অন্যরকম_ভালোবাসা পার্ট-৬

0
512

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-৬
ফাবিহা নওশীন

তিয়াশা বাসায় ফিরে নিজের রুমের দরজা লক করে চেঞ্জ না করেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।তারপর ফেচফেচ করে কাদছে।আজকাল কেন ওর এতো কান্না পায় ও নিজেও জানেনা।হয়তো আরাফের অভিশাপ দিয়েছে তাই। আরাফ সেদিন বলেছিল,”হেসে নেও কেননা এরপর থেকে তোমাকে কাদতে হবে। “তাই হচ্ছে। সেদিনের পর থেকে কেদেই যাচ্ছে।প্রতিদিন একবেলা করে কাদছে। তিয়াশা হটাৎ প্রচন্ড মাথাব্যথা অনুভব করছে।মামনি খাওয়ার জন্য কয়েক বার রাবেয়াকে দিয়ে তাগাদা দিয়ে গেছে। এবার নিজেই ডাকতে এসেছে।তিয়াশার একদম খেতে ইচ্ছে করছেনা।ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ফ্রেশ হয়ে নিচে খেতে চলে গেলো।না খাওয়ার কারণে হাজার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেয়ে চুপচাপ খেয়ে নেওয়াকেই শ্রেয় মনে করলো।দুলোকমা ভাত খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পরলো।কিন্তু বাধলো আরেক বিপত্তি।খাওয়ার পর বমি করতে করতে অবস্থা খারাপ।শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি পাচ্ছেনা মনে হচ্ছে ওর শরীরের ভিতর শুন্য হয়ে যাচ্ছে।প্রচন্ড ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরলো।
আরাফ ওর রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।হাসার একমাত্র কারণ তিয়াশা।তিয়াশার লাইব্রেরীতে করা রিয়েক্ট ওকে হাসাচ্ছে।তিয়াশা আরাফকে দেখে,আরাফের পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াসনেস দেখে চিন্তায় পরে গেছে সাথে কিছুটা ভয়ও।তিয়াশাকে এভাবে ভয় আর চিন্তিত দেখে আরাফ খুব মজা পাচ্ছে।আরাফের ধারণা তিয়াশা চ্যালেঞ্জ করে চিন্তায় আছে আর কিছুটা ভয়ও।
আরাফ তারপর বই নিয়ে বসে গেলো।সময় খুবই কম।এই কম সময়ের মধ্যে ওকে সব কমপ্লিট করতে হবে।ওকে ওর চ্যালেঞ্জে জিততে হবে।ওর এখন একটাই টার্গেট সেটা ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া।আর সেটা ও হবেই।দুজন সিনিয়র ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করেছে যারা ওকে হেল্প করবে।প্রতিদিন বাসায় এসে ১ঘন্টা করে সময় দিবে।

