প্রাণেশ্বরী #Writer_Asfiya_Islam_Jannat #পর্ব-১৩

0
404

#প্রাণেশ্বরী
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-১৩

“চলচ্চিত্র সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার-২০২০ হচ্ছে নুসাইবা আরা প্রাণ। অভিনন্দন জানাই তাকে।”

জেসিকা দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুতিই নিচ্ছিল কিন্তু প্রাণের নাম শুনে সে অবিচল হয়ে গেল। আশ্চর্যান্বিত নয়নে তাকিয়ে থাকলো মঞ্চের দিকে, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। পা থেকে জমিন সরে যাচ্ছে মন্থরগতিতে। সেরা অভিনেত্রী হিসাবে আজ তার নাম গুঞ্জিত হওয়ার কথা ছিল সেখানে প্রাণের নাম আসে কিভাবে? তার মানে কি সে প্র’তা’রি’ত হয়েছে? পুনরায় তাকে ছাপিয়ে প্রাণই সেরার খেতাব ছিনিয়ে নিয়েছে? এদিকে প্রাণ নিজের নাম শুনে স্থিরচিত্তে তাকিয়ে রইলো শুধু। সম্পূর্ণ বিষয়টা তার প্রত্যাশার বাহিরে হলেও বিস্ময় জিনিসটা তখনও তার মধ্যে লক্ষ্য করা দুরূহ৷ চারপাশ থেকে করতালির আওয়াজ কম্পন তুলছে, চিয়ার আপ করছে প্রাণকে। সামীপ্য থেকে নয়ন প্রাণকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানাচ্ছে, এমন এক ভাব প্রাণের অর্জনে তার চেয়ে খুশি আর কেউ নেই। প্রাণের সান্নিধ্য থেকে সড়ে আসার পূর্বে সে জেসিকার হাতে চিমটি কেটে তার অভিনিবেশ নিজের দিকে এনে চোখে ইশারায় কিছু একটা বুঝাতে জেসিকা নিজের মুখভঙ্গি বদলে জড়িয়ে ধরলো প্রাণকে। ক্যামেরার সামনে দেখালো প্রাণের অন্যতম শুভাকাঙ্ক্ষী সে। এর মাঝে মঞ্চে আবার বলে উঠলো, “প্রাণ আপনাকে মঞ্চে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”

প্রাণ এবার উঠে দাঁড়ালো, নম্র পায়ে এগিয়ে গেল মঞ্চের দিকে, উপরে উঠে প্রাণ নিজের পুরস্কার গ্রহণ করতেই অনুষ্ঠান পরিচালক তাকে প্রশ্ন করে উঠে, “পর পর তিনটে পুরস্কার জিতে নিলেন আজ আপনি৷ নিজের অনুভূতিটা যদি একটু দর্শকদের জানাতেন।”

মাইকটা প্রাণের হাতে দেওয়া সত্ত্বেও প্রাণ কিছুটা সময় নীরব থাকলো। অতঃপর বলল, “জনপ্রিয় বস্তুটা আমি কখনো অর্জন করতে চায়নি, সাধারণ কেউ হয়েই থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের কখন মোড় ঘুরে গেল আর আমি এই পর্যায়ে এসে পৌঁছালাম সত্যি আমার জানা নেই। অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ঠাসা আমার জীবন, তাই বলার মত তেমন কিছুও নেই। শুধু এতটুকু বলতে চাই…”

কথাটুকু বলে প্রাণ থেমে জেসিকার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলে উঠে, “নীরবে নিজের কাজ করে যান, সাফল্যকেই নাহয় গুঞ্জন তুলতে দিন। ধন্যবাদ!”

কথাটা বলে প্রাণ নেমে এসে নিজের নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসে। জেসিকা পাশেই মুখ খিঁ’চে বসে আছে। প্রাণ তা দেখে ক্ষীণ হাসে।

____________

শয়নকক্ষের হু’ল’স্থু’ল অবস্থা৷ বালিশ-বিছানা, জিনিসপত্র সব হামাগুড়ি খাচ্ছে মেঝেতে। দূরেই মুঠোফোনটি চূ’র্ণ’বি’চূ’র্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। সোফায় বসে জেসিকা সেদিকই তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পূর্বেই সে রবিন কর্মকারকে ফোন করেছিল আজকে ঘটনার শোধন চাইতে। অহেতুক চিল্লাপাল্লা করতেই রবিন তাকে মুখের উপর কথা শুনিয়ে দিয়েছেন, জেসিকার কোন যোগ্যতা নেই এসব পুরস্কার পাওয়ার। সে শুধুমাত্র বিনোদনের খড়ক, এ ব্যতীত তার কোন ভূমিকা নেই। এখানে যে যোগ্য সেই পুরস্কার পেয়েছে। আর জেসিকা যা করেছে তা স্বেচ্ছায় তাই যদি সে তার উপর কাঁদা ছুড়তে আসে তাহলে তাকে ইন্ডাস্ট্রি ছাড়া হতে হবে।
সব শোনার পর জেসিকা নিজের ফোনটি দেয়ালে ছুঁড়ে মারে। উ’ন্মা’দে’র ন্যায় আচরণ করতে থাকে। যার পরিণাম স্বরূপ কক্ষের এই করুণ অবস্থা। নিজের অবস্থা যে বেশ ভালো তাও না, মুখের সাঁজ উঠে গিয়ে বি’ভ’ৎ’স দেখাচ্ছে, আঁখিপল্লবের নিচে কাজল লেপ্টে আছে কদাকার, লক্ষ টাকার জামা টান লেগে ছিঁড়ে গিয়েছে, হাতে-পায়ে আঁচড়ের দাগ। মাঝে মধ্যেই বিরবরিয়ে উঠছে সে। কিয়ৎক্ষণ এভাবেই অতিবাহিত হওয়ার পর নয়নের ডাক শোনা যায়, “এই কি অবস্থা করেছ রুমের?”

নয়নের কথায় জেসিকা প্রত্যুত্তর তো দূরের কথা দৃষ্টি তুলে তাকাবারও প্রয়োজনবোধ করলো না। নত অবস্থায় বসে রইলো। নয়ন সামনে এগিয়ে এসে জেসিকার মুখ বরাবর হাটু গেড়ে বসলো। তার গালে নিজের হাত গলিয়ে বলে, “কেন এমন পাগলামি করছো? এটা সামান্য একটা পুরস্কার।”

জেসিকা এবার মাথা তুলে তাকায়। গগনবিদারী স্বরে বলে উঠে, “সামান্য পুরস্কার? এটা তোমার কাছে সামান্য পুরস্কার? ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আমার কাছ থেকে সকল কিছু প্রাণ ছিনিয়ে আসছে। যে-টার যোগ্য আমি সে-টা ও পেয়ে আসছে, সব জায়গায় প্রাধান্যও ওই পাচ্ছে। কেন? শুধুমাত্র সে নিহাল শিকদারের মেয়ে বলে? আর আমি? আমি কিছু না? সকল অন্যায়,বৈষম্য কেন আমাকে নিতে হচ্ছে? নিজের স্বার্থের জন্য প্রাণও আমাকে সবসময় তার থেকে নিচু পর্যায়ে রেখেছে, উপরে উঠতে দেয়নি। মানুষ হিসাবে ক’ল’ঙ্ক ও। ক’ল’ঙ্ক!”

নয়ন জেসিকাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে শান্ত করার চেষ্টা করে। জেসিকা তবুও বলে চলে, “ও আজ তোমাকেও আমার থেকে কেঁ’ড়ে নিল নয়ন। একবারে নিঃস্ব করে দিল। প্রাণকে আমি ছাড়বো না, কখনো না। আমার থেকে সব কেঁ’ড়ে নেওয়ার মাশুল ওকে দিতেই হবে৷ ব’র’বা’দ করে দিব আমি ওকে, জা’নেই মেরে ফেলব আমি।”

