যখন_দুজনে_একা ১৭ পর্ব

0
716

#যখন_দুজনে_একা

১৭ পর্ব

মাহি বলল, রুবা তুমি বলবে আজ দাড়াও!
কালকে রাতে তুমি পাগলামী করেছো আজ দেখো আমি কি করি ?
প্লিজ আমার পা ছাড়ো , রুবা অনুনয় এর সুরে বলছে !
ছাড়বো না , মাহি বলল!
রুবা বলল, তুমি কি এভাবে আমার পা ধরে থাকবে নাকি ?
থাকব !
মাহি রুবার পায়ের পোড়া জায়গায় ফুঁ দিচ্ছে!
রুবা খুব কষ্ট হচ্ছে ?
একটু জ্বলছে ,রুবা বলল ।
মাহি বলল, একটু না অনেক বেশি জ্বলার কথা ! তুমি এরকম পাগলামী কেন করতে গেলে , তোমার শরীর ভালো না । একা ওয়াস রুমে যেতে পারছো না আমার জন্য চা করতে রান্নাঘরে চলে গেলে ! আর গিয়ে বলে আসলেই হতো নিজের করার দরকার ছিল না !

রুবা বলল, আমার মত কি ওরা করতে পারতো ? এই চা বানানোর এক্সপার্ট আমি হাসলো রুবা।
মাহি তাকালো রুবার দিকে ।
তাই বলে এতটা কষ্ট নেয়ার দরকার ছিল না ।
তুমি ও তো সারাদিন আমার জন্য কত কি করছো ।
মাহি হেসে বলল , শোধ দিচ্ছ?
রুবা বলল , হ্যাঁ দিচ্ছি , যাও ।
আর কি কি দিলে শোধ দিবা রুবা ?
রুবা হেসে বলল, তুমি যা যা দিবা সব !
তাই বুঝি ? মাহি পায়ে ফুঁ দিতে দিতে বলল,
আমি কষ্ট দিলে রুবা?
তুমি আমাকে কখনো কষ্ট দিতেই পারবে না আমি জানি ।
যদি দেই রুবা !
রুবা বলল, তোমার কি মনে হয় তুমি কষ্ট দিলে আমি তোমাকে কষ্ট দিতে পারব ?
মাহি মাথা নেড়ে বলল , না !
মাহি বিড়বিড় করে বলল রুবা আর যদি আদর , ভালোবাসা দেই ?
রুবা লজ্জায় লাল হয়ে গিয়ে বলল, জানি না এখন পা ছাড়ো প্লিজ !
মাহি রুবাকে চমকে দিয়ে ঠোঁট নামিয়ে ওর পায়ে চুমু দিল যাও ছেড়ে দিলাম আমার জন্য এত কষ্ট, যন্ত্রণা পেলে একটা কিছু তো পাওনা তাই না !
রুবা চোখ ঢেকে ফেলল তার হাত দিয়ে !

মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, আজকে আমার মনের যা অবস্থা আজকেই একজন যে আঘাত আমাকে দিয়েছে আর আজ তুমি আমার জন্য নিজেকে যে কষ্ট দিলে রুবা তার বিনিময়ে শত সহস্র বার আমি তোমার এই পা আমার বুকে ধরে রাখতে পারব ! তুমি শুধু আমাকে আর একটু সময় দাও আর একটু সাহস দাও আর একটু সামান্য ভালোবাসা দাও !
আজ আমার ভালোবাসার খুব দরকার!

মাহি বলল, আর লজ্জা পেতে হবে না চলেন যাই ডিনার করে আসি ! বলে হাত বাড়িয়ে দিল মাহি !
রুবা মাহির হাত ধরলো !

নিঝুম দুপুরে হসপিটাল থেকে ফিরে সেই যে নিজের রুমে ঢুকেছে একবার ও বের হয়নি !
মাহি যেদিন তাকে বলল সে রুবাকে বিয়ে করবে, যেদিন বিয়েও করলো সেদিন ও এত টা কষ্ট হয়নি যতটা আজ হচ্ছে!
কারণ আজ সে মাহিকে এমন কষ্ট দিয়েছে যা দেয়ার কথা কোন দিন কল্পনাও করেনি ! এত বড় অপবাদ দিয়েছে নিজেই লজ্জায়, দুঃখে এখন মরে যেতে ইচ্ছা করছে নিঝুমের।
মাহি তো ঠিকই বলল, আমি কি সত্যিই ওকে ভালোবাসি ? ভালোবাসার মানুষ কে এভাবে কেউ অপবাদ দেয় ছিঃ কি করলাম আমি!
আগে তো মাহি আমাকে তাও ভালোবাসার দৃষ্টি তে দেখতো , আমার জন্য আফসোস করতো আর আজ থেকে আমাকে ঘৃণা ভরে দেখবে ।
আমি কিভাবে সহ্য করব মাহির এই ঘৃণা ?
আমি তো তোকে জানি তুই ভালোবাসলে কতটা উজাড় করে ভালোবাসিস আর ঘৃনা করলে তোর ঘৃণা ও কতটা মারাত্মক !
এত যে বুঝি আমি সেই আমিই আজ কি করলাম ওফফ!
নিঝুম চোখ মুছতে মুছতে ভাবছে, আজ তোর গলায় আঁচড়ের দাগ গুলো দেখে আমি পাগল হয়ে গেয়েছিলাম রে মাহি ! তারপর তোর আর রুবার উপর রাগ থেকে কি জঘন্য অপবাদ দিয়ে ফেললাম নিজেও বুঝতে পারি নাই !
আমাকে একটা সুযোগ দে প্লিজ আমি তোর কাছে মাফ চাইতে চাই !
নিঝুম কাঁদছে !
কথা গুলো সে লিখে হোয়াট‌আপ এ মাহিকে পাঠিয়ে দিল।
নিঝুম এই নিঝুম দরজা খুল তাড়াতাড়ি! রিয়া দরজা নক করছে!
কখন থেকে দরজা বন্ধ করে আছিস খোল।
নিঝুম চোখ মুছে বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে দিল !
রিয়া বলল, কি হয়েছে তোর ?
নিঝুম বলল, মাথাব্যথা করছে!
রিয়া এক্সাইটেড হয়ে হঠাৎ বলা শুরু করলো , নিঝুম নিঝুম নিঝুম দারুন খবর আছে !
আপু হাত ছাড় কি হয়েছে বল ?
নিঝুম সাজ্জাদ দের বাসার লোকজন আসছে বিয়ের কথা বলতে ! একটু আগে সাজ্জাদ ফোন দিয়ে বলল আর আব্বু কে ওর বাবা ফোন দিয়েছিল!
নিঝুম এর কোন প্রতিক্রিয়া হলো না শুনে, শুধু বলল ও !
কি খুশি না তুই নিঝুম?
আপু মাথা ব্যথা করছে তাই খুশি হ‌ওয়াটা দেখাতে পারছি না এখন!
মনে মনে নিঝুম বলল, যখন চেয়েছিলাম খুব তোর বিয়ে টা হয়ে যাক তখন তো হলো না আর আজ তোর বিয়ে হলেই কি আর না হলেই আমার কি, আমার তো সব শেষ !

নিঝুমের চোখে পানি চলে আসছে !
তোর চোখে পানি কেন , রিয়া বলল বেশি কষ্ট হচ্ছে?
নিঝুম বলল, হুঁ ।
আচ্ছা ঠিক আছে তুই শুয়ে থাক আমি যাই।
রিয়া চলে যাচ্ছে।
নিঝুম পিছন থেকে বলল, আপু কনগ্রাচুলেশন ।
রিয়া হেসে বলল, থেঙ্কস রেস্ট নে।

নিঝুম মোবাইল নিয়ে দেখে মাহি মেসেজ সীন করলো কিনা ?
নাহ্ এখনো আনসীন !

নিঝুম বালিসে মুখ ঢেকে কাঁদছে আবার !
কি করলাম আমি এটা কি করলাম!

মাহি রুবাকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে আর অনেক দিন পর বাবার সঙ্গে ডিনার করলো !
বাবা রুবার সঙ্গে কথা বলল। ওর শরীরের ওর পায়ের খোঁজ নিল!
মাহির খুব ভালো লাগছে তার পরিবার টা দেখে ! হ্যাঁ ভাইয়া র চেয়ার টা খালি না রেখে সে বসেছে কারণ ভাইয়ার রেখে যাওয়া সব কাজ এখন তাকেই করতে হবে যে !
সাফিয়া বেগম বলল, আমি ঐ দুজন কে আচ্ছা বকা দিয়েছি মাহি। ওদের উচিত ছিল আমাকে খবর দেয়া !
বকা তুমি তোমার রুবা কে দাও মা, মাহি বলল!
রুবা আহ্লাদ করে বলল, মা দেখেন না তখন থেকে শুধু বকছে আমাকে !
ও শুধু বকছি আর কিছু করি নাই ? মাহি বলল!
রুবা চোখ বড় করে তাকালো মাহির দিকে , মনে মনে বলল কি বলা শুরু করলো বাবা মায়ের সামনে পাগল নাকি?
আমি যে এতক্ষণ ওষুধ দিয়ে দিলাম , ফুঁ দিলাম আরো বলব ।
রুবা টেবিলে র নিচ দিয়ে মাহির পায়ে নিজের পা দিয়ে চাপ দিল !
বাবা বলল, থাক মাহি বেচারী তোমার ভালোর জন্যই চা করতে গিয়েছিল আর বকো না তোমরা ।
সাফিয়া বেগম , হেসে উঠলো !
তার খুব আনন্দ লাগছে অনেক দিন পর নিজের বাসাটা কে নরমাল লাগছে।
সাফিয়া বেগম উঠে এসে রুবার গালে গাল ছুঁয়ে আদর দিয়ে বলল, মাহি তুই ওর পিছনে আর লাগবি না বলছি মেয়েকা অসুস্থ আর তুই রাগ হচ্ছিস।
রুবা মাহির দিকে তাকিয়ে , ভেংচি কাটলো !
এই রুবাকেই মাহি চায় ওর জন্য ওর বাবা মায়ের জন্য মনে মনে মাহি হাসলো!
বাবা মাহিকে বলল, তোমার মাথা ব্যথা কমছে ?
মাহি বলল, ঠিক আছি বাবা!

খাওয়া শেষ করে ওরা আরো অনেক টা সময় বাবা মায়ের সাথে বসে গল্প করলো!
মাহির মোবাইল এ নিঝুম এর মেসেজ এসেছে , মাহি দেখোও সীন করলো না !
মোবাইল পাশে ফেলে রেখে সবার সঙ্গে গল্পে মনোরোগ দিলো।

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here