অন্যরকম_ভালোবাসা পার্ট-১৪

0
495

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-১৪
ফাবিহা নওশীন

তিয়াশার বাবা গম্ভির মুখে চা খাচ্ছেন।তিয়াশা মাথা নিচু করে বসে আছে।মাঝেমাঝে চোখের কোনা দিয়ে বাবাকে দেখছে,বুঝতে পারছে না বাবা আবার নতুন করে কি বলতে চায়,কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।কলেজ থেকে বহিষ্কার করার কথা সকালেই বলেছে তাহলে এই সন্ধেবেলা কি বলতে ডেকেছে।তিয়াশা আর না পেরে মায়ের দিকে তাকালো।মায়ের চেহারায় চিন্তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।তাহলে কি মাও কিছু জানেনা।তিয়াশার মা ইশারায় জানালেন তিনি কিছুই জানেন না।

তিয়াশার বাবা মুখ তুলে বললেন,,আমার তোমার ছোট মামার সঙ্গে কথা হয়েছে।ও কিছুদিনের মধ্যেই সব ব্যবস্থা করে ফেলবে।খুব শ্রীঘই তোমার ভিসা চলে আসবে।অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নেও।

তিয়াশার মা বিস্মিতকন্ঠে বললেন, অস্ট্রেলিয়া!!! কই আমাকে তো কিছু জানাও নি?তুমি হুটহাট করে এমন একটা ডিসিশন নিয়ে নিলে আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করোনি?

-না,মনে করি নি।তোমরা মামেয়ে মিলে যা করেছো,তার উপর কথা বলছো কোন মুখে?
কলেজ থেকে বেহায়াপনার জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে তোমার মেয়েকে।এই মেয়েকে এখন ঘরের খুটি বানিয়ে রাখবো।

-তাই বলে অস্ট্রেলিয়া?অন্য কলেজে ও তো ভর্তি করা যেতো।

-না।ওকে আর এখানে থাকতে হবে না।ওর জন্য অনেক নাকানি-চুবানি খেয়েছি।আর নয়।অস্ট্রেলিয়া গিয়ে পড়াশোনা শুরু করবে।সব পিছে ফেলে নতুন ভাবে শুরু করবে।

-বাবা,আমি যেতে চাই না।

-চুপ করো।আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি?আমি আমার ডিসিশন তোমাকে জানিয়েছি।তুমি তৈরি থাকবে।

-আমার একমাত্র মেয়ে।ওকে এতো দূরে রেখে আমরা কিভাবে থাকব ভেবে দেখেছ?

-মেয়েকে শাসন করতে পারোনি,,আর এখন দরদ উতলে উঠেছে?আমার শেষ কথা ও আর এখানে থাকতে পারবে না।ওকে যেতেই হবে।
বলেই তিনি উঠে চলে গেলো।

তিয়াশা মায়ের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে রইলো।আর ওর মা ওর মাথায় হাত রেখে বললো, ভাবিস না।আমি দেখছি কি করা যায়।তোকে কোথাও যেতে দেবোনা।

তিয়াশার বাবা সকালে কলেজে যাবার পর তিয়াশা আরাফের বাসায় গেলো।গিয়ে দেখলো আরাফ বসে বসে মদ গিলছে।তিয়াশা সামনে গিয়ে দাড়ালো।তিয়াশাকে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
-তুমি?? তুমি এখানে কেন এসেছো?তামাশা দেখতে?দেখো এখানে তামাশাই হচ্ছে।আমি তো খারাপ কিন্তু তুমি?তুমি তো আমার চেয়েও নিকৃষ্ট।চালবাজ মেয়ে।শান্তি হয়েছে তোমার?

-আরাফ তুমি আমায় এসব কেনো বলছ?কি করেছি আমি?

-আবার নাটক করছো?আমি কি নাটক সিনেমার দোকান দিয়েছি?একদম নাটক করবা না।তোমার মতো ধুরন্ধর মিথ্যাবাদি মেয়ে আমি আর একটাও দেখেনি।এতটা নির্লজ্জ কি করে হতে পারলে?কোন মুখে এখানে এসেছ?

-আরাফ তুমি ভাবছ আমি তোমার বহিষ্কারের জন্য দায়ী?

-এতে ভাবার কি আছে?যেটা সত্যি সেটাই বিশ্বাস করি।তোমার বাবার সেই ক্ষমতা আছে।আর তোমার বাবা ও আমাকে পছন্দ করে না।তিনি তো কবে থেকেই সুযোগ খুজছিলেন,,,আজ মেয়ে মুখ ফুটে বলেছে তাতেই ব্যাস হয়ে গেলো।তোমার বাবা তো তোমার মতোই হবে।

-আরাফ আমার বাবা সম্পর্কে একটা বাজে কথা বলবে না।

-কে বলতে গিয়েছে?আমি গিয়েছি তোমার কাছে?তুমিই যেচে এসেছো।আমার পিছু কেনো ছাড়ছ না?নাও গেট লস্ট।তোমার মুখ যেন আর না দেখি।

-ঠিক আছে দেখাবো না আর আমার মুখ।কোনদিন তোমায় আর দেখতে হবে না আমার মুখ।শান্তি?
ভালো থেকো।

তিয়াশার খুব কষ্ট হচ্ছে।আরাফ ওর সম্পর্কে এমনটা কি করে ভাবতে পারলো।ও এসেছিল আরাফকে বলতে বাবা ওকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দিচ্ছে।
থাকবো না আর এখানে চলে যাব।তারপর থেকো তুমি।একাই ভালো থেকো।বাবা চায় না আমি এখানে থাকি,তুমিও চাওনা,,

তিয়াশা শেলিকে সবটা জানালো।তারপর বললো, আমি আর থাকবোনা এখানে।চলে যাবো।

-তিয়াশা পাগলামি করিস না।রাগের বসে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিস না।তুই আরাফকে সব খুলে বল।

-আমি ভেবে চিন্তেই বলছি।আর ওকেও আমার কিছু বলার নাই।

শেলি ফারাবীকে কলেজে দেখেই বলল,আমাকে আরাফের বাসার ঠিকানা টা দিন তো।
-কেন?ওর বাড়ির ঠিকানা দিয়ে কি করবে?
-ওর বাড়ি ভাংতে যাব।দিন ঠিকানা দিন।
-ফাজলামো করছো কেন?আর যাই হোক ওর বাড়ির ঠিকানা আমি তোমায় দিবোনা।
-ঠিক আছে,আমি জোগাড় করে নিবো হয়তো একটু কষ্ট করতে হবে।তবে জোগাড় তো আমি করবোই।ওর সাথে আমার বোঝাপড়া আছে।
-কিসের?
-আপনাকে বলতে বাধ্য নই।তবে যদি নিয়ে যান তবে জানতে পারবেন।
-উমম।ঠিক আছে।কিন্তু যদি কোনো ঝামেলা করো তবে কিন্তু ভালো হবে না,এমনিতেই আপসেট।
-খবরদার হুমকি দিবেন না।যদি নিয়ে যেতে চান তবে চলুন নয়তো আমি অন্য রাস্তা,,,
-ঠিক আছে চলো।

শেলি আরাফের সামনে গিয়েই বলা শুরু করলো, কিসের এতো অহংকার তোমার?নিজেকে নিয়ে?তোমার তো তিয়াশাকে নিয়ে অহংকার করা উচিত ছিলো।তোমায় ভালোবেসে সর্বস্ব ত্যাগ করেছে।নিজের খুশী তোমার ঝুড়িতে ঢেলে দিয়েছে,,তোমার জীবনটা সাজিয়ে দিয়েছিল।

আরাফ কিছুই বুঝতে পারছেনা কি বলছে শেলি,আর ভালোবাসা,, তিয়াশা ওকে ভালবাসে?
ফারাবি বললো,,
বাহ!!আবার নতুন খেলা খেলছে তিয়াশা,, তাও শেলিকে দিয়ে।

-সাট আপ!!তিয়াশাকে বাজে কথা বলবে না।আমি এখানে এসেছি,সেটা তিয়াশা জানে না।আর তোমাদের মতো বন্ধু আমি ওর নই।তোমরা সব সময় আরাফকে তিয়াশার সম্পর্কে ভুল বুঝিয়ে এসেছ।ভুল পরামর্শ দিয়েছো।
আর তিয়াশাকে আরাফ তুমি যা নয় তা বলে অপমান করেছো।তুমি বলেছিলে না তুমি তিয়াশাকে ভালোবেসেছিলে,,কিন্তু না ভালো তো তোমায় তিয়াশা বেসেছিলো,আর আজও বাসে।

-তিয়াশা আমায় কোনোদিন ভালোবাসে নি,,,

-আচ্ছা,তোমাকে একটা নষ্ট ছেলে থেকে ভদ্র ছেলে কে বানিয়েছে?তুমি ওর সাথে মিশতে এটা জানার পর তিয়াশার বাবা তিয়াশার সাথে অনেক রাগারাগি করেছে,,তিয়াশা তোমাকে অনেক বার ডিফেন্স করেছে,তোমাকে ভালোবাসে এটাও সাহস করে জানিয়েছিল।আর এটা জানার পর স্যার আরো রেগে যায়।কিন্তু তিয়াশা হাল ছাড়েনি।তাই স্যার ওকে শর্ত দিয়েছে তুমি যদি বদলে যাও,ভালোভাবে পড়াশোনা করো তবেই তিনি রাজি।তিয়াশা তোমাকে বলেছিল পরিবর্তন হতে কিন্তু তুমি মানো নি।আর কলেজের সবাই তোমার সামনে সাহস না পেলেও তিয়াশাকে তোমায় নিয়ে অনেক আজেবাজে কথা বলতো।কেউ তোমায় সম্মান করে না।ওর ভালোবাসার মানুষকে কেউ খারাপ বলবে এটা ও কি করে সহ্য করতো।তাই ওর কাছে তোমাকে ঠিক করার এই একটা উপায় ছিলো।তোমাকে হার্ট করা।তারপর তোমার পরিক্ষা খারাপ হয়েছে জেনে তোমার খুশির জন্য শেষের পরিক্ষা অর্ধেক দিয়েই চলে গিয়েছিলো।রেজাল্টের দিন স্যার যখন ওকে ডেকে বলেছিল তুমি ভালো করেছো তখন ওর খুশী কে দেখে,,নিজে বাবার কাছে খারাপ রেজাল্টের জন্য ঝাড়ি খেয়েছে সেটাও কিছু মনে রাখেনি।আমাদের সবাইকে এই খুশিতে ট্রিট দিয়েছিল আর তুমি সিন ক্রিয়েট করলে,,তারপর তো সব তোমার সামনে,,,
আর বহিষ্কারের ব্যাপার টা,,,ও ওর বাবার কাছে গিয়ে বলেছে বাবা তুমি আমাকে আর আরাফকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করে দেও?না তুমি ওর বহিষ্কারের ব্যবস্থা করেছ?

-মানে তিয়াশা?
-হ্যা কলেজ কমিটি তোমাদের দুজনকেই বহিষ্কার করেছে।ওর বাবা কিছু করেনি।ওর বাবাকে উল্টো অপদস্ত হতে হয়েছে।তাই তিনি রাগে তিয়াশাকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দিচ্ছেন।তিয়াশাও তোমার উপর অভিমান করে চলে যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছে।

-না,,আরাফ মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পড়ল।ও কিছু ভাবতে পারছেনা।আমার জন্য মেয়েটা কত কিছু করেছে আর আমি,,, নাহ আমার ভুলের জন্য আমি আমাদের ভালোবাসাকে হারাতে দিতে পারবোনা।

আরাফ দেয়াল টপকে বারান্দা দিয়ে তিয়াশার রুমে ঢুকল।তিয়াশা ঘুমাচ্ছে।টিশার্ট কিছুটা উপরে উঠে যাওয়ায় তিয়াশার ফর্সা পেট বের হয়ে আছে।আরাফ এক হাত দিয়ে চোখ ঢেকে আস্তে আস্তে তিয়াশাকে ডাকছে।তিয়াশা চোখ খুলে কাঊকে বসে থাকতে দেখে হুরমুর করে উঠে বসল।তারপর চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে বলল,
তুমি!!
-হ্যা আমি।
-চোখ এক হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছ কেন?
-কারন তোমার ফর্সা পেট আমার দিকে উকি দিয়ে আছে তাই।
তিয়াশা কিছুটা লজ্জা পেলো।তারপর পোশাক ঠিক করে বলল,কেন এসেছ?
-শুনলাম তুমি নাকি অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছো?
-তো??
-তো,,কিছুনা। তোমাকে বিদায় জানাতে এলাম।ভালোই এখন আমরা একে অপরকে সহ্য করত্র পারিনা।কিন্তু একটা সময় তো আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম।
তিয়াশার রাগ হচ্ছে।আর মনে মনে ভাবছে ও আমাকে বিদায় জানাতে এসেছে,,,আর আমি ভাবলাম।আমিও না এসব কেনো ভাবি,,
-হয়ে গেছে বিদায় জানানো??
-না এখনো হয়নি,,এভাবে কেউ কাউকে বিদায় দেয়?
-তবে কিভাবে দেয়?অনুষ্ঠান করে?
-হ্যা, একদম ঠিক বলেছ,দেখোনা কলেজে কারো বিদায় হলে অনুষ্ঠান করে,,
-যাও আমার যাওয়ার খুশিতে বন্ধুদের সাথে পার্টি করো।
-বলছ?তুমি যখন বলছো,,আমি মানা করতে পারি,,
আরাফ ফোন বের করে কাকে যেন ফোন করে বলছে,কালকে সকাল ১০টায় আমার বাসায় ছোটখাটো ফ্রেন্ডস পার্টি হবে।সব ব্যবস্থা করুন।
তিয়াশা ওর কর্মকাণ্ড দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে,,ও চলে যাচ্ছে আর আরাফের কোনো ফিলিংস ই নেই।এতটা বদলে গেলো,,,

-তুমিও আমন্ত্রিত পার্টিতে।সকাল ১০টায় চলে এসো।
-কখনো ই না,,,
আরাফ মুচকি হাসি দিয়ে বলল,তুমি আসবে,,
তারপর যেভাবে এসেছিল চলে গেলো,,
তিয়াশা বসে আছে,,,

চলবে,,,

[নেক্সট পর্বে লাস্ট পর্ব দেওয়া হবে।পরিক্ষা থাকার জন্য দিতে পারেনি।এই জন্য আমি আন্তরিক দুঃখীত।তাই শেষ করে দিচ্ছি পরের পর্বে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here