প্রাণেশ্বরী #Writer_Asfiya_Islam_Jannat #পর্ব-০৪

0
459

#প্রাণেশ্বরী
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-০৪

ক্লান্ত অপরাহ্ণ ছাপিয়ে হলদেটে সাঁঝের দাপট। চঞ্চল চড়ুইগুলোর এখন নিস্তব্ধ হয়ে আসার পালা। ভ্যাপসা গরমে তখনও তিক্ত শহর। অনিলের অস্তিত্ব যেন বিলীন হয়ে গিয়েছে ধরনী থেকে। উত্তাপে জনমানবের মেজাজ হয়ে উঠেছে উগ্র। কিয়ৎক্ষণের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই হাঁপিয়ে উঠল প্রাণ। দুপুর থেকে শৈথিল্যপূর্ণ পরিবেশে বন্দি থাকার কারণে বুঝতেই পারেনি বাহিরের অবস্থা আজ এত ভয়াবহ। উপর থেকে নিচে নেমে আসতে আসতেই গৌরাঙ্গ গাল দুটো তার অস্বাভাবিকভাবেই লাল হয়ে আসে , কপাল জুড়ে দেখা দেয় অজস্র মুক্তা-দানার সমারোহ। দেখেই বুঝা যায়, মেয়েটা বেশ নাজুক। উগ্রবীর্য আবহাওয়া তার সহ্যের বাহিরে। অপ্রসন্নতায় প্রাণের মুখ কুঁচকে আসে, দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় আশা বেগমের রুমে। আশা বেগম তখন সবে আছরের নামাজ পড়ে উঠছিলেন এর মাঝেই প্রাণের কন্ঠ তার কর্ণকুহরে এসে বারি খেল, “আশামা আমাকে জামা পছন্দ করে দাও না, বুঝতে পারছি না কি পড়ব।”

তিনি ঘুরে দরজার দিকে তাকালেন। প্রাণের ঘর্মাক্ত মুখশ্রী দেখে জায়নামাজটা দ্রুত ভাঁজ করে পাশে রেখে এগিয়ে গেলেন প্রাণের কাছে। ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠলেন, “একি অবস্থা তোর? ঘেমেছিস কেন এত? তাড়াতাড়ি এসে ফ্যানের নিচে বস।”

প্রাণ স্থির দাঁড়িয়ে বলে, “না সময় নেই এখন। তুমি জলদি এসে জামা বেছে দিয়ে যাও তো।”

আশা বেগম ভ্রুযুগল একত্রিত করে জিজ্ঞেস করেন, “কেন? আজকে কোথাও যাচ্ছিস নাকি তুই?”

প্রাণ দুইদিক মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “হ্যাঁ! নয়নের সাথে ডিনারে।”

কপালের ভাঁজ এবার দৃঢ়তর হলো। সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন আশা বেগম, “ঠিক কি করতে চাইছিস তুই?”

প্রাণ ভাবলেশহীন কন্ঠে বলে উঠে, “কিছুই না আবার অনেক কিছুও।”

প্রাণের এমন উত্তর শুনে আশা বেগম শব্দে কিছু প্রকাশ না করলেও বাঁকা চোখে ঠিকই তাকিয়ে রইলেন প্রাণের মুখপাণে। প্রাণ এবার তাড়া দিয়ে বলে, “এখন চল তো, দেরি হচ্ছে আমার।”

