যখন_দুজনে_একা ৪৯ পর্ব

0
646

#যখন_দুজনে_একা

৪৯ পর্ব

রুবা নিজের জিনিস গুছিয়ে নিচ্ছে। তার মনটা খারাপ খুব কিন্তু সে মাহির সামনে খুব নরমাল বিহেভ করছে।
একরকম অভিমান করেই সে মাহির সঙ্গে নরমাল থাকার চেষ্টা করছে।
মনে মনে রুবা ঠিক করেছে মাহির সামনে সে ইমোশনাল হবে না ।
মাহি টিভি দেখতে দেখতে রুবাকে খেয়াল করছে!
: তোমার গোছগাছ শেষ রুবা ? শেষ হলে আমার পাশে একটু বসবে !
রুবা মনে মনে বলল, না বসবো না ।
মুখে বলল, হাতের কাজ শেষ করি আগে।
: ঠিক আছে ! বুঝলে রুবা তোমাদের কালকে কিন্তু অনেক আগে আগে বের হতে হবে ! যে বৃষ্টি হচ্ছে রাস্তায় পানি থাকবে , এয়ার পোর্ট রোডে এখন অনেক জ্যাম থাকে !
রুবা শুধু বলল, হুঁ।
রুবা মাহির সঙ্গে একটু দূরত্ব রেখেই সোফায় এসে বসলো।
: এত দূরে বসেছো কেন , কাছে এসে বসো?
: বলো শুনতে পাচ্ছি এখান থেকে !
: ও আচ্ছা এখনো রেগে আছো, কালকে চলে যাবে আর এখন এতটা রাগ ! মাহিই ওর পাশে এসে বসলো!
: শোন তুমি যাচ্ছো আমার কষ্ট লাগছে না ? আমার কত প্ল্যান ছিল দুজন ঘুরব, শপিং করব কত আনন্দ করব কিন্তু ভিসা হয়নি তাই যেতে পারছি না ! এটা মেনে নিতে হবে এখন রুবা !
রুবার চোখে পানি চলে আসলো ,
: ঠিক আছে মেনে নিলাম ভিসা হয়নি তাই তুমি যেতে পারছো না , কিন্তু এটা মেনে নেই কিভাবে যে তুমি বলতে পারতে রুবা তুমি যাবে না তুমি থাকবে !
একবার মন রাখতেই না হয় বলতে মাহি ?
: মন রাখার জন্য বলতে পারতাম কিন্তু আমি চাইছি তুমি যাও তোমার একটা ভালো ট্রিটমেন্ট হোক!
: এই ট্রিটমেন্ট টা কি তোমার সঙ্গে গিয়ে করানো যেত না পরে কখনো ?
: যেত রুবা কিন্তু আমি তোমাকে পার্ফেক্ট দেখতে চাই !
: রুবা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল!
প্লিজ রুবা যাওয়ার আগে মুড টা ঠিক করো ! কালকে চলে যাবে আর আজ তোমার মুখ টা কালো দেখতে ভালো লাগছে না আমার !
: রুবা মুড ঠিক করার চেষ্টা করলো!

মাহি অন্য দিনের চেয়ে অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠলো। রুবার ঘুমন্ত মুখটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল।
মনে মনে বলল,
: তুমি আমার উপর রাগ করে আছো জানি রুবা। তুমি ডাঃ সুরাইয়া ম্যাম এর কাছে যে ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলে একদিন তার জন্য হলেও তো তোমার যাওয়া উচিত ।
মাত্র তো কয়টা দিন । মাহি উঠে হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হতে গেল।
অন্যদিনের চেয়ে আজ একটু আগে আগে যাচ্ছে হসপিটালে, একে তো লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে তার উপর অফিস টাইমে র জ্যাম শুরু হয়ে যাবে।

