#বিষ_করেছি_পান(২৬)
(কপি করা নিষেধ)
মা। তোমার লাল বেনারসী টা দিবে? যেটা তুমি বিয়েতে পড়েছিলে। আর তোমার গহনা গুলোও।
— পড়বি?
— তুলির বোনের আকদ হবে। সেখানে আমরা সব বান্ধবীরাই যাবো। বলেছে সবাই সবার মায়ের বেনারসী শাড়ি পড়বে। আমিও পড়বো। নতুন দুলাকে কনফিউশনে ফেলতে হবে।
— তুলির বোনের আকদ?কোই জানিনাতো? তা হলে আমাদের তো ফোন করতো! দাওয়াত দিতো!
— অনুষ্টান হচ্ছেনাতো।এমনি ঘরোয়া আয়োজন। আপু আমাদের খুব ভালোবাসে। তাই বাইরের বলতে শুধু আমরাই যাবো। তোলে দেবার সময় দাওয়াত দিবে।
— কখন আকদ হবে?
— কাল রাতে। মা আমি কিন্তু সেখানে থাকবো।
— একদম না। তোর বাবা মানবেনা।
— তু্লির কথা বলবে। তাহলেই মানবে। একটা রাত ই তো। সকাল সকাল চলে আসবো দেখো ।
ছুটি লাফিয়ে উঠে। রিতীকে জড়িয়ে বলে,
— আপু আমিও যাবো। আমাকেও নিয়ে যাও।
— পরের বার। এখন না।
— এখন গেলে কি হবে?
— না গেলেই বা কি হবে? আমার বান্ধবীর বোনের বিয়ে। তোর তো না।
— আপু তুমিও কিন্তু আমার বান্ধবীর ভাইয়ের বিয়ে..….
এটুকু বলেই চুপসে যায় ছুটি। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রিতী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মায়ের পিছু পিছু গিয়ে আলমারি থেকে শাড়ী বের করে আনে। সোনার গহনা গুলো রুম্পা বের করলে রিতী কিছু একটা ভেবে না করে দেয়। রেড স্টোনের বড় একটা সীতাহার বের করে নেয়। শাড়ী সীতাহার এক করে বলে,
— বাহ! বেশ ভালোই মানাবে।
রুম্পা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,
— জামাই কি করে রে? চাকরী নাকি ব্যবসা?
জামাই কিছুই করেনা। বখাটেগিরি করে ঘুরে বেড়ায়। মারামারি করে। মদ খায়। গাজা খায়। মেয়েদের অসম্মান করে। তোমার মেয়েটাকেও কলঙ্ক মাখাচ্ছে।
– কিরে? জামাই কি করে?
মায়ের ধাক্কায় ধ্যান কাটে রিতীর। মিনমিনিয়ে বলে,
— জামাই কিছুই করেনা। বাবার অনেক টাকা পয়সা সম্পত্তি আছে।
— বাবার মতই থাক। তাই বলে ছেলে কিছু করবে না? কর্ম ছাড়া ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিলে কখনো সুখ শান্তি হয়না বুঝলি? বউয়ের যে কোন কিছু প্রয়োজন হলেই বাবার কাছে গিয়ে হাত পাততে হয়। সংসারে দাম থাকেনা। দেখেশুনে গার্ডিয়ানরা কিভাবে এরকম একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে?
রিতী মনে মনে বলে, ‘ ছেলে যদি টানে মেয়ে যদি যায় তাহলে গার্ডিয়ান কি করবে মা? পারবা কিছু করতে? আজ হোক কাল হোক কাল তোমার মেয়েকে কলঙ্কিত করেই ছাড়বে। তোমরা কিছুই করতে পারবেনা। ‘
পরদিন দুপুর নাগাদ রিতী মা বাবা তমালকে বলে ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।তুলির বোনের বিয়ের কথা শুনে ছানোয়ার ও আর আটকায় না।তুলি রিতীর সব থেকে কাছের একজন বান্ধবী। দীর্ঘ বারো বছরের বন্ধুত্ব তাদের। একেবারে অন্তপ্রাণ। রুম্পা ছানোয়ার ও তুলিকে বেশ স্নেহ করে। পথিমধ্যে ছুটির সাথে দেখা হয়। স্কুল থেকে ঝিমার সাথে ফিরছে। রিতী ঝিমাকে জিজ্ঞেস করে,
–বাঁধন ভাই আজ নিতে আসেনি?
— না। ভাইয়া আজ হসপিটালে গিয়েছে সুমি আপুকে দেখতে।
— ভাবী ডাকিস না? ভাইয়ের বউ তো হয়েছে।
— নাহ। কয়দিন পর তো আর ঐ নামমাত্র সম্পর্ক থাকবেনা। শুধু শুধু ভাবী ডেকে একচুয়েলি যে আমার ভাবী হয়ে সারাজীবন থাকবে তার ঘটে অভাব ফেলতে যাবো কোন দুঃখে?
— এমনভাবে বলছিস যেনো সুমি ভাবী কোন অন্যায় করে ফেলেছে?
— উহু। অন্যায় করেনি। পূণ্য ও করেনি। বরং আমার ভাইয়ের জীবনে অভিশাপ ডেকে এনেছে।
— এভাবে বলেনা ঝিমা। এগুলো মা দাদীদের কথা।
— আমি জানি বিয়ে জীবনে বরকত ডেকে আনে। রিযিক বাড়ে। উন্নতি হয়। সুখ বয়ে আনে। কোথায় কিছুই তো হচ্ছেনা বরং তার উল্টোটা হচ্ছে। আমার ভাই দিন দিন কষ্ট পাচ্ছে,সংসারে অশান্তি হচ্ছে, অনেক অনেক টাকা খোয়া গেছে এটাকে কি বলবে? কোন কথাই আপনা আপনি উঠে আসেনা। কিছুটাতো সত্যি থাকে।
— ভাইকে যেতে দিলি কেনো? ধরে রাখতে পারলিনা?
— আমার ভাইতো নিষ্ঠুর নয়। মানবিকতা দায়িত্ত্ব কোনটাই সে অশ্বীকার করতে পারবেনা।
রিতী ছুটির দিকে তাকায়। একমনে ঠোঙা থেকে নিয়ে বাদাম চিবুচ্ছে। এদিকে কান ই দিচ্ছেনা। ঝিমার কথায় কোন প্রতিভঙ্গিও প্রকাশ পাচ্ছে না। তাহলে কি ছুটির মোহ কেটে গেলো? বাঁধন নামের পাগলামিটা থেমে গেলো? ছুটি কি বোঝদার হয়ে গেলো? ভেবেই শান্তি অনুভব করে রিতী। মুচকি হেসে ছুটিকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়। ছুটিও বাদামের ঠোঙাটা ঝিমার হাতে দিয়ে রিতীর পাঠে হাত রাখে। রিতী ছুটির কপালে চুমু দিয়ে বলে,
— যা। সাবধানে বাড়ি যা।
— পার্লার থেকে সাঝবে?
— নাহ। তুলি সাজিয়ে দিবে।
— অনেক গুলো ছবি তুলবে।
— আচ্ছা।
তুলি দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা থেকে এক শাড়ি পড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছেনা। রাগে দুঃখে শাড়ি না পড়েই বসে থাকে। রিতী এসে দেখে সারা বিছানায় তুলির শাড়ী ছড়িয়ে আছে আর মাঝখানে তুলি বসে রাগে ফুসফুস করছে। রিতীকে দেখেই বলে,
— এতোক্ষন লাগে! নে এবার আমার শাড়ি পরিয়ে দেয়। আমি কিছুতেই পড়তে পারছিনা।
— আন্টিকে বললেই তো পড়িয়ে দিতো।
— মা মায়ের কাজে আছে। বলেছিলাম বকে পাঠিয়ে দিয়েছে। তুই না চেয়েছিস মায়ের শাড়িতে ছবি তুলতে এখন তুই শাড়ি পড়িয়ে দে।
— বিছানা থেকে নেমে দাড়া। তোর সাজ কমপ্লিট হলে আমাকে হেল্প করবি।
রিতী তুলিকে শাড়ি পরিয়ে দেয়। হাত খোপা করে আসার সময় নিয়ে আসা দুটো বেলির মালা থেকে একটা পরিয়ে দেয়। তুলি আগেই সেজেছিলো। এবার রিতীকে সাজিয়ে দেয়। লাল বেনারসী, কড়া লাল লিপস্টিক, সীতাহার, খোঁপায় বেলীর মালা পড়ে দুজনকেই অন্যরকম লাগছে। যা তারা নয়। অবিবাহিত মেয়ের মাঝে বিবাহিত একটা ভাব চলে এসেছে। তুলি আয়নায় দাঁড়িয়ে বলে,
— বাহ রিতী!আমাদের তো দারুন লাগছে।
— হুম। বউ বউ লাগছে। জানিস তুলি মনটানা খুব বিয়ে বিয়ে করছে।
তুলি খিল খিল করে হাসতে থাকে। ‘ সাজন কি ঘর আয়ে..সাজন কি ঘর আয়ে..’ গাইতে গাইতে টেনে নিয়ে ছাদে চলে আসে। দুইজনে কয়েকটা সেল্ফি নিতেই তুলির বড় বোন চলে আসে। তুলি রিতীকে অনেক স্টাইলে ছবি তুলে দেয়। পুরো বিকেল দুই বান্ধবী মজা করে সন্ধ্যার আগে রিতী তুলির বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ফোন অন করতেই দেখে সোহাগের তিপ্পান্নটা
এস এম এস। রিতী দেখেনা। সোহাগকে কল দিয়ে নিজের স্থানের কথা বলে। সোহাগ দশ মিনিটের মাথায় গাড়ি নিয়ে হাজির হয়। গাড়ি আজ বাদল ড্রাইভ করছে। সোহাগের ঈদ লেগেছে। উত্তেজনায় আর গাড়ি ড্রাইভ করতে পারেনা। তাই বাদলকে ড্রাইভ করতে বলে ব্যাকসিটে বসেছে।গাড়ি থামতেই রিতী গাড়িতে উঠে বসে। সোহাগ রিতীকে দেখে বাকমূর্তি হয়ে যায়। চোখ বড় করে ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টি যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসছে। রিতী সোহাগের দিকে না তাকিয়ে সামনের ফ্রন্ট মিররে চোখ রাখে। সোহাগ ফুল স্লীভ শার্ট পড়েছে। ফর্সা গায়ে কালো গোলাপের মতো লাগছে। চুলগুলো সেট করায় মাত্রাতিরিক্ত হ্যান্ডসাম লাগছে। এমন পুরুষ কে না চায়? সবাই সৌন্দর্যের পাগল। কিন্তু ভেতরটা যে নর্দমার মতো নোংরা।সোহাগ ঢোক গিলে মৃদু স্বরে ডাকে
— পিরিতি?
— হুম?
— শাড়ী পড়ছো কেনো?
— আপনার জন্য।সুন্দর লাগছে না?
— মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এতো সুন্দর কেনো? রিয়েক্ট দিতে ভূলে গেছি। পিরিতি?
— হুম?
— তুমি কি সিউর? আসলেই! এতো সহজে? বিশ্বাস হচ্ছেনা। পিরিতি! তুমি এতো সুন্দরী!
রিতী সোহাগের দিকে তাকায়। সোহাগের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। অথচ গাবিতে এসি চলছে। রিতীর তাকানোতে সোহাগ হাঁসফাঁস করছে। মনে মনে প্রমোদ গুণে রিতী।
— ঘামছেন কেনো? আমাকে বেশী হট লাগছে বুঝি ?
সোহাগ উত্তর দেয়না। জোরে শ্বাস ফেলে রিতী।
— বিশ্বাস করুন। আমি আপনার কাছে এসেছি। মুক্ত হতে এসেছি। আমাকে না পাওয়া পর্যন্ত আপনি আমাকে ছাড়বেননা আমি অনেক আগেই বুঝে গেছি। আপনার চাওয়া পূর্ণ করে নিজেকে মুক্তি দিতে এসেছি।কি দিবেন না মুক্তি?
মৌন মুখে বাদলের দিকে তাকিয়ে আছে সোহাগ। বাদল একটু পর পর পেছন দিকে তাকাচ্ছে। মুখে লটকে রয়েছে নোংরা হাসি। রিতীকে দেখার পর থেকেই অস্থিরতা অনুভব করছে সোহাগ। কোন কিছুই তার স্বাভাবিক লাগছেনা। একটা চক্রে ক্রমশ ঢুকে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। কেনো হচ্ছে,কেনোইবা হবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। সোহাগ অল্পস্বরে রিতীকে বলে বসে,
— গা ঢেকে নাও।
রিতী আড় চোখে তাকায়। সোহাগ কি একটু বেশি ঘামছে? নাকি আগেরটুকুই আছে? মেলাতে পারেনা। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সব ঠিকঠাক। তাহলে? সোহাগ আবার বলে,
— শাড়ি ঠিকঠাক করে বসো।
রিতী আরেকদফা নিজেকে দেখে। ঠিকই তো আছে। সোহাগের কথা বিরক্ত লাগে তার। হুট করেই সোহাগ রিতীর ধারে চেপে বসে।পেছন থেকে শাড়ি টেনে কাঁধ সহ ঢেকে দেয়। রিতী চমকে তাকিয়ে থাকে। কি হলো এটা? ভাবনার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সোহাগ শান্ত গলায় বলে,
— বাদল সামনে দেখে ড্রাইভ কর। এক্সিডেন্ট যেনো না হয়।
— জি ভাই। বলে বাদল হাসিমুখে ড্রাইভ করতে থাকে। গন্তব্যে পৌঁছার আগেই গাড়ি থামাতে বলে। গাড়ি থেকে নেমে সোহাগকে ও নামায়। বাদল ও নেমে আসে। সাইনবোর্ডে ‘ কাজী অফিস’ নামটা দেখে সোহাগ রিতীর হাত টেনে ধরে।
— কোথায় যাচ্ছো? আমরা রিসোর্টে যাবো । এখানে কেনো?
— আপনার চ্যালাদের ডাকুন। কাজী অফিসে যাবো।
এবার সোহাগের বাঁধ ভেঙে যায়। রাগ উঠে যায় মাথায়। শক্ত করে রিতীর হাত ধরে ঝাঁকায়।
— এই মেয়ে? কি শুরু করেছো কি তুমি? সোজা রিসোর্টে যাবো কাজ সারবো বাড়ি চলে যাবা। কাজী অফিসে কি? বেনারসী পড়েছো, রং চঙ মেখে সেজেছো এসবের মানে কি? ঘোল খাওয়ানোর চেষ্টায় আছো? খেলা হচ্ছে না? আমাকে বল পেয়েছো?
— বিয়ে করবেন না আমায়?
— এই মেয়ে এই? তোমাকে আমি কখনো বলেছি বিয়ে করবো? কিসের বিয়ে? শোনো একদম ফাঁসানোর চেষ্টা করবেনা আমাকে। চলো।
— যাবোনা আমি। আমাকে বিয়ে করবেন আপনি। আজ এক্ষুনি। সাক্ষী হবে আপনার চ্যালা ফ্যালারা।
— আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা। বিয়ে করার কথাটা আসছে কোই থেকে?
— আমি চেয়েছি তাই আসছে। আপনার মনের শান্তির জন্য আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। আমার নিজের পবিত্রতা রক্ষার্থে আপনি আমাকে বিয়ে করবেন। তারপর আপনার সাথে আমি রিসোর্টে যাবো। তার আগে নয়।
— পিরিতি জেদ করেনা।
— জেদ না। এটা আমার চাওয়া। ভয় পাবেন না। আপনার মতো খারাপ লোকের সাথে আমি কখনোই সংসার করবোনা। আর এই বিয়ে কেউ জানবেনা।আমি সব সময় চেয়ে এসেছি যে ব্যক্তি প্রথম আমার পানিগ্ৰহণ করবে সে একমাত্র আমার স্বামীই হবে। সংসার না করলেও বাসরটাতো হবে। আপনার চাওয়ার মূল্য দিতে পারি আমার চাওয়ার কি কোনো মূল্য হবে না?
— খবরদার আমাকে ভুলানোর চেষ্টা করবেনা।
— বিয়েটা করুন নয়তো আমি আজ এখান থেকে যাবোনা।বউ সেজেই বেরিয়েছি। আপনি বিয়ে না করলে অন্য কাউকে বিয়ে করে চলে যাবো। আমাকে কেউ রিজেক্ট করবেনা। ভেবে দেখুন।
— দেখ পিরিতি মাথা খারাপ করবিনা। আমি তোর সাথে রাত কাটাতে আসছি। বিয়ে করতে না।
— আমিও তাই করতে আসছি। বিয়েটাও করতে হবে। নয়তো আপনার চ্যালাদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করে নিবো।তারপর আপনার চোখ ফাঁকি দিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো। আপনার খবর ওদের জানা আছে। আপনি আমাকে খুঁজেও পাবেন না। ওরা নিশ্চয় আমাকে অসম্মান করবেনা।
— দূর শালি একটা কথা কবিনা। জাহান্নামে যা।তোরে আমি বিয়া করমুনা।
বাদলের হাত থেকে গাড়ির চাবি কেড়ে গাড়ি নিয়ে রাগের মাথায় সোহাগ চলে যায়। রিতী হাত ঘড়ির দিকে তাকায়। সন্ধ্যা সাতটা পয়ত্রিশঁ। কাজীর সামনে গিয়ে বসে। কাজী জিজ্ঞেস করে,
— কনে আপনি।বর কে?
রিতী পেছনে তাকায়। একসাথে দাঁড়িয়ে আছে সোহাগের ছয়জন চ্যালা। চোখ মুখ লোভে চকচক করছে। এতোক্ষন সোহাগ রিতীর সব কথাই শুনেছে। রিতী নিশ্চয় এখন তাদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করতে বলবে। রিতীকে চোখ দিয়ে দুজন ইশারাও দিয়ে দিলো। রিতীর প্রায় কান্না চলে এলো। এ কাদের মধ্যে ফেসে গেলো? শেষ রক্ষা আল্লাহ করবেনা তার? ভীষন অসহায়ত্ব বোধ করতে লাগলো। মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলো। ভেবেছিলো এদের কথা বললে সোহাগ তাকে বিয়ে করবে। সে তো না করেই চলে গেলো। এখন রিতী ফিরতে চাইলেও কি পারবে? এই লোভাতুর দৃষ্টি কি তাকে আড়াল করতে চাইবে? বুক কেঁপে উঠে রিতীর। ধলা দৌড়ে রিতীর পাশে এসে বসে পড়ে। রিতীর হাতখানা খপ করে ধরে বলে,
— রিতী আমি তোমাকে ভীষণ পছন্দ করি। তোমাকে আমি বিয়ে করবো। তারপর শহর ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো।কাউকে দেবোনা তোমাকে। আজীবন সংসার করবো। প্রমিজ। কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান।
রিতীর মাথা ঘুরিয়ে উঠে। হাতটা টেনে ছাড়িয়ে নিতে গেলে ধলা আরো জোড়ে ধরে রাখে। বাদল এসে বলে,
— রিতী তোমার মতো একটা সুন্দর মেয়েকে ধলার মতো আবাল ছেলে বিয়ে করতে পারেনা। আমার দিকে তাকাও। কতটা সুদর্শন পুরুষ তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
পেছন থেকে বলে উঠে,
— তোর থেকে আমরা দেখতে ভালো আছি। তোর বাপের তো কিছু নাই। আমার বাপের বড় রাইস মিল আছে।
এক পর্যায়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া শুরু হয়। হাতাহাতি পর্যায়ে চলে যায়। রিতীর শরীরটা ভীষণ দুর্বল লাগে। দুহাতে মাথা চেপে টেবিলের উপর ঘাড় এলিয়ে দেয়। কাজী চিৎকার করে উঠে,
— ঝগড়া থামান। আপনারা আসল বরকে ফোন দিন কনে সেন্সলেস হয়ে গেছে।
ফোন দেওয়া হয় সোহাগের নাম্বারে। সব থেকে ছোট চ্যালাটা বলে,
— ভাই আপনার পিরিতীকে বিয়ে করা নিয়ে ওঁদের মারামারি লেগেছে। ধলা বাদল কেউই ছাড়বেনা আপনার পিরিতিকে।
চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা ~