#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-৩
আরাফ তিয়াশাকে ওর দাদির সাথে দেখা করতে নিয়ে যাবে।তিয়াশা কালোর ভিতর গোল্ডেনের সুতার কাচের একটা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে ভালভাবে তৈরি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
আরাফ গাড়ি নিয়ে বাইরে বসে আছে।তিয়াশা গাড়িতে উঠে আরাফকে বললো,ঠিকঠাক লাগছে তো?
-তুমি সব সময়ই সুপার।
তিয়াশা মিষ্টি হেসে বললো, চলো যাওয়া যাক।
আরাফ বিশাল ডুপ্লেক্স বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো।তিয়াশা গাড়ি থেকে নেমে থমকে গেলো, ওর মনে হচ্ছে ও কোনো প্রাসাদের সামনে এসে নেমেছে।উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেই ফেললো, ওয়াও কি সুন্দর,এত্ত বড় বাড়ি তোমাদের?
আরাফ হেসে বললো, ভিতরে তো চলো?
-আমার কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে।
-ভিতরে কোনো ডায়নাসোর নেই যে তোমাকে খেয়ে ফেলবে।
-হুহ।
তিয়াশা ভিতরে ঢুকে আরো অবাক হলো।ভিতরটা এতো সুন্দর যা ওর কল্পনার বাইরে। দামি আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো গোছানো। আরাফের দাদি সোফায় বসে পান চিবুচ্ছে। আরাফ তিয়াশাকে দাদির কাছে নিয়ে গেলো। তিয়াশা দাদির কাছে গিয়ে সালাম দিলো।
-আসসালামু আলাইকুম দাদি।
-অলাইকুম আসসালাম।বস বইন, বস।আমার কাছে এসে বস।তিয়াশা দাদির কাছে গিয়ে বসলো।
-আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?
-জ্বী না দাদি।আসতে কোনো সমস্যা হয়নি।আপনি ভালো আছেন?
-হ্যা আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।তোমার কথা অনেক শুনেছি আরাফের মুখে তাই দেখার খুব ইচ্ছে হয়েছিল।
-আমিও আপনার কথা অনেক শুনেছি আরাফের মুখে ভালোই হলো আপনার সাথে দেখা হয়ে।আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগছে।
অনেকটা সময় তিয়াশা দাদির সাথে গল্প করলো। আর আরাফ নিরব দর্শক হয়ে তাদেরকে দেখছিল।দাদির সাথে গল্প শেষে আরাফের রুম দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল।লাঞ্চ শেষে আরাফ নিজেই তিয়াশা কে বাসায় পৌছে দেয়।
তারপর ই দাদির কাছে ছুটে যায়।
-দাদি,,,কেম-দাদি,,,কেমন দেখলে?
-খুব মিষ্টি মেয়ে।তোর পছন্দ আছে।দেখতে যেমন মিষ্টি তেমনি কথাও বলে মিষ্টি মিষ্টি।আমার তো বেশ লেগেছে।
-ওহহ দাদি তুমি অনেক সুইট।
-এইবার ওকে বলে ফেল দেখি।
-হুম বলবো।
কয়েকদিন পর টেস্ট পরিক্ষার রেজাল্ট বের হলো।যেখানে প্রতি পরিক্ষায় সামনে-পিছনে, ডানে- বামে যারা বসে তাদেরখাতা কপি করে,বাসা থেকে আনা কাটা কাগজের টুকরো নকল দিয়ে কোনো রকম টেনেটুনে পাশ করতো সেখানে কারো সাহায্য ছাড়া,কোনো প্রকার নকল ছাড়াই আরাফ পাশ করে গেছে নিজের যোগ্যতায়।অবশ্য পুরো কৃতিত্বই তিয়াশার। ১মাস অনেক খেটেছে মেয়েটা।তাই ওকে একটা ট্রিট দেওয়াই যায়।
তিয়াশা বেশ খুশী। মনে হচ্ছে আরাফের চেয়েও বেশি খুশী। ট্রিট দিতে চাইলেই রাজি হয়ে গেলো।
ওরা দুজনে বড় একটা রেস্টুরেন্টে গেলো।খাওয়া শেষে আরাফ তিয়াশাকে চোখ বন্ধ করতে বললো। তিয়াশাও আরাফের কথা মতো চোখ বন্ধ করে।আরাফ তিয়াশার হাতে কিছু একটা পরিয়ে দিলো। তিয়াশা চোখ খুলে দেখলো আরাফ ওর হাতে খুব সুন্দর একটা ব্যাচলাইট পরিয়ে দিয়েছে।
-ওয়াও!!কি সুন্দর। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ কিন্তু আমি এটা নিতে পারবো না সরি।
-কেন?
– এটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক দামি।
-না মাত্র ৮৫হাজার।
-৮৫তোমার কাছে মাত্র হতে পারে কিন্তু আমার কাছে অনেক।অপরের কাছ থেকে সে রকম উপহার নেওয়া উচিত তুমি যেমন টা দিতে পারবে।সমান সমান এটাই আমাকে শিখানো হয়েছে। যেখানে আমার বাবার ও পারিবারিক আয় ২লাখের বেশী নয় এবং আমার হাত খরচ ২০হাজারের উপরে নয় সেখানে আমি তোমাকে এতো টাকার গিফট কিভাবে দেবো।তুমি কিছু মনে করোনা প্লিজ।তুমি আমার খুব ভালো বন্ধু, বলতে পারো বেষ্ট ফ্রেন্ড।তোমার জন্য আমার শুভকামনা সবসময় থাকবে।
-ইম্প্রেসিভ।এই জন্যই আমি তোমাকে এতো ভালোবাসি।
-কিহ?
-হ্যা,আজ জড়তা,ভয় সব কাটিয়ে বলতে চাই আমি তোমাকে প্রথম দিন থেকেই ভালোবাসি।পড়াশোনার বাহানায় তোমার কাছে থাকতে চেয়েছি শুধুমাত্র। তুমি আমার জীবনটাই বদলে দিয়েছো। I love u… আমি তোমাকে সারাজীবন আমার পাশে চাই।
তিয়াশা কিছু বলতে যাবে তখনই তিয়াশাকে থামিয়ে দিলো আরাফ,
-না এখনই নয়, তুমি সময় নেও,ভালো ভাবে ভাবো তারপর ই জানিয়েও।আমার কোনো তাড়া নেই।
তিয়াশা পুরো রাত আরাফের ব্যাপারে ভাবলো।তিয়াশারও আরাফের প্রতি দুর্বলতা আছে কিন্তু বুঝতে দেয়নি আরাফকে কখনো। কিন্তু তিয়াশার বাবা কি মেনে নিবেন আর তা ছাড়া আরাফের বাবা।কিছুই ভাবতে পারছেনা তিয়াশা।ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে তিয়াশা।
সকালে তিয়াশার বাবা ডেকে পাঠালো তিয়াশাকে।তিয়াশা কিছুই বুঝতে পারছে না হটাৎ কি হলো যে এই ভাবে ডেকে পাঠালো।
তিয়াশা বাবার রুমে গিয়ে দেখলো মামনিও পাশে দাঁড়িয়ে আছে।রুমে যেতেই বাবা বলে উঠলো,
-কি করছো এই সব তুমি?কলেজের টপার হয়ে বড়লোকের বখে যাওয়া ফালতু ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়াও?ছিঃ ছিঃ আমার ভাবতেও অবাক লাগছে আমার মেয়ে এই সব বখাটে ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়ায়..
