বিষ_করেছি_পান(২২)

0
560

#বিষ_করেছি_পান(২২)

(কপি করা নিষেধ)
ছুটি আসেনি। বাঁধনের একটু হলেও মেজাজ খারাপ হলো। ঝিমা বাঁধনের সামনেই ছুটিকে ফোন দিয়েছে । ছুটি বলেছে হাসপাতালে তার দমবন্ধ লাগে। বাঁধন বাড়িতে এলেই বাঁধনের সাথে দেখা করবে। সরাসরি এড়িয়ে যাওয়া যাকে বলে। বাঁধনের রাগ হয়। ইচ্ছে করে এখনি বাসাম গিয়ে বদমাশটার দুই গালে দেয় দুটো চড়। একে এতো দিন আদর দিয়ে আসছে! বাঁধনের খারাপ লাগা ভালো লাগা কোন দাম নেই? সেদিন তো এসেছিলো অনেকক্ষন কাটিয়ে গিয়েছে। কি রবিঠাকুরের কবিতাও আবৃত্তি করেছে। আরো অনেক কিছু বলেছে। কিছু মনে আছে আবার কিছু আবছা হয়ে আসে। ক্লিয়ারকাট মনে পড়েনা। এর এতো অবাধ্যতা বাড়ি গিয়েই ছুটাবে।
__________________
সকাল বেলায় রুম্পা ছুটি রিতীকে তাড়াতাড়ি খাবার পাঁয়তারা করে। জুলুম দিয়ে খাবার শেষ করিয়ে বলে,
— আজ কলেজে যা।তোর স্যার ফোন দিয়েছিলো। তোর ফোন বন্ধ। কি কি জানি প্রবলেম আছে প্রাইভেটে দেখিয়ে দিতে বলেছে।
— যাচ্ছি।
— শোন রিতী গোল্ডেন প্লাস কিন্তু আমার চাই চাই। আশেপাশে যাই কিছু ঘটুক না কেনো পড়াশোনা থেকে একপা পিছিয়ে আসা চলবেনা। তোকে নিয়ে আমাদের অনেক সপ্ন। ভূলে গেলে চলবেনা মা।
— তোমাদের সপ্ন তো আমার সপ্ন মা।

ছানোয়ার রেডি হয়ে এসে বলে,
— কই? রেডি?
— তুমিও যাবে বাবা?
— হ্যা। তোমরা যাও। আমি তোমাদের পেছনে আছি।

রিতী ছুটি রিকশা নিয়ে রওনা দেয়। ছানোয়ার ও একটা রিকশা ডেকে মেয়েদের পিছু পিছু রওনা দেয়। ছুটিকে স্কুলে নামিয়ে রিতী কলেজে চলে আসে। ছানোয়ারকে বলে,
— বাবা আমাকে নিতে এসো। দুঘন্টার মধ্যে ই আমার কাজ শেষ হয়ে যাবে।
ছানোয়ার আসবে বলে চলে যায়। রিতী প্রাইভেটে গিয়ে শুনে আজকে নাকি রেজাল্ট দিবে দুপুর বারোটার পরে। লেইট হলে দুটো অব্দি বাজতে পারে। এদিকে বাবাকে বলে দিয়েছে দু ঘন্টা পর আসতে। বাবা নিজের স্কুল রেখে আসবে।কাজের কাজ তো কিছুই হবেনা। সেটাই ভেবে রিতী তার ফোন সুইচ অন করে। ছানোয়ারকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয় দেড়টার দিকে নিতে আসতে। রিতী রেজাল্ট নিয়েই বাড়ি ফিরবে।

এদিকে অনেক দিন পর রিতীর ফোন খুলা পেয়ে সোহাগ সাথে সাথে লোকেশন দেখে নেয়। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বাইকে গা এলিয়ে দেয়। মাথার পেছনে হাত রেখে বলে,
— ওরে ধলা , হেলাল, পাড়ি , জুয়েল আমার পিরিতী তো আজকা কলেজ আসছে। দেখা করতে যাইতে হবো। হায়! কতদিন আমার পিরিতীরে দেখিনা!
— ভাই দেড়ি না করিয়া চলেন যাই।
— তার আগে একটা কাজ কর।
— কি কন ভাই।
— এক থোকা গোলাপ আন।
— এক্ষুনি আনতাছি ভাই।

পাড়ি বাইক ছুটিয়ে পাঁচ মিনিটেই তাজা তাজা এক থোকা গোলাপ নিয়ে আসে। সোহাগ হাতে নিয়ে ফুলে নাক ডুবিয়ে শ্বাস টেনে ঘ্রাণ নেয়। কড়া ঘ্রাণে শরীর মন চাঙা হয়ে উঠে। কলেজে গিয়ে বাইক থেকে নেমে দাঁড়ায়। ফ্রন্ট মিররে চেহারা দেখে চুলগুলো এলোমেলো করে নেয়। বুকের দিকে দুটো বোতাম খুলে নিচের দিকেও দুটো বোতাম খুলে দেয়। শার্ট টা খামচি দিয়ে কুচিমুচি করে ছেড়ে দেয়। পায়ের সু জোড়া খুলে হেলালকে বলে,
— ঐ তোর স্যান্ডেল জোড়া দে।
হেলাল তাড়াহুড়ো করে পায়ের স্যান্ডেল খুলে দেয়। সোহাগের ব্যাপার স্যাপার মোটেই সুবিধার লাগছেনা। কোন মেয়েকে ফুল দিতে এসে এরকম পাগল চেহারা করে এটা কল্পনাও করতে পারেনা। সবাই আসে হ্যান্ডসাম লুক নিয়ে। আর সোহাগ নিচ্ছে খয়রাতি লুক! নিজেকে আরেকবার দেখে বলে,
— দেখতো ঠিক আছেনা?
— এসব কি করছেন ভাই? পাগল পাগল লাগছে।
— কারন তোদের ভাই পাগল হয়ে গেছে। পিরিতীর বিরহে প্রেম পাগল হয়ে গেছে।
সবার চোখ উপরে।
— কি করতে চাইছেন ভাই?
— প্রপোজ। পিরিতীকে প্রপোজ করবো। তার পর প্রেম। তারপর…..
— সত্যি সত্যিই কি ভাই?
সোহাগ হাসে। ধলার মাথায় থাপ্পড় দেয়। ফুলে আরেকবার নাম ঢুবিয়ে লম্বা শ্বাস নেয়। কলেজ গেইটেই দিকে তাকিয়ে স্বশব্দে বলে,
— সবার উপরে প্রেম সত্য,তাহার উপর কিছু নাই।

রিতীর রেজাল্ট ভালো হয়নি। হবেইবা কিভাবে? এতো ঝামেলার মাঝে পড়ায় কন্সানট্রেড করা কতটা মুশকিল তা ভোক্তভোগীরাই জানে। জিপিএ 4.96 এসেছে। স্যাররা রিতীকে নিয়ে আশাহত। গোল্ডেন না এলেও প্লাস কেটে গেছে এটা স্যাররা মানতে পারছেনা। তবে রিতীর সামনে আফসোস টাও করছেনা। থমথমে মুখটা দেখে রিতীর মাঝে কি হচ্ছে বুঝতে বাকি রয় না। চেহারায় হাসি টেনে বরং রিতীকে আশ্বাস দেয়। রিতীর চোখে জল টলমল দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। প্রিন্সিপাল এসে বলে,
— আরে বোকা মেয়ে! মন খারাপ করছো কেনো?এটা কি ফাইনাল নাকি? ফাইনালের জন্য প্রিপারেশন নাও। বোর্ডে কততম স্থান তোমার হবে সেই চিন্তা করো। সামান্য টেস্ট নিয়ে পড়ে থেকোনা। আমরা তোমাকে নিয়ে অনেক আশাবাদী।
রিতীর মন একটু শান্ত হয়। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। প্রিন্সিপাল উপহার স্বরূপ রিতীকে একবক্স পেন গিফট করে। রিতী টিচার্স রুম থেকে বাইরে এসে তুলিকে রেজাল্ট জিজ্ঞাসা করে। তুলি প্রশস্ত হেসে বলে এ প্লাস। রিতীর মনটা মুহুর্তেই খারাপ হয়ে যায়।
— কতজন এ প্লাস পেয়েছে?
— মোটমাট ছাব্বিশ জন। মন খারাপ করিস না দোস্ত । তবে তুই ফার্স্ট গার্ল হয়েও এতো খারাপ রেজাল্ট করলি এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে।
রিতী ধপ করে ক্লাসের সামনে বসে পড়ে। হাঁটুতে মুখ গুজে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। হুটহাট এমনটা হবে তুলি কল্পনাও করেনি। সেও বসে পড়ে রিতীকে শান্তনা দিতে থাকে। উপস্থিত ফ্রেন্ডের মতো সহপাঠিরা এসেও রিতীকে শান্তনা দিতে থাকে।

কলেজে ঢুকেই সোহাগ দেখতে পায় একজায়গায় কিছুটা ভির রয়েছে। কিসের ভিড় ধলাকে দেখে আসতে বলে। ধলা একদৌড়ে ভিড়ের কাছে এসেই আবার ফেরত যায়। সোহাগকে বলে,
— ভাই। আপনার পিরিতী কান্না করতেছে।
— কেনো?
— জানিনা ভাই। আজকে রেজাল্ট দিয়েছে। মনে হয় ফেইল করছে তাই কান্না করতেছে।
সোহাগ অট্টো হাসিতে ফেটে পড়ে।হাসি চেপে রেখেই রিতীর সামনে উপস্থিত হয়। হটাৎ বখাটে গুন্ডা সোহাগ কে দেখে স্টুডেন্টরা আতঙ্কে সেখান থেকে প্রস্থান করে। রিতী একা পড়ে রয়। যাওয়ার সময় তুলি দুবার হাত টেনেছে কিন্তু রিতীকে নড়াতে পারেনি। সোহাগের ভ্রু কুচকানো দেখেই তুলি দৌড় দেয়। সোহাগ কয়েক সেকেন্ড সুবোদ বালকের মতো দাঁড়িয়ে থেকে আবার অট্টোহাসিতে ফেটে পড়ে। এবার সোহাগের চ্যালারা সহ হাসছে। সোহাগের হাসির শব্দ কানে পৌঁছতেই রিতী আরো কাঁদতে থাকে। এই শয়তানের হাত থেকে কি তার নিস্তার নেই? কি করলে পাবে নিস্তার? সোহাগ হাসতে হাসতেই রিতীর সামনে ফ্লোরে বসে পড়ে। হাসি থামিয়ে বলে,
— কানতেছো কেনো? ফেল করলেই কি কানতে হয়? কোই আমিওতো জীবনে কতো ফেল করলাম। একবারো কাদিনাই। বরং লাড্ডু পেয়েছি তাই বাড়ি গিয়ে হাড়িতে হাড়িতে লাড্ডু সাবার করেছি। আমি জানতাম তুমি ফেল করবা। আরে আমার সাথে একটা মিল থাকতে হবো না?
রিতী চট করে মাথা তুলে বলে,
— আমি ফেল করিনি।
সোহাগের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। এ কোন রিতী? সাপের মতো ফণা তুলে রিতীমতো ফুঁসছে। সোহাগকে যেনো এখনি ছোবল মেরে দিবে। কপালের রগ গুলো মোটা কালো হয়ে ফুলে উঠেছে। ফোলা চোখে কাজল লেপ্টে গেছে। নাকের ডগা লাল টকটকে হয়ে আছে। ছোট বড় চুল গুলো সারা মুখে চোখের জলে লেপ্টে রয়েছে। সোহাগের চোখ মুখ বোধবুদ্ধি সব থেমে গেছে। কি সৌন্দর্য! কি মায়া! সোহাগের তৃষ্ণার্ত চোখের তৃষ্ণা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। কি যন্ত্রনার! রিতীর চিৎকারে সোহাগ হকচকিয়ে উঠে।
— আমি ফেল করিনি বুঝেছেন? আমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। আপনার জন্য হয়েছে। এর জন্য আপনি দায়ী। আমি আপনার মুখ দেখতে চাইনা। তবে বারে বারে কেনো আসেন আমার সামনে? বলেছিনা আমার ধারে কাছে আসবেন না? আমাকে বেইজ্জত করেও থামেন নি না? জেল খেটেও আপনার শাস্তি হয়নি। আবার এসেছেন আমার সামনে।
সোহাগ রিতীর কথায় কান দেয়না। বরং হাসিমুখে রিতীর দিকে তাকিয়ে থাকে। কি সুন্দর মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে। ঠোঁট ঠোঁট চেপে বলে,
— বাহ পিরিতি! তুমার তো অনেক প্রতিভা। জামাইয়ের সাথে ভালো ঝগড়া করতে পারবে। এতো ভালো ঝগড়া কয়জনে করতে পারে!
— আপনি যাবেন এখান থেকে? এমনিতেই আপনার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। এখন যদি না যান একটা কিছু করে ফেলবো আমি বলে দিলাম।
— আহারে!কি করবে সুইসাইড? হেড লাইনে উঠে যাবে যে! টেস্ট পরিক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করে এক এইস এস সি কেনডিডের মৃত্যু। তো পিরিতী পয়েন্ট কতো আসছে?
— জানিনা।
— না জেনেই কাঁদছো! ঐ ধলা দেখে আয়।
— 4.96
— কিহ? হায় হায়। তুমি এতো ভালো ছাত্রী আমার তো জানা ছিলোনা পিরিতী। আমার বাপের জম্মেও তো আমি এই রেজাল্ট সপ্ন ও দেখিনাই। শেষমেষ এইস এসসি ফেলটুসের গার্লফ্রেন্ড পেলো টেস্টে এ প্লাসের কাছাকাছি!
— আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড না।
— চেচাও কেন?আমি কি কানে শুনিনা? এই নেও ফুল। কনগ্ৰাচুলেশনস তুমি এতো ভালো রেজাল্ট করেছো এবং আজকে থেকে আমার সাথে প্রেম করছো।
— রাখেন আপনার ফুল। যান সামনে থেকে। আমার মান সম্মান শেষ করে জেল খেটেও শান্ত হননি তাইনা? এখন এসে বলছেন প্রেম?
— তো কি করবো? তোমাকে না দেখতে পেয়ে দেখো আমার কি অবস্থা। চোখে ঘুম নেই কালি পড়ে গেছে। শার্টের বোতাম নেই ছিড়ে গেছে। পায়ের সু হারিয়ে গেছে। এর একটা মাত্র সমাধান প্রেম।আমি ঠিক করেছি তোমাকে আর জোড় করবোনা। এভাবে সম্ভব না। তোমার সাথে এখন হবে আমার প্রেম। তারপর কাছে আসা, হাত ধরাধরি,ঘুরাঘুরি । তারপর উত্তরার ফ্ল্যাটে ঢুকবো সরাসরি।

