অন্যরকম_ভালোবাসা পার্ট-৭ ফাবিহা নওশীন

0
375

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-৭
ফাবিহা নওশীন

ও তোকে ভুলে গেছে।ও এখন আর তোর কেয়ার করেনা।তোকে ভালোবাসে না।কেন করছিস এমন?নিজেকে দেখেছিস আয়নায়? কি অবস্থা করেছিস শরীরের?মাথায় থেকে আরাফের ভুত নামিয়ে নিজের কথা ভাব।
শেলি এক নাগারে কথাগুলো বললো।
-আচ্ছা তোর কি মনে হয় ও সত্যিই আমাকে ভুলে গেছে?
-হ্যা ভুলে গেছে।ওর জীবনে এখন আর তোর কোনো জায়গা নেই।তুই যখন অজ্ঞান হয়ে পরে গেলি,ও বেঞ্চ থেকে এক পা ও নড়ে নি।অথচ পুরো ক্লাসের সব স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে পরেছে, ছুটে এসেছে।
তিয়াশা মাথা নিচু করে কাদছে।
শেলি ওকে জড়িয়ে ধরলো।
-কাদিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই নিজের যত্ন নে,পড়াশোনা কর।ওর পিছে সময় নষ্ট করিস না। তুই নিজেই ওকে দুরে সরিয়ে দিয়েছিস।তাই ও দুরে সরে গেছে।
তিয়াশা চোখ মুছে ঠান্ডা ভাবে বললো, ও যদি আমাকে ভুলে ভালো থাকে তবে আমি তাতেই খুশী।আমি ওকে খুব ভালোবাসি আর বেসে যাবো।এটা আমার জীবন,তাই বলে এমন তো নয় যে সব কিছু আমার জীবনে আনার মর্জি মতো হবে।আমি ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি।আর পাগলামি করবোনা।

পরেরদিন তিয়াশা আর কলেজে যায়নি।মানমির কথা মতো বাড়িতে রেস্ট নিচ্ছে।আরাফের চোখ শুধু তিয়াশাকে খোজছে।খোঁজ করার কারণ তার অজানা।ফারাবিকে দিয়ে খবর নিয়ে জানতে পারলো কিছুদিন কলেজে আসবে না ছুটি নিয়েছে।

রাত ১০ টা বাজছে আরাফের কিছুতেই মন বসছে না।ছটফট করছে।তিয়াশাকে ও মনে প্রানে ঘৃণা করলেও কোথাও না কোথাও ওর জন্য কিঞ্চিৎ ভালোবাসা রয়ে গেছে।আরাফ উঠে দাড়ালো।তারপর রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিচে চলে গেলো।ফারাবি আর সাজ্জাদ ওর পিছে পিছে যাচ্ছে আর ডাকছে কিন্তু আরাফ পাত্তা না দিয়ে বাইরে বের হয়ে গেলো।
সাজ্জাদ ওকে আটকে কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করলো। আরাফ সোজা সাপ্টা জবাব দিলো,তিয়াশার বাসায়।
-পাগল হয়েছিস?
-পাগল হয়েছি বলেই তো যাচ্ছি।রাস্তা ছাড়।

আরাফ গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো।তিয়াশার বাসা থেকে কিছুটা দুরত্বে গাড়ি পার্ক করলো।তারপর ওয়াল টপকে বাগানে ঢুকলো।কিন্তু কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।তখনই দেখলো উসকো চুলে,শুখনো মুখে তিয়াশা বারান্দায় এসে রেলিংয়ে মুখ ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে রইলো আরাফ কিছুটা আড়ালে চলে গেলো যাতে তিয়াশা ওকে দেখতে না পায়।তিয়াশার এই অবস্থা দেখে আরাফের বুকে চিনচিনে ব্যথা শুরু হলো।তিয়াশার কি হাল হয়েছে।চেহারার লাবণ্য যেন উধাও হয়ে গেছে।কেমন একটা দুখী দুখী ভাব চেহারায়।আরাফ বুঝতে পারছেনা ওর কেন এতো কষ্ট হচ্ছে।ওর তো খুশী হওয়ার কথা।কিন্তু কেন হতে পারছেনা। পরক্ষণেই ভাবলো কারণ ও তিয়াশার মতো হৃদয়হীনা নয়।তারপর কিছুটা রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে চলে গেলো।