তুমি আরাফ নামের ওই ছেলের সাথে আর মিশবেনা।
-বাবা,আরাফ মুটেও খারাপ ছেলে নয়।আমি ওকে জানি।
-আমার চেয়ে বেশী জানো তুমি?ওর বাবার অনেক টাকা তাই যা ইচ্ছে তাই করে,বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর টাকা উড়ানো ছাড়া কিছুই করে না।তোমার সাথে থাকে যাতে পাশ করে যেরে পারে,তোমাকে ব্যবহার করছে মাত্র।
-না বাবা ও আমাকে ভালোবাসে।
– ভালোবাসা!! দেখো দেখো কি বলছে তোমার মেয়ে। ওই ছেলে নাকি ওকে ভালোবাসে।এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোমাকে,তুমি ভুলে যাচ্ছ তুমি কার মেয়ে।ওদের সোসাইটির ছেলেরা ভালো টালো বাসেনা।আজ এর সাথে তো কাল ওর সাথে। ওর বাবার কোটি কোটি টাকা, বিশাল কোম্পানি আছে। পড়াশোনা না করলেও ওর ভবিষ্যত ফিক্সড আছে।প্রয়োজন শেষে ও তোমাকে ছুড়ে ফেলে দিবে।তুমি ওর খপ্পরে পরে নিজের পড়াশোনা, ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দিচ্ছো।সময় থাকতে নিজের মাথা খাটাও।আর বের হয়ে আসো ওর ট্রাপ থেকে।
-ও অমন ছেলে নয় যেমন তুমি ভাবছ।আমি ওকে ভালোবাসি।আর ও আমাকে ভালোবাসে।এটাই সত্য।
-তুমি যাকে ভালোবাসবে সে তোমার টাইপ হবে,পড়াশুনায় ভালো হবে।যে বাপের পয়সায় পোদ্দারি করবেনা।
এই কথা শুনে তিয়াশা মাথা নিচু করে কাদতে থাকে।
তিয়াশার বাবা তিয়াশার চোখের পানি একদম ই সহ্য করতে পারেন না।কি করবেন তিন ভেবে পাচ্ছেনা। মেয়েটা তো বুঝতে চাইছে না।
তিনি কিছুক্ষণ রুমের মধ্যে পাইচারি করে বললো, আচ্ছা আমি মেনে নেব যে ও তোমাকে ভালোবাসে যদি এই বছর ও তোমাকে টপকাতে পারে,তোমাকে টপকাতে হবে না সেকেন্ডে থাকলেও চলবে।যদি পারে তবে আমি সব মেনে নেব প্রমিজ। আর নয়তো তুমি ওকে ছাড়বে।
তিয়াশা চিন্তায় পরে গেলো। কি করবে,আরাফকে কিভাবে বলবে কথাগুলো।তিয়াশা কলেজের জন্য বের হয়ে গেলো আর আরাফকে খুজতে লাগলো।না পেয়ে ফোন করতে যাবে তখনই আরাফ এসে হাজির।
-কাউকে খুজছিলে?
-হ্যা তোমাকে?
-বাহ!!একদিন না দেখে থাকতে পারছো না দেখছি।প্রেমে পরে যাওনি তো।
-আরাফ
-ওকে বাবা সরি। বলো কি হয়েছে?
তিয়াশা বলতে গিয়ে থেমে গেলো বাবার শর্তের কথা জানলে ও কষ্ট পেতে পারে আর ওকেও ভুল বুঝতে পারে,শর্ত দিয়ে ভালোবসা এটা আরাফ কখনোই মেনে নিবে না। তাই তিয়াশা আরাফকে কিছু বললো না।
-কি হলো তিয়াশা?
-কিছুনা।বই এনেছো?
-বই দিয়ে কি করবো?দেখো আমি কিন্তু পড়তে পারবো না।এই ১মাস প্রচুর পড়েছি।আর কেন পড়েছি তোমাকে বলেছি।ফাইনালের ২মাস বাকি।১মাস আগে থেকে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ব প্রমিজ।
-১মাস আগে পড়লে ভালো রেজাল্ট হবেনা।তোমাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে।
-ভালো রেজাল্ট তো তারা করবে যারা চাকরি করবে,আমার বাবার এতো বড় কোম্পানি,এতো টাকা, প্রপার্টি থাকতে আমি কেন কষ্ট করবো?
-আশ্চর্য বাবার টাকা থাকলে ছেলে পড়াশুনা করবেনা এটা কোথাও লিখা আছে?
-পড়াশুনা করছি না কই?করছি তো তবে কম।তিয়াশা প্লিজ এ নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না।
তিয়াশা বুঝতে পারছে না কি করবে।
তিয়াশা সব কিছু ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড শেলির সাথে শেয়ার করলো। শেলি ওকে আরাফকে সবটা জানাতে বললো। আরাফকে বুঝিয়ে বললে আরাফ সব টা বুঝবে।আর আরাফ যদি সত্যিই ওকে ভালোবাসে তবে কন্ডিশন মেনে পড়াশোনা করবে।ওকে এ নিয়ে টেনশন করতেনিষেধ করলো।
তিয়াশা পড়াশুনা, খাওয়া দাওয়া ছেড়ে শুধু ভেবেই চলেছে। কিন্তু কোন কুল কিনারা করতে পারছেনা।
চলবে,,,