কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্বঃ৩২

0
541

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্বঃ৩২
কলমে: ইয়াসমিন

তুষারপাতে জন্য হঠাৎ চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। বালির্নের এক নামকরা হোটেল কক্ষের সাদা টাইলসের উপরে বসে আছে পাথর। কক্ষের প্রতিটা জিনিসে সাদা রঙের ছোঁয়া নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। চারদিকে এতো এতো সাদা শুভ্রতার মধ্যে বিছানার উপরে লাল গাউনে থাকা মেয়েটাকে যেনো মনে হচ্ছে কোনো ঘুমন্ত রাজকুমারী। পাথর মেয়েটার লাল হয়ে থাকা ঠোঁট আর নাটকার দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। মনে মধ্যে ঝড় বয়ে চলেছে। মেয়েটার ছোট্ট শরীর নিশ্বাসের সঙ্গে উঠানামা করছে।পাথর ঘনঘন কয়েকবার ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। পনেরো দিনের সফরে গিয়ে মেয়েটিকে এক নজর দেখছিল সেই মেয়েটাকে হঠাৎ এতটা কাছ থেকে দেখবে ভাবতে পারেনি। মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন সেই সঙ্গে অপরাধবোধ ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ ও দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো।মনে মনে কঠিন প্রতিজ্ঞা করে বসলো কখনও এই মেয়েকে দেখে ও আর মুগ্ধ হবে না। ঘরে স্ত্রী রেখে বাইরের মেয়েদের এভাবে দেখা উচিত না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ওর গলা শুকিয়ে গেলো। গতকাল কঠিন এক সত্যির সম্মুখিন হয়ে জীবনটা প্রায় বদলে গেছে। এসব কেনো হচ্ছে জানা নেই। কার অভিশাপে ও অভিশপ্ত কে জানে। তবে বুঝেছে অতিরিক্ত রাগলে ভেতরের পশু সত্তা বেরিয়ে আসতে চাই।ভাবলো কিছুতেই আর রাগলে চলবে না। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে হবে। আশেপাশের লোকজন জানতে পারলে ওকে নিশ্চয়ই সমাজ থেকে বের করে দিবে নয়তো আইনেরর আওতায় নেওয়া হবে। কথাগুলো ভেবে ওর চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসলো। কম্বলের মধ্যে হাত পা গুটিয়ে আছে কহিনুর। ওর দিকে তাঁকিয়েই ও গভীর ঘুমিয়ে তলিয়ে গেলো। নির্জন কক্ষে দুজন মানব মানবিক নিশ্বাসের শব্দ ছড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না।বেশ কয়েক মূহুর্তে পার হলো এভাবেই। নির্জন কক্ষের ফ্লরে একজন সুদর্শন যুবকের পালঙ্কে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকার বিষয়টা সিনেমাটিক হলেও পালঙ্কের মাঝখানে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে থাকা রমণীর কাছে বড্ড বেশি ভয়ের। চোখ পিটপিট করে সামনে তাঁকিয়ে ও ভড়কে গেলো। কোথায় আছে ভেবে আশেপাশে দৃষ্টি রেখে হঠাৎ ঘুমন্ত যুবকের দিকে ওর চক্ষু থমকে গেলো। বুক ধড়ফড় করে উঠলো। মনে মনে অসংখ্যবার সাঈদকে ডাকলো। গতকাল রাতে কি হয়েছিল মনে নেই। কেউ ওকে ডেকেছিল তাই বাধা হয়ে ঘর ছেড়েছিল। কহিনুরের কেমন সন্দেহ হলো এই ছেলেটাই ওকে ডাকেনিতো? ডাকতেই পারে। কথাটা ভেবে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে ও হুড়মুড় করে পড়ে গেলো। হঠাৎ শব্দ শুনে পাথর জেগে উঠলো। কহিনুরকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে দ্রুত ওকে তুলতে হাত বাড়িয়ে দিলো কিন্তু কহিনুর পাত্তা দিলো না। নিজের মতো উঠে বসলো। পাথর উদ্গ্রীব হয়ে জিঞ্জাসা করলো,
> এই মেয়ে,এতো রাতে তুমি সমুদ্রের তীরে কি করছিলে? বয়স কত তোমার?
হঠাৎ অচেনা ছেলের থেকে ধমক শুনে কহিনুর চমকে উঠলো। খুব করে প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা করলো কিন্তু পারলো না। কথা বলা নিষেধ আছে। ও কথা বললে ওর সঙ্গে সুলতান পরিবারের সবগুলো মেয়েরা কথা বলবে। বাবা মায়ের কথা ভেবে এর টেনশন হচ্ছে। ওকে চুপচাপ দেখে পাথর আবারও ধমক দিয়ে উঠলো,
> কি হচ্ছে চুপচাপ কেনো উত্তর দাও? বেয়াদবি আমি পছন্দ করি না। বলো কি করছিলে ওখানে?বাবা মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলে নাকি বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে?
পাথরের হঠাৎ করেই রাগ হচ্ছে। মনের মধ্যে থাকা দুর্বলতা যদি প্রকাশ পেয়ে যায় বা আশকারা দিয়ে বিদ্রহ করে বসে তাই মেয়েটার সঙ্গে এমন কঠোর ব্যবহার করা। কহিনুর চমকে উঠলো তবে চোখ ছলছল করলো না। ফুপিয়ে কেঁদে উঠা ওর সঙ্গে যায় না। কহিনুরের মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরছে। সাঈদকে ডাকতে হবে। ছেলেটা বেকুবের মতো কোথায় আছে কে জানে। কথাটা ভেবে ও অনমনে পালঙ্কে গিয়ে বসলো। পাথরের মেজাজ চরম থেকে চরম খারাপ হয়ে গেলো। মেয়েটা রীতিমতো ওকে ইগনোর করছে যেটা ওর সহ্য হলো না। ভেতরে থাকা প/শুটা হিং/স্র হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ভেতর থেকে কেউ ওকে বলছে সামনে থাকা মেয়েটাকে থাপ্প/ড় বসিয়ে দিতে। পাথর তৎক্ষণাৎ থাপ্প/ড়ের জন্য হাত উচু করে কহিনুরের মুখ বরাবর এনে থমকে গেলো। ঘন পাপড়িতে আবৃত নেত্র যুগলে বিস্ময় খেলা করছে। সদ্য ফোটা পাপড়ির ন্যায় কোমর ওষ্ঠের কাঁপাকাপি দেখে পাথরের মস্তিষ্ক শূন্য শূন্য লাগলো। মূহুর্ত্তের মধ্যে ও থমকে গেলো। কহিনুর কিছু বুঝতে পারলো কি জানা নেই তবে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে টেবিলের উপরে থাকা খাতাতে বড়বড় করে লিখলো,
> আমি কথা বলতে পারবো না। দয়াকরে উত্তেজিত হবে না। আমি সমুদ্রের তীরে কিভাবে এসেছি জানিনা। রাস্তা চিনি না। হয়তো হারিয়ে গেছি তবে চিন্তা করবেন না। আমার শুভাকাঙ্খী আসবে আমাকে নিতে।
কহিনুর লেখাটা সামনে ধরতেই পাথর সেটা টেনে নিয়ে টুকরো টুকরো করে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বলল,
> বাঁচিয়েছি তোমাকে আর তুমি অকৃতজ্ঞের মতো আমাকে অপমান করছো মেয়ে? কথা বললে কি আমি তোমাকে খেয়ে ফেলবো? লাগবে না বলা। থাকো এভাবে আমি চললাম।
পাথর ওকে সুযোগ না দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুঁলে বেরিয়ে আসলো।এখানে থাকলে নিজের স্থির করতে পারবে না। কহিনুর সেদিকে তাঁকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়লো। শরীর প্রচণ্ড ক্লান্ত। ঘুমের প্রয়োজন। সারা সকাল কহিনুর ঘুমিয়ে পার করলো। দুপুরে প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে উঠে বসলো। সাঈদের উপরে ওর রাগ হচ্ছে। কহিনুর বিড়বিড় করে বকা দিলো পাথরকেও। ছেলেটা দায়িত্বজ্ঞানহীন। একটা অচেনা মেয়েকে হোটেল কক্ষে ফেলে রেখে গায়েব। বিষয়টা খুবই খারাপ আর দৃষ্টি কটূ। কহিনুর কথাটা ভেবে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিয়ে চমকে উঠলো। দরজার কাছে একজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কহিনুর ভ্রু কুচকে তাঁকাতেই ছেলেটা বলে উঠলো,
> ম্যাম স্যার চলে গেছেন। আপনি ঘুম থেকে উঠলে আপনাকে আপনার গন্তব্যে চলে যেতে বলেছেন। উনি বিজি আছেন তাই থাকতে পারেননি।
কহিনুরের মাথা ঘুরে উঠলো। মানুষের মধ্যে অস্বাভাবিক রাগ থাকা ঠিক না। অসুস্থতার লক্ষণ।সে যাইহোক অচেনা শহরে কোথায় যাবে ভেবে ওর মাথা আউলে গেলো। ছেলেটা চলে যেতেই কহিনুর দরজা বন্ধ করে দিলো। গায়ে জড়ানো গতকাল মায়ের পছন্দ করা লাল রঙের গাউনটা কেমন জানি মালিন হয়ে আছে। বাইরের আবহাওয়া চেঞ্জ হয়েছে। তুষারপাতের বদলে এখন উত্তপ্ত সূর্যের কিরণে গরম পড়তে শুরু করেছে। কহিনুর চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কিছু উচ্চারণ করলো। ওয়াশরুমে গিয়ে হাতে মুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে আসলো কক্ষ থেকে। ওড়না দিয়ে মাথা সহ মুখটা ঢেকে নিয়েছে কিন্তু পায়ে কোনো জুতা নেই। হোটেল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পা ফেলে ও শিউরে উঠলো। বাবা মায়ের আদরে বেড়ে উঠা কহিনুর বুঝতে পারলো পৃথিবী কতটা কঠিন। পেটে খাবার নেই পায়ে জুতা নেই আর না আছে পয়সা। সুলতান বংশের বিশাল সম্পদের একমাত্র উত্তরাধিকারীর বেহাল অবস্থা। ফর্সা পা দুখানা কালো পিচ ঢালা রাস্তার রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। মায়ের কোল থেকে বাইরে আসা এটাই ওর জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। পাথরের উপরে ওর ভীষণ রাগ হলো। আগে কখনও এরকম হয়নি। কহিনুর সর্বদা চুপচাপ থাকা শান্ত একটা মেয়ে। হঠাৎ মনে হলো এর প্রতিশোধ নেওয়া উচিত। ছেলেটাকে ও ঠিক উচিৎ শিক্ষা দিবে। কহিনুর বিড়বিড় করে কথাগুলো বলে রাস্তার পা ঘেঁষে হেঁটে চললো। অনেকেই ওকে দেখছে তবে কেউ সিরিয়স হচ্ছে না। যে যার মতো বিজি। খানিকটা এসে ও থমকে গেলো। কিছুটা দূরে এক মহিলা ফোনেকথা বলছে কিন্তু উল্টোপথে আসা একটা গাড়ি উনার দিকেই এগিয়ে আসছে। কহিনুর দৌড়ে গিয়ে মহিলাটাকে টেনে নিলো নিজের দিকে। তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ। মহিলাটা দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে খাটি বাংলাতে বলে উঠলেন,
> মা তুমি ঠিক আছো?
কহিনুর ঘোমটা টেনে মাথা নাড়িয়ে হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো ও কথা বলতে পারে না। ভদ্রমহিলা বেশ অহত হলেন। কহিনুরকে আগলে নিয়ে বললেন,
> তোমার বাসা কোথায়? বাবা মা কোথায়?
কহিনুর মাথা নাড়িয়ে হাত উচু করে বুঝিয়ে দিলো ও হারিয়ে গেছে রাস্তা চিনে না। ভদ্রমহিলা বিস্মত হয়ে কহিনুরের হাত ধরে বললেন,
> চলো আমার সঙ্গে।তোমাকে ফিরতে আমি সাহায্য করবো চিন্তা করো না।
কহিনুর মাথা নাড়িয়ে রাজি হলো। আপাতত সারাদিনের জন্য একটা উপযুক্ত থাকার জায়গা আর খাবারের দরকার। রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সাঈদ নিশ্চয়ই আসবে। তাছাড়া কহিনুর নিজেই চেষ্টা করবে ফিরে যাওয়ার জন্য। ভদ্রমহিলা ওকে নিজের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
************
হাতের মুঠোয় রাখা জলন্ত আগুনের টুকরো নিয়ে বসে আছে আধার। নিজের দাদুর থেকে জানা আংশিক সত্যিটা এখন ওর মাথাতে পরিস্কার হলো। সুলতান পরিবারের উপরে আসা অভিশাপ আর কহিনুরের জন্ম বিত্তান্ত এখন ওর জানাচেনার মধ্যে। সুলতানরা বাধ্য খান পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে কিন্তু ওরা এতো দিনের ওয়াদা বেঙেছে সবটা কহিনুরের জন্য। আধার দাদুর সামনে জলন্ত কয়লাটা নামিয়ে রেখে বলল,
> দাদু বলো কিভাবে পারলো ওরা এমনটা করতে ? তুমি কিছু বলবে না?

ওয়াসিম খান নাতির কথা শুনে হাসলেন। সাদা দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন,
> খানরা অনুরোধ করতে পারেনা। ওদের জন্ম হয়েছে পৃথিবী শাসন করতে। সামান্য এইটুকুর জন্য এমন করছো? কহিনুর কে আনার ব্যবস্থা করো। ওকে লাগবে আমাদের।
আধার হাত ঝেড়ে নিয়ে প্রশ্ন করলো.,
> দাদু কহিনুরকে দিয়ে কি করবে বলবে?
> ওর র/ক্ত দিয়ে আমরা উল্লাস করবো। ওকে হ/ত্যা করলে মহা মূল্যবান কহিনুর পাথরটা আবারও আমাদের মুষ্টিমেয় হবে। যাও অপেক্ষা করো না। একদিন তোমাকে সবটা বলব। আপাতত কাজে মন দাও।
আধারের মুখটা চুপসে গেলো। কহিনুরকে ওর দরকার। কোনো জড় বস্তুর উপরে ওর লোভ নেই। মেয়েটার তেজ আর রূপের জাদুতে ও মুগ্ধ। মৃত্যু ছাড়া এই মুগ্ধতা ওর কাটার না। কথাটা ভেবে ও বেরিয়ে আসলো।
********
ঘরময় পাইচারি করছে পাথর। হোটেলে মেয়েটাকে রেখে আসা ঠিক হয়নি। যদি কিছু হয়ে যায় ভয় হচ্ছে। যেকোনো যুবক ওকে দেখে উতলা হবে নিশ্চয়ই। কথাটা ভাবতে ভাবতে ও চমকে উঠল বাইরে থেক বড়সড় একটা ধাক্কা এসেছে দরজায়। পাথর দরজা খুলেতেই ওর আন্টি হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে বললেন
> পাথর আমি একটা মেয়েকে দেখাচ্ছি। তুই একটু নিউজের ব্যবস্থা করতে পারবি? বোবা মেয়েটা কিছু চিনে না।
পাথর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
> তুমি যাও আমি দেখছি।
কথাটা বলে পাথর ওয়াশরুমে চলে গেলো। আন্টির উপর উপরে রাগ হচ্ছে। কাজকের দিনটা শুরু হয়েছে অসহায় বিপদে পড়া মেয়েদের নিয়ে শেষ হচ্ছে না। সন্ধ্যার পরে গোসল করে ও বাইরে পা বাড়িয়ে থমকে গেলো। ডাইনিং রুমের সোফায় নূর বসে আছে। পরণে বোনের স্কাট আর মাথায় ছোটখাট ঘোমটা। মেয়েটাকে যেকোনো পোশাকে এতটা সুন্দর লাগে একদম বুকে এসে লাগে কথাটা ভেবে ও বুকে হাত দিলো। বুক ধড়ফড় করছে। চোখের মুগ্ধতা কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর মিলিয়ে গেলো। যা নিজের না তা দেখে মুগ্ধ হয়ে কিসের লাভ? পাথর হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসলো। আপাতত বাড়িতে থাকার কোনো ইচ্ছা নেই। আজকের দিন ও ফার্ম হাউজে কাটিয়ে দিবে বলে পরিকল্পনা করে ফেলল। কহিনুর এই বাড়িতে এসে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিয়েছে। আপাতত পেট ঠান্ডা মানে দুনিয়ার ঠান্ডা হয়ে আছে। যা করবে ভেবে। সাঈদ ওকে খোঁজ করছে বিষয়টা বুঝতে পেরেছে ওয়াশ রুম থেকে ফিরে এসে। ছেলেটা আশেপাশেই কোথাও একটা আছে। এতোক্ষনে চলে আসার কথা থাকলেও সাঈদ আসলো ঠিক ঘন্টা খানেক পরে। তবে অদৃশ্য হয়ে না স্ব শরীরে।এসেই কহিনুরের সামনে বসে কেঁদে উঠলো। কহিনুর সবাইকে বুঝিয়ে বলল সাঈদকে ওর চেনা। যদিও ভদ্রমহিলা একের পর এক প্রশ্ন করে ছেলেটাকে প্রায় ক্লান্ত করে ছেড়েছে। বিশ্বাস করার পরে ওরা চলে যেতে চাইলো কিন্তু হলো না। উনি কিছুতেই ছাড়লেন না। বললেন দুদিন এখানে থাকতে হবে। সাঈদ অসহায় মুখ নিয়ে কহিনুরের দিকে তাকিয়ে রাজি হলো। কহিনুরও তেমন কিছু বলল না। বাবা মাকে খবর পাঠানো এখন সেকেন্ডের ব্যাপার। কহিনুর সাঈদকে নিয়ে গেষ্ট হাউজে এসে বসলো। কিছু আলাপালোচনার জন্য। কহিনুর চোখ বন্ধ করে নিলো। সারাদিন ক্লান্তিতে কাটলেও সন্ধ্যার পরে ওর শরীরে কিছু একটা ভর করে। শক্তি হাজার গুণ বেড়ে যায়। বিষয়টা নিয়ে ওর চিন্তা হচ্ছে। আজকে সিদ্ধান্ত নিলো কোনো অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারাবে না। অচেতন হওয়া চলবে না। পরিবর্তনটা শুধু রাতের জন্য না দিনের জন্যও প্রয়োজন। আজকের দিনটা না আসলে বুঝতেই পারতো না পরিবার ছাড়া এ কতটা অসহায়। এভাবে চলতে পারে না। কহিনুর জানে নিজের মধ্যে পাওয়ার আছে কিন্তু ওটা ওর নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অচেতন মনে যা ইচ্ছা করে ফেলে। এভাবে কতদিন চলবে? গতকাল কেউ ডেকেছিল সে আবারও ডাকবে নিশ্চিতই। কহিনুর এবার তাকে উচিত শিক্ষা দিয়ে আসবে ভাবলো। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের প্রথম প্রহরের সূচনা হয়েছে। কহিনুর সাঈদকে বাবা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো। এই বাড়িটা ওর কেনো জানি পছন্দ হচ্ছে না। ভদ্রমহিলা যথেষ্ট ভালো তবুও মনে খচখচ করছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ওর শরীর কেমন দুলে উঠলো। কারো চিৎকারে ওর কান ভারি হয়ে উঠলো। কে এমন চিৎকার করছে। কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারলোনা। বারবার উচ্চারণ করলো, “আমি যেতে চাই আমাকে সাহায্য করো”।
************
ফার্ম হাউজের ছাদে অচেনা একটা অবয়বের সামনে দাঁড়িয়ে আছে পাথর। সামনের ছেলেটার চোখ থেকে আগুন ধরছে মূহুর্ত্তের মধ্যে ছেলেটা নিজের শরীর পরিবর্তন করে অর্ধমানবে রুপান্তরিত হয়ে চোখের নিমিষে পাথরের উপরে থামলে পড়ে ওকে নিয়ে বাতাসে ভেসে গেলো। পাথর হতভম্ভ হয়ে চুপচাপ সবটা মেনে নিচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে ও শুধুমাত্র একা না ওর মতো আরও অনেকেই আছে। ওরাইকি তবে ওর আপন কেউ? হঠাৎ সমুদ্রের তীরে আছড়ে পড়ে ওর ধ্যান ভাঙলো। সামনে থাকা অর্ধমানবটা চিৎকার করে বলল,
>তুই সেই নরাধম যে আমাদের স্বীকারকে কেড়ে নিয়েছে? এখন তোর কি হবে?
পাথরের বিস্ময় যেনো কাটছে না। তবুও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
> কে তুমি? আর কিসের স্বীকার? আমি কিছু জানিনা।
পাথর আরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু হলো না। চার‍দিক থেকে ওর উপরে ঝাপিয়ে পড়লো অর্ধমানবের দল। রাগের বদলে ওর ভয় করছে সেহেতু ওর মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা গেলো না। কয়েকটা থাবাতে শরীরের অবস্থা খারাপ। ভাবলো এখুনি বুঝি মা/রা যাবে কিন্তু এমন কিছুই হলো না। ওকে সকলের মাঝখান থেকে তুলে নিলো। পাথরের যেনো সবটা ভ্রম লাগছে। সামনে তাঁকিয়ে ঝটকা খেয়ে পিছিয়ে আসলো। বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো, নূর তুমি? পাথরের কথাতে মেয়েটার চোখ তুলে তাকিয়ে পেছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের হাতের মুঠোয় থাকা খঞ্জরটা সামনে তুলে ধরলো। মেয়েটা কথা বলছে না তবুও অর্ধমানবেরা ভয় পেলো। এখানে থাকা ওদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। শরীর জ্বলছে। ওরা পালিয়ে যেতে চাইলো তার আগেই খঞ্জরটা একজনকে উদ্দেশ্য করে ও ছুড়ে দিয়ে পেছনে তাঁকিয়ে ভ্রু কুচকে পিছিয়ে আসলো। যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চোখের নিমিষে পালিয়ে গেলো। পাথর সেদিকে দৌড়ে গেলো যখন পেলোনা তখন পায়ের গতি আরও বাড়িয়ে দিলো। এক সময় প্রচণ্ড যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলো তবুও থামলো না। শরীর আবারও পরিবর্তন হচ্ছে। নক খসে খসে পড়ছে। পশম দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে শরীর ঢেকে যাচ্ছে। এক সময় গায়ের শার্টটা ফেটে বেরিয়ে আসলো। তারপর মেঘমুক্ত সমুদ্রের তীরে চাঁদের জোছনা শরীরে মেখে উন্মাদ এক অর্ধমানব অজানা রহস্যের সন্ধানে দৌড়ে চলল মাইলের পর মাইল। সামনে কি অপেক্ষা করছে কে জানে?

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here