বিষ_করেছি_পান(৩২)

0
422

#বিষ_করেছি_পান(৩২)

(কপি করা নিষেধ)
রমিজউদ্দিন চেঁচামেচি করে ঘর মাথায় তুলছে। পারছেনা কলিজার টুকরো ছেলের গালে সপাত সপাত থাপ্পড় লাগিয়ে দিতে। আর না পারছে নিজেকে কন্ট্রোল করতে। সাথে যোগ দেয় মা সোহাগী। আদরের ছেলের কান টেনে ধরে।
— বাপের মান ইজ্জত এই বয়সে আসি নষ্ট করলি? আশেপাশের মানুষ জানাজানি হয়ে গেলে এই মুখ দেখাবো কেমনে তোর আব্বায়? ছি ছি ছি ছি!
সোহাগ কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফেলে। সোহাগীর হাত ধরে বলে,
— আম্মা তোমরেও তো আব্বায় তুলে এনে বিয়ে করছে তয় আমার দোষ কি?
রমিজউদ্দিন লাফিয়ে দুপা এগিয়ে আসে সোহাগের দিক। আঙুল তুলে বলে,
— তোমার আম্মারে আমি সোজা বিয়ে করে আমার বাড়িতে এনে তুলছি। বাপের বাড়ি ফেলে রাখিনাই।এখন কবে বিয়ে করছো সেইটা বলো।
— বাদলের মুখ থেকে তো সব শুনেই ফেলছো।
— তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।
— মাস ছয়েক আগে।
— কিহ? এতোমাস! বিয়ে করবি ভালো কথা। আমারে বললে কি আমি অমত করতাম? আমার একমাত্র পোলার বিয়া ধুমধাম করে দিতাম। আমার কি টাকা পয়সার অভাব যে ছেলের বউ পালনের মুরোদ নাই? এই বাড়ির বউ কোনদিন এতোমাস বাপের বাড়ি থাকেনাই। কাল ই তুমি গিয়ে বউমারে নিয়ে আসবা। আমি আমার বাড়ির বউ বাপের বাড়ি ফেলে রাখবোনা।
— এইটা সম্ভব না আব্বা।
— কেন সম্ভব না?
— আপনার পোলার বউয়ের সাথে আমার স্বাভাবিক বিয়ে হয়নাই।
— সেটাতো বুঝতেই পারছি। তোমার আম্মার লগেও আমার স্বাভাবিক বিয়ে হয়নাই। আমি তারে জোর করে বিয়ে করে আনছি।
— কিন্তু আব্বা আমি জোর করে বিয়া করিনাই বরং আপনের পোলার বউই আমারে জোর করে বিয়ে করছে।
— কি কও আব্বা?
সোহাগীর দুই গালে হাত। রমিজউদ্দিন ও অবাক হয়। তার এতো শক্ত সামর্থ্যবান পোলারে একটা পুচকে মেয়ে জোর করে বিয়ে করলো!
— সবটা খুলে কও আব্বা।
সোহাগ বাবা মাকে সবটা খুলে বলে। সব শুনে সোহাগী রমিজউদ্দিন এর মাথা ঢিপ ঢিপ করছে। রমিজউদ্দিন চুপচাপ কিছুক্ষন মৌন রইলেন। ভাবনার অতলে তলিয়ে গেলেন। অনেক ভেবে চিন্তে বললেন,
— আমি যাবো বউমার বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে।
— আব্বা আপনি কি আমাকে পিরিতীর সাথে সংসার করতে বলতাছেন ? আমি কিছুতেই সংসারে ঢুকমুনা। আমার সংসার ভালো লাগেনা।
— চুপ করো হারামজাদা। সংসার করবী নাতো কি করবি? নাতি পুতির মুখ কি আমি আকাশের দিক মুখ করে থাকলেই দেখতে পারমু?
এক ধমকেই সোহাগ চুপসে যায়। সোহাগী রমিজউদ্দিন কে বলে,
— আমরা কাল ই প্রস্তাব নিয়ে যাবো। তুমি আয়োজন করো।
— আম্মা পিরিতি আমারে দু চোখে দেখতে পারেনা।
— চুপ থাকো। আমাদের মধ্যে কথা বলবানা। দেখতে পারবো কিভাবে? এতো এতো খারাপ কাজ করছো মেয়েটার সাথে তার পর কি আশা করো তোমারে মাথায় তুলে রাখবো? তোমার আব্বায় আমার জন্য পাগল আছিলো। কোনদিন আমারে একটা ফুলের আচর ও দেয়নাই। আর তুমি? বিয়ে করছো করছোই। কই ঘরে আনি ভালোবাসবা বুঝাবা বউয়ের মনে জায়গা করে নিবা, মেয়ে মানুষ ভালোবাসা পাইলেই সব ভুলে যায়। তা না তোমার বউয়ের সাথে গুন্ডাগিরি দেখাইতেই সময় যায়।
— আম্মা আমি বলে দিলাম সংসার আমি করমুনা। মেয়ে মানুষের প্যানপ্যানানি আমার একটুও ভালা লাগে না। আপনেরা প্রস্তাব নিয়ে যাবেন না।
রমিজউদ্দিন সোহাগের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
— আব্বা সংসার খারাপ জিনিস না। মেয়েমানুষ ও খারাপ না।
— তারজন্য ই তো আপনি মাঝে মাঝে বাড়ি থাকেন না।
— ঐটা ফ্যাশন আব্বা। স্পেশাল ব্রেক। টিফিন টাইম। না দিলে ক্ষুধায় এতো সাধের স্কুলের শেষ ক্লাস অব্দি শরীর ঠিক থাকবোনা।
— আমি সংসারে জড়ামুনা আব্বা।
— আব্বারে বিয়ে করছো। আর এসব কথা বলিওনা। তুমি কি করছো তা তুমি নিজেও বুঝতে পারতাছো না। ঘরের লক্ষী ঘরে আনো।
— কিন্তু আব্বা..
— আর একটাও কথা না। যা জট পাকাইছো সেইটা কিভাবে ম্যানেজ করমু সেই চিন্তায় বাচতেছিনা।
সোহাগী টুপ করে সোহাগের কপালে চুমু দিয়ে দেয়। মুচকি হাসে।
— আমার ফেলটু পোলার বউ এতো ব্রেইনী মাইয়া হবো আমি তো ভাবতেও পারতাছিনা। আব্বা দেখতে কেমন রে? ছবি আছে দেখা না। খুব সুন্দরী তাইনা? নয়তো আমার পোলা তো এমনি এমনি পাগল হবো না।
রমিজউদ্দিন বাঁধ সাধেন।
— আহ। সোহাগী। কালকা গিয়েই বউমারে দেখতে পারবা। এখন ভাবো গিয়ে কিভাবে বেয়াইরে রাজি করাবা।
দুইজনে পরামর্শ করতে থাকে। সোহাগ রেগে মেগে উঠে যেতে যেতে বলে,
— আব্বা আমার সংসার ভালো লাগে না।
রমিজউদ্দিন সোহাগী ছেলের কথায় তেমন কান দেয়না। সোহাগ রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে যায়। এই বাদল্লাইর জন্যে ই এসব হচ্ছে। একে কোনভাবেই সোহাগ ছাড়বেনা।

ছুটি আসছে থেকেই বারান্দায় গ্ৰীলের উপর বসে বসে কান্না করছে। রিতীর ও মন ভালো নেই। নিজের উপর খুব বিরক্ত সে। এই সোহাগের থেকে কি কোন কালেই মুক্তি মিলবেনা? মানুষটাকে দেখলেই মায়া লাগে। কাছে যেতে ইচ্ছে করে। মিস্টি গলাটা শুনতে ইচ্ছে করে। কিন্তু মুখ থেকে যে নোংরা নোংরা কথায় নিজের মন মানসিকতা প্রকাশ করে তাতে আর একমূহূর্ত মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করেনা। এই সোহাগকে রিতী চায়না। কখনোই চায়না। ছুটির প্রতি অভিমান জম্মে। যাবার আগে একটা বার কি ও বলতে পারতো না? অবশ্য বললে রিতী কখনোই যেতো না। ছুটির জায়গায় ছুটি ঠিক। বোন দুলাভাইকে মিলিয়ে দেবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু ছুটি তোর দুলাভাইটা মানুষের বাচ্চা না। রিতী ছুটির কাছে গিয়ে দেখে ছুটি কাঁদছে। কেনো কাঁদছে? হুটহাট কাঁদার মেয়ে তো ছুটি না।
— ছুটি? এই ছুটি? কি হয়েছে? কাঁদছিস কেনো? ঐ শয়তানটা কিছু বলেছে?
— আমার আর ঝিমাকে আলাদা করে দিয়েছে?
— মানে?
— ঝিমা আর কোনদিন আমাকে ভালোবাসবে না। আমার বন্ধু হবেনা। আমাকে ভূল বুঝে চলে গেছে।
— কেনো?
— দুলাভাই আমার মনের কথা ঝিমাকে বলেদিয়েছে। এখন ঝিমা আমাকে ভুল বুঝে চলে গেছে।
— তুই তোর দুলাভাইকে আজকাল মনের কথাও বলতে শুরু করেছিস?
রিতী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। ছুটি ঝাড়ি দিয়ে বলে,
— আরেনা। আমার চোখ মুখ দেখলেই নাকি সব বুঝে ফেলে। বাঁধন ভাইকে আমি লাভ করি এটা ঝিমাকে বলে দিয়েছে। ঝিমা অনেক কেঁদেছে।

রিতী বুঝতে পারে সোহাগ গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করেছে। হয়তো ছুটি নয়তো ঝিমা কিছু বলেছে! রিতী হাত উঁচিয়ে ধরে।
— ঝিমার সাথে আমি কথা বলছি। এবার তুই আয়। নিচে নাম। আমি ব্যপারটা দেখতেছি।
ছুটি রিতীর হাত ধরে লাফ দিয়ে নিচে নামে। নাক টেনে বলে,
— তাড়াতাড়ি যাও। ঝিমা যদি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় তাহলে আই প্রমিজ তোমার জামাইয়ের সাথে আমি কোনদিন কথা বলবোনা। একদম ক্ষমা করবো না।
— করিস না।

–কাকী ঝিমা কোথায়?
রিতীর ডাকে বীনা মাথা তুলে ডাকে। তরকারী কাটছিলো। হাতটা ধুয়ে বলে,
— ঘরেই আছে বোধহয়। আয়। বোস।
— ঝিমার কাছে এসেছি। যাই আমি।
রিতী ঝিমার রুমে এসে দেখে রুম অন্ধকার। লাইট অন করে দেয়। রুমে ঝিমা নেই। বারান্দার দরজার দিকে চোখ পড়তেই দেখে ঝিমা মুখ বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্ধকার ঘরে লাইট কে অন করলো দেখার জন্যে ই ঝিমা উকি দেয়। রিতী গিয়ে ঝিমার পাশে দাঁড়ায়। ঝিমা দোলনায় বসে আছে। চোখ মুখ একদম টইটম্বুর করে ফেলেছে। বুঝাই যাচ্ছে কেঁদেছে। রিতী হাতটা ধরে বলে,
— আয়তো।
— কোথায়?
— কি হয়েছে তোদের? চল ছুটির কাছে যাবি।
— যাবোনা আমি।
— মান অভিমান বাদ। চল। আয়।
— তুমি কিছু জানোনা আপু ও করেছে। যাবোনা আমি।
— জানি আমি।
— তুমি কিছুই জানোনা আপু। ছুটি ভাইয়াকে পছন্দ করে। কবে থেকে পছন্দ? কেনো করে? কতটুকু করে? আমি এতো কাছে থেকেও কিছু জানিনা।অথচ ও দিনের পর কষ্ট পেয়ে গেছে আমি কিছু জানিই না।

— কি হয়েছে? বড় গলায় চেচাচ্ছিস কেনো?
দরজায় বাঁধন দাঁড়িয়ে। ঝিমার গলা শুনে এসে দাঁড়ায়। বাঁধন কে দেখে ঝিমার যেনো আগুনে ঘি পড়লো। ঝনঝন করে রাগ ঝাড়লো।
— বাড়ির পাশে আরশিনগর থাকতে দূর দেশে আরশিকে না খুঁজলে আমি ঝিমা বড় গলা কেনো ছোট গলাতেও একটুও চেচাতাম না।
বাঁধন ধপাধপ এগিয়ে এলো। আশ্চর্য হলো। প্রশ্ন করলো,
— কি হয়েছে? এরকম করছিস কেনো?
— সরে যাও। সামনে আসবেনা আমার।
— ঝিমা? কি হয়েছে বল? বেয়াদবি করছিস কেনো?
— দূর হও সামনে থেকে।
— থাপ্পড় লাগাবো কিন্তু।
ঝিমা গাল বাড়িয়ে দেয়।
— দাও দেখি কত থাপ্পড় দিতে পারো। সব থাপ্পড় সহ্য করে নিবো। টু শব্দ অব্দি করবোনা।
— ঝিমা??
অবস্থা বেগতিক যাচ্ছে দেখে রিতী এবার আটকায়। বাঁধনকে বলে,
— বাঁধন ভাই ঝিমার একটু মন খারাপ। দুই বান্ধবীতে একটু মনভার হয়েছে। আমি ঠিক করে দিচ্ছি।
বাঁধন রিতির কথায় ঝিমার দিকে তাকায়। কিছু সেকেন্ড তাকিয়ে বলে,
— মনমালিন্য সব ঠিক করে নে।

বাধন চলে যায়। রিতী ঝিমার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মাথায় হাত রেখে বলে,
— আমি সব জানি।
— হ্যা হ্যা। জনে জনে সবাই জানে। শুধু আমিই জানিনা। চোখ মুখ দেখলেই সবাই বুঝে যায়। শুধু আমিই বুঝিনা।
— কিজানি? কেনো বুঝিসনা!
— কিছুই বলেনি আমাকে। এই নাকি সব কথাই আমার সাথে শেয়ার করে।
— সত্যিই কি কিছু বলেনি? আমার তো মনে হয়না। ছুটি সবার কাছে পেট চেপে ধরে থাকলেও তোর কাছে এলে পারেনা। হয়তো তোকেও বলেছে তুই খেয়াল ই করিসনি।
ঝিমা অবাক চোখে রিতীর দিকে তাকায়। সে খেয়াল করেনি? বলেছে ছুটি? বৃহৎ ভাবনায় পড়ে যায় ঝিমা। ছুটি চলন বলন আচার আচরণ মুহূর্তে মুহূর্তে মাথায় রিকেপচার করে। শরীরের লোম ফুলে ফুলে উঠে। রিতী কে নরম সুরে বলে,
— এভাবে কেনো লুকালো আপু? আমি কি ওকে ভুল বুঝতাম?
— সেটা কি স্বাভাবিক নয়? বাঁধন তোর নিজের ভাই ঝিমা।
— আর ছুটি যে আমার কলিজা…
এই মুহূর্তে রিতী কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা। কিন্তু ঝিমাকে বুঝাতে হবে।
— শোন ঝিমা এটা নিতান্তই ছুটির ভ্রম ছাড়া কিছুই না। তুই এতো সিরিয়াস ভাবে না নিলেই পারিস। ছোট বয়স। বাঁধন ভাই আমাদের বড় ভাইয়ের মতো। সবাই যে ভাই ভাববে এটাও তো কোন কথা না। ছুটির ইচ্ছা হয়েছে ভাবেনি। তাই বলে বাঁধন ভাই আর ছুটি? এটাতো কোনভাবেই সম্ভব না। এটা তুইও বুঝিস আমিও বুঝি ছুটিও বুঝে। দেখবি কিছুদিনের মধ্যেই এই ভ্রম ছেড়ে যাবে। এখন উঠ সোনা। আমার বোনটাকে আর কষ্ট দিসনা।

ঝিমা ছুটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ছুটির মুখে হাসি নেই। গুটি গুটি পায়ে এসে ঝিমার হাত ধরে।‌ মাথা নিচু করে বলে,
— সরি।
— ইটস ওকে। মনের ব্যপার তোর কি দোষ?
— তোকে না বলার জন্যে সরি।
— মনের ব্যপার তোর কি দোষ?
— কোন দোষ নেই?
— আকাশসম।
— রাগ করে থাকিস না।
— তুই কেনো আমার ভাবী হতে চাইলি না?
ঝিমার প্রশ্নে ছুটি আকাশ থেকে পড়ে। কি বলছে ও?
— তুই একবার আবদারটা করতি আমার কাছে? আমি কি না করতাম? বকতাম তোকে?
ছুটি শুকনো হাসে। দ্বিধায় বলে,
— মানাতো আমাকে? একটু বেশীই বেমানান হতো না?
— জানি। আমরা একটু বেশীই ছোট। আর তুই যে এতো ফিলিংস পোষে রেখেছিস তার বেলায়?
— মনের ব্যপার আমার কি দোষ?
— আমার কথা আমাকে ফেরাচ্ছিস?
— আমার সাথে রাগ করে থাকিস না প্লিজ। একটু কমা।
— কমালাম।
— বুঝবো কি করে?
— বুঝতে হবেনা।
— জড়িয়ে ধরে বল।
— বলবোনা।
— এই এই ঝিমা ঘুর না… একটু জড়িয়ে ধর না… তোর ভাই তো ধরবেনা। ভাইয়ের হয়ে তুই ধরনা দিতে..।
— খবরদার মাইনষের জামাইয়ের কথা বলবিনা।
— তাহলে জড়িয়ে ধরনা।
— ভাইয়াকে যত তাড়াতাড়ি পারিস ভূলে যাবি । নয়তো এইবার ই শেষ আর কোনদিন জড়িয়ে ধরবোনা।

চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা ~
আমার ছোট্ট একখানা গ্ৰুপ Labiba’s Tale🧚‍♀ প্লিজ সবাই জয়েন হয়ে যেও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here