রুবা ঘুম ভেঙ্গে চুপচাপ শুয়ে আছে।
: গুড মর্নিং রুবা ! মাহি খুব সুন্দর করে হাসলো
: গুড মর্নিং , তুমি এখনি বের হয়ে যাবে ?
: এখনি না আরো কিছুটা সময় আছি তারপর যেতে হবে !
: আমি তোমার ব্রেকফাস্ট তৈরি করে দিচ্ছি।
: না তোমার কিছু করা লাগবে না , তোমার সঙ্গে দরকারি কথা আছে ।
: কি ? উঠে এলো রুবা বেড থেকে।
মাহি রুবার দুই হাত ধরলো ,
: রুবা তুমি আমার কাছে প্রমিজ করো কোন পাগলামী করবে না ওখানে , মানে বলতে চাইছি তুমি যা খুশী করে ফেলবে না ।
তোমাকে নিয়ে আমি খুব টেনশনে থাকব !
বাবা মায়ের সঙ্গে ছাড়া হোটেলের বাহিরে যাবে না।
: মাহি তুমি ভুলে যাচ্ছো , আমি তোমার ভাইয়ার সঙ্গে অনেক বার দেশের বাহিরে গেছি তখন বিভিন্ন সময় একা শপিং ও করতে বের হয়েছি।
: আমি জানি তুমি গেছো একা শপিং এ। কিন্তু আমি টেনশন এ থাকব এখানে সেটার কি হবে ? তাই আমার জন্য প্লিজ তুমি মায়ের সঙ্গে সঙ্গে থাকবে।
যত খুশি শপিং করো সমস্যা নাই আমার কার্ড নিয়ে যাও । শুধু একটা কথা একা যাবে না !
রুবা হাসলো , ঠিক আছে তুমি টেনশন করো না ।
মাহি জড়িয়ে ধরে বলল, ভালো থেকো ! তোমাকে খুব খুব খুব মিস করব !
: হুম, ঘোড়ার ডিম !
: ঘোড়ার ডিম না আমার রুবাকে মিস করব মাহি হাসছে।
: আমি ফোন রিসিভ না করলেও তুমি মেসেজ দিবে বাসা থেকে বের হ‌ওয়ার সময় এবং অবশ্যই টেক অফের আগে !

সাফিয়া বেগম আর আজগর সাহেব চা খাচ্ছিলেন। মাহি মায়ের পাশের চেয়ারে এসে বসলো।
: আজ এত আর্লী যাচ্ছো মাহি?
: আমার ওটি আছে বাবা!
: তুমি টেনশন করো না মাহি আমরা সবাই ঠিক থাকব । তোমার মা আর রুবা আমার রেসপনসিবিলিটি !
: আমি জানি বাবা ! মা রুবাকে একটু নজরে রেখো একা বের হতে দিবে না প্লিজ।
: মাহি রুবার যথেষ্ট বুদ্ধি আছে।
: অনেক বুদ্ধি এবং সেটা নিয়ে বেশি টেনশনে থাকতে হয়!
: মাহি তুমি নিজের খেয়াল রেখো প্লিজ , সাফিয়া বেগম বলল!
মাহির গাড়ি যখন বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে রুবা দোতলার করিডোরে দাঁড়িয়ে ছিল। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।
তার মোবাইল এ মেসেজ এসেছে ,
” যেতে যেতেও ফিরে আসবার বাহানা কুড়াই
সৃত্মি- গন্ধা, অচেনা সন্ধ্যা তোমাতে উড়াই ! ”
মিস ইউ এন্ড লাভ ইউ রুবা!
রুবা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল!

সাফিয়া বেগম রা সময় মত‌ই এয়ার পোর্টে পৌঁছে গেছে। মাহিকে ফোনে পাওয়া যায় নি ।
রুবা মেসেজ পাঠিয়ে দিল ।
আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে কাল রাত থেকে । ওয়েদার ফোরকাস্ট বলছে আগামী দুই থেকে তিন দিন এরকম লাগাতার বৃষ্টি থাকবে। দুপুর দুইটায় সিঙ্গাপুর এয়ার লাইন্স এর
ফ্লাইট আশাকরা যায় টাইমলী ছাড়বে।

