প্রেম ঘোর#৪৬#৪৭ 💜💜

0
1006

#প্রেম ঘোর#৪৬#৪৭
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
সাদাদ নৌশিনের দিকে ফিরে তাঁকানোর জন্য নৌশিন ভাবলো সাদাদের রাগ টা কমে গেছে বোধহয়।কিন্তু না,সাদাদ ওর কথায় নৌশিনের ভাবনা টা ভুল প্রমাণ করে দিলো।
“আমি সারা দিন অফিস করে,এখন খুব টায়ার্ড….
আর তোমার উপর শুধু শুধু রাগ দেখানোর কোনো ইচ্ছে আমার নেই,সো সরে দাঁড়াও আমাকে ফ্রেস হতে দাও……..”
নৌশিন বুজতে পারছে সাদাদের রাগ এখনও কমে নি তবুও আর কথা বাড়ালো না।অফিস থেকে এসেছে আগে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিক তারপর কথা বলা যাবে।নৌশিন চুপচাপ সাদাদের সামনে থেকে সরে আসে।সাদাদ ওয়াশরোমে ডুকে হাত মুখ ধুয়ে রোমে ডুকে দেখে নৌশিন খাটের উপর টি শার্ট আর টাওজার রেখে গেছে।
সাদাদ চেন্স করে একটা ফাইল নিয়ে বসে।
নৌশিন সাদাদ সাদাদকে খাবারের জন্য ডাকতে এসে দেখে সাদাদ ফাইল চেক করছে,সে সাদাদের পাশে বসে বলছে,
“কি করছো তুমি?”
ফাইলে চোখ রেখেই সাদাদ জবাব দিলো,
“দেখতেই পাচ্ছো……”
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি,এখন নিচে চলো খাবে…..”
“খেয়ে এসেছি…..”
“মানে???”
“খেয়ে এসেছি মানে খেয়ে এসেছি……”
“সাদাদ তুমি আমার সাথে এমন করবে না……..চলো বলছি……”
“বললাম না……”
আর কিছু বলার আগেই নৌশিন সাদাদের হাত থেকে ফাইল টা নিয়ে নিলো।
“ওয়াট…..??”
“কি??আমি কিচ্ছু করি নি….ফাইল টা আমি চেক করছি…….”
“তোমার করতে হবে না,তুমি বই নিয়ে বসো,একটা ফাইল ই বাকী আছে আমি দেখে নিচ্ছি…”
“না…..আমি দেখবো এটা….”
“নৌশিন মাথা গরম করিও না এমনিতেই মেজাজ ভালো নেই…….”
“কেন ভালো নেই???”
সাদাদের রাগ টা এতক্ষণ চেঁপে থাকালেও,সাদাদ এখন আর চাঁপিয়ে রাখতে পারলো না,নৌশিনের হাত থেকে ফাইল টা কেড়ে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো,তারপর নৌশিনের কাঁধে দুহাত রেখে ঝাঁকি দিয়ে দাঁড় করিয়ে বললো,
“কেন বুজতে পরছো না তুমি????”
নৌশিন পুরোই হতবাক….অবুঝের মতো সাদাদের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে।সাদাদ আবারও বলা শুরু করলো,
“বুজতে পারছো না?কেন আমার মেজাজ চটে আছে?তোমার ভাইয়া তোমার হাত খরচের টাকা দিচ্ছে তোমাকে আর সেটা তুমি নিচ্ছো এই দুটোর মাঝখানে আমি কোথায়???বলো কোথায় আমি??তোমাকে হাত খরচ চালানোর মতো টাকা পয়সা দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই???নাকি আমি জব করি বলে তোমার বাবা,ভাই আমাকে তোমার খরচ চালানোর যোগ্য মনে করেন না??কোনটা নৌশিন??আমার তো এখন মনে হচ্ছে তুমিই আমার সাথে এই বিষয়টা নিয়ে খোলামেলা হতে পারছো না…….”
সাদাদ জোরে জোরে কথাগুলো শুনাচ্ছে নৌশিনকে…..নৌশিন কি বলবে বুজতে পারছে না…
চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে তার………
“এই কাঁদবে না একদম……”
“ভা ই য়া এ ম ন কিছু ভে বে টা কা দেয় নি……..”
“নৌশিন আই নো,বাবা আর ভাইয়া এমন কিছু ভাবে না…..আমি রাগে বলে ফেলেছি বাট এটা আমি কি করে সহ্য করবো যে আমার বউয়ের হাত খরচের টাকা তার বাপ,ভাই দিচ্ছে………
হতে পারে তুমি তাঁদের একমাত্র মেয়ে বা বোন বাট নৌশিন এখন তুমি আমার বউ…..” কথাগুলো আস্তে বলে আবারও সাদাদ ধমকের সুরে বলতে থাকে,
“সারা ঢাকা জানে তুমি কার মেয়ে আর কার পুত্রবধু আর এটাও জানে তোমার বাবা মোর রিচ আমাদের চেয়ে……..এখানে আমার কি করার আছে তার মানে কি আমি তোমাকে পাওয়ার যোগ্য নই???আমারর বাবা ভাইয়ের এতটাও কম নেই নৌশিন……হতে পারে তোমার বাবা ভাইয়ের ডিমান্ড টা বেশি তাই বলে আমার বউকে যথেষ্ট ভালো মতো রাখার ক্ষমতা নেই আমার??”
“সাদাদ প্লিজ…..এমন বলো না……..”(কাঁদতে কাঁদতে)
“তো কি বলতে পারি আমি?তোমার ভাইয়ার কাছ থেকে হাত খরচের টাকা নিচ্ছো তুমি…..!!”
“আমি জানতাম না….ভাইয়া আগেও আমাকে এমন করে টাকা দিতো তাই হয়তো অভ্যাস টা বাদ দিতে পারে নি……আমি নেক্স টাইম ভাইয়াকে বলে দিবো প্লিজ……..”
সাদাদ পাশে থাকা একটা টি টেবিলে লাথি মেরে “ডেম ইট……” রোম থেকে বেরিয়ে গেলো।
নৌশিন কি করবে কিচ্ছু বজতে পারছে না।সাদাদ অল্পতেই রেগে যায় বাট আগে কোনো দিন এতো টা রাগ দেখায় নি নৌশিনের সাথে…….নৌশিন কাঁদতে থাকে।সাদাদের ফেলে রেখে যাওয়া ফাইল টা তুলে রেখে,বিছানায় শুয়ে কাঁদতে থাকে……ভাবছে টাকা টা ফেরত দিয়ে দিবে।।কিন্তু কি বলবে??ওর ভাই যে সাদাদের থেকে আরও দশ গুণ বেশী রাগী,বাবাকে বুজানো সহজ কিন্তু ভাইয়া কথাটা শুনলে সাদাদের উপর ক্ষেপে যাবে।নৌশিনের মা যখন রেগে গিয়ে নৌশিনকে বকাবকি করতো তখন নৌশিনের ভাই সারা বাড়ি চিল্লিয়ে মাথায় করে রাখতো “আমার বোন কে বঁকার সাহস কারো নেই…..মা কেন বকবে???”….ওর মায়ের সাথে রাগারাগী করতো….তারপর নিজের হাতে বোনকে খাইয়ে দিতো আর ওর মাকে ওর্য়ারিং দিতো যেন পরের বার ওর বোনকে আর কথা না শোনায়।যদিও নৌশিনের মা নৌশিনকে বছরে একবার বকতো কি ননা সন্দেহ!!!আর সে ভাই যদি শোনে সাদাদ টাকার জন্য রাগারাগী করেছে ওর বোনের সাথে,আমাকে সাথে সাথে বাসায় নিয়ে যাবে।এতো বদমেজাজি!!!
“আমি কি করবো!ভাইয়াকে বলা অসম্ভব….আর সাদাদ ও কিছু বুজতে চাইছে না…..”
নৌশিনের কান্না যেন থামছেই না…..ঐ দিকে সাদাদ ড্রয়িং রোমে গিয়ে বসে আছে….প্রাপ্তি ডিনারের জন্য ডাকলে ওকে একটা ঝাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিলো।প্রাপ্তিকে রাফসা আবার পাঠান নৌশিনকে ডাকতে,
প্রাপ্তি রোমে ডুকে দেখে নৌশিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে-আর এতোটাই কেঁদে চলেছে যে হিচকিও আসছে।প্রাপ্তি এক রকম দৌঁড়ে গিয়ে নৌশিনের পাশে বসে জানতে চাইলো,
“ভাবী তুমি কাঁদছো কেন??”
নৌশিন আগে বুজতে পারে নি রোমে কেউ এসেছে,তাই তাড়াতাড়ি ওড়না দিয়ে চোখ মুখ টা মুছে নিয়ে বসে পড়লো।
“কই না তো…….”(কথা টা আটকে আটকে যাচ্ছিলো)
“ভাবী,তোমার চোখ মুখ এত লাল হয়ে গেছে….তার মানে তুমি অনেকক্ষণ ধরে কাঁদছিলে তাই না???কেন ভাবী,ভাইয়া বকেছে তাই না??জানো তো ভাইয়া এমনি…অল্পতেই রেগে যায়….প্লিজ ভাই মন খারাপ করো না……খাবে চলো…..”
নৌশিন অনেক কষ্ট করে কান্না চাঁপিয়ে রেখে বললো,
“না সে রকম কিছু না…মাথা ব্যাথা করছিলো তো তাই হয়তো চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে…..”
“হয়েছে,আমাকে আর বুজাতে হবে না…আমি অরূপ নই।কাঁদতে কাঁদতে এখনও হিচকি আসছে আর ওনি বলছেন কাঁদে নি…..ও সোনা ভাবী….চলো খাবে……”
“প্রাপ্তি তোমরা খেয়ে নাও…আমি একটু পরে খাবো….সন্ধ্যার দিকে অরূপের সাথে অনেক টা নুডুলস খেয়ে নিয়েছি খিদে নেই বিশ্বাস করো……..”
“ভাবী,নুডুলস তো অরূপও খেয়েছে….আর ও এখন ভাত খাচ্ছে…..আর তুমি??”
“প্রাপ্তি প্লিজ বোন….আমি একটু পরে খাবো…..তুমি গিয়ে খেয়ে নাও বাবু……”
প্রাপ্তি মন খারাপ করে বলে,”ওকে…..”
প্রাপ্তি যেতে নিলে নৌশিন পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলছে,”প্রাপ্তি,বাইরে কিছু বলো না প্লিজ….”
“হুম….আমি ঠিক বুজতে পেরেছি তুমি কাঁদছিলে…..”
প্রাপ্তি নৌশিনের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ও ভাবী,বলো না ভাইয়া বকেছে তাই না???কেন কাঁদছিলে তুমি এভাবে???বলো না…..”
নৌশিনের চোখে আবার পানি এসে গেলো,চোখের পানি মুছে ফেলে মুখে মিথ্যাটা একটা হাঁসি ফুটিয়ে নিলো।প্রাপ্তির গালে হাত রেখে বলছে,
“না রে পাগলী,তেমন কিছ না…..”
“বলবে না তাই তো….আমি কিন্তু বড় হয়ে গেছি হু….ছোট নেই আর….বলা যায় আমাকে……”
“সত্যি বলছি তেমন কিছু না….তুমি খেয়ে নাও…আমি পরে খেয়ে নিবো….কাউকে কিছু বলো না প্লিজ….বলবে যে পড়ে এসে খেয়ে নিবে…..”
“হুম….”(অভিমান করে)
“রাগ করে বোন….দেখো ঠিক খেয়ে নিবো…….আর শোনো তোমার ভাইয়া কি নিচে??”
“হুম…. খেতে ডাকলাম আর একটা বিশাল ঝাড়ি দিয়ে আমাকে তাঁড়িয়ে দিলো……”
“ও….সরি…ওর হয়ে আমি বলে দিলাম….”
“আরে ভাবী না….ভাইয়া এমন ঝাড়ি প্রায় ই দেয় আমাকে….দেখো কাল সকালে এরজন্য গিফ্ট চেয়ে বসবো আমি……যত ঝাড়ি দিবে তত গিফ্টও দিতে হবে না হলে ছাড়বো না….. ”
“আচ্ছা চেয়েও এখন যাও খেয়ে নাও….”
“হুম।।।তোমরা দুজন পড়েই খেয়ে নিও তাহলে…..”
প্রাপ্তি চলে গেলো…নিচে সাদাদ প্রাপ্তিকে দেখে নৌশিনের কথা জানতে চাইলে প্রাপ্তি অনেকটা রাগী মোড নিয়েই বলে,
“এতো রাগ কেন তোমার??নতুন বউ কে মানুষ বঁকে নাকি??কিভাবে কান্না করছে ভাবী….চোখ মুখ সব ফুলে গেছে একদম….
বললো পরে খাবে….আমি জানি নিশ্চয় তুমি ভাবীকে কিছু বলেছো না হলে ভাবী এমন কখনো করতো না….”
“চুপ…..বক বক থামিয়ে ভাবীকে গিয়ে বল হালিমা খালাকে দিয়ে আমাদের দুজনের খাবার উপরে পাঠাতে…….”
“আমি পারবো না……সবাই কে খালি ধমক দেওয়া…..তুমি বলো যাও….”
“মে…..জা…..”(রাগে কথাটাও বলতে পারলো না….)
প্রাপ্তি সাদাদের মুখের অবস্থা দেখেই ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি খাওয়ার জন্য চলে গেলো….না হলে একলা পেলে সাদাদ আবার চড় টর মেরে না বসে।সাদাদ এসে ওর ভাবী কে ওদের খাবার টা উপরে পাঠিয়ে দিতে বলে।কেউ কিছু জানতে চাইলো না আর নতুন দম্পতি আলাদা খেতেই পারে।আর প্রাপ্তিও কাউকে কিছু বললো না।
!
সাদাদ রোমে ডুকে দেখে নৌশিন পাশ ফিরে শুয়ে আছে।মনে মনে ভাবতে থাকে,
“ওর কি দোষ ছিলো,ওকে বঁকার কোনো দরকার ছিলো না……কেন যে াবব রাগ ওর উপর দিয়ে দেই নিজেও জানি না….ধুর একটা সামন্য বিষয় নিয়ে,
ওর ভাই তো আর আমাকে যৌতুক সাধছে না যে আমার এতটা রাগ করতে হতো।।।।যদিও বিষয় টা খারাপ লাগার তাই বলে নৌশিনকে আমি……আমি আসলেই যা তা একদম….”।
সাদাদ নৌশিনের কাছে গিয়ে নৌশিনকে বলছে,
“উঠো……”
“………..”
“উঠো বলছি……”
“…………”
“কি হলো…উঠতে বললাম না??”
“আমার ঘুম পেয়েছে খুব…..”
“ভালো কথা খেয়ে ঘুমাবে….উঠো….”
“আমার ক্ষিদে নেই…..”
“এবার থাপ্পর না খেতে চাইলে ছটপট উঠে খেয়ে নাও…….”
“…………”
নৌশিন কোনো কথা বলছে না দেখে সাদাদ নৌশিনকে ধরে বসিয়ে ওর মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো,
দুগালে হাত রেখে বললো,
“এই মেয়ে কি করেছো তুমি??আল্লাহ্ এভাবে কান্না করে কেউ??চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছো একদম….”
নৌশিন সাদাদকে সামনে পেয়ে আবারও কান্না শুরু করে দেয়।।।এতক্ষণ যেটা আটকে ছিলো সেটা আর বাঁধ মানলো না…………
“দেখি দেখি…..চুপ একদম না।।।।একদম না……”
নিজের বুকে চেঁপে ধরলো……….
“সরি,আর বকবো না…..প্লিজ কেঁদো না….সহ্য হয় না……প্লিজ…..”
“বললাম তো আর হবে না এমন…….সরি…..”
সাদাদের মুখের সরি শব্দটা নৌশিন জাস্ট নিতে পারে না,সাদাদের বুক থেকে মুখ তুলে কান্না জড়িত কন্ঠেই একটা ধমক দিলো,
“কিসের সরি…..???সরি কি জিনিস???বলছি বলতে আমি??”
“ওকে….আর বলবো না…..”
“টাকার জন্যই তো এতো রাগ কালকে এই টাকা রাস্তায় ফিলে দিবো আমি,যার লাগবে সে নিয়ে নিবে।।।মসজিদেও দিবো না এই রাগের টাকা…..”
“না না রাস্তায় ফেলতে হবে না ঘরেই থাক তোমার যেমন ইচ্ছা খরচ করো বাট প্লিজ নৌশিন এরপর আর না,আমি জানি ওরা তোমাকে কতটা ভালোবাসে কিন্তু আমিও যে অনেক টা ভালোবাসি,আমার এই ছোট্ট জান পাখিটার ছোট্ট ছোট্ট জিনিস দেওয়ার মতে রহমত আমায় ওপর ওয়ালা দিয়েছেন….হুম তুমি ওদের টাকা নিবে বাট সেটা খরচের জন্য না আলাদা গিফ্ট হিসেবে,আমার বাচ্চার মামা আর নানু কে বলো “এখন কিছু লাগবে না,আমার যখন দশ বারোটা বেবি আসবে ওদের দিয়ে দিতে…..দেখবো কত গিফ্ট দিতে পারো”।।।।।ওকে??”
বাচ্চার কথা শোনেই নৌশিনের কান্না ওধাও।।এক মুহুর্তেই মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো।সব কিছু ভুলে গেলো নিমিষেই মনে হলো কিচ্ছু হয় নি।অথচ একটু আগেও মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো………..
নৌশিন খুব এক্সাইটেড হয়ে সাদাদের আরও কাছে এসে বসে বললো,
“এই সত্যি,আমরা দশ টা বেবি নিবো???”
সাদাদ মনে মনে ভাবে যে নিজেই একটা বাচ্চার মতো দেখতে সে নিবে বাচ্চা।তাও আবার একটা না দশ টা……
“হুম নেওয়া যেতে পারে,যদি বাচ্চার মা ততটা সহ্য করতে পারে…বাট বাচ্চাদের মা ই তো বাচ্চাদের অপুষ্টিতে মেরে দিবে…..”
“এই না না….আমার বেবীদের খুব খাওয়াবো আমি….ছয় মাস বয়স হলেই বিফ খাওয়ানো শিখাবো।।।।সব খাবে ওরা দেখো….”
“কিহ্….?ছয় মাসে বিফ????”
“জাস্ট বললাম মানে সব খাওয়া শিখাবো ওদের….প্লিজ বেবি নিবো….”
“ওফফ….বেবী পাগলী আমার…..আগে না পেটে থাকাকালীন ওদের ঠিক মতো খাওয়াতে হবে তার জন্য তো তোমাকে খেতে হবে আর তুমি এখনি খাও না পরে তো….”
“খাবো খাবো….চলো……”
“আরে দাঁড়াও…এখনি তো বেবী আসে নি….আর খাবার উপরে আসছে…..”
“ওওও….আচ্ছা,আসুক….শোনা…বেবী কবে নিবো….”
“সেমিস্টার শেষ হোক পড়ে বলবো…..”
নৌশিন মন টা খারাপ করে বললো,
“উম উম….সেমিষ্টার….হুমমম…..”
“আর মুখ বেঁকায় না জান….পরে বাচ্চারা বেঁকুমুখী মা ডাকবে….”
“সাদাদ……!!!”(বুকে আস্তে করে ঘুষি দিয়ে,অবশ্য নৌশিনের সব ঘুষি ই এতটা ই আস্তে হয় যে এতে কোনো পিঁপড়া মরবে কি না সন্দেহ)
“আমি কিন্তু সেমিস্টারের পরে না শুনবো না……”
হালিমা বেগুন তখনি খাবার নিয়ে ঘরে ডুকেন,খাবার দিয়ে চলে গেলে,সাদাদ বলে,
“আচ্ছা,সেটা দেখা যাবে এখন খেয়ে নিবে…..”
“আ কিন্তু……”
“কোনে আওয়াজ না….জাস্ট চুপচাপ খাওয়া…….”(রাগী ভাব নিয়ে)
“ওকে…..বাট খাইয়ে দিতে হবে….আর হাত দিয়ে….চামচ চলবে না….”
“আচ্ছা???”(মুঁচকি হেঁসে)
সাদাদ নৌশিনকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজেও খাচ্ছে।
অল্প খেয়েও নৌশিন না না করছিলো কিন্তু সাদাদ জোর করে খাওয়াচ্ছে ওকে।খাওয়া শেষে,
“ও মা গো…….পেট ফেটে গেলো….”
“হা হা হা…..”
“আবার হাঁসে দেখো…..এভাবে কেউ মুখে ডুকায়…..ইশশশশ পেট কত বড় হয়ে গেছে….”(পেটে হাত রেখে)
“এমনি স্বাভাবিক ম্যাডাম….”
“ইশশশশ…..”
“হ্যাঁ….এবার ঘুমাও তো অনেক কান্না করেছো আর রাত জাগলে মাথা ব্যথা করবে…….তুমি ঘুমাও আমি ফাইল টা চেক করে শুয়ে পড়বো….”
“এই….. ”
“কি হলো আবার??”
“আমার তো বুকে না শুলে ঘুম আসবে না…….”
“ও তাই বলুন….ওকে ফাইল থাকুক নিজের মতো আমার বউ ই থাকুক বুকে…..”
সাদাদ আর মুহুর্তও দেরী করলো না….শুয়ে পড়লো আর নৌশিন বিছানায় বসে ছিলো তাই এক টানে ওকে নিজের বুকে নিয়ে নিলো।
নৌশিন সাদাদকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে আর সাদাদ এক হাতে নৌশিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর অন্য হাত নৌশিনের পিঠের উপর দিয়ে রেখেছে।
“বউ…….”
“হুম….”
“বলছি যে আজ তো কালে সাজার কথা ছিলো……”
” ও হ….মনেই ছিলো না গো….”
“গো?????”
“হুম….স্বামী কে বলাই যায়…..”
“বেশ কিন্তু শুনতে….আবার বলো তো….”
“ইশশশ….পারবো না….আরে বলো না……”
“হ্যাঁ গো মনে ছিলো না….আর তুমিও তো মেকাপ আনো নি….”
“আহা গো…..সরি গো বউ…কাল আনবো….”
“এই আবার সরি????”
“ওকে ওকে…..আর হবে না গো বউ…..”
দুজনেই হেঁসে উঠে দুজনের ‘গো’ সম্ভোধনে………
“ও গো…শোনছো…..”(নৌশিন)
“হ্যাঁ গো বউ বলো…..”
“আই লাভ ইউ…..”
“আই লাভ ইউ টু,
আই লাভ ইউ টু…..”
“কি দু বার কেন বললে??”
“কারণ বিকেলে আমার বউ টা আমার আই লাভ ইউ বলে ছিলো বাট তার রাগী বর টা রিল্পে না দিয়েই ফোন কেটে দিয়েছিলো….তাই…..”
“হুমমমমম……”
“উমমমমম……”
সাদাদ নৌশিনের চুলে,মাথায় কপালে ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে বললো,
“জান পাখি,এখন ঘুমাও,সকালে কিন্তু ঘুমাতে দিবো না নামায পড়ে পরতে বসবেন…..”
“এই অত সকালে??”
“হুম….অনেক পড়া মিস হলো কিন্তু…..”
“ওকে,,,ঘুম না আসলে পড়বো….”
“আচ্ছা,তোমার ঐ বদজ্জাত ঘুমটাকে আমি দেখে নিবে বাট শুনো রাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেরী না করে আবারও ঘুমিয়ে পরবে……”
“ওকে ওকে……”
……সাদাদ চুলে বিলি কেটে দেওয়ায় অল্প সময়ের মাঝেই নৌশিন গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো…..সাদাদ আবারও ঘুমন্ত নৌশিনের মায়ায় পড়ে যায়।কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে আকড়ে ধরে নেয় নিজের সঙ্গীনিকে…..পরম সুখে সাদাদও মুহুর্তেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়………

#প্রেমঘোর#৪৭#
💜💜

রোজকার মতোই একটা নতুন সূর্য উদিত হয়।সাদাদ আর নৌশিনের এই দিনটাও নামায দিয়েই শুরু হয়।সাদাদ মসজিদ থেকে নামায পড়ে এসেছে।এসে দেখে নৌশিন ঘুমাচ্ছে।আজ আর কোনো ডাকাডাকি না,স্টাডি রোম থেকে কিছু নোট আর মেনেজমেন্টের কিছু বই নিয়ে এসে বিছানায় রেখে একটানে নৌশিনকে শুয়া থেকে বসিয়ে দিলো।নৌশিন বেশ ভালো ঘুম দিয়েছিলো।তাই হঠাৎ এভাবে টেনে তুলায় ভয় পেয়ে যায়।বোধহয় চোখ থেকে পানি বের হয়ে যাবে এখনি।সাদাদের মুখের দিকে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে তাঁকিয়ে আছে।
“সরি সোনা,এভাবে তুলার জন্য…..ডাকলে ঘুম ভাঙতো বাট বই নিয়ে বসলে আবার আসতো তাই এভাবে তুললাম….যাতে ঘুম ভয় পায়…………
“সরো তো…….”
“এই প্লিজ প্লিজ জানপাখি সকাল বেলা রাগ করে না,আম সরি না??”
“এভাবে তুলে কেউ???”
“সরি তো……”
“ইশশশ…..সকাল সকাল সরি শুরু করছে…..অসহ্য….”
“ওকে ওকে আর বলবো না…..উমমমম্মা……”
কপালে চুমু এঁকে নৌশিনকে বুকে জড়িয়ে নিলো সাদাদ।
“পড়ার জন্য ডেকেছি তো…..কাল সারা রাত ঘুমিয়েছি তো….এখন পড়বে সামনে ফাইনাল সোনা,আমি চাই না বিয়ে করার পর তোমার সাবেক পজিশন টা খারাপ হয়ে যাক….সো এখন উঠো…চোখে মুখে পানি দিয়ে পড়তে বসো…….”
“ওকে…..হুমমমমমম।।।।”
“এই তো আমার কিউটি….. গো…..”
নৌশিন মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে ওয়াশরোমে চলে যায়।ফ্রেস হয়ে বের হয়ে সাদাদকে রোমের কোথায় দেখতে পেলো না।
নৌশিন একটু ক্রিম টিম লাগিয়ে,চুল টা বেণুনী করে নিলো কারণ সাদাদ ওকে খোলা চুল আর বেণুনীতেই বেশি পচ্ছন্দ করে।বিশেষ করে সাদাদ চায় নৌশিন বাসায় এক সাইডে বেণুনী করে রাখুক সবসময়….এটা ওর থ্রি-পিজের সাথে বেশ যায়।নৌশিন টেবিলে বসতে চেয়েও বসলো না বিছানায় ই বই মেলে নিয়ে বসে।সামনে রাখা নোটস গুলো দেখে মুঁচকি একটা হাঁসি দেয়।অবশ্য এই হাঁসির একটা কারণও আছে,আর সেটা হচ্ছে নৌশিনের বেশির ভাগ নোটস ই সাদাদের নোটস।নৌশিন ভার্সিটিতে ভর্তির পর পর ই সাদাদের সাথে রিলেশন আর আপনারা সবাই জানেন সাদাদ তখন এমবিএ তে তো,ওর সব নোটস ও নৌশিনকে দিতো আর এতে ভার্সিটি লাইভে নৌশিনের এইটুকু খাটনি কম হতো আর কি।
নৌশিন পড়ছে……..
কিছু সময় পর সাদাদ একটা মগ নিয়ে ঘরে ডুকে।
নৌশিনের পাশে বসে……….
নৌশিন এতক্ষণে সাদাদকে খেয়াল করলো……..
“ও….তুমি!!….একি!!এতো সকালে কে তোমায় কফি করে দিলো??”
“কেন??সবসময় কারো করে দিতে হবে এমন কোনে কথা আছে??”
“মানে!!তুমি করেছো??”
“ইয়েস মিসেস…..এখন এটা খাও…..ঘুম কম হবে কজ তোমার প্রিয় ব্ল্যাক কফি……তাই না??”
“ইয়ো….তুমি আমার জন্য ব্ল্যাক কফি করছো??”
“তো??”
“না সেটা না….মানে তুমি খাবে না??আর এতটা তো আমি খেতেও পারবো না…”
“মিসেস সাদাদ…মির্স্টার সাদাদ ভালো করে জানে ওনার মিসেস কতটা খায়….আর আপনি আমাকে একটা আশা দিয়ে রেখেছিলেন মনে আছে???”
“কি???”
“উহমহু….গেস করো….চার টা বছর ওয়েটিং এ ছিলাম….”
……………..
“কি হলো মনে পড়ছে না….?”
“হ্যাঁ,হ্যাঁ মনে পড়েছে….তুমি আমার সাথে পিক তুলতে চাইতে….আমি বলতাম বিয়ের পর….তাই তো??”
“আরে না এখন পিকের কথা আমার মাথায় আসে নি….”
“তাহলে???”
“ওকে কি আর করার….. আমিই বলি…..আমি যখন তুমার সাথে চা বা কফি শেয়ার করতে চাইতাম তুমি কি বলতে??….বলতে…”আমার হাসবেন্ডের সাথেই শেয়ার করবো জীবনে প্রথম আর ও চাইলে সারা জীবন করবো বাট এখন তুমি আমার বিএফ ঠিক আছো,আর আমার বিশ্বাস আছে আল্লাহর উপর,ওনি তোমাকেই আমার জীবনে প্রথম ভালোলাগার পুরুষ করে পাঠিয়েছেন আর এই ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা টা তিনিই করেছেন তো আমি এটাও বিশ্বাস করি আমার জন্য শুধু তুমি তুমি আর তুমি ই….সো যে দিন বর হবে সে দিন পর্যন্ত ওয়েট করো….”..”
সাদাদ কথাগুলো শুনে নৌশিন হেঁসে চেলেছে।
“আচ্ছা!!তো এখন বর হয়ে গেছো…..খাওয়া যেতে পারে…..আমিও ওয়েটিং ছিলাম…..”
সাদাদ একটা টেডি সিমাইল দিয়ে কফির মগ টা নৌশিনের দিকে এগিয়ে দিলো………..
“এ মা সে কি….আগে তুমি খাও…..”
“না ম্যাম….আগে আপনি চুমুক দিন তাতে যদি আমার এই বাজে কফি টার একটু মিষ্টতা বাড়ে।।।।।।”
“ধুর।।।।তুমি না……”
“হুম…..হারি আপ….”
নৌশিন আর কথা না বাড়িয়ে কফির মগে ছোট্ট একটা চুমুক দেয়।এরপর সাদাদ…….”বাহ্,পৃথিবীর সেরা কফি এটা!!!থ্যাস্কস ফর মেইড ইট…….”
“বা রে…আমি কোথায় করলাম তুমিই তো করলে…”
“আমি তো জাস্ট করেছি বার এটার টেস্ট তো তুমি দিয়েছো সোনা…..তোমার ঠোঁটের মুধুতে……….”
“ধ্যাত……”
“ম্যাম আর লজ্জা পাস না রে,না হলে সকাল সকাল তোর পড়াটা নষ্ট হবে কিন্তএ আমি সেটা চাইছি না……”
“ইশশশশশশশ…….”
“হুুু….এবার কফি টা শেষ করে স্টাডি…..ওকে?”
নৌশিন সাদাদকে একটা চোখ মেরে বললো…”ওক্কে।”
!
দুজনে কফিটা শেষ করে,
নৌশিন পড়ছে আর সাদাদ ওর পাশে বসে লেপটপে কাজ করছে।
সকাল সাতটা পনেরো বাজে,
এমন সময়……..আচমকা নৌশিন সাদাদের কুলে মাথা রাখে।
“কি???স্টাডি চালু করো…..”
“ওফফফ…..সাদাদ শুধু স্টাডি স্টাডি তোমার…..একটু মাথা রাখি কুলে….এক ঘন্টার উপরে পড়লাম এতো সকালে যা জীবনেও পড়ি নি……”
“আচ্ছা!আমার মহারাণী….আপনি কি আর পরতে চাইছেন না??”
নৌশিন একটা লম্বা হামানি দিয়ে সাদাদের কমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
“উমহু…..ঘুম পাচ্ছে…..ঘুবামো…..”
সাদাদ লেপটপ অফ করে নৌশিনকে আকড়ে নিয়ে বলছে,
“ম্যাডাম সকাল দশ টা পর্যন্ত ঘুমের অভ্যাসটা বিদায় করতে হবে তো নাকি??”
“উম….আজকে একটু করলাম,কালকে একটু।।।।তো এমনি করেই একটু একটু……. ”
সাদাদ নৌশিনের কথায় ঘর কাঁপিয়ে হাঁসতে হাঁসতে বলছে,
“ওকে সোনাপাখি……তাহলে এখন একটু ঘুমাও বাট এক ঘন্টা…….”
মুঁচকি হেঁসে নৌশিন জানায়,
“আচ্ছা….তাহলে তোমার কোলে ঘুমাবো মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তুমি…..”
“কোলে??বাট জিমে যেতে চেয়েছিলাম আমি…….”
“রাখো তো জিম….এমনিতে ফিট তুমি……এখন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না।।।।প্লিজ প্লিজ…..”
“যো হুকুম মেরী মহারাণী………”
“উমমমম…..লাভ ইউ…..”
সাদাদ নৌশিনের মাথায় ভালোবাসার পরশ দিয়ে বললো,”লাভ ইউ টু……”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here