অন্যরকম_ভালোবাসা পার্ট-৪

0
421

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-৪

তিয়াশা গেইটের কাছে এসে হটাৎ হোচট খায়।আর এতে করে ওর জুতোর ফিতে খুলে যায়। নিচু হয়ে ফিতায় হাত দিতেই কোথা থেকে আরাফ এসে তিয়াশার হাত থেকে ফিতা নিয়ে বাধতে শুরু করলো।তিয়াশা আরাফের এমন অদ্ভুত কর্মকাণ্ড দেখে অস্বস্তি বোধ করলো এবং খেয়াল করে দেখলো অনেকেই ওদের দেখছে। তিয়াশা না পেরে আরাফকে বলেই ফেলল,
-আরাফ কি করছো?আমি লাগাতে পারবো।
-আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।তুমি চুপ করে দাড়াও।
-আরাফ সবাই দেখছে।কিভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।কি ভাবছে বলো তো।
-কি ভাববে? যা খুশী ভাবতে দেও।আমার ফিতা লাগানো শেষ।
-তা হটাৎ কি মনে করে ফিতা লাগানো হলো?
-সত্যি বলবো?
-অবশ্যই।
-তোমাকে পটানোর জন্য।
-হুয়াট!!
-হ্যা,,যাতে আমাকে তাড়াতাড়ি উত্তর জানিয়ে দেও।আর পজিটিভ উত্তর যেন পাই।
-তুমি আসলেই একটা পাগল।
-আমার প্রতি মেডামের দয়া কবে হবে?
-কাল পর্যন্ত।
-আচ্ছা আমি অপেক্ষায় থাকবো।
ওকে। বায়।গাড়ি অপেক্ষা করছে। যেতে হবে।
-হুম যাও।

তিয়াশা বই খুলে কলমের মাথা কামড়াচ্ছে।কিভাবে আরাফকে সবটা বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।কত কঠিন কঠিন চাপ্টার এক চুটকিতে সলভ করে ফেলেছে কিন্তু এই ব্যাপার টাই পারছেনা।এই জন্যই লোকে বুঝি বলে প্রেমে পরলে মানুষ বোকা হয়ে যায়।তিয়াশার নিজেকে বড্ড বোকা মনে হয় আজকাল।ঘড়িতে ১১টা বেজে চলেছে।ডিনার করার জন্য মামনি ডাকছে।
অপর দিকে আরাফের সময় কাটতেই চাইছেনা।কখন সকাল হবে আর কলেজে যাবে।তিয়াশা কি বলবে,হ্যা বলবে তো।যদিও আরাফের মনে হচ্ছে তিয়াশার উত্তর পজিটিভই হবে।তবুও কেমন জানি একটা অজানা ভয় ভর করেছে।ঘড়িতে ১২টার কাটা ছুইছুই।আরাফ তিয়াশার সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলো।
তিয়াশা বারান্দায় পাইচারি করছে।তখনই কেউ একজন বারান্দায় ঢিল ছুড়ে মারলো।তিয়াশা ভয় পেয়ে গেলো।বাইরের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছেনা। অনেকটা সাহস সঞ্চার করে বাইরে তাকালো।তাকিয়ে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। ভুত দেখলেও এতটা চমকাতো না যতটা না আরাফকে দেখে চমকেছে।আরাফ তিয়াশাকে ইশারায় নিচে আসতে বলল।তিয়াশা অতিদ্রুত রুম থেকে মোবাইল এনে আরাফকে কল দিলো।আরাফ ফোন হাতে নিয়ে কেটে দিলো,আবারো ইশারায় নিচে আসতে বললো।তিয়াশা আর কোন পথ না পেয়ে নিচে গিয়ে আস্তে করে মেইন গেইট খুলে বাইরে গেল।
-আরাফ,তুমি এতো রাতে এখানে কি করছো?
-তোমাকে দেখতে এলাম।
-কেন আমার মাথায় কি নতুন করে শিং গজিয়েছে?
-না,আসলে ঘুম আসছিলো না তাই।
-ঘুমের ওষুধ লাগবে?বাবার রুমে আছে।চাইলে এনে দিতে পারি,,
-তিয়াশা!!
– হ্যা বলো।
-তোমার উত্তর কিন্তু এখনো পাইনি।
-বলেছি তো কালকে বলবো।
-কাল আজে পরিনত হয়েছে ১২ ৳৩৪ বাজে।
-আরাফ তুমি এখন যাও প্লিজ।বাবা দেখলে ঝামেলা হয়ে যাবে।প্লিজ প্লিজ।
-উত্তর দিয়ে দাও।চলে যাচ্ছি।
-কাল কলেজে জানাবো প্রমিস।
আরাফ কিছুটা মনমরা ভাবে বলে উঠলো, ওকে।গুড নাইট।

