয়েছে কারণ বেচারী আর খেতে পারছিলো না তো স্বাভাবিক ভাবে বললে সাদাদ ওকে জোর করতো রেগে গিয়ে।তাই সাদাদের ভয়ে ই কান্না শুরু করে দিয়েছিলো।বাট এতে রাগী সাদাদ যে আরও একটু রেগে গেছে।
“এই থাম তো তুই……রাগ দেখাস না সবসময়……আর নৌশিন বাচ্চাদের মতো কাঁদার কিছু নেই….হয়েছে একটা পড়টা আর তিনটা বেগুন ভাজা,আজ তবু অনেক খেয়েছিস….এখন চোখ মুছ…..পানি খেয়ে যা রোমে যা…….”
“যান পানি খেয়ে আমাকে রক্ষা করো….আর বসে থেকো না…….”(সাদাদ)(ধমক দিয়ে)
“সাদাদ,আস্তে…..এতো জোরে বলার কিছু নেই….”(সাদাদের মা)
“ও এটাই পারে,আমার তো মনে হচ্ছে নৌশিন ওর ভয়ে ই কেঁদে দিয়েছে না হলে স্বাভাবিক ভাবে ই বলতো….”(রাফসা)
“হইছে??থাক আর মাথায় তুলো না……”(সাদাদ)
“তোকে বলতে হবে না…খা তুই তোর টা…..নৌশিন যা রোমে যা……”
নৌশিন পানি খেয়ে সবার সামনে থেকে দৌঁড়ে উপরে চলে যায়।আনমনেই সাদাদ একটা হাঁসি দিয়ে দেয়…….
সাদাদের হাঁসি দেখে বাকীরাও না হেঁসে পাড়ে না।
“সত্যিই বাচ্চা একটা…..”(অরূপের বাবা)
“ঠিক বলেছো….”(রাফসা)
“ঠিক বাট সি ইজ সো কিউট……”(সাদাদ)
কথাটা শুনেই সাদাদের কাকা বিষম খায়,আর সাথে সাথে সাদাদের হুশ আসে-যে সাদাদ সবার সামনে নিজের বউকে কিউট বলছে।বিশেষ করে কাকা,বাবার সামনে।বেপারটা আসলেই হাস্যকর😂😂😂😂।
প্রাপ্তির মা প্রাপ্তির বাবাকে পানি এগিয়ে দেয়,বিষয়টাতে সবাই একটু মজা পায়।সাদাদ কোনো রকম তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে চলে গেলো নিজের রোমে।
হাঁসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে সবাই সকালের খাওয়া শেষ করে যথারীতি যে যার কাজে গেলো।
যদিও সাদাদ এখন বের হয় নি,
“এই যে,দুপরে ঠিক টাইমে গোসল করবে,আর লান্স আমার সাথে,আবার কম খাওয়ার জন্য আমাকে রেখেই করো না…..”
“হুম…..”
“হুম…কিউটি…..”
“এই শোনো শোনো….”
“কি??”(আয়না দিয়ে নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে)
“আমি যে তখন কাঁদলাম তুমি রাগ করেছিলে তাই না??”
“হ্যাঁ করেছিলাম…বার কেন জানি রাগ টা অটোমেটিকলি উবে গেলো…..”
নৌশিন চেয়ার থেকে উঠে এসে,পেছন থেকে সাদাদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমি জানি তুমি আমার উপর বেশি রাগ করে থাকতে পারো না……”
“আচ্ছা!!!”
“হুম…..”
“ম্যাডাম….এবার ছাড়ুন…অফিসে লেইট হবে তো……”
“ওহ্….আচ্ছা আচ্ছা…….”
নৌশিন সাদাদকে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ায়।বারাবরের মতোই সাদাদ নৌশিনের কপালে একটা চুঁমু এঁকে ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
………………….
নৌশিন পড়ছে,
এগারোটায় অরূপ নৌশিনের রোমে এসে নৌশিনের চেয়ারের পাশে দাঁড়ায়।কোনো কথা বলে নি,নৌশিনের বইয়ের দিকে তাঁকিয়ে আছে।নৌশিন অরূপের দিকে তাঁকিয়ে,
“এ মা…..আমার বাবু টা এসে গেছে…..”
“হুম…..তুমি পলছো??”
“হ্যাঁ সোনা……”বলেই অরূপকে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।
“বাবু,তুমি তো স্কুল ড্রেস ও খুলো নি……”
“উম….আম্মু নাকি ছাদে গেছে কাজ কলছে….আমি তো পেন্ট খুলতে পালি না……”
“ওরে বাবু…..এসো আমি তোমাকে চেন্স করিয়ে দিবো……..”
আজকাল অরূপের খাওয়া,দাওয়া,চেন্স করা এই টুকটাক জিনিস গুলো নৌশিন ই করে দেয়।অরূপকে খাইয়ে দিয়ে নৌশিন আবার পড়া শুরু করে।যতই হোক সেমিষ্টার ফাইনালের আর বেশি দিন নেই,সো পড়তে তো হবেই।
কি জানি কি মনে করে কিছুক্ষণ পর নৌশিন দৌঁড়ে অরূপদের রোমে যায়।নৌশিন নিজের বাড়িতে যেমন দৌঁড়াদৌঁড়ি করতো এ বাড়িতে ঠিক সেভাবেই চলাফেরা করে।আর বাড়ীর সবাই এটাকে ভালোভাবেই দেখে।ওরা এমন হাঁসোজ্জল একটা মেয়েকেই সাদাদের জীবনে চেয়েছিলো।
নৌশিন রোমে গিয়ে দেখে,অরূপ ওর মায়ের সাথে শুয়ে শুয়ে স্কুলে কি হয়েছে না হয়েছে সব গলগল করে বলছে।
নৌশিনকে দেখপ একটা চিৎকার দিয়ে বলে,
“ইয়ে…..নতুন বউ…..এসো এসো……..”