টাস করে থাপ্পড় পড়ে সোহাগের গালে। রাগে গজগজ করতে করতে উঠে দাঁড়ায় রিতী। উড়নাটা টেনে ব্যাগ নিয়ে হাঁটা দেয় জোড়ে। ছানোয়ারের আসার অপেক্ষা করেনা। বড় বড় পা ফেলে রাস্তায় এসে রিকশায় চেপে বসে। সোহাগের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। কত্তবড় সাহস ! এইটুকুনি একটা মেয়ে তার গালে চড় মারে। গালে হাত দিয়ে বড় বড় পা ফেলে গেইটে আসে।শরীরে তার আগুন জ্বলছে। ততোক্ষনে রিতীর রিকশা চলতে শুরু করেছে।
____________________
বাঁধন এখন কারো সাহায্য ছাড়া মোটামুটি ভালোই হাটা চলা করতে পারে। রোজ নিয়ম করে সে সিমুর কেবিনের সামনে দিয়ে ঘুরে আসে। জীবন্ত লাশটা দেখে একবার হলেও দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নিজেকে বন্দী বন্দী লাগছে। সুস্থ হতেই ডক্টরের কাছে বাড়ি যাবার অনুমতি চেয়ে বসে। আজ সকালে বাঁধনকে রিলিজ দিয়েছে। হসপিটালে ব্যবহৃত শার্ট প্যান্ট ছেড়ে মায়ের নিয়ে আসা শার্ট প্যান্ট পড়ে নেয়। ইন করে ফিটফাট হয়ে নেয়।বাথরুমের মিররে নিজেকে দেখে নেয়। লাস্ট কয়েকদিন খুব আরামেই ব্যথা ছাড়া শুয়ে বসে কেটেছে। চেহারার উজ্জলতা ও বেড়েছে। বাঁধন খেয়াল করে সে একটু স্বাস্থ্যবান ও হয়েছে। এইযে শার্টের উপর দিয়ে মাসল বোঝা যাচ্ছে। আবার প্যান্টের বেল্ট লাগনো ছাড়াই টাইট হয়ে এটেছে। আগের থেকে নিজেকে বেশিই ধামধিষ্ট মনে হচ্ছে। মা,বাবা,লেবু মামা,চমচম মামী,ঝিমা সবাই এসেছে বাঁধনকে নিয়ে যেতে। বাঁধন বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে মা এতোদিনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যাগে গুছিয়ে তুলছে। বাধন আগেই তৈরী করে রাখা একটা খাম নিয়ে সবার অগোচরে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় লেবু বাঁধনের কাঁধে হাত রাখে। বাঁধন আস্তে আস্তে বলে,
— এক্ষুনি আসছি।
লেবু হাত নামিয়ে নেয়। ভাগনে তার কোথায় যাবে সে জানে। চলে যাওয়ার আগে একবার দেখে যাওয়া উচিত বলেও মনে করে। আপাতত সে চুপ থাকে।

