#বিষ_করেছি_পান(২৮)
(কপি করা নিষেধ)
হসপিটালে এসে বাদলদের ইচ্ছামতো পেটাতে থাকে সোহাগ। ধলা গোঙাতে গোঙাতে মা চেপে ধরে। সোহাগ থুতনি চেপে ধরে মুখের সামনে আনে।
— তোদের বলেছিলাম আমার পিরিতি কে বিয়ে করতে চাইতে? বলেছিলাম আমি? কেনো পারাপারি করলি? বিয়ের চুলকানি উঠেছে তোদের না? চুলকানি ছাড়াচ্ছি তোদের।
মাথাটা ধরে বাদলের মাথার সাথে বারি মারে। বেচারাদের অবস্থা এমনিতেই খারাপ সোহাগ এসে আরো খারাপ করে দেয়। কেউ কিছু বলতে পারছেনা। দোষটা যে তাদের সেটা হারে হারে বুঝতে পারছে। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ এদিকে আসার সাহস পাচ্ছেনা। সোহাগকে হারে হারে চেনে। এর আগেও অনেকবার মারামারি করে রোগী ভর্তি করিয়ে গেছে সোহাগ। এটা নতুন নয়। তবে হসপিটালে ভেতরে এসে মারামারি এই নতুন। বাদল বলে,
— ভাই মাফ করে দেন। আমরা না বুঝে একাজ করে ফেলেছি।
— চুপ শালা ফকিরের পুত। তোদের জন্য আজকে আমার এই অবস্থা। তোরাই দায়ী।
— কি করবো ভাই? বড্ড লোভ লাগছিলো সুন্দরীকে দেখে।
— শালা তোর জিহবাই আর রাখবোনা আমি। কুত্তাগিরি ছুটাবো আজকে তোর।
মুখের ভেতর হাত চালান করে জিহবা ধরে মোচর দিতেই বাদল বীভৎস চিৎকার করে উঠে। ব্যথায় মুখটা অন্ধকার হয়ে তৎক্ষনাৎ মুর্ছা যায়। সোহাগ এতোটা ভংঙ্কর রুপ আজ অব্দি প্রকাশ করেনি যে যাদের ভাই বলে বুকে টেনে নেয় তাদের উপর পাষন্ডের মতো আচরণ করছে। উপায় না পেয়ে হসপিটালের মালিক সোহাগের বাবাকে ইনফর্ম করতে বলে। সবকিছু শোনে রমিজউদ্দিন অফিস ফেলে হসপিটালে চলে আসে। রমিজউদ্দিন হসপিটাল কর্তৃপক্ষের কাছে মাফ চেয়ে নেয়। ছেলে পুলেদের চিকিৎসা করতে বলে শক্ত হাতে সোহাগকে নিয়ে বেরিয়ে আসে। বাড়িতে এনে সোহাগকে জিজ্ঞেস করে,
— কি সমস্যা? কি করেছে তোমার ছেলেপুলেরা? কেনো মারছো তাদের?
— ওরা অন্যায় করেছে আব্বা।
— কি অন্যায় করছে সেটাইতো জানতে চাইছি। বলো কি করেছে?