অগত্যা আশা বেগম চললেন প্রাণের সাথে, জিজ্ঞেস করলেন না আর কিছুই। তিনি জানেন, প্রাণ বুঝদার মেয়ে। সে কখনো কারণবিহীন অপ্রয়োজনীয় করে বেরানোর মানুষ না। রুমে এসে তিনি নিজের মন মতো প্রাণের জন্য পোশাক ঠিক করে দিলেন। প্রাণও কোন দ্বিরুক্তি না করে সেই পোশাকে নিজেকে সজ্জিত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সবশেষে দর্পণে নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো নিজের প্রতিবিম্বের দিকে। পড়নে তার রেডিস স্কার্টের সাথে ইন করা ফুলনেক ও স্লিভের কালো রঙের ঢিলে একটি টপস। গলায় ছোট একটি হোয়াইট ডায়মন্ডের পেন্ডেন্ট, একহাতে পেটিনামের ব্রেসলেট, হিটের মাধ্যমে চুলে ঢেউ খেলিয়ে ছেড়ে রেখেছে সে, সাথে প্রয়োজনীয় সাজ তো আছেই। ক্ল্যাসি এই লুকটায় বেশ মানিয়েছে তাকে। বলতে নিত্যদিনকার চেয়ে বেশ আলাদা এবং মাধুর্যপূর্ণ দেখাচ্ছে। প্রাণ যখন নিজেতে বিভোর ঠিক তখনই বেজে উঠে বিরক্তির ঘন্টা। ধ্যান ভাঙ্গে তার। একপলক তাকায় মুঠোফোনটার দিকে, নয়ন ফোন করেছে। বিরক্তির সহিত ফোনটা ধরলো প্রাণ, অপরপাশ থেকে নয়ন তার আগমনের খবর জানাতেই ‘আসছি’ বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো প্রাণ। আশা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেল সে। বের হয়ে সোজা এসে উঠলো নয়নের গাড়িতে৷ প্রাণকে দেখে আজ যেন নয়নের দৃষ্টিতে ধরা দেয় মুগ্ধতার দল। দৃষ্টি সরানো দায় সমান হয়ে উঠে তার জন্য। অভিনিবেশ সহিত পর্যবেক্ষণ করতে থাকে সে প্রাণকে। কোন কিছু না বলে সহসা প্রাণের এক হাত মুঠোয় পুরে তার উল্টোপিঠে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”টুডে ইউ আর লুকিং ড্রপ ডেড গর্জিয়াস সুইটহার্ট।”

প্রাণ অতি নীরবে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ঠোঁটের কোণে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলে, “থ্যাংকস ফর দি কমপ্লিমেন্ট।”

নয়ন মিষ্টি হাসি দিয়ে প্রাণের গালে হাত রেখে বলে, “ইটস মাই ওনার।”

নয়নের এমন স্পর্শে বিরক্ত না হয়ে পারলো না প্রাণ। একে তো সে এখন নয়নকে সহ্য করতে পারে না তার উপর স্পর্শগুলো গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দিতে যথেষ্ট৷ নিজের রাগ প্রশমিত করে প্রাণ নিজের ড্রেস ঠিক করার ভঙ্গিতে একটু সরে এসে বলতে থাকলো, “যাওয়া যাক নাকি? দেরি হচ্ছে তো।”

প্রাণের কথা নয়ন সম্মতি জানিয়ে ড্রাইভারকে বললো গাড়ি ছাড়তে। গাড়ি গন্তব্যের দিকে ছুটতেই নয়ন প্রাণের সান্নিধ্যে আসার প্রয়াস চালালো, কথায় ভুলাতে চাইলো। তবে প্রাণ প্রতিবারই সবটা খুব সুক্ষ্মভাবে এড়িয়ে গেল। মিনিট বিশেক পর পাঁচ তারার ন্যায় সনামধন্য একটি রেস্টুরেন্টের সম্মুখে এসে গাড়ি থামতেই নয়ন আর প্রাণ নেমে পড়ে। কাউন্টারে গিয়ে নয়ন রেসেরভেনের তথ্য জানাতেই একজন ওয়েটার এসে তাদেরকে পূর্বনির্ধারিত কেবিনে এগিয়ে দিয়ে আসে। এই রেস্টুরেন্টের বিশেষত্ব এটাই তারা তাদের গেস্টদের জন্য আলাদা আলাদা কেবিন এবং ফুল প্রাইভেসি ব্যবস্থা করে থাকেন। উপরন্তু, স্ট্রিক রুলসের কারণে রিপোর্টার কেউ না ভিতরে ঢুকতে পারে, আর না ভিতরকার খবর বাহিরে নিয়ে যেতে পারে। বলতে তারা এসব নিয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করেন। যার জন্য বেশির ভাগ রাজনীতির, মিডিয়ার এবং অন্যান্য নামি-দামি মানুষেরা তাদের ফ্যামিলি-ফ্রেন্ডস ডিনার ও মিটিংয়ের জন্য এখানেই আসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। নয়নেরও এখানকার খাবার এবং পরিবেশ বেশ পছন্দের, অতীতে প্রায়শই নয়ন প্রাণকে ডিনারের জন্য এখানে নিয়ে এসেছে।
কেবিনে প্রবেশ করেই নয়ন প্রাণের জন্য সিট এগিয়ে দিল, স্নিগ্ধ মুখে বসতে বললো তাকে। প্রাণ একপলক চেয়ারের দিকে তাকিয়ে নয়নের দিকে তাকালো। ঠোঁটের পুনরায় কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বসে পড়লো সে, আর তারই বিপরীতমুখে চেয়ার টেনে বসলো নয়ন। মেনু কার্ড হাতে নিয়ে তাতে চোখ বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করল, “বল কি খাবে?”

প্রাণ কোনরকম ভাবান্তর না দেখিয়ে বলল, “তোমার তো আমার পছন্দ জানাই আছে, আমি কি খাই না খাই। তুমি অর্ডার দিয়ে দাও।”

নয়ন ভাবার অভিনয় করে বলে, “লেট মি গেস! টম ইয়াম স্যুপ এন্ড গ্রিল মাশরুম।”

প্রাণ কিয়ৎক্ষণ অভিনিবিষ্ট ভঙ্গিতে নয়নের মুখপানে তাকিয়ে থাকলো। তাদের সম্পর্কের মেয়াদ তিনবছরের কাছাকাছি অথচ নয়ন এখন অব্দি তার পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে কিছুই জানে না। তার চিংড়ি মাছে এলার্জি, যার দরুণ প্রাণ কখনোই টম ইয়াম সুপ খেয়ে দেখার দুঃসাহসিকতা করেনি, সেখানে এটা তার পছন্দের তালিকায় কিভাবে আসে? মাশরুম তার প্রিয় ঠিক তবে গ্রিল মাশরুমটা তার একটুও পছন্দের নয়, উল্টো এই দু’টো খাবারই জেসিকার পছন্দের। যেটা কি-না নয়ন খুব ভালোই মনে রেখেছে। কি সুন্দর! আচ্ছা, সে কি আদৌ কখনো তাকে মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছিল? খোঁজ নিয়েছিল তার পছন্দের বা অপন্দের? শুরু থেকে সবটাই কি মিথ্যে ছিল? কথাগুলো ভেবেই তাচ্ছিল্যভাব চলে এলো প্রাণের নিজের প্রতি। অধরযুগল ঈষৎ প্রসারিত করে প্রাণ বলে উঠে, “রং! ক্রিম অফ মাশরুম এন্ড ক্যাসোনাড সালাদ। ওইগুলা জেসিকার পছন্দের খাবার, আমার না।”

নয়ন তব্দা খেয়ে বাক্যহারা কিছুক্ষণ বসে থেকে বিষয়টা হজম করে নেয়। অতঃপর বিষয়টা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বলে, “আরেহ আমি তো জানি তোমার পছন্দের কথা। তোমাকে শুধু জ্বালানোর জন্য কথাগুলো বলছিলাম, দেখতে চাইছিলাম আমি তোমার পছন্দ জানি না অথচ তোমার বেস্টফ্রেন্ডেরটা জানি তা দেখে তোমার রিয়েকশন কি রকম হয়। তুমিও না সব সিরিয়াসলি নিয়ে নাও।”

“তাই নাকি?”

নয়ন মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “হ্যাঁ! আচ্ছা আমি অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি। খিদে লেগেছে প্রচুর।”

প্রাণ বেশ বুঝলো কথা ঘুরানো হচ্ছে, তাই সেও ছাড় দিয়ে দিল। এখন আপাতত ছোট খাটো ঝামেলা করে লাভ নেই। বি’স্ফো’র’ণের আগে সংকেত দিয়ে অপরপক্ষে সাবধান করার কোন মানেই হয় না। চলুক না এই খেলা আরও কিছুদিন আড়ালে-আবডালে। অর্ডার দেওয়া শেষে প্রাণ নয়নের সাহায্য করার উদ্দেশ্য কাজ জনিত কথা বলতে শুরু করে। নয়নও যেন এতে স্বস্তিবোধ করে। কথার ফাঁকে নয়নের দৃষ্টি গিয়ে আটকায় প্রাণের অনামিকা আঙ্গুলটির দিকে, সেখানে জায়গাটা খালি দেখে সে জিজ্ঞেস করে উঠে, “তোমার এনগেজমেন্ট রিং কোথায়? হাতে নেই যে।”

প্রাণ স্মিত কন্ঠে বলে, “শুটিংয়ের টাইম খুলে রেখেছিলাম, এরপর পড়তে আর মনেনি।”

কথাটা শুনে নয়নের ভ্রু কুঁচকে এলো। এমন তো আগে কখনো হয়নি শুটিং বা ইন্টারভিউ চলাকালীন প্রাণ নিজের এনগেজমেন্ট রিং খুলে রেখে দিয়েছে এবং পরবর্তীতে তা পড়তে ভুলে গিয়েছে। হঠাৎ আবার কি হলো? বিষয়টা নিয়ে নয়নের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হলেও প্রকাশ করল না তা। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে নিজের পুনরায় জিজ্ঞেস করল, “তা বাকি তোমার ক্রিউ মেম্বাররা কবে ফিরছে জানো কিছু?”

“হ্যাঁ, কাল দুপুরে রওনা দিবে তারা। মোটামুটি সব শর্ট নেওয়াই শেষ তাদের। বাকি শুটিংগুলো বাংলাদেশেই হবে।”

“অহ আচ্ছা।”

কথাটা বলে নয়ন পকেট হাতরে ছোট একটি বক্স বের করল সে, প্রাণের সামনে বক্সটা তুলে ধরে বলে, “বাই দ্যা ওয়ে, এটা তোমার জন্য।”

প্রাণ জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বক্সটা হাতে তুলে নিয়ে দেখলো তাতে প্ল্যাটিনামের ব্লু ওসেন স্টোনের জুয়েলারি সেট। সে চোখ তুলে তাকাতেই নয়ন বলে উঠলো, “কি পছন্দ হয়েছে?”

প্রাণ উপায়ন্তর না পেয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে লোক দেখানো খুশি হয়ে বলে উঠে, “হ্যাঁ অনেক।”

“তাহলে পড়িয়ে দেই আমি?”

প্রাণ এবার দ্বিধায় পড়ে গেল। সে জানে নয়নকে এখন ‘না’ করা সম্ভব না, এতে তার মনে সন্দেহ ঢুকে যাবে। তবে হ্যাঁ বলতেও ইচ্ছে করছে না, মানুষটার স্পর্শ যে প্রাণ নিতে পারে না। তার ছায়া দেখলেও ঘৃণায় গা রি রি করে উঠে। প্রাণকে কিছু বলতে না দেখে নয়ন নিজেই উঠে এলো, অনুমতি ছাড়াই বক্স থেকে কানের দুলটা হাতে নিয়ে চুলগুলো সামনে থেকে সরিয়ে পড়িয়ে দিল সে। প্রাণ তখন হাতের মুঠো শক্ত করে স্থির হয়ে বসে, নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার প্রবল চেষ্টা। নিজের কাজ শেষে নয়ন মুখটা প্রাণের কানের সামনে এনে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে, “তুমি যে আজ আমায় নিজের রূপে বারংবার ঘায়েল করছো তা কি জানো? যতবারই তোমায় দেখছি ঠিক ততবারই ইচ্ছে করছে এখনই তোমায় বউ বানিয়ে নিজের করে ফেলতে।”

কথাটা বলে নয়ন প্রশস্ত হাসলো। প্রাণ নিজেকে প্রশমিত করে বলে, “তাই নাকি? এতই যখন সুন্দর লাগছে আমায় তখন কয়েক ছবি তুলে দাও। আমার রূপে আমার ফ্যানদেরও তো ঘায়েল হওয়ার অধিকার আছে, না-কি?”

প্রাণের কথা শুনে নয়ন বিস্তৃত হাসলো অতঃপর সম্মতি জানিয়ে প্রাণ ফোন দিয়েই তার কয়েকটি ছবি তুলে দিল সে। একসাথেও কয়েকটা সেলফি নিয়ে নিল৷ এর মাঝে খাবার চলে আসতেই তারা খেতে উদ্যোগী হলো। খাওয়ার মাঝেই প্রাণ কয়েকটা ছবি বাছাই করে নিল যেখানে তার ইয়ারিংসগুলো বেশি ফোকাশ হয়ে আছে। সেগুলো সে ফেসবুকে নিজের পেজে এবং ইন্সটাতে পোস্ট দিয়ে দিল এবং সাথে ক্যাপশনে লিখে দিল, ‘প্রিসিয়াস টাইম কলস টু প্রিসিয়াস মোমেন্ট।’

পোস্টটা করার সাথে সাথেই প্রায় হাজার খানেক লাইক,কমেন্ট পড়ে গেল তার নিচে। পোস্টটা শেয়ার দিয়ে প্রাণ ইচ্ছে করেই জেসিকাকে তার আর নয়নের ছবি পাঠিয়ে লিখলো, “দেখ আমাদের আজকে অনেক মানাচ্ছে না একসাথে?”
মেসেজটা দেওয়ার পর প্রাণ পাশেই নিজের ফোন উলটে রেখে দিল এবং খাওয়ায় মন দিল। পাঁচ মিনিট গড়াতে না গড়াতেই নয়নের ফোন বেজে উঠতে শুরু করল, নয়ন একবার ভ্রু কুঁচকে নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিল। কিন্তু তাতে বিশেষ কোন লাভ হলো বলে মনে হলো না। কয়েকবার কল কেটে যাওয়ার পর থেকেই একের পর এক মেসেজ তার ওয়ালে নোটিফিকেশন শো করেই চলেছে। তআ দেখে প্রাণের আর বুঝতে দেরি নেই সে যা করতে চেয়েছিল তা ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। প্রশান্তির হাসি হাসলো প্রাণ। খুব আরাম ভঙ্গিতে নিজের খাবার খেতে খেতে দেখতে থাকলো নয়নকে। নয়ন বিরক্ত হয়েই ফোনটা হাতে তুলে টাইপিং করতে শুরু করলো। মিনিট দুই-এক গড়াতেই তার মুখের অভিব্যক্তি বিদঘুটে দেখালো। বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই অতিবাহিত হতেই নয়ন বলে উঠল, “হঠাৎ কিছু কাজ পড়ে গিয়েছে প্রাণ। আমাদের এখনই বের হতে হবে।”

এই কথাটার প্রত্যাশায় প্রাণ এতক্ষণ বসেছিল। কিন্তু তবুও চমকে যাওয়ার ভাণ করে বলে উঠল, “এখনই চলে যাব? মাত্রই না আসলাম আমরা।”

“আমি জানি বাট কাজটা ভীষণ জরুরি তাই যেতে হচ্ছে। নেক্সট টাইম প্রমিস আমি তোমায় এক্সট্রা টাইম দিব।”

প্রাণ প্রথম প্রথম মন খারাপের নাটক করলেও পরবর্তীতে ঠিকই নয়নের সাথে বেরিয়ে গেল। নয়ন প্রাণকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে যেতেই যেন প্রাণ হাফ ছেড়ে বাঁচে। প্রাণ জানে জেসিকা একটা সোশ্যাল ফ্রিক। সে সর্বক্ষণ ফেসবুক,ইন্সটাতেই পড়ে থাকে। তাই তখন সে ইচ্ছে করেই নিজের ছবির সাথে সেই ক্যাপশনটা দিয়েছিল যাতে জেসিকার চোখে পড়ে সেটা, সাথে ইয়ারিংসগুলাও। সে সাথে আগুনে ঘি ঢালার জন্যই সে হোয়াটসঅ্যাপে তার এবং নয়নের সেলফিগুলো দিয়েছিল যাতে জেসিকা এগুলা দেখে এবং কিছু একটা তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ফেলে। ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে দুইজন। আর হচ্ছেও প্রায় সেরকমই। প্রাণ ম্লান হেসে নয়নের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আনমনে বিরবির করে উঠলো, “এতো সবে শুরু, শেষ এখনো বহুত দূর।”

#চলবে…….

[সকল একটু কষ্টে করে গঠনমূলক মন্তব্য করার চেষ্টা করবেন প্লিজ। চলমান গল্পে এবার তেমন গঠনমূলক মন্তব্য নাই বললেই চলে যার দরুণ আমি বুঝতে পারছি না কাহিনীটা ঠিক কি রূপ উপস্থাপিত হচ্ছে আপনাদের নিকট, সে সাথে কেমন লাগছে। যার দরুণ অনিহা সৃষ্টি করছে লেখার প্রতি।
একবার গঠনমূলক না হোক, প্রতি পর্ব সংক্রান্ত ভালো-খারাপ দুই-তিন লাইনও লেখায় অনুপ্রেরণা জোগায়।☹️]

[কপি করা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here