১সপ্তাহ পর তিয়াশা কলেজে গেলো। এখন আগের চেয়ে অনেকটা নরমাল হয়েছে।কলেজে সবাই ওকে নানা প্রশ্ন করছে।এখন ভালো আছে কিনা,নিজের যত্ন নিচ্ছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
তিয়াশা হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলে ওর বেঞ্চে বসে পড়ল।

স্যার লেকচারের মাঝে নানা প্রশ্ন করছে আর আরাফ সবার আগে উত্তর দিচ্ছে।তিয়াশা এতোদিন কলেজে না আসলেও শেলির কাছে থেকে সব কিছু জেনে নিয়েছে,সে অনুযায়ী পড়াশোনা করেছে,শেলিও সময় করে ওকে পড়ায় হেল্প করেছে। তাই সব প্রশ্নের উত্তর ওর জানা তবুও আরাফকে এতোটা কনফিডেন্ট দেখে ওর ভালো লাগছে।তাই ও চুপচাপ বসে আছে।স্যার ওর পড়াশোনার স্পিড দেখে বিস্মিত।কিছুক্ষণ ওর প্রসংশা করে ওকে বসতে বললো। আর বসার সময় আরাফ তিয়াশার দিকে কিভাবে তাকালো।ওর এই তাকানোর ভংগিমা তিয়াশাকে বলছে,কি বলেছিলে না আমার দ্বারা কিছু সম্ভব না।দেখলে তো আরাফের দ্বারা কি সম্ভব আর কি সম্ভব না।

এভাবেই পরিক্ষা ঘনিয়ে এলো। আরাফের যুদ্ধ চলছে বইয়ের সাথে তিয়াশাকে হারানোর যুদ্ধ। বইয়ের একটি কোণাও বাকি রাখেনি।তিয়াশাও ওর রুটিনমাফিক পড়া শেষ করেছে ভালোভাবেই।প্রতিটি পরিক্ষাই তিয়াশা ভালো দিয়েছে।আরাফকেও পরিক্ষা শেষে হাসি মুখেই বের হতে দেখেছে।এর দ্বারা তিয়াশা নিশ্চিত হয়েছে আরাফের পরিক্ষাও ভালো হচ্ছে।শেষ পরিক্ষার আগে তিয়াশা আরাফকে ক্যাম্পাসে বসে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো।কিছুক্ষণ পর পেপারস দিয়ে দিবে আর ছেলেটা এখানে বসে আছে।ও ক্লাস রুমের জানালা দিয়ে দেখতে পেয়েছে আরাফকে।রুম থেকে বের হয়ে গেলো ব্যাপারটা জানার জন্য।ফারাবি আরাফকে টানছে কিন্তু আরাফ উঠছেই না।বিষয়টি জানার জন্য তিয়াশা কিছুটা কাছে গেল তবে আড়ালে রইলো।
-আরাফ তুই পাগলামি করছিস,,উঠ বলছি।ঘন্টা পড়ে গেছে।
-আমি পরিক্ষা দিবো না তোকে আর কতবার বলবো?তুই আমার কথা বুঝতে পারছিস না??
-আমি সব বুঝতে পারছি তবে তুই কিছু বুঝতে পারছিস না।একটা পরিক্ষা খারাপ হয়েছে বলে কি পরিক্ষা দিতে হবে না।
-দোস্ত আমি চ্যালেঞ্জ হেরে যাব।আমি তিয়াশার কাছে হেরে যাবো।তাহলে আর পরিক্ষা দিয়ে কি করবো?
-এমন ও তো হতে পারে তিয়াশারও গত পরিক্ষা খারাপ হয়েছে।
-না,এমনটা হয়নি।ও গতকাল হাসি মুখে ক্লাস থেকে বের হয়েছে।আর আমি গত পরিক্ষায় সব মিলিয়ে ৬০ এর বেশি পাব না।
-দেখ এমন ও তো হতে পারে কোনো মিরাকেল হয়ে গেলো।পরিক্ষা না দিলে তোকে পরে পস্তাতে হতে পারে।পরিক্ষাটা দিয়েই দেখ।তারপর যা আছে কপালে। এই কয়দিন তুই অনেক পরিশ্রম করেছিস।তুই হারবি না।নিজের উপর বিশ্বাস রাখ।
তারপর আরাফ আর ফারাবি রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।তিয়াশাও আরাফের হার মেনে নিতে পারছেনা।এই জিতার জন্য এতকিছু।দুজনের মাঝে এতো দুরত্ব।দুজনের সেক্রিফাইজ এভাবে যেতে পারেনা।

তিয়াশা রুমে চলে গেলো।৪ঘন্টার পরিক্ষা ২ঘন্টা দিয়ে বের হয়ে গেলো। এতো তাড়াতাড়ি বের হতে চাওয়ায় স্যারের পাশাপাশি ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে লিখা বাদ দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আর ওকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিস করে একে অপরের সাথে কথা বলছে।স্যার সবাইকে চুপ থাকতে বললো।তারপর তিয়াশাকে বললো,
-কি ব্যাপার তিয়াশা,তুমি বের হয়ে যাচ্ছ কেন?এনি প্রব্লেম?
-জ্বী স্যার, আমি অসুস্থ বোধ করছি।বাসায় যেতে চাই।যতটুকু লিখেছি পাশ নাম্বার উঠে যাবে।
-সে নাহয় বুঝলাম কিন্তু তুমি তো তোমার পজিশন হারিয়ে ফেলবে,,
-জীবনের চেয়ে তো আর পজিশন বড় হতে পারেনা।আগামীবার নাহয় আবার ফার্স্ট হবো।একবার পিছিয়ে গেলে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
-ঠিক আছে,,যাও।নিজের খেয়াল রেখো।
-থ্যাংক ইউ স্যার।আসি।

তিয়াশা ক্যানটিনে বসে আছে।বাসায় যেতে পারবে না। এতো তাড়াতাড়ি বাসায় গেলে কপালে শনি আছে তাই চুপচাপ ক্যানটিনে বসে বসে খাচ্ছে।ওর কিছুটা টেনশন হচ্ছে।স্যার যদি বাবাকে সবটা জানায়??বাবা যদি কোনো রিয়েক্ট করে?উফফ আর টেনশন নিতে পারছেনা।

পরিক্ষা শেষে শেলি এসেই তিয়াশাকে ধমকাতে শুরু করলো,, তুই না অসুস্থ? তাহলে এখানে বসে আছিস কেনো?তোকে আমি আর কত বুঝাবো?তুই কেন এখনো সেখানেই পরে আছিস?কেন এমন করছিস?কথা বল?এন্সার মি।
-দেখ এমনিতেই টেনশনে আছি আর তার উপর তুই লেকচার দিচ্ছিস?
-টেনশন?তোর?হাসালি..
তোকে জরুরী ভিত্তিতে পাবনায় পাঠানো উচিৎ। তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস।
-ওকে পাঠানোর ব্যবস্থা কর।ব্যবস্থা হলে আমাকে জানাস।বাই।বাসায় যাচ্ছি।টাটা।
শেলি নির্বাক দাড়িয়ে রইলো। কি হতে চলেছে সেটা ভেবেই ওর চিন্তায় মাথা চক্কর দিচ্ছে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here