নৌশিন ওদের পাশে গিয়ে বসলো,
“কি রে নৌশিন……কিছু বলবি মনে হচ্ছে…….”
“কি বলবে নতুন বউ???খুদা লেগেছে তোমাল?”
“না বাবু…….”
“ওওওওও….”(অরূপ)
“ভাবী,তোমার ফোন টা একটু দাও না…..”
“ও তুমি গেম কলবে??”
“অরূপ চুপ করো তো….বেশি পাকামো করো না……”(অরূপের মা)
“না সোনা,গেম করবো না….একটু কথা বলবো….”
“চাচ্চুল সাথে???”
“অরূপ!!!!!”(চোখ রাঙিয়ে….)(অরূপের মা) নৌশিন মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে বললো, “হুম,তোমার চাচ্চুর সাথে…..বাট আব্বু তুমি কি করে জানলে?”
অরূপ মুখে আঙুল ডুকিয়ে চুষতে চুষতে ওর মায়ের পেটের ওপর শুয়ে বলছে,
“আব্বু অফিসে গেলে আম্মু যে আব্বুকে ফোন দেয়……..তাই জানলাম….”
রাফসা অরূপের কান হালকা করে মুচুড় দিয়ে বললো,
“ওরে পাঁজি,তুই কবে দেখলি??”
“ওলে,ওলে,আমি তো অনেকদিন দেখেছি….ওলে,ব্যাথা পাই….ছালো আম্মু…..”
“আহ্ ভাবী ছাড়ো……হি হি হি……”
“হি হি হি হি……..”(অরূপ)
“এই তোরা থামবি??অরূপ উঠ এখন পড়তে বসবি…..আর আপনি ঐ যে ফোন নিয়ে যান…….”
নৌশিন মুঁচকি একটা হাঁসি দিয়ে বললো,
“আচ্ছা যাচ্ছি…….”
!
#প্রেমঘোর#৪৯#
💜💜

নৌশিন রাফসার ফোন নিয়ে নিজের রোমে চলে যায়।অরূপ এখনও ওর মায়ের পেটে আগের মতোই শুয়ে আছে।
“অরূপ উঠো,বলছি না পড়তে হবে……..”
“ও আম্মু এখন পলবো না,গল্প কলি আসো……”
“কি গল্প বাবু,অনেক তো করলাম,পড়তে হবে তো…..”
“পলে পলবো আম্মু……একটু আদল কলো…….”
“কি আদর করবো তোমায় আমি??তুমি না বড় হয়ে গেছো??”
“বল হয়ে গেলে আদল কলে তো??আব্বু না তোমায় কলে??”
ছেলের কথা শোনে রাফসার মাথায় বাজ পড়ার অবস্থা………..
“মানে?কি বলছো তুমি??”
“ঐ দিন না আব্বু ছাদে তুমাকে কিসি কললো,তালপল জানো আম্মু লিদি আন্টিও চাচ্চুকে একদিন কিসি কলেছিলো বাগানে……”
কি বললো অরূপ??ওর মায়ের আত্মা কেঁপে উঠেছে বোধহয়।ছেলেকে এক ঝটকায় পেট থেকে নিজের বুকে ঝড়িয়ে নিলো,যেন ভয় না পায় তাই স্বাভাবিক ভাবে ই বললো,
“কি বললে আব্বু?তোমার রিদি আন্টি??”
অবুঝ ছেলে বুজতে পারছে না ওর মা ঠিক কি বলতে চাইছ!!
রাফসা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আবারও জানতে চাইছে,
“আব্বু কি করেছে তোমার রিদি আন্টি??”
রাফসার রিদির হাবভাব মোটেই ভালো লাগে না।আর ওনি এটাও খুব ভালো করে জানেন ওনার ছেলে কোনো কিছু না দেখলে এমন কথা কখনও বলতো না।
অরূপ তার মায়ের প্রশ্নের জবাবে ওর মায়ের বুকে শুয়ে চুল দিয়ে খেলতে খেলতে আবারও বল উঠলো,
“কিসি কলেছে……”
“কাকে?”
“চাচ্চুকে??”
“সত্যি??”
“হুম…..কালকে আগেল দিন কালকে কলেছিলো….”
“বাবু কালকের আগের দিন কালকে,মানে কি বার ছিলে সে দিন??তোমার নতুন বউ কোথায় ছিলো??”
“ঐ যে নতুন বউয়েল ভাই এলো না??”
“হুম….ঐ দিন??”
“না ওল আগের দিন…..”
“তুমি যে দিন বাগানে একা খেলতে গেলে,শরীফ চাচা গেইএ বন্ধ করে দিয়েছিলো সে দিন?”