আরাফ পুরো দমে পড়ছে।আর তিয়াশার চোখে ক্লান্তি ভর করেছে।৯টার দিকে তিয়াশার ঘুম ভাংলো।৩ঘন্টা ঘুমিয়েছে।ঘুম ভাংতেই আবার বমি।মনে হচ্ছে ওর পেটে কেউ কাটাচামচ দিয়ে নারিগুলো পেচাচ্ছে।চোখে মুখে পানি দিয়ে,এক গ্লাস পানি খেয়ে পড়তে বসলো।কিন্তু ওর একটুও পড়তে ইচ্ছে করছেনা।মোবাইলটা হাতে নিলো।ফেসবুকে টু মেরে আসা যাক।ফেসবুকে ঢুকেই প্রথমেই আরাফের আইডিতে ঢুকলো। ২ঘন্টা আগে আপডেট করা আরাফের পোস্ট দেখে তিয়াশার চোখ আটকে যায়।আরাফ লিখেছে,,”ভুলে ভরা অতীতকে ভুলে সুন্দর,শুভ্র জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।নতুন এক জীবনে যেখানে অতীতের কোনো ঠাই নেই।নেই কোনো মিথ্যে মরিচিকা।ভালো আছি বলে কেউ হিংসে করো না কিন্তু। “তিয়াশা ঠিক বুঝতে পারছে আরাফ ইচ্ছে করে ওকে ইনডাইরেক্ট অপমান করার জন্য এই পোস্ট করেছে।
ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে পড়ায় মন দিলো।আরাফকে নিয়ে আর ভাববেনা কিন্তু পড়ার ভেতর বারবার আরাফ ঢুকে যাচ্ছে।নাহ একটু ফ্রেশ হওয়া দরকার। বাইরে গিয়ে বাগানে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে এলো।মায়ের জোরাজুরিতে একটু খেয়ে নিলো।কিন্তু এইবার আর বমি এলো না।কিন্তু সমস্যা হলো ঘুম আসছেনা।রাত ২টো বাজে কিন্তু চোখে ঘুম নেই।কিছুক্ষণ ফোন ঘাটাঘাটি করলো।ফেসবুকে গিয়ে দেখলো আরাফ আর অনলাইনে আসে নি।
তিয়াশা উঠে নিচে গিয়ে কফি বানিয়ে আনলো।তারপর বারান্দায় গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আপন মনে কফিতে চুমুক দিচ্ছে।
আরাফ ২:৩০ এ অনলাইনে এসে দেখলো তিয়াশা ইমতিয়াজ নামের পাশে সবুজ বাতি জ্বলছে।কিছুটা অবাক হলো। ছুটির দিন ছাড়া তিয়াশাকে ১টার বেশী জাগতে দেখেনি কিন্তু সে মেয়ে রাত ২:৩০ এ অনলাইনে ভাবতেই পারছে না আরাফ।এসব গায়ে না মেখে ডাটা অফ করে ঘুমিয়ে পরলো।
৩:৩০ বাজে কিন্তু তিয়াশার চোখে ঘুম নেই। বারান্দায় বসে আকাশ দেখছে।আকাশ কেমন আলোকিত হতে শুরু করেছে।ঝাকে ঝাকে পাখি কোথায় যেন উড়ে যাচ্ছে।কিচিরমিচির করছে।তিয়াশার খুব ভালো লাগছে।এর আগে কখনো এমন কিছু উপভোগ করে নি।হটাৎ কি মনে করে অজু করে জায়নামাজ বিছিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য দাড়িয়ে গেল। নামাজ শেষ করে নিজের পাশাপাশি আরাফের জন্য দোয়া করলো। নামাজ শেষে আবার বারান্দায় এসে দাড়ালো।ফজরের নামাজ পড়েই ঘুমাবে।এখন দাড়িয়ে আবার রাতের পরিবেশ উপভোগ করছে।
তিয়াশার গাড়ি কলেজের গেইটে কাছে থামতেই তিয়াশা গাড়ি থেকে নেমে দেখে নিহান দাড়িয়ে আছে।নিহার ওর ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ভাই।
তিয়াশা নিহানের দিকে এগিয়ে গেলো।
-কেমন আছেন ভাইয়া?
-এইতো আলহামদুলিল্লাহ। তোমার কি খবর? তোমাকে তো আজকাল দেখাই যায়না।তা পড়াশোনার কি খবর?
-এই তো ভাইয়া।আল্লাহর রহমতে চলছে।
-তোমার মন খারাপ?
-কিছুটা।
-কে আমার বোনটার মন খারাপের কারণ?
-দুরর তেমন কিছু না।সামনে পরিক্ষা, পড়াশোনা, পরিক্ষা। একটু পেরার মধ্যে আছি এই।

