অনুভবের_প্রহর #অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম) #পর্ব____৩৩

0
370

#অনুভবের_প্রহর
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব____৩৩

গ্রাম থেকে ফিরে দেখলো প্রহরের বাবা-মা বাসায় নেই। দরজা খুলে দিল লতিফার মা। অনুভব চমকালেও প্রহর চমকালো না। তার বাবা-মা গতকাল কলকাতা গিয়েছে। যেটা প্রহর জানে। কিন্তু অনুভবের অগোচরে ছিল।

তখন বিকেলের শেষ! প্রহরের নিয়মমাফিক ওষুধ গুলো খাইয়ে দিল অনুভব। আজ অনেকটা পথ জার্নি করতে হয়েছে। প্রহরকে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য তাগাদা দিল। একটু অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে তাকে। তার চিন্তিত চেহারা প্রহরের চোখ এড়ালো না। বন্ধ চোখাবস্থায় সে শুধাল,

‘কিছু হয়েছে আপনার? কোথাও যেতে হবে?’

অনুভব উসখুস করলো। তাকে একটু বের হতে হবে। বাহিরে কাজ ছিল। কিন্তু প্রহর ঘুমিয়ে পরা না পর্যন্ত সে যেতে চাচ্ছে না। চোখ খুললো প্রহর।

‘বলছেন না কেন? বাইরে যেতে হবে?’

‘হুঁ! একটু বের হওয়া দরকার ছিল।’

‘যান তাহলে। দেরি করছেন কেন?’

‘তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। তারপর যাচ্ছি। ঘুম ভাঙার আগেই চলে আসবো।’

প্রহরের মাথায় হাত রাখলো অনুভব। মৃদু হেসে আবারও চোখ বন্ধ করলো প্রহর। অনুভবের বাহু জড়িয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো।

_______

প্রহরের ঘুম ভাঙার আগে ফেরার কথা বললেও অনুভব ফিরতে পারলো না। বড়সড় এক কাজে আটকা পড়তে হয়েছিল। সে ফিরলো অনেক রাতে। প্রচন্ড চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে। এতটা সময় পেরিয়ে গেছে। অথচ প্রহরের খোঁজ নেওয়া হয়নি। জোরে জোরে হেঁটে সে বাসা অবধি পৌঁছাল। বরাবরের মতো দরজা খুলে দিল লতিফার মা। দরজা খুলে সে হাই তুলে রান্নাঘরের পাশের রুমে চলে গেল। অনুভব বুঝতে পারলো কাঁচা ঘুম ভেঙে উঠে এসেছেন তিনি। মনে মনে কিছুটা অনুতপ্ত হলো সে।

সাবধানে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠলো সে৷ দুই তলার সব আলো বন্ধ। শুধু প্রহরের রুমে আলো জ্বলছে। ও এখনো ঘুমায়নি? রাত তো বেশ হয়েছে। পা টিপে টিপে রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো অনুভব। কপালের ঘাম মুছে দরজার হাতলে হাত রাখলো। দরজা খোলার মৃদু একটা শব্দ সৃষ্টি হলো৷ অনুভব ভেতর ঢুকতে প্রহর প্রায় দৌঁড়ে এসে বললো,

‘আপনি ঠিক আছেন? এত দেরি হলো কেন? চিন্তা হচ্ছিল তো!’

উত্তর দেওয়ার আগে প্রহরের পানে তাকালো অনুভব। সঙ্গে সঙ্গে কথার খেই হারিয়ে ফেলল। দু চোখের ক্লান্তি উবে গেল। ভর করলো বিস্ময়। সাথে আবেশিত মুগ্ধতা। বিস্ময় আর মুগ্ধতার ঘোর সহজে কাটলো না৷ ফলস্বরূপ মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারলো না।

প্রহরের পরনে লাল বেনারসি। মুখে ভারী সাজ। গায়ে ভারী গহনা৷ হাতভর্তি চুড়ি। বিয়ের কনে মনে হচ্ছে তাকে। অনুভবের পলকহীন দৃষ্টি প্রহরকে লজ্জায় ফেলে দিল। স্মরণ করিয়ে দিল নিজের আকস্মিক উপস্থিত। দৃষ্টি নত করলো সে। অনুভব দ্বিধান্বিত সুরে বললো,

‘এসব কি?’

‘কোনসব?’

‘বিয়ের কনের মতো সাজ দিয়েছ কেন? আবার বিয়ে করার ইচ্ছে জেগেছে?’

হাসলো প্রহর। কিছু মুহূর্তের জন্য। ফের হাসি থামিয়ে বললো,

‘বিয়ে করবেন আমায় অনুভব? আপনি বিয়ে করতে রাজি থাকলে আমি হাজার বার কনে সাজতে রাজি।’

‘রাজি না থেকে উপায় আছে? অনশন শুরু করবে তো আবার।’

অনুভব স্বশব্দে হেসে ফেলল। হাসির সাথে সাথে চেহারা ঝলমল করে উঠলো। কি সুন্দর লাগছে এই হাসিমাখা মুখটা। মানুষের সমস্ত দুঃখ ভাটা পড়ে যায় এই হাসিতে। একমাত্র এই হাসিই সত্য। প্রহর হঠাৎ তাড়া দিল তাকে। ওয়াশরুমের সামনে এনে বললো,

‘শাওয়ার নিয়ে আসুন। ভেতরে সব রেডি করে রেখেছি।’

অনুভব অসম্মতি প্রকাশের ফুরসত পেল না।

ভেজা চুলে পাজামা পাঞ্জাবি পরে বের হলো অনুভব। আড়ষ্টতায় ঘেরা মনে হচ্ছে তাকে। চেহারায় লজ্জার ছাপ। হাতের ভেজা টাওয়ালটা নাড়াচাড়া করলো সে। প্রহর বিছানায় বসে ছিল। তার দিকে এগিয়ে গিয়ে অনুভব বললো,

‘এসবের মানে কি? হুঁ? বিয়ের এতগুলো দিন পর হঠাৎ বর-বউ সাজার ইচ্ছে হলো কেন?’

‘আমার আপনাকে বর সাজে দেখার ভীষণ রকম ইচ্ছে হয়েছে। আমার আপনাকে পরিপূর্ণ বউয়ের সাজে কখনো দেখতে ইচ্ছে হয়নি?’

‘ইচ্ছে হয়নি এমন না। ইচ্ছে হয়েছে। কিন্তু আমার চোখে তুমি এমনিতে পরিপূর্ণ। সব সাজে সুন্দর।’

বুকের নদীতে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ খেলে গেল প্রহরের। অনুভবের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো,

‘ফ্লার্ট করছেন? একদম এসব করবেন না!’

‘বউয়ের সাথেই তো করছি৷ এবার চুল গুলো মুছে দাও তো।’

সহজ ভঙ্গিতে প্রহরের সামনে বসে পড়লো অনুভব। চোখ-মুখ খুশিতে জ্বল জ্বল করছে প্রহরের। স্বযত্নে মাথার চুল মুছে দিল। শুধু মাথার চুল মুছে ক্ষান্ত হলো না। হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে দিল। অনুভবের মাথার চুল ভীষণ ঘন। এই চুলের প্রতি তার আজন্ম দূর্বলতা। ভার্সিটিতে অনুভবকে যতবার দেখেছে ততবার চুলগুলো ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হয়েছে। অবশেষে সে সার্থক। চুলগুলো এ জীবনে ছুঁয়ে দিতে পেরেছে।

‘খিদে পায়নি আপনার? খাবার এনে রেখেছি।’

‘কেন? নিচে দিয়ে খেতাম।’

‘বরসাহেব, আজ আপনার নিচে নামা নিষিদ্ধ।’

অনুভব উঠে দাঁড়ালো। ঠোঁটের কোণের মুচকি হাসিটা বিদ্যমান এখনো। সেন্টার টেবিলে বড় এক প্লেটে খাবার ঢাকা দেওয়া। প্লেট নিয়ে সে প্রহরের মুখোমুখি বসলো৷ ছোট এক লোকমা করে বাড়িয়ে দিল।

‘হাঁ করো।’

‘একবার খেয়েছি তো।’

‘আমার সাথে দ্বিতীয় বার খাও। হাঁ করো।’

‘লিপস্টিক নষ্ট হবে না?’

‘হলে হোক।’

প্রহর আর কথা বললো না৷ বিনা সঙ্কোচে হাঁ করলো।

________

আকাশে আজ চাঁদ উঠেছে। মস্ত বড় চাঁদ। তার রুপালি আলোয় ভেসে যাচ্ছে গোটা শহর। প্রকৃতি! তাকে সঙ্গ দিচ্ছে ঝাঁক ঝাঁক নক্ষত্রেরা। চাঁদের আলোতে আকাশে তারার মেলা বসেছে যেন। মুগ্ধ হয়ে সেদিকে চেয়ে ছিল প্রহর। বেলকনি দিয়ে সামনের ঝলমলে প্রকৃতিও দেখা যাচ্ছে। চাঁদের আলো পড়ে গাছের পাতাগুলো ঝিকমিক করছে। তার লতানো দেহটা অনুভবের সাথে মিশে আছে। হঠাৎ শুকনো কাশি দিয়ে উঠলো সে। অনুভব ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,

‘রুমে চলো প্রহর। অসুস্থ হয়ে পরবে।’

‘আজ আমি আপনার কোনো কথা শুনবো না বরসাহেব। সারারাত এখানে থাকবো৷ আপনার সাথে।’

প্রহরের চোখে মুখে দুষ্টমি খেলা করছে৷ অনুভবের আশঙ্কা বেড়ে গেল। প্রহর হঠাৎ মুখোমুখি হলো তার। আরো কাছে ঘেঁষে এলো। তার ডান হাতটা স্পর্শ করলো বুকের বাঁ পাশ। মাদকতা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো,

‘বেশ কিছুদিন হলো আপনি কাছে থেকেও কেমন পালিয়ে পালিয়ে রয়েছেন। আজ আপনার পালানোর সব পথ বন্ধ।’

অনুভবের হৃৎস্পন্দনের গতি ক্রমশ বেড়ে চলেছে। গলার কাছে অন্য রকম শুষ্কতা অনুভব করলো। তার মুগ্ধ দৃষ্টি প্রহরের উপর ন্যস্ত। চাঁদের রহস্যময় আলোর ঝলকানি প্রহরের চেহারা জুড়ে। তাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। তার দূর্বল হৃদয় মেয়েটির প্রেমে পড়লো। ঠিক কত বারের মতো জানা নেই! সে বেশ বুঝতে পারছে আজ আর তার পালানোর পথ নেই। সে নিজেই পালাতে পারবে না!

_______

(চলবে)

আসসালামু আলাইকুম। গল্প সমাপ্তির পথে। পরবর্তী পর্ব লেখা শেষ। দেড়-দুই ঘন্টা ব্যবধান নিয়ে আজ রাতে-ই পোস্ট করে দিবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here