রাত সাড়ে দশটা বাজে! মাহির আজ বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছে না ! বাসা পুরো খালি । এরকম খালি বাসায় আগে থেকেছে অনেক বার কিন্তু এখন কেন জানি খালি বাসায় ফিরতে কষ্ট লাগছে।
ওরা সবাই বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাত টা নাগাদ পৌঁছে গেছে সিঙ্গাপুর।
মায়ের সাথে কথা হয়েছে। রুবা রাতে কথা বলবে মা বলল!
ম্যাডাম রুবা মন খারাপ করে আছে। স্বাভাবিক, কয়দিনে সে মনে মনে প্ল্যান করে ফেলেছিল এনজয় কি কি করবে কিন্তু ভিসা না হ‌ওয়ায় মাহির হাতে কিছুই করার ছিল না।
রুবাকে সে যেতে নাও দিতে পারতো কিন্তু যা‌ওয়াটা তো জরুরি ছিল!
এই তো আজ দিনটা চলে গেল এভাব‌ই সাত আট টা দিন চলে যাবে।
মাহি গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করালো। সিগারেট এর প্যাকেট কিনতে ভিজে ভিজে ই পাশের দোকানে ঢুকলো।
বাসার নিচে এসে আজ আর সিগারেট ধরালো না । রুবার খারাপ লাগবে বলেই সে নিচ থেকে সিগারেট শেষ করে উপরে যেত। আজ তো রুবাই বাসায় নেই।
উপরে এসে দেখে বুয়া দুজন মোড়ায় বসে লিভিং রুমে টিভি দেখছে।
ফরিদা বুয়া তার কাছে দাঁড়াল
: আপনার খাওয়া দেই ভাইজান?
: আমি বাহিরে খেয়ে নিয়েছি বুয়া তোমরা খেয়েছো, ? আমার কিছু লাগবে না তোমরা রেস্ট করো ।
মাহি নিজের ঘরের সামনের করিডোরে এসে বসলো।
শরীর ভিজে গেছে! ভেজা কাপড়ে এখানে বসতে তারপরও ভালোই লাগছে। ঘর টা তো ভেতরে ফাঁকা ।
বিয়ের পর এই প্রথম রুবাকে ছাড়া ঘরটাতে থাকতে হবে কিছুদিন । ঘরে ঢুকে রুবাকে দেখবে না ভেবে বুকের ভেতর চিনচিন করছে কেমন । ওর ছুটোছুটি নেই শান্ত একটা ঘর।
মাহির রুবাকে নিয়ে ভাবতে ভাল লাগছে। কিভাবে বিয়ে টা হয়ে গেল ! এক বিয়েই যে তার ভেতরে এতটা পরিবর্তন এনে দিবে সে নিজেও ভাবেনি‌ কখনো !
প্রথম রাতে রুবার হাত টা টেনে যখন মায়ের দেয়া চুড়ি পড়াতে নিয়েছিল রুবা কবুতরের মত কাঁপছিল। ও ভয় পাচ্ছিল ।
যখন প্রথম প্রথম আড় চোখে রুবা তাকে দেখতো এই ব্যাপারটা তার খুব ভালো লাগতো, চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নিত।
মাহি হাসলো ভেবে।
কিভাবে দিন গুলো চলে গেল আজ রুবাকে কাছে টেনে নিতে ইচ্ছে করে খুব। রুবার গায়ের মিষ্টি ঘ্রাণ টা তাকে কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। রুবার ঘুমন্ত মুখটা দেখলে ওর বুকে খুব শান্তি লাগে , মনে হয় পৃথিবীতে কোন ঝামেলা নেই কোন নৈরাজ্য নেই। রুবার ছেলেমানুষী গুলো ওকে বিচলিত করে কিন্তু ভালো ও লাগে তার।‌ পাগল একটা !
ওর নিজের জীবনে এতটা সুখ নিয়ে রুবা আসবে সে ভাবেনি কখনো ! যেদিন রুবাকে প্রথম বুকে জড়িয়ে ধরে ওর পাগলামী টা আটকানোর চেষ্টা করছিল ওর খামচি, কিল , ঘুষি খাচ্ছিল তখনই কি একটা জেনো ওর বুকের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছিল হাজার হাজার রক্ত কনিকার সঙ্গে ।‌ এরকম অনুভুতি কে কি বলে সে জানে না !
আজ সেই সময়টার কথা ভাবতেও কেমন যেন শিহরণ লাগে ।

মাহির মোবাইল বাজছে। রুবাই হবে ভেবে মোবাইল এর স্কীনে তাকিয়ে দেখে, নিঝুম ।
দুই সেকেন্ড তাকিয়ে মাহি ফোন রিসিভ করলো,
: হ্যাঁ বল নিঝুম।
: তুই কি বাসায় মাহি ?
: হুম এত রাতে তো বাসায়‌ই থাকি ! মাহি নিঝুমের কথা শুনে অবাক হচ্ছে !
কি ব্যাপার তুই কি টেনশনে নিঝুম ?
: আরে আমি ফ্রেন্ড এর বিয়েতে পুরান ঢাকায় আসছি আম্মু ফোন দিলো মাত্র আব্বু র শরীর খারাপ লাগছে প্রেসার ও একটু বেশি!
: সিরিয়াস বেশি?
: খুব বেশি না কিন্তু আম্মু অস্থির হচ্ছে আর আমার ও খারাপ লাগছে !
: আমি কি যাব ?
: মাহি সে জন্যই ফোন দিলাম তোকে, আমার আসতে এক ঘন্টা তো লাগবেই রাস্তায় পানি জমেছে অনেক।
তুই যা তো একটু বাসায় প্লিজ।
: এই ওয়েদার এ এত দূর বিয়ে খেতে গেলি?
: আমার সঙ্গে নিয়াজ আছে , মাহি!
: ও আচ্ছা ঠিক আছে নিঝুম আমি যাচ্ছি টেনশন করিস না ।
: থেঙ্কস মাহি!
মাহি ফোন কেটে নিজের ঘরে ঢুকলো ! ভেজা কাপড় চেন্জ করে যেতে হবে । আলো জ্বালাতেই দেখে রুবার একটা ওড়না তাদের বেডের ওপর রাখা।
ওর বুকটা ধক করে উঠলো ! মনে মনে বলল,
রুবা তোমাকে ছাড়া আমার ঘরটা কত ফাঁকা ! মাহি রুবার ওড়না টা হাতে তুলে নিল , নাকের কাছে নিয়ে রুবার ঘ্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করল।
ড্রেসিং টেবিলের উপর নিজের ঘড়ি টা খুলে রাখার সময় দেখে রুবার আঙ্গুলের রিং পড়ে আছে।
পুরো ঘর জুড়েই তো এখন রুবার অস্তিত্ব বালিশে রুবার ঝড়ে পড়া চুল, ঐ যে চুড়ি , ওর কসমেটিকস সাজিয়ে রাখা, আয়নায় টিপ । রুবার স্যান্ডেল!
সব জায়গায় শুধু রুবা।
শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে মাহির খারাপ লাগাটা আরো বেড়ে গেল।
যেতে না দিলেই পারতাম !
মনে মনে বলল, সরি রুবা আমার মুরগির বাচ্চা সরি ! তোমাকে একা আমি কোথাও যেতে দিব না আর, কোথাও না।
আমার চোখের শান্তি আমি তোমাকে আমার চোখের আড়াল কিভাবে করলাম ?
আমি খুব খারাপ একটা মানুষ।
আয়নার দিকে তাকাতেই মাহির মনে হলো ওর পেছনে রুবা দাঁড়িয়ে আছে !
হেলুসিনেশন ? নিজেকে প্রশ্ন করলো !
মাহি পেছন ফিরে তাকালো !
না রুবাকেই দেখছে সে ! কেবিনেটের সঙ্গে ঢেস দিয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে !
মাহির শরীরে মধ্যে ইলেক্ট্রিক শকের ঝাঁকুনি লাগলো।
রুবা…. বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো মাহি!
আমার হেলুসিনেশন হচ্ছে না তো?
: হাতে চিমটি কেটে দেখো , রুবা বলল।
মাহি দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢাকলো এক সেকেন্ড র ভেতরে চোখ খুলে বলল,
এত বড় পাগলামী তোমার দ্বারা ই সম্ভব !
: দেখো চিমটি কেটে আমি হেলুসিনেশন নাকি সত্যি , রুবা হাত বাড়িয়ে দিল মাহির দিকে !
মাহি রুবার হাত টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলো ।
: আজ চিমটি না আজ আমি কামড়ে ধরে দেখব বলেই রুবা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে,
রুবার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো । এক গভীর চুম্বনে রুবার ঠোটে হারিয়ে গেল মাহি।
অজানা সুখের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে মাহির ভেতরটা।
রুবা আজ কোন বাঁধা দিচ্ছে না মাহিকে, এক পাগল করা ভালো লাগায় সে হারিয়ে যাচ্ছে।
সেই দুপুর থেকে মাহির জন্য অপেক্ষা করছে রুবা ।
যখন তার শ্বশুর শ্বাশুড়ি তাকে রেখেই সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য বের হয়ে গেল বাসা থেকে।

অন্যদিন রুবার চোখে পানি চলে আসে আজ রুবা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে মাহির চোখের কোণে পানি।
: কি ব্যাপার ডাক্তার সাহেব চোখে পানি কেন ?
: আমি অনেক খারাপ রুবা তোমাকে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। বিশ্বাস করবে না আমার কতটা কষ্ট হচ্ছিল, মাহি শক্ত করে রুবাকে জড়িয়ে ধরে বলল!
: একদম মিথ্যে বলবে না তোমার কষ্ট হলে পাঠাতে?
আমি তো ভয়ে ছিলাম আমাকে দেখে আবার বাকাঝকা দেয়া না শুরু করো?
: সরি রুবা , মাহি রুবাকে জড়িয়ে ধরে ই আছে। আজ রুবাকে সে এক সেকেন্ডের জন্য ছাড়বে না !

আচ্ছা কিভাবে সম্ভব হলো ? মা রেখে গেল তোমাকে?
: আমি রেডি হয়ে ,ল্যাগেজ কুদরত ভাই কে দিয়ে গাড়িতে তুলিয়েছি তারপর লিভিং রুমে বসে আছি।
বাবা রেডি হয়ে বলল, চা দাও তো রুবা ।
আমি বাবাকে চা দিলাম। ঠিক তখনই বাবা মা কে ডেকে বলল, সাফিয়া রুবা যদি আমাদের সঙ্গে না যায় খুব কি সমস্যা হবে আমাদের ?
মা বলল, আমাদের কি সমস্যা? তোমার ছেলেই তো জোর করে পাঠাচ্ছে ওকে ।
আমি তো জানি রুবার‌ও একা যেতে ভালো লাগছে না।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে মা বলল,
কি রুবা ঠিক বলছি না ?
আমি মায়ের দিকে শুধু তাকিয়ে ছিলাম।
তখন বাবা বলল, তাহলে রুবা থাক !
মাহি একা থাকবে আমার ও ভালো লাগছে না কেন জানি।
মা বলল, মাহি তো এসে রাগ করবে চিৎকার করবে রুবার সঙ্গে !
তখন বাবা বলল, ওদের টা ওদের ই সামলাতে দাও। উল্টো টাও হতে পারে !
মাহি রুবার কথা শুনে হেসে উঠলো !
: বাবা বলেছে এই কথা?
: হুম।
বিশ্বাস করবে না আমার এত আনন্দ লাগলো আমি আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম।
মা যাওয়ার সময় আমাকে বলেছে,
: রুবা মাহির রাগ এবং এই বাসা তোমার জিম্মায় র‌ইলো সামলাও।
এখন কি বকবে আমাকে ?
: না বকবো কেন, আজ তোমাকে আমি পাগল বানাবো ! তুমি একদিন মেরে পাগলামী করেছিলে মনে আছে আমি আদর করে পাগল বানাব তোমাকে রুবা !
আজ তুমি আমার পাগলামী দেখবে। রুবা চোখ বন্ধ করে আছে ।‌

মাহি হঠাৎ রুবাকে ছেড়ে তাড়াহুড়া দিয়ে বলল,
: রুবা চলো আমার সঙ্গে ?
: কোথায় ?
: খালুর শরীর খারাপ নিঝুম বাসায় নেই একটু দেখে আসি , তোমাকে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না তুমি আমার সাথে চলো!
মাহি শার্ট খুলে গেঞ্জি আর জিন্স নিয়ে ড্রেসিং রুমে ঢুকে গেল।
: আমি যাব না !
: কেন?
: আমার লজ্জা লাগবে সবাই জানে আমি চলে গেছি মায়ের সঙ্গে সিঙ্গাপুর !
: এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে আমার জন্য রেখে গেছে মা তোমাকে মা !
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি অপেক্ষা করো আমার জন্য ! আমি যাব আর আসব ।
মাহি তাড়াহুড়া করে বের হয়ে যাচ্ছে রুম থেকে কি ভেবে আবার রুবার দিকে এগিয়ে এসে রুবাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। তুমি অপেক্ষা করো রুবা আসছি আমি ! ইমার্জেন্সি না হলে আমি যেতাম না তোমাকে রেখে !
: আচ্ছা এখন যাও , না গেলে তাড়াতাড়ি আসবে কিভাবে!
মাহি বের হয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল,
: তোমার বুয়াদের আজ তালা লাগিয়ে রাখবে আজ রাতে ওরা তোমাকে ডাকাডাকি করতে আসলে আমি গুলি করব রুবা !
: ঠিক আছে গুলি করো , এখন যাও রুবা হাসছে।

মাহি চলে যাচ্ছে নিঝুম দের বাসার উদ্দেশ্যে!
রুবা সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো ।
লাইলি বুয়া এসে ডাকলো পিছনে,
: আম্মা ফোন দিসে !
রুবা হাত বাড়িয়ে কর্ডলেস টা নিলো ,
: মা কেমন আছেন ?
: আমরা ভালো আছি সব পার্ফেক্ট।
: তোমার ওখানের খবর বলো, মাহি এসেছে বাসায়?
: জ্বি মা !
: রাগারাগী করেনি তো তোমার সঙ্গে ?
: না মা খুব অবাক হয়েছে ।
: রুবা নাউ বল ইজ ইন ইউর কোর্ট !
: বল ওয়াজ অল‌ওয়েজ ইন মাই কোর্ট মা !
: ব্লেস ইউ মাই চাইল্ড রাখছি আর সময় করে আমাকে তোমার শপিং লিস্ট টা দিও।
: জ্বি মা ভালো থাকবেন !
রুবা শ্বাশুড়ি র সঙ্গে কথা শেষ করে নিজের রুমে এসে দেখে মাহি ওকে ইনবক্স করেছে ,
” আমার মনের মোহের মাধুরী
মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো
তোমার অঙ্গ সৌরভে ”
রুবা আমি আসছি সোনা তুমি একটু অপেক্ষা করো …
মাহির এসব মেসেজ তাকে এত বেশি তাকে ভালো লাগায় ভরিয়ে দেয় যে বলে বোঝানো যাবে না !
সে মাহিকে রিপ্লাই মেসেজ পাঠিয়ে দিল ,
” আমার আকুল জীবন মরন
টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো
তোমার অতুল গৌরবে…..

রুবার খুব ভালো লাগছে মাহির জন্য অপেক্ষা করতে কিন্তু ও জানে না ওর অপেক্ষা র প্রহর কতটা দীর্ঘ হবে‌? তখনো সে জানে না
মাহির আগামী দুই দিনের ভেতরে বাসায় ফেরা হবে না …..

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here