তিয়াশা আর শেলি ক্লাস থেকে বের হচ্ছে।তখন শুনতে পায় কিছু ছেলে মেয়ে ওকে নিয়ে আলোচনা করছে।তাদের কথোপকথন এমনঃ
সবই টাকার খেলা। টাকার লোভে পরে মানুষ সব ই করতে পারে।না হলে তিয়াশার মতো মেয়ে আরাফের সাথে ঘুরে।তিয়াশা আরাফের বাবার টাকা দেখেছে।
অন্যজন বলছে,ঠিক বলেছিস।ভাত ছিটালে যেমন কাকের অভাব হয় না তেমনি টাকা ছিটালেও এমন ২-৪টা তিয়াশার অভাব হয়না।
ভালোবাসা টালোবাসা কিচ্ছু না,,বড় রেস্টুরেন্টে খাওয়া,দামি গিফট পাওয়া,বড় মলে গিয়ে শপিং করা এই হচ্ছে ওদের ভালোবাসাভালোবাসা টালোবাসা কিচ্ছু না,,বড় রেস্টুরেন্টে খাওয়া,দামি গিফট পাওয়া,বড় মলে গিয়ে শপিং করা এই হচ্ছে ওদের ভালোবাসা।
-তোর কি মনে হয় আরাফ তিয়াশাকে ভালোবাসে?আরাফের এরকম ডজন খানিক জিএফ থাকা অসম্ভব কিছু না।আরাফ যেমন তিয়াশাকে ব্যবহার করছে তেমনি তিয়াশাও আরাফকে ব্যবহার -তোর কি মনে হয় আরাফ তিয়াশাকে ভালোবাসে?আরাফের এরকম ডজন খানিক জিএফ থাকা অসম্ভব কিছু না।আরাফ যেমন তিয়াশাকে ব্যবহার করছে তেমনি তিয়াশাও আরাফকে ব্যবহার করছে।
তা নয়তো কি পিন্সিপালের মেয়ে হয়ে এরকম গুন্ডা,বখাটে,বেপরোয়া টাইপ ছেলের সাথে প্রেম করে?পড়াশোনাতেও একদম ডাব্বা।কোনদিক দিয়েই যায়না।আরাফ বখে যাওয়া ছেলে ওর কাছ থেকে এটা আশা করা যায় কিন্তু তিয়াশা তো বুদ্ধিমতী মেয়ে।
তিয়াশার গা জ্বলে যাচ্ছে এদের নোংরা মানসিকতা দেখে।কেউ কেউ তো সরাসরিই টিটকারি করছে।
তিয়াশা হনহন করে হেটে যাচ্ছে।হটাৎ আরাফ এসে তিয়াশার হাত ধরে থামিয়ে দিলো।
-কি হলো তিয়াশা, আমি তো উত্তর পেলাম না।
এমনিতে রেগে ছিলো আর আরাফকে দেখে মনে হলো কেরোসিনে কেউ দিয়াশলাই দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
-কিসের উত্তর? তুমি আমার কাছ থেকে কি আশা করছো?আমি তোমার মতো গুন্ডা,বখাটে,ফালতু ছেলেকে I love u too বলবো?হাস্যকর। আচ্ছা আরাফ কোন দিক দিয়ে তুমি আমার যোগ্য বলোতো?আমি কলেজের সুন্দরী,সুশ্রী,টপ একজন স্টুডেন্ট আর তুমি?তোমার কি পজিশন? গুন্ডা,বেয়াদপ,বড়লোক বাবার বখে যাওয়া ছেলে।পড়াশুনায় ডাব্বা।
-তিয়াশা তুমি এসব কি বলছো?কি হয়েছে তোমার?আমি জানি আমি তোমার মতো না।আমরা পুরোই আলাদা।কিন্তু আমি নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টা করছি।আর তুমি জানো আমি এখন আর আগের মতো নেই।
-তুমি কি, কেমন সব আমার জানা আছে। আমার সাথে তোমাকে যায়না।তোমার ক্লাস হাই হতে পারে কিন্তু তুমি আমার লেভেলের না।তোমার বাবার প্রচুর টাকা আছে এটাই তোমার একমাত্র যোগ্যতা।আর তোমার বাবার টাকার প্রতি আমার কোনো মোহ নেই।তোমার বাবার ওই টাকা দিয়ে আমায় কিনতে পারবে না।আমার বয়ফ্রেন্ড কিংবা লাইফ পার্টনার হওয়ার যোগ্যতা তোমার নেই।আমার পাশে কোন বড় অফিসার,ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কে মানায় তোমাকে না।
-ভালোবাসায় এতোসব যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না।প্রয়োজন হয় ২সুন্দর মনের মানুষের।
-ভালোবাসা??তোমাদের মতো ছেলেরা আমাদের মতো মেয়েদের কখনোই ভালোবাসেনা।শুধু মাত্র ব্যবহার করে।যেমন তুমি আমাকে ব্যবহার করে গত পরিক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে এবং বাকি পরিক্ষায়ও আমাকে ব্যবহার করে কৃতকার্য হতে চাও।পাশাপাশি আমার নামের সাথে তোমার নাম জড়িয়ে নিজের ইমেজটাও শুদ্ধ করতে চাও।কেননা কলেজে আমার ভালো মেয়ে,ভালো ছাত্রী হিসেবে যথেষ্ট সুনাম আছে।তোমার দুর্নাম ঢাকতে চেয়েছো।আমার মতো মেয়ে তোমার মতো ছেলের আসেপাশেও ঘেঁষে না,পাত্তা তো দুরের কথা।আমি নেহাত ভালো মনে তোমাকে সাহায্য করেছিলাম,বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।ভুলটা আমারই। আমিওই তোমাকে লাই দিয়ে মাথায় চড়িয়েছি।নয়তো আমার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস দেখাতে না।
-অনেক অহংকার না তোমার??নিজের পড়াশোনা নিয়ে,নিজের অবস্থান নিয়ে?
-অহংকার করার মতো কিছু আছে বলেই অহংকার করি তোমার আছে কিছু?ওহ,,তোমার বাবার তো প্রচুর টাকা। তোমার বাবার টাকা আর তোমার এই লুক দেখে তো হাজার হাজার মেয়ে তোমার উপর ফিদা। আমি সেই সেই টাকার ২পয়সা ও দাম দেই না।আমার কাছে শিক্ষার চেয়ে দামি আর কিছুই নেই।
আরাফ আর দাড়াতে পারছেনা। তিয়াশার বলা কথাগুলো ওর বুকের ভিতরটা আঘাতে আঘাতে ভেংগে চুরমার করে দিচ্ছে।ও তিয়াশাকে আজ চিনতেই পারছেনা।সব কিছু ওর স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
-তোমার এই অহংকার আমি চুর্ন করে দেব।
-আচ্ছা!! কি করবে?ক্লাসে টপ করবে আমাকে নামিয়ে?
-যদি তাই করি??
তিয়াশা হাসছে বিদ্রুপের হাসি। হাসি ওর থামছেই না।আরাফের শরীর জ্বলে যাচ্ছে তিয়াশার হাসিগুলো ছুড়ির মতো বিধছে।
-তুমি টপ??
হাসালে আরাফ।ক্লাসে টপ হওয়া চারটেখানি কথা না।
-চ্যালেঞ্জ করছো?এক্সেপ্টেড।
-ওকে ডান।
-আমি জিতলে কি পাবো?
-তুমি যা চাইবে।
যদিও আমি জানি তুমি জিতবেনা।টপ,,, হাহাহা।
-হেসে নেও কারণ খুব শ্রীঘই তোমাকে কাদতে হবে।
-জিতবো তো আমিই।আরাফ কখনো হারতে শিখে নি। আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে হারাতে পারেনি, পারবেওনা।সে তিয়াশাই হোক।
-অল দ্যা বেষ্ট।
-পরে ভুলে যেওনা তুমি কি কথা দিয়েছো।আর থ্যাংকস তোমার আসল রুপটা আমাকে দেখানোর জন্য।খোলসের আড়ালের এই অহংকারী তিয়াশাকে দেখানোর জন্য।থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।এন্ড আই হেইট ইউ।
তিয়াশা সোজা লেডিস ওয়াশরুমে চলে গেলো। দরজা লক করে দুহাতে মুখ চেপে কাদছে আর বলছে, সরি আরাফ।সরি।আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিলাম।তোমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছি তার চেয়ে বেশি কষ্ট আমি পেয়েছি।এছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না।আমায় ক্ষমা করো।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here