নয়ন সান্ত্বনা দিতে বলে, “তোমার কাছ থেকে আমায় কেউ কেঁ’ড়ে নেয়নি। আমি শুধু তোমারই এবং তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি জানোই প্রাণের সাথে আছি আমি নিজের স্বার্থের জন্য, যেদিন আমার স্বার্থ পূরণ হয়ে যাবে ছুঁ’ড়ে ফেলে দিব আমি ওকে।”

“কিন্তু তবুও তোমার স্ত্রীর স্বীকৃতি তো সেই পাবে। আমার পরিচয় তখন কি হবে? সকলে থার্ড পার্সন আমাকেই বলবে।”

নয়ন ভেবে বলে, “কেউ কিছু বলবে না। আর দরকার পড়লে প্রাণকে বিয়ে করার আগে আমি তোমাকে বিয়ে করে নিব কিন্তু তবুও তোমায় কষ্ট পেতে দিব না। তুমি শান্ত হও।”

জেসিকা যেন এটা শোনার অপেক্ষায় ছিল৷ শেষ পেয়াদা তার হাতের মুঠোয়, এখন প্রাণের স’র্ব’না’শ কে ঠেকাবে? হাসির রেখা ফুটে তার অধরের কার্নিশে। নয়নকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আই লাভ ইউ নয়ন। আই লাভ ইউ আ লট। কখনো ছেড়ে যেও না আমায় প্লিজ।”

নয়ন আশ্বস্ত কন্ঠে বলে, “কখনো না!”

_____________

আঁধারে নিস্তব্ধ শহর, আধভাঙ্গা চাঁদের উঁকি দিচ্ছে মাথার উপর অজস্র তারার ভিড়ে, কোলাহলে পূর্ণ নগরী নিষুপ্তিচ্ছন্ন। ফাঁকা রাস্তা-ঘাটে নিয়ন বাতির আদুরে আলো উপচে পড়ছে। কোন এক ব্রিজের উপর গাড়ি থামিয়ে বের হয়ে গাড়ির সামনের দিকে পা তুলে বসে আছে প্রাণ। ভারী পোশাক ছেড়ে সাধারণ পোশাক পরিধানে, কৃত্রিম প্রসাধনীর ছিঁটেফোঁটাও নেই মুখে। বৈচিত্র্যহীন এই বেশভূষায় কাছের মানুষ ব্যতীত প্রাণকে চিহ্নিত করা বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। অনস্ক্রিন কপটতায় আচ্ছাদিত রমণী এই সময়টায় বদলে যায় নিমিষেই। মিল খুঁজে পাওয়া অসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় তখন। উপরন্তু, এই আঁধারে সময় তাকে লক্ষ্য করার মত সময় কারই আছে?
প্রাণ পিছনে দুই হাত নিয়ে ভর দিয়ে বসে আছে। উপভোগ করছে রাতের শহর। নির্ভয়ে,নিশ্চিন্তে৷ নিচেই খেলা করে যাচ্ছে নদীর স্রোত,তার মধুময় ধ্বনি বাতাসে ভাসছে, দূর থেকে শোনা যাচ্ছে বে’ও’য়া’রি’শ জন্তুর হাঁক। মনোমুগ্ধকর এই নিস্পন্দিত পরিবেশে হঠাৎ কোন এক মানবের রাশভারী কন্ঠ বিঘ্ন ঘটায়, “আপনি এই রাত-বিরেতে এখানে কি করছেন মিস. ল্যাভেন্ডার?”

প্রাণ হকচকিয়ে না উঠে নির্ভীক দৃষ্টিতে পাশ ফিরে তাকায়। ছন্দকে দেখে ক্ষীণ কন্ঠে বলে, “আপনি যা করছেন তাই।”

ছন্দের কপালে ভাঁজ পড়ে। সে তো বাসায় যাচ্ছিল, ব্রিজের ধারে প্রাণকে দেখেই গাড়ি থামায় সে। এত রাতে কোলাহলবিহীন পরিবেশ একা বসে থাকতে দেখে কোন বিপদ হলো নাকি অন্যকিছু, জানার কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারেনি সে। তাই এগিয়ে আসে খোঁজ নিতে। তাহলে প্রাণের কথার অর্থ কি দাঁড়ায়? ছন্দ তাই প্রশ্ন করে, “আপনি আদৌ জানেন আমি কি করছি এখানে?”

প্রাণ ভাবান্তরহীন কন্ঠে উত্তর দেয়, “করছেন হয়তো কিছু। অকারণে নিশ্চয়ই এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন না।”

ছন্দ নিষ্পলক নয়নে তাকিয়ে থাকে শুধু। সে বার বার ভুলে যায়, সে আসলে কার সাথে কথা বলছে। প্রাণের থেকে সহজ-সরল উত্তরের আশা রাখাই জীবনের সবচেয়ে বড় বোকামি। ছন্দ বলে, “জনমানবহীন রাস্তায় একা বসে আছেন, যদি এখন কোন বিপদ নেমে আসে?”

“পাশে তো এখন আপনি আছেন, তাহলে বিপদটা কি আপনাকে ধরে নিব?”

ছন্দ বিব্রত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “আমাকে দেখতে কি বিপদজনক মনে হয় আপনার?”

প্রাণ ছন্দের দিকে একবার গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে পরোক্ষ করে নিয়ে বলে, “চেহেরায় শুদ্ধতা আছে তবে অন্তরে বিশুদ্ধতা আছে কি-না কে জানে?”

ছন্দ এবার হাল ছেড়ে বলে, “আপনার সাথে কথায় পেড়ে উঠা অসম্ভব৷”

প্রাণ প্রত্যুত্তর করে না। দৃষ্টি ঘুরায় দূর আকাশের পাণে। বাতাসে উড়তে থাকে তার মুক্ত চুল, এলোমেলো হয়ে গেলেও সামলে নেওয়ার কোন তাড়া নেই। চোখে মলিনতার ছড়াছড়ি, মসৃণ গালে ম্লান রেখা। ছন্দ প্রাণের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। বিরল বস্তুর দিকে হাত বাড়াতে নেই তা সে ভালো করেই জানে। নিউজ দেখেছে সে, প্রাণ আর নয়নের এনগেজমেন্টের নিউজ আ’গু’নের ন্যায় ছড়িয়ে আছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। নজরে না পড়ার উপায় নেই কোন। ছন্দ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “আপনার এনগেজমেন্টের খবর শুনলাম, কংগ্রাচুলেশন!”

প্রাণ দুর্বোধ্য হাসে। ছন্দ জিজ্ঞেস করে, “আপনি কি বাস্তবে সর্বদাই এমন নির্জীব,নিষ্প্রাণ থাকেন?”

প্রাণ ছন্দের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নির্লিপ্ত কন্ঠে পাল্টা প্রশ্ন করে, “আমাকে নিয়ে আপনার কৌতূহল একটু বেশি না?”

ছন্দ নিঃশব্দে হেসে উঠে বলে, “তাই বোধহয়। এই কৌতূহলের চক্করে খুব বাজেভাবে ফেঁ’সে গিয়েছি এবার।”

কথাটা কর্ণগোচর হতেই প্রাণ ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে ছন্দের দিকে তাকায়, “মানে?”

ছন্দ কথা ঘুরানোর জন্য নিজের হাত ঘড়ির দিকে নজর বুলিয়ে বলে, “রাত দুটোর বেশি বাজে, জায়গাটা কিন্তু এখন একদমই নিরাপদ না। বাসায় যান।”

প্রাণ কিয়ৎক্ষণ অপলক নয়নে ছন্দের দিকে তাকিয়ে থেকে নেমে পড়ল। গাড়িতে উঠে বসার পূর্বে ছন্দের দিক তাকিয়ে বলল, “আসি! ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হবে।”

কথাটা বলে প্রাণ গাড়িতে উঠে চলে গেল৷ ছন্দ সেদিকে তাকিয়ে থেকে থেকে প্রাণের শেষ বাক্য গুলো আওড়ে বলল, “আদৌ কি আর দেখা হবে?”

