যখন_দুজনে_একা ১৪ পর্ব

0
662

#যখন_দুজনে_একা

১৪ পর্ব

নিঝুম সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো। আসার আগে নিজের চোখ মুছে ঠিক করে নিলো।
দোতলায় উঠে দেখে সবাই খালাম্মা দের লিভিং রুমে বসে আছে । টিভি ছাড়া কিন্তু মিউট করা। সবাই এখান থেকেই মাহি র ভায়োলিন শুনছে।
রিয়া ও এখানে বসা ! নিঝুম কে ইশারায় ডাকলো পাশে বসার জন্য ।
নিঝুম বোনের পাশেই গিয়ে বসলো।
রিয়া বলল, কোথায় ছিলি এতক্ষণ ?
নিঝুম বলল ফোন এসেছিল।
দেখ নিঝুম কি সুন্দর ভায়োলিন বাজাচ্ছে মাহি! আমি ঐ দিকে যেতে চাইছিলাম খালাম্মা বলল,এখান থেকেই শোনা যাচ্ছে ওরা দুজন ওখানে থাকুক একটু! চিন্তা কর খালাম্মা ছেলে আর ছেলের ব‌উ কে কতটা স্পেস দেয়!
নিঝুম বলল, আপু আর তোর ই বা ওখানে যাওয়ার কি দরকার ! মাহি ওর ব‌উ কে নিয়ে একা থাকতে চাইছে থাকুক সবাই কে নিয়ে বসতে চাইতো যদি তাহলে ও এখানে বসেই বাজাতো।
রিয়া বলল, তারপরও আমার তো হিরো, হিরোইন কে দেখতে ইচ্ছা করছে!
আপু প্লিজ গ্রো আপ !
নিঝুম বুঝতে পারছি চুপ থাক জ্ঞান দিবি না, রিয়া বলল।
নিঝুম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে মনে বলল, সেই জন্য ই কোন দিন মনের কথা তোকে বলি নাই আপু! মেয়েরা নিজের বোনের সাথে সব শেয়ার করে আমি তোর এই চাইল্ডিস এটিটিউট এর জন্য কিছু ই বলতে পারলাম না !
মাহি আরও দুই তিনটা গান বাজালো । সবাই ঘরের ভেতর থেকে শুনছে।
আজগর সাহেব ও নিজের রুম থেকে মাহির ভায়োলিন এর সুর শুনছেন।
কষ্ট পাচ্ছেন এই ভেবে আগে তার বাসা টা এভাবেই হাসি আনন্দে, লোকজনের কোলাহল এ মেতে থাকতো।
আর এখন !
মাহি কত চেষ্টা করছে সব ঠিক করতে!
অনেক দিন পর তার‌ও খুব ইচ্ছে করছে সবার পাশে গিয়ে বসতে।

মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে দেখছে , রুবা মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।
আগে যখন ভায়োলিন বাজাতো ভাইয়া সামনে থাকত।

রুবা মাহি কে দেখছে আর অবাক হচ্ছে , কত চেষ্টা করছে ওকে ভালো রাখতে মাহি!
ভায়োলিন থামিয়ে মাহি বলল, এখন বলো কেমন হয়েছে?
রুবা শুধু মাথা উপর নিচ করলো!
রুবার কাছে এসে মাহি বলল,
এভাবে ইশারায় বললে হবে না রুবা, মুখে বলো! তুমি সারাদিনে একটা কথাও বলছো না!
প্লিজ রুবা স্পীক আপ!
রুবা ফেলফেল করে শুধু তাকিয়ে আছে !
মাহি বলল, বলতে হবে কথা । কিছু একটা বলো প্লিজ।

রুবা বলল, আমার কিছু ভালো লাগছে না !
মাহি হেসে বলল, কি করলে ভালো লাগবে বলো?
আমার শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে !!
ঠিক আছে শরীর খারাপ লাগলে তো শুয়ে থাকাই ভালো । এখন এখান থেকে এমনিতেও যেতে হবে বৃষ্টির ছিটা পড়ছে।
চলো মা র কাছে গিয়ে বসি!

মাহি রুবার হাত ধরলো আমার সঙ্গে আসো বলে ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করল ওরা । গলা নামিয়ে মাহি বলল, তুমি বলছিলে না তোমার বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগে । তুমি সুস্থ হ‌ও তোমাকে নিয়ে বৃষ্টি তে ভিজব কেমন!
রুবা কোন উত্তর দিল না।
মাহি বলল, এক কাজ করলে কেমন হয় , মা বাবা সহ আমরা কোথাও যাই চলো । শ্রীমঙ্গলে বাবার এক ক্লায়েন্ট এর দারুন এক রিসোর্ট আছে সেখানে গেলে কেমন হয় ? সিলেটে র বৃষ্টি কিন্তু দারুণ!
তখন দেখব তুমি কতো ভিজতে পারো!
রুবা চুপ করে কথা শুনছে!
কথা বলতে বলতে ই ওরা লিভিং রুমে এসে ঢুকলো, সেখানে নিঝুম কে দেখেই সে একটু থমকে গেল মাহি !
মনে মনে ঠিক করলো নরমাল বিহেভ করতে হবে মাহির , ঐদিন রুবা নোটিশ করেছে ওরা কথা বলে না । রুবার চোখেও যেহেতু পড়ছে বাকিরা যে খেয়াল করবে না তার রিস্ক নেয়া যাবে না !
এর মধ্যে রিয়া আপু তো আরেক চিজ!
মাহি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, কি ব্যাপার কখন আসলে তোমরা ?
রিয়া বলল, আপনি যখন আপনার ব‌উ কে রোমান্টিক ভায়োলিন শুনাচ্ছিলেন তখন!
রুবাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে মাহি হেসে বলল, ও আচ্ছা। কাছে যেতে!
রিয়া বলল, না থাক! ছোট ভাই রোমান্টিক মুডে আছে কাবারে হাড্ডি হতে চাইনি কি বলিস নিঝুম !
নিঝুম বোনের দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকালো!
তারপর রুবাকে উদ্দেশ্য করে বলল, তোমার শরীর এখন কেমন ?
রুবা চোখ ঝাকালো শুধু!
মাহি রুবার পাশে সোফার হ্যান্ডেল এ বসলো!
রুবার কানের কাছে মুখ এনে বলল, মুখে বলো রুবা ! প্লিজ!
নিঝুম তার মোবাইল এ ফেইসবুক নিয়ে ব্যস্ত করলো নিজেকে!
চা হাতে নিয়ে রিয়া বলল, মাহি চা খাবি না?
আমরা খেয়েছি চা তোমরা খাও!
মাহির মা বলল, রুবা সবার সঙ্গে গল্প করলে মন ভালো থাকবে তাই ওদের সবাই কে ডেকে আনলাম !
তারানা র মেয়ে রা আসতো কিন্তু ওদের কোন ফ্রেন্ড এসেছে বাসায় !
সবাই নিজেদের মধ্যে গল্পে ব্যস্ত! মাহি নিঝুমের দিকে তাকালো ।
হঠাৎ বলল, নিঝুম তোর কি অবস্থা?
নিঝুম মোবাইল থেকে চোখ না সরিয়েই বলল, ভালো !
কি বলবে মাহি বুঝে পাচ্ছে না !
রিয়া কে উদ্দেশ্য করে মাহি বলল, আপু তোমার প্রিন্স চার্মিং এর কি খবর? উনি কবে পদার্পণ করবেন এই বঙ্গ দেশে ?
ফাজলামি করিস তাই না আমার সঙ্গে, রিয়া বলল!
আরে না আপু তোমার বিয়ে খাওয়া র জন্য অপেক্ষা করছি কত! হেসে মাহি বলল।
রুবা মাহির দিকে তাকালো !
মাহি ওর দিকে ঝুঁকে বলল, কিছু বলবে?
ফিসফিস করে রুবা বলল, রুমে যাব । বসতে ভালো লাগছে না !
ঠিক আছে রুমে নিয়ে যাচ্ছি!
মাহি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, মা রুবা ঘরে যেতে চাইছে , বসতে খারাপ লাগছে ওর !
সাফিয়া বেগম উদ্বেগ প্রকাশ করে বললেন, হু ঠিক আছে রুমে নিয়ে যা ! ও আজকে হসপিটালে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল বলিস নি তো মাহি এই মাত্র তোর খালামনি বলল!
মাহি অবাক হয়ে বলল, তাই নাকি আমি ও তো জানি না কখন?
রিয়া বলল, ও ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য দাঁড়ালো যখন তখন !
মাহি বলল, তোমরা আমাকে বললে না তো ?
রিয়া বলল, নিঝুম বলে নাই তোকে ও তো ছিল ! আমি ভেবেছি ও বলছে তোকে মাহি !
মাহি নিঝুমের দিকে তাকালো !
নিঝুম বলল, আমার খেয়াল ছিলনা সরি !
মাহি কয়েক সেকেন্ড নিঝুমের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর রুবা কে বলল, তুমি ও বললে না ! শরীর এত উইক তোমার আর খেতে চাও না !
মা ওর রাতের খাবার টা দিতে বলো আমি খাইয়ে দিচ্ছি !
চলো রুবা বলে রুবার হাত ধরলো!
মা বলল তুমিও কি রুমে খাবে মাহি দুজনের খাবার দিতে বলব?
আগে ওকে রুমে নিয়ে যাই তারপর দেখি মা !
ঠিক আছে বললেন , সাফিয়া বেগম!

