বিষ_করেছি_পান(২৯)

0
399

#বিষ_করেছি_পান(২৯)

(কপি করা নিষেধ)
ফ্লোরে পা ছড়িয়ে বসে বীনা আহাজারি করছেন। তার গলার আওয়াজ আশেপাশের প্রত্যেকটা বাড়ি থেকে শোনা যাচ্ছে। ঝিমা পাশে বসে বীনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কাঁধে চেপে ধরে সান্তনা দিচ্ছে।
— মা চুপ করো। কান্না থামাও। এভাবে কান্না করলে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে।
— ওরে কি করবোরে… আমি মরে গেলেই বা তোর বাপ-ভাইয়ের কি এসে যায়? তোর ভাই তার বউকে ছাড়বেনা তোর বাপ তোর ভাইকে কিছু বলবেনা। মাঝখান দিয়ে আমার এতো বছরের সাজানো সংসার সব শেষ হয়ে যাবে। ওরে আমার এতোবছরের পরিশ্রমের কোনো মূল্য নেই। আমাকে কেউ দাম দেয়না। আমার বেঁচে থেকে কি হবে?
— মা প্লিজ তুমি থামো। ভাইয়া তোমার সব কথা শুনবে। তুমি একটু শান্ত হও।
— শুনবেনা। দেখলিনা একটু আগে কি বলে গেলো?ওরে মা কি কখনো সন্তানের খারাপ চাইতে পারে? কেনো বুঝিসনা তোরা তোদের মাকে? আমি যা করি সব তোদের ভালোর জন্যই করি।

বাঁধনের আর ভালো লাগছেনা। দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে যায়। একটু আগে বীনাকে মোক্ষম এক জবাব দিয়েছে। আজ সুমির জায়গায় নিজের মেয়েকে বসিয়ে দেখুক কেমন কষ্ট লাগে? সব সময় নীজের স্বার্থটা দেখা উচিত নয়। ডিভোর্স যদি করতেই হয় তাহলে সুমির সুস্থ হবার অপেক্ষা করতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় একটা মেয়ের বীনা অনুমতিতে কখনোই কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা উচিত নয়। আর এটাতো দুটো জীবন নিয়ে খেলা করা হয়ে যায়। ঝিমাটাও আজকাল বাঁধনের বিরুদ্ধে চলে গেছে। বাঁধনের এসব আর ভালো লাগেনা। বাঁধনকে যদি কেউ সাপোর্ট করে সে হলো ছুটি। ছুটি চায়না বাঁধনের সাথে সুমির ডিভোর্স হোক। বাঁধন মনে মনে ভাবলো, ছুটিটা হয়তো পরিস্থিতি বুঝে। তবে সে নিজের দিকেই সব থেকে বোকামোটা করছে। এরজন্য তাকে পস্তাতে হবে। তবে বাঁধন এই ছোট মেয়েটার পাশে থাকবে।

আধঘন্টা হয়ে যায় বীনার বিলাপ এখনো থামেনা। বাঁধন সহ্য করতে না পেরে মায়ের কাছে যায়। বীনা ছেলেকে আগলে নিয়ে বলে,
— বাবা আমি দোষী। আমি তোর জীবনে এই বিপদ ডেকে এনেছি। আমিই তোকে রক্ষা করবো। তোদের ডিভোর্স করাবো।
— আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি মা। কিন্তু এভাবেতো হয়না। সুমির সাথে আমার কথা বলতে হবে।
— যেখানে আমি আছি সেখানে তুই কেনো? মায়ের উপর ভরসা করে যখন বিয়েটা করেছিস তখন মায়ের উপর আরেকটু ভরসা রাখ। তুই তো আর প্রেম করে বিয়েটা করিসনি।
— হয়তো তা করিনি। বাট আমার কিছু দায়িত্ব আছে মা।
— যতদিন বিয়েটা আছে ততোদিন দায়িত্ব। বিয়েটা শেষ দায়িত্ত্বোও শেষ।
— আমাকে ভাবতে দাও মা।
— বাবা তুই এরপর যাকে ইচ্ছা তাকে বউ করে আন আমি কিচ্ছু বলবোনা। বস্তি থেকে একটা অশিক্ষিত মেয়েকেও যদি তুলে আনিস আমি হাসি মুখে বরণ করে নিবো। মেয়ের মতো আগলে রাখবো। তোর পছন্দের গুরুত্ব দিবো। তবু কোন অপারগ মেয়ের হাতে আমার পরিবারের ভবিষ্যত তুলে দিতে পারবোনা। তুই আমার একটা মাত্র ই কলিজার টুকরাই আব্বা।
মায়ের ছলছল চোখ দেখে বাঁধনের প্রচুর কষ্ট হয়। তৎক্ষণাৎ সামনে থেকে উঠে যায়।

বিকালে সব ছেলেমেয়েদের নিয়ে মাঠে নামে বাঁধন। ব্যাটিং করছে শিপ্রু। আর বল করছে বাঁধন। ঘন্টা খানেক খেলার পর খেলা ছেড়ে দেয় বাঁধন। শরীর এখনো ঠিক হয়নি। তবে এভাবেই আগের মতো শক্ত সামর্থ্য হতে হবে। নিজের মনের ছোট ছোট কথা বাঁধন এই ছেলেমেয়েগুলোর সাথে শেয়ার করে। বড়দের তুলনায় এরা বিশ্বস্ত। কখনো পাঁচকান করে না। রতন বলে,
— বাধন ভাই কি জানি বলবে ন?
— হুম। মা বলছে সুমির সাথে ডিভোর্স করিয়ে দিবে। আমি কি এগোবো? তোদের মাথা কি বলে?
— আমাদের মাথা তো ভালোই বলে। নতুন আরেকটা বিয়ে খেতে পারবো। এবার চারদিন আগে থেকেই ছুটির খাদ্য তালিকা আমাদের হাতে থাকবে। বাথরুমে দৌড়ানো নট এলাউড।
বাধন হাসে। বলটা ছুঁড়ে মারে।
— সব বদমাইশের দল।
— আব্বার জিগাই?!!!
— ভাব কম নে।
মিলি বলে,
— বাঁধন ভাই যা চাইবে তাই হবে। বাঁধন ভাইয়ের খুশিই আমাদের খুশি।
ছুটি ঝিমার গলা ধরে ঝুলতে ঝুলতে বলে,
— নিজের মন যা বলে তাই করা উচিত। আমরা আমাদের বাঁধন ভাইকে খুব ভালোবাসি।
বাঁধন আবার হাসে। ছুটির মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
— কিরে সয়াবিন তেল হয়ে গেলি?
— সবার মতামত চাওয়া হয়েছে। আমারটাতো একা চাওয়া হয়নি।
— একা চাওয়া হলে কি বলতি?
— সুমি মেয়েটা প্রেজেন্ট থাক
বাকি সব চুলোয় যাক।
যদি বাঁধন আবার বিয়ে করে
কারো গুহার মোমের বাতি নিভে যাবে।
এর সারাংশ যে জানে
সে আধারদিন চুপ রবে।
— বাহ ছুটি তুইতো ভালো ছন্দ তৈরী করিস।
— আমি আরো ছন্দ তৈরী করেছি। সেগুলো আরো সুন্দর। তবে সেটা শুধু পাঠকরাই জানে।
— আমাদেরো জানা।
— সেই সুযোগ মনে হয় এই জীবনে আর হবেনা।
ছুটির ছন্দময় কথার ধরনে সবাই খিল খিলিয়ে হাসে। শুধু একমাত্র ঝিমাই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। একটার সাথে আরেকটা মেলাতে থাকে। সুমি মেয়েটা প্রেজেন্ট থাক! বাকি সব চুলোয় যাক?কেনো?কিসের জন্য? ছুটিতো বেশ বুদ্ধিমান। তাহলে কেনো চাইছে এই জীবন্ত লাশটাকে নিয়ে তার ভাই সংসারহীন থাক? ছুটিকে একা পেয়েই ঝিমা চেপে ধরে। ছুটি একটু থ খেলেও নিজেকে সামলে নেয়। জোর করে একটু হাসে। ঝিমাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
— দেখ ঝিমা তুই আমাকে না বুঝে অভিযোগ করিস না। তুই আমার প্রাণের দোস্ত। তোর কোন ক্ষতি হোক আমি চাইনা।
— এখানে ভাইয়ার ক্ষতির কথা আসছে আমার না।
ঝিমার তেজ দেখে ছুটি দমে যায়। কিন্তু ঝিমাকে বুঝাতে হবে ভেবে শ্বাস ছেড়ে আবার বলতে থাকে।
— দেখ ঝিমা বাঁধন ভাইয়ের বিয়ের আগেই তুই একটু একটু ডেমো দেখে নিয়েছিস যে ভাইয়ের বউ ননদদের গুরুত্ব না দিলে কেমন হতে থাকে। তুই কষ্ট পেয়েছিস অনেক ক্ষেত্রে এতে আমি সাক্ষী আছি। এই বিয়েতেতো বাঁধন ভাইয়ের দিক থেকে হচ্ছিলোনা হচ্ছিলো পরিবারের দিক থেকে। কিন্তু এখন হবে বাঁধন ভাইয়ের দিক থেকে। যে তোর ভাবী হবে তার আঁচলে বাঁধন ভাই গিট্টু দেওয়া থাকবে। ভাইকে সারাজীবনের জন্য হারাবি। বাবা মাও কিছু বলবেনা। তার উপর যদি তোকে নিয়ে ভাবী একটু হেত ক্যাত করে তারপর দেখবি তোর দুঃখের শেষ থাকবেনা। তুই সবে ক্লাস টেন। তোর এই বাড়ি ছাড়তে অনেক সময়। ততোদিন না পরিবারের অবহেলায় তুই কোনদিক থেকে পিছিয়ে যাস।
কিন্তু মনে মনে বলে, আমি চাইনা বাঁধন ভাই আবার বিয়ে করুক। নিজের চোখে সেই সংসার আমি দেখতে পারবোনা। যতদিন না দূরে চলে যাচ্ছি ততোদিন বাঁধন ভাই আমাদের হয়েই থাকুক। একটা দিন যে নিশ্বাস বন্ধ করা যন্ত্রনায় ছটফট করেছি আমি প্রতিদিন সেই যন্ত্রনা সহ্য করতে পারবোনা। আমি মোটেই স্বার্থপর নই। তবে আমি আমার জন্য বাঁচি। অন্য কারো জন্য নয়।

ঝিমা ছুটির কথায় ভাবুক হয়ে পরে। সত্যিই তো বলেছে। মায়ের যা ভাষ্য তাতে ভাবী এলে মা সংসার ভাবীর হাতে তুলে দিয়ে শেষ বয়সের আরামে নিজেকে সপে দিবে। গার্ডিয়ান হবে ভাই ভাবী। ভাবী যা বলবে তাই। ভাবী যদি নিজের মানুষ না হয়ে উঠতে পারে তাহলে সত্যিই কষ্টের সীমা থাকবেনা। তাই বলে ভাইকে এভাবে সিঙ্গেল রাখাও যাবেনা। আহত মন নিয়ে ঝিমা সগোক্তি করে,
— এরজন্যেই আজকালকার মেয়েরা বান্ধবীকে ভাইয়ের বউ বানানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে।
ছুটি কৌতুক করে বলে,
— তো আমাকে তোর ভাবী বানিয়ে নে না।
ঝিমা ছুটির দিকে তাকাতেই ছুটি খিলখিল করে হেসে উঠে। ঝিমা যেতে যেতে বলে,
— দাড়া ভাইয়াকে বলছি আমি।
ছুটি পেছন পেছন দৌড় দেয়। ঝিমাকে টেনে ধরে বলে,
— একদম না। আমিতো মজা করেছি। এটা শুনলে ভাইয়া তোর গাল দুইটা এখনি লাল করে দিবে।
— দোষ করিস তুই মার খাই আমি।ভাইয়া কখনোই তোকে মারে না। তোর ভাগের গুলো আমার গালেই পড়ে।
— আর তুই সহ্য করে নিস। এই না হলে আমার পেয়ারের বান্ধবী!
ছুটি ঝিমা গাল টেনে দেয়। দুই বান্ধবী একসাথে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে ঝিমার চোখে জল চলে আসে। মনে মনে বলে,
— আমার ভাবী তুই যদি হতে পারতিস আমি হতাম এ পৃথিবীর সব থেকে সুখী একজন। আমরা যা চাই তা পাইনা। যা পাইনা তাই চেয়ে বসে থাকি।

বাঁধনের আর ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছে না। মাকে জানায় সে ইন্টারভিউ দিবে নতুন চাকরির জন্য। বীনাও দেখে হ্যা এতে ভালোই হবে। ঘরে বসে বসে মনের উপর আরো চাপ পড়ে। নানান রকম চিন্তা ভাবনা এসে ভর করে। এর থেকে আগের ডেইলি লাইফে চলে যাক। বাঁধন কয়েকটা কোম্পানিতে এপ্লিকেশন করে। দুইদিন পরেই একটা কোম্পানি থেকে ডাকা হয়েছে ইন্টারভিউ এর জন্য। সকাল সকাল রেডি হয়ে মাকে বলে ইন্টারভিউ দিতে বেরিয়ে পড়ে। গলিতে যেতেই মুখোমুখি হয় রিতী আর ছুটির। বাঁধন রিতীর গেটাপ দেখে বলে,
— রিতী কোথাও যাচ্ছিস ?
— কোচিং এ যাই।
— আমিও সেদিকে যাচ্ছি। চল।
— নিউ জব?
— নারে ইন্টারভিউ।
ছুটি রিতীর পেছন থেকে বলে,
— অল দ্যা বেস্ট।
বাঁধন হাসে।
— থ্যাংক ইউ। দোয়া করিস।
বাঁধন রিতীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। যাবার পথে মোড়ের দোকানে কি মনে করে উঁকি দেয়। সোহাগ বাইকের উপরে বসা। হাতে চায়ের কাপ। এক দৃষ্টিতে এদিকেই তাকিয়ে আছে। বাসে উঠে বাঁধন রিতীকে বলে,
— ছুটির খেয়াল রাখিস।
রিতী চমকায়।
— কি হয়েছে?
— টিনেজ চলছে। এবয়সে কত কি হয়! মনের ছটফটানো বলিশ আবার আশেপাশের নজর বলিস। কতদিক থেকে কত ফাঁদ তৈরী হয়! সাবধানে রাখিস। গতিধারা খেয়াল করিস। বয়সটাই খারাপ। কতদদিকে চোখ যায়!
রিতী বাঁধনের কথা আংশিক বুঝেছে। তবে ছুটি কি কোন আচরণ করেছে যে বাঁধন তাকে বলছে? ছুটির গতিধারা যদি কোনভাবে বাঁধন ভাই টের পেয়ে যায় তাহলে তো সর্বনাশ! বাঁধন ভাই মেরে একপাশে ফেলে রাখবে। বাবা মার কানে এই অবুঝ পাগলামির কথা কানে গেলে আর বাঁচা যাবেনা। একেতো তাকে নিয়ে বাবা মা এতো চিন্তায় থাকে তার উপর ছুটির এই বয়সে এতো বড় কান্ড! বাঁধন ভাইয়ের একটা রিয়েক্টে কলোনিতে মুখ রাখার জায়গা থাকবেনা। নানান চিন্তায় রিতীর সোহাগের কথা মনে পড়ে। সে যে সোহাগকে বিয়ে করেছে একথা ক্ষুনাক্ষরেও কেউ জেনে গেলে কি হবে ভেবেই রিতী থরথরিয়ে কেঁপে উঠে।

আমার পেইজে প্রব্লেম হচ্ছে 🥺। রিচ একদম কমে যাচ্ছে। প্লিজ বেশি বেশি শেয়ার কমেন্ট করে রিচ বাড়াতে সাহায্য করুন।
চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here