বাধন গিয়ে বাঁধনের শ্বশুড়ীকে কেবিনে পায়। আলতো করে খামটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
— আন্টি আমাকে সাহায্য করুন। প্লিজ ফেরাবেন না। আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি। যতদিন সে আমার স্ত্রী ততোদিন সে সম্পূর্ণ আমার রেসপনসিবিলিটি। প্লিজ আমাকে আমার রেসপনসিবিলিটি পালনে সাহায্য করুন।
ভদ্রমহিলা আর কথা বলতে পারেনা। দুই হাতে বাধনের মাথা বুলিয়ে চোখের জল ছেড়ে দেয়। বাঁধন বলে,
— আমি মাঝে মাঝে আসবো আন্টি। যদিও আপনি মা তবুও আমার অনুরোধ ওকে যত্নে রাখবেন।
— তুমি এসো বাবা। জানিনা বিধাতা কপালে কি লিখেছেন। তবে তোমার জন্য আমার অনেক দোয়া।
বাঁধন শেষ বারের মতো সুমিকে দেখে বেরিয়ে যায়। ভদ্রমহিলা দুহাতে মোটা খামটা চেপে ধরে হো হো করে কেঁদে দেয়। এই মুহূর্তে এটা খুবই প্রয়োজন ছিলো। খরচ করতে করতে হাতে সব ফুরিয়ে এসেছে। টাকাটা পেয়ে মেয়ের মাথায় আদরে চুমু দিলো। এক্সিডেন্ট টা না হলে হয়তো মেয়েটার রাজ কপাল দুচোখ ভরে দেখতো।

বাসার সামনে এসে দাঁড়ায় বাধনদের গাড়ি। বীনা নেমে ধীরে ধীরে বাঁধনকে নামায়। বাকিরা ব্যাগ প্যাক একে একে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়। ঝিমা এসে ভাইকে ধরলেই বীনা বাড়ির ভেতরে চলে যায়। বাঁধন ঝিমাকে বলে,– ছাড়। একাই যেতে পারবো। কলোনীর এ সে এসে সবাই বাঁধনকে ঘিরে ধরে। জিজ্ঞেস করে বাঁধন কেমন আছে? বাঁধন হাসি মুখে সবাইকে সুস্থতার কথা জানায়। ছুটি জানালা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছে। বাঁধন কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। ছুটি জানে হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরলে মানুষ শীর্ণকায় হয়ে ফিরে। বাঁধনকে দেখে একদমি তা মনে হচ্ছেনা। ছুটির মনে হচ্ছে বাঁধন ভাই সূদূর সুইজারল্যান্ড থেকে বাড়ি ফিরেছে। বাঁধনের চেহারা আর তার আশেপাশের ভিড় তাই বলছে।মলি ছুটিকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে,
— ছুটি নিচে আয়। বাঁধন ভাই ফিরেছে।
বাঁধন তাকাতেই ছুটির চোখ আর বাঁধনের চোখ এক হয়ে যায়। বাঁধন কন্ঠে কঠোরতা এনে জোরে ডেকে বলে,
— ছুটি! তাড়াতাড়ি আমার বাড়ি আয়। তোর কঠোর বিচার করা হবে।

চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here