#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-৫
তিয়াশা পানির কল ছেড়ে চোখে মুখে ইচ্ছেমতো পানি দিলো।তারপর বের হয়ে ক্যাম্পাসের এক কোনায় গিয়ে বসে পড়লো। আজ আর কোনো ক্লাস করবেনা।
-তিয়াশা এটা করা কি খুবই প্রয়োজন ছিলো?
শেলির কথায় তিয়াশার ঘোর ভাংলো।দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
-হ্যা,খুব প্রয়োজন ছিলো।মানুষ ধাক্কা খেলে তবেই উঠে দাড়ায়।আরাফও উঠে দাড়াবে।খুব ভালোভাবেই উঠে দাড়াবে।শুধুমাত্র ধাক্কার প্রয়োজন ছিলো। সেটা আমি দিয়ে দিয়েছি।
-যদি হিতে বিপরীত হয়ে যায়?
-হবে না।আমার মন বলছে আর আরাফের ভালোবাসা।
-কেন শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস?আর আরাফও তো কষ্ট পাচ্ছে।
-হ্যা,আমি ওকে অনেক আঘাত করেছি।ও আমার কাছ থেকে এতোবড় আঘাত আশা করেনি।তবে এতে আমাদের দুজনেরই মঙ্গল।আমাদের ভবিষ্যৎ,আমাদের ভালোবাসা।আমাদের ভালোবাসা।কখনো ভাবিনি আমি প্রেমে পড়বো তাও আরাফের।আমি আমার নিজের অজান্তে খুব গভীরে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।তুই জানিস আমি ওকে কথাগুলো বলার সময় কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করেছি?একমাত্র আমিই জানি।নিজেকে বড় মাপের অভিনেত্রী মনে হচ্ছে।
-তিয়াশা ভাবিস না,সব ঠিক হয়ে যাবে।শুধুমাত্র নিজেকে সামলে নে।ধৈর্য ধর।এখন আর এখানে বসে থাকতে হবে না।বাসায় যা,ফ্রেশ হয়ে রেষ্ট নে।অনেক বড় ধকল গেছে আজ তোর উপর দিয়ে।
আরাফ খুবই ঠান্ডা ভংগিমায় নিজের রুমে বেডের উপর বসে আছে।এতটা ঠান্ডা কি করে আছে ভাবতে পারছেনা।ওর মনে হচ্ছে ও ঘুমিয়ে ছিলো আর একটা স্বপ্ন দেখেছে।খুবই ভয়ানক স্বপ্ন।পরক্ষণেই অনুভব করতে পারলো স্বপ্ন নয় সব সত্যি।স্বপ্নতো ছিলো এতদিন যা দেখে এসেছে।আরাফের গলা শুখিয়ে কাঠ হয়ে গেছে জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে এক নিশ্বাসে পুরো পানি শেষ করে ফেললো।তিয়াশার বলা কথাগুলো ওর কানে বাজছে।রাগে,অপমানে,ক্ষোভে,ঘৃনায় ওর শরীর কাপছে।হাতে থাকা গ্লাসটা সজোরে মুষ্টি বদ্ধ করলো।গ্লাস ভেংগে কাচের টুকরো ফ্লোরে পরে গেলো। আরাফের হাত দিয়ে অনবরত রক্ত ঝরছে।সেদিকে আরাফের খেয়াল নেই হাটু গেরে বসে কাদতে শুরু করলো।
২-৩দিন যাবত আরাফ রুম থেকে বের হয় না।কলেজে না দেখতে পেয়ে তিয়াশা বেশ চিন্তিত। কাকে জিজ্ঞেস করবে আরাফের কথা,কিভাবে ওর খোঁজ পাবে বুঝতে পারছেনা।দাদিকে ফোন করবে,,কিন্তু সেটা করাও ভুল হবে।দাদিকে ফোন করলে আরাফ জানতে পারবে।ভাবতে ভাবতেই দাদির ফোন।
তিয়াশা কাপা কাপা হাতে ফোন রিসিভ করলো।
-আসসালামু আলাইকুম দাদি।
– আলাইকুম আসসালাম।আরাফের কি হইছে বইন?
-কেনন,,,দাদি?
-সারাদিন রুমের ভিতর থাকে। বের হয়না,খায় না।কলেজে যায়না,বন্ধুদের সাথে বাইরে যায়না।
-আসলে দাদি ২-৩দিন যাবত ওর সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়না।আমি তেমন কিছু জানি না। আপনি এক কাজ করুন।ওর বন্ধুদের বাসায় আসতে বলুন।তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
-আচ্ছা।আমি ফারাবি কে ফোন করি।
-জ্বী দাদি।
আরাফের দাদি ফারাবিকে ফোন করে সবটা বললো। ওরা ২-৩জন খুব শ্রীঘই বাসায় আসবে বলে জানালো।
-দোস্ত আর কতদিন এইভাবে থাকবি?আমি তোকে আগেই বলেছিলাম ওর থেকে দুরে থাক।কিন্তু তুই আমার কথা শুনলিই না,, ফারাবি কথাগুলো বললো।
সাজ্জাদ বললো,দোস্ত উঠ।ফ্রেশ হ।আমরা বের হবো।
আরাফের মুখ দিয়ে শুধু একটা কথাই বের হলো,তোরা যা।বিরক্ত করিস না।
-আমরা বিরক্ত করছি?আমরা তোর বন্ধু সবাই তোকে ছেড়ে গেলেও আমরা যাবোনা।তিয়াশার জন্য তো আমদের ভুলে গিয়েছিলি।আমাদের চিনতেই পারতিস না আর সেই তিয়াশা দেখ তোকে ছেড়ে চলে গেলো।
-ওকে ভালোবাসার জন্য যখন আমার ১০০টা কারন আছে তেমনি আমাকে ওর ভালো না বাসার পিছনেও কয়েক শ কারণ আছে।
-তোর মতো ছেলেকে কোন মেয়ে না ভালোবাসবে?তিয়াশা দেমাকি মেয়ে তাই তোর সাথে এমন করেছে।ওর ভালোবাসার মতো মন ই নেই।
-এখানে ওর কোনো দোষ নেই।সব দোষ আমার।আমার সবচেয়ে বড় ভুল ওকে ভালোবাসা।
-ওকে ভুলে যা।শুধু তুই বল একদিনের মধ্যে হাজার মেয়ের লাইন বসিয়ে দেবো।ওইসব মিডিল ক্লাস মেয়ে হাই সুশাইটির যোগ্য ই না।তোর সাথে ওকে যায়না।ভুলে যা।রেডি হ।কিছুক্ষণ পর তোর আসে পাশে তিয়াশার চেয়ে সুন্দরী মেয়েরা ঘুরঘুর করবে।
-তিয়াশা তো আর হবে না।
-তিয়াশা,তিয়াশা।এইবার ইচ্ছে করছে ওই মেয়েকে,,
-ফারাবি প্লিজ।তিয়াশার নামে কোনো আজে বাজে কথা শুনতে চাইনা।তোরা যা আর আমাকে একা থাকতে দে।
-ওকে।নিজের খেয়াল রাখিস।
আরাফ ৭দিন পর আজ কলেজে যাবে।চুল কেটে ছোট করেছে।পাশাপাশি ক্লিন সেইভ।ফরমাল পোশাকে আর ফরমাল শার্ট-প্যান্ট পরে কলেজের জন্য বেরিয়ে গেলো।নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় নিয়েছে।৭দিনে জীবন থেকে অতীতের কষ্ট, অপমান মুছে ফেলেছে। এখন একমাত্র লক্ষ্য ফাইনালে ফাস্ট হওয়া।
কলেজে সবাই আরাফকে দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে।আরাফ এই সব পাত্তা না দিয়ে ক্লাশ রুমে ঢুকে পড়লো। শেলি তিয়াশাকে ধাক্কা মেরে আরাফকে দেখালো।তিয়াশা আরাফকে দেখে কিছুটা নিশ্চিত হলো।তবে তিয়াশা আরাফের দিক থেকে চোখ ফিরাতে পারছেনা।খুটে খুটে আরাফকে দেখছে।হাতের ব্যান্ডেজ টাও চোখ এড়ালো না।তিয়াশা ঠিক বুঝতে পারছে রাগের মাথায় নিজেকে আঘাত করেছে এই ছেলেটি।আরাফ চুপচাপ ফাকা সিট দেখে বসে পরলো।তার নজর শুধুমাত্র স্যারের দিকে।স্যারের কথা মন দিয়ে শুনছে।
তিয়াশা আরাফের ভিতর এই পরিবর্তন দেখে মনে মনে খুব খুশি।কিন্তু ওর আরাফের দিকে ডাইরেক্ট তো দুরে থাক আড় চোখে তাকানোর সাহস হচ্ছে না তবুও কয়েক বার আড় চোখে তাকিয়েছে কিন্তু আরাফ একবারের জন্যও তিয়াশার দিকে তাকায়নি।যে আরাফ সবসময় ওর আগে পিছে ঘুরতো সে আরাফকে দেখে মনে হচ্ছে ও তিয়াশাকে চিনেই না।সম্পুর্ন অপরিচিত কেউ।
অফ ক্লাসে তিয়াশা লাইব্রেরী ঢুকেই দেখে যে আরাফ বই খুলে বসেছে। কিছু একটা খুজছে।তিয়াশা অন্য ব্রেঞ্চে বসেছে কিন্তু পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না।কয়েকবার আরাফের দিকে আড় চোকে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটার দিন দুনিয়ার খবর ই নেই।বইয়ের ভিতর ঢুকে গেছে।তিয়াশা বেহায়ার মতো ওর দিকে কিছুক্ষণ পরপর তাকাচ্ছে কিন্তু আরাফ বইয়ের ভিতর ঢুকে গেছে।শেলির কাছ থেকে জানতে পেরেছে আরাফ আজ একবারের জন্যও তিয়াশার দিকে তাকায়নি।তিয়াশার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।মনে মনে আরাফের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে।
একটু তাকালে কি হয়।আমার দিকে তাকালে কি ওর চোখ ঝলসে যাবে৷অদ্ভুত।
তিয়াশার আর সহ্য হচ্ছেনা। ও ব্যাগ নিয়ে ধাম করে উঠে পরলো।তারপর হনহন করে উঠে চলে গেলো।সবাই ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে কি হলো মেয়েটার।তিয়াশা দরজায় জোরে ধাক্কা মেরে বের হয়ে গেলো।দরজার শব্দে আরাফের পড়ায় ব্যাঘাত ঘটায় দরজার দিকে তাকাতেই তিয়াশাকে বের হতে দেখলো আর খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো তিয়াশা রেগে আছে।আর রাগের কারণ টাও ওর জানা।একটা তুচ্ছ হাসি হেসে পড়ায় মনোযোগ দিলো।
চলবে,,,