______________

মাঝ দিয়ে কেটে যায় কয়েকদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তখনও প্রাণ ও নয়নকে নিয়ে হাজারো নিউজ,গোসিপ। নেটিজেনরা নয়ন ও প্রাণের যুগলবন্দী হওয়ায় বেশ খুশি। শুভকামনায় ভরে যাচ্ছে দুইজনের কমেন্ট বক্স। হট টপিক হয়ে উঠেছে তারা, সে সাথে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে আকাশ ছোঁয়া। সব নিউজ দেখে প্রাণের মধ্যে প্রসন্নভাবটা লক্ষ্য করা গেল। বুঝতে আর বাকি রইলো না সে এমনটাই চাইছিল। সে চাইছে আর কয়েকদিন এমনভাবেই সবটা চলতে দিতে, এরপর সে চলবে তার পরবর্তী দান।
সন্ধ্যায় নিজের শুট শেষ করে বের হতেই জেসিকার মেসেজ নোটিফিকেশন বারে দেখতে পায় প্রাণ। তাকে কোন এক জরুরি বার্তা জানাতে **** হোটেলে ডিনারের জন্য ডেকেছে তাকে। প্রাণ কিয়ৎক্ষণ ভেবে জেসিকাকে ‘হ্যাঁ’ বলে চৈতিকে কিছু ইন্সট্রাকশন দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে জেসিকার বলার ঠিকানার দিকে।
.
হোটেলে এসে প্রাণ হাজির হতেই জেসিকা ও নয়নকে একত্রে দেখতে পায় সে। প্রাণ ভ্রুযুগল এক করে সামনে এগুতেই জেসিকা নিজের আসন ছেড়ে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে। নয়নও উঠে দাঁড়িয়ে একগুচ্ছ গোলাপ এগিয়ে দেয় তার দিকে। প্রাণ সেটা গ্রহণ করতেই নয়ন তার জন্য চেয়ার টেনে দেয়। সে স্মিত হেসে নিজের আসনে বসতেই নয়ন ও জেসিকাও তার মুখোমুখি হয়ে বসে৷ কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার পূর্বেই একজন ওয়েটার এসে খাবার সার্ভ করে দিয়ে যায়। প্রাণের বুঝতে দেরি নেই, তারা আগেই অর্ডার করে রেখেছিল। তবে হঠাৎ এমন আপ্যায়নের মানে খুঁজে পেল না প্রাণ। কিছুক্ষণ বিভ্রান্ত থাকার পর নয়নকে সে জিজ্ঞেস করে এসবের মানে কি? তখন নয়ন বলে, “তোমার সাকসেসের উপলক্ষে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই জেসিকাকে বলে তোমাকে এভাবে আনি। তোমার তো আবার সোরগোল পছন্দ না তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বড় করে কিছু করতে পারলাম না৷ তা পছন্দ হয়নি তোমার?”

প্রাণের বিষয়টা হজম না হলেও কিছু বলল না। ম্লানমুখে জানালো সবটাই তার ভালো লেগেছে। নয়ন এবার কথা না বাড়িয়ে প্রাণের প্লেটে খাবার পরিবেশন করে নিজের প্লেটেও খাবার তুলে নেয়। এরপর কথায় মশগুল হয়,তার সাথে জেসিকাও তাল মিলায়। প্রাণ দুইজনের কথা নীরব দর্শকের ন্যায় শুনতে থাকে আর খেতে থাকে। খাওয়া যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে তখন হুট করেই প্রাণের মাথা ঘুরে উঠে। তীব্র ব্য’থায় মাথা চেপে ধরে বসে সে। সময় খানিক গড়িয়ে যেতেই নয়নযুগল ঝাপসা হয়ে আসতে শুরু করে তার। কর্ণকুহরে বাজতে থাকে নয়ন আর জেসিকার উৎকন্ঠিত কন্ঠ। কি হয়েছে তার জিজ্ঞেস করছে তারা। খুব কষ্টে মাথা তুলে একবার দুইজনের দিক তাকায় অতঃপর কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই মূর্ছা যায় সে। হেলে পড়ে নিচের দিকে।

#চলবে

[সকলে কষ্ট করে একটু রেসপন্স করবেন।]

[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here