THE_BOOK #পর্ব_১৩

0
225

#THE_BOOK

#পর্ব_১৩

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

বৃষ্টিটা আস্তে আস্তে বেড়েই চলেছে। তবুও রা’দ পূর্ণাশা আর অভিনব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতেছে আর প্রিতমের রক্তাক্ত লাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে এটাই প্রিতম। পূর্ণাশা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,”এটা প্রিতম!! কিন্তু একটু আগেই তো লাবন্যর সাথে প্রিতমের বিয়ে হলো।”
অভিনব বলল,”এটা যদি প্রিতম হয় তাহলে লাবন্যর সাথে যে আছে সে কে??”

রা’দ ফোন বের করে লাবন্যকে কল করলো। কিন্তু লাবন্যর ফোন বন্ধ। রা’দ বলল,”কোথাও একটা গন্ডগোল আছে আমাদের এখনি লাবন্যর কাছে যেতে হবে।”

তিনজনেই পিছনে ঘুরে দৌড় দিলো। সিএনজি চালকে গাড়ি ঘোরাতে বলল। কিন্তু বৃষ্টি টা আরো বেড়ে গেছে। যার কারণে রাস্তায় পানি জমে গেছে। সিএনজি আস্তে আস্তে চলতেছে। ওরা তিনজনই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছে। রা’দ বারবার লাবন্যকে কল করেই যাচ্ছে। ঘন্টাখানেক লেগে গেল লাবন্যর ফ্ল্যাটে পৌঁছাতে। রাত আড়াইটা বেজে গেছে। রা’দ কলিং বেল বাজাতে লাগলো বারবার কিন্তু লাবন্য বা প্রিতম কেউ বের হচ্ছে না। তবুও রা’দ থামছে না। কলিং বেলের শব্দে আশেপাশের মানুষ ও জেগে ওঠে। বাড়িওয়ালা এসে ওদের কতগুলো কথাও শুনিয়ে দিলো। কিন্তু ওরা তাতে পাত্তা দিলো না উল্টে তার থেকে চাবি নিয়ে দরজা খুললো।

তিনজনেই দৌড়ে ভেতরে ঢুকলো। অভিনব তাড়াতাড়ি লাইট অন করতেই দেখলো লাবন্য অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে।পূর্ণাশা দৌড়ে লাবন্যর কাছে গিয়ে বসে। রা’দ আর অভিনব পুরো ঘরে প্রিতমকে খুঁজলো কিন্তু পেলো না। পূর্ণাশা বলল,”লাবন্যর শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ডক্টর ডাকতে হবে।”

অভিনব চিন্তিত হয়ে বলল,”এই বৃষ্টির রাতে ডক্টর পাওয়া যাবে না আমাদের কিছু করতে হবে।”
রা’দ বলল,”লাবন্যর হাত পা ঘষতে হবে।”

লাবন্যর হাত পা ঘষতে লাগলো পূর্ণাশা।অভিনব ও রা’দ পা ঘষতে লাগলো। বারবার লাবন্যর মুখে পানি দিলো কিন্তু লাবন্যর জ্ঞান ফিরলো না। কিন্তু টেম্পারেচার নরমাল হলো।
ওরা লাবন্যর পাশেই বসে রইল। অভিনব বলল,”আ’ম সিওর যে ওই অশরীরীটাই প্রিতমকে মেরে ফেলেছে আর প্রিতমের বেশ ধারণ করে এসব কিছু করেছে।”

রা’দ অভিনবের দিকে তাকিয়ে বলল,”হতে পারে তাই কিছু লাবন্যর জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।”

“কিন্তু লাবন্য যখন প্রিতমের মৃত্যুর খবর জানতে পারবে তখন কি হবে??”

পূর্ণাশার কথ শুনে ওরা দুজনেই চকিতে তাকালো। পূর্ণাশা আবার বলল,”লাবন্যকে কি জবাব দেব আমরা??”

“জানিনা কি করব আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। এর থেকে মরে যাওয়াটাই ভালো।”

এটুকু বলেই রা’দ চুপ করে গেলো। দেখতে দেখতে সকাল হয়ে এলো। পূর্ণাশা একটুও ঘুমায়নি রা’দ অভিনব সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। পূর্ণাশা আবার লাবন্যর চোখে পানির ছিটা দিতেই লাবন্য পিটপিট করে চোখ খুললো। পূর্ণাশা চেঁচিয়ে বলল,”অভিনব রা’দ লাবন্য চোখ খুলেছে।”
অভিনব রা’দ ধড়ফড়িয়ে উঠলো দ্রুত লাবন্যর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। লাবন্য চোখ খুলে পূর্ণাশাকে দেখে অবাক হলো তারপর রা’দ আর অভিনভকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। লাবন্য উঠে বসে বলল,”তোরা কখন এলি??এতো সকালে তোরা এসেছিস!! দরজা কে খুললো প্রিতম??”