তিয়াশা আর নিহান হেসে হেসে কথা বলছে আর ক্লাসের দিকে যাচ্ছে।দুর থেকে আরাফ ওদের দেখছে আর মনে মনে তিয়াশার উপর রাগ ঝাড়ছে।
এখন আবার সিনিয়রের সাথে ঘুরছে।আমি নাকি ভালো রেজাল্টের জন্য ওর মতো মেধাবী স্টুডেন্টের আগে পিছে ঘুরেছি।আর তুমি,তুমি কি করছো।সিনিয়রদের পিছনে পিছনে ঘুরছো।ঘুরবেই তো,এরা ভবিষ্যতে বড় বড় অফিসার হবে।নাম কামাবে।আরো বড় বড় ডিগ্রি নিবে।এমন লাইফ পার্টনারই তো তোমার চাই।যাকে নিয়ে তুমি বড় কথা বলতে পারবে,গর্ব করতে পারবে।যা খুশি করো,তাতে আমার কি,,,আই ডোন্ট কেয়ার।তবুও আরাফ নিজেকে মানাতে পারছেনা। কেন জানি ওই ছেলেটার উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।ছেলেটাকে তিয়াশার সাথে দেখতে পারছেনা। তিয়াশা হটাৎ আরাফকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো।চোখে চোখ পড়তেই আরাফ চলে গেলো।আরাফ এমন ভাব নিলো যেন তিয়াশা ওর দিকে তাকিয়ে মহাপাপ করেছে।
সাজ্জাদ আরাফকে বললো,দেখেছিস কি মেয়ে,কাল পর্যন্ত তোর সাথে ঘুরিয়েছে আজ আবার নতুন একজনকে ধরেছে। কয়দিন পর যখন আর মনে ধরবেনা তখন এটাকেউ ছেড়ে দিবে। চরিত্রে দোষ আছে এ মেয়ের।
আরাফের হটাৎ মাথা গরম হয়ে গেলো।ও সাজ্জাদের কলার ধরে বললো, আরেকবার তিয়াশার নামে আজেবাজে কথা বলবি তো আমি ভুলে যাবো তুই আমার বন্ধু ছিলি।সাজ্জাদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কলার ছেড়ে ক্লসের দিকে পা বাড়ালো।

তিয়াশা আজকাল আরাফকে বুঝতে পারেনা।তিয়াশা ক্লাসের ফাকে কয়েক বার আরাফের দিকে তাকিয়েছে।মুখটা পেচার মতো করে রেখেছে।আর তার দৃষ্টি শুধুমাত্র বই আর স্যারের দিকে। যেন কেউ ওর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলেছে খবরদার অন্যকোনো দিকে তাকাবি না বিশেষ করে তিয়াশার দিকে। যদি তাকাস তো মাথার খুলি উড়িয়ে দেব।অসহ্য।
স্যার তিয়াশাকে বোর্ডে একটা ম্যাথ করার জন্য বললো। তিয়াশা উঠে বোর্ডের কাছে যেতে যেতে হটাৎ দাড়িয়ে পরলো ওর মনে হচ্ছে চারদিকে ভুমিকম্প হচ্ছে।কিছু বুঝার আগেই ধপাস করে পরে অজ্ঞান হয়ে গেলো।ক্লাসে হইচই বেঁধে গেলো।শেলি আর ২জন মেয়ে মিলে ওকে কলেজের কেয়ার রুমে নিয়ে গেলো।সেখানে তিয়াশার বাবা ইমতিয়াজ আহমেদ সহ কিছু শিক্ষক ও স্টুডেন্ট উপস্থিত হয়েছে।
ডাক্তার দেখে বললো,ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করা,ঠিকমতো না ঘুমানো ও অতিরিক্ত চিন্তার কারনে শরীর দুর্বল হয়ে পরেছে আর দুর্বলতার কারণে অজ্ঞান হয়ে গেছে।ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া,পর্যাপ্ত ঘুম হলেই ঠিক হয়ে যাবে। তিয়াশার বাবা তিয়াশাকে বাসায় পাঠিয়ে দিলো।
আরাফ সাজ্জাদের কাছ থেকে সবটা জেনে নিলো তিয়াশাকে দেখে ডাক্তার কি বললো।
তিয়াশার মা সবটা জানার পর ২-৩দিনের আগে কলেজে যেতে দিবে না জানিয়ে দিলো।২-৩ দিন শুধুই রেষ্ট নিবে আর খাওয়া দাওয়া করবে।বেচে থাকলে অনেক কলেজ করা যাবে।কিন্তু তিয়াশা কিছুতেই রাজী না।কলেজে না গেলে আরাফকে যে দেখতে পাবেনা। শেলি সবটা বুঝতে পেরে বললো,কার জন্য তোর মন কাদে?আরাফের জন্য?যে কিনা তোর কোনো খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে নি।তোকে দেখতে পর্যন্ত যায়নি।তার জন্য?

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here