রুবাকে নিয়ে রুমে আসলো মাহি !
বিছানায় বসাতে নিল রুবা বলল , ওয়াসরুমে যাব ।
আমি দিয়ে আসছি বলে মাহি দরজা পর্যন্ত দিয়ে গেল ! চাপিয়ে রেখো লক করো না পড়ে গেলে আবার?

মাহি রুমে ঢুকে রুবার ওষুধ গুলো বের করলো ! ওষুধ ইনজেকশন, সিরিন্জ সব একসঙ্গে রাখা । গুছিয়ে রাখতে হবে একসময় ।
রুবা বের হয়ে আসলে ওর খাওয়ার আগের ওষুধ খাইয়ে দিল !
আমি দুই সপ্তাহের ছুটি নিয়েছি এই পুরো সময় তোমার, ঠিক আছে !
আমি যেভাবে যখন খেতে ঘুমাতে বলব তুমি তাই করবে ।
তোমাকে এর মাঝে ফিট করে ছাড়ব দেখো মাহি হেসে বলল!
এখন খাওয়া দিলে ঠিক মত রাতে র খাবার খাবে !
টিভি ছেড়ে দিব ?
রুবা মাথা নেড়ে না করলো !

লাইলি বুয়া রুবার খাবার নিয়ে আসলো ! স্যুপ, ব্রেড আর পুডিং !
দেখো দারুন ডিনার এসেছে ঠিক ভাবে খেতে হবে !
মাহি স্যুপের চামচ ফুঁ দিয়ে রুবার সামনে ধরলো!

রুবা মুখে নিল !
বলল, গরম বেশি!
মাহি বলল, ঠিক আছে আমি ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে দিচ্ছি!
শুধু স্যুপ খাব আর কিছু খাব না !
না খেতে হবে, মাহি বলল!

দরজা নক করে রিয়া ঢুকলো !
মাহি বলল, আসো আপু!
কি অবস্থা রুবার ? শরীর কেমন এখন!
এই যে খাচ্ছে মাহি বলল!

তুই যে ব‌উ এর এত যত্ন করতে পারবি তোকে দেখে আগে কিন্তু বোঝা যায় নাই , রিয়া সোফায় বসতে বসতে বলল।
আর কি বোঝা যায় না আমাকে দেখে , মাহি প্রশ্ন করলো।
এই যে তুই এত রোমান্টিক !
মাহি হো হো করে হেসে উঠলো! আমি মোটেও সেরকম কিছু না ! আমি কাঠখোট্টা একজন ডাক্তার সামান্য ! বুঝলে আপু।

তোমার সাজ্জাদ সাহেব কেমন সেটা বলো ?
না রে মাহি , আগেই ভালো ছিল পিএইচডি র পড়াশোনা করতে করতে কেমন জানি জানি গাছ গাছ হয়ে গেছে রে!
রিয়ার কথা শুনে মাহি , হো হো করে হাসছে !
রুবা মুগ্ধ হয়ে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে ! কতদিন পর এত মন খুলে হাসছে মাহি ! কি সুন্দর লাগছে !
তারপর চোখ নামিয়ে নিল ! ওর চোখ আবার ঝাপসা হয়ে আসছে!

রুবা কে ডিনার করিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিল মাহি ! তারপর রুবাকে বলল, তুমি শুয়ে থাকো আমি ডিনার করে আসি এখানেই করতাম কিন্তু গেস্ট আছে সবার সঙ্গে খাওয়া উচিত তাই না! কিছু লাগবে তোমার ?
রুবা মাথা নেড়ে না করলো!

ঠিক আছে আমি আসলাম!
চলো রিয়া আপু ডিনার করি !
রুবার কাছে এসে রিয়া বলল, আসলাম রুবা ভালো থেকো আর বেশি বেশি সেবা আদায় করে নাও বুঝলে হাজবেন্ড রা কিন্তু ব‌উ দের বেলায় উদাসীন হয় তোমার ভাগ্য ভালো আমার ভাই খুব কেয়ারিং । তাই যত পারো আদায় করে নাও!
হ্যাঁ হয়েছে রিয়া আপু ।বিয়ে না করেই তোমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে , মাহি হেসে বলল । এখন চলো যাই ঐ দিকে!
রিয়া কথা বলতে বলতে বের হয়ে গেল !
মাহি আবার রুবার দিকে তাকিয়ে বলল, যাচ্ছি!
তারপর রুম থেকে বের হয়ে গেল!

রুবা চুপচাপ শুয়ে পড়লো ! ওর খুব কষ্ট হচ্ছে ! মাহির এত যত্ন আত্তি দেখে ওর আরও বেশি কষ্ট হয়।

মাহি রিয়া আর সবার সঙ্গে স্বাভাবিক গল্প করেই রাতের খাবার খেলো !
ওয়েদার খারাপ করেছে দেখে সবাই খাওয়ার পর পরই বিদায় নিলো!
নিচে গাড়ি পর্যন্ত মাহি তুলে দিলো খালামনি, ছোট মামি রিয়া আর নিঝুম কে !

ওদের গাড়ি বের হয়ে যাওয়ার পর সে কিছুক্ষণ নিচে বসলো ! সিগারেট ধরালো ! এখানে সিগারেট খেলে রুবার সমস্যা হবে না ! অবশ্যই হাতে, মুখে গন্ধ থাকবে ! ভালো করে ধুয়ে ফেললেই হবে! বাই দিস টাইম রুবা ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো।
ও গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়বে!
সারাটা দিন কি যে গেল চিন্তা করছে মাহি সিগারেট এর ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে!

তার এখন একটাই চিন্তা রুবা কে আর বাবা মা কে সুস্থ রাখা , স্বাভাবিক রাখা।
কিন্তু রুবা এত চুপ হয়ে আছে!
এখন তো মনে হচ্ছে ওর সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং লাগবে! কি করলে ও ভালো থাকবে ?

বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ছে সঙ্গে কি প্রচন্ড বাতাস ,ঝড় হবে নাকি আবার মাহি সিগারেট ছুড়ে ফেলে উপরে উঠে আসলো!
ডাইনিং এর পাশের বেসিনে ভালো করে হাত ধুয়ে কুলি করলো !
হঠাৎ ওকে অবাক করে দিয়ে বাবা এসে কাছে দাঁড়ালো !
কিছু বলবে বাবা , মাহি ঘুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল!
রুবা কেমন আছে মাহি?
বাবা ও ভালো আছে এখন! তোমার শরীর কেমন?
আমি ঠিক আছি , তুমি রুবার খেয়াল রেখো !
ঠিক আছে বাবা অনেক রাত হলো যাও শুয়ে পড়ো!
মাহি তার বাবাকে তাদের ঘরের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেল!
খুব রিল্যাক্স লাগছে আজ মাহির বাবা কে দেখে! সে নিজের ঘরের দিকে আসছে আর চিন্তা করছে!

দরজা খুব সাবধানে খুলে ভেতরে ঢুকলো মাহি! বিছানার কাছে এসে দেখে রুবা ঘুমিয়ে আছে !
ওয়াস রুমে গিয়ে নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো ।
ঘরে ঢুকে রুবার পাশে বসলো রুবার কপালে হাত ছুয়ে দিল, গভীর ঘুমে আছে বোঝা যাচ্ছে।

রুবার পাশ থেকে উঠে সে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল ! কালকে হসপিটাল এ যেতে হবে না তাই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠার কোন তাগিদ নাই । কিন্তু কালকে রুবার বিষয়ে রিয়াদ ভাই এর সাথে কথা বলতে হবে ! এত নির্লিপ্ত হয়ে গেছে কেন !
আজ সারাদিন এ মাত্র পাঁচ টা কথা বলছে তাও মাহির জোড়াজুড়ি তে !
উঠে গিয়ে রুবার গায়ের চাদর টা ঠিক করে দিলো । কি সুন্দর লাগছে রুবার ঘুমন্ত মুখটা দেখতে! মাহি কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল রুবার দিকে।
শোফায় শুয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাহি ঘুমিয়ে গেল!

হঠাৎ করে মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল! তাকিয়ে দেখে বিছানায় রুবা নেই ! ওয়াস রুমে গেছে হয়তো!
মাহি চোখ খুলে অপেক্ষা করছে রুবার ! ওয়াস রুম থেকে ঠিক ভাবে বের হলে তারপর আবার ঘুমিয়ে যাবে সে।
কি মনে করে মাহি ওয়াস রুমের দিকে তাকালো ! লাইট তো অফ ! কি ব্যাপার রুবা কোথায়?
মাহি লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো!

ওয়াস রুমে ঢুকলো মাহি, না কেউ নেই ! বারান্দায় নাকি ? না বারান্দার দরজা বন্ধ তার মানে ওখানে ও নেই !
মাহি ছুটে বের হলো ঘর থেকে!
মায়ের ঘরে গেছে কি ? হঠাৎ করে পাশের ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে দরজা খোলা কিন্তু ভেতরে ঘর অন্ধকার!
মাহি শিহাবের ঘরে ঢুকলো ! রুবা তুমি এখানে ? বলে লাইট জ্বালানো র সঙ্গে সঙ্গে সে দেখে রুবা ফ্লোরে দুই হাঁটু ভাঁজ করে মাথা নুয়ে বসে আছে !
বাহিরে কি ঝড় বৃষ্টি তুমি এখানে বসে আছো কেন অন্ধকারে ? বলে রুবার পিঠে হাত দিল মাহি !

সঙ্গে সঙ্গে রুবা ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল , আমাকে ধরবে না !
সাবধান আমাকে ধরবে না !
মাহির মাথায় বাজ পড়লো মনে হয় এমন অবস্থায় রুবাকে দেখে!
চোখ লাল হয়ে ফুলে আছে ! কাঁদতে কাঁদতে পুরো মুখ ফুলে গেছে আর কেমন অস্বাভাবিক চাহনি !
মাহি বলল, কি হয়েছে রুবা তোমার ?
লাফ দিয়ে রুবা দূরে সরে গেল, আমার কাছে আসবে না খবরদার বলছি কাছে আসবে না !
মাহি কি করবে বুঝতে পারছে না ! রুবা রুবা আসবো না আমি, কি ভুল করেছি আমি বলো ?
এমন করে না প্লিজ।
রুবা চিৎকার করে বলল,আমার কাছে কেউ আসবে না ! আমি খুব খারাপ !
কি বলছো এসব তুমি রুবা?
আমার কাছে যেই আসে সেই হারিয়ে যায় , কেউ আসবে না !
মাহি ছুটে এসে রুবা কে ধরতে নিল !
ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল রুবা মাহিকে।
আমার বাবা প্রথমে চলে গেল, তারপর মা, যে বাবা বড় করলো সেও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে , তোমার ভাই ও আমাকে অনেক ভালোবাসতো সে ও হারিয়ে গেল । বেবি টাও নাই। এখন তুমি আমাকে ভালোবাসা দিলে তোমার ও ক্ষতি হবে ! যাও যাও দূরে যাও বলে চিৎকার করে উঠল রুবা!
না রুবা আমার কিছু হবে না!
না আমি একটা অপয়া মেয়ে আমার কাছে কেউ আসবা না !
মাহি আবার ধরতে গেলো রুবা ছুটে বিছানার উপর উঠে গেল !
আমি খুব খারাপ কেউ আমাকে ভালোবাসবে না । আমার কাছে আসলেই ক্ষতি হবে সবার!
মাহি এবার জাপটে ধরে ফেলল!
রুবা তুমি অসুস্থ পড়ে যাবে ।
রুবা হাত ছুড়ে মাহি কে সমানে ধাক্কা মেরে যাচ্ছে । চিৎকার করছে!
তুমি সারাদিন আমার এত যত্ন করবা না তোমার ক্ষতি হবে । যাও আমার কাছে আসবে না ! ছাড়ো।
মাহি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো । কোন ভাবেই ছাড়বে না সে রুবাকে।
কি করবে মাহি বুঝতে পারছে না !
রুবা প্লিজ শান্ত হ‌ও !
শক্ত করে ধরে মাহি ওকে টেনে বিছানার উপর থেকে নামালো।
তারপর জোর করেই ঘর থেকে বের করে আনলো !
নিজের রুমে নিয়ে গেল বিছানায় বসিয়ে দিল ! তারপর মেডিসিন বক্স থেকে সিরিন্জ বের করে জোর করে রুবাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিল ।
তবুও রুবা মাহি কে সমানে ধাক্কা দিয়ে ই যাচ্ছে! লাফ দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে । খামছে দিচ্ছে!
মাহি বিছানায় একরকম নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে জোর করে জড়িয়ে ধরে রাখলো!
চুপ চুপ একদম চুপ রুবা কথা না। ঘুমাও !
তুমি ছাড়ো আমাকে ! আমি চলে যাব ! আমি থাকলে সবার ক্ষতি হবে !
কারো কিছু হবে না একদম চুপ ! আমাকে ছেড়ে, মা কে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে তুমি ? মাহি বলল!
হাত পা ছুড়ছেই রুবা । প্লিজ এত এক্সাইটেড হলে সমস্যা হবে রুবা। তোমার গতকাল ই ডি এন্ড সি হয়েছে ব্লিডিং বেড়ে যাবে প্লিজ রুবা!

আসতে আসতে অবশ হয়ে আসছে রুবা, ওষুধ কাজ করছে। মাহি তবুও নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছে শক্ত করে রুবাকে।
আমাকে ভালোবাসবা না কখনো না ! বলেই যাচ্ছে রুবা!
আচ্ছা ঠিক আছে ভালোবাসব না! ভালোবাসব না।
মাহি রুবার কপালে চুমু দিল, ততক্ষণে রুবা নিস্তেজ হয়ে আসছে!
বাহিরে তখন প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়েছে , মাহির ভেতরে ও ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
মাহি চিন্তা য় পড়ে গেল ! এত পুরাই ডিপ্রেশন এ চলে গেছে রুবা!
আল্লাহ আমি কি করব বলে দাও!

আরো অনেক টা সময় রুবাকে ধরে রাখলো মাহি! ওর চোখ মুছিয়ে দিল ! কি অবস্থা করছে নিজের। সারাদিন কথা বলেনি তারমানে ওর ভেতর এই জিনিস কাজ করছিল! কালকেই সাইকোলজিস্ট এর কাছে নিতে হবে !
খুব সাবধানে রুবাকে শুয়ে দিল ! কিন্তু উঠতে গিয়ে দেখে রুবা ওর হাত টা আটকে দিল ! মনে মনে মাহি ভাবছে খুব তো ধাক্কা দিয়ে, হাত ছুড়ে দূরে সরিয়ে ফেলছিলে এখন আবার আমার হাত টা আটকে দিলে না?
আচ্ছা থাকো আমার হাতে র উপর শুয়ে !
মাহির হাতের উপর ই সারাটা রাত অচেতন হয়ে পড়ে র‌ইল রুবা!
মাহির প্রথম দিকে অস্বস্তি হচ্ছিল তারপর কোন উপায় নেই নড়াচড়া করালেই উঠে আবার কি শুরু করে ভেবে চুপ করে রইলো। সারারাত মাহির বুকের কাছে বেহুঁশ ঘুমে ঘুমিয়ে র‌ইলো রুবা।

খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল মাহি রুবাকে নিয়ে !

( চলব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here