প্রিতমের কথা শুনে সবার মুখ কালো হয়ে গেলো। সবাই একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। লাবন্য আবার বলল,”কি হলো বল তোরা?? আর প্রিতম কোথায়??”
পূর্ণাশা বলল,”কাল রাতে কি কি হয়েছে লাবন্য??”
লাবন্য অবাক হয়ে পূর্ণাশার দিকে তাকালো।অভিনব আর রা’দের দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,”এটা জানার জন্য তোরা এতো সকাল সকাল চলে এসেছিস??এক রাতে কি কন্সিভ হয়??পাগলের দল আশ্চর্য!!”

রা’দ বলল,”আমরা এসব জানার জন্য আসিনি। প্রিতম কি কাল তোর সাথেই ছিলো??”

লাবন্য নির্লিপ্ত ভাবে বলল,”হ্যা আমার সাথেই তো ছিল কিন্তু এখন কোথায়??”

“তাহলে তুই অচেতন হয়ে পড়েছিলি কেন??”
অভিনবের এই প্রশ্ন শুনে লাবন্য বলল, “অচেতন অবস্থায় আমি??আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।”
লাবন্যকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে পূর্ণাশা বলল, “তোর কিছু মনে নেই??”

“তোরা কি বলছিস আমি কিছু বুঝতে পারছি না। সবাই একটু খুলে বল।”

অভিনব মাথা নিচু করে বলল,”কাল তোর সাথে যে ছিল সেটা প্রিতম না।”
লাবন্য বিষ্মিত চোখে অভিনবের দিকে তাকায়। রা’দ বলল,”জানি না তুই বিষয়টা কিভাবে নিবি?? কাল তোর সাথে প্রিতম ছিলো না। আর প্রিতম কালকে,,,,,”

এটুকু বলেই রা’দ থেমে গেল। কিভাবে বলবে লাবন্যকে যে তোর ভালোবাসার মানুষ আর বেঁচে নেই। রা’দের মুখে এটুকু শুনেই লাবন্যর চোখে পানি চিকচিক করছে। লাবন্য মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,”প্রিতম কালকে কি??”

“কালকে পুলিশ প্রিতমের লাশ পেয়েছে। কারা যেন প্রিতমকে খুন করেছে।”

রা’দ সবটা খুলে বলল লাবন্যকে। সব শুনে লাবন্য ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। লাবন্যর চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়তেছে।

“ত তোরা মিথ্যা বলছিস। প্রিতমের কিছু হয়নি। প্রিতম তো কাল আমার সাথে ছিলো তোরা ভুল দেখেছিস। প্রিতমের কিছু হয়নি তোরা মিথ্যা বলছিস। প্রিতম কোথায়??প্রিতম,,,”

লাবন্য প্রিতমকে সারা ঘরে খুঁজছে আর ডাকতেছে। রা’দ লাবন্যকে টেনে ধরে বলল, “আমি সব সত্যি বলছি লাবন্য। প্রিতম সত্যি আর নেই ।”

লাবন্য রা’দেকে ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বলল, “তুই মিথ্যে বলছিস প্রিতম আছে।”

বলতে বলতেই লাবন্যর ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই থমকে যায় অপর পাশে থাকা ব্যক্তিটির কথা শুনে। লাবন্যর বাবা ফোন করেছে প্রিতমের মৃত্যুর খবর দেওয়ার জন্য।লাবন্য কোন কথা না বলেই ফোনটা কেটে দিলো। চিৎকার দিয়ে লাবন্য ফ্লোরে বসে পড়লো পূর্ণাশা তাড়াতাড়ি লাবন্যকে আগলে ধরলো। লাবন্য চিৎকার করে বলতেছে,”আমি এসব বিশ্বাস করি না। প্রিতমের কিছু হয়নি। কালকে প্রিতম আমার সাথেই ছিলো। প্রিতম তুমি কোথায়??প্লিজ ফিরে এসো আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। প্লিজ প্রিতম,প্লিজ,,,”

লাবন্যর কান্না দেখে পূর্ণাশাও কেঁদে দিল। এ কোন ভাগ্যের পরিহাস?? ভালোবাসার মানুষকেই কেন হারাতে হয়। লাবন্য চেয়েছিল প্রিতমের হাত শক্ত করে ধরতে কিন্তু ধরার আগেই যে সে চলে যাবে এট ভাবেনি লাবন্য। চোখে তার বর্ষন নেমে এসেছে। চিৎকার করে শুধু প্রিতমকে ডাকছে। লাবন্যর বাবা রা’দকে ফোন করে আসতে বলল। কারণ শশ্মানে প্রিতমের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে আর সেখানে লাবন্যর থাকাটা জরুরি। রা’দ একথা লাবন্যকে বলতেই লাবন্য আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। লাবন্যকে কিছুতেই সামলানো যাচ্ছে না।

বিকেলে লাবন্যকে নিয়ে ওরা শশ্মানে পৌঁছায়। সারাদিন লাবন্য কেঁদেছে অনেক কষ্টে পূর্ণাশা ওকে বুঝিয়েছে। লাবন্যর বাবা মা উপস্থিত হয়েছেন। প্রিতমের মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে। বাড়ির অন্যান্য লোকেরা ওনার দেখাশোনা করতেছে। প্রিতমের ভাই বাবা আর কয়েকজন সদস্য এসেছে শেষকৃত্যে। নিজের ছেলের মৃতদেহ দেখতে তার ভালো লাগছে না। তিনিও কেঁদেছেন খুব। ভেবেছিলেন এই মাস পর ছেলের বিয়ে দেবেন।কত মজা হবে সবাই আনন্দ করবে। কিন্তু তা আর হলো কোথায়??ছেলে তার লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো।লাবন্য দূর থেকে প্রিতমের লাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে বিধায় আর কাঁদছে না লাবন্য। পাশেই পূর্ণাশা লাবন্যকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রা’দ অভিনব ও আছে।

সব নিয়ম মেনে প্রিতমের দেহকে পুড়িয়ে দেওয়া হলো। দাউদাউ করে আগুন জ্বলতেছে আগুনের ধোঁয়া আকাশজুড়ে উড়ছে। লাবন্য ফ্যালফ্যাল করে সেদিকে তাকিয়ে আছে। লাবন্য ধরা গলায় বলল, “আজ প্রিতমের মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী। আমি যদি প্রিতমকে বিয়ের কথা না বলতাম তাহলে প্রিতম আজকে বেঁচে থাকতো। আমার জন্য সব হয়েছে, আমার জন্য। আমি প্রিতমকে মেরে ফেলেছি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি প্রিতম বিশ্বাস করো। আমি তোমার কোন ক্ষতি করতে চাইনি।”

পূর্ণাশা লাবন্যর হাত ধরে বলল,”একটু শান্ত হ। নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা কর। এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না।”

“আর কতো নিজেকে শক্ত করবো??আগুনে ঝলসে যাচ্ছি আমি। প্রিতমকে ছাড়া থাকবো কিভাবে আমি??”

শেষকৃত্য শেষ করে বাসায় আসলো লাবন্য সাথে বাকি সবাই চলে আসলো। লাবন্যর বাবা মাও এসেছে। লাবন্যর বাবা চাইছে ওনার মেয়েকে সাথে করে নিয়ে যেতে। কিন্তু তাহলে তো হবে না। ওই অশরীরী যদি লাবন্যর উপর আক্রমণ করে তাহলে ওনারা বাঁচাতে পারবেন না। উল্টে ওনাদের মেরে ফেলতে পারে যেভাবে প্রিতমকে মেরেছে। রা’দ লাবন্যকে সবটা বলল যদিও লাবন্য এখন এসব নিয়ে ভাবছে না তবুও লাবন্য ওর বাবাকে বলল যে ও যাবে না। ওনারা অনেক জোড়াজুড়িও করলো। শেষে পূর্ণাশা আশ্বাস দিলো যে ও লাবন্যর সাথে থাকবে তাই ওনারা সন্ধ্যায় চলে গেলো।

রাতে লাবন্য পূর্ণাশার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর প্রিতমের সম্পর্কে বলতেছে।প্রিতম কি পছন্দ করে??কোন সময়ে কি করে??কি করলে রেগে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। বারবার নিজেকে দোষারোপ করছে লাবন্য আর পূর্ণাশা শান্তনা দিচ্ছে। অভিনব রা’দ এখনও যায়নি যাবেও না। এই মুহূর্তে লাবন্যর পাশে বন্ধু হিসেবে ওদের থাকাটা দরকার।তাই কষ্ট হলেও দু’জনে থাকবে। লাবন্য কিছুতেই ঘুমাচ্ছে না কিছু খাচ্ছেও না। সবাই মিলে জোর করে লাবন্যকে কিছুটা খাইয়ে দিলো। সাথে স্লিপিং পিল খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।

একটু পরেই লাবন্য ঘুমিয়ে গেলো। ওর পাশে পূর্ণাশাও শুয়ে পড়লো। রা’দ আর অভিনব সারারাত জেগে ওদের পাহারা দিলো।যদি আবার ওই কুৎসিত লোকটা এসে পড়ে??
ভোর ভোর রা’দের চোখটা লেগে এলো।অভিনব তার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। রা’দ ও ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে একটা শব্দে পূর্ণাশার ঘুম ভেঙ্গে গেল।পাশে তাকিয়ে দেখলো লাবন্য নেই। পূর্ণাশা চট করে উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে লাবন্যকে খুঁজলো। বাথরুম থেকে আওয়াজ আসছে দেখে পূর্ণালা উঠে সেদিকেই গেলো।
মনে হচ্ছে লাবন্য বাথরুমে আছে। দরজাটা খোলাই ছিল তাই পূর্ণাশা দরজা দিয়ে উঁকি মারলো। সাথে সাথে অবাক হয়ে গেল পূর্ণাশা কারণ লাবন্য অনবরত বমি করে যাচ্ছে।তার মানে দ্যা বুক এর কথা সত্য হতে চললো?? তাহলে এর থেকে ওরা বাঁচবে কিভাবে????

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here