“হুম হুম….আমাল বল বাগানের দূলে চলে গেছিলো আমি আনতে গেছিলাম…..পলে গালিল কাছে ঘুলছিলাম….আল চাচ্চুকে দেখলাম বাগানে ফোনে কথা বলছে আল তখন লিদি আন্টি চাচ্চুকে জলিয়ে ধরে অনেকগুলো আদল কলেছে……আল চাচ্চু লিদি আন্টিকে না একটা জোলে ধাক্কা মেলেছে……আমাল না খুন কষ্ট হচ্ছিলো লিদি আন্টি কত্ত কিসি কললো আল চাচ্চু একটাও কিসি কললো না…..বলো আম্মু তুমি আমায় কত আদল কলো আমিও তো তোমায় আদল কলি…..কিন্তু একটুও আদল কললো না আন্টিকে…….পলে আমি আল দেখি নি শরীফ দাদু আমাকে পেছন থেকে কোলে কলে বলেল কাছে নিয়ে গেলো……..”
রাফসা কি শুনছে?সব ওর মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে।কি বলবে ছেলেকে?ছেলে যে আরেক প্রশ্ন করছে….
“ও আম্মু বলো,চাচ্চু টা পঁচা তাই না??আন্টিকে আদল কলে না…..আমি দাদুর কাছে বিচাল দিবো…..”
“না…..”(জোরে)
অরূপ ধমকে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো।রাফসা আবারও ছেলেকে স্বাভাবিক করার জন্য বললো,
“না বাবু,বিচার দিতে হবে না…..আচ্ছা বাবু শোনো,তুমি কি জানে বড়দের আদর করতে নেই।।মানে আদর বলতে কিসি করতে নেই….”
“তাহলে আব্বু সেদিন যে তোমায় কললো??”
“আমি যে তোমার মতো একটা গুলুগুলো বাচ্চার আম্মু….তাই তোমার আব্বু আমায় কিসি করেছিলো কপালে…..বাট তুমি তো বললে তোমার রিদি আন্টি জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করেছে……”
“হুম তো…. আব্বু তোমাকে কপালে কিসি দিয়েছে…..আল লিদি আন্টি চাচ্চুকে সালা মুখে…..হি হি হি হি….”
ছেলের মুখে জীবনে প্রথম এই ধরনের কথা শুনে রাফসার যে কেমন অনুভতি হচ্ছে সেটা সে নিজেই জানে।কোনো মতে নিজেকে সামলে রেখেছে বাচ্চাটার সামনে…..কারণ এখানে বাচ্চা টার কোনো দোষ নেই….সে যা দেখেছে তাই বলেছে,তবে এই কথাটা নৌশিনকে বলে দিলে,ভয় ডুকে যায় রাফসার ভেতরে,
“আব্বু শোনো এগুলো পঁচা কথা….আমি তোমার আম্মু তাই তোমার আব্বু আমায় সে দিন তোমার জন্য কিসি করেছিলো….আর তোমার নতুন বউও না একদিন তোমার চাচ্চুকে তোমার মতো একটা সুন্দর ছোট্ট বাবু এনে দিবে তাই তোমার আব্বুর মতো তোমার চাচ্চুও তোমার নতুন বউয়ের কপালে কিসি করবে….ব্যাস বড় রা এইটুকু ই করে……তোমার আব্বু তো আর কাউকে কপালে কিসি করে না…”
“হুম….”
“হ্যাঁ….ঠিক তেমন তোমার চাচ্চুও তোমার নতুন বউকে ছাড়া আর কারো কপালে কিসি করবে না…..তাই তোমার চাচ্চু তোমার রিদি আন্টিকে ধাক্কা দিয়ে বেশ করেছে…….কারণ তোমার রিদি আন্টি ভুল করছিলো…”
“ওওওও…..”
“হ্যাঁ…..আচ্ছা সোনা,তুমি কি আর কাউকে বলেছো এটা??”
“না তো….মনেই ছিলো না…..দালাও নতুন বউকে বলে আসি…..”
অরূপ ওর মায়ের বুক থেকে উঠে পড়তে চাইলে ওর মা আটকে দিলো।
“না বাবু,শোনো এই কথাটা তুমি কাউকে বলবে না…….”
“কেন??”
“না সোনা,বলো না…..প্লিজ….”
“আ আ আ….আম্মু তুমি আমায় প্লিজ কেন বলছো??আমি না তোমাল ছেলে…..বাবুদেল প্লিজ বলতে নেই আম্মু……”
এমন মধুর কথা শোনে কোন মা গলবে না!
রাফসা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলছে,
“ওরে আমার বাবা রে,তুমি কত বড় হয়ে গেছো….”
“হুম হুম হুম…..”
“আমার সোনা ছেলে……”
“হ্যাঁ….তুমি আমায় প্লিজ বলবে না….আমাল কেমন জানি লাগে….ভালো লাগে না….তুমি শুধু বলবে আমি কি কলবো….তাহলেই আমি সব কলে দিবো….”
“তাই???”
“হ্যাঁ…..তুমি যা চাইবে আমি তাই দিবো….তুমি জামা চাইলে জামা দিবো,খেলনা দিবো সব দিবো তোমায়….তুমি না আমাল আম্মু…..আমাল মিস. বলেছে “আম্মুল পায়েল নিচে জান্নাত”….আল জান্নাতে নাকি অনেক মজা,সেখানে শুধু মজা আর মজা….সব পাওয়া যায় জান্নাতে…..”
“উমমম্মা….আমার মানিক টা কত কিছু জানে…..”
“হি হি হি হি…..আম্মু একটু ঘুমাই??পলে পলবো……আম্মু??”
“ঠিক আছে সোনা…..আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি….কিন্তু তার আগে বলো আমাকে যা বললে সেটা আর কাউকে বলবে না….”
“আচ্ছা বলবো না….নতুন বউকেও না???”
“না বাবু….নতুন বউকে তো কোনো দিনও বলবে না……”
“আচ্ছা…..এখন আমাকে ঘুম পালিয়ে দাও….. ”
“এই তো দিচ্ছি….চোখ বন্ধ করো তুমি………”
!
ঐ দিকে নৌশিন সাদাদকে কল করছে।একবার রিং হওয়ার সাথে সাথেই সাদাদ ফোন রিসিভ করে,
“হ্যাঁ ভাবী,বলো…….”
“চুপ,কাকে ভাবী বলছো???”
“ও আচ্ছা…..ভুল হয়ে গেছে…..আমি ভেবেছিলাম ভাবী….এখন দেখছি ভবীটা আমার না প্রাপ্তির…..”
“হ্যাঁ…..এজন্য ফোন ধরার সাথে সাথে ভয়েস না শোনে কাউকে সমোন্ধন করা উচিত না…..”
“জ্বি ম্যাডাম….বুজেছি…..”
“ধন্যবাদ স্যার বুঝার জন্য….”
“ওয়েলকাম…..তা ম্যাডাম কি করা হচ্ছিলো??”
“হুম এইতো পড়েছিলাম….তারপর….”
“তারপর??”
“তারপর আমার স্যার টার কথা মনে পড়লো তাই ভাবীর কাছ থেকে ফোন টা আনলাম……”
দুজনে প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো কথা বললো।
“হয়েছে হয়েছে….আর বলতে হবে না তোমার…..লান্সে তো আসছো??”
“হ্যাঁ আসবো…..”
“আচ্ছা,শোনো শোনো……..”
“হুম বলো…..”
“কাজ অনেক তোমার??”
“হুম তা একটু আছে?কেন বলো তো??আরও কথা বলবে বুঝি???”
“আরে তা না…”
“তাহলে???তবে আমি কিন্তু কথা বলতে বলতে কাজ করতে পারবো নো প্রব….”
“আরে না……শোনো আগে….”
“আচ্ছা শুনছি বলো…..”
“………”
“কি হলো ম্যাডাম???কি বলবেন??”
“বলছি যে আমার কালো মেকাপ???”
সাদাদ এক্সাইটেড হয়ে,
“হেয়…..রিয়েলি??”
“হ্যাঁ আমি এটা বলার জন্যই কল করেছিলাম…বাট বলতে পারছিলাম না…..”
“হায় আল্লাহ….নিজের হাজবেন্ডের কাছে এইটুকু বলতে এত সময়!! ”
“আরে আস্তে আস্তে হয়ে যাবে…..”
“হুম…..হলেই আমার উপর বরকত আসবে…..”
“যাও তো….বেশি বেশি…”
“নো ম্যাম….কম কম…..তবে আমার কেশবতীকে কালো সাজে দেখার জন্য তর সইছে না আমার…..”
“এই আমি রাখছি….বাই….”
“বাপরে ফোনেও লজ্জা!!!”
“ধুর….বাই….আসসালামু আলাইকুম….”
সাদাদ ব্লাশিং হয়ে সালামের জাবাব দিলো,
“ওয়ালাইকুম আসসালম……”
……………………..
“ছোট বউ মা……..ছোট বউ মা…….”
নৌশিনের শাশুড়ি নৌশিনকে ডাকছে,
নৌশিন শাশুড়ির ডাকে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে।
“হ্যাঁ মা,ডাকছিলে?”
“হ্যাঁ রে মা……মা একটা কাজ করে দিবে?প্রাপ্তি টা বাসায় নেই….বড় বউ মা রান্না ঘরে….”
“মা বলো তুমি কি করবো আমি…..”
“রোম থেকে গরম পানির ব্যাগ টা একটু এনে দাও না মা,কমড় টা বড্ড ধরেছে…..”
নৌশিন আর কিছু না বলে,রোম থেকে গরম পানির ব্যাগ নিয়ে আসে।
“না না মা তোমায় দিয়ে দিতে হবে না,আমায় দাও আমি পারবো…..”
“উফফ মা চুপ করে বসো তো…..একদম নড়বে না,আমি দিয়ে দিচ্ছি…..”
“আচ্ছা,আচ্ছা দাও দাও……”
নৌশিন বেশ খানিকটা সময় ওর শাশুড়ির কমড়ে তাপ দিয়ে দিলো………
“হয়েছে মা…..আর দিও না…..”
“আচ্ছা….আমি রেখে আসি এটা….তুমি বসো…”
“না রোমে রাখতে হবে না….তুমি রান্না ঘরে রাখো পানি টা চেন্স করে দিবে তোমার কাকি…..”
“আচ্ছা মা…..”
নৌশিন রান্না ঘরে গিয়ে ব্যাগ টা রাখে।তখন ওর ভাবী রান্নায় ব্যস্ত।
“ভাবী কি রান্না করো??”
“এই তো রুই মাছ করছি….তুই খাস এটা??”
“হ্যাঁ,তবে ভাজি করলে আর কিছু করলে না……”
“তুই না…..”
“হি হি হি……”
“আচ্ছা,দাঁড়া তোকে একটা টুকরো ভাজি করে দিচ্ছি….”
“আরে না ভাবী করতে হবে না…..তুমি ডাল করেছো না,সেটা দিয়েই খাবো….আর দেখি কি কি করেছো……বাহ!ছোট মাছ…ওয়াও আমার এটা হলে আর রুই মাছ লাগবে না ভাবী……….ডাল সাথে ধনে পাতা দিয়ে ছোট মাছ….ইশশশ দুপুরের খাওয়া টা জাস্ট জমে যাবে আমার…..”
“পাগলী একটা…….তবে রুই মাছও খেতে হবে…..”
“ওকে ওকে খাবো।।।…..”
“হুম….আবার সকালের মতো কান্না করে দিস না….তাহলে সাদাদ থাপ্পর দেওয়ার আগে আমি দিয়ে দিবো……”
“আচ্ছা দিও…..ভাবী সরো না রুই মাছ টা আমি রাঁধি….”
“কিহ??”
“হুম….তুমি তো সব কেঁটে রেখেছো….আমি শুধু মাছ গুলো ভাজবো দেন তরকারী টা বসাবো….প্লিজ প্লিজ……”
“পাগল….কতগুলো মাছ ভাজতে হবে….সর তুই যা পড়তে বস….গোসল করেছিস??”
“উফফ…ভাবী…রাখো তো পড়া।।এতক্ষণ পড়ছিলাম আর গোসল তরকারী টা করে করবো সরো তুমি….”
“মাইর খাবি….এতটা তরকারী তুই করতে পারবি না বোন…..কষ্ট হবে তোর….তুই যা গোসল কর…একটু পরে আযান দিয়ে দিবে…….”
“প্লিজ প্লিজ ভাবী।।।।আমি পাড়বো….বাসায় করতাম মাঝে মাঝে….বেশি মজা হতো না তবে খাওয়া যেতো….আমি তো এই বাড়িতে এসে কিচ্ছুই করি নি এখনও সব তো তুমি আর কাকি ই করো…”
“হ্যাঁ তোমার করতে হবে না….আপনার না এক্সাম….”
“ভাবী….আজ ই।।।। একটু করবো….প্লিজ আর না করো না…..”
“আচ্ছা ঠিক আছে…..শুনবি না তুই জানি…..”
“থ্যাস্কস ভাবী….এখন সরো……”
“সরতে হবে না….আমি মাছে মসলা মেখে দিচ্ছি….তোদের বাসায় তো লোক কম ছিলো এখানে দেখছিস কত লোক….আর তাই কতগুলো মাছ…..তুই লান্সে শুধু বাবা আর তোর দাদা ভাই আসে না তবুও ওদের জন্য করতে হয়… রাতে এটা খাবে ওরা…..”
“আমি পারবো কোনো প্রব হবে না…..”
“আমি জানি তুই পারবি…..তবুও দুটো চুলা জ্বালাই…..দুটোতে দুজনে মাছগুলো ভেজে নিই….তারপর তুই রান্না করিস…….আর তোর খাওয়ার জন্যের টাও আমি আলাদা করে ভেজে দিচ্ছি ভালো করে…..”
“আচ্ছা……….”
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

#প্রেমঘোর#৫০#

“বাহ্,নৌশিন তুই কিন্তু আসলেই রান্না টা বেশ ভালো করিস,সবাই কি প্রশংসা করলো………..”
“একদম না,মোটেই ভালো হয় নি……যেন আমার মন খারাপ না হয় সেজন্য সবাই উপরে উপরে ভালো বললো।”
“বেশি বুঝিস না,পারলে নিজে খেয়ে দেখ……”
“ইইই…..আমি শুধু রুই মাছ ভাজা খাই,সেটা দিয়ে আর কিছু না……….আর শোনো যদি ভালো হতোই তাহলে সাদাদ কেন একবারও বললো না যে ভালো হয়েছে……আগে যখন মাঝে মাঝে ওকে কিছু করে খাওয়াতাম তখন তো কম ভালো হলেও বলতো জোশ হয়েছে……..”
“আরে বোকা মেয়ে,এখন তুই রোমে যা দেখবি ঠিক বলবে ইভেন এতো সুন্দর একটা ডিস খাওয়ানোর জন্য গিফ্ট ও দিতে পারে…..যা যা……”
“ওহ….ভাবী!!!তুমি না……আসলেই…..”
“হয়েছে,এখন যা এগুলো আমি গুছিয়ে রাখছি…….”
“থাক না করি একটু,ও তো এখন আর অফিসে যাবে না……..”
“কেন??”
“কাল জরুরি একটা মিটিং আছে নাকি তাই পুরুনো ফাইল এনেছে বেশ কয়েকটা তো সেগুলো বাসায় ই চেক করবে……”
“ও…..আচ্ছা….ঠিক আছে তুই যা পড়তে বস……..”
“প্লেট গুলো গুছিয়ে রাখি??”
“না সার্ভেন্ট আছে অনেক….ওদের বলে দিচ্ছি ওরা এগুলো ধূয়ে দিবে তারপর আমি জায়গা মতো রেখে দিবো তুই যা পড়তে….”
“আচ্ছা,আচ্ছা……যাচ্ছি……..”
………………………..
নৌশিন রোমে গিয়ে দেখে সাদাদ সোফায় বসে ফাইল দেখছে………
নৌশিনের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলছে……সে হুট করেই সাদাদের হাত থেকে ফাইল টা নিয়ে বিছানায় ছুড়ে মারে।
“আরে,জান কি করছো??কাজ করছিলাম তো……”
নৌশিন সাদাদের পাশে গা ঘষে বসে বলছে,
“চুপ,শুধু কাজ আর কাজ…….”
সাদাদ নৌশিনের কমড় জড়িয়ে ধরতেই নৌশিন সাদাদের কাঁধে মাথা রাখলো।সাদাদ নৌশিনের মাথায় একটা চুমু খেয়ে বলছে,
“আচ্ছা!!!তাহলে আমার জান টা কে আদর করবো বুঝি??”
“ইশশশশ…..ঢং……এতো কাজ করতে হবে না……এখন বলো আমার মেকাপ এনেছো???”
“ইয়েস মিসেস…..”
নৌশিন খুব খুশি হয়ে সাদাদের কাঁধ থেকে মাথা তুলে জানতে চাইলো,
“কোথায় রেখেছো??”
“এখন সাজবে??”
“হুম হুম দাও…… “্
“না ম্যাম…..”
“কেন???”
সাদাদ আবার নৌশিনকে কমড়ে হাত রেখে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।
“আমি যে তোমার রান্না নিয়ে তখন কোনো কমল্পিমেন্ট করলাম না…..তোমার খারাপ লাগে নি???”
“এটা কোন ধরনের কথা??এখানে খারাপ লাগার কি আছে??আর এমন তো না যে খাওয়া যায় নি ডিস টা।বেশি ভালো না হলেও মিনিমাম খাওয়ার যোগ্য তো হয়েছিলো।আর সবাই তো প্রশংসা ই করছিলো…..
আর তুমি মুখে কিছু না বললেও আমার দিকে তাঁকিয়ে সুন্দর একটা হাঁসি দিলে না তখন??আমি তাতেই বুঝেছি রান্না টা তোমার ভালো লেগেছে…..”
“ওরে আমার সাইকোলজিস্ট রে…..হাঁসি দেখেই মনের কথা বুঝে যায়……”
“হুম….ভালোবাসি যে…….খুব খুব……”
“ভালো তো আমিও বাসি…..তোমার প্রেমঘোরেই তো সারা টা বেলা কাটে…….তবুও আগে যখন খাওয়াতে তখন তো কমল্পিমেন্ট দিতাম আর আজ এই বাড়িতে প্রথম রান্না করলে তার জন্য তো কিছু বলা উচিত ছিলো আমার….তাই না?”
“ঐ আমি কি সবার প্রশংসা পাওয়ার জন্য রান্না করেছি নাকি…..আমি তো আমাদের বাসায়ও মাঝে মাঝে রাঁধতাম….তুমি তো না করতে….আর সে দিকে মা ও বেশি করতে দিতো না…..তবে আমার যখন খুব ইচ্ছা হয় তখম করি…..আমার ভালো লাগা থেকে করি,যেন অন্য জন খেতে পারে…..কিন্তু প্রশংসা পাওয়ার লোভে না……..আর আমি তো তোমার মুখ দেখেই বুজেছিলাম খাওয়া যায় আমার রান্না টা।আর এ বাড়িতে প্রথম করার ক্ষেত্রে যদি বলো এরা সবাই আমার হাতের রান্না আজ প্রথম খাচ্ছে বাট তুমি তো আগে অনেকবার খেয়েছো….তা ছাড়া যদিও আমি আশা করেছিলাম তুমি কিছু বলবে বাট তোমার হাঁসি টা আমার কাছে মুখে বলা সব বাক্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে হয়েছে…….”
সাদাদের ভেতর টা মহা আনন্দে উৎসুক হয়ে উঠে।হবেই বা না কেন??এমন জীবনসঙ্গী কত জনে পায় আজ কাল….!!!
“কি হলো কি ভাবছো??”
সাদাদ নৌশিনের দুগালে হাত রেখে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,
“ভাবছিলাম,আমি সত্যিই কত ভাগ্যবান যে কিনা এমন একজন মানুষ পেয়েছি জীবনসঙ্গী হিসেবে……”
নৌশিন মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে প্রতিত্তুরে জানালো,
“আমিও খুব ভাগ্যবান তোমার মতো একজন স্বামী পেয়ে…….”
সাদাদ নৌশিনকে ছেড়ে দিয়ে,সোফা থেকে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,
“আমার কিউটি টা যেহেতু এতো কষ্ট করে এতো সুন্দর করে রান্না করেছে,তাহলে কিউটি টাকে একটা ছোট্ট গিফ্ট তো দিতেই হয়…….”
নৌশন কথাটা শোনার সাথে সাথে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, “সত্যি???”
গিফ্ট পেতে কার না ভালো লাগে!আর সেটা যদি হয় সবচেয়ে প্রিয় মানুষ টার দেওয়া তাহলে তো আর কোনো কথা থাকে না।
“কোথায় আসছো??”
“কেন???তুমি তো আলমারীর দিকেই যাচ্ছো…সেখানে নিশ্চয় আমার জন্য গিফ্ট রাখা?”
“উমহু….আসলে দিবো না…..এখানেই চোখ বন্ধ করে দাঁড়াও……”
“উমমম…..এটা আবার কেমন??”
“এটা বেস্ট জান।।।।।চোখ বন্ধ করো আর এখানে দাঁড়াও চুপচাপ……..”
“ওকে…..বাট তাড়াতাড়ি দিবে কিন্তু…….”
“ওকে জানু…….”
সাদাদ আলমারী থেকে একটা বক্স বের করে আনে,সেটা খুলে নৌশিনের ভেতরের জিনিস টা নৌশিনের হাতে দিতেই নৌশিন হাত দিয়ে বুঝার চেষ্টা করে জিনিস টা কি?।বুজতে এক মুর্হুত সময় লাগলো না নৌশিনের…..
চোখে মুখে রাজ্য জয়ের হাঁসি…..সাদাদ বললো,
“ব্যাস….এবার চোখ খুলো…..”
চোখ খুলে তো নৌশিন আরও খুশি……
“ওয়াও…..এটা আমার??”
“জ্বি মেরী মহারানী……”
“ওয়াও,ওয়াও……কি সুন্দর আই ফোন….বাট আমি তো হাতে নিয়ে ভেবেছিলাম তুমি আমার জন্য এমনি নতুন ফোন এনেছো…..বাট আই ফোন আনেছো সেটা ভাবতেই পারি নি……আমার খুব খুব খুব খুশি লাগছে………”
নৌশিন সাদাদকে জড়িয়ে ধরে সাদাদের গালে একটা কিস দিয়ে বললো,”থ্যাস্ক”
“ওয়েলকাম রানী…..”
“হি হি হি……আচ্ছা….তোমার টা??”
“হুম….সেটাও আছে….একটা স্টাফ কানাডা তে ছিলো….তো ফোন ভাঙার পর ওকে টাকা সেন্ড করলাম সেখান থেকে দুটো আই ফোন সেভেন আনতে……কারণ আমার জানটার তো আগের একটা আই ফোন ছিলো যেটা ভার্সিটি থেকে চুরি হয়ে গেছিলো আর আমার জানটা সেদিন আমার সামনে কেঁদে দিয়েছিলো…….”
“কাঁদতাম না তো কি করতাম…..ভাইয়া গিফ্ট করেছিলো আমায়…..আর সেটা আমার সেকেন্ড আই ফোন ছিলো…..ফার্স্ট টাও চুরি হয়ে গেছিলো…..”
“ইয়াহ….আই নো…..”
“তুমি কি করে জানলে??”
“তুমি ই সে দিন কান্না করতে করতে বলছিলে…..আমি সেদিন ই কিনে দিতাম বাট তখম বাবা আমাকে এতো টাকা দিতো না আর আমিও বাবার কাছে চাইতাম না দরকার ছাড়া……আর কোচিং করিয়ে যা টাকা পেতাম সব তো রাফিন কেই দিতাম বাট শালা যার জন্য এতো করলাম সে ই কুড়াল টা মারলো……”
“ওকে বাদ দাও সে সব মানুষের কথা………”
“তা তো অব্যশই……এখন বলো,কেমন হয়েছে এটা??”
“খুব খুব সুন্দর…..দুটো ফোন হারানোর পর মা তো বাবা আর ভাইয়াকে কড়া করে জানিয়ে দিয়েছিলো “মেয়ে কে আর একটা আই ফোন ও কিনে দেওয়া যেন না হয়…..প্রতিবার ই চুরি হয়ে যায়….এতো টাকার জিনিস দেখে রাখতে পারে না……শুধু শুধু দেওয়ার দরকার নেই…..লেপটপ আছে সেখানে পড়ার জিনিস দেখে নিতে পারবে আর বাজারে অনেক ভালো এনড্রোয়েড আছে সেগুলো একটা কিনে দাও….চুরি হলেও কম টাকা যাবে…..”আর তারপর এনড্রয়েড ই কিনে দিতো….কি করে যে ফোন ব্যাগ থেকে নাই হয়ে যেতো আমি বুজতেই পারতাম না তাও আবার প্রথম টা যেদিন ভার্সিটিতে ভর্তি হতে আসি বাবার সাথে সেদিন,ফুচকা খাচ্ছিলাম মনের সুখে বাবাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে….আর সেকেন্ড টা তো তুমি জানোই ক্লাসে…..আমি তো ভেবেছিলাম তুমিও আমাকে কোনো দিন আই ফোন দিবে না…..বাট দিয়ে দিলে….আম সো সো সো হ্যাপী সাদাদ…..থ্যাস্ক দিবো না কিন্তু আর…”
“ওকে ওকে….ম্যাম নিজের লোককে ধন্যবাদ দেওয়া কিছু নেই…….আর শোনো তোমার পুরানো ফোন টা আমার কাছে থাকবে…..”
“সেটা কি আর কি করবে??তোমার ও তো ফোন আছে….”
সাদাদ নৌশিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
“সেই ফোন টা তো আমার নৌশিনের অনেক দিনের ছোঁয়া আছে।তাই যখন অফিসে বা বাইরে থাকবো সেটা আমিও ছোঁয়ে দেখবো….আমার জানের ছোঁয়া বলে কথা…….”
“উমমমমম্মা……..”
“ইটস ভেরী বেড…..”
“কোনটা??”
“এই যে খালি গালে চুমু দিচ্ছো…..এখানটায়(ঠোঁটে হাত দিয়ে)একটু দাও…….”
“ইশশশশ শখ কত!!”
“আচ্ছা তাই না????”
“হুম তাই……”
“দিবে না তো???”
“দিলাম না??”
“সেটা গালে আমি যেখানে চাইছি সেখানে দাও……”
“ইইনন না পারবো না আমি……”
সাদাদ নৌশিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর নৌশিন পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার ফন্দি আটছে…….
“সত্যি তো???”
“হ্যাঁ সত্যি……” বলেই নৌশিন দরজার দিকে দৌঁড় দিতে যাবে তখন সাদাদ নৌশিনের হাত ধরে ফেলে।এক হাতে নৌশিনকে ধরে রেখে অন্য হাতে দরজা টা লক করে দিলো…….।
দুহাতে নৌশিনের কমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলছে,
“আমার টা আমি আদায় করতে জানি সেক্সি……..”
নৌশিন লজ্জায় লাল গোলাপী হয়ে যাচ্ছে একদম।সাদাদ নৌশিনের হাত থেকে ফোন টা নিয়ে সোফায় ছুড়ে মারলো।ওড়না টা এক টানে ফ্লোরে…..চমকে ওঠে নৌশিন বললো,
“সাদাদ কি করছো..???”
সাদাদ নৌশিনের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,
“হুসসস……কোনো কথা না,কাজ করছিলাম করতে দাও নি…..কাজে পেয়েছিলো সে নেশা কাটিয়ে দিয়েছিস….এখন যে তোর নেশা পেয়েছে আামকে…….সেটা ছাড়াতে দিচ্ছি না আর…….”
নৌশিন নিজেকে ছাড়ানোর জন্য কাঁচুমুচোঁ করছে।কিন্তু পারছে না……”
“প্লিজ এমন করে কেঁপো না…..নরম ছোঁয়ায় আমি যে বদ্ধ পাগল হয়ে যাবো…..শেষ করে দিবো তোমায় জ্বালিয়ে পুরিয়ে…….”
“এ খ ন ত তো বি বি কাল……”
নৌশিনেরও ঘোর লেগে গেছে সাদাদের মতো কথা আটকে আসছে ভেতর থেকে।চির চেনা একটা ঢেউ বয়ে যাচ্ছে ভেতরে তবু নিজেকে সামলাতে পারছে না।
“চুপপপ…..বিকেলে হারাবো তোমায়…..শুধু রাতে হারতে ইচ্ছে করে তাই না সুন্দরী???”
ইশশশ,কি বলে সাদাদ?নৌশিন তো লজ্জায় শেষ……
নৌশিন কোনো কথা বলছে না……সাদাদ আস্তে আস্তে নৌশিনের ঠোঁটের দিকে মুখ এগিয়ে নিচ্ছে…….বেশি সময় লাগালো না-দুজোড়া ঠোঁট এক হয়ে গেলো…..ভালোবাসায় মাতোড়ারা হয়ে গেছে সাদাদ…..নৌশিনও তাল সামলে নিয়েছে সাদাদের সাথে….শার্ট খামছে ধরে নিজেও হারিয়ে যাচ্ছে কোনো এক অজানায়…………..
…………..
সাদাদ নৌশিনের ঠোট ছেড়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে নেয়…..নৌশিনকে আকড়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিছানার দিকে……..নৌশিন এবার সাদাদকে আটকাতে চাইছে…..
সাদাদ নৌশিনের গলায় হারিয়ে গেছে-নৌশিনেরও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করেছে ভালোবাসার মানুষটার সাথে তবুও নৌশিন সাদাদের চুল আকড়ে ধরা অবস্থাতেই অনেকটা কষ্ট করেই বলে ফেললো,”সাদা দ দিনে দিনের বেলা…..।”
কথাগুলো কেমন যেন আটকে আসছিলো নৌশিনের।এতক্ষণে সাদাদ আর নৌশিন বিছানায়…..সাদাদ নৌশিনের উপর শুয়ে নৌশিনকে আদরের ছোঁয়াতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে….নৌশিনও বাঁধা দিতে পারছে না আর……….ইচ্ছে করছে না বাঁধা দিতে…..কেন দিবে?স্বামীর এমন ভালোবাসায় কে না হারিয়ে যেতে চায়….হোকা সেটা দিনের আলোয় বা রাতের কালীমায়……………….
রোমের দরজাটা লাগানো….বারান্দার দরজাটাও চাপিয়ে দেওয়া…জানালার পর্দাগুলো বিকেলের মৃদু বাতাসে বন্র্ কাঁচের ভেতরে থেকেও উড়ে আসছে……….
এমন সময়ে নৌশিনের পোশাক হয়ে আছে তার প্রিয়তম সাদাদ……..মুহুর্ত টা ভালোবাসার…..হারিয়ে যাওয়ার….ঘোর টা প্রেমের……আর সুখ টা জান্নাতের টকুরো টুকরো সুখের আভাস দিয়ে ঘেরা……..
দুজনাতে মেতে গেছে দুজনেই………ইশশশ!নৌশিনের এমনিতে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বলে মনে হয়….আর সাদাদ যখন এমন করে ভালোবাসতে থাকে তখন মনে হয় সুখটা বোধহয় শুধু ওর জন্যই……………..♥

পুরো গল্পের লিংক
https://www.facebook.com/groups/2837664109643809/permalink/2935151703228382/

!
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here