— আমি বলতে পারবোনা আব্বা।
— কেনো পারবেনা? তুমি কি আমার মান সম্মান কিছু রাখবেনা? যাদের নিয়ে তোমার শক্তি তাদের তুমি এভাবে প্রহার করো।এরা তোমার থেকে চলে গেলে তোমার জন্য আমার নতুন বডিগার্ড আনতে হবে। কে জানে তারা তোমার ক্ষতি কামনা করবেনা? তুমি যেভাবে সব জায়গায় গুন্ডামি করে বেড়াও তুমি কখনোই একা চলতে পারবেনা ।
সোহাগের রাগ হয়। নিজের উপরেই রাগ হয়। উত্তর দিতে ইচ্ছে করে,আব্বা এই ভালোমানুষেরপোরাই যে আমার কত বড় ক্ষতি করতে চাইছিলো আপনি জানেন না। আমার নিঃশ্বাস টাইনা ছিঁড়তে চাইছিলো। আমার পিরিতিরে নিয়া আমার নাকের ডগার উপর দিয়ে ভ্যানিস হতে চাইছিলো। আমার অশান্তি বাড়াতে চায় এরা। কিন্তু মুখ থেকে এর একটা কথাও বের করতে পারেনা। তেজ নিয়ে বলে,
— আমার কাউরে লাগবোনা। আপনের পোলা একাই একশ আব্বা।
রিতী ঘুম থেকে উঠে বারোটা নাগাদ। চোখ খুলেই রুম্পার কথা কানে আসে। ছুটিকে তাড়া দিচ্ছে,
— তোর আপুকে উঠতে বল। আর কতো ঘুমাবে? খেয়ে আবার ঘুমাক। নিশ্চয় সারারাত ঘুমাই নাই। বান্ধবীরা সব একজায়গায় হয়েছিলো না? ঘুমাবে কি করে?
— তুমি যাও মা। আমি ডাকতেছি।
রুম্পা চলে যেতেই রিতী উঠে বসে। আশপাশ চোখ বুলিয়ে নিজেকে পরখ করে নেয়। ছুটির দিকে প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে থাকে। ছুটি উঠে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসে। রিতীর সামনে বসে বলে,
— তুমি কি বিয়ে করে এসেছো আপু? সোহাগ ভাইকে?
ছুটির প্রশ্নে রিতী অন্যদিকে তাকায়। ছুটি নিজে থেকেই বলে,
— ভোরে তোমাকে সোহাগ ভাই দিয়ে গিয়েছে। আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম কিছুটা। আমার ধারণাই সত্যি তবে? এবার আমি সোহাগ ভাইকে কি ডাকবো আপু?
— দুলাভাই ডাকবি।
— আমার কতগুলো টাকা লস হয়ে গেলো আপু। ভীষণ মন খারাপ করছে। তোমাদের আমি আবার বিয়ে দিবো।
— আর কোন বিয়ে হবেনা। সব শেষ হয়ে গেছে।
— কিভাবে হলো? তোমাদের তো বাসর এখনো হয়নি আপু। তোমার শাড়ি ব্লাউজ একদম ঠিকঠাক পড়া ছিলো।
ছুটির কথায় রিতী বিরক্তি প্রকাশ করে।
— ছুটি যাতো। ভালো লাগছে না এখন আমার।
— বিয়েটা কেনো করলে আপু?
— তোর জন্য করলাম। তোর তো খুব পছন্দ সোহাগকে। আর সোহাগ ও দেখলাম তোকে খুবই স্নেহ করে। এইরকম ভাবে কেউ করবে কিনা জানিনা। আর আমার জন্য তোর যেনো কোন ক্ষতি না করার চেষ্টা করে সেজন্য করে নিলাম। এখন এখান থেকে যা।
ছুটির চোখ চকচক করে উঠে। খুশিতে বাকবাকুম হয়ে বলে,
— ব্ল্যাকমেইল? ব্ল্যাকমেইল করে তোমাকে বিয়ে করেছে তাইনা? আপু!! তুমি কি বোকা! দুলাভাই কখনোই আমার কিছু করবেনা। মাঝে মাঝে আমি অনুভব করি দুলাভাই তোমার থেকেও আমাকে বেশী ভালোবাসে।
— তোর দুলাভাই কোনদিন কাউকে ভালোবাসবে না।
— কে বললো?এইযে তোমাকে এতো যত্ন করে এনে শুইয়ে দিয়ে গেলো তোমাকে একদম বাজে ভাবে টাচ করলোনা ভালোনাবাসলে কি এমন করতো?
— সেতো ভয় দেখিয়েছি জন্য। তবে দেখিস এবার ঠিক আমার পায়ে পা রাখবেনা।
কথাটা সত্যি হয়ে যায়। সোহাগ সত্যি সত্যি আর রিতীর ধারে কাছে আসেনা। ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করলেও আগের থেকে বেশ কম। রিতী সেদিকে কান মুখ নাড়ায় না। নিজের ভেতরের অস্থিরতাও অনুভব করেনা। ভীষণ শান্তি লাগে। লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী হয়ে পড়ে। হোস্টেলে না গিয়ে বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করে।এরিমধ্যে রিতীর রেজাল্ট দেয়। গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। ছানোয়ারের খুশি যেনো আর ধরেনা। যদি সামর্থ্য থাকতো মেয়েকে আকাশের চাঁদ টাও যেনো এনে দিতো। পুরো কলোনিতে মিস্টি বিতরণ করা হয়েছে। ঈদ লেগেছে। ছুটি জমানো টাকায় রিতীকে একটা কুর্তি কিনে দিয়েছে। ছানোয়ার রিতীর লেখাপড়ার কড়া নজরদারি করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। এবার মেয়েকে ঢাবিতে দেখতে চান।
রিতীর রেজাল্টের খবরটা সোহাগের কানে ঠিক চলে যায়। খবরটা দেয় রিতীর কলেজের প্রফেসর। ঢেকে নিয়ে বলে,
— তোমার গার্লফ্রেন্ড তো গোল্ডেন পেয়েছে। আর তুমি তো পাসটাই দিতে পারলেনা। একেই বলে কপাল। বাদরের গলায় মুক্তোর মালা।
সোহাগের রাগ হয় প্রচুর। তবে রিতীর রেজাল্ট শুনে ভালো লাগছে। টেস্টের রেজাল্ট পেয়ে মেয়েটা কি কান্নাইনা করেছে। এখন নিশ্চয় অনেক খুশি হয়েছে। সোহাগ ভাবে কিছু একটা দেওয়া উচিত মেয়েটাকে। ছুটির স্কুলে গিয়ে ছুটির জন্য অপেক্ষা করে। ছুটিকে ডাক দেয়। ছুটি এতো দিন পরে সোহাগকে দেখে চোখ আকাশে উঠে । ঝিমাকে রেখেই ছুটি দৌড় দেয়। সোহাগের দিকে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে। কোথায় ছিলেন? কেনো আসেননি? দেখা কেনো দাওনি? আরো অনেক প্রশ্ন। সোহাগ হাত তুলে ছুটিকে থামিয়ে দেয়। ছুটি থামে। তবুও ছলছল চোখ করে অভিযোগ টা করেই বসে,– আপনি আমার অনেকগুলো লস করিয়ে দিয়েছেন দুলাভাই।
দুলাভাই!! ডাকটা যেনো সোহাগের মগজে গিয়ে লাগে। ছুটিকি সব জানে? প্রশস্ত হাসে সোহাগ। হাতের গোলাপের তোড়াটি ছুটির দিকে বাড়িয়ে দেয়।
— তোমার আপুকে দিবে। ভালো রেজাল্টের জন্য ছোট্ট গিফট।
— আপু কি নিবে?
— নিবে।
— কেনো নিবে?
— গিফট যে কেউ দিতে পারে। অতি ঘৃণিত ব্যক্তির গিফটও সবাই ছুঁয়ে দেয়।
— আপু আপনাকে ঘৃণা করে?
— করে। তোমার আপু সবসময় আমার দিকে ঘৃণার চোখে তাকায়।
— আপনি কি ভালোবাসার চোখে তাকান?
— আমি তোমার আপুকে ভালোবাসিনা। তোমার আপুর প্রতি আমার মোহ কাজ করে। তুমি বুঝবেনা।
— আমি সব বুঝি। বিয়েটাতো হয়েছে। আপুর সাথে সব ঠিকঠাক করে সংসার কেনো করছেন না?
— ছোটদের এতো বড় বড় প্রশ্ন করতে নেই।
— এটা আমার নয় প্রশ্নটা আপুর।
— পিরিতি প্রশ্ন করেছে?
সোহাগ একটু অবাক হয়। ছুটি উপর নিচ মাথা নাড়ায়।
— হ্যা। ছুটি মিথ্যা বললো। প্রশ্নটা আসলে তার। রিতী সোহাগকে নিয়ে কখনো কোনো প্রশ্নই রাখেনি। সোহাগ থমথমে গলায় উত্তর দেয়,
— আমি তোমার আপুর হাজবেন্ড হবার যোগ্য না।
— আপুর পার্টনার হবার যোগ্য?
— দুইটা দুই জিনিস ছুটি। গার্লফ্রেন্ড অথবা পার্টনার সবাই হতে পারে। হাজব্যান্ড সবাই হতে পারেনা। হাজব্যান্ড হতে হলে অনন্ত এক শেড উপরে যোগ্যতা থাকতে হয় । আমি তোমার আপুর একশেড নিচেও নেই। গোড়াতেও ভিরতে পারিনা। তোমার আপুর জীবন আমার সাথে নয়। ফুলগুলো আর উত্তরগুলো দিয়ে দিও।
— ছুটি ফাও ফাও কোন কাজ করেনা।
— কি কি লস হয়েছে লিস্ট করে রাখবে। আমি সব পুড়িয়ে দিবো। একমাত্র শালিকার ব্যাপার বলে কথা!
সোহাগ পকেট থেকে পাঁচশ টাকার নোট বের করে ছুটির হাতে ধরিয়ে দেয়। ছুটিতো টাকাটা পেয়ে খুশিতে পাগল প্রায়। রিতীকে গিফট দিতে গিয়ে ছয়শ টাকা তার পকেট থেকে গেছে।এখন পেলো পাঁচশ টাকা। আরো একশ টাকা বাকি আছে। সেটা অন্যসময় ছুটি ঠিকই তুলে নিবে। এই পাঁচশ টাকা আজি পার্সোনাল ব্যাংকে ফেলবে বলে ঠিক করে। সোহাগ ছুটিকে রিকশা ঠিক করে দেয়। ছুটি ঝিমার উদ্দ্যেশে পেছন দিকে তাকায়। বাঁধন এসেছে। এতোক্ষণ ছুটির দিকেই তাকিয়ে ছিলো। ছুটি তাকাতেই ঝিমাকে নিয়ে বাইক ছোটায়।
ছুটি ফুলের তোড়া খানা রিতীর বিছানার উপর রাখে। একটা চিরকুট ও রেখে দেয়। যাতে লেখা
” For you Bou”
রিতী তোড়া খানা পেয়ে চিরকুট টা পড়ে। ছুটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
— সোহাগ দিয়েছে?
— না। দুলাভাই দিয়েছে।
— ফুল কেনো দিলো? কিছু বলেছে?
— বলেছে। দুলাভাই তোমাকে ভালোবাসে না। তবে মোহে পড়েছে। তোমার যোগ্য নয় তাই তোমার সাথে সংসার করবেনা।
— গাধাটার তাহলে বুদ্ধি খুলেছে?
— একটু একটু।
রিতী হাসে। ফুলগুলোর পাপড়ি ছিঁড়ে ওড়নার আঁচলে তুলে নেয়। আজ সে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে গোসল করবে। ফ্রিতে পাওয়া গোলাপগুলো কেনো নষ্ট করবে? দুধ হলে ভালো হতো। কিন্তু মা দিবে না উল্টো বাজারের দুধের দাম তুলে চেঁচামেচি করবে। সুন্দর হওয়া আবশ্যক।
আমি গতকাল গল্প দিতে পারিনি কারণ আমার হাতে ফোন বেবীটা ছিলোনা। তাই আগামীকাল আরেকটা পর্ব দিবো তবুও তোমরা মনখারাপ করে